Mr_Husband,পর্ব_৪৩,৪৪

0
2967

#Mr_Husband,পর্ব_৪৩,৪৪
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৪৩

মুন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। গলা দিয়ে টু শব্দ টুকুও করতে পারছে না। অপর ব্যক্তিটির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এতো বছর পর মুনকে এভাবে দেখবে সে ভাবতেও পারেনি। দুজনের চোখেই জলে ভরে উঠে। দু এক ফোটা জল সীমাসা অতিক্রম করে চোখের কানিশ বেয়ে গড়িয়ে পরলো। মুন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আরিফা রেজওয়ানকে। এই মহিলাটিকে নিজের মায়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে মুন। কেননা নিজের মাও ওকে এতোটা ভালোবাসেনি। কতক্ষণ এভাবে পার হয়ে যায় ঠিক নেই। হঠাৎ মুনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আরিফা রেজওয়ান ডাকলো,

—“মুন”

মুন মাথা তুলে দেখে আরিফা রেজওয়ানকে। এখনো ঠিক আগের মতোই আছে। আরিফা রেজওয়ান মুনের চোখের জল মুছে দিয়ে বলেন,

—“কেমন আছো মামনী?”

—“ভালো। তুমি কেমন আছো? আর বাবা, আলিয়া?”

আরিফা রেজওয়ান হালকা হেসে জবাবদেন,

—“তোমাকে ছাড়া আমড়া ভালো থাকতে পারি?”

মুন অপরাধীর মতো মথা নিচু করে রাখে। আরিফা রেজওয়ান আবারো বলেন,

—“ও ভালো নেই মুন। ও ভালো নেই। একটা মুহূর্তও ভালো থাকতে পারছে না আমার ছেলেটা। বাইরে থেকে দেখায়না কিন্তু আমি জানি ও ভেতর ভেতরে ধুকে ধুকে মরছে প্রতিটি মুহুর্তে। আমি তোমাকে কোনো দোষ দিবো না। প্রশ্ন করবো না; কেনো চলে গিয়ে ছিলে, কোথায় গিয়ে ছিলে, এতো দিন কি করেছো। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবো না। শুধু এতটুকু অনুরোধ করবো ফিরে এসো। আমার ছেলেটার তোমাকে খুব বেশি প্রয়োজন। আমি কথা দিচ্ছি কেউ তোমাকে কিচ্ছুটি বলবে না। আমি হাত জোর করছি প্লিজ সব ভুলে ফিরে এসো।”

আরিফা রেজওয়ানের চোখে ছেলের জন্য কাতরতা দেখা ঝাচ্ছে। অনুনয়ের সুরে মুনকে কথা গুলো বলল আরিফা রেজওয়ান। মুনের কষ্ট লাগছিলো খুব আরিফা রেজওয়ানের কথা শুনে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই। মুন কোনো ভাবেই আঁধারের কাছে ফিরবে না বলে শপথ করেছে। কারণটা শুধু ওর মাফিয়া হওয়া বা খুন করা না। আঁধারের খুবই জঘন্য রুপ মুন নিজের চোখে দেখেছে। আঁধার ওকে ধোঁকা দিচ্ছিলো। যেটা মুন প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে। আর যারা মানুষ খুন করতে পারে তাদের দ্বারা জঘন্যের থেকেও জঘন্য কাজ করা সম্ভব। মুন নিজেকে সংযত করে। কোনো ভাবেই উইক হলে চলবে না। মুন ঠোঁট ভীজিয়ে কিছু বলতে নেয়,

—“মা এটা সম……”

—“মাম্মাম”

কথা মাঝখানে মিষ্টির গলার আওয়াজ শুনে থমকে যায় মুন। আস্তে আস্তে পেছনে ফিরে দেখে মিষ্টি। মিষ্টি ‘মাম্মাম, মাম্মাম’ বলতে বলতে দৌড়ে আসে মুন নিচে বসে মুনকে কোলে তুলে নেয়। আরিফা রেজওয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ওর দিকে আর মিষ্টির দিকে বিষ্ফরিত নয়নে তাকিয়ে আছে। মুন অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। মিষ্টির চোখ, ঠোঁট চুল সহ পুলো চেহারা যেন বলছে এটা তার আঁধারের সন্তান। আরিফা রেজওয়ান মিষ্টির গালে হাত রেখে ছলছল নয়নে খুশি খুশি ভাব ঢেলে বল নেয়,

—“আমার আঁধারের……..”

আরিফা রেজওয়ান এটুকো বলতেই মুন মাথা ডানে বামে ঘোরায় মানে সে যা ভাবছে তা না। আরিফা রেজওয়ান অবাক চোখে মুনের দিকে তাকায়। মুন অসহায় চাহনী দেয়। আরিফা রেজওয়ান দু এক পা পিছিয়ে যায়। মিষ্টি কৌতূহলী হয়ে ছোট ছোট হাত দিয়ে মুনের মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে,

—“মাম্মাম, হু ইজ সি ?”

মুন আরিফা রেজওয়ানের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—“তোমার আরেকটা দিদুন।”

মিষ্টি ছোট্ট করে ডাকে,

—“দিদুন!”

আরিফা রেজওয়ান মিষ্টির দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসলো। তারপর মুনকে বলল,

—“অনেক ভালো থেকো। আমি আসছি!”

বলেই চলে গেল। মুনের মনে হলো যেন পালালো। মিষ্টি অধৈর্য গলায় বলল,

—“মাম্মাম তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়ে ছিলে? আমি আর পাপা তোমাকে অনেক খুজেছি।”

মুন চাপা শ্বাস ছেড়ে বলল,

—“এখানেই ছিলাম। তোমার পাপা কোথায়?”

কোথা থেকে রাত এসে বলল

—“এই যে। এঙ্গরি বার্ড কোথায় হারিয়ে যাও? তোমাকে খুজতে খুজতে আমাদের বাবা মেয়ের পেটের মধ্যে ইদুর নাচ শুরু হয়ে গেছে।”

মিষ্টি খিলখিল করে হেসে বলল,

—“পাপা জলদি চলো ইদুরকে খাইয়ে শান্ত করতে হবে।”

মুন মিষ্টির কথা শুনে মৃদু হেসে বলল,

—“হুম চলো।”

.
বড় রেস্টুরেন্টটির প্রতিটা টেবিল বুক। দুপুর টাইম বলে অনেক মানুষের ভীড়। ওয়েটাররা খাবার নিয়ে এমন ভাবে ছুটছে যেন দৌড়াচ্ছে। জানালার সাইডে একটা টেবিলে বসেছে মুন, মিষ্টি, রাত। মুন ফোন করে ঊর্মিকে আসতে বলে ফোন কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পরই অর্ডার করা খাবার নিয়ে আসে ওয়েটার। মিষ্টির জন্য চিকেন বিরিয়ানী ও কোল্ড ড্রিংক। রাতের জন্য বিফ। আর মুনের জন্য চাউমিন। মিষ্টি আর রাত খাচ্ছে। মুন খাবার চামচ দিয়ে নাড়ছে খেতে ইচ্ছে করছে না ওর। মুনকে না খেয়ে খাবার নাড়াচাড়া করতে দেখে রাত ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

—“কি হলো খাচ্ছো না কেনো?”

মুন জোর পূর্বক হেসে বলল,

—“খাচ্ছি তো।”

বলেই মুন কিছুটা চাউমিন উঠিয়ে মুখে নিলো। রাত আবারো নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মুন আরো কয়েক চামচ মুখে দিতেই সব গলা দিয়ে উঠে আসতে চায়। মুন উঠে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে যায়। রাত পেছন থেকে অনেক বার ডাকে কিন্তু মুন শুনে না। মিষ্টিকে একা রেখে মুনের পেছনে যেতেও পারছে না।
মুন ওয়াশরুমে এসে সমানে বমি করে। কিন্তু তা কোনো স্বাভাবিক বমি না রক্ত বমি। নাক মুখ দিয়ে সমানে রক্ত বের হচ্ছে। বমি থামলে তাড়াতাড়ি মুখে পানির ঝাপটা দেয়। মুখ হাত ধুয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে মুখের পানি মুছে ফেলে সামনে থাকা আয়নায় তাকায়। মুন দেখে নাক দিয়ে আবার রক্ত বের হচ্ছে। তা দেখে মুন হাসে। এই হাসিতে কিছুলো বোঝা বড় দায়। এই হাসির মানে কি তা বোঝার সাধ্য কারো নেই। মুন হাসতে থাকে।

.
হসপিটালে নতুন ইন্টান ভর্তি হয়েছে। ড. আঁধার রেজওয়ান হয়ে তাদের ক্লাস করানো, সার্জারি করা, পেশেন্ট দেখা। আবার AR হয়ে মাফিয়া জগৎ লিড করা। এতো কাজের মধ্য একটু শ্বাস নেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে না আঁধার। রাত 2:45 মিনিটে বাড়ি ফেরে আঁধার। গায়ের কোট’টা খুলে টি টেবিলের উপর রেখে সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে পরে। শ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। হা করে শ্বাস নিচ্ছে আঁধার। এখন একটু পানি খুব প্রয়োজন। হঠাৎ কেউ বলে উঠে,

—“পানিটা খেয়ে নেও।”

আঁধার তার কথা শুনে মৃদু হেসে চোখ খোলে। আরিফা রেজওয়ান পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আঁধার আরিফা রেজওয়ানের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে একদমে পুরোটা শেষ করে। আরিফা রেজওয়ান কিছু না বলে চলে যায়। আঁধারের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তাই চুপ থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর আরিফা রেজওয়ান আবার এসে টি টেবিলের উপর কিছু ফেলে। আঁধার চোখ খুলে সেগুলো দিকে তাকিয়ে বলে,

—“এগুলো কি মম?”

আরিফা রেজওয়ান ভারী গলায় বলে,

“ছবি। আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখেছি। তার মধ্যে যাদের আমার পছন্দ হয়েছে তাদের ছবি এখানে আছে। তুমি এখান থেকে যাকে পছন্দ করবে এক মাসের মধ্যে তাকে তোমার বউ করে ঘরে আনবো।”

আঁধার ক্লান্ত গলায় বলে,

—“মম,তুমি এগুলো কেনো করছো?”

আরিফা রেজওয়ান চোখ, মুখ শক্ত করে বলল,

—“কারণ আমি তোমাকে মরিচিকার পেছনে ছুটতে আর দিবো না। তুমি এক মাসের ভেতরে বিয়ে করবে। আর এটাই ফাইনাল। যে ছয় বছরেও ফেরেনি সে আর কখনোই ফিরবে না। শুধু শুধু তার অপেক্ষা করাটা বোকামি। কেউ অজানতে হারিয়ে গেলে তাকে খুজে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু যে যেনে শুনে হারিয়ে যায় তাকে খুজে পাওয়া অসম্ভব। সে তার দুনিয়ায় দিব্বি খুশি আছে। তাই আজ এই মুহূর্ত থেকে মনে করবে মুন মরে গেছে। এই নামের কোনো অস্তিত্ব তোমার জীবনে কখনো ছিলোই না।”

আঁধার উঠে দাঁড়িয়ে কাতর কন্ঠে বলে উঠে,

—“মম! এসব তুমি কি বলছো?”

আরিফা রেজওয়ান গর্জে উঠে বলেন,

—“যা বলছি ঠিক বলছি। আর যতদিন না তুমি বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছো ততদিন আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলব না। মনে করবে তোমার মম’ও মরে গেছে।

বলেই আরিফা রেজওয়ান গটগট করে চলে গেলেন। আর যা’ই হোক তিনি তার ছেলেকে আর কষ্ট পেতে দিবেন না। মুন যদি সব ছেড়ে অন্য কারো সাথে খুশি থাকতে পারে তাহলে আঁধার কেনো পারবে না। সে তার ছেলেকে খুশি করেই ছাড়বেন। সুন্দরের থেকে ও সুন্দর মেয়ে বউ করে গরে আনবেন ছেলের জন্য। আঁধারের এমনিতেই প্রচুর মাথা ব্যথা করছিলো তার উপর সব। এখন মনে হচ্ছে যেন মাথা ছিড়ে পরে যাবে। আঁধার আর এক মিনিট ও দাড়ালো না সিড়ি বেয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। মাথা ব্যথার জন্য শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে আঁধার এরই মধে শব্দ করে ফোন বেজে উঠলো। আঁধার ফোন হাতে নিতেই দেখে স্ক্রিনে অয়ন নামটা ভেসে উঠেছে। আঁধার ফোন রিসিভ করে কানে ধরে ব্যালকনিতে চলে গেলো। তারপর গলা পরিষ্কার করে বলল,

—“বলুন অফিসার কি খবর?”

অয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল,

—“অফিসার! মজা করছিস? আমি কিন্তু মজারর মডে একদম নেই। একটা সিরিয়াস খবর আছে। আমার তোর হেল্প চাই।”

আঁধার আলসেমি ভেঙে গোল দোলনাটায় বসে বলল,

—“বলুন অফিসার? শুনছি!”

অয়ন বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল,

—“আগে এই অফিসার অফিসার করা বন্ধ কর।”

আঁধারও বিরক্তির রেশ টেনে বলল,

—“তুই বলবি?”

—“আচ্ছা বলছি শোন। আমরা আমাদের গুপ্তচরদের কাছ থেকে খবর পেয়েছি, মিরপুরের একটা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ট্যারিরেস্ট এ্যাটার্ক হতে চলেছে। ওরা বাচ্চাদের মহরা বানিয়ে নিজেদের কার্য হাসিল করতে চাইছে। প্লিজ তুই বাচ্চা গুলোকে বাচা।”

আঁধার গম্ভীর গলায় বলল,

—“কখন ওরা এ্যাটাক করবে?”

অয়ন ছোট্ট করে বলল,

—“ঠিক কবে করবে জানি না কিন্তু শুনেছি তিনদিনের মধ্যেই করবে।”

—“ওকে, আমি দেখছি। বায়!”

বলে অয়নের বলার ওয়েট না করেই কেটে দিলো। এতো এতো টেনশন। তার উপর আরেক টেনশন দিয়ে দিলো অয়ন। আঁধার দোলনা থেকে উঠে ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো কি করা যায়। আরিফা রেজওয়ানের বলা কথা গুলো ভাবছিলো হঠাৎ তার একটা খপ করে মাথায় গেথে যায়। সাথে সাথে মাথা চড়ে উঠে। যা বোঝার বুঝে নেয় আঁধার। ইশ তখন কেনো ধরতে পারলো না কথাটা। যাই হোক এখন আসল কাজ করতে হবে। আজ আঁধার সেই লেবেলের খুশি। বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে বলে,

—“হাইড এ্যান্ড সি খেলা শেষ। আমি তোমাকে খুজে নিয়েছি।”

বলেই আঁধার বাকা হাসলো।

#চলবে,

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৪৪

আজ মিষ্টির স্কুলের প্রথম দিন আর মুনের অফিসেরও। মুন মিষ্টিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে স্কুলের জন্য রেডি করে দিলো। তারপর আবার গিয়ে রাতকে ঘুম থেকে উঠালো। রাত ইংল্যাণ্ডে যেমন ফেমাস তেমনই বাংলাদেশেও ওর অনেক ফ্যান ফলোয়ার আছে। এদেশেও রাতের অনেক নাম ডাক। তাইতো রাত বাংলাদেশে পা রাখার সাথে সাথেই দুটো মিউজিক এ্যাল্বামের অফার আসে। মুন মিষ্টিকে জোর করে খাওয়াচ্ছিলো। মেয়েটার খাওয়া নিয়ে বড্ড অনিহা। এরই মধ্যে রাতও রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে। মিষ্টি কিউট করে বলে,

—“গুড মর্নিংপাপা।”

রাত মিষ্টির সাথে হাই ফাইভ করে মিষ্টির মতো বলল,

—“গুড মর্নিং প্রিন্সেস।”

মুন রাতকে ব্রেকফাস্ট দেয়। মিষ্টি নাক ফুলিয়ে বলল,

—“পাপা দেখোনা আমার খেতে ভালো লাগছে না তবুও এ্যাংরি বার্ড আমাকে জোর করে এগুলো খাওয়াচ্ছে। এ্যাংরি বার্ড ব্যাড গার্ড। তুমি একটু এংরি বার্ডকে বোকে দেও না।”

মুন চোখ বাকিয়ে মিষ্টির দিকে তাকালো। মিষ্টি কাদো কাদো মুখ বানিয়ে এ্যাক্টিং করে রাতকে বলল,

—“দেখো পাপা মাম্মাম কিভাবে তাকাচ্ছে মিষ্টির দিকে। মিষ্টি ভয় পায় না বলো?”

রাত রাগ দেখানোর মতো বলল,

—“ঠিকই তো। এ্যাংরি বার্ড তুমি ওভাবে তাকাও কেন? মিষ্টি ভয় পায় না? একদম ওভাবে তাকাবে না। ইউ আর এ ব্যাড গার্ল। তাই না মিষ্টি?”

মিষ্টি হাত তালি দিতে দিতে খিলখিল করে হেসে দেয় সাথে রাত ও হাসে। দুজনে আবারো হাই ফাইভ করে। মিষ্টি বলে,

—“একদম ঠিক।”

মুন এতোক্ষন চুপচাপ সহ্য করে ছিলো। এবার রেগে কোমরে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে রাত আর মিষ্টির দিকে তাকায়। দুজনেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। মুন তেড়ে গিয়ে বলে,

—“তবে’রে! আজ তোমাদের একদিন কি আমার যতদিন লাখে।”

মিষ্টি আর রাত চেয়ার ছেড়ে দৌড়। মুন দুজনকেই ধাওয়া করছে। মিষ্টির খিলখিল করে হাসির ধ্বনিতে পুরো বাড়ি মুখোরিত। একসময় মুন খপ করে মিষ্টিকে ধরে ফেলে। মুন মিষ্টির পেটে কাতুকুতু দিতেই মিষ্টি হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরার অবস্থা। মিষ্টির হাসি দেখে মুনও হেসে দেয়। রাত পাশে এসে বসে হাপাতে হাপাতে হাসে। মুন মিষ্টিকে আরেকটু খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়। তারপর নিজেও অসির জন্য রেডি হতে চলে যায়। ততক্ষণ রাত আর মিষ্টি খুনসুটিতে মেতে উঠে। ব্লাক জিন্স আর রেড কালার টিশার্ট। হাই লাইট চুলগুলো কার্ল করা। পায়ে হাই হিল। হাতে ব্লাক লেডিস ওয়াচ। কাধে পার্স ব্যাগ। মুন রেডি হয়ে নিচে নামে। সবাই এক সাথে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত ওদের ড্রপ করে তারপর নিজের গন্তব্যে যাবে। রাত আর মিষ্টি ফ্রন্ট সিটে বসেছে মুন ব্যাক সিটে। সারা রাস্তায় মুন মিষ্টিকে বুঝাতে বুঝাতে এসেছে। রাত মিষ্টি সাথে পকপক করতে করতেই স্কুলের সামনে গাড়ি থামালো। মুন আর রাত গাড়ি থেকে নামলো। মুন মিষ্টিকে সকাল থেকে বুঝানোর পরও আবারও বলতে শুরু করলো,

—“মিষ্টি, কি বলে ছিলা মনে আছে তো? নো ফাইটিং। মারামারি তো দূর কারো সাথে ঝগড়াও করবে না। সবার সাথে মিলে মিশে থাকবে। আর কেউ যদি তোমাকে আগ বারিয়ে কিছু বলেও তাহলে টিচারকে বলবে। তোমার কিছু ঈরার দরকার নেই। রিভেন্জের কথা মাথায় ও আনবে না। তোমার নামে কোনো কম্পেলেন যেন না আসে আমার কাছে। আর মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।”

—“ওক্কে মাম্মা। আই রিমেম্বার। এন্ড ইউ নো না মাম্ম মিষ্টি ইজ এ গুড গার্ল? তাহলে মিষ্টি কি ব্যাড গার্লসদের মতো বিহেভ করতে পারে? ”

মিষ্টি কপাল কুঁচকে চোখ পিটপিট করে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল। মুন মিষ্টি এক্সপ্রেশন দেখে আর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। তারপর মিষ্টির নাক টেনে বলল,

—“না, একদমই না। মিষ্টি ওরকম করতেই পারে না। আই নো, আমার বাচ্চাটা গুড গার্ল।”

রাত এসে মিষ্টির সামনে হাটু গেড়ে বসলো। তারপর মিষ্টির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

—“মিষ্টি কি সত্যি রিভেন্জ নিবে না?”

মিষ্টি ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,

—“পাপা, ইউ নো না? রিভেন্জ ইজ রিভেন্জ! আর ওগুলো তো এ্যাংরি বার্ডকে পাম দিতে বলেছি।”

রাত মিষ্টির কথা শুনে হেসে দিয়ে বলল,

—“রাইট প্রিন্সেস। রিভেন্জ ইজ রিভেন্জ! লেটস হাই ফাইফ!”

বলেই রাত মিষ্টির সাথে হাই ফাইফ করলো। মুন তীক্ষ্ণ চোখে দুজনকে দেখছে। কি এতো ফিসফিস করে কথা বলছে? মুন বুঝতে পারছে না। তাই গলা খ্যাকারি দিয়ে বলল,

—“কি এতো কথা হচ্ছে? আমাকেও একটু বলো?”

রাত কপাল কুঁচকে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

—“তোমাকে কেনো বলব?”

মিষ্টি বলল,

—“এটা পাপা আর মিষ্টির সিক্রেট। তোমাকে বলা যাবে না।”

আবার কোনো খিচুড়ি পাকাচ্ছে এরা মুন ঠিক বুঝতে পারছে। আর ওকে যে কিছু বলবে না তাও জানা। মুন কিছুক্ষণ সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থেকে ফুস করে নিশ্বাস ফেলে বলল,

—“ওকে। মন দিয়ে ক্লাস করবে।”

মিষ্টি মাথা নাড়ালো। রাত বলল,

—“ওল দি বেস্ট প্রিন্সেস। ছুটির পরে পাপা এসে নিয়ে যাবো। ঠিক আছে?”

মিষ্টি আবারো মাথা নাড়ালো। রাত মিষ্টির কপালে চুমু দিলো। মুন ও মিষ্টির গালে চুমু দিয়ে বিদায় নিলো।

.
আলিয়া আর অয়ন পার্কের একটি ব্যাঞ্চে দু প্রান্তে বসে আছে। আলিয়ার মুখ ভার প্রচুর রেগে আছে। অয়ন কাচুমাচু করছে। কিছু একটা বলবে কিন্তু বলতে পারছে না। অয়ন বার কয়েক ঢোক গিলে অনেক কষ্টে আমতা আমতা করে বলল,

—“আলিয়া আমার কথাটা শু……”

অয়নের কথা না শুনে ফুসে উঠে আলিয়া বলল,

—“আমি কিছু শুনতে চাই না অয়ন। আমি বুঝতে পারছি না আপনার মতো ভিতুর ডিমকে পুলিশের চাকরি কে দিলো? নিশ্চয়ই ঘুষ খাইয়েছিলেন। নাহলে যে লোক কিনা সামান্য প্রোপজ করতে দুবছর কাটিয়ে দেয় তাকে এমনি এমনি তো আর পুলিশের চাকরি দিবে না।”

অয়ন মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বলল,

—“তুমি কথায় কথায় আমার চাকরিকে টেনে আনো কেনো বলো তো?”

—“তাহলে কি করবো হ্যাঁ? সামান্য বিয়ের কথাটা ভাইয়াকে বলবেন তাও আপনার দ্বারা হচ্ছে না। আপনার সাথে প্রেম করাটাই আমার ভুল হয়েছে। আপনার পেছনে এই ছয় বছর নষ্ট না করে অন্য কারো পেছনে করলে এতো দিনে বিয়ে করে তিন চার বাচ্চার মা হয়ে যেতাম। কিন্তু আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এখন যদি বাড়ি থেকে বিয়ের কথা বলে আমি এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে খুশি মনে হ্যাঁ বলে দিবো। তারপর আমার বিয়েতে এসে আপনি ডুগডুগি বাজাবেন কেমন? আর কয়েক বছর পর আমার যখন বাচ্চা হবে তখন আপনাকে দেখিয়ে বলব, দেখ বাবা এটা তোর মামা।”

কপট রেগে কিড়মিড় করে কথা গুলো বলে উঠে হাটা দিলো আলিয়া। অয়ন আলায়ার কথা শুনে আতকে উঠে ওর পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল,

—“এই! না না। আলু!আলু সোনা দাড়াও। তোমার বচ্চার মামা থুরি বাবা আমিই হবো।”

—“আচ্ছা! তাহলে দুদিনের মধ্যে ভাইকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলবেন। আর বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান।”

অয়ন কাদো কাদো হয়ে বলল,

—“তোমার ভাই যা ডেঞ্জারাস! আর আমি ওর বন্ধু হয়ে কি করে ওকে বলি যে, আমি তোর বোনের সাথে চার বছর ধরে রিলেশনে করছি। আর এখন ওকে বিয়ে করতে চাই।? ও আমাকে ওখানেই সুট করে দিবে।”

আলিয়া রুদ্ধ কন্ঠে বলল,

—“কেন প্রপোজ করার সময় মনে ছিলো না যে আমি আপনার বন্ধুর বোন? এখন প্রেম টেম করে বিয়ের কথা বলার সময় মনে পরছে আমি আপনার বন্ধুর বোন?”

—“আঁধার আমাকে মেরেই ফেলবে।”

—“মেরে ফেলুক। আমার কি? ভাইয়াকে বিয়ের কথা না বললে মম যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করবে তাকেই বিয়ে করে ফলবো। আর আপনাকে আমার বাচ্চার মামাও বানাবো। এবং এটাই ফাইনাল।”

কাঠ কাঠ কন্ঠে কথা গুলো বলে আলিয়া চলে গেলো। অয়ন ওখানেই দেবদাসের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। নিজেকে অয়নের দুনিয়ার সব চেয়ে বড় অসহায় মনে হচ্ছে এখন।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here