#Mr_Husband,পর্ব_19,20
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_19
পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে খুব সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায় মুনের। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসতেই মুনের চোখ যায় সোজা সামনে থাকা সোফায় ঘুমন্ত আঁধারের দিকে। কাল রাতে মুন আঁধারের জন্য আবার দরজা খুলে তারপর ঘুমিয়ে ছিল। আঁধারকে ঘুমন্ত অবস্থায় একদম নিশ্বপাপ বাচ্চা মনে হচ্ছে। এই নিশ্বপাপ চেহারার পেছনে যে রাগি, বদমেজাজি, অ্যারোগেন্ট যেটা তার আসল চেহাররা সেটা কেউ বলবে? নাহ কেউ বলবে না। ঘুমন্ত অবস্থায় কি মাসুম দেখাচ্ছে আর জাগন্ত আস্ত একটা রাক্ষসরাজ মনে হয়। মুন পা টিপেটিপে সোফার কাছে গেল তারপর ফ্লোরে বসে আঁধার কে কাছ থেকে দেখতে লাগলো। আঁধারের রেশমের মতো চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। মুনের হঠাৎ এক অদ্ভূত ইচ্ছে হলো আঁধারের চুল গুলো একটু ছুঁয়ে দিতে। মুন ধীর গতিতে নিজের হাত আঁধারের রেশমি চুলের দিকে অগ্রসর করলো। মুন আঁধারের চুলের মাঝে হাত ডুবালো। আঁধারের চুল গুলো এতো সফ্ট আর এতো সিল্কি যে মুনের মনে হচ্ছে ও রেশমি সুতার উপর হাত বুলাচ্ছে। মুনের তীক্ষ্ণ নজর এবার আঁধারের ঠোঁটের কোনে থাকা কুচকুচে তিলটার দিকে গেল। দেখে মনে হচ্ছে দুধের উপর এক চিলতে কালি ছিটকে পরেছে। মুনের ছোট্ট মনটা চাইলো তিলটাতে একবার হাত বুলাতে। মুনেহ হাত কাপতে কাপতে আঁধারের তিলটার উপর গিয়ে থামলো। মুনের হাত ধীরে ধীরে আঁধারের ঠোঁটের উপর চলে গেল। আঁধার নিজের ঠোঁটের উপর নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে ততক্ষনাত চোখ মেলে তাকালো। মুন আঁধারকে চোখ খুলতে দেখে ভয় পেয়ে ছিটকে দূরে সরে গেল। আঁধার সোয়া থেকে উঠে বসলো। মুন মুখ কাচুমাচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁধার ভ্রু বাকিয়ে মুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলল,
“আমার ঠোঁটের উপরে কি করছিলে তুমি?”
মুন আমতা আমতা করে বলল,
“ক-কই কি-কিছু না তো?”
আঁধার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধমকে বলল,
“সত্যি করে বলল?”
মুন সঙ্গে সঙ্গে কথা সাজিয়ে বলল,
“আ-আসলে আপনার ঠোঁটের উপর একটা মশা কিস করছিল। তাই আমি ওটাকে ধাওয়াচ্ছিলার। ও কেন আপনার ঠোঁটে কিস করবে? আমার জামাই করলে আমি করবো।”
মুন কথাটা বলেই মুখে হাত চেপে ধরে। কি বলতে কি বলে ফেলেছে। মুনের কথা শুনে আঁধারে প্রচণ্ড। হাসি পায় কিন্তু মুনের সামনে হাসে না। আঁধার হাসি চেপে মুখে সিরিয়াস ভাব এনে চেচিয়ে বলল,
“হোয়াট?”
মুন মাথা নাড়ে মানে কিছু না। তারপর দৌড়ে পালায়। মুন যেতেই আঁধার শব্দ করে হেসে দেয়। মুন গেষ্ট রুমের সামনে এসে হাপাতে থাকে। বুকের মধ্যের হৃৎপিন্ডনা জোড়ে জোড়ে লাফাচ্ছে। মুন কিছুক্ষণ ওখানে দাড়িয়ে ঝিমিয়ে পা টিপে গেষ্ট রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো। রুশা এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মুন রুশা কে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। আর নিজের সাথে মেলাতে লাগলো। অতিরিক্ত সুন্দর মেয়েটা। ফর্সা দুধে আলতা গায়ের রঙ। গোলগাল বড়বড় দুটো চোখ। পাতলা গোলাপি ঠোঁট। বাশের কঞ্চির মতো নাক। স্লিম বডি। প্রথম দেখায়’ই যে কেউ’ই প্রেমে পরে যাবে। মুনের এই প্রথম নিজেকে অসুন্দর মনে হচ্ছে। মুন কখনো নিজেকে কারো সাথে কম্পেয়ার করে নি। আর কখোনো নিজেকে কারো থেকে কম ও ভাবে নি। কিন্তু আজ কেন যেন মনে হচ্ছে। আঁধার রুশার মতো সুন্দরী মেয়েকেই ডিজার্ভ করে। পরক্ষনেই মুন ভাবে ও বা রুশার থেকে কম কিতে? শুধু রুশার গায়ের রঙ একটু বেশিই ব্রাইট। তাছাড়া সব দিক দিয়েই মুন রুশার বরাবরি করতে পারবে। আর আঁধার তো ওর Mr.Husband তা রুশা কে কেন ডিজার্ভ করবে? আঁধার শুধু ওকে ডিজার্ভ করবে আর কাউকে না। মুন নিজের রাক্ষসরাজ কে কাউকে দেওয়া তো দূরের কথা করারো সাথে এক সেকেন্ড ও সহ্য করতে পারবে না। রুশা আঁধারের পাস্ট ছিল আর থাকবে। মুন আঁধারের পেজেন্টে ছিল আর ফিউচারেও থাকবে। মুন এসব কথা ভেবতে ভাবতে গেষ্ট রুম থেকে চলে গেল। আঁধার বাইরেই দাড়িয়ে ছিল মুন আঁধারকে খেয়াল করেনি। আঁধার বাইরে থেকে রুশার দিকে একবার তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“ফর্সা সাদা চামড়ার অতি সুন্দর দেখতে মানুষের মনও কয়লার মতো কালো হয় মুন। তারা বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর হলেও ভিতর থেকে জঘন্য। আর কে বলেছে তুমি অসুন্দর? আমার দেখা দ্বিতীয় সুন্দরী নারী তুমি মনপাখি। সব থেকে সুন্দর তোমার হরিণী গহীন দুটি চোখ। যাতে ডুবে আমি আমার মৃত্যু দেখেছি।”
আধার কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
রাতে সকলে ডিনার সেরে যার যার রুমে চলে গেলো।মুনের নিচে কিছু কাজ থাকায় তার যেতে দেরি হলো।
আধার ডিনার করে ছাদে এসে পকেট থেকে সিগারেট বের করে সিগারেটে আগুন ধরালো। অপরদিকে রুমে এসে মুন আধারকে খুজে না পেয়ে ছাদে চলে যায়।ছাদে এসে দেখে আধার আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানছে।
“এই যে Mr.Husband আজ কোন খুশিতে এই মহৎকাজটা করছেন শুনি।”
হঠাৎ পেছন থেকে মুনের কন্ঠ শুনে আধার হাত থেকে সিগারেটটা পেলে দিয়ে পা দিয়ে পিশে ফেলে।
“কি মশাই আমার কথা শুনে ফেলে দিলেন কেন? ”
আধার আমতা আমতা করে বললো,
“ধুর কি যে বলো না আমি কেন সিগারেট খেতে যাবো। আমি তো সেই কবে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।”
-“আর সব কিছু থেকে ফাঁকি দিতে পারলেও আমার থেকেও কিন্তু আপনি ফাঁকি দিতে পারবেন না।আমি কিন্তু সব দেখেছি।”
“আচ্ছা একটা কথা বলতে পারি?”
“পারমিশন নিচ্ছো কেন বলে ফেলো।”
“আমি কি আপনার আর রুশার সম্পর্কের মাঝ খানে দেওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছি? আসলো কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরিনি। কখনো কখনো মনে হয় দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আবার কখনো মনে হয় না এখানে আমার কোনো ভুল নেই সবই নিয়তির খেলা। নিয়তিতে আপনার সাথে আমার মিলন লেখা ছিলো তাই আজ আমি আর আপনি এক সাথে। আচ্ছা আপনি কি আমার কারণে কষ্ট পাচ্ছেন।আমার দায়িত্বের কারণে কি আপনি নিজেকে রুশার থেকে দূরে রেখে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন?”
আঁধার মুনের কোনো প্রশ্নের জবাব দিলো না সোজা মুনের কাছে এসে মুনকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।কিছুক্ষণ মুনকে নিজোর সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখার পর আঁধার মুনকে ছেড়ে দিলো।
আজ আঁধারের চোখে মুন নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে। নিজের প্রতি আসক্ততা ফুটে উঠেছে আঁধারের চোখে।
আঁধার মুনে দিকে কিছু নেষাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুনের ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। মুন চেখ গোল গোল করে দাঁড়িয়ে আছে।আঁধার এসব কি করছে তা মুনের মাথার তিন ইঞ্চি উপর দিয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর আঁধার মুনকে ছেড়ে দিলো দুজনই জোরে জোর নিশ্বাস নিচ্ছে।
আঁধার মুনকে কোলে নিয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। ঘরে এসে মুনকে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজেও বেডে শুয়ে পড়লো।
সকালে মুনের উঠার আগেই আঁধারের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে পাশে তাকাতেই দেখলো মুন ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে।খুব নিষ্পাপ লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায় একদম ঘুমপরীদের মতো।মেয়েটার চেহারায় মায়া ভরা যে কেউ দেখলে এর মায়ার জরিয়ে যাবে ঠিক তেমনভাবেই আঁধারও মুনের মায়ার পরে গেছে। কিছুক্ষণ একই ভাবে তাকিয়ে থাকার পর আঁধারের রাতের কথা মনে পড়লে গেলো।আঁধার এক লাফে মুনে কাছ থেকে দূরে সরে গেলো। এক মুহূর্ত ব্যয় না করে আঁধার ওয়াশরুমে ঢুকে ধুম করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
দরজা লাগনোর আওয়াজে মুনের ঘুম ভেঙে যায়।শোয়া থেকে উঠে আড়মোড় ভেঙে পুরো রুম পর্যবেক্ষণ করে দেখে আঁধার কোথাও নেই তার মানে আঁধারই ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়েছে।
মুন কাল রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে করে নিজের দিকে তাকালো আর লজ্জায় লাল নীল সবুজ হয়ে গেলো…….
“চলবে”
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২০
শাওয়ার অন করতেই এক পলশা বৃষ্টির মতো ঝন্নার পানি আঁধারের সুঠাম দেহকে ভিজিয়ে দেয়। উপরে উঠানো রেশমি চুল ও পানির ছিটায় ছিটায় নেতিয়ে কপালে এসে পরেছে। আর সেই চুল বেয়ে চোখে এসে পরছে। আঁধারের খুব রাগ লাগছে নিজের প্রতি! ও কি করে পারলো এমনটা করতে? কি করে? আঁধার স্বজোরে দেয়ালে ঘুষি মারলো। সাথে সাথে হাত ফেটে গড়গড় করে রক্ত বেরি পানির সাথে মিশে যেতে লাগলো। আঁধার বুঝতে পারছে না যে কাল রাতে ও এতোটা আউট অফ কন্ট্রোল কি করে হয়ে গেল। রাগে মুখ দিয়ে ‘চ’ এর মতো উচ্চারণ করলো। তারপর নিজের চুল গুলো শক্ত করে টেনে ধরে নিচে বসে পরলো। ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না যে, কি থেকে কি হয়ে গেল। মুন এখনো এ্যাডাল্ট হয়নি। আর আঁধার একজন ডক্টর হয়েও……. ভাবতেই আঁধারের মাথার রগ ফুলে উঠছে। রাগে শরীর রি রি করে কাঁপছে। পুরো পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে আঁধারের। আঁধার এই প্রথম নিজের ওয়াদা ভঙ্গ করলো। আঁধার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে থাকে। তারপর কিছুক্ষণ পর মুখ থেকে হাত সরিয়ে শীতল দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকায়। শাওয়ার থেকে ঝপঝপ করে পানি এসে টাইল্সের উপর পরে বারি খেয়ে ছিটকে ওর শরীরে লাগছে। আঁধার ঠান্ডা মাথায় ভাবলো! যা হওয়ার হয়ে গেছে। কিন্তু এই ভুল আর দ্বিতীয় বার করা যাবে না। মুনের থেকে এখন দূরত্ব বারাতে হবে। এতে হয়তো মুন কষ্ট পাবে। কিন্তু এটাই ওর জন্য সঠিক ডিসিশন।
মুন বসে আছে শাওয়ার নেওয়ার জন্য। এক ঘন্টারও বেশি সময় হয়ে গেছে কিন্তু আঁধার এখনো দবের হচ্ছে না। মুন গলা উুচু করে বলল,
—“এই যে Mr.Husband আপনার কি হয়েছে? বের হবেন নাকি আজ সারা দিন ওয়াশ রুমেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছন?”
মুন পকপক করতে করতেই আঁধার বেরিয়ে আসে। আঁধারকে দেখেই মুনের কথা বন্ধ হয়ে যায়। উপরের ঠোঁট নিচের ঠোঁটের থেকে আলাদা হয়ে যায়। মুন এই প্রথম আঁধারকে টিশার্ট ছাড়া দেখছে। আঁধারের পরনে হাটু অব্ধি শুধু একটা টাওয়াল আর কিছু নেই। চওড়া সুঠাম লোম হীন ফর্সা বুকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোটাগুলো মুক্তোর ন্যায় চিকচিক করছে। রেশমি চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। সচ্ছ নীল চোখ দুটো শাওয়ার নেওয়ার পর আরো ভাশা ভাশা আর সচ্ছ মনে হচ্ছে। মুনকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁধার ভ্রু বাকিয়ে তাকালো। সাথে সাথে মুন নিজের মুখ বন্ধ করে চোরের মতো চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর উঠে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আঁধার কিছুক্ষণ মুনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কাবার্ড থেকে নিজের জামা কাপড় বের করলো। মুন শাওয়ার শেষ করে জামা চেন্জ করার সময় মনে পরে ও তো জামাই আনে নি। মুন চিন্তায় পরে যায়। এখন কি করবে ভেবে পায় না। একবার ভাবলো আঁধারকে বলবে। কিন্তু লজ্জাও করছে। মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে মুন ঠিক করলো আঁধারের কাছেই সাহায্য চাইবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মুন আস্তে আস্তে হালকা দরজা খুলে বাহিরে উুকি দেয়। মুন দেখতে পায় আঁধার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে জেল দিয়ে চুল উপর তুলছে। মুন নিচু গলায় আঁধারকে ডাকলো,
—“এই যে শুনছেন?”
আঁধার ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু উচু করে তাকালো। মুন মিনমিনে গলায় বলল,
—“আমি কাপড় নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। প্লিজ একটু কষ্ট করে কাবার্ড থেকে আমার কাপড়গুলো দিবেন?”
আঁধার কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। তারপর কাবার্ড থেকে নেবী ব্লু কালারের লং স্কার্ট আর অফ হোয়াইট কালার টপ বের করে মুনকে দিলো। মুন ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল,
—“থ্যাঙ্ক ইউ Mr.Husband!”
.
আরমান রেজওয়ান, আরিফা রেজওয়ান, আঁধার, মুন, আলিয়া সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে যে যার মতো নাস্তা করছে। আরমান রেজওয়ান হঠাৎ গম্ভীর স্বরে আঁধারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
—“মেয়েটা এ বাড়িতে আর কতদিন আছে?”
আঁধার ব্রডে কামড় দিতে গিয়েও দিলো না। ব্রডেটাকে দেখতে দখতে স্বাভাবিক গলায় জবাব দিলো,
—“ওর যত দিন ইচ্ছে।”
আরমন রেজওয়ান এবার ক্ষিপ্ত গলায় বললেন,
—“মানে কি? চেনা নেই জানা নেই অচেনা একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসেছো। মেয়েটা বিপদে পরে ছিল অসুস্থ ছিল। তাই সাহায্য করেছো। কিন্তু এখন মেয়েটা পুরোপুরি সুস্থ। তাই বিকেলে মেয়েটাকে ওর বাড়িতে দিয়ে আসবে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”
—“ড্যাড রুশা অপরিচিত কেউ না। ও আমার ফ্রেন্ড। তাই ওর যতদিন ইচ্ছে ততোদিন ও এই বাড়িতে থাকবে।”
বলেই আঁধার খাবার রেখে উঠে গেল। আঁধার উঠে যেতেই মুন ও উঠে গেল। আরমান রেজওয়ান রেগে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন কিন্তু আরিফা রেজওয়ান বাধা দেন। আলিয়া বলল,
—“ভাই খাবারটা তো শেষ করো!”
—“আমার খাওয়া শেষ।”
—“মিষ্ট তোমার কি হলো? তুমি উঠলে কেন?”
মুন আঁধারের দিকে তাকিয়ে বলল।
—“আমার পেট ভোরে গেছে আলিয়া।”
আঁধার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আর যাওয়ার আগে মুনকে রুশার খেয়াল রাখতে বলে যায়। মুন শুধু মাথা নাড়ে।
.
বিকেলের দিকে মুন রুমে বসে চুপচাপ নিজের আর আঁধারের জামা-কাপড় ভাজ করছিল। সেই সময়ই রুশার আগমন ঘটে। রুশা দরজায় নক করে বলল,
—“আসতে পারি?”
মুন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রুশা দাঁড়িয়ে আছে। সৌজন্যতার হাসি দিয়ে মুন বলল,
—“জ্বী আসতে পারেন।”
রুশা রুমটা ভালো করে দেখতে দেখতে ভিতরে ঢুকলো। আঁধারের রুমটা অন্যান্য সব রুমের থেকে অনেক বড়। রুমের মাঝ বরাবর গোল বড় একটা বেড আর তার দুপাশে দুটো ল্যাম্পটেবিল। বেডের সোজাসুজি একটা বড় সোফা। সোফার থেকে এক হাত দূরুত্বে দাঁড়ানো কালো রঙের কাবার্ডটি। জানালার ঠিক পাশে মুনের জন্য আনা পিংক কালারের স্টাডি টেবিল। সাইডে কালো রঙের বিশাল এক বুক শেল্ফ। বেডে ওপর সাইডে কালো রঙের ড্রেসিং টেবিল। আর রুমের সাথে এ্যাটাচ আঁধারের পার্সোনাল স্টাডি রুম। যেটা সবসময় আঁধার লক করে রাখে।
—“দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন!”
রুশা বেডের উপর বসলো। মুন নিজের কাজে মন দিলো। রুশা প্রশ্ন করলো,
—“তোমাদের বিয়ের কয় বছর চলছে?”
মুন কাজ করতে করতে জবাব দিলো,
—“ছয় মাস চলছে।”
—“ওহ!”
রশা আঁধারের একটা টিশার্ট হাতে নিয়ে সেটাকে দেখতে দেখতে বলল,
—“তুমি কি জানো ও এক সময় আমাকে ভালোবাসতো?”
মুন থেমে গেল। কথাটা ওকে ছুরির মতো আঘাত করছে। ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে পরলেও উপর থেকে নিজেকে শক্ত করে সেই ক্ষতটা হাসি দিয়ে ঢেকে বলল,
—“একসময় বাসতো। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে।”
মুনের জবাবে রুশার মুখ ছোট হয়ে গেল। কিন্তু রুশা এতো সহজে দমলো না। ও আবারো মুনকে কটাক্ষ করে বলল,
—“তোমার কি মনে হচ্ছে না যে তুমি আমাদের দুজনের মাঝে এসে পরেছো?”
মুন ত্যাচ্ছিল্যে হেসে বলল,
—“মোটেও না। কিছু মনে করবেন না। আপনি তো অনেক বছর আগেই ওনাকে ফেলে চলে গেছিলেন। মানুষটা একদম রোবটের মতো বাচছিল, তার জীবন রঙ বিহীন হয়ে গেছিল, হাসতে ভুলে গেছিল, বাচতে ভুলে গেছিল। তখন আমি তার জীবনে রঙধনু হয়ে আসি। সেই রোবটটাকে অনেক কষ্টে আবারো মানুষে রুপান্তর করেছি। মন খুলে হাসতে শিখিয়েছি। সুন্দর করে বাচতে শিখিয়েছি। এখন আপনিই বলুন সত্যি কি আমি আপনাদের দুজনের মাঝে এসেছি?”
এরপর আর রুশা কিছু বলতে পারলো না। এই কথার উপর আর কোনো কথাও খুজেই পেল না। রুশা না পেরে রেগে উঠে চলে গেল। মুন জোড়ে নিশ্বাস ফেলল। এত যুক্তিযুক্ত কথা ‘ও’ বলতে পারে তা ওর আগে জানা ছিল না। মুন এটুকু বুঝতে পেরেছে যে আঁধারকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখে সহ্য করা অন্তত ওর পক্ষে সম্ভব না। আঁধারের জন্য যদি ওকে কারো সাথে লড়তে হয় মুন তাও পারবে। কারণ খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে যে ওই রাক্ষসটাকে।
#চলবে,