#Mr_Husband,পর্ব_৫৬,৫৭
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫৬
—“তোমরা যাকে খুজচ্ছ তার নাম রবার্ড। মাফিয়া কিং।সাতটি দেশের রাজত্ব ওর এক হাতের মুঠোয়।ওর পাওয়ার সম্পর্কে তোমাদের কোনো ধারণাই নেই। ওকে মারা এতো সহজ নয়। কিন্তু আমি তোমাদের ওকে মারতে সাহায্য করতে পারি। কারণ ও আমার ভাইকে আমারই চোখের সামনে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। আমি…”
আঁধার হ্যাংরিকে কথার মাঝে থামিয়ে বলল,
—“ওয়ান মিনিট, রবার্ড যদি আপনার ভাইকে মেরে থাকে তাহলে আপনি কেনো এতোদিন রবার্ডকে মারেন নি? আমাদের হাতে কেনো মারাতে চাচ্ছেন? আপনি নিজের হাতেই তো তাকে খুন করতে পারতেন।”
আঁধার সন্দিহান চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বলল। হ্যাংরি হালকা হেসে বলল,
—“আমার হাতে থাকলে, আমি ওকে সেই কবেই কুপিতে হত্যা করতাম। কিন্তু আফসোস এসব আমার হাতে নেই। এসব ছাড়ো এখন আসল কথায় আসি। রবার্ডকে মারার পরে তোমার সামনে দুটো রাস্তা থাকবে। এক রবার্ডকে মেরে নিজের ওর জায়দা দখল করবে। দুই রবার্ডকে মেরে নিজেও মরে যাবে। নাহলে ওর দলের লোকেরা তোমাকে মেরে ফেলবে। তোমাকে যে কোনো একটা রাস্তা চুজ করতে হবে। কিন্তু যদি তোমার হাতে মাফিয়ার পাওয়ার থাকে তাহলে কেউ তোমার একটা চুলও বাকা করতে পারবে না। ভেবে দেখো। তুমি মাফিয়া হলে তোমার ইচ্ছে মতো তুমি যেকোনো সাতটি দেশে রাজ করতে পারবে। কেউ তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলারও সাহস পাবে না। রবার্ডকে মেরে নিজে মরার থেকে ওর বদলে মাফিয়ার ক্রাউন মাথায় নিয়ে ওর আসনে বসাটা আমার কাছে বেটার চয়েজ মনে হয়। ভালো করে ভেবে দেখ। টেক ইউর টাইম।”
আঁধার কিছুক্ষণ ভাবলো। এর মধ্যে অয়ন বলে উঠলো,
—“নো ব্রো। কোনো দরকার নেই এসবের। রবার্ডকে মারারও দরকার নেই আর মফিয়া হওয়ারও দরকার নেই।”
অয়নের কথায় সায় দিয়ে আশিক বলল,
—“ইয়াহ, হি ইজ রাইট! কোনো দরকারনেই রিক্স নিয়ে এসব করার।”
এবার আপন মুখ খুলল,
—“তাহলে আরুশের খুনিকে এমনি এমনি ছেড়ে দিতে বলছিস? আরুশ কি পাপ করে ছিলো যার শাস্তি ও পেলো? বল। ও তো আরো মেয়ে গুলোকে বাচিয়ে ছিলো। সাহায্য করে ছিলো তাদের। এটাই কি ওর পাপ ছিলো? আঁধার আমি বলছি, কারো কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই তোর। চয়েজ ইজ অনলি ইউর’স।”
আঁধার চোখ বুজে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,
—“ইয়েস, আই ডু। আই ডু। আমি আরুশের জন্য সব কিছু করতে পারি। সব।”
বস হ্যাংরি উঠে আঁধারকে হাগ করে পিঠে হালকা চাপড় মেরে বলল,
—“শাব্বাস। দেট’স লাইক এ ব্রেভ বয়।”
তারপর বস হ্যাংরি আঁধারও বাকিদের প্লান বুঝিয়ে দিলো।
.
বস হ্যাংরি আগেই আগেই খবর পেয়ে গেছিলো যে আজ রবার্ড আরবীদের সাথে একটা ডিল করবে। কেথায় এই ডিল হবে তাও খোজ লাগিয়ে বের করে ফেলে। এটাই মোক্ষম সময়। হ্যাংরি আঁধারকে আগে থেকেই সব প্লান বুঝিয়ে দিয়ে ছিলো। হ্যাংরি আঁধারকে দেখেই বুঝতে পেরে ছিল আঁধার খুবই বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ মস্তিষ্কের। আর হ্যাংরি এটাও জানতো যে আজ আঁধারের হাতেই হ্যাংরির শেষ দিন হবে। প্লান সেট। রবার্ডকে আঁধার এতো সহজ মৃত্যু দিবে না। মিটিং প্লেসের ওখান থেকে ওরা রবার্ডকে কিডনাপ করবে। তারপর ওকে ধীরে ধীরে কষ্ট দিয়ে মারবে। আঁধার প্লান মোতাবেক রবার্ডকে মিটিং প্লেসে পৌঁছনোর আগেই মাঝ রাস্তা থেকে কিডনাপ করবে। আর অয়ন, আশিক, আপন ও বস হ্যাংরির লোকেরা রবার্ডের গার্ড’সদের কৌশলে আটকাবে। তো ওরা নিজেদের কাজ শুরু করে দিলো। রবার্ডের গাড়ি যেতেই ওরা রাস্তার মধ্যে পিন বিছিয়ে দিলো যাতে ওরা রবার্ডের পেছনে যেতে না পারে আর অন্য দিকে আঁধারও নিজের কাজ দ্রুত করতে পারে। কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল রবার্ডের গার্ড’সদের গাড়ি এদিকে আসছে। ওদের গাড়ি দেখে অয়ন ও বাকিরা লুকিয়ে পরলো। আড়াল থেকেই দেখতে পেলো একটা করে গাড়ি পিন গুলোর উপর দিয়ে যাচ্ছে আর চাকা পাঙ্কচার হচ্ছে। গাড়ি গুলো আর বেশি দূর যেতে পারলো না। অয়নদের কাজ শেষ এবার আঁধারের পালা। অয়ন আঁধারকে ফোন করে জানিয়ে দিলো। আঁধার দূর থেকে দেখলো রবার্ডের গাড়ি এগিয়ে আসছে। আঁধার গাছে উঠে রেডি ছিলো। রবার্ডের গাড়ি আসতেই ও গাছ থেকে লাফ দিয়ে রবার্ডের গাড়ির উপর পরলো। রবার্ড গাড়ির ভেতর থেকে ঘাবড়ে গলো। আঁধার কৌশলে গাড়ির ছাদ থেকে গাড়ির জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। ভেতরে ঢুকেই আঁধার গান বের করে রবার্ডের মাথায় ঠেকালো। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে রবার্ড বা তার ড্রাইভার কেউই বুঝে উঠতে পারলো না কি ঘটছে। আঁধার রবর্ডের মাথায় গান ঠেকিয়েই ঝাঝালো গলায় বলল,
—“স্টপ দ্যি। আই সেইড স্টপ দ্যি কার।”
ড্রাইভার তৎক্ষনাত গাড়ি থামিয়ে দিলো। আঁধার আবার বলল,
—“এখন গাড়ি থেকে নামো। নামো বলছি।”
ড্রাইভার ভয় পেলো কিন্তু নামলো না। আঁধার রবার্ডের থেকে গান সরিয়ে ড্রাইভারের দিকে তাক করতেই ড্রাইভার সুর সুর করে নেমে গেলো। আঁধার গাড়ি থেকে নেমে রবার্ডকে ও নামতে বলল। তারপর রবার্ডকে ড্রাইভিং সিটে বসতে বলল। আর নিজেও ও ফ্রন্ট সিটে বসে পরলো। অতঃপর ড্রাইভারকে রাস্তায় ফেলে রেখেই আঁধার রবার্ডকে নিয়ে ওখান থেকে হাওয়া হয়ে গেলো। আঁধারের ইন্সট্যাকশন ফলো করে রবার্ড গাড়ি চালাতে লাগলো। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আঁধার হাইওয়েতে নিয়ে নিয়ে এলো গাড়ি। ওখানেই অয়ন, আশিক, আপন গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলো আঁধারের জন্য। রবার্ডের গাড়ি ওখানে ফেলে আঁধার রবার্ডেকে নিয়ে ওর গাড়িতে উঠলো।
.
আঁধার থামলো। মুন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
—“কি হলো? থামলেন কেনো? তারপর কি করলেন রবার্ডের সাথে? ওকে মেরে দিলেন?”
আঁধার খুব শান্ত গলায় জবাব দিলো,
—“হুম মেরে দিয়েছি। খুবই কঠিন মৃত্যু জুটেছে ওর ভাগ্য। আমার তো তাও কম মনে হচ্ছে। ওকে এর থেকে কঠিন মৃত্যু দিতে পারলে আমি শান্ত হতাম।”
মুন শুধু অবাক হয়ে দেখছে আঁধারকে। একটা মানুষ এতোটা নির্দয় নির্মম কি করে হতে পারে? নিজের কাজের প্রতি এতোটাও অনুতপ্ত নয়। মুন রাগ দেখিয়ে বলল,
—“আপনি মানুষ তো? আমার বিশ্বাসই করতে পারছি না একটা মানুষ কি করে এতোটা নির্দয় হতে পারে। মানছি লোকটা অপরাধ করেছে। কিন্তু অপরাধিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দেশে আইন আছে কানুন আছে। তারা শাস্তি দিতো রবার্ডকে। আপনি শাস্তি দেওয়ার কে? কি মনে করেন নিজেকে?”
আঁধার মুনকে কাছে টেনে বলল,
—“অনেক কিছু।”
মুন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
—“রাক্ষস একটা।ছাড়ুন আমাকে। যখন তখন এভাবে কাছে আসা কিন্তু আমার একদমই পছন্দ না। আপনাকে এখন আমার সহ্য হয় না।”
আঁধার মুনের চুলে নাক ডুবিয়ে নেশা ধরা গলায় বলল,
—“তাহলে সহ্য করতে শেখো। বিকজ ইউ আর অনলি মাইন।”
মুন আগের মতোই ছটফট করতে করতে বলল,
—“ছাড়ুন। ছুবেন না আমাকে। আপাকে ছোয়ার আপনার কোনো অধিকার নেই।”
আঁধার এক টানে মুনকে নিজের দিকে ঘুলরালো। দু হাত দিয়ে মুনের গাল আকরে মুনের চোখে চোখ রেখে বলল,
—“তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তোমারকে ছোয়ারও আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমি চাইলে এখনই……কিন্তু না। আমি চাইলে তুমিও আমাকে বাধা দিতে পারবে না। আমি যত খারাপই হই না কেনো তোমাকে সত্যি ভালোবেসে ছিলাম। আচ্ছা তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবেসে ছিলে? হাহ, আমিও পাগলের মতো প্রশ্ন করছি। ভালোবেসে থাকলে কি আর এতো সহজে ভুলে যেতে পারতে! যাই হোক তুমি ভালোবাসো আর না’ই বা বাসো কিচ্ছু যায় আসে না। কজ তুমি আমার ওয়াইফ, আমার বাচ্চার মা, আর সব থেকে বড় কথা হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই তোমাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার সাথেই থাকতে হবে। তুমি ভয় পেও না, আমি তোমাকে জোর করবো না আমি তোমাকে বাধ্য করবো।”
মুন সর্ব শক্তি দিয়ে আঁধারকে জোরে ধাক্কা মারলো আঁধার দু পা পিছিয়ে দিয়ে হেসে দিলো। কি আশ্চর্য মুন কাদছে না তবুও ওর চোখ বেয়ে নোনা পানি গুলো বাধ ভেঙ্গে গড়িয়ে পরছে। আঁধার যেনো সে গুলো দেখে ভিষন আনন্দ পাচ্ছে। মুন চেচিয়ে বলল,
—“আমার ভালোবাসাকে অপমান করার চেষ্টাও করবেন না মি.আঁধার রেজওয়ান। ভালো আমিও বেসে ছিলাম আর আজও বাসি। ভুলতে চাইলে অনেক আগেই ভুলে যেতে পারতাম! হাজারো কারণ ছিলো ভোলার মতো! শুধু, ভালোবাসি বলেই আজো আকড়ে ধরে বেচে আছি!!!”
এটুকু বলে থামলো মুন তারপর জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো। মুন বুঝতে পারে যে আবেগে ভেসে যাচ্ছে সে। তাই নিজেকে কঠোর করে বলল,
—“ভালোবাসতাম,ভালোবাসি আর ভালোবাসবো। কিন্তু তার মানেই এই না যে একজন অপরাধির কাছে আত্মসমর্পণ করবো। স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। আমি কখনো আপনার কাছে ফিরবো না।”
আঁধার মুনের খুব কাছে গিয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মুন সাথে সাথে এক পা পিছিয়ে গেলো। আঁধার মুচকি হেসে বলল,
—“ফিরবে তো তুমি অবশ্যই। কিন্তু দেখো যেন বেশি দেরী না হয়ে যায়। এমন না হয় যে তুমি আমার একটু ভালোবাসা একটু ছোঁয়ার জন্য কাতরাচ্ছো আর আমি তোমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছি না।”
মুন অবাক হয়ে আঁধারকে দেখে। আঁধারের ওই নীল চোখ জোরায় স্পস্ট জলের সাথে কষ্টের সাগর দেখতে পাচ্ছে মুন। আঁধারের চোখে জল দেখে মুনেরও কোথাও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেটা মুন বুঝতে পারছে না। আচ্ছে ও কি কোনো ভুল করছে? যদি আঁধারের কথা সত্যি হয়ে যায়? তখন, তখন কি করবে মুন? আঁধার বলল,
—“চলো তোমাকে স্কুলে ড্রপ করে দি।”
বলেই আঁধার বেরিয়ে গেল।
#চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫৭
রাত মিষ্টিকে ড্রপ করে চলে যেতেই মিষ্টি স্কুলের ভেতরে না যেয়ে অন্যদিকে যেতে লাগলো। তা দেখে তিশান মিষ্টির হাত টেনে ধরে বলল,
—“আঁধরিকা কোথায় যাচ্ছ একা একা? স্কুলের ভেতরে চলো ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
মিষ্টি কপাল কুঁচকে বলল,
—“আজ মিষ্টি ক্লাস করার মুডে নেই। মিষ্টি তো আজ সুপারম্যানের সাথে দেখা করতে যাবে।”
তিশান অবাক হয়ে বলল,
—“সুপারম্যান?”
—“হ্যাঁ সুপারম্যান। তোমার মনে নেই? আমাদের যে ওই দুষ্টু লোকগুলোর হাত থেকে বাচালো সে’ই তো সুপারম্যান। সুপারম্যান না হলে কি ওই দুষ্টু লোকগুলোকে ডিশুম ডিশুম করে মেরে আমাদের সেভ করতে পারতো?”
—“তুমি জানো সে কোথায় থাকে?”
মিষ্টি মন খারাপ করে বলল,
—“না তো।”
—“তাহলে তুমি তার সাথে দেখা কি করে করবে?”
—“আমি কিচ্ছু জানি না। শুধু এটুকু জানি আমি সুপারম্যানের কাছে যাবো। তার সাথে দেখা করে তাকে সেদিনের জন্য থ্যাংকস জনাব।”
জেদ করে বলল মিষ্টি। তিশান মিষ্টিকে বুঝানোর সুরে বলল,
—“ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের তো তার এ্যাড্রেস জানতে হবে। এ্যাড্রেস না জানলে তার কাছে আমরা যাবো কি করে?”
মিষ্টি হাত ভাজ করে এক আঙ্গুল গালে রেখে ভাবতে লাগলো। তারপর একটু ভেবে আচমকা লাফিয়ে উঠে বলল,
—“তিশু ভাইয়া, আমি শুনেছি সুপারম্যান নাকি অন্নেক বড় ডক্টর। আমরা তাকে হসপিটালে খুজে দেখতে পারি।”
তিশান মিষ্টির কাধে হাত রেখে বলল,
—“ঠিক আছে মিষ্টি, কাল আঙ্কেল অথবা বাবাকে বলব আমাদের হসপিটালে নিয়ে যেতে। তারপর আমরা দুজন মিলে খুজবো তোমার সুপারম্যানকে।”
মিষ্টি রেগে গেল তিশানের কথায়। তিশানের হাত নিজের কাধ থেকে সরিয়ে বলল,
—“তোমার আমার সাথে যাওয়ারই কোনো দরকার নেই আমি একাই যাতে পারবো।”
বলেই মিষ্টি সামনের দিকে হাটা ধরলো। তিশান কোনো উপায় না পেয়ে নিজেও মিষ্টির পেছনে দৌড় লাগালো। মিষ্টি যে প্রচণ্ড জেদী আর দু’সাহসী সেটা তিশান প্রথম দিনই কিছুটা বুজে গিয়ে ছিলো। আর বাকিটা সেই ট্যারিরিস্ট এ্যাটার্কের সময় বুঝেছে। তাই কথা না বারিয়ে ওর সাথে যাওয়াই ভালো। কারণ মিষ্টি তো আর ওর কথা শুনবে না। আর তিশান ও’কে একাও যেতে দিতে পারবে না যদি কোনো বিপদে পরে। তিশান বারবার প্রে করছে যেন ওরা কোনো বিপদে না পরে।
.
ঊর্মি আশিকের হাতে হাত রেখে কাচা রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে। দুজনেই চুপ। কেউ কোনো কথা বলছে না। নিরবে গ্রাম বাংলার মনোরম পরিবেশের দৃশ্য উপভোগ করছে। ঊর্মি কিছু দিনের জন্য ওর পরিবারের সাথে গ্রামে এসে ছিল। দুদিন যেতে না যেতেই আশিক থাকতে না পেরে ছটফট করতে করতে মজনুর মতো ছুটে আসে প্রিয়সীকে দেখতে। ওরদের ক্যামেস্ট্রিটা শুরু হয়েছে সেদিন থেকে যেদিন আঁধার মুনের ব্যাপারে খবর নিতে ওর কাছে এসে ছিলো। আশিকই সেদিন আঁধারের হুকুমে ঊর্মির মাথায় গান রেখে ছিলো। আশিক আজও সেই দিনের কথা ভেবে হেসে দেয়। কি ভয়টাই না পেয়ে ছিল সেদিন ঊর্মি। ওর সেই ভীতু ফেসটা দেখেই আশিকের মুনের মধ্যে কেমন কেমন যেন করে উঠে ছিলো। তারপর থেকেই আশিক ঊর্মির পিছু নিতে শুরু করে। ঊর্মি তো প্রথম প্রথম খুব ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু আশিক নিজের ফিলিংস এক্সপোস করার পর ঊর্মির ভয়টা ভয়ংকর রাগে রূপ নেয়। সেদিন ওর মাথায় গান ধরার কারণে রিভেন্জ হিসেবে আশিককে সবার সামনে রিজেক্ট করে দেয়। ওর আনা ফুল গুলো ছিড়ে ওরই মাথায় পাপড়ির বৃষ্টি ঝড়ায়। আরেকবার পিছু নেওয়ার কারণে তো গণ ক্যালানি খেতে খেতে বেচে গেছে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে রাজি করিয়েছে। ঊর্মি আশিকের সম্পর্কে সব জানে। ওদের কাজের সম্পর্কে ধরতে গেলে সবই জানে। আশিক যে ইন্জিনিয়ারিং এর সাথে মাফিয়ার সাথে যুক্ত তা আগে থেকেই জানত। কিন্তু ওদের কাজ সম্পর্কে বেশি কিছু জানতো না। আশিক ওকে সব বলেছে তারপরই তো রাজি হয়েছে। নাহলে কখনো রাজি হতো না। ঊর্মি আর আশিক একটা গাছের নিচে বসলো। আশেপাশে যত দূর চোখ যায় কেউ নেই। ওরা দুজন ছাড়া কোনো মানুষের ছায়াও নেই।ঊর্মি বসতেই আশিক ওর কোলের উপর মাথা রেখে সবুজ ঘাসের বুকে পিঠ ছোঁয়ালো। ঊর্মি ধীরে ধীরে আশিকের মাথায় হাত বুলাতে লাগবো। আশিক হঠাৎ করে বলল,
—“মুন আর রাত রায়জাদার মধ্যে কি সত্যি কোনো সম্পর্ক নেই?”
ঊর্মি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এই এক প্রশ্নের উওর কত বার দিতে হবে বুঝে পায় না। কন্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলল,
—“তোমার কোনো সন্দেহ আছে?”
আশিক আমতা আমতা করে বলল,
—“না মানে দেখে মনে হয় না যে ওরা শুধু ফ্রেন্ডস। আচ্ছা মুনের আঁধারকে এতো অপছন্দ করার কারণ কি?”
ঊর্মি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল,
—“তোমাদের কাজের জন্য। তার উপর মুন নিজের চোখে আঁধার জিজুকে খুনাখুনি করতে দেখেছে। তাই ওর ধারণা তোমরা খুব খারাপ কাজের সাথে জড়িত। যেমন: নারী পাচার, শিশু পাচার, ড্রাগ স্পলাই ইত্যাদি। আর এটা ভাবা স্বাভাবিক ও। আমিও প্রথমে তা’ই ভাবতাম।”
—“উহুম আমরা ওগুলো করি না। আরো এগুলো যারা করে তাদের শাস্তি দেই। এবং এই জন্যই আমাদের মাফিয়ার সাথে যুক্ত হওয়া। আর আঁধার যে সাতটি দেশ লিড করছে AR হয়ে, খুবই শালীনতার সাথে লিড করছে। আরুশের ত্যাগ আঁধার কি ভাবে বৃথা যেতে দেয় বলো? আরুশ আঁধারের জীবন ছিলো। আরুশের মৃত্যুর পর আঁধার গান গাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে।শেষ বার গান গেয়ে ছিলো আরুশের সাদা কাফনে মৃত দেহটার সামনে বসে। তারপর আর কখনো ওর কন্ঠে কেউ গান শুনে না।”
ঊর্মি ফুস করে নিশ্বাস ছাড়লো। ও সবই জানে। আশিক ওকে বলেছিল এর আগে। আরুশ আর আঁধারের বন্ধুক্ত ছিল অমর। তাই তো আরুশ মরে গেলেও ওদের বন্ধুক্ত মরেনি। খুব খারাপ লাগে আরুশের জন্য। ওদের বন্ধু মহলের সব থেকে হাস্যউজ্জল ছেলে ছিলো আরুশ। হাসি কখনো ঠোঁট থেকে ফুরতো না যতই দুঃখ-কষ্ট আসুক না কেনো। ইসীও তো খুব কষ্ট পেয়েছিল। আরুশের মৃত্যুএ খুব বড় শক খেয়ে ছিল। এতোটাই ভালোবাসতো আরুশকে যে মেয়েটা মেন্টালি আনওয়ের হয়ে পরেছিল। নিজের মনের কথা বলার শেষ সুযোগটাও পায় নি মেয়েটা। ইসীর কথা মনে হতেই ঊর্মি ফট করে প্রশ্ন করে,
—“ইসী আপু যে আরুশ ভাইয়াকে ভালোবাসতো তোমরা তা আগে বুঝতে পারো নি?”
—“ইসী কখনো নিজের ফিলিংস সম্পর্কে আমাদের কাউকে খুলে বলে নি। আর আমরা ওকে দেখে বুঝতেও পারিনি যে ও আরুশকে নিয়ে ও রকম কিছু ফিল করতো।”
ঊর্মি কৌতূহলী হয়ে বলল,
—“ইসী আপু কি আর বিয়ে করবে না? মানে আরুশ ভাইয়া তো নেই। আর তাদের মধ্যে তো কিছু ছিলোও না। তাহলে নতুন করে শুরু করতে ক্ষতি কি।”
আশিক শোয়া অবস্থায়ই মাথাটা উচু করে কপাল কুঁচকে ঊর্মির দিকে তাকায়। ঊর্মি থতমত খেয়ে বলল,
—“কি?”
আশিক কন্ঠে গম্ভীর্য ভাব এনে বলল,
—“তার মানে আমি যদি এখন মরে যাই তাহলে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবে?”
ঊর্মি সহজ ভাষায় বলল,
—“হ্যাঁ অবশ্যই! এখন কারো জীবন তো কারো জন্যে থেমে থাকে না।”
আশিক সাথে সাথে উঠে বসলো। ঊর্মির গলাটা গাছের সাথে চেপে ধরে বলল,
—“এ কথা মাথায় আনলেও জানে মেরে ফেলবো। আমি মরলে তুই বেচে থেকে কি করবি? আপনকে বলে যাবো আমার মরার পর তোকেও মেরে ফেলতে।”
.
মুন আজ অফিসে যায় নি শরীরটা ভালো না। তাই রাতও কাজে যায় নি ছুটি নিয়ে নিয়েছে। মিষ্টিকে স্কুলে দিয়েই আবার বাড়িতে চলে এসেছে। আঁধার কিছুক্ষণ পর পর ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছে মুনের। মুন বিরক্ত হয়ে বারবার বলছে যে ও ঠিক আছে। কিন্তু আঁধার তাও বারবার ওর তাপমাত্রা জিজ্ঞেস করছে। আর মুনকে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে। মুনকে আঁধার স্কুলে দিয়ে চলে গেছিলো সেদিন। সে ঘটনার পর দু সপ্তাহ কেটে গেছে। সেদিনের পর থেকে আঁধার যেমন ওকে টর্চার করছে তেমনই আবার ওর কেয়ারও করছে। কিন্তু সেটাও মুনের টর্চার বলেই মনে হচ্ছে। রাত এসে মুনের পাশে বসলো। কপালর উপর থেকে জল পট্টিটা সরিয়ে হাত দিয়ে তাপমাত্রা মাপার চেষ্টা করলো। আগের থেকে কিছুটা কমেছে। রাত উঠে চলে গেলো। কিছুক্ষপর হাতে ট্রেনি নিয়ে ফিরে এলো। ট্রেটা বেড টেবিলের উপর রেখে সুপের বাটিটা হাতে নিলো। বাটি থেকে গরম ধোয়া উঠছে। মুন মলিন হেসে বলল,
—“খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছি তাই না?”
রাত সুপটা ফু দিয়ে মুনের মুখের সামনে ধরে বলল,
—“তা তো অবশ্যই। কিন্তু কোনো ব্যপার না তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে তোমাকে আচ্ছা মতো খাটিয়ে সব সোধ করে নিবো।”
মুন সুপ মুখে নিয়েই হেসে দিলো। রাত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মুনের ফ্যাকাশ মুখে হাসির দিকে। তারপর আনমনেই বলল,
—“তোমাকে হাসলে খুব সুন্দর না লাগে।”
মুন রাতের এই কথা শুনে জোড়েই হেসে উঠলো। রাত নিজের অনুভুতি গুলো আড়াল করে নিলো। তারপর ককথা ঘুরিয়ে বলল,
—“কিন্তু আমার থেকে বেশি না।”
—“আচ্ছা?”
—“অভিয়াসলি।”
রাত মুনকে সুপ খাওয়াত আরো অনেক কথা বলল।
.
ঊর্মি গলা থেকে আশিকের হাত ছাড়িয়ে বলল,
—“কেনো আমি মরতে যাবো কেনো? তুমি মরলে আমারকেও মরতে হবে?
—“হ্যাঁ!”
ঊর্মি উঠে জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
—“ভালোবেসেছি বলেছি সারাজীবন পাশে থাকবো এটা তো আর বলি নি যে মরার পর তোমাকে সম্পানি দিতে আমিও মরব। সরি এন্ড ব্রেকআপ। ভালো থেকো আর মরার পরও তোমাকে কম্পানি দিবে এমন মেয়ে খুজে নিও। আমি তোর জন্য প্রে করে দিবো। টাটা বাই বাই।”
বলেই ঊর্মি হাটা ধরলো। আশিক উঠে দৌড়ে গিয়ে ঊর্মির হাত টেনে ধরলো।
—“এই এই আমাকে ফেলে কই যাও?”
—“বাড়িতে।”
—“আমাকে তুমি একটুও ভালোবাসো না তাই না?”
—“পাঁচ মিনিট আগে বাসতাম। আমাদের এই মাত্র ব্রেকআপ হয়েছে তাই এখন আর বাসি না।”
বলেই ঊর্মি হাটা ধরলো। আশিক ঊর্মির পেছু ছুটলো ওকে এটা ওটা বলতে বলতে। এরকম ব্রেকআপ ওদের মধ্যে এ কয়দিনে অনেক বার হয়েছে। আবার চব্বিশ ঘন্টার আগেই সব ঠিক হয়ে গেছে।
.
—“সিস তুমি জানো সুপারম্যান কোথায়?”
একটা মেয়ের হাত টেনে বলল। মেয়েটি মিষ্টির সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল,
—“সুপারম্যান? সুপারম্যান হসপিটালে কি করবে?”
—“সুপারম্যান তো ডক্টর। আর ডক্টররা তো হসপিটালেই থাকে।”
মেয়েটি ঠোঁট গোল করে বলল,
—“ওওওও। বুঝেছি। কি তোমার নাম কি? আর তোমার বাবা-মা কোথায়?”
—“আধরিকা রায়জাদা। কিন্তু তুমি আমাকে মিষ্টি বলে ডাকতে পারো। আর আমার মাম্মি-পাপা আসেনি আমার সাথে। আমি আমার বিগ ব্রো’র সাথে এসেছি।”
মেয়েটি মনে করে বিগ ব্রো মানে বড় কেউ হয়তো। তাই মিষ্টির গাল টেনে বলল,
—“মিষ্টি? একদম তোমারই মতো মিষ্টি নাম।”
মিষ্টি গাল ফুলিয়ে বলল,
—“গাল টানলে কেনো? আমার গাল বড় হয়ে যাবে না?”
মেয়েটা মিষ্টির গালে একটা চুমু খেয়ে বলল,
—“আচ্ছা সরি বাবা। এবার বল তোমার সুপারম্যান কেমন দেখতে। না বলতে পারলে কিন্তু খুজে দিতে পারবো না।”
মিষ্টি উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবার ভাবতে ভাবতে বলল,
—“অক্কেন লম্বা। আমার মতো ফর্সা। আমার মতো ব্রাউন চুল। আমার মতো ব্লু ব্লু আই লেন্স ও।”
মিষ্টির কথা শুনে মেয়েটা অবাক হয়ে মিষ্টিকে দেখতে লাগলো। এবার যেন ভালো করে খেয়াল করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আর দেখে চমকে গেলো। একা একা বিরবির করে বলতে লাগলো,
—“এটা কি করে হতে পারে?”
এর মধ্যে তিশান দৌড়ে আসলো হাপাতে হাপাতে বলল,
—“আঁধরিকা পেয়েছো?”
—“না। তুমি পেয়েছো?”
তিশান ও মন খারাপ করে বলল,
—“আমিও পাই নি। আঁধারিকা কাল আবার খুজবো আজ বাসায় চলো। অনেকে দেরী হয়ে গেছে।”
মেয়েটা হঠাৎ বলে উঠলো,
—“আমি জানি তোমাদের সুপারম্যান কোথায়।”
মিষ্টি খুশিতে গদগদ করে বলল,
—“তুমি সত্যি যানো?”
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল,
—“হ্যাঁ।”
_
আঁধার হসপিটালে নিজের কেবিনে সোফায় বসে পেশেন্টদের ফাইল চেক করছিলো। হঠাৎ দরজা কেউ নক করে। আঁধার উচ্চ স্বরে বলল,
—“কাম ইন।”
আগন্তক ভেতরে প্রবেশ করে। আঁধার ফাইলের উপর থেকে আলিয়াকে দেখে বলল,
—“বস।”
—“সুপারম্যান”
এই মধ্যে কেউ চেচিয়ে উঠে, দৌড়ে এসে হুড়মুড় করে কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরলো। আকষ্মিক ঘটনায় বিষ্ময়ে কিংকত্যবিমুঢ় আঁধার। আঁধার সময় নিয়ে নিজেকে সংযত করে দেখলো কে সেই বেক্তি। সাথে সাথে আঁধারের চক্ষু চরকগাছ। আঁধার চেচিয়ে উঠে বলে,
—“মিষ্টি”
#চলবে,