Mr_Husband,পর্ব_২৯,৩০

0
3500

#Mr_Husband,পর্ব_২৯,৩০
#লেখিখা:আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২৯

পরের দিন,
হসপিটালে আঁধারের বেড ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই মুন একপাশে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। আঁধারকে এভাবে দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। ও তো চায়নি আঁধারের কোনো ক্ষতি হোক। আঁধার যত’ই ওকে কষ্ট দিক না কেনো ও সব সহ্য করে নিবে কিন্তু আঁধারের কষ্ট কখনো সহ্য করতে পারবে না। আঁধারকে এভাবে হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখে মুনের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। ও যখন শুনলো আঁধারের এক্সিডেন্ট হয়েছে আর ও হসপিটালে তখন মুনের দুনিয়া উল্টে গেছিলো। মুন ওখানেই কান্না করতে শুরু করে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে সবাই হসপিটালে আসে। এসে দেখে আঁধারের মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ করা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু মুন কান্না করেই যাচ্ছে। ওই দিনটা আঁধারকে হসপিটালেই রাখা হয়। আরিফা রেজওয়ান আর মুন হসপিটালেই ছিলো। মুনকে থাকতে বারন করছিলো আরিফা রেজওয়ান। বাকিরাও তাদের সাথে বাড়িতে যেতে বলছিলো ওকে। কিন্তু মুন কারো কোনো কথা শুনতে রাজিই নয়।
একটু পরেই বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে সবাই। আঁধারের ইঞ্জিরি থাকায় ঘুরতে যাওয়ার প্লান ক্যান্সেল করতে চাইছিলো আরমান রেজওয়ান কিন্তু আঁধার বাঁধা দেয়। ও সবার আনন্দ মাটি করতে চায় না। কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। উদ্দেশ্যে বান্দরবন। আঁধার ড্রাইভ করতে চাইলে আরমান রেজওয়ান নিষেধ করেন আর ড্রাইভিং সিটে বসে নিজে ড্রাইভ করতে শুরু করে। বান্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি শহর। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭৫কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত এ শহরটি এক’ই নামের জেলা ও উপজেলা সদরদপ্তর। বান্দরবন শহরটি সবুজের চাদরে ঘেরা যেদিকেই তাকাও সবুজ আর সবুজ। উঁচু-নিচু, ছোট-বড় পাহাড় পর্বত। আঁধার পাহাড় খুব বেশি পছন্দ করে। তাই এবার মুনের সাথেই এই পাহাড় ঘুরতে মন চাইলো ওর। মুন পাহাড় একদমি পছন্দ করে না তাই মুনকে পাহাড়ের এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখিয়ে ওর মনে পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে চায় আঁধার। পাহাড়কে ভালোবাসতে শেখাতে চায়। আর সেদিন রাগের মাথায় মুনকে চড় মারার জন্য ক্ষমাও চাইতে চায়। মুন এ পর্যন্ত আঁধারের সাথে একটা কথাও বলেনি। সহজে ওর সামনে আসেনি। এতে আঁধার ডিস্টার্ব হচ্ছে। বান্দরবনের আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। মুন আর আলিয়ার ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। ওরা পারলে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। এই আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে আঁধার গাড়ি ড্রাইভ করছে। কারণ আঁধার এর আগেও অনেক বার গাড়ি ড্রাইভ করে বন্ধুদের সাথে বান্দরবন এসেছে। আঁধার এতে দক্ষ।
দুপুরে ওরা হোটেলে পৌঁছালো। এখানের একটা ভালো হোটেল বুক করেছে আঁধার। হোটেলটা বেশি বড় না। কিন্তু অনেক সুন্দর পরিপাটি। চারপাশে ফুলগাছে। সাথে ছোট একটা সুইমিংপুল ও আছে। আজকে ওরা আর দূরে কোথাও যাবে না। সবাই ক্লান্ত তাই বিকেলে আশে পাশেই ঘুরে ফিরে দেখবে পরেরদিন বগালেকের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। হোটেলে এসে সবাই খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিলো। বিকেলে আশাপাশে থেকে ঘুরে সন্ধার দিকে হোটেলে ফিরলো। ৮টার দিকে ডিনার করে যে যার মতো রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। মুন আঁধারের সাথে এক রুমেই আছে। আঁধার অসুস্থ না হলে মুন আলিয়ার রুমে গিয়েই থাকতো। কিন্তু কি আর করার!

.
সকাল সকাল সবাই রেডি হয়ে বগালেক ভ্রমনে বের হলো। সারাদিনের জন্য একটা জিপ গাড়ি ভাড়া করলো আঁধার। বান্দরবন থেকে বগালেক মেতে হলে প্রথমে মেতে হবে রুমা বাজার। রুমা বাজারে এসে জিপ থামলো সবাই নেমে বাজার ঘুরে দেখতে লাগলো। বগালেকে গিয়ে গোসল করবে সবাই তাই এখানে থেকেই কিছু জামা-কাপড় কেনাকাটা করলো ওরা। কেনাকাটা শেষ হলে আবার জিপে উঠলো। জিপ চলতে শুরু করলো। বগালেকে পৌঁছে সবাই যে যার মতো ঘুরে দেখতে লাগলো। পাহাড়ে ঘেরা লেক। জায়গাটা খুব সুন্দর। আলিয়া, রুশা, মুন পানিতে নেমে পরলো। আরমান রেজওয়ান আর আরিফা রেজওয়ান অন্যদিকে ঘুরে দেখছে। আলিয়া মুন একে অপরের দিকে পানি ছোড়াছুড়ি করছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। আঁধার গাছের সাথে হেলান দিয়ে একমনে মুনকে দেখে যাচ্ছে। আলিয়া আঁধারকে ডেকে বলল,

—“ভাই তুমি ও আসো না আমাদের সাথে খুব মজা হচ্ছে।”

আঁধার না করে দেয়। গোসল শেষে ওরা তিনজন পানি থেকে উঠে জামাকাপড় পাল্টে নেয়। তারপর ওখান থেকে নীলগিরির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ওখানে গিয়েই ওরা দুপুরের খাবার খাবে। ৬৯ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দেওয়ার সময় সবার মুখ হা হয়ে যায়, চোখে, মুখে মুগ্ধতা ছেয়ে গেলো অপূর্ব দৃশ্য দেখে। কারণ পাহাড়ের কোলে নিচু হতে হতে, উঁচু হতে হতে থমকে যাওয়া আঁকা বাঁকা রাস্তা দেখে। তার দুপাশে, ঢিবির মতো উঁচু পাহাড়ের চাদর দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও হয়তো বলতেন ‘ অনিন্দ্যসুন্দর’ , ‘নয়নাভিরাম’ , ‘মনোরম’ , ‘অতুলনীয়’ টাইপের শব্দগুলো। আলিয়া আনমনেই বলে ফেলল,

—“ওটা আমার পাহাড়!”

আলিয়ার কথা শুনে মুন মজা করে বলল,

—“হ্যাঁ শশুরবাবা তো কিনে রেখে ছিলেন।”

আলিয়া আঁধার বাঁকা চোখে তাকালো। আরমান রেজওয়ান আরিফা রেজওয়ান হাসছেন। চুমকিও মিটমিটিয়ে হাসছে। গাড়ি চলতে লাগলো। অবশেষে ওরা নীলগিরি পৌছালো। নীলগিরি পৌঁছে ওরা সবার প্রথমে ভালো একটা রেস্টুরেন্টে যায় লান্স করার জন্য। সবার পেটেই ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবার জন্য বিরিয়ানি আর ডিমের কোরমা ওর্ডার দেয়। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একদিনের জন্য কাছের একটা হোটেল বুক করে। সবাই হোটেলে গিয়ে রেস্ট নেয়। বিকেলে নীলগিরি ভ্রমনে বের হয়। নীলগিরি ঘুরে দেখে সেখানে শুধু নীলের ছড়াছড়ি। রেস্টহাউসের নাম নীলাঞ্জনা, ছোট কটেজের নাম নীল আলয় ইত্যাদি। শুরু হলো সেলফি তোলার ঝড়। চারপাশে পাহাড়ি উপত্যকার। তার মাঝে বিভিন্ন রঙিনময় ছবি তুলতে লাগলো ওরা। রুশা ঘেঁষে ঘেঁষে জোর করে আঁধারের সাথে পিক তুলছে। সবাই যে যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুন ঘুরতে ঘুরতে অন্য একটা পাহাড়ের চূড়ায় এসে পরে। একদম কিনারে দাঁড়িয়ে পাহাড় থেকে নিচে উঁকি দিচ্ছে। নিচে তাকাতেই মুনের আত্মা কেঁপে উঠে এখান থেকে পরলে নির্ঘাত মায়ের ভোগে চলে যাবে। রুশা মুনকে অন্য দিকে যেতে দেখে সবার আড়ালে ওর সেদিকে যায়। মুন পাহাড়ের নিচের সবুজের চাদরে ঘেরা অপরূপ, মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত ছিলো। রুশা ধীরে ধীরে মুনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। মুন খেয়ালই করেনি যে ওর পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। রুশা ধীরে ধীরে মুনের দিকে হাত নিয়ে যায়। মুনকে সরাতে পারলেই আঁধার রুশার হয়ে যাবে। রুশা মুনকে ধাক্কা দিবে এমন সময় আলিয়া মুনকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসে। আর রুশাকে মুনের পেছনে ওভাবে হাত বারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝে যায় যে রুলার আসলে কি করতে চাইছে। আলিয়া জোরে চিৎকার করে উঠে,

—“রুশা আপু!”

রুশা সহ মুন ও আলিয়ার চিৎকার শুনে পিছনে ফিরে তাকায়। মুন পিছনে ফিরে রুশাকে নিজের দিকে হাত বানো দেখেই বুঝে যায় যে রুলার কি করতে চাঈছিলো ওর সাথে। মুন ততক্ষণাৎ কিনারে থেকে সরে আসে। আলিয়া রুশার দিকে এগিয়ে যায়। রুশা আলিয়াকে এখানে দেখে চমকে গেছে। হঠাৎ ভয়েরা ওকে জেকে ধরে। আলিয়া রুশার সামনে গিয়ে কড়া গলায় বলল,

—“কি করতে চাইছিলে তুমি?”

রশা তোতলিয়ে জবাব দিলো,

—“ক-কই কি-কিছু না তো।”

—“একদম মিথ্যে বলার চেষ্টা করবে না।”

এর’ই মধ্যে আলিয়ার চিৎকার শুনে সবাই এ পাহাড়ে ছুটে আসে। রুশা নাটক করে বলল,

—“আলিয়া আমি তোমাকে মিথ্যে বলবো কেনো?”

আলিয়া রেগে বলল,

—“একদম আমার সামনে নাটক করবে না। আমি নিজের চোখে দেখেছি তুমি মিষ্টিকে এখান থেকে ধাক্কা মারতে যাচ্ছিলে। আমি যদি সময় মতো না আসতাম তাহলে হয়তো এতক্ষণে তুমি মিষ্টিকে ধাক্কা মেরে ফেলেই দিতে। আর পরে আমাদের কাছে এসে বলতে ও পা পিছলে পরে গেছে। বাহ্! বাহ্! দারুন প্লান করেছিলে। বাট স্যরি টু সেয়ে প্লানটা ফ্লপ হয়ে গেলো।”

আলিয়ার কথা গুলো শুনে সবাই চমকের এক নতুন রেকর্ড পাড় করেছে। আঁধার এসে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো,

—“তুই সত্যি বলছিস?

—“ভাই তুমি জানো আমি কখনো মিথ্যে কথা বলি না। আর এতো সিরিয়াস কথা নিয়ে ফান ও নিশ্চয়ই করবো না।”

আরিফা রেজওয়ান ও জিজ্ঞেস করলো?

—“কিন্তু রুশা কেনো এমন করতে যাবে?”

—“মম সেটা তুমি ওর কাছেই জিজ্ঞেস করো। মুন কি এমন ক্ষতি করে ছিলো তার জন্য ওকে মেরে ফেলতে চাইছিলো‌।”

আঁধার রুশার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,

—“আলিয়া যা বলছে তা কি সত্যি?

রুশা কান্নার অভিনয় করে বলল,

—“নো আঁধার। দ্যাট’স্ নট ট্রু। আলিয়া মিথ্যে বলছে।”

আঁধার মুখভঙ্গি পালটে বলল,

—“রিয়েলি? কিন্তু তোমার নামে এতো বড় একটা মিথ্যে কথা বলে ওর কি লাভ?”

আলিয়া বলল,

—“ভাই তুমি মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করো। আমি যখন রুশা আপুর নাম ধরে চিৎকার করে ডাক দেই তখন মুন ও দেখেছিলো রুশা আপু ওকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে ছিলো।”

আঁধার মুনের দিকে তাকিয়ে কন্ঠ সরল করে বলল,

—“মুন রুশা কি সত্যি তোমাকে ধাক্কা দিতে যাচ্ছিল!”

মুন তাচ্ছিল্য করে বলল,

—“বললে কি বিশ্বাস হবে আপনার?”

—“এখন একবার বলেই দেখো বিশ্বাস হয় কি না!”

মুন রুশার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আবার চোখ ঘুরিয়ে আঁধারের দিকে তাকালো। আধারের চোখে চোখ রেখে বলল,

—“তাহলে শুনুন, হ্যাঁ! উনি আমাকে পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিতে চেয়ে ছিলেন। মেরে ফেলতে চাই ছিলেন। এখন তো শুধু আমি বলছি না আপনার বোন ও বলছে। এখনো কি অবিশ্বাস করবেন?”

আরমান রেজওয়ান হঠাৎ বলে উঠলেন,

—“মুনকে স্টোর রুমেও তুমি’ই লক করে ছিলে তাই না?”

রুশা দেখে এখন আর পালানোর কোনো সুযোগ নেই তাই ও আঁধারের হাত ধরে বলতে শুরু করে,

—“আঁধার! আঁধার আমি যা কিছু করেছি শুধু তোমার জন্য করেছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তাই জন্য করেছি। আর তুমি ও তো আমাকে ভালোবাসো বলো? আঁধার বলো না সবাইকে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো? বলো না?”

আঁধারের সয্যের বাঁধ ভেঙে যায়। আঁধার সজোরে রুশার গালে থাপ্পড় মারে। টাল সামলাতে না পেরে রূশা নিচে পরে যায়। আঁধার রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

—“দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। আর কখনো যেনো তোমাকে আমার সামনে না দিখি।”

—“আঁধার প্লিজ! প্লিজ আমার কথাটা শোনো আমি………”

আঁধার রুশার সামনে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—“শশশশশ! যাস্ট শাট ইউর মাউথ এ্যান্ড গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার।”

বলে আঁধার মুনের হাত ধরে পাহাড় থেকে নিচে নেমে গেলো। বাকিরা ও ওদের পেছনে পেছনে নেমে এলো। আজ এক্ষুনিই ওরা ঢাকা ব্যাক করবে।

#চলবে,

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩০

হাত, পা, চোখ ও মুখ বাধা অবস্থায় মেঝেতে হাটু ভেঙ্গে বসিয়ে রাখা হয়েছে রুশাকে। রুশা ছটফট করছে, সাথে মুখ দিয়ে ‘উম, উম’ জাতীয় শব্দ ও বের করছে। রুশার পেছনে বন্দুক হাতে মুখুশ পরা চারজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। আর রুশার ঠিক সামনে একটা টেবিলে এক’পা উঠিয়ে আরেক পা ঝুলিয়ে রিভলবার কপালে ঠেকিয়ে বসে আছে AR রোদ। তার চোখে শুধু সানগ্লাস আর মুখে কোনো মাক্স নেই। গোডাউনের ভেতরে রুশা, চারজন গার্ডস আর AR রোদ ছাড়া আর কেউ নেই। বাকি সব গার্ডসরা গোডাউনের বাইরে পাহারা দিচ্ছে। রোদ ভালো করে একবার রুশাকে পফর্যবেক্ষণ করে বাঁকা হাসলো। তারপর বলল,

—“ওয়েল কাম টু মাই ডার্ক ওয়ার্লড মিস. রুশা। তোমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। নিজেকে প্রস্তুত করো AR এর সমূক্ষিণ হওয়ার জন্য।”

রোদ ইশারা করতেই একজন রুশার চোখের বাঁধন খুলে দিলো। রুশা চোখ পিটপিট করে সামনের ব্যক্তিটির দিকে তাকাতেই বিষ্ময়ে হয়ে গেল। রুশার চোখ দুটো বিষ্ময়ে যেন বেরিয়েই আসবে। রুশা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে। রোদ বাকা হেসে বলল,

—“সো মিস কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা? যাকে খুজতে বিডি-তে এ এসেছো। যার দেখা পাওয়ার জন্য অধির আগ্রহে বসে ছিলে, তাকে আজ নিজের সচোখে দেখে কেমন ফিল হচ্ছে তোমার? নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছো? কিন্তু বেব তুমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছো। তুমি আমাকে নয় নিজের মৃত্যুকে খুজতে বিডিতে এসেছো। আর এই AR কাউকে সেকেন্ড চান্স দেয় না কিন্তু তোমাকে দিচ্ছি। কারণ তুমি আমার…..থাক বাদ দেও সেসব কথা। কিন্তু তুমা আবার এটা ভেবোনা যে তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে।”

হঠাৎ করেই রোদ রেগে গেলো। টেবিল থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে লুশার সামনে এক হাটু গেড়ে বসে কিছুটা ঝুকে নিজের বুকের বাম দিকে আগুল দিয়ে দেখিয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

—“তুই আমার কলিজা হাত দিয়েছিস। আঘাত করেছিস আমার এখানটায়। আর আমি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো ভেবে ছিস? মানুষের দুর্বলতা কে অস্ত্র বানি আঘাত করার মজাই আলাদা।”

বলেই পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলোকে কিছু একটা ইশারা করতেই তারা রুশার চোখ বেধেঁ ওকে একটা সাউন্ড প্রুভ রুমে নিয়ে যেতে লাগলো। রুশা ছটফট করছে ভয়ে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। না জানি AR তাকে কি শাস্তি দেয়। ভেবেই আত্মা কেঁপে উঠছে। লোক গুলো রুশার চোখ আর মুখ খুলে ওকে রুমের মধ্যে রেখে রুমের লাইট অফ করে দিলো। তারপর একে একে ইঁদুর, তেলাপোকা, ব্যাঙ্গ ইত্যাদি জাতীয় আরো কি সব পোকা মাকড় ছেড়ে দিলো। পোকামাকড় গুলো আস্তে আস্তে রুশার গা বেয়ে উঠতেই রুশা ভয়ে গগনবিদারী চিৎকার দিতে শুরু করে। ওর এই চিৎকার রোদের কানে যেতেই তার পৈচাশিক আনন্দ হতে লাগলো। রোদের কলিজায় অনেক শান্তি লাগছে রুশার ভয়ার্তক চিৎকার শুনে। লোকগুলো দরজা বন্ধ করে রুশাকে ওই রুমে রেখেই চলে এলো। দরজার বাইরে দুজন গার্ডস দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে।

.
কবির খান, তাহমিনা খান আর রুনু বেগম বসে আছেন রেজওয়ান ম্যান্সনে। মেয়েকে আর মেয়ে জামাইকে দেখতে এসেছেন তারা। কারণ আঁধারের যখন অ্যাক্সিডেন্ট হয় সে সময় তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। কবির খানের মা রুনু বেগম হঠাৎ অসুস্থ হওয়ে পরায় তারা ততক্ষনাৎ গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তার কিছু দিন পর’ই শোনে আঁধার অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। কিন্তু তারা তখন আসতে পারেনি। কারণ তখন ও রুনু বেগম অবস্থা ততটা ভালো ছিলো না। কবির খান বারবার ফোন করে আঁধারের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন। যখন রুনু বেগম কিছুটা সুস্থ হলেন তখন তাকে সাথে নিয়েই ঢাকা ফিরলেন। আরমান রেজওয়ান ওনাদের সাথে কথা বলছেন। আরিফা রেজওয়ান কিচেনে গেছেন ওনাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করতে। মুন বাড়িতে নেই প্রাইভেটে গেছে। ওর আসার সময় হয়ে গেছে। আরিফা রেজওয়ান ট্রে এনে টি টেবিলে রাখলেন। সবাইকে চা দিলেন। আর নিজেও একটা চা এর কাপ নিয়ে আরমান রেজ্রয়ানের পাশে বসলেন। সবাই চা খেতে খেতে গল্প করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর’ই মুন আর আলিয়া এসে পরলো। এতো দিন পর বাবাকে দেখে মুন নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ঝাপিয়ে পরলো কবির খানের বুকে আর ডুকরে কেদে উঠলো। কবির খান কিছুটা অবাক হলেও মৃদু হেসে তার আদরের কন্যাকে পরম স্নেহে বুকে আগলে নিলেন। আরমান রেজওয়ান মজা করে অভিমানী সুরে বললেন,

—“এটা কিন্তু ঠিক না মামনি। তুমি যে ভাবে তোমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদছো তোমার বাবার এখন হয়তো মনে হচ্ছে না জানি আমরা তার মেয়েকে কত কষ্ট দেই।”

মুন কবির খানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে হেসে ফেলল। হেসেই বলল,

—“আমার আব্বু ওরকম কিছু মনে করবেনা আমি জানি।”

কবির খান মেয়ের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,

—“কেমন আছে আমার আম্মুটা?”

মুন হেসে বলল,

—“ভালো আছি আব্বু। তুমি কেমন আছো?”

—“ভালো আছি। আর আমার আম্মুটাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।”

মুন তাহমিনা খানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললে,

—“কেমন আছো আম্মু? আমাকে কি মিস করছো একটুও? আমি কিন্তু তোমার বকা গুলো কে অনেক মিস করছি। যদিও এখানে এসেও বকা খাওয়া মিস যায় না। তবুও তোমার বকা গুলো ওয়াল্ডের বেস্ট বকা।”

মেয়ের কথা শুনে তাহমিনা খান বিষ্মোএ ভরা দৃষ্টিতে তাকালো। তার মেয়ে বলে কি? বকাও আবার নাকি ওয়াল্ডের বেস্ট হয়। কবির খান মেয়ের কথা শুনে সশব্দে হাসলেন। আরমান রেজওয়ান ভ্রু যুগল কুঁচকে বললেন,

—“মামনি এখানে তোমাকে আবার কে বকা দেয়?”

মুন ঠোঁট উল্টে বলল,

—“আপনার ওই বজ্জাত ছেলে ছাড়া আর কে দিবে। সে-ই তো একমাত্র যে আমার মতো এতো কিউট বাচ্চাটাকে সব সময় ধমকায়।”

আরমান রেজওয়ান কাছে এসে মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

—“ঠিক আছে আমি আমার বজ্জাত ছেলেটাকে বকে দেব। তুমি মন খারাপ করো না মামনি।”

মুন হাসলো। তারপর রুনু বেগমের কাছে গিয়ে তার হাতের পিঠে চুমু খেয়ে হেসে বলল,

—“এখন কেমন আছো দাদিজান? আগের থেকে ভালো ফিল করছো?

রুনু বেগম নাতনির মুখে হাত বুলিয়ে বললেন,

—“হো দিদিভাই আল্লাহর রহমতে এখন অনেকটা ভালো আছি।”

তাহমিনা খান আলিয়াকে কাছে টেনে বললেন,

—“কেমন আছো আলিয়া?”

আলিয়া সিমত হেসে বলল,

—“ভালো আছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন।”

—“ভালো”

কবির খান আলিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন?

—“পড়ালেখা কেমন চলছে মামনি?”

—“ভালো আংকেল।”

আরিফা রেজওয়ান সবাইকে তাড়া দিয়ে বললেন,

—“আপনারা ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি। মুন, আলিয়া তুমিরাও যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।”

.
মুন রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। এতোক্ষন সকলের সামনে খুশি থাকার অভিনয় করতে করতে হাপিয়ে গেছে। হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ তার এতো নিখুঁত অভিনয় ধরতে পারেনি। মুন নিজে নিজে অভিমানী সুলে বলল,

—“আমি চলে যাবো Mr.Husband. আজ’ই চলে যাবো। তারপর আপনি একাই থাকবেন। আর জ্বালাবে নাষকেউ আপনাকে। কেউ আর বিরক্ত করবে না। কোমড় বেঁধে ঝগড়া ও করবে না। চলে যাবো আমি। থাকুন আপনি একাই। হুহ।”

বলেই মুন ব্যাগ গোছাতে লাগলো। গোছানো শেষ হলে একটা কালো রঙের সাদা পাথরের কাজ করা কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

সবাই ডাইনিং এ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর মুন ও নেমে এলো। আরিফা খানকে খাবার দিতে দেখে মুন গিয়ে তার হাত থেকে তরকারির বাটিটা নিয়ে বলল,

—“সাসুমা তুমি কেন কষ্ট করছো? তুমি শশুরবাবার পাশে খেতে বসো আজ আমি তোমাদের সবাইকে সার্ভ করি।”

আরিফা রেজওয়ান নাকচ করে বললেন,

—“না মামনি তুমি বসো আমি দিচ্ছিতো।”

মুন কিউট ফেস করে বলল,

—“সাসুমা প্লিজ, প্লিজ আমি সার্ভ করি না। প্লিজ তুমি না করো না।”

আরমান রেজওয়ান আর কবির খান কি বিষয়ে জেন কথা বলছেন। তাদের এদিকে কোনো খেয়াল নেই। তাহমিনা খান বললেন,

—“থাক না ওকেই দিতে দিন। আপনি আমাদের সাথে খেতে বসুন। ও সবাইকে দিয়েই বসে পরবে।”

মুন সায় দিয়ে বলশ,

—“হ্যাঁ সাসুমা তুমি বসে পরো আমি সবাইকে সার্ভ করে বসছি।”

আরিফা রেজওয়ানের আর কি বলার মুন যখন বলেছে তার মানে সেটা করবেই। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আরমান রেজওয়ানের পাশেই খেতে বসলো। মুন সবাইকে সার্ভ করে কবির খানের ডান পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরলো। কবির খান নিজের হাতে সযত্নে মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে। মুন ও তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। হঠাৎ মুনের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো। কবির খান তাড়াতাড়ি গ্লাসে পানি ঢেলে মুনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

—“ঝাল লেছে?”

মুন হেসে মাথা এপাশ ওপাশ ঘুরালো মানে ওর ঝাল লাগেনি। কবির খান আবারো বলল,

—“তাহলে?”

—“কিছু না এমনিই।”

ডাইনিং এ উপস্থিত সকলেই মুগ্ধ নয়নে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। এই মুহূর্তে আর কিই বা বলার থাকতে পারে? প্রতিটা মেয়েই তার বার রাজকন্যা। সেটা যে শ্রেণিরই লোক হোক না কেনো। একজন রিশকাওয়ালার কাছেও তার মেয়ে রাজকুমারীর থেকে কম কিছু না। মুন ছোটবেলা মায়ের আদরের ছায়া ভালো করে পায়নি বলে, কবির খান সর্বদা মেয়ের সকল চাওয়া পাওয়া পুরণ করেছেন। মেয়েকে মাথায় তুলে রেখেছে। মুনের এমন কোনো ইচ্ছে নেই যেটা অপূর্ণ রেখেছে সে। মা কাছে ছিলো না বলে মেয়েকে বুক জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছেন। এভাবেই নিজের হাতে খাবার তুলে খাইয়েছে। গোসল করিয়েছেন, চুল বেঁধে দিয়েছেন। সেই মেয়েকে ছেড়ে থাকা একজন বাবার পক্ষে কতটা কষ্ট কর তা হয়তো অন্য কোনো মানুষ বুঝতে পারবে না। মুনের ডাকে ভাবনার সুতো ছিড়ে কবির খানের। মুন ছলছল নয়নে আটকে আসা গলায় বলল,

—“আব্বু আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে যাবে প্লিজ। আমি তোমাদের সাথে যেতে চাই।”

কবির খানের বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে লাগলো। তার মেয়েটা এভাবে কেনো বলছে? এভাবে না বললেও তো নিয়ে যেত। কবির খান ধরা গলায় বলল,

—“হ্যাঁ আম্মু অবশ্যই তোমাকে নিয়ে যাবো।”

কবির খান আরমান রেজওয়ানের দিকে তাকে বলল,

—“আরমান আমি আমার মেয়েকে কিছু দিনের জন্য নিয়ে যেতে চাই। এতে তোর কোনো সমস্যা আছে?”

আরমান রেজওয়ান আমতা আমতা করে বলল,

—” হ্যাঁ নিয়ে যা। আমার কি সমস্যা থাকবে। এমনিতেও ও তোদের খুব মিস করছিলো। কিছু দিন ধুরে আসলে ওর মনটাও ভালো হয়ে যাবে। বেশি দিন কিন্তু রাখতে পারবি না। খুব শিগ্রই কিন্ত আমাদের আমানত ফিরিয়ে দিতে হবে।”

কবির খান হেসে বললেন,

—“ঠিক আছে খুব তাড়াতাড়ি আবার দিয়ে যাবো। আচ্ছা আঁধার এখনো এলো না যে? ও কখন আসবে?”

—“ওর ইমার্জেন্সি পরে গেছে তাই আজ আসতে অনেক রাত হবে। তাই তোরা আজকে রাতটা থেকে কাল একে বারে ওর সাথে দেখা করে তারপর যাবি।”

আরিফা রেজওয়ান ও বললেন,

—“হ্যাঁ ভাইয়া আজকের রাতটা থেকে যান। এমনিতেও তেমন একটা আসাও হয় না আপনাদের।”

কবির খান দুক্ষিত ভঙ্গিতে বলল,

—“না ভাবি আজ থাকতে পারবো না। আমর একটা জরুরী কাজ আছে। অন্য একদিন এসে বেরারো। মায়ের শরীলটাও বেশি একটা ভালো না। আর আঁধার তো কিছু দিনের মধ্যেই ওকে নিতে যাবে তখন তো দেখা হবেই।”

আরমান রেজওয়ান আর জোড় করলেন না। খাওয়া-দাওয়া শেষে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বিকেলে মুনকে নিয়ে চলে গেল তারা।

.
আঁধারের ফিরতে ফিরতে রাত ১টা বেজে যায়। রুমের দরজা খোলা দেখা কিছুটা অবাক হয় আঁধার। ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকে আরেক দফা অবাক হয়। রুমের কোথাও নেই মুন। ওয়াশরুমর দরজা খুলে দেখে ফাকা। আঁধার দৌড়ে বেলকনিতে যায়, না সেখানেও নেই। আঁধারের মাথা কাজ করছেনা এতো রাতে মুন কোথায় যেতে পারে। মুন খুব ভিতু তাই একা একা ছাদে তো কিছুতেই যাবে না। আলিয়াও এতোক্ষনে হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। উফ মাথা কাজ করছে না কিছুতেই। হঠাৎ মুনের পড়ার টেবিলে চোখ যায় আঁধরের। সাদা কিছু একটা উড়ছে। আঁধার এগিয়ে গিয়ে দেখে ডায়েরির একটা পৃষ্ঠা পেন্সিল বক্স দিয়ে চাপা দেওয়া। হ্যাঁ মুন আঁধরের জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে। আঁধার ভ্রু কুচকে চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো।

“প্রিয় রাক্ষস জামাই,
আমি চলে যাচ্ছি চিরতরে আপনাকে ছেড়ে অনেক দূরে। এখন থেকে কেউ আর আপনাকে জ্বালাবে না, বিরক্ত করবে না, আপনার সাথে ঝগড়াও করবে না। আমি নামক যন্ত্রণাটা আপার জীবন থেকে বিদায় হচ্ছে। এখন আপনি সকল বোঝা, সকল দায়িত্ব থেকে মুক্ত।
ছেড়ে চলে যাচ্ছি আপনাকে সারাজীবনের জন্য। ভালো থাকবেন।
ইতি
আপনার বোকা পাখি”

চিঠিটা পড়া শেষ হতেই মাথার চুল টেনে ধরে আঁধার ধপ করে নিচে বসে পড়লো। বুকের বা পাশটা কেমন খালি খালি লাগছে। এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। আঁধার বসা থেকে উঠে ছুটে মায়ের রুমে গেল। দরজায় কড়াঘাতের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আরিফা রেজওয়ানের। সে উঠে দরজা খুলে দেখলেন আঁধার এলোমেলো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে বুকের মধ্যে কেমন যেন করে উঠল আলিফা রেজওয়ানের। আঁধার কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,

—“মম ও-ও কো-কোথায়?”

আরিফা রেজওয়ান বুঝতে পারছেন না যে আঁধার কার কথা বলছে। আঁধার উওর না পেয়ে আবারো বলল,

—“মু-মুন কোথায় মম?”

আরিফা রেজওয়ান কি বলবে বুঝতে পারছেন না। হঠাৎ করে তার ছেলের এমন অবস্থা কি করে হলো? আঁধারের ডাকে হুশ ফেরে আরিফা রেজওয়ানের। সে কিছুনা থমকানো কন্ঠে বললেন,

—“মুন তো ওর বাবার বাড়িতে গেছে। আজ দুপুরেই এসে ছিলেন তারা। বিকেলে মুনকে নিয়ে গেছে। কিছুদিন থেকে চলে আসবে। কিন্তু তোমার কি হয়েছে? এরকম অবস্থা কেন তোমার?”

—“কিছু হয়নি মম। আমি ঠিক আছি।”

আঁধার কোনো রকম কথাটা বলেই এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল। আরিফা রেজওয়ান অবাক হয়ে ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। আঁধার নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। রাগে আঁধারের মুখ লাল বর্ন ধারণ করেছে। এখন মুনকে সামনে পেলে ঠাটিয়ে একটা দিতো এরকম ফাজলামি করার জন্য। চিঠিটা পড়ে আঁধারের কি অবস্থা হবে সেটা কি মুন একবারো ভেবেছে? কতটা ভয় পেয়ে গেছিলো সেটা কি ও জানে? এখনই গিয়ে কানের গোড়ায় তিনটা লাগাবে তাহলেই জন্মের মতো এরকম ফালতু মজা করার সাধ ঘুচে যাবে ওর।

এক নাগাড়ে কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে আঁধার যেন এই কলিংবেলের সাথের তার কোনো জন্মগত শত্রুতা আছে। এদিকে কলিংবেলের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে কবির খান আর তাহমিনা খানের। কবির খান বিরক্ত হয়ে উঠে গেলেন। দরজা খুলে আঁধারকে দেখে কিছুটা অবাক হলো কবির খান। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন ঘড়িতে 02:25 বাজে। আঁধার ইতস্তত করে বলল,

—“আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?”

কবির খান তীক্ষ চোখে তাকিয়ে বলল,

—“ওয়ালাইকুমস সালাম। ভালো আছি। কিন্তু তুমি এতো রাতে এখানে কি করছ?”

আঁধার আমতা আমতা করে বলল,

—“আসলে আঙ্কেল ড্যাড বলেছিল মুন এখানে আছে তাই হসপিটাল থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি। স্যরি আপনাদের ঘুমে ডিস্টার্ব করার জন্য।”

কবির খান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

—“ভেতরে আসো।”

আঁধার বাড়ির ভেতরে প্রবেস করল। কবির খান বললেন,

—“মুন নিজ রুমে আছে।”

—“থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কেল।”

বলে আঁধার মুনের রুমে চলে গেল। কবির খান কিছুক্ষণ আঁধারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল। মুনের রুমের দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। রুমে লাইট জ্বলছে। আঁধার রুমে ঢুকেই দরজা লক করে পিছনে ফিরতেই কয়েকটা হার্ট বিট মিস হয়ে গেল তার। মুন কোল বালিশটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ঘুমিয়ে আছে। পরনে টি-শার্ট আর প্লাজু পরা। টি-শার্টটা নাভির কিছুটা উপরে উঠে আছে। প্লাজুটাও হাটুর উপরে উঠে গেছে। ডান হাটুতে থাকা তিলটা দৃশ্যমান হয়ে আছে। চুল গুলো দুপাশে ঝুটি করে রেখেছে। ঘুমানোর কারণে এলোমেলো হয়ে কিছু চুল মুখে পরে আছে। আঁধার মুগ্ধ নয়নে দেখছে তার বোকা পাখিকে। যে নামটা তার এই বোকা পাখি নিজেই নিজেকে দিয়েছে। আঁধার ধীরে ধীরে মুনের কাছে এগিয়ে গেল। মুখের উপর ফু দিতেই পরে থাকা চুল গুলো উড়ে গেল। আর মুন ও কিছুটা নড়ে উঠে কোল বালিশ ছেড়ে দিয়ে সোছা হয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলো। কিন্তু এর কারণে মুনের নাভির উপরের কুচকুচে তিলটা আঁধারের চোখে পরলো। ঘোর লাগা নয়নে তিলটাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। ঠিক নাভির উপরে হওয়ায় তিলটা আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। আঁধার নিজেকে সংযত করে লাইট অফ করে মুনের পাশে এসে মুনকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো। আর তার আগে কোল বালিশটাকে এক লাথি মেরে বেড থেকে ফেলে দিলো। আর বিড়বিড় করে বলল,

—“ইডিয়েট কোল বালিশ একটা অন্যের বউ এর আদর খেতে লজ্জা করে না।”

.
রোদের নরম কোমল স্পর্শ মুনের মুখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেল মুনের। আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসতে গিয়ে মনে হলো কেউ ওকে লতার মতো পেচিয়ে ধরে আছে। মুন চোখ পিটপিট করে তাকিতেই চোখের সামনে আচমকাই আঁধারের মুখটা ভেসে উঠতেই চোখ বড় বড় করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here