#Our_Unknown_Love_Story(2),11,12
#The_Incomplete_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_11
তারা রুমে এসেই দেখতে পেলো আমান রোহান আর দিয়া বসে আছে। বেচারা রা চিন্তায় শেষ। তারাকে আসতে দেখে আমান দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। দিয়া আর রোহান ও আসলো।
আমানঃ এতো লেইট হলো কেন তারা। আমরা তোকে পুরো কলেজ খুঁজেছি কিন্তু পাই নি। ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া আমরা কতটা টেনশনে ছিলাম। তোকে কত কল করেছি বাট ফোন বন্ধ। ( এক নিঃশ্বাসে বলল আমান)
দিয়াঃ তোর ফোন কোথায় কোথায়??( রেগে )
ওরা বলেই যাচ্ছে তারা কিছু বলার সুযোগই পাচ্ছে না। তারা আর না পেরে কানে হাত চেপে চিৎকার দিয়ে উঠে।
তারাঃ চুপপপপপপপপ,,,,,
তারার চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে গেল।
তারাঃ আমাকে বলার সুযোগ টাতো দিবে তোমরা।
সবাই চুপ হয়ে মাথা নাড়ালো।
তারা সবাইকে বলতে শুরু করে যে আধার ওকে কতগুলো বই পড়িয়েছে আর আসার সময় হেটে আসার কারনে লেইট হয়ে গেছে সব।
দিয়াঃ সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোর ফোন বন্ধ কেন??
তারা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করেই দেখলো ফোন সুইচ্ড অফ হয়ে আছে। তারা ওদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে।
তারাঃ চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল তাইয়ফোন অফ হয়ে গেছে। ?
তারার কথা শুনে আমান আর দিয়া ওকে এক গাদা লেকচার শুনিয়ে দেয় আর তারাও অসহায় ভাবে সবার লেকচার শুনছে ?
রাত এগারোটা,,,
তারা বারান্দায় হাটছে আর ক্যামেরায় ব্রোকেন স্টার এর তোলা ছবি গুলো দেখছে। মনে মনে আধারকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছে তারা আজ ওর জন্যই তো এতো সুন্দর মুহূর্ত টা অনুভব করতে পেরেছে ও।
ক্যামেরাটা সেন্টার টেবিলে রেখে শুয়ে পরলো তারা। কিন্ত চোখে ঘুম নেই ওর। বারবার আধারের চেহারাটা ভেসে উঠছে চোখে। আধারের কথা ভাবতে ভাবতেই গভীর ঘুমে হারিয়ে গেল ও।
কিছুক্ষন পর বারান্দা টপকে তারার রুমে আসলো আধার। ধীর পায়ে তারার পাশে বসে পরলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আধার তারার দিকে।
আধার নিজের হাত তারার গালে স্লাইড করতে করতে বলে,,,
আধারঃ কবে সব কিছু আগের মতো হবে মেরি জান। কবে আগের মতো তোমাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবো। কি করলে তোমার সব কিছু মনে পরবে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কি করব আমি?? ( অসহায় ভাবে)
সারা রাত তারাকে দেখে ভোরের দিকে রুম থেকে বের হয়ে যায় আধার।
সকালে,,,
কলেজে এসে আধারকে কোথায়ও দেখতে পেলো না তারা। আপনাআপনি মনে এক বিষন্নতা ছেয়ে গেল ওর। মন খারাপ করেই সব গুলো ক্লাস করলো তারা।
এখন শেষ ক্লাস চলছে এটা আধারের ক্লাস ছিল কিন্তু ও আসে নি অন্য স্যার ক্লাস নিচ্ছে মুড অফ করে ক্লাস করছে তারা কিছুই ভালো লাগছে না ওর কাছে।
তারাঃ কালকেই তো বললেন যে উনি নিজে আমাকে ট্রেইন করবেন কিন্তু আজকে তো উনার আসার কোন খবরই নেই। AR কি নিজের প্রমিস ভুলে গেছে। ( মন খারাপ করে)
হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেল তারার। আধারকে অনুভব করতে পারছে ও। যেন আধার ওর আশেপাশেই আছে।
দরজার দিকে চোখ পরতেই ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো তারার।
আধার আর প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাসে ঢুকছে। আধার ক্লাসে ঢুকেই তারার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। এই হাসিটা যেন যে কাউকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট।
আধার আর প্রিন্সিপাল সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে।
প্রিন্সিঃ সবার স্টাডি কেমন চলছে??
সবাইঃ গুড প্রিন্সি।
প্রিন্সিঃ সবাই ক্লাস শেষে ইয়ার্ডে চলে আসবে। আজকে তোমাদের ডার্ক ফরেস্ট থেকে ঘুরিয়ে আনা হবে।
ডার্ক ফরেস্ট এর নাম শুনেই মনে খচখচ শুরু করে তারার।
তারাঃ ওয়াও সেদিন বাইরে থেকে চলে গিয়েছিলাম আজকে ভিতরে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছি। এখন বুঝতে পারবো কেন জায়গাটা এতো পরিচিত লাগছিল সেদিন। ( মনে মনে)
প্রিন্সির কথায় ধ্যান ভাঙ্গে তারার।
প্রিন্সিঃ তারা!!
তারা দাঁড়িয়ে যায়।
তারাঃ ইয়েস স্যার??
প্রিন্সিঃ তোমার দায়িত্ব AR নিয়েছে তাই তোমাকে ডার্ক ফরেস্ট উনি দেখাবেন।
তারা তো মহা খুশি। ইচ্ছে করছে এখানেই ভাঙ্গরা করতে। কিন্তু নিজের খুশি প্রকাশ করলো না ও মাথা নাড়িয়ে নিজের সিটে আবার বসে পরলো তারা।
ক্লাসের মেয়েরা তো হিংসায় ফেটে যাচ্ছে আর বিরবির করে কি যেন বলছে।
ক্লাস শেষে সবাই ডার্ক ফরেস্ট এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে। সবাই সাইনবোর্ড টির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এতে বড় বড় শব্দে লেখা,,,
” Danger Inside Do Not Enter ”
সবাই এক্সাইটেড হয়ে চারপাশ দেখছে। জঙ্গলটি অনেক ঘন আর সূর্যের আলো ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই দিনেও অন্ধকার দেখা যাচ্ছে।
তারা হাটছে আর ওর মনের ভয়টা আরো বাড়ছে। চোখের সামনে ধূসর কিছু ভেসে উঠছে ওর। শরীর কাঁপছে আর কপাল ঘামছে তারার।
সবাই ওকে ফেলেই এগিয়ে যাচ্ছে। তারা ধীর গতিতে হাটছে কদম যেন এগোতে চাইছে না। হঠাৎ তারা পরে যেতে নিলেই আধার ছুটে এসে ওকে ধরে ফেলে। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে তারাকে।
আধারঃ ত তারা কি হয়েছে?? তুমি ঠিক আছো এভাবে পরে যাচ্ছিলে কেন তারা?? আর ইউ অল রাইট। ( ঘাবড়ে গিয়ে)
তারা আদৌ চোখ খুলে দেখে ও আধারের বুকে মাথা ঠেকিয়ে আছে। এমন লাগছে এই জায়গাটা শুধু ওর জন্যই বরাদ্দ। এভাবে আধারের বুকে চোখ বন্ধ করে রাখতে অনেক শান্তি অনুভব হচ্ছে ওর।
কিন্তু আধারের টেনশন হচ্ছে বিধায় ও নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এরকম তারার সাথে প্রায়ই হয়। হঠাৎ হঠাৎ এমন কিছু মনে পরে যায় যা ওর সাথে কখনো ঘটে নি।মাঝে মাঝে সব ঝাপসা ভেসে উঠে চোখের সামনে। মাথা ভারী হয়ে আসে আজও এরমটাই হচ্ছে। অতীত বারবার বর্তমানে উকি দিচ্ছে।
তারা নিজেকে সামলে অনিচ্ছা সত্বেও আধারের বুক থেকে উঠে যায়।
তারাঃ আমি ঠিক আছি AR. জাস্ট একটু মাথা ব্যথা করছিলো তাই আর কি ( মিথ্যা বলল)
আধার ঠিকই বুঝতে পারছে যে তারা মিথ্যা বলছে। ওর কিছু কিছু মনে পরছে। আধার এজন্যই তারাকে এখানে আনার প্লান করেছিল যেন তারার কিছুটা হলেও নিজের অতীত মনে পরে। আধার মনে মনে খুশি হলেও তারার জন্য চিন্তা টা বেড়ে গেল। যদি ওর কোন ক্ষতি হয়। এসব নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আধারের মনে।
তারা খেয়াল করলো আধার কোন চিন্তায় বিভোর।
তারাঃ AR!!!
তারার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে আধারের।
আধারঃ আব হ্যাঁ বলো??
তারাঃ AR আমাদের সামনে এগোনো উচিত সবাই অনেক দূরে চলে গিয়েছে মনে হয়।
আধার সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই সবাই দূরে চলে গেছে।
আধারঃ হুম চলো।
আধার তারার হাত ধরে ওকে সোজা করে দাড় করায়।
তারাঃ আমরা কোন দিকে যাবো ( কনফিউজ হয়ে)
আধার মাইন্ড রিড করে বুঝতে পারলো সবাই বাম দিকে গিয়েছে।
আধারঃ মে বি ডান দিকে!! চলো। ( মিথ্যা বললি ক্যান ?)
আধার তারাকে নিয়ে সেই যায়গাটায় আসে যেখানে কাইফ শবনমকে ডেকেছিল।
তারা অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে আর ভাবছে।
তারাঃ এটাতো আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম ( অবাক হয়ে)। একটা মেয়ে দৌড়ে এখানে এসেছিল তারপর কেউ ওকে পেছন দিয়ে আঘাত করেছিল।
কিন্তু ওটাতো স্বপ্ন ছিল তাহলে এই জায়গাটার সাথে মিলে গেল কেন। কি হচ্ছে আমার সাথে আমি কিচ্ছুই বুঝতে পারছি না। সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আগেতো শুধু স্বপ্ন দেখতাম আর এখন সেই স্বপ্নগুলোর বাস্তবতা দেখছি।
ভয় লাগছে তারার। সব কিছু উলটপালট হয়ে যাচ্ছে ওর কাছে।
আধার তারার কনফিউজ্ড চেহারা দেখে বুঝতে পারছে যে ওর কিছু একটা মনে পরছে। কিন্তু ও তারার মাইন্ডে এতো প্রেসার দিতে চাইছে না যদি ও সহ্য করতে না পারে।তাহলে তারার সমস্যা হতে পারে।
আধারঃ কিছু মনে পরছে তারা??
তারা অবাক চোখে আধারের দিকে তাকায়।
তারাঃ AR বুঝলো কিভাবে ( মনে মনে) কি বলতে চাইছেন আপনি AR??
আধার কথা ঘুরিয়ে বলতে শুরু করে,,,
আধারঃ তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন তুমি কিছু মনে করতে চাইছো তাই জিজ্ঞেস করলাম কিছু মনে পরলো কিনা।
তারাঃ নাহ কিছু না। তারা কিছু না বলে সোজা হাটা ধরলো।
আধার এবারো নিরাশ হলো। ভেবেছিল এখানে আসলে কিছুটা হলেও তারার অতীত মনে পরবে। কিন্তু কিছুই হলো না।
আধারঃ তো কি হয়েছে এখন কিছু মনে পরে নি। আমার নাম ও আধার রেজওয়ান?। একটা প্লান ফ্লপ হয়েছে তো কি হয়েছে আমি অলওয়েজ চার কদম আগে চলি। তোমাকেতো সব মনে করিয়েই ছাড়বো তারা ( with cute smile)
কথা গুলো ভেবে আধারও তারার পেছনে দৌড়ে যায়।
তারা ক্লান্ত হয়ে একটা পাথরে বসে পরে। আধার ওর বরাবর একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
আধারঃ কি এনার্জি শেষ??
তারাঃ হুম,,,( ক্লান্ত স্বরে) AR পুরো জঙ্গল ঘুরলাম কিন্তু বাকিদের তো পেলাম না।
আধারঃ হয়তো সবাই আমাদের না পেয়ে চলে গেছে।
তারাঃ কিহহ ( দাঁড়িয়ে গিয়ে) এখন আমরা কিভাবে যাবো।
আধারঃ রিলেক্স তারা। ম্যা হু না? AR এর কাছে সব প্রবলেমের সলুশন আছে। আর এখান থেকে বের হওয়ার কথা সেটাতো আমার বা হাতের খেল।
এই জঙ্গলের প্রতিটা কোনার সাথে আমি পরিচিত ( কঠিন স্বরে)
তারাঃ আর ইউ সিউর আমরা হাড়িয়ে যাব না। ( সন্দেহের চোখে)
আধার মুচকি হেসে তারার সামনে এসে ঝুঁকে দাঁড়ায়। তারার হার্টবিট এতো বেড়ে গেছে যেন মনে হচ্ছে এখনি বেড়িয়ে আসবে। আধারের নিঃশ্বাস তারার মুখে পরছে আর তারা যেন কোন ঘোরে হারিয়ে যাচ্ছে।
আধারের চোখে তারার চোখ আটকে গেছে। সাদা আই গ্লাসের ভিতর দিয়েও আধারের চোখ গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এই চোখ দুটো অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু তারা এর ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে।
আধার তারার মুখের সামনে থেকে সরে ওর কানের কাছে নিজের মুখ নেয় তারপর স্লো ভয়েজে বলে,,,
আধারঃ এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্রেমে পড়ে যাবে।?
আধারের কথায় তারার হুশ আসে আর ও লজ্জা পেয়ে নরেচরে বসে।
তারাঃ ইই এভাবে কেউ লজ্জা দেয়। ( মনে মনে)
আধার প্যান্ট এর পকেটে হাত দিয়ে তারার কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায় তারপর বলে।
আধারঃ ডু ইউ ট্রাস্ট মি তারা???
তারা কিছুক্ষণ ভেবে চট করে উত্তর দিলো।
তারাঃ নোওও।
আধার হালকা হেসে দিলো কারণ আগেও এই প্রশ্নের উত্তর শবনম এভাবেই দিতো।
আধারঃ ওকে দ্যান সারারাত এখানে থেকেই ওদের অপেক্ষা করো। কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা নেমে আসবে। দিনের বেলাতেই এই জঙ্গল এতো ভয়ঙ্কর লাগে ভাবো রাতের বেলা কতটা ভয়ঙ্কর লাগবে। ( তারাকে ভয় দেখিয়ে)
তুমিতো আমাকে বিশ্বাস করোনা তাই আর কি করার আছে আমাকে একাই ফিরতে হবে বায় বায়।
কথাগুলো বলেই আধার হাটা শুরু করল।
তারাতো ভয়ে শেষ।
তারাঃ AR তো ঠিকই বলছে। না নাহ এখানে একা থাকা যাবে না। এর চেয়ে বরং আমি ARএর সাথে চলে যাই( মনে মনে)
তারা আধারকে যেতে দেখে ভয়ে ওর পিছনে দৌড় দেয়।
আধারঃ কি হলো আমার সাথে আসছো কেন তুমিতো আমাকে ট্রাস্ট ই করো না ( আড়চোখে তাকিয়ে)
তারাঃ ইয়ে মানে AR আমিতো মজা করছিলাম।? আই ট্রাস্ট ইউ এত্তোগুলি ? প্লিজ আমাকে সাথে নিয়ে জান নাহলে এই বনের জঙ্গলী পশুরা রাতে মিলে আমাকে দিয়ে বার্বিকিউ পার্টি করবে ?।
তারার কথায় আধার খিলখিলিয়ে হেসে দেয় আর তারার চোখ আধারের হাসিটাতে আটকে যায়। এতো সুন্দর করেও কেউ হাসতে পারে জানা ছিল না তারার।
আধার নিজের হাসি আটকে রেখে তারাকে বলে।
আধারঃ ওকে চলো আমি তোমাকে এই পশুদের বার্বিকিউ পার্টির খাবার হতে দিবো না ?
তারাঃ থ্যাঙ্ক ইউ AR আপনি মহান ?
আধার তারাকে নিয়ে পেছনের জঙ্গল দিয়ে বের হয়ে যায়। আধার তারাকে নিয়ে কটেজের রোডে চলে আসে। তারাদের কটেজের সামনেই আধারের সেই পুরোনো বাড়িটা। বাড়িটার সামনে দিয়ে আসতেই আধার সেখানে এক পলক তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।
তারার মনে বাড়িটা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই অনেক কৌতুহল। তাই ও কৌতুহল নিয়েই আধারকে জিজ্ঞেস করল।
তারাঃ AR এতো বড় বাড়িটা এমন খন্ডরের মতো হয়ে আছে কেন। কেউ থাকে না এখানে। ( দাঁড়িয়ে গিয়ে)
তারার কথায় আধার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,
আধারঃ নাহ,,,
তারাঃ কারা থাকতো এখানে??
আধারের চোখের কোনে পানি জমে গেছে বুকের ব্যথাটা যেন আবারো বেরে যাচ্ছে। পুরোনো ঘা গুলো আবার তাজা হয়ে উঠছে ওর। অতীতের সেই সুন্দর মুহূর্ত গুলো আজ মনে পরলে হৃদয়ে কাটার মত বিধে।
আধার নিজেকে সামলে তারাকে বলল,,
আধারঃ একটা রান্ঝনা তার হীর কে নিয়ে এখানে থাকতো ।
তারাঃ হীর রান্ঝনা!!!! এখন থাকে না কেন???
আধারঃ তার হীর তাকে ফেলে চলে গেছে তাই সেও এখান থেকে দূরে চলে গেছে।
তারাঃ AR ভূল নাম বলছে কেন আমি সেদিন ভিতরে গাছটাতে নাম দুটো দেখেছি আর সেটা হচ্ছে আধার শবনম। তাহলে উনি হীর রান্ঝনা বলছেন কেন?? ( মনে মনে)
তারা আর কিছু বলতে নিলে আধার ওকে থামিয়ে বলতে শুরু করে।
আধারঃ তোমার কটেজে পৌছে এসেছি তারা রাত হয়ে গেছে ভিতরে যাও।
আধারের কন্ঠে একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করছে তারা। কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। চুপচাপ কটেজে ঢুকে গেল। ঢোকার আগে এক পলক আধারের দিকে তাকালো ও। আধার উল্টো দিকে ফিরে বাড়িটার দিকেই তাকিয়ে আছে। তারা যদি সামনে থাকতো তাহলে আধারের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি গুলো দেখতে পারতো। তার মনের অব্যক্ত কথা গুলো বুঝতে পারতো ।
তারা চলে যেতেই আধার বাড়িটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে যায়।
To be continued…….
#Our_Unknown_Love_Story(2)
#The_Incomplete_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_12
চোখ বন্ধ করে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে আধার। অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। এই পঁচিশ বছরে কিছু প্রশ্নের জবাব পেয়েছে তো কিছু এখনো ধোয়াশা হয়ে আছে।
এমন সময় কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে বিরক্ত হয়ে চোখ খুলল আধার। মাহিরা আসছে পড়নে একটা পাতলা জর্জেটের গাউন চোখে শয়তানি ভাব। গাউনটির স্লিভলেস হাতা আর ব্যাকলেস যার কারনে অনেকক্ষানি পিঠ দেখা যাচ্ছে।
(শয়তাননী, চুরেল, লুচ্চি মোহনা ডায়েন,পেত্নী, নাক কাটা সুরপন্খা রাক্ষসী, তোর সাহস কেমনে হয় আমার আধারের সামনে এমনে আসার। তোরে পাইলে আমি কুঁচি কুঁচি করে কেটে আমার টাইগারকে খাইয়ে দিমুউউ ??। আধার তুই যদি কিছু করস তোরে আমি ডিভোর্স দিয়ে উগান্ডা পাঠাই দিমুউ ? কিছু কইরো না মেরা জান ?)
আধার অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কপাল খোঁচ করে বুঝার চেষ্টা করছে যে মাহিরা কি করতে চাচ্ছে।
মাহিরা আধারের কাছে এসে দু হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে আর বলতে শুরু করে।
মাহিরাঃ আর কত আধার আর কত একা থাকবে। লুক অ্যাট মি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তোমার জন্য সব করতে রাজী শুধু একবার বলে দেখ। যে চলে গেছে তাকে যেতে দাও আর যে তোমার কাছে আছে তাকে নিজের করে নাও। ( নেশা লাগানো কন্ঠে ?) আজকে আমাদের মাঝে কেউ আসবে না। কোন অতীত কোন স্মৃতি কিচ্ছু না। মেক মি ইউর্স আধার….
আধার বাঁকা হেসে নিজের দু’হাত দিয়ে মাহিরার কোমর জড়িয়ে ওকে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো। মাহিরা তো অনেক খুশি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।
মাহিরাঃ ফাইনালি আধার তোমাকে নিজের জালে আমি আটকিয়ে নিলাম। আজকের পর থেকে তোমার মস্তিষ্ক তোমার হৃদয় আর তোমার মাঝে শুধু আমার বসবাস থাকবে। শবনম হোক আর তারা কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে আর দূরে সরাতে পারবে না। ( মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে)
আধার মাহিরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিজের ডান হাত উঠিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ওর কপাল থেকে নিচে স্লাইড করতে করতে ওর নাক তার পর ঠোঁটের নিচে নেমে যায়। আধারের ছোঁয়ার মাহিরা নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। আধারের হুডির কলার খামছে ধরে।
আধার আস্তে আস্তে মাহিরার কাছে গিয়ে ওর ঘারে নিজের নাক ঘষতে ঘষতে স্লো ভয়েজে বলতে শুরু করে,,,
আধারঃ সত্যি মাহিরা আমি যা চাইবো দিবে।
মাহিরাঃ হুম আধার একবার বলে দেখ ( কাঁপাকাপা কন্ঠে)।
আধার এবার একটা শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের হিংস্র ধারালো দাঁত বের করে মাহিরার ঘারে জোরে বাইট বসিয়ে দেয়। মাহিরা চিৎকার দিয়ে উঠে আধারের কাছ থেকে ছুটতে চাইলেও পারছে না কারন আধার ওকে জোরে জড়িয়ে ধরে আছে।
ব্যথায় মাহিরার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। আধার হিংস্র ভাবে নিজের দাঁত দিয়ে মাহিরার রক্ত শুষে নিচ্ছে। মাহিরা কমজোর হয়ে পরছে শরীরের শক্তি যেন উধাও হয়ে যাচ্ছে।
মাহিরার রক্ত শুষে আধার মাহিরাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। মাহিরা টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায়। ঘারে হাত দিয়ে দেখে রক্ত পরছে। মাহিরা অবাক প্লাস ভয়ার্ত চোখে আধারের দিকে তাকালো।
আধারের ঠোঁটের কোণে রক্ত লেগে আছে। আধার নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটের রক্ত টুকু মুছে ফেলে। আধার বাঁকা হেসে মাহিরার দিকে তাকালো। মাহিরার ভয়ার্ত দৃষ্টি দেখে অনেক বেশি খুশি লাগছে আধারের। আজ একটা উচিত শাস্তি দিতে পেরেছে ও এই ডাইনি টাকে।
আধার মাহিরার কাছে এগিয়ে আসতেই মাহিরা পিছিয়ে যায় ভয়ে। এটা দেখে আধার না হেসে পারলো না। আধার এক হাটু গেড়ে মাহিরার সামনে বসলো। মাহিরার সামনের চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলল,,,
আধারঃ কি ভেবেছিলে মাহিরা এসব করে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছে আসতে পারবে হাসালে আমাকে। আমার সবটা জুড়ে শুধু শবনম ছিলো আছে আর থাকবে। ভালোবাসা শরীর দিয়ে না মন দিয়ে হয়। আর আমি ওর মনকে ভালোবাসি তোমার মতো হাজারটা মাহিরা মিলেও আমাকে নিজের জালে ফাসাতে পারবে না। আ’ম দ্যা ভ্যাম্পায়ার কিং আধার রেজওয়ান এসবের দুর্বলতা আমার নেই। আর যেখানে শবনমের কথা ওর প্রতি আমার ভালোবাসা আমার দুর্বলতা নয় এটা আমার শক্তি। এই ভালোবাসার ডোর এতো কমজোর না যে মাহিরা আর কাইফ নামক সামান্য ঝরে ছিরে যাবে।
নেক্সট টাইম এরকম কিছু করার আগে আজকের এই শিক্ষাটা মনে করে নিবে। কথাটা বলেই আধার বেড়িয়ে যায়। মাহিরা নিজের ঘারে হাত চেপে আধারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে।
মাহিরাঃ আজকের এই অপমানের প্রতিশোধ আমি দিবোই আধার। এতদিন ভালোবেসে তোমাকে নিজের করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ থেকে ঘৃনা করে তোমাকে শেষ করতে চাই। আই হেইট ইউ আধার। অনেক বিশ্বাস করো নিজের ভালোবাসার উপর তাইনা জাস্ট ওয়েইট তোমার ভালবাসার হাতেই তোমার ধ্বংস করবো আমি ( চেঁচিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে)
এইদিকে,,,,
একা রাস্তায় হাটছে তারা। ঘুম আসছিল না তাই রাস্তায় হাটতে বেড়িয়ে পরেছে। কুয়াশায় চারোদিক ঢেকে আছে। চাদরটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে হাত দিয়ে হাত ঘষছে আর ফু দিচ্ছে।
শীতের রাতে রাস্তায় হাটার অনুভূতিটাই আলাদা আর সাথে যদি প্রিয় মানুষটি থাকে তাহলেতো সোনেপে সোহাগা টাইপ। এই মুহুর্তে আধারের কথা অনেক মনে পরছে তারার। যদি আধার ওর পাশে ওর হাত ধরে হাটতো তাহলে কেমন হতো??
কথা গুলো ভাবছে আর নিজে নিজেই ব্লাশিং হচ্ছে তারা।
>> স্টপ দের তারা ( ধমক দিয়ে)
হঠাৎ পেছনে কারো ধমক শুনে কদম থেমে গেল তারার।
তারাঃ ভ ভুত আমাকে দাড়াতে বলছে পেছন ফিরলেই ঘার মটকে দিবে আল্লাহ আমি এখন কি করবো ? ( ভয় পেয়ে মনে মনে)
পেছনের মানুষটি সামনে আসছে। তারা ভয়ে জমে যাচ্ছে। ভয়ে জোরে চিৎকার করে উঠে তারা।
তারাঃ বাঁচাওওও ভ ভূততততততত (চিৎকার করে)
আধার দৌড়ে এসে তারার মুখ চেপে ধরলো। তারা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে ভয়ে।
আধারঃ হুঁশ,,, ভূত না আমি ( দাতেদাত চেপে)
তারা চোখ খুলে দেখে আধার ওর দিকে রাগী ফেস নিয়ে তাকিয়ে আছে। আধারকে দেখে তারা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।
আধারঃ এতো রাতে একা বের হয়েছো কেন??
To be continued…