#Mr_Husband,পর্ব_৫২,৫৩
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫২
শেষ রাতে বৃষ্টি হওয়ায় এখন আকাশ একদম পরিষ্কার। কোলাহল বিহীন ঠান্ডা পরিবেশ। আশে পাশের গাছে গুলোতে বসে পাখিরা কিচিরমিচির করে ভিন্ন সুর তুলছে। গাছপালা গুলো স্বতেজ দেখাচ্ছে। গাছের পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। সূর্যর ঝলকানিতে পাতায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির জল গুলো চিকচিক করায় দূর থেকে দেখতে মুক্তোর মতো লাগছে। সকাল সকাল এরকম মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে দিনটা শুরু করলো মুন। খান ভিলার পেছন দিকটায় আপন মনে হাটিহাটি করছে মুন। এরকম নিরিবিলি পরিবেশ ভালো লাগছে। মুনের চোখ গেল কিছুটা দূরে একটা গাছে উপরে বসে থাকা দুটো বাবুই পাখির উপর। মুন তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করলো একটা একটা পাখি আরেকটা পাখির ঠোঁটে ঠোকর দিচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো বিষয়টা বুঝতে। পাখিটার এমন কাজে কালকের ঘটনা মনে পরে গেলো মুনের। সাথে সাথে লজ্জায় মিইয়ে গিল। কতটা অসভ্য, বেশরম হলে সিরিয়াস সিচুয়েশনে ওরকম একটা বাজে কাজ করে। মুন ভাবে লোকটা তো আগে এরকম ছিলো না। নাকি আগেও এরকম ছিল শুধু ওর সামনে সাধু সেজে বসে ছিল! ধুর! ওই লোকের কথা ভাবার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে মুনের নেই। আজই অফিসে গিয়ে নিজের সব জিনিস পত্র নিয়ে আসবে। আর রিজাইনও দিয়ে আসবে। মুন বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
.
আঁধার শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে কেবল। গায়ে শুধু একটা টাওয়াল। আরেকটা টাওয়াল দিয়ে চুল মুচ্ছে। লোম হীন ফর্সা চওড়া বুকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা জমে আছে। ব্রাউন কালার ভেজা চোল গুলো নুয়ে ভ্রু ছুয়েছে। নীলাভ চোখে দুটি চঞ্চল। মেয়েলী পাতলা ঠোঁটটা মাত্রা অতিরিক্ত লাল মনে হচ্ছে। খোচা খোচা দাড়িতে এই অবস্থায় মারাত্মক লাগছে আঁধারকে। আঁধার কাবার্ড থেকে ব্লাক শার্ট, ব্লাক প্যান্ট বের করে পরে নিলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো হেয়ার ড্রেয়ার দিয়ে শুকিয়ে জেল দিয়ে পেছনের দিকে ঠেলে দিলো। হাতে ব্লাক বেল্টের ওয়াচ। পায়ে ব্লাক সু। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো। তারপর দেয়ালে টানানো মুনের ফটোটার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে নিচে চলে গেল। ডাইনিং টেবিলে আরমান রেজওয়ান, আরিফা রেজওয়ান আর আলিয়া বসে ছিলো। আঁধার গিয়ে তাদের জয়েন করলো। আঁধার সবার উদ্দেশ্যে বলল,
—“গুড মর্নিং”
প্রতি উওরে ওকেও সবাই মর্নিং উইশ করলো। আরিফা রেজওয়ান আঁধারকে খাবার দিলেন। জ্যাম, পাউরুটি, অমলেট আর ফ্রুটজুস। আঁধার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আরমান রেজওয়ান গম্ভীর গলায় বললেন,
—“আঁধার…”
আঁধার চোখ তুলে জবাব দিলো,
—“ইয়েস ড্যাড?”
আরমান রেজওয়ান সোজাসুজি প্রশ্ন করলেন
—“তোমার মম যা বলছে তা কি সত্যি?”
আঁধার কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে মাথা তুলে বলল,
—“হ্যাঁ”
আরমান রেজওয়ান একটু নড়েচড়ে বসলেন। তারপর আবার বললেন,
—“তুমি কিন্তু এখনো বলনি তোমাদের মধ্যে কি কারণে ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। আর কি কারণেই বা মুন তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমি শিওর বড় কিছু হয়েছে। তা না হলে মুন ওরকম ভাবে না জানিয়ে কেন চলে যাবে?”
আঁধার আরমান রেজওয়ানের কথা এড়িয়ে গিয়ে আরিফা রেজওয়ানের উদ্দেশ্যে বলল,
—“আমার খাওয়া শেষ মম। আমি আসছি।”
বলেই আঁধার কাউকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে চলে গেল। দুই স্বামী স্ত্রীই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন। এই পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেছে আঁধারের মুখ থেকে কথা বের করানোর কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আলিয়া নিরব দর্শকের মতো সব খেয়াল করলো। আলিয়ার কেমন যেন খটকা লাগছে। ‘ও’ ও মনে মনে ভাবছে কি এমন হয়েছে যার জন্য মুন এক কথায় পালিয়ে বেরাচ্ছে ভাইয়ের থেকে। আলিয়া সিদ্ধান্ত নিলো রুমে গিয়েই অয়নকে কল করবে। ও জানলেও জানতে পারে। ওকে জিজ্ঞেস করলেই সব উওর পাওয়া যেতে পারে।
.
মুন অফিসে এসে নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো। তারপর রিজাইন লেটার তৈরি করলো। কিছুক্ষণ আগেই আঁধার অফিসে এসেছে শুনেছে। মুন রিজাইন লেটারটা নিয়ে আঁধারেলর কেবিনের দরজায় নক করলো। আঁধারের পারমিশন পেতেই ভেতরে ঢুকলো। আঁধার এখনো খেয়াল করেনি যে মুন এসেছে। আঁধার না দেখেই বসতে বলল। কিন্তু মুন বসলো না। মুন গিয়ে আঁধারের টেবিলের উপর রিজাইন লেটারটা রেখে বলল,
—“আমি রিজাইন করছি।”
পরিচিতো কন্ঠ স্বর শুনে আঁধার চোখ তুলে তাকালো। চোখ-মুখ শক্ত করে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুন। পরনে নেভী ব্লু কালার লেডিস জিন্স, অফ সোল্ডার ইন করা হোয়াইট শার্ট। পিঠ পর্যন্ত পরা হাইলাট চুল গুলো সোজা সিথি করে কার্ল করে ছেড়ে দেওয়া। এক পাশে হোয়াইট স্টোনের ক্লিপ শোভা পাচ্ছে। হাতে গোল্ডেন কালার ওয়াচ। পায়ে হাই হিল। আঁধার মাথা থেকে পা অবধি মুনকে পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর মুনের কালো মনি বিশিষ্ট হরিণী চোখে নিজের নীলাভ চোখেলর শিতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মুন এতে কিছুটা ভড়কে গেল। মুন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
—“প্লিজ এ্যাক্সেপ্ট মাই রিজাইন লেটার। আমার কিছু সমস্যার কারণে আমাকে রিজাইন করতে হচ্ছে। আশা করি আমার সমস্যাটা আপনি বোঝার চেষ্টা করবেন।”
আঁধার স্বাভাবিক স্বরেই বলল,
—“আপনি এখানে আশার আগে কোনো এ্যাগরিমেন্ট সাইন করে ছিলেন?”
মুন ছোট্ট করে বলল,
—“হ্যাঁ”
—“সেখানে লেখা ছিলো তো যে আপনি আগামি এক বছর এই কম্পানিতেই কাজ করবেন আর কোনো ভাবেই রিজাইন নিতে পারবেন না?”
মুন এবারো ছোট্ট করে জবাব দিলো,
—“হুম”
—“তাহলে এখন রিজাইন লেটার কেনো দিচ্ছেন?”
মুন খেয়াল করলো আঁধারের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। মুখে মন্ডলেও রাগের ছাপ স্পস্ট। মুন বুঝতে পারছে না যে আঁধার রেগে যাচ্ছে কেন? মুন আঁধারের রাগকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
—“ফ্যামিলি প্রবলেম।”
আঁধার নিজের রাগকে যথা সাধ্য চেপে রেখে বলল,
–“কি হয়েছে আপনার ফ্যামিলির? কেউ কি মারা গেছে?”
মুন রেগে বলল,
—“কি যা তা বলছেন?”
“তাহলে আপনার রিজাইন দেওয়ার কারণ কি?”
মুন ত্যাড়া জবাব দিলো,
—“আমার ইচ্ছে করেছে তাই দিচ্ছি।”
আঁধার রিজাইন লেটারটা নিয়ে মুনের চোখের সামনে ছিড়ে ফেলল। মুন চিৎকার করে বলল,
—“কি করলেন এটা? রিজাইন লেটারটা ছিড়লেন কেনো?”
আঁধার ডোন্ট কেয়ার ভাবনিয়ে বলল,
—“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই ছিড়ে ফেলেছি।”
মুন কিছু বলল না রেগে গটগট করে চলে গেলো। নিজের কেবিনে গিয়ে পার্সটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে।
.
মুন বকবক করছে আর হাটছে। রাগে ওর পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে। তখন ইচ্ছে করছিলো আঁধারের চুল টেনে সব ছিড়ে ফেলতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসতো নিজের ইচ্ছে পুরণ করতে পারলো না। হঠাৎ মুনের সামনে এসে একটা গাড়ি ব্রেক করে। মুন চিৎকার করে গাড়ির ভেতরে বসে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে চেচিয়ে বলল,
—“ওই গাড়ি দেখে চালাতে পারিস না? মানুষের গায়ে উঠিয়ে দিবি? বেয়াদব কোথাকার। মেরে হাড্ডি গুড়ো করে দিতে হয় এদের।”
বলতে না বলতেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে আঁধার। আগুনে ঘি ঢালে যেমন জ্বলে উঠে। তেমনি আঁধারকে দেখে মুন জ্বলে উঠলো। মুন আঁধারের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“আপনি এখানে কি করছেন? এখন আমাকে মারার প্লান করছেন?”
আঁধার মুনের কথাটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বলল,
—“গাড়িতে উঠো কথা আছে।”
মুন তেজী কন্ঠে বলল,
—“কিন্তু আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই।”
আঁধার আবারো বলল,
—“গাড়িতে উঠতে বলেছি।”
—“আমি কি আপনার চাকর যে যা বলবেন তাই করতে হবে?”
আঁধার অধৈর্য হয়ে চোখ বুঝে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
—“শেষ বার বলছি মুন। গাড়িতে উঠো।”
মুন মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
—“বুঝেছি সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না!”
বলেই আঁধার মুনকে কাঘে তুলে নিলো। মুন আকষ্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেছে। মুনের খেয়াল হয়েই মুন ছুটাছুটি শুরু করলো। আঁধারের পিঠে খামছি দিলৌ কিল দিলো। আঁধারের এই সামান্য খামচি বা কিলে কিছুই হলো না। আঁধার মুনকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট বেধে গাড়ির ডোর লক করে দিলো। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। মুন গাড়িতে বসেও আঁধারকে অনেক মারলো। গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু খুলতে পালো না। মুনের মারের কারণে আঁধার ঠিক মতো ড্রাইভ করতে পারছে না। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই শেষে না পেরে জোরে একটা ধমক দিলো। সাথে সাথে মুনের সব ছুটাছুটি বন্ধ হয়ে গেল। আর নিজের সিটে মুখ ভাড় করে বসে রইলো।
#চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫৩
*শনিবার দিন ছিলো সেদিন। দুপুরের শেষ প্রহর চলছিলো। আরমান রেজওয়ান রোজকার মতো অফিসে ছিলেন। আর ছোট্ট এগারো বছরের আঁধার নিজের স্টাডি রুমে বসে মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো। আরিফা রেজওয়ান কিচেনের সব কাজ শেষ করে সবে মাত্র শুয়েছে এমন সময় কিলিং বেল বেজে উঠলো। আরিফা রেজওয়ান বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে উঠে গেলেন দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই একটা পরিচিত মুখ ভেসে উঠলো চোখে। আরিফা রেজওয়ান হেসে বলল,
—“আরে রুহেল! দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভেতরে এসো।”
রুহেল সোফায় এসে বসলো। আরিফা রেজওয়ান হেসে জিজ্ঞেস করলো,
—“কেমন আছো? আজ হঠাৎ কি মনে করে আসলে?”
রুহেল আরমান রেজওয়ানের বন্ধু। রুহেলও হেসে জবাব দিলো,
—“ভালো, তুমি কেমন আছো?
—“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
—“আরমান কোথায় বাড়িতে নেই?”
—“না। ও অফিসে। তা কি খাবে বলো? চা, কফি। জুস?”
রুহেল হেসে বলল,
—“এক কাপ কফি হলে ভালো হয়।”
আরিফা রজওয়ান কিচেনে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর কফি এনে রুহেলকে দিলো। এরই মধ্যে উপর থেকে ফোনের আওয়াজ ভেসে আসলো।
—“তুমি বসে কফি খাও আমি কলটা এ্যাটেন্ড করে আসছি।”
বলেই আরিফা রেজওয়ান চলে গেলেন উপরে। আরমান রেজওয়ান ফোন করেছেন। আরিফা রেজওয়ান তার সাথে কথা বলে পেছনে ফিরতেই দেখলেন রুহেল দাঁড়িয়ে আছে। আচমকা রুহেলকে দেখে আরিফা রেজওয়ান ঘাবড়ে গেলেন। অপ্রস্তুত বললেন,
—“তুমি এখানে?”
রুহেল সায়তানি হাসি দিলো। রুহেলের এমন হাসি দেখে আরিফা রেজওয়ানের কলিজার পানি শেষ প্রায়। আরিফা রেজওয়ান ভীত কন্ঠে বলল,
—“হাসছো কেনো?”
রুহেল এক পা এক পা করে আরিফা রেজওয়ানের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। রুহেলের বিকৃত মস্তিষ্কে কি চলছে তা মুহুর্তেই বুজে ফেললেন আরিফা রেজওয়ান। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে তার সাথে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। আরিফা রেজওয়ান পেছাতে পেছাতে বলল,
—“রুহেল তুমি কিন্তু ঠিক করছো না। আমার কাছে আসবে না একদম।”
রুহেল সেই নোংরা হাসি দিয়ে বলল,
—“এটা যদি ভুল হয় তাহলে ভুলই সই। তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালো লাগতো আমার। কিন্তু আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল। তাই আজ…..”
আরিফা রেজওয়ান রুহেলকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চায় কিন্তু তার আগেই রুহেল খপ করে আরিফা রেজওয়ানকে ধরে ফেলে। আচল ধরে এক টানে আরিফা রেজওয়ানের শরীর থেকে শাড়ি খুলে ফেলে দেয়। আরিফা রেজওয়ান দু হাতে নিজের শরীর ঢাকার বৃথা চেষ্টা করে। রুহেল আবার এগিয়ে যেতে থাকে আরিফা রেজওয়ানের দিকে। আরিফা রেজওয়ান এক কোনায় নিজেকে গুটিয়ে বসে চিৎকার করে কেদে দেয়। নিজের সম্মান ভিক্ষা চায়। স্টাডি রুমে বসে মায়ের চিৎকার কিছুটা কানে আসে আঁধারের। আঁধার কিছু না ভেবেই দৌড়ে যায় মায়ের রুমে। রুমের দরজা খোলাই ছিলো আঁধার দরজার কাছে এসে মায়ের বীভৎস অবস্থা দেখতে পায়। তার কানে বেজে উঠে মায়ের কান্না, আত্ম চিৎকার। রুহেল আরিফা রেজওয়ানের গায়ে হাত দিতে গেলে আরিফা রেজওয়ান শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে রুহেলকে চড় মারে। চড় খেয়ে রুহেল রক্ত চক্ষু নিয়ে আরিফা রেজওয়ানের দিখে তাকায়। তারপর আরিফফা রেজওয়ানের চুলের মুঠি টেনে ধরে সজোরে দুটো চড় মারে তার গালে। দেয়ালের সাথে বারি লেগে কপাল ফেটে রক্ত বের। ঠোঁট কেটেও রক্ত গড়িয়ে পরে। এই দৃশ্য দেখে আঁধারের রক্ত টগবগ করে উঠে। মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। আঁধার দৌড়ে কিচেনে গিয়ে চপার নিয়ে আসে। এসে দেখে রুহেল আরিফা রেজওয়ানের সাথে জবরদস্তি করছে। তা দেখে রাগের বশে রুহেলের পিঠে চপার দিয়ে আঘাত করে আঁধার। রুহেল উঠে বসে আঁধারের দিকে ফিরতেই ওর গলায় চপার দিয়ে এক টান মারে। সাথে সাথে গলার সিরা কেটে রক্ত ছিটকে আঁধারের মুখে পরে। রুহেল গলা চেপে ধরে ছটফট করতে করতে মেঝেতে লুটিয়ে পরে। রক্তে ভেসে যেতে থাকে পুরো ফ্লোর। লাল রক্তে রঙ্গিন হয় আঁধার সাদা ধবধবে টি’শার্ট টা। নাক, চোখ, মুখেও রক্ত ছিটে ভয়ংকর অবস্থা। আরিফা রেজওয়ান নিজের মুখে তরল কিছুর আভাস পেয়ে চোখ খুলে তাকালেন। চোখের সামনে ছেলের এমন ভয়ংকর রুপ দেখে স্তব্দ হয়ে গেলেন। রক্ত মাখা চপার হাতে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে আঁধার। টি’শার্ট রক্তে ভেজা। হাত, মুখ রক্তে রঙিন। রুহেলের লাশটার দিকে শান্ত চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কোনো হেল দুল নেই। আঁধার আরিফা রেজওয়ানের দিকে একবার তাকালো। আরিফা রেজওয়ান নিজেকে গুটিয়ে বসে আছে। পরেনে শুধু ব্লাউজ আর পেটিগোট। চুল গুলো এলোমেলো। কপাল থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পরছে। ঠোঁটের কোনেও রক্ত জমে আছে। দু গাল ফুলো ফুলো লাগছে। পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে। রক্ত জমাট বেধে গেছে গালে। আঁধার চপারটা হাত থেকে ফেলে চুপচাপ নিচ থেকে শাড়িটা উঠিয়ে আরিফা রেজওয়ানের গায়ে ভালো ভাবে পিচিয়ে দিলো। তারপর আস্তে করে জড়িয়ে ধরে আরিফা রেজওয়ানের বুকে মাথা রখলো। আরিফা রেজওয়ানের ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না আসলো। আঁধারকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিলেন। কি থেকে কি হয়ে গেল? কি করবে উনি এখন? কিভাবে সব ঠিক
করবেন?
.
আরমান রেজওয়ান আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছেন। বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। তখন ফোনে আরিফা রেজওয়ানকে এসব জানান নি সারপ্রাইজ দিবেন বলে। আরমান রেজ্রয়ান খুশি মনে বাড়িতে ঢুকেন। মেন ডোর খোলা দেখে কিছুটা অবাক হলেও পাত্তা দেন না। মনে মনে বলেন, ভুন করে খোলা রেখেছে মনে হয়। তারপর জোরে জোরে আরিফা রেজওয়ানকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু কোনো সারা শব্দ পাওয়া গেলো না। আরমান রেজওয়ান ভীষন অবাক হলেন।
—“বাড়িতে কেউ নেই নাকি? কিন্তু মেইন ডোর তো খোলা।”
আরমান রেজওয়ান, আঁধারকে আর আরিফা রেজওয়ানকে আবারো ডাকতে লাগলেন। কিন্তু এবারো কারো কোনো টু শব্দ কানে এলো না। আরমান রেজওয়ান কিচেনে এবার দেখে উপরে চলে গেলেন। প্রথমে স্টাডি রুম দেখলেন। তারপর আঁধারের রুম। ওতঃপর নিজের বেড রুমে গেল। বেড রুমের দরজায় পা রাখতেই থমকে গেলেন আরমান রেজওয়ান। বউ, ছেলের এমন অবস্থা দেখে সে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। আরিফা রেজওয়ানের বীভৎস অবস্থা দেখে বুকের কোথাও যন্ত্রণা শুরু হলো। সামনের লাশটার চেহারা দেখে চমকে গেলেন। রুহেল! ওনার মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেছে। ঠিক কি রকম রিয়েক্ট করা উচিত বুঝে উঠতে পারছেন না। আরমান রেজওয়ান ধীর পায়ে হেটে আরিফা রেজওয়ানের দিকে এগিয়ে যায়। হাটু গেড়ে নিচে বসে আরিফা রেজওয়ানের কাধে আস্তে করে হাত রাগখলেন। আরিফা রেজওয়ান চমকে তাকালেন। আঁধার বাবাকে দেখে সরে বসলো পাশে। আরমান রেজওয়ানকে দেখে আরিফা রেজওয়ান সাথে সাথে হামলে পরলেন তার বুকে। কাদতে কাদতে বললেন,
—“এটা কি হলো আরমান? কেনো হলো? আমার রোদ এসব ইচ্ছে করে করেনি আরমান। ও বুঝতে পারেনি। আমার রোদের কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার। সব দোষ আমার।”
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরে আরিফা রেজওয়ান। আরমান রেজওয়ান তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তারপর বলে,
—“কি হয়েছে আমাকে বলো? রুহেলকে কি রোদ মেরেছে? সব খুলে বলো আমাকে।”
আরিফা রেজওয়ান শুরু থেকে সব বলল আরমান রেজওয়ানকে। সব শুনে আরমান রেজওয়ান ওখানেই ঝিম মরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আঁধারের দিকে তাকালো। আঁধার চুপচাপ বসে এক দৃষ্টিতে রুহেলের লাশটার দিকে তাকিয়ে আছে। আরমান রেজওয়ানের টনক নড়লো সে আতঙ্কিত গলায় বলল,
—“আরিফা উঠো জলদি। আমাদের এগুলো পরিষ্কার করে লাশটাকে তাড়াতাড়ি সরাতে হবে। আমাদের ছেলেকে আমাদের বাচাতে হবে।”
আরিফা রেজওয়ান সায় দিয়ে বললেন,
—“হ্যাঁ আরমান। তুমি ঠিক বলছো। আমার রোদকে বাচাতে হবে।”
আরমান রেজওয়ান আর আরিফা রেজওয়ান মিলে রুহেলের লাশটা বড় ব্যাগে ভরে গাড়ি করে সমুদ্রে নিয়ে ফেলে দিলো। তারপর বাড়ি এসে পুরো রুম ডিটার্জেন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করলো। আঁধারকে গোসল করিয়ে নিজেও ভালো করে গোসল করি নিলো। আঁধার এমনিই চুপচাপ স্বভাবের। এই ঘটনার পর আঁধার আরো চুপচাপ হয়ে গেলে। সারাদিন একা বসে আনমনে কি সব যেন ভাবতে থাকে। ওনারা বুঝলেন ওই ঘটনাটা আঁধারের মনে খুব গাঢ় ভাবে দাগ কেটেছে। তাই আরিফা রেজওয়ান আঁধারের ভালোর জন্য কয়েকদিন পর ওকে ইউ.এস.এ পাঠিয়ে দিলেন।*
আঁধার থামলো। মুন ‘থ’ মেরে বসে আছে। ও ভাবতেই পারছে না ওতো টুকু বয়সে আঁধারের উপর দিয়ে কত বড় ঝড় গেছে। আর আরিফা রেজওয়ান! সে কি ভাবে নিজেকে ঠিক রেছিল? নিজেকে তার জায়গায় ভাবতেই শিউরে উঠছে। মানুষের জীবনে একটা করে কালো অতীত থাকে। যা কাউকে বলা যায় না। আর সেই অতীত গুলো খুবই বিষাক্ত। যেমন আঁধারেরটা। ওই টুকু বয়সে কত কিছু দেখে ফেলেছে। আঁধারের দিকে তাকাতেই মুন চমকে উঠে। আঁধারের চোখ দুটো ভয়ংকর লাল। চোয়াল অসম্ভব শক্ত হয়ে আছে। কপালের রগ গুলোও ভীষণ ফুলে আছে। এক হাতের আঙ্গুলের মাছে আরেক হাতের আঙুল মুষ্টিবদ্ধ করা। মুন কে বলবে খুজে পায় না। ভয় করছে ভীষণ। মুন কাপা কাপা গলায় বলল,
—“আমাকে যেতে হবে আঁধার। মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।”
—“তাড়া কিসের? এখনো তো আমার জীবনের আসল গল্প বলা বাকি আছে। সাধারণ আঁধার রেজওয়ান থেকে AR হওয়ার গল্প।”
#চলবে,