#THE_BOOK
#পর্ব_১২,১৩
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
১৩
লাবন্যর কান্না দেখে রা’দ আর অভিনবের খারাপ লাগছে। যদি আজকে লাবন্যর কিছু হয়ে যেতো তাহলে ওরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারতো না। এতক্ষণ শক্ত থাকলেও এখন লাবন্য পুরোপুরি ভেঙ্গে পরেছে। রা’দ লাবন্যকে সোজা করে দাড় করিয়ে ওর বাহু ধরে বলল,”কি হয়েছে?? এভাবে কাদছিস কেন??আর বাড়ি থেকে এতো দূরেই বা এলি কি করে?তোর এরকম অবস্থা হলোই বা কি করে??”
লাবন্যর হেঁচকি উঠে গেছে। ও পিছনে ফিরে আঙ্গুল দিয়ে কিছু একটা দেখিয়ে বলল,”ও ওই লোকটা,,,,ওই লোকটা,,,!!”
অভিনব লাবন্যকে অনুসরণ করে পিছনে তাকালো। রাস্তাটা পুরোই ফাঁকা চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। অভিনব বলল, “কোথায় ওই লোকটা??”
লাবন্য ফোপাতে ফোপাতে বলল,”ওই আয়নায়,,,,!!”
আর বলতে পারলো না লাবন্য কান্নায় আবার ভেঙে পড়লো। রা’দ বুঝলো যে লাবন্য প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। দোকানে থাকা লোকগুলো কেমন দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।রা’দ অভিনবকে বলল,”চলো আমরা আগে বাড় ফিরে যাই। লাবন্যকে আগে ঠিক করতে হবে তারপর সব জানা যাবে।”
অভিনব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,”হ্যা চল।”
লাবন্যকে নিয়ে ওরা বাড়িতে যায়। অভিনব পূর্ণাশাকে ফোন করে আগেই আসতে বলে দিয়েছে। পূর্ণাশা বাড়িওয়ালার থেকে চাবি নিয়ে আগেই লাবন্যর ফ্ল্যাটে এসে বসে রয়েছে। এতক্ষণ লাবন্যর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল পূর্ণাশার তবে একটু আগে অভিনব ফোন করে সবটা বলেছে বলে এখন চিন্তামুক্ত হয়েছে পূর্ণাশা।
লাবন্য সেই কখন থেকে পূর্ণাশাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। এখন কাঁদছে না তবে একটু পর পর ফুঁপিয়ে উঠছে। রা’দ আর অভিনব গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে। চিন্তা সবার মাথায় ঘুরঘুর করছে। পূর্ণাশা লাবন্যকে সোজা করিয়ে বসিয়ে বলল,”এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবি??যা ফ্রেশ হয়ে নে। কিছু খেয়ে রেস্ট নিবি তারপর।”
লাবন্য পূর্ণাশার হাত ধরে মিনতি করে বলল,”তোরা আমাকে ছেড়ে চলে যাস না।ওই লোকটা আবার চলে আসবে। খুব ভয়ংকর দেখতে লোকটা। আমাকে মেরে ফেলবে ও।আমি এভাবে মরতে চাই না পূর্ণাশা। আমি বাঁচতে চাই।”
পূর্ণাশা শান্তনা দিয়ে বলল,”আমরা সবাই আছি তোর সাথে। আগে ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর সব শুনব।”
পূর্ণাশা জোর করে লাবন্যকে বাথরুমে পাঠায়। তারপর খাটের উপর বসে বলল,”এখন কি হবে?? আমরা ও অশিরীরীর হাত থেকে লাবন্যকে কিভাবে বাচাবো??এটা খুবই কঠিন কাজ।”
অভিনব বলল,”কিছু একটা আমাদের ভাবতে হবে না হলে আমরা কেউই বাঁচবো না।”
তিনজন মিলে পরামর্শ করতে লাগলো কি করা যায়। হঠাৎ বাথরুম থেকে লাবন্যর চিৎকার ভেসে আসে। ওরা তিনজনই হকচকিয়ে যায়। দৌড়ে বাথরুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। অভিনব বলল,”লাবন্য কি হয়েছে দরজা খোল।”
পূর্ণাশা আর রা’দ ও ডাকতেছে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে যায় ওরা দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে।লাবন্য পূর্ণাশাকে জাপটে ধরে কাঁপতে লাগলো। পূর্ণাশা বলল,”কি হয়েছে লাবন্য??”
লাবন্য পূর্ণাশার বুকে মুখ লুকিয়ে আয়নার দিকে আঙুল দিয়ে বলল,”আবার ওই লোকটা ওই আয়নায়।”
সবাই আয়নার দিকে তাকালো কিন্তু কাউকে দেখলো না। লাবন্যকে নিয়ে রুমে এসে খাটের উপর বসিয়ে দিলো পূর্ণাশা তারপর বলল, “এবার পুরো ঘটনাটা খুলে বল আমাদের। শুরু থেকে সবটা বলবি।”
লাবন্য ধীরে ধীরে শুরু থেকে সব বলল ওদের। বাসে হওয়া ঘটনা আর ও যেভাবে পালিয়ে এসেছে সবটা। সব শুনে পূর্ণাশা বলল,”এবার ওই কুৎসিত লোকটাকে শেষ করতে হবে আমাদের না হলে কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।”
অভিনব বলল,”কিন্তু আমরা তো ওকে দেখিনি চিনব কিভাবে???”
রা’দ ও বলল,”সবার আগে লাবন্যকে সেফ রাখতে হবে তারপর পরবর্তী প্ল্যান করতে হবে।”
লাবন্য কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,”আমাকে এখানে ফেলে তোরা কেউ যাস না। আমার খুব ভয় করছে।”
রা’দ বলল,”তুই ভয় পাস না আমরা সবাই একসাথে লড়াই করব। তোর কিছু হবে না।”
লাবন্য আবার কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে খাটের উপর ধপ করে বসে পড়লো।
হঠাৎ লাবন্যর চোখ গেল ড্রেসিং টেবিলের দিকে। খাট থেকে ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা পুরোপুরি দেখা যায়। মুহূর্তেই আয়নায় সেই কুৎসিত অবয়ব দেখতে পেল।চোখ বড়বড় করেই আয়নার দিকে তাকালো লাবন্য। তারপর ফিসফিস করে বলল,”রা’দ,,,।”
রা’দ অভিনব পূর্ণাশ তিনজনেই লাবন্যর দিকে তাকালো। কিন্তু লাবন্যকে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে ওর সেদিকে তাকালো। কুৎসিত অবয়ব টি ধীরে ধীরে আয়নায় ভেসে উঠছে তবে পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না। আবছা অন্ধকারে অবয়বটি ঢেকে আছে যেরকমটা একটু আগে লাবন্য বাথরুমের আয়নায় দেখেছিলো। পূর্ণাশা ভয়ে অভিনবের বাহু খামচে ধরে। অভিনব আর রা’দের দৃষ্টি আয়নার উপর। লাবন্য খাট থেকে নেমে রা’দের পেছনে গিয়ে থামলো। লাবন্য বলল,”এই সেই কুৎসিত লোকটা। আরো ভয়ংকর দেখতে এই লোকটা।”
রা’দ এক পলক লাবন্যর দিকে তাকিয়ে আবার আয়নার দিকে তাকালো। রা’দ বলল, “তুমি কেন লাবন্যর পিছনে পড়েছো??দেখো এতে তোমার চেহারা সুন্দর হবে না। তোমার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। তুমি লাবন্যর পিছু ছেড়ে দাও।”
রা’দের কথাগুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আয়নাটা থরথর করে কাঁপতে লাগলো।ভেতরে থাকা অবয়বটি জানান দিলো যে সে খুব রেগে গেছে কিন্তু সে কোন কথা বলল না।
এবার অভিনব বলল,”তোমার শক্তি সম্পর্কে আমরা সবটাই জানি। যদি তুমি আমাদের কথা শুনতে না চাও তাহলে তোমার সাথে লড়াই করতে আমরা বাধ্য হবো।”
এবার আয়না আরো কাঁপছে। এটা দেখে লাবন্য বলল,”কেন এরকম করছো?? আমার পিছু ছেড়ে দাও??”
অবয়বটি এবার হুংকার দিয়ে বলল,”আমি আমার উদ্দেশ্য হাসিল করতে সবকিছু করতে পারি। তোকে আমি ছাড়বো না। তুই আমাকে অভিশপ্ত বই থেকে বের করে ভুল করেছিস। আমি তো আমার কাজ করবই। কেউ আমার কাজে বাধা দিতে এলে তাকে আমি শেষ করে দেব।”
অবয়বটির বিশ্রি কন্ঠ শুনে পূর্ণাশাও কেঁপে উঠলো। অভিনব রাগি কন্ঠে বলল,”তোমার সে আশা কখনোই পূর্ণ হবে না। তুমি লাবন্যর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আজ থেকে আমাদের সাথে তোমার লড়াই শুরু।”
ওদের কারো কথার জবাব দিলো না সে।লাবন্যকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আমি আমার চেহারা সুন্দর করবোই। সে আসবে,তোর গর্ভে ধারণ করে সে আসবে। তুই তাকে আটকাতে পারবি না পারবি না।”
লাবন্য আর সহ্য করতে পারলো না পাশে থাকা ফুলদানি টা ছুড়ে মারে ড্রেসিং টেবিলের দিকে। মূহুর্তেই আয়না ভেঙে খানখান হয়ে যায়। লাবন্য চিৎকার করে বলল,”আমি তা হতে দেবো না। তোমাকে আমার কোনো ক্ষতি করতে দেব না শুনলে তুমি??”
অবয়বটি ততক্ষনে চলে গেছে। লাবন্য আবার
খাটের উপর বসে কেঁদে দিলো। পূর্ণাশা এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো। রা’দকে বলল, “কি করবি রা’দ??”
“জানি না।”
“কিন্তু আমার একটা খটকা লাগছে। বইতে তো লেখা ছিলো লোকটা আয়নাতে যাতায়াত করে তাহলে বাইরে এলো কিভাবে??”
অভিনব কিছুটা বিরক্তিকর সুরে বলল,”ও আয়নায় যাতায়াত করতে পছন্দ করে এটা লেখা ছিলো বোকা। আর এসব বাদ দিয়ে ভাব এখন কি করলে লাবন্যকে বাঁচানো যাবে??”
পূর্ণাশা নখ কামড়াতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো। রা’দ আর অভিনব ও ভাবছে। কিছুক্ষণ ভাবার পর পূর্ণাশা একটু জোরেই বলল,”উপায় পেয়ে গেছি।”
অভিনব আর রা’দ চকিত হয়ে পূর্ণাশার দিকে তাকালো। লাবন্য ও অবাক দৃষ্টিতে পূর্ণাশার দিকে তাকালো। অভিনব বলল,”কি পেয়েছিস??”
পূর্ণাশা লাবন্যর পাশে বসে বলল,”লাবন্য তুই প্রিতমকে বিয়ে করে ফেল খুব তাড়াতাড়ি।কাল পরশুর মধ্যে করলে ভালো হয়।”
লাবন্য কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,”কি বলছিস এসব??আর এতেই বা কি হবে??”
“দেখ দ্যা বুক এর লেখা কাহিনী উল্টাতে পারলে তু বেঁচে যাবি। তাই তুই যদি প্রিতমকে বিয়ে করে কন্সিভ করিস তাহলে ওই কুৎসিত অশরীরীর বাচ্চা এই পৃথিবীতে আসার কোন চান্স থাকবে না। আর আমরা ওই অশরীরীকে খুব সহজেই ঘায়েল করতে পারবো।”
অভিনব আর রা’দ এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। লাবন্য কোন কথা বলছে না।
পূর্ণাশা আবার বলল,”কেমন লাগলো প্ল্যানটা??”
অভিনব বলল,”তোর মাথায় এত বুদ্ধি কোথা থেকে এলো??”
রা’দ বিষ্ময় চোখে পূর্ণাশার দিকে তাকিয়ে রইল। পূর্ণাশা বিরক্ত হয়ে বলল,”যদি ওই বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসে তাহলে ও লোকটার বাচ্চাটার শক্তিকে কাজে লাগাবে। কিন্তু নিজের চেহারার পরিবর্তন করতে পারবে না।যার ফলে লোকটা আরো হিংস্র হয়ে যাবে এবং লাবন্যকে আক্রমণ করবে। এমনটাই দ্যা বুক এ ছিলো। কিন্তু যদি ওই বাচ্চাটা না আসে
তাহলে ওই খারাপ লোকটা কোন শক্তি কাজে লাগাতে পারবে না যার ফলে আমরা খুব সহজেই লোকটাকে ঘায়েল করতে পারব। আর পর্যাপ্ত সময় ও পাবো। কারণ এখন আমাদের উপর সবসময় একটা ভয়ই কাজ করবে তা হলো লাবন্যকে যদি লোকটা কিছু করে ফেলে?? কিন্তু প্রিতমের সাথে বিয়ে হলে সেই ভয়টা থাকবে না। আর কন্সিভ করলে তো কোন ভয়ই থাকলো না।”
পূর্ণাশার কথাগুলো সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনলো। লাবন্য বলল,”কিন্তু আমি প্রিতমকে কি বলে রাজি করাবো??ও তো মানতেই চাইবে না। আমার আর প্রিতমের বিয়েটা তো পারিবারিক ভাবেই হবে। প্রিতম এখন তা মানতে চাইবে না।”
“তুই কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে নে। বলবি তোর বাবা মা এই বিয়েতে রাজি নেই। অন্য ছেলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছে। তোরা বিয়ে করে বাচ্চাসহ বাবা মায়ের কাছে গেলে তারা ঠিকই মেনে নেবে এমন কিছু বলে রাজি করিয়ে নে।”
রা’দ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”পূর্ণাশা একদম ঠিক বলেছে লাবন্য। এখন এটাই একমাত্র উপায়।”
অভিনব বলল,”আমরাও প্রিতমকে সব বলে বোঝাবো।”
লাবন্য আর অমত করলো না। পরেরদিন ওরা চারজন মিলে প্রিতমের সাথে দেখা করলো। নানা ভাবে প্রিতমকে বোঝাতে লাগলো।প্রিতম বেশ অবাক হয়েছে যে এর আগেও তো সব ঠিক ছিলো তাহলে এরমধ্যে লাবন্যর বাবা মায়ের কি হলো?? কিন্তু ওদের কথায় প্রিতম শেষে সবটা বিশ্বাস করেই নিলো। প্রিতম লাবন্যকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। নিজের ভালোবাসাকে অন্য কারো হতে দিতে চায়না বলেই এই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। ওরা ঠিক করলো পরদিন বিয়ে হবে। তবে ওরা পাঁচজন ব্যতিত কেউ এই বিয়ের কথা জানতে পারবে না।
সেদিন রাতে পূর্ণাশা লাবন্যর সাথে ছিলো। লাবন্যর ফ্ল্যাটের সব আয়না সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
পরেরদিন সন্ধ্যায় একটা মন্দিরে গিয়ে প্রিতম আর লাবন্যর বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারপর রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে কাগজে কলমে ওদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
লাবন্য আর প্রিতমকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে ওরা তিনজন বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু সমস্যা হলো ওরা একটাও গাড়ি পাচ্ছে না। তিনজনই দাঁড়িয়ে আছে। অভিনব আর রা’দ বাইক আনে নি। গাড়ি না পাওয়ার প্রধান কারণ হলো বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে তার উপর ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর বাজ পড়ছে।
প্রায় এক ঘন্টা যাবত ওরা যাত্রী ছাউনী তে দাঁড়িয়ে আছে।
আরো কিছুক্ষণ পর একটা সিএনজি পেলো তাতে করেই তিনজন রওনা হলো। ভাড়া দ্বিগুন দিতে হবে এই বৃষ্টিতে কোন সিএনজি চালক যেতে চাচ্ছে না দেখে এই ব্যবস্থা। কিছু দূর যেতেই চালক সিএনজি থামিয়ে দিলো। রা’দ বলল,”কি হয়েছে মামা??”
“সামনে তো মানুষের ভিড় কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে পুলিশ এরা।”
বাইরে এখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে তাই ওরা তিনজন নেমে সেদিকে এগিয়ে গেলো। বেশকয়েকজন পুলিশ রেইনকোট পড়ে এদিক ওদিক ঘুরছে।কেউ কেউ ফোনে কথা বলতেছে। রা’দ এগিয়ে গিয়ে একজন পুলিশকে বলল,”এখানে কি হয়েছে??”
“মার্ডার হয়েছে একটা লোক। খারাপ ভাবে খুন করা হয়েছে তাকে।”
তখনই স্ট্রেচারে লাশ তোলা হলো। অভিনব আর পূর্ণাশা একসাথে বলে উঠল,”রা’দ।”
রা’দ দৌড়ে সেদিকে গিয়ে দাঁড়ালো।স্ট্রেচারে থাকা লাশটা দেখে মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়ে আসলো,”প্রিতম!!”
খারাপ ভাবে খুন করা হলেও প্রিতমকে চিনতে ওদের ভুল হলো না। কিন্তু প্রশ্ন হলো প্রিতম মারা গেল কিভাবে?? সন্ধ্যায়ই তো প্রিতম আর লাবন্যর বিয়ে হলো তাহলে??আর এই যদি প্রিতম হয় তাহলে লাবন্যর সাথে যে ওর বাসায় আছে সেই বা কে?? প্রশ্নের জটলা বেঁধে গেছে সবার মাথায়।
চলবে,,,,,,,,
#THE_BOOK
#পর্ব_১৩
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
বৃষ্টিটা আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে। তবুও রা’দ পূর্ণাশা আর অভিনব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতেছে আর প্রিতমের রক্তাক্ত লাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে এটাই প্রিতম। পূর্ণাশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,”এটা প্রিতম!! কিন্তু একটু আগেই তো লাবন্যর সাথে প্রিতমের বিয়ে হলো।”
অভিনব বলল,”এটা যদি প্রিতম হয় তাহলে লাবন্যর সাথে যে আছে সে কে??”
রা’দ ফোন বের করে লাবন্যকে কল করলো। কিন্তু লাবন্যর ফোন বন্ধ। রা’দ বলল,”কোথাও একটা গন্ডগোল আছে আমাদের এখনি লাবন্যর কাছে যেতে হবে।”
তিনজনেই পিছনে ঘুরে দৌড় দিলো। সিএনজি চালকে গাড়ি ঘোরাতে বলল। কিন্তু বৃষ্টি টা আরো বেড়ে গেছে। যার কারণে রাস্তায় পানি জমে গেছে। সিএনজি আস্তে আস্তে চলতেছে। ওরা তিনজনই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে। রা’দ বারবার লাবন্যকে কল করেই যাচ্ছে। ঘন্টাখানেক লেগে গেল লাবন্যর ফ্ল্যাটে পৌঁছাতে। রাত আড়াইটা বেজে গেছে। রা’দ কলিং বেল বাজাতে লাগলো বারবার কিন্তু লাবন্য বা প্রিতম কেউ বের হচ্ছে না। তবুও রা’দ থামছে না। কলিং বেলের শব্দে আশেপাশের মানুষ ও জেগে ওঠে। বাড়িওয়ালা এসে ওদের কতগুলো কথাও শুনিয়ে দিলো। কিন্তু ওরা তাতে পাত্তা দিলো না উল্টে তার থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুললো।
তিনজনেই দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো। অভিনব তাড়াতাড়ি লাইট অন করতেই দেখলো লাবন্য অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে।পূর্ণাশা দৌড়ে লাবন্যর কাছে গিয়ে বসে। রা’দ আর অভিনব পুরো ঘরে প্রিতমকে খুঁজলো কিন্তু পেলো না। পূর্ণাশা বলল,”লাবন্যর শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ডক্টর ডাকতে হবে।”
অভিনব চিন্তিত হয়ে বলল,”এই বৃষ্টির রাতে ডক্টর পাওয়া যাবে না আমাদের কিছু করতে হবে।”
রা’দ বলল,”লাবন্যর হাত পা ঘষতে হবে।”
লাবন্যর হাত পা ঘষতে লাগলো পূর্ণাশা।অভিনব ও রা’দ পা ঘষতে লাগলো। বারবার লাবন্যর মুখে পানি দিলো কিন্তু লাবন্যর জ্ঞান ফিরলো না। কিন্তু টেম্পারেচার নরমাল হলো।
ওরা লাবন্যর পাশেই বসে রইল। অভিনব বলল,”আ’ম সিওর যে ওই অশরীরীটাই প্রিতমকে মেরে ফেলেছে আর প্রিতমের বেশ ধারণ করে এসব কিছু করেছে।”
রা’দ অভিনবের দিকে তাকিয়ে বলল,”হতে পারে তাই কিছু লাবন্যর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”
“কিন্তু লাবন্য যখন প্রিতমের মৃত্যুর খবর জানতে পারবে তখন কি হবে??”
পূর্ণাশার কথ শুনে ওরা দুজনেই চকিতে তাকালো। পূর্ণাশা আবার বলল,”লাবন্যকে কি জবাব দেব আমরা??”
“জানিনা কি করব আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। এর থেকে মরে যাওয়াটাই ভালো।”
এটুকু বলেই রা’দ চুপ করে গেলো। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে এলো। পূর্ণাশা একটুও ঘুমায়নি রা’দ অভিনব সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। পূর্ণাশা আবার লাবন্যর চোখে পানির ছিটা দিতেই লাবন্য পিটপিট করে চোখ খুললো। পূর্ণাশা চেঁচিয়ে বলল,”অভিনব রা’দ লাবন্য চোখ খুলেছে।”
অভিনব রা’দ ধড়ফড়িয়ে উঠলো দ্রুত লাবন্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। লাবন্য চোখ খুলে পূর্ণাশাকে দেখে অবাক হলো তারপর রা’দ আর অভিনভকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লাবন্য উঠে বসে বলল,”তোরা কখন এলি??এতো সকালে তোরা এসেছিস!! দরজা কে খুললো প্রিতম??”
প্রিতমের কথা শুনে সবার মুখ কালো হয়ে গেলো। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। লাবন্য আবার বলল,”কি হলো বল তোরা?? আর প্রিতম কোথায়??”
পূর্ণাশা বলল,”কাল রাতে কি কি হয়েছে লাবন্য??”
লাবন্য অবাক হয়ে পূর্ণাশার দিকে তাকালো।অভিনব আর রা’দের দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,”এটা জানার জন্য তোরা এতো সকাল সকাল চলে এসেছিস??এক রাতে কি কন্সিভ হয়??পাগলের দল আশ্চর্য!!”
রা’দ বলল,”আমরা এসব জানার জন্য আসিনি। প্রিতম কি কাল তোর সাথেই ছিলো??”
লাবন্য নির্লিপ্ত ভাবে বলল,”হ্যা আমার সাথেই তো ছিল কিন্তু এখন কোথায়??”
“তাহলে তুই অচেতন হয়ে পড়েছিলি কেন??”
অভিনবের এই প্রশ্ন শুনে লাবন্য বলল, “অচেতন অবস্থায় আমি??আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।”
লাবন্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পূর্ণাশা বলল, “তোর কিছু মনে নেই??”
“তোরা কি বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না। সবাই একটু খুলে বল।”
অভিনব মাথা নিচু করে বলল,”কাল তোর সাথে যে ছিল সেটা প্রিতম না।”
লাবন্য বিষ্মিত চোখে অভিনবের দিকে তাকায়। রা’দ বলল,”জানি না তুই বিষয়টা কিভাবে নিবি?? কাল তোর সাথে প্রিতম ছিলো না। আর প্রিতম কালকে,,,,,”
এটুকু বলেই রা’দ থেমে গেল। কিভাবে বলবে লাবন্যকে যে তোর ভালোবাসার মানুষ আর বেঁচে নেই। রা’দের মুখে এটুকু শুনেই লাবন্যর চোখে পানি চিকচিক করছে। লাবন্য মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,”প্রিতম কালকে কি??”
“কালকে পুলিশ প্রিতমের লাশ পেয়েছে। কারা যেন প্রিতমকে খুন করেছে।”
রা’দ সবটা খুলে বলল লাবন্যকে। সব শুনে লাবন্য ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। লাবন্যর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়তেছে।
“ত তোরা মিথ্যা বলছিস। প্রিতমের কিছু হয়নি। প্রিতম তো কাল আমার সাথে ছিলো তোরা ভুল দেখেছিস। প্রিতমের কিছু হয়নি তোরা মিথ্যা বলছিস। প্রিতম কোথায়??প্রিতম,,,”
লাবন্য প্রিতমকে সারা ঘরে খুঁজছে আর ডাকতেছে। রা’দ লাবন্যকে টেনে ধরে বলল, “আমি সব সত্যি বলছি লাবন্য। প্রিতম সত্যি আর নেই ।”
লাবন্য রা’দেকে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলল, “তুই মিথ্যে বলছিস প্রিতম আছে।”
বলতে বলতেই লাবন্যর ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই থমকে যায় অপর পাশে থাকা ব্যক্তিটির কথা শুনে। লাবন্যর বাবা ফোন করেছে প্রিতমের মৃত্যুর খবর দেওয়ার জন্য।লাবন্য কোন কথা না বলেই ফোনটা কেটে দিলো। চিৎকার দিয়ে লাবন্য ফ্লোরে বসে পড়লো পূর্ণাশা তাড়াতাড়ি লাবন্যকে আগলে ধরলো। লাবন্য চিৎকার করে বলতেছে,”আমি এসব বিশ্বাস করি না। প্রিতমের কিছু হয়নি। কালকে প্রিতম আমার সাথেই ছিলো। প্রিতম তুমি কোথায়??প্লিজ ফিরে এসো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লিজ প্রিতম,প্লিজ,,,”
লাবন্যর কান্না দেখে পূর্ণাশাও কেঁদে দিল। এ কোন ভাগ্যের পরিহাস?? ভালোবাসার মানুষকেই কেন হারাতে হয়। লাবন্য চেয়েছিল প্রিতমের হাত শক্ত করে ধরতে কিন্তু ধরার আগেই যে সে চলে যাবে এট ভাবেনি লাবন্য। চোখে তার বর্ষন নেমে এসেছে। চিৎকার করে শুধু প্রিতমকে ডাকছে। লাবন্যর বাবা রা’দকে ফোন করে আসতে বলল। কারণ শশ্মানে প্রিতমের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে আর সেখানে লাবন্যর থাকাটা জরুরি। রা’দ একথা লাবন্যকে বলতেই লাবন্য আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। লাবন্যকে কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না।
বিকেলে লাবন্যকে নিয়ে ওরা শশ্মানে পৌঁছায়। সারাদিন লাবন্য কেঁদেছে অনেক কষ্টে পূর্ণাশা ওকে বুঝিয়েছে। লাবন্যর বাবা মা উপস্থিত হয়েছেন। প্রিতমের মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। বাড়ির অন্যান্য লোকেরা ওনার দেখাশোনা করতেছে। প্রিতমের ভাই বাবা আর কয়েকজন সদস্য এসেছে শেষকৃত্যে। নিজের ছেলের মৃতদেহ দেখতে তার ভালো লাগছে না। তিনিও কেঁদেছেন খুব। ভেবেছিলেন এই মাস পর ছেলের বিয়ে দেবেন।কত মজা হবে সবাই আনন্দ করবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়??ছেলে তার লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো।লাবন্য দূর থেকে প্রিতমের লাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে বিধায় আর কাঁদছে না লাবন্য। পাশেই পূর্ণাশা লাবন্যকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রা’দ অভিনব ও আছে।
সব নিয়ম মেনে প্রিতমের দেহকে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। দাউদাউ করে আগুন জ্বলতেছে আগুনের ধোঁয়া আকাশজুড়ে উড়ছে। লাবন্য ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। লাবন্য ধরা গলায় বলল, “আজ প্রিতমের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। আমি যদি প্রিতমকে বিয়ের কথা না বলতাম তাহলে প্রিতম আজকে বেঁচে থাকতো। আমার জন্য সব হয়েছে, আমার জন্য। আমি প্রিতমকে মেরে ফেলেছি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি প্রিতম বিশ্বাস করো। আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইনি।”
পূর্ণাশা লাবন্যর হাত ধরে বলল,”একটু শান্ত হ। নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা কর। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না।”
“আর কতো নিজেকে শক্ত করবো??আগুনে ঝলসে যাচ্ছি আমি। প্রিতমকে ছাড়া থাকবো কিভাবে আমি??”
শেষকৃত্য শেষ করে বাসায় আসলো লাবন্য সাথে বাকি সবাই চলে আসলো। লাবন্যর বাবা মাও এসেছে। লাবন্যর বাবা চাইছে ওনার মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যেতে। কিন্তু তাহলে তো হবে না। ওই অশরীরী যদি লাবন্যর উপর আক্রমণ করে তাহলে ওনারা বাঁচাতে পারবেন না। উল্টে ওনাদের মেরে ফেলতে পারে যেভাবে প্রিতমকে মেরেছে। রা’দ লাবন্যকে সবটা বলল যদিও লাবন্য এখন এসব নিয়ে ভাবছে না তবুও লাবন্য ওর বাবাকে বলল যে ও যাবে না। ওনারা অনেক জোড়াজুড়িও করলো। শেষে পূর্ণাশা আশ্বাস দিলো যে ও লাবন্যর সাথে থাকবে তাই ওনারা সন্ধ্যায় চলে গেলো।
রাতে লাবন্য পূর্ণাশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর প্রিতমের সম্পর্কে বলতেছে।প্রিতম কি পছন্দ করে??কোন সময়ে কি করে??কি করলে রেগে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। বারবার নিজেকে দোষারোপ করছে লাবন্য আর পূর্ণাশা শান্তনা দিচ্ছে। অভিনব রা’দ এখনও যায়নি যাবেও না। এই মুহূর্তে লাবন্যর পাশে বন্ধু হিসেবে ওদের থাকাটা দরকার।তাই কষ্ট হলেও দু’জনে থাকবে। লাবন্য কিছুতেই ঘুমাচ্ছে না কিছু খাচ্ছেও না। সবাই মিলে জোর করে লাবন্যকে কিছুটা খাইয়ে দিলো। সাথে স্লিপিং পিল খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
একটু পরেই লাবন্য ঘুমিয়ে গেলো। ওর পাশে পূর্ণাশাও শুয়ে পড়লো। রা’দ আর অভিনব সারারাত জেগে ওদের পাহারা দিলো।যদি আবার ওই কুৎসিত লোকটা এসে পড়ে??
ভোর ভোর রা’দের চোখটা লেগে এলো।অভিনব তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রা’দ ও ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে একটা শব্দে পূর্ণাশার ঘুম ভেঙ্গে গেল।পাশে তাকিয়ে দেখলো লাবন্য নেই। পূর্ণাশা চট করে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে লাবন্যকে খুঁজলো। বাথরুম থেকে আওয়াজ আসছে দেখে পূর্ণালা উঠে সেদিকেই গেলো।
মনে হচ্ছে লাবন্য বাথরুমে আছে। দরজাটা খোলাই ছিল তাই পূর্ণাশা দরজা দিয়ে উঁকি মারলো। সাথে সাথে অবাক হয়ে গেল পূর্ণাশা কারণ লাবন্য অনবরত বমি করে যাচ্ছে।তার মানে দ্যা বুক এর কথা সত্য হতে চললো?? তাহলে এর থেকে ওরা বাঁচবে কিভাবে????
চলবে,,,,,,,,