#Mr_Husband,পর্ব_৩৩,৩৪
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩৩
জোসনা রাত। আকাশে গোল থালার মতো চাঁদ উঠেছে। একটা চাঁদকে ঘিরে হাজারো তারাদের মেলা বসেছে। পুরো ঢাকা শহর যেন চাঁদের ঝলমলে আলোয় ভেসে যাচ্ছে। মৃদু শিতল বাতাস বইছে। শরৎকাল চলছে, এর মধ্যেই প্রকৃতি শীতের আহবান দিচ্ছে। এক রাশ মুগ্ধতায় ভরে উঠেছে মনের অলি গলি। নিরিবিলি পিচঢালা রাস্তা দিয়ে আঁধার, মুন, তাহেরা ও রাফি আইসক্রীম খেতে খেতে হেঁটে চলেছে। মুনের তো ভীষন ভালো লাগছে রাতের খোলা আকাশের নিচে আইসক্রীম খেতে খেতে হাঁটতে। সবাই টুকটাক কথা বলছে শুধু আঁধার ছাড়া। সে তো তার তোতাপাখিকে দেখতে ব্যস্ত। এই মেয়েটাকে যত নামেই ডাকুক কমই মনে হয়। চঞ্চলতা আর বুলির জন্য তোতাপাখি নাম দিয়েছিলো প্রথমে। তারপর যখন এই মেয়েটাই ধীরে ধীরে তার মনে জায়গা করে নিতে লাগলো তখন খুব করে মনপাখি বলে ডাকতে ইচ্ছে করলো। আর কাল তো তার এই পাখি নিজেই নিজের আরেকটা নাম করণ করলো, বোকাপাখি। ‘সত্যিই বোকাপাখি একটা’ মনে মনে আওড়ে নিজেই হেসে দিলো। মুন বাঁকা চোখে আঁধারকে দেখছে। “লোকটা কারণ ছাড়া হাসছে কেনো? ভুত পেত্নিতে পেলো না তো আবার?” কথাটা ভেবেই এক ঢোক গিলে মুন ধীরে ধীরে আঁধারের কাছ থেকে কেটে পরলো। মুন গিয়ে একদম তাহেরার গা ঘেষে হাঁটতে লাগলো। মুনের চোখে মুখে ভয় বারবার আড়চোখে আঁধারকে দেখছে আর শুকনো ঢোক গিলছে। বরাবর’ই মুন ভুতে বিশ্বাসী। আর খুব ভয় ও পায়। ভুতের কথা মনে হতেই এখন যেন ভয়েরা এসে একদম জেকে ধরেছে ওকে। তাহেরা কিছুক্ষণ ধরে খেয়াল করছে মুন হঠাৎ করে কেমন যেন করছে। তাই তাহরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
—“কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?”
মুন আমতা আমতা করে বলল,
—“কই কিছু না তো।”
তাহেরা আর কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর তাহেরা বলল,
—“হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা করছে। আমরা এখানে কিছুক্ষণ বসলে কেমন হয়? এমনিতেও এখানের ভিউটা অনেক সুন্দর।”
রাভি বসে পরলো। তারপর বলল,
—“খারাপ হয় না। আমারো পা ব্যথা করছে।”
মুন বসতে যাবে তখনি আঁধার ওর হাত ধরে এক টানে দাঁড় করালো। আর তাহেরা আর রাফিকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
—“তোমরা তাহলে বসে রেস্ট করো আমরা সামনে এগোই।”
রাফি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওকে থামিয়ে তাহেরা বলে উঠলো,
—“হ্যাঁ! হ্যাঁ! আপনি আর মুন এগিয়ে যান আমরা কিছুক্ষণ পর আসছি।”
—“কিন্তু আপু আমি তো…..”
মুনকে কথা শেষ করতে না দিয়েই এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেলো আঁধার। রাফি তাহেরাকে বলল,
—“তুমি ওদের যেতে বললে কেন? একসাথে এসেছি একসাথেই যেতাম।”
তাহেরা রাফির মাথায় হাতে থাকা ব্যাগ দিয়ে বারি মেরে বলল,
—“ইডিয়েট একটা! আঁধার ভাইয়া মুনের সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চাইছে, সেটা কি বুঝতে পারছো না তুমি? আর আমাদেরও তো বেবীর সাথে একটু আলাদা সময় কাটানো উচিত। এই প্রতিটা মূহুর্ত গুলোকে মন দিয়ে অনুভব করা উচিত। ভালোবাসে ফিল করা উচিত। রাফি তাহেরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তাহেরার কপালে আর পেটে ভালোবাসার পরশ ছুইয়ে দেয়। দুজনেই মতে উঠে কতশত গল্পে। নিজের একটা ছোট্ট দুনিয়া সাজানোর স্বপ্ন বুনতে থাকে।
.
—“সমস্যা কি তোমার? এক জায়গায় চুপচাপ একমিনিট দাঁড়াতে পারো না? সারাক্ষণ ছটফট করতেই হবে?”
আঁধার বিরক্তির সুরে কথাটা বলল। আঁধার মুনের আঙ্গুলের মাঝে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দুহাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। আঁধার ফিল করতে চাইছে এই মুহূর্তটাকে, হৃদয়ে আজীবনের জন্য গেথে নিতে চাইছে। কিন্তু এমন রোমাঞ্চকর মূহুর্তে মুন হাত ছাড়াতে উঠে পরে লেগেছে। আর এতে আঁধারের কাজে ব্যঘাত ঘটছে। এবার আঁধার ধমক দিয়ে বললে,
—“আর একবার নড়াচড়া করলে এখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেব। আর কেউ তোমার লাশটাও খুজে পাবেনা।”
আঁধারের কথা শুনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায় মুন। ভয়ে আর নড়ার সাহস পায় না। যা ডেঞ্জারাস লোক এর কোনো বিশ্বাস নেই। সত্যি সত্যিই যদি ফেলে দিয়ে চলে যায়! ভাবতেই শিউরে উঠলো মুন। তাহলে তো বাচ্চা-কাচ্চা, নাতি-নাতনীর মুখ আর দেখা হবে না তার। আঁধারের নাকে মুনের খোলা চুলের কড়া ঘ্রাণ এসে বারি খাচ্ছে। যেন আধালকে মাতাল করে দিতে চাইছে। আঁধার চোখ বুজে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মুনকে ছেড়ে দিয়ে মুনের হাত ধরেই আবারো হাঁটা শুরু করলো আঁধার। মুন ছাড়াতে চেষ্টা করে বলল,
—“ছাড়ুন আমাকে। আমাকে ছোঁয়ার অধিকার নেই আপনার।”
কথাটা শোনা মাত্র’ই থমকে গেল আঁধার। তারপর ভ্রু কুঁচকে মুনের দিকে তাকালো। মুন অন্য দিকে মুখ ঘুররিয়ে রেখেছে। আঁধারের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। আঁধার মুনের গাল ধরে জোর করে নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে স্বভাবিক কন্ঠে বলল,
—“আচ্ছা! তাহলে কার অধ্যাপক আছে শুনি।”
মুন কাঠ গলায় বলল,
—“যার’ই হোক! আপনার অন্তত নেই।”
আঁধার ধীরে ধীরে নিজের স্পর্শ কঠিন করতে লাগলো। এক সময় মুনের গাল শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে, মুনের চোখে চোখ রেখে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
—“তোমাকে ছোঁয়া তো দূরের কথা, তোমার দিকে কেউ চোখ উঠিয়ে তাকালেও সোজা মাটিতে পুতে দিবো তাকে। তাই ভুলেও আর এ কথা মুখে আনবে না। নাহলে এর শাস্তি তোমাকেও ভোগ করতে হবে।”
.
রাতের খাবার খেয়ে আঁধার আর মুন রুমে এলো। মুন এসে বিছানা ঝেড়ে ঠিকঠাক করে চোখ বুঝে শুয়ে পরলো। একটু পর আঁধার ও এসে মুনের পাশে শুয়ে পরলো। মুন নিজের পাশে কোনো পানুষে অস্তিত্ব পেয়ে চোখ খুলে তাকালো। আঁধারকে নিজের পাশে শুতে দেখে গর্জে উঠে বলল,
—“আপনি এখানে শুয়েছেন কেনো?”
আঁধার ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“তো কোথায় শোব? এখানে তো সোফাও নেই যে তাতে শোব।”
মুন ফ্লোর দেখিয়ে বলল,
—“নিচে অনেক জায়গা যান ওখানে গিয়ে শুয়ে পরেন।”
আঁধার চোখ, মুখ খিচে বলল,
—“হোয়াট? আমি নিচে শোব?”
—“হ্যাঁ! পাটি বিছিয়ে পিলো আর কোম্বল নিয়ে নিচে গিয়ে শুয়ে পরুন।”
—“মুন তুমি ভালো করে জানো যে আমার এসবের অভ্যাস নেই। আর তোমরা বুঝি এভাবে অতিথিদের আপ্যয়ন করো? আমি যেখানে তোমার জন্য নিজের বেড ছেড়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়েছি। তুমি সেখানে আমার সাথে সামান্য বেড শেয়ার করতে পারবে না? হাউ সেলফিস পার্সন ইউ আর।”
মুনের একটু মন খারাপ হলো। মায়া লাগলো খুব। ঠিকই তো বলছে আঁধার “উনি আমার জন জন্য নিজের বেড ছেড়ে সোফায় পর্যন্ত ঘুমিয়েছে আর আমি উনার জন্য, উনার সাথে সামান্য বেডটাও শেয়ার করতে পারবো না? কেন পারবো না? অবশ্যই পারবো।” মনে মনে এগুলো ভেবে মুখে বলল,
—“আচ্ছা! ঠিক আছে। ঠিক আছে। থাক আর ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে হবে না। শুয়ে পরুন। আমার মনে অনেক মায়া তাই আমার বেডে আপনাকে একটু জায়গা দিলাম। কিন্তু ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন। দাঁড়ান আমি এর ও ব্যবস্থা করছি।”
বলেই মুন উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আঁধার কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। এই মেয়ে আবার কি করবে কে জানে? কিছুক্ষণ পর মুন রুমে আসলো। ওর হাতে অনেক গুলো পিলো। সোফার রুম থেকে নিয়ে এসেছি এগুলো। আঁধার ভ্রু কুঁচকে ওর কান্ড দেখছে। মুন পিলো গুলো একে একে ডেডের মাঝে রেখে ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের বর্ডার করতে লাগলো। বর্ডার করা শেষ হতেই মুন নিজের প্রাণ প্রিয় কোল বালিশটাকে জড়িয়ে ধরে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলো। এদিকে আঁধারের রাগ সপ্তম আসমানের চূড়ায় উঠে গেছে। তার ইচ্ছে করছে এক লাথি দিয়ে সব ফেলে দেতে। এমন বউ জীবনে প্রথম দেখছে যে নিজের হাসবেন্ডকে পাশে ফেলে রেখে কোল বালিশ নিয়ে ঘুমায়। আঁধার পারলে এখন এই কোল বালিশটাকে ছিড়ে পানিতে ভাসিয়ে দিতো। কিছুক্ষনের মধ্যেই মুন ঘুমিয়ে পরে। আঁধার এপাশ ওপার করে কিন্তু ঘুম আসে না। উঠে বসে মুনকে দেখে ঘুমিয়েছে কি না। হ্যাঁ ঘুমিয়ে পরেছে। আঁধার সস্তির নিশ্বাস নেয়। তারপর মুনের বানানো বালিশের বর্ডার গুলো ভেঙে, মুনের কাছ থেকে কোল বালিশটা নিয়ে ছুলে ফেলে দিলো। স্বামী, স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বড় শত্রু এই কোলবালিশ। আঁধার মুনকে নিজের কাছে টেনে নিলো। মুন ঘুমের ঘোরে আঁধারকে কোল বালিশ মনে করে জড়িয়ে ধরলো। মুনের গরম নিশ্বাস আঁধারের বুকে বারি খাচ্ছে। আঁধারের বুক কেমন শান্তিতে ভরে উঠেছে। প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে আঁধারের ঠোটে। এতোক্ষন ছটফট করছিলো কিন্তু এখন ঘুম আসছে। আঁধার মুনকে নিয়ে পারি দিলো ঘুমপুরিতে।
.
সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙ্গে মুনের। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে মুন। হামি দিতে দিতে চোখ মেলে পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলালো। সাথে সাথে মুনের চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল। পুরো রুম জোরে লাল রঙের লাভ সেপ বেলুনের ছড়াছড়ি। বেলুন গুলোর উপরে গোটা গোটা ইংরেজি অক্ষরে স্যরি লেখা। মুন পাশে তাকাতে আরো চমকে গেল। পাশে গোলাপী রঙের বড়সড় একটা টেডিভিয়ার। টেডিটার কোলে একটা লাভ তাতেও স্যলি লেখা। মুন বেড থেকে নিচে নেমে ধীর পায়ে বারান্দায় যায়। ওখানে গিয়ে আরেক দফা অবাক হয়। নিচে শতশত গোলাপের পাপড়ি বিছানো। মুন সেগুলোর উপর দিয়ে হেটে সামনে এগিয়ে যায়। ওখানে সাইডে একটা টি টেবিল রাখা তার উপরেও গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। মুন সেটার কাছেই যায়। টি টেবিলের উপর একটা ছোট গিফট বক্স আর ছোট্ট একটা চিরকুট। মুন চিরকুটটা হাতে নিলো। ওটাথে লেখা “ঝুলতে থাকা দরিটা থরে টান দেও”। মুন কিছু না ভেবেই চিরকুট যা বলা হয়েছে সেটাই করলো। দরি ধরে টান দিলো। সাথে সাথে কিছু একটা ব্লাস্ট হয়ে চকলেটের বৃষ্টি হতে লাগলো মুনের উপরে। মুন চোখ বুজে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চকলেটের বৃষ্টি শেষ হতেই গিফটটা খুলে গেখতে লাগলো ওটাতে কি আছে। বক্সের ভেতরে একটা ছোট সো-পিস। একটা গোল ডোমের মধ্যে কালো কোট প্যান্ট
পরা একটা ছেলে আর সাদা গাউন পরা। ছেলেটার এক হাত মেয়ে পুতুলটার কোমরে। মেয়ে পুতুলটার এক হাত ছেলে পুতুলটার কাধে। দুজনের আরেক হাত একে অপরের আঙুলের মাঝে। । মুন সো-পিস এর নিচের চাবি ঘুরাতেই গান বাজতে লাগলো আর ভিতরের পুতুল দুটো দুলতে লগলো। সাদা ফোমের ফোমের টুকরো গুলো স্নো ফলের মতো ডোমের ভিতরে উড়তে লাগলো। মুগ্ধ চোখে পুতুল দুটোর নাচ দেখছে মুন । মুন পুতুল দুটের জায়গায় নিজেকে আর আঁধারকে কল্পনা করতে লাগলো।
#চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩৪
বারান্দায় এসে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দু-হাত বুকে গুজে দাঁড়ালো। মুন এক দৃষ্টিতে সো-পিস’টির দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আঁধার মুনের খেয়াল নিজের দিকে আনার জন্য শব্দ করে কেশে উঠলো।
—“এহেম! এহেম!”
মুন চোখ তুলে তাকায়। আঁধারকে দেখে সো-পিসটি টি টেবিলের উপর রেখে বারান্দা থেকে রুমে যেতে পা বাড়ায় মুন আঁধার খপ করে ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সামনে এনে দাঁড় করায়। তারপর কাতর কন্ঠ স্বরে বলল,
—“এখনো কি ক্ষমা করা যায় না এই অধমকে? যে কখোনো কাউকে স্যরি বলা তো দূরের করা নিজের ভুলটাও স্বীকার করে নি। সে আজ তোমার কাছে নিজের ভুল স্বীকার করছে। বারবার হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছে। কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে বলো? শুধু একবার বলো, নিজের জান তোমার হাতে রেখে দিবো ইয়ার।”
মুন নিশ্চুপ। ওর দৃষ্টি মেঝেতে সিমাবদ্ধ। আঁধার নিজের রাগকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না। মুনের হাত ছেড়ে দিয়ে দু হাতে নিজের মাথা চেপে ধরলো। নিজের রাগ কন্ট্রোল না করতে পেরে আঁধার সজোড়ে দরজায় হাত বারি মারলো। দরজা দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে বিকট শব্দ হলো। সেই শব্দে মুনের পা থেকে মাথা অবধি কেঁপে উঠলো। আঁধার রেগে বলল,
—“এতো কিছু করার পরও, এতো করে ক্ষমা চাওয়ার পরও তুমি মানবে না তো? ওকে ফাইন, আমি আর কখনো তোমার সামনে আসবো না। চলে যাবো তোমার জীবন থেকে। একেবারে চলে যাবো।দেন থেকো তুমি তোমার ইগো, জেদ, আর সেল্ফ-রেসপেক্ট নিয়ে।”
আঁধার রেগে বেরিয়ে যেতে নেয় কিন্তু মুন আঁধারের হাত ধরে ফেলে। আঁধার এখনো রাগে ফুঁসছে। মুন আঁধারের দিকে ফিরে আচমকাই ওকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দেয়। মুন কিছুতেই মানতো না, যদি না আঁধার মুনের জীবন থেকে চলে যাওয়ার কথা বলতো। কথাটা শুনতেই মুনের বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। আঁধার ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারলো না। মুনের কান্নার শব্দে আঁধারের সব রাগ মুনের চোখের জলে ভেসে গেল। আঁধার ধীরে ধীরে মুনের মাথায় এক হাত রেখে আরক হাতে মুনের পিঠ জিয়ে ধরলো। মুন আঁধারের কাধ পর্যন্ত পরে। এর মানে এই নয় যে মুন খাটো, আঁধারই লম্বা বেশি। যাকে বলে খাম্বা। আর এমনিতেও মুনের খাম্বা টাইপ ছেলেদের উপর ক্রাস আছে। উপস! মানে আগে ছিলো। এখন আসল কথা হলো মুন কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলে, নাকের জলে আঁধার টি-শার্ট পুরো ভিজিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সে দিকে পাত্তা না দিয়ে আঁধার ঠোঁট কামড়ে জিজ্ঞেস করলো,
—“মাফ করেছো নাকি এখনো আগের মুডেই আছো? যদি আগের মুডে থেকে থাকো তাহলো ছাড়ো অমাকে আমি চলে যাচ্ছি।”
আঁধারের কথা শুনে মুন যতটুকু ওর দ্বারা সম্ভব ততটুকু শক্ত করে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে। আঁধার আবারো বলল,
—“কি ভাববো, হ্যাঁ নাকি না?”
মুন কিছু বলল না। কিন্তু আঁধার যেন আজ প্রতিগ্গা করেছে যে মুনের মুখ থেকে কথা বের করেই ছাড়বে। আঁধার মুনকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
—“না বললে ছাড়ো আমাকে আমি চলে যাচ্ছি।”
মুন এবার মুখ খুলল। আঁধারকে চেপে ধরে বলল,
—“করে দিয়েছি ক্ষমা আপনাকে।”
আঁধার ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“সত্যি! মন থেকে করেছো তো?”
—“হুম!”
আঁধার হেসে বলল,
—“তাহলে চলো বাড়িতে। মম, ড্যাড আর আলিয়া অপেক্ষা করছে তোমার যাওয়ার জন্য।”
মুন নিচু স্বরে বলল,
—“আজ না।”
—“তাহলে কবে?
—“আমি আরো কিছুদিন থাকতে চাই এ বাড়িতে।”
আঁধার হালকা হেসে বলল,
—“ঠিক আছে, তাহলে তাই হোক।
.
আজ এক সপ্তাহ হয়েছে মুন রেজওয়ান মেনশনে এসেছে।এখন মুন আর আঁধারের সম্পর্কটা আগের থেকে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। হাসি,খুশি, দুষ্টুমিতে দুজনের দিন কাটছে। কিন্তু একটা জিনিস এখনো আগের মতো আছে। আর তা হলো দুজনের ঝগড়া করার সভাব। দিনে না হলেও একবার ছোট খাটো টর্নেডো হবেই। মুন খান বাড়ি থেকে আসার পর থেকে আরিফা রেজওয়াএর কাছে রান্না শিখছে। আরিফা রেজওয়ান ও খুব যত্ন করে রান্না শিখাচ্ছে মুনকে। মুন এখন অবশ্য টুকটাক রান্না পারে। আজ মুন কিচেনে রান্না করছিলো। আরিফা রেজওয়ান আরমান রেজওয়ানকে চা দিতে গেছে। চুমকি পাশেই সবজি কাটছিলো। হঠাৎ করে মুনের মাথা ঘুরে আসে পরে যেতে নেয় কিন্তু চুমকি ততক্ষণাৎ মুনকে ধরে ফেলে। আরিফা রেজওয়ান ও কিচেনেই আসছিলেন মুনের এমন অবস্থা দেখে ছুটে এসে ওকে ধরে। মুন এখনো জ্ঞান হারায় নি। চুমকি আর আরিফা রেজওয়ান মিলে মুনকে ধরে উপরে ওর রুমে নিয়ে গেল। মুনকে বেডে শুইয়ে দিয়ে ওর গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
—“কি হয়েছে মুন? শরীর খারাপ করছে?”
মুন নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আদো আদো কন্ঠে জবাব দিলো,
—“জানি না। হঠাৎ করে মাথা ঘুরছে। শরীর দুর্বল লাগছে খুব।”
আরিফা রেজওয়ান শাসনের সুরে বলল,
—“ঠিক মতো না খেলে তো শরীর দুর্বল লাগবেই। আর এই কারণেই মাথা ঘুরছে। আমি দুধ, ডিম আর কিছু ফল পাঠিয়ে দিচ্ছি। কোনো রকম বাহানা না করে সব খাবে।”
মুন কিছু বলল না ওর কিছু ভালো লাগছে না। কথা বলার শক্তিটুকু যেন শেষ হয়ে গেছে। আরিফা রেজওয়ান আর চুমকি নিচে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার একটা ট্রে হাতে চুমকি রুমে আসলো। আরিফা রেজওয়ান মুনের জন্য সেদ্ধ ডিম, দুধ আর ফল পাঠিয়েছে। চুমকি ট্রেটা বেডের পাশে রেখে বলল,
—“বড়মা এই গুলা সব খাইয়া শেষ করতে কইছে। না হলে শরীলে বল পাইবেন না। আর ভাইজান আইয়া আপনার এই অবস্থা দেখলে আপনি পাক্কা বকা খাইবেনই। তার থেকে ভালো আপনে খাইয়া লন।”
মুন হালকা হেসে বলল,
—“ঠিক আছে। তুই যা সাসুমা’কে হেল্প কর।”
—“আইচ্ছা”
বলে চুমকি চলে গেল। মুন আস্তে করে উঠে বসে ফল খেতে লাগলো। ওর ডিম দুধ একটুও পছন্দ না। কিন্তু মুন ফল খেতে খুব ভালোবাসে। ওর সব থেকে প্রিয় ফল হলো আঙ্গুর। আঙ্গুর যত খাক মুনের কখনো মন আর পেট কোনোটাই ভরবে না।
.
অক্টোবরের মাসের ২৫ তারিখ। তাহেরার প্রেগনেন্সির সাত মাস চলছে। তাই আজ তাহেরাকে সাধ খাওয়ানো হবে। যেটা প্রথম গর্ব-বতি মহিলাকে বাচ্চা গর্বে আসার সাত মাসে খাওয়াতে হয়। তাই খান বাড়িতে আজ ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আঁধার মুনকে সকাল খান বাড়িতে দিয়ে হসপিটালে চলে গেছে। আর যাওয়ার আগে বলেছে দুপুরের আগেই চলে আসবে। মুন এবার আর কাজে ফাকি দিচ্ছে না। ওকে কাজ করার জন্য বলাও লাগছে না। আদা, রসুন, পেঁয়াজ কেটে নিয়ে বাটতে বসেছে। যেটুকু পারে করছে। তাহমিনা খান তো এটাই চেয়েছিলেন। তার মেয়েরা যেন সব ধরেন কাজ করতে পারে। সব সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে। দায়িত্ববান হয়ে উঠে। তাহেরাকে নিয়ে তার কোনো চিন্তা নেই। এক মুনকে নিয়েই চিন্তা ছিল। আজ তাও দূর হয়ে গেছে। কিছু মহিলারা মিলে কয়েক পদের পিঠা বানাচ্ছে। যা মুন আগে কখনো দেখেও নি আর নাম ও জানা নেই। মুন তাদের বানানো দেখে দেখে নিজেও বানানোর চেষ্টা করছে। মুন জি-জান দিয়ে পিঠা বানানোর চেষ্টা করছে। একজন মহিলা মজা করে বলে উঠলো,
—“তোদের দু বোনের তো একদিনেই বিয়ে হয়েছে। তাহেরার খুশির খবর তো এসে গেছে। তা তোরটা শুনবো কবে?”
আরেকজন বলল,
—“কি বলছেন ভাবি ও তো নিজেই বাচ্চা, এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিয়ে করবে কি? আর শুনেছি ওর জামাই ডাক্তার। মুনের এতো কম বয়সে মনে হয় না সে বাচ্চা নেওয়ার কথা চিন্তা করবে।”
একজন বয়স্ক মহিলা পাশে বসেই পান চিবোচ্চিলো সে এ কথা শুনে পানের পিক ফেলে বলল।
—“কি কও তোমরা? ওর থেকেও কম বয়সে তিন পোলা-মাইয়ার মা হইছি। আর ও তো ভালোই সেয়ানা-ডাঙ্গর হইছে। বাচ্চা নেওনে সমেস্যা কিসের। এহন বাচ্চা নিবো না তো কহন নিবো। আমাগো কালেই ভালো ছিলো। এহন কার পোলা-মাইয়ারা ওষুধ খাইয়া বাচ্চা হইতে দেয় না। বুঝে না তো যে, এতে আল্লা তায়ালা বেরাজ হয়। তারপর রাগ হইয়া আর বাচ্চা দেয় না। তাই সময় থাকতে বাচ্চা নেওন ভালো।”
সবাই বাচ্চার বিষয়ে কথা বলছে আর মুন চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে সবার কথা শুনছে। মুনের মাথা আর মনের মধ্যে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হলো ‘বাচ্চা’। একটা ফুটফুটে তরতাজা গোলাপের কোলির ন্যায় বাচ্চা। যার সাথে মুন সারাদিন খেলবে। নিজের হাতে খাওয়াবে, গোসল করাবে, ঘুমপাড়াবে, গল্প করবে। এসব ভাবতেই মুনের মুখে একচিলতে হাসির ঝলক ফুটে উঠে। মনের মধ্যে যেন শীতল হাওয়া বয়ে গেল।
আঁধার নিজের কথা মতো দুপুরের আগেই এসে পরে। এসে ফ্রস হয়ে, একটা কালো শার্ট আর প্যান্ট পরে, চুলে জেল লাগিয়ে রেডি হয়ে নেয়। মুনও কালো রঙের শাড়ি পরেছে। মুন ঠিক করে শাড়ি পরতে পারেনা তাই তাহমিনা খান পরিয়ে দিয়েছে। মুন সোজা সিথি করে উপরে উঠিয়ে চুল গুলু খোপা করে টকটকে লাল তাজা গোলাপ ফুল লাগিয়েচে।দু হাত ভর্তি কালো রেশমি চুরি। চোখে গাঢ় কালো কাজল। ঠোঁটে গাড় লাল লিপস্টিক। কানে কালো পাথরের ভারী কানের দুল। সিথির মাঝে ম্যাচিং বড় টিকলি। মুখে ভারী মেকআপ। মুন আজ নিজেকে আঁধারের রঙে সাজিয়েছে। আজ মুনকে অসাধারণ লাগছে। একবার দেখলে যেন সারাজীবন দেখতেই ইচ্ছে করবে। আজকে মুনের উপর থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে যাবে। মুন নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিজেই নিজের উপর ক্রাশ খেলো। মুন খুশি হয়ে বলল,
—“আমি নিজেই নিজের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছি না। আর সবাই কি করবে আল্লাহ’ই মালুম। আমাকে এভাবে দেখে সব ছেলেরা নিশ্চিত হার্ট অ্যাটার্ক করবে। কিন্তু এখানে ছেলেই বা আছে কে? এক মি.হাসবেন্ড আর দুই জিজু। ধুর অন্য ছেলেদের দিয়ে আমি কি করবো? শুধু আমার মি.হাসবেন্ডের মাথা ঘুরাতে পারলেই চলবে।”
মুন নিজেকে আরেকবার দেখে আয়নায় একটা কিস করে ড্রয়িং রুমে চলে যায়। ওখানেই সবাই আছে। আঁধার একা এক পাশে বসে মোবাইব ঘাটছে। তার এসব ফাংসন বরাবরই অপছন্দ, বিরক্তিকর। কিন্তু শুধু মুন আর কবির খানের জন্যই এখানে বসে আছে। কি আর করার? আঁধারের ভাস্য মতে ‘হিটলার শশুর জুটেছে কপালে। কথায় কথায় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। তাই বাধ্য হয়ে সব কথা শুনতে হয়’। মুন পা টিপে টিপে আঁধারের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাতে থাকা কাচের চুরি গুলো হালকা ঝাকিয়ে শব্দ করে যাতে আঁধার ওর দিকে তাকায়। আর তাই হলো। আঁধার ঝনঝন শব্দে চোখ তুলে তাকাতেই মুনকে দেখে থমকে গেল। হঠাৎ করে হার্ট বিট ফাস্ট হয়ে গেছে। বুকের ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সরা মন জুড়ে উতাল-পাতাল শুরু হয়ে গেছে। শরীর অস্থির অস্থির লাগছে। মুন মিষ্টি সুরে জিজ্ঞেস করলো,
—“আমাকে কেমন লাগছে মি.হাসবেন্ড?”
আঁধার কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এ মুহূর্তে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে আঁধার। মুন আবারো জিজ্ঞেস করলো,
—“বললেন না যে, আমাকে কেমন লাগছে?”
আঁধার এক ঢোক গিলে নিজেকে সামলে বলল,
—“সুন্দর!”
মুন আঁধারের জবাবে সন্তুষ্ট নয়। তাই গাল ফুলিয়ে বলল,
—“শুধুই সুন্দর? আর কিছু না?”
আঁধার এবার ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,
—“পুরো গাছ জুড়ে ফোটা একটি কালো গোলাপের ন্যায় সুন্দর।”
মুন আঁধারের এই একটি বাক্য বলা হাজারো কথার মানে বুঝতে পারলো। আঁধার একবাক্যেই নিজের মনের সকল ভাব প্রকাশ করেছে। মুন সন্তুষ্ট আঁধারের বলা এই এক বাক্যে।
.
মুন আঁধারের বুকের উপর মুথা রেখে শুয়ে আছে। আঁধার বিলি কেটে দিচ্ছে মুনের মুথায়। এখন হয়তো রাত দশটা বাজে। মুনের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। আজ দু বার বমি করেছে। শরীর একদম ভেঙে পরেছে। চোখ, মুখ শুকিয়ে গেছে। আঁধার ভিশন চিন্তিত হয়ে পরেছিল মুনকে নিয়ে। দুপুরে খাবার সময় বমি হয়েছে আবার রাতে খাবার সময়ও একই ভাবে বমি হয়েছে। যার কারণে খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছে মুন। তাই আঁধার মুনকে নিয়ে রুমে চলে আসে আর ওকে বমির ওষুধ খাইয়ে দেয়। তখন থেকেই মুন এভাবেষাঁধারের বুকের উপর চোখ বুজে শুয়ে আছে আর আঁধার ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আজ রাত থেকে কাল সকালেই চলে যাবে ওরা। মুন চোখ বুঝা অবস্থায়ই ডাকলো,
—“মি.হাসবেন্ড”
আঁধার জবাব দিলো,
—“হুম! কিছু বলবে? এখনো কি বমি আসছে?”
মুন মাথা এপাশ ওপাশ করলো। আঁধার জিজ্ঞেস করলো,
—“তাহলে?”
মুন কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বলল,
–“আমাদের ও যদি একটা বেবী আসতো তাহলে কেমন হতো?”
আঁধার মুনের মাথার বুকের উপর থেকে তুলে উঠে বসে ভ্রু কুঁচকে বলল,
–“মানে?”
আঁধারকে উঠে বসতে দেখে মুনও উঠে বসলো। তারপার আঁধারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“মানে, আমাদের একটা বেবী হলে ভালো হতো না?”
আঁধার হঠাৎ করেই রেগে গেল। রেগেই বলল,
—“এসব আজেবাজে চিন্তা কে ঢুকিয়েছে তোমার মাথায়? এ জন্যই আমি এখানে তোমাকে নিয়ে আসতে চাইছিলাম না। কারণ আমি মানুষের সভাব সম্পর্কে অবগত।”
মুন আঁধারকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল,
—“না মি.হাসবেন্ড আপনি ভুল ভাবছেন। এসব কেউ বলেনি আমাকে।”
—“তাহলে এই আজেবাজে চিন্তা গুলো তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে?”
মুন মাথা নিচু করে বলল,
—“আমি চাই আমাদের একটা বেবী আসুক।”
আঁধার চেচিয়ে বলে উঠলো,
—“হোয়াট? পাগল হয়ে গেছ তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে? তুমি নিজেই একটা বাচ্চা আরেকটা বাচ্চাকে সামলাবে কি করে?”
মুন আঁধারের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
—“আমি ঠিক পারবো।”
আঁধার বুঝতে পারছে না যে মুনের মাথায় এই কথাটা এলো কি ভাবে? আঁধার এটুকু বুঝতে পারছে যে এই বিষয়টা মুনের মুথায় খুব ভালো ভাবে গেথে। এখন মুনকে বুঝালেও বুঝবে না। তারপরও আঁধার মুনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
—“মুন একটু বোঝার চেষ্টা করো, তুমি এখনো নাবালিকা। তুমি প্রাপ্ত বয়স্ক হওনি দেখে, যেখানে তোমার সেফটির কথা ভেবে সজ্ঞানে কখনো তোমাকে ছুয়ে পর্যন্ত দেখি না। সেখানে বাচ্চা…! তুমি ভাবলে কি করে?”
মুনের চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। তা দেখে আঁধার মুনের দু গালে হাত রেখে ওর মুখটা উচু করে বলল,
—“বোকা কাঁদছো কেনো? তুমি আসলেই বোকাপাখি। তুমি আগে বড় হও। বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত হও তারপর নাহয় আমরা এ বিষয়ে ভাববো। দরকার হলে একটা ক্রিকেট টিমই তৈরী করে ফেলবো।”
এ কথা শুনে মুন কাঁদতে কাঁদতেই হেসে দেয় মুন। মুনের মনে হয়, আঁধারের থেকে ভালো ওকে না কেউ বোঝে আর না বুঝাতে পারে। আঁধার সব সময় মুনেকে ভুল পথ থেকে বুঝিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসে। মুন যতবার ভুল করে আঁধার ততবার ওর ভুল গুলো সুধরে দেয়। মুন নিজেকে সত্যি ভাগ্যবতী মনে কবির খানকে নিজের পিতা আর আঁধারকে নিজের স্বামী হিসেবে পেয়ে। দুজন মানুষই মুনকে অসম্ভব ভালোবাসে কোনা সার্থ ছাড়া। মুনের হাসি মাখা মুখটা দেখে আঁধার মুনের কপালে চুমু খায়। তারপর আবার আগে মতো মুনকে বুকে নিয়ে শুয়ে পরে। মুনের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে গল্প করে দুজনে। গল্প করতে করতেই এক সময় ঘুমিয়ে তলিয়ে যায় দুজনে।
#চলবে,