THE_BOOK #পর্ব_১৪,১৫

0
273

#THE_BOOK
#পর্ব_১৪,১৫
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
১৪

লাবন্যর বমি করা দেখে ঘাবড়ে গেল পূর্ণাশা।এতো বমি করছে কিভাবে??কাল থেকে তো তেমন কিছুই খায়নি। আর খালি পেটেও তো মানুষ এভাবে বমি করে না। পূর্ণাশা এরকম অদ্ভুত ঘটনাটা মেনে নিতে পারছে না। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে পূর্ণাশা। লাবন্য হাঁপিয়ে উঠেছে বমি করতে করতে। পূর্ণাশাকে দেখেই লাবন্য বলল,”তুই উঠেছিস?? সামনের ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে আয় তো। সকাল থেকে এতো বমি হচ্ছে যে কমছেই না।”

বলেই লাবন্য আবার বমি করতে লাগলো। পূর্ণাশা কিছু বলল না মাথা দুলিয়ে চলে গেল।ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে রা’দ আর অভিনব। ওদের ডিঙিয়ে বাইরে চলে গেল পূর্ণাশা। কেন জানি পূর্ণাশার সন্দেহ হচ্ছে তাই ফার্মেসী থেকে প্রেগনেন্সি কীট নিয়ে এলো।
অভিনব রা’দ ততক্ষনে ঘুম থেকে উঠে গেছে।লাবন্যর বমি করা দেখে ওরা দুজনেও ঘাবড়ে গেছে। পূর্ণাশা এসেই লাবন্যকে ওষুধ খাইয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর লাবন্যর বমি কমে গেল। তারপর ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিলো।

রা’দ এগিয়ে এসে বলল,”এখন কেমন লাগছে??”
লাবন্য নরম গলায় জবাব দিলো,”আগের থেকে বেটার।”
রা’দ ফের কিছু বলতে যাবে তার আগেই পূর্ণাশা বলল,”লাবন্য যদি কিছু মনে না করিস একটা কাজ করবি??”

“কি কাজ??”
পূর্ণাশা প্রেগন্যান্সি কীট ওর সামনে উঁচু করে ধরে বলল,”টেস্ট করে আয়।”
লাবন্য চট করে উঠে বসলো। এমনকি রা’দ ও অভিনব টাস্কি খেয়ে গেলো। লাবন্য বিষ্মিত হয়ে বলল,”এসব কি??”
অভিনব ও সায় দিয়ে বলল,”আর ইউ ম্যাড পূর্ণাশা??এর মধ্যে তুই এসব কি করছিস??”

পূর্ণাশা মাথা নিচু করে বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো তারপর বলল,”আমি যদি খুব ভুল না হই তাহলে লাবন্য প্রেগন্যান্ট।”

সবাই একসাথে বলে উঠল,”কি???”

রা’দ অবাক হয়ে বলল,”কিন্তু এটা তো ইম্পসিবল?? এভাবে কেউ কখনও প্রেগন্যান্ট হয়??

“জানি না, কিন্তু এই কথাটা যদি ভুল হয় তবে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবে না। লাবন্য প্লিজ কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি টেস্ট করে আয়। আমরা অপেক্ষা করছি।”

লাবন্য কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। একে তো প্রিতমের জন্য বুকটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে তার উপর আগের ঝামেলা। সবকিছু মিলিয়ে দোটানায় পড়ে গেছে লাবন্য। কোন কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। লাবন্য হতাশ হয়ে কীটটা হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। লাবন্য চলে যেতেই রা’দ বলল,”তোর কথার মানে আমি বুঝতে পারছি না পূর্ণা??”

পূর্ণাশা অনেকটা ধমকের সুরে বলল,”দ্যা বুক এর কথা ভুলে গেলি?? সবচেয়ে বড় কথা ওই অশরীরীটা কাল রাতে লাবন্যর সাথে ছিলো।জানি না যদি পজেটিভ হয় তাহলে কি হবে??আমরা কিভাবে লাবন্যকে বাচাবো??আর আমরাই বা কিভাবে বাঁচব??”

রা’দ চোখ বন্ধ করে খাটের উপর বসে পড়ল। সত্যি ওর জানা নেই যে ও এখন কি করবে??
তখনই লাবন্যর চিৎকার শুনে তিনজনেই দৌড়ে গেল সেদিকে। লাবন্য দরজা খুলেছে কিন্তু ও বাথরুমের ফ্লোরে বসে আছে। পূর্ণাশা আগে গিয়ে কীটটা চেক করলো। তারপর রা’দ আর অভিনবের দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি যা সন্দেহ করেছিলাম সেটাই হয়েছে,পজেটিভ।”

লাবন্য সাথে সাথে পূর্ণাশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো কাঁদতে কাঁদতে বললো,”আমি আর এসব নিতে পারছি না। আমি আর বাঁচতে চাই না আমি প্রিতমের কাছে যেতে চাই। লড়াই করার শক্তি আমার নেই। আমার সব শক্তি ফুরিয়ে গিয়েছে।”

পূর্ণাশা রা’দের সাহায্যে লাবন্যকে রুমে এনে বসিয়ে দিলো। লাবন্য এখনো কাদতেছে দেখে পূর্ণাশা বলল,”এভাবে কাঁদলে হবে না লাবন্য।তোকে শক্ত হতে হবে। তুই এখন মরতে চাইছিস কিন্তু মরলেই কি সব ঠিক হবে??তুই মরলে তো আমাদের কেও মরতে হবে। তবে তোর জন্য আমরা মরতেও রাজি। কিন্তু বড় কথা হলো এতসহজেই কেন মরবো আমরা??যে তোর থেকে তোর ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিলো তাকে শাস্তি না দিয়েই তুই মরতে চাস??”
রা’দ বললো”তুই যা চাইবি তাই হবে। তুই যদি মরতে চাস তবে আমরাও মরতে রাজি আর যদি লড়াই করতে চাস আমরা তাতেও রাজি।”

লাবন্য রা’দের দিকে তাকিয়ে বলল,”কিন্তু সব তো শেষ হয়ে গেছে। এই বাচ্চাটা,,,,”

অভিনব বলে উঠলো,”কিছু শেষ হয়নি লাবন্য। তুই এবরোশন করা তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আর ওই অশরীরীটাকে তো আমি দেখতাছি। একবার ওকে সামনে পাই তো শেষ করে দেব।”
রাগে গজগজ করতে করতে বলল। পূর্ণাশা রা’দ ও তাতে সায় দিলো।

??
বিকেলে ওরা এবরোশনের জন্য ডক্টরের কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। লাবন্য মনমরা হয়ে গাড়িতে বসে আছে। বুক ভেঙে বারবার কান্না আসছে। প্রিতমের চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না। ভালোবাসার মানুষটা যে এভাবে চলে যাবে এটা কখনো ভাবেনি লাবন্য। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হসপিটালে পৌঁছে গেল ওরা। অভিনবের পরিচিত একজন ডক্টরের কাছে এসেছে ওরা। অভিনব ডক্টরকে আগে থেকেই জানিয়েছে ওদের আসার কথা।
রিসেপশনে এসে কথা বলে ওরা ডক্টরের কেবিনের দিকে গেলো।

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। অভিনব দরজা নক করে বলল,”মে আই কাম ইন??”

কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ আসছে না দেখে অভিনব দরজা খুলে উঁকি দিলো।ভেতরে কেউই নেই। অভিনব একটু অবাক হয়েই পুরো দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। সাথে বাকি সবাই ভেতরে ঢুকলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো ডক্টর কোথাও নেই। রা’দ বলল,”কি রে তোর ডক্টর কোথায়??”

“জানি না কিন্তু রিসেপশন থেকে তো বলল ডক্টর ওনার কেবিনেই আছে।”

বলতে বলতে অভিনব বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল। দরজাটা ভেজানো দেখে ঠেলা দিলো। অভিনব মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল, “ডক্টর,,,,”
রা’দ পূর্ণাশা দ্রুত সেদিকে গেলো। দেখলো ডক্টর ফ্লোরে পড়ে আছে। বাথরুমে থাকা আয়নাটা ভাঙ্গা,কাচগুলো ডক্টরের শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেদ করে ঢুকে গেছে। বেঁচে আছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। ডক্টরের এরকম অবস্থা দেখে পূর্ণাশা ভয় পেয়ে লাবন্যর কাছে চলে আসে। ওরা দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে সব ডক্টরদের ডাকলো। নার্সরা ও এসে হাজির। সবাই অবাক হয়েছে যে হঠাৎ করে ডক্টরের কি হলো?? একজন পালস চেক করে দেখলো। তারপর বলল,”সি ইজ নো মোর।”
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলো। এটাকে খুন বলেই গন্য করা হলো। পুলিশকেও ইনফর্ম করা হলো। পুলিশ এসে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলো। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেও কোন হদিস পেলো না।

লাবন্য এতে আরো ভয় পেয়ে গেল। ওরা বেশ বুঝতে পারছে যে এটা কে করেছে। বাড়ি ফিরতেই লাবন্য আবার ভেঙে পড়লো। অভিনব বলল,”এই কাজটা ওই লোকটাই করেছে??”
পূর্ণাশা বলল,”তাহলে কি করবো??অন্য ডক্টরের কাছে যাব??”

“যদি ওই ডক্টরকেও মেরে ফেলে তাহলে?? আমাদের জন্য আর কতজনকে মরতে হবে?? প্রথমে প্রিতম আর এখন ডক্টর।”

নিচুস্বরেই বলল রা’দ। লাবন্য বলল,”তাহলে কি এই বাচ্চাটাকে সত্যি জন্ম দিতে হবে??”

পূর্ণাশা লাবন্যকে বলল,”রিল্যাক্স লাবন্য একটা না একটা উপায় আমরা পেয়ে যাবো।”

রাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। অভিনব রা’দ আজকেও রয়ে গেছে। মেঝেতে বিছানা বিছিয়ে ঘুমাচ্ছে দু’জনে। ঘুমের মধ্যে লাবন্য কারো হাতের ছোঁয়া অনুভব করলো। কেউ একজন ওর পেটে হাত বুলাচ্ছে। হাতটা খুবই ঠাণ্ডা যা লাবন্যর সহ্য হচ্ছে না। হাতটা সরাতেও পারছে না। হাত-পা ওর অবশ হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে ও কথা বের হচ্ছে না। এর সাথে সাথে ওর কানে ভেসে আসছে কারো গলার আওয়াজ। লাবন্য স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে যে কেউ ওকে আম্মু আম্মু বলে ডাকতেছে আর খিলখিল করে হাসতেছে। যা লাবন্যর কানে বাজতেছে। এতোই সুমধুর সেই কন্ঠ যা লাবন্যর বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পেটের উপর বিচরণ করা হাতটার কারণে বিরক্ত লাগছে খুব। হাতটা এতোই ভারি যে মনে হচ্ছে কোন বড়সড় পাথর লাবন্যর পেটের উপর রাখা হয়েছে। লাবন্য নড়তে পারছে না। ঘুমের ঘোরে পূর্ণাশা লাবন্যর উপর হাত রাখতেই যেন লাবন্যর শরীরে শক্তি ফিরে এলো। এক চিৎকারে উঠে বসে লাবন্য। সাথে সাথে ওর উপর থেকে ভারি হাতটাও সরে যায়। লাবন্যর চিৎকারে পূর্ণাশা লাফিয়ে উঠলো। অভিনব আর রা’দ ও উঠে পড়ে। অভিনব দ্রুত লাইট অন করে।

লাবন্য হাপাচ্ছে তরতর করে ঘামছে সে। কপাল বেয়ে ঘাম পড়তেছে পূর্ণাশা দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো। পূর্ণাশা বলল,”খারাপ কোন স্বপ্ন দেখেছিস??”

লাবন্য মাথা দুলিয়ে হ্যা বলে। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”তোদের আমি কি বলে ধন্যবাদ দেব তা আমি জানি না। তোরা আমার জন্য এতকিছু করছিস,,,”

লাবন্যর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রা’দ বলল, “এক থাপ্পর মারবো তোকে। আমরা একে অপরের বন্ধু না?? বন্ধু হয়ে বন্ধুর বিপদে তো আসবোই। আর বন্ধুত্বের মাঝে নো সরি নো থ্যাঙ্ক ইউ।”
লাবন্য মৃদু হাসলো। সেই সাথে যেন কেউ একজন শব্দ করে হাসলো। সবাই শুনতে পেলো সেই বিশ্রি হাসি, উৎসুক হয়ে আশেপাশে তাকালো কিন্তু হাসির উৎস খুঁজে পেলো না। হঠাৎ করেই সবার চোখ গেল জানালার থাই গ্লাসের দিকে। তাতে একটা ছায়া ভেসে উঠেছে। তার মানে সেই হাসছে। অভিনব আর রা’দ রেগে গেল। অভিনব বলল,”আজকে তো ওকে শেষ করতেই হবে।”

গ্লাসের ভেতর থাকা মানবিটি শব্দ করে হেসে বলল,”আমাকে মারা এতো সহজ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি আয়নার ভেতর আছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে কেউ মারতে পারবে না। আর আমাকে এখান থেকে বের করা অতো সহজ নয়। আরেকটা কথা শুনে রাখ এই বাচ্চাটা নষ্ট করার চেষ্টা করবি না। তাহলে কেউই বাঁচবে না। তোর আশিক আর ডক্টরের মতো সবাইকে মেরে ফেলব আমি। কথাটা মনে থাকে যেন। আজকের পর থেকে তোর জন্য সারপ্রাইজ আসতে থাকবে।”

লোকটা শব্দ করে হাসতে হাসতে বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেলো। লাবন্য কাঁদছে না নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষ হারিয়ে যে ক্ষতি হয়েছে আর এই লোকটা কি ক্ষতি করবে ওর??

পূর্ণাশা বলল,”আমার ওই লোকটাকে সহ্য হচ্ছে না ইচ্ছে করছে এখনই মেরে ফেলি।”

কথাটা বলার সাথে সাথেই পূর্ণাশা ঠাস করে মাটিতে পড়ে যায়। অভিনব ওকে টেনে তুলে বলল,”কি রে কারণ ছাড়াই পড়ে গেলি??”

“আমাকে বোধহয় কেউ ধাক্কা দিয়েছে।”

রা’দ কপাল কুঁচকে বলল,”কে ধাক্কা দিলো তোকে??আমরা তো কেউ দেইনি??”

“জানি না তবে আমি সিওর কেউ ধাক্কা দিয়েছে।”

এ নিয়ে কথা বলছে রা’দ আর পূর্ণাশা। হঠাৎ করে কারো হাসির শব্দে ওর থেমে যায়। লাবন্য বুঝলো যে এই সেই হাসি। হাসিটা এতোই সুন্দর শোনাচ্ছে যে লাবন্য মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। পূর্ণাশা বলল,”এই হাসি আসছে কোথা থেকে??আর এটা তো ওই লোকটার বিশ্রি হাসি নয়। কোন বাচ্চার হাসি মনে হচ্ছে।”

“তাই হবে চল খুঁজে দেখি।”
অভিনব চারিদিকে খুঁজতে লাগলো। রা’দ ও এদিক ওদিক দেখতে লাগল। কিন্তু পূর্ণাশা খেয়াল করলো যে ও যতই লাবন্যর দিকে এগোচ্ছে ততোই হাসিটা গাঢ়ো হচ্ছে। ওদিকে লাবন্যর কোন হেলদোল নেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে হাসির শব্দটা উপভোগ করছে। পূর্ণাশা আস্তে আস্তে লাবন্যর দিকে এগিয়ে আসলো। লাবন্যর কাছে আসতেই হাসিটা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। কি একটা মনে করে পূর্ণাশা লাবন্যর পেটে মাথা রেখে কান পাতলো। মূহুর্তেই ছিটকে সরে আসে পূর্ণাশা। খুব অবাক হয়ে যায় যে শব্দটা লাবন্যর পেটের ভেতর থেকে আসছে। তাহলে কি বাচ্চাটা,,,,, পূর্ণাশা অবাক হয়ে লাবন্যর দিকে তাকিয়ে রইল।

চলবে,,,,,,

#THE_BOOK

#পর্ব_১৫

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

পূর্ণাশা ছিটকে এসে ফ্লোরে পড়েছে আর ওভাবেই বসে আছে। কোন কথাও বলছে না।লাবন্য সেই আগের মতোই বসে আছে। অভিনব এসে পূর্ণাশাকে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে বলল,”কি রে ফ্লোরে বসে কি করছিস??”
পূর্ণাশা লাবন্যর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “লাবন্য।”
“লাবন্য কি??”
পূর্ণাশা এবার অভিনবের দিকে চোখ তুলে তাকালো তারপর বলল,”ওই হাসিটা লাবন্যর পেটের ভেতর থেকে আসছে।”
রা’দ জানালা আটকিয়ে পর্দাগুলো টেনে দিয়ে এসে পূর্ণাশার কথা শুনে বলল,”কি??তুই বুঝলি কি করে??”

“একবার লাবন্যকে দেখ।”
অভিনব রা’দ চোখ তুলে লাবন্যর দিকে তাকালো। লাবন্যর মুখে সেই মৃদু হাসি এখনো বিদ্যমান। ওরা এতে কিছুটা অবাক হলো। কারণ প্রিতমের জন্য লাবন্য সবসময় মন খারাপ করে বসে থাকে আর এখন হাসছে?? অদ্ভুত, তখনই লাবন্য পেটে হাত চেপে আর্তনাদ করে উঠলো। খাটের উপর গড়াগড়ি খেতে লাগলো। পূর্ণাশা দ্রুত লাবন্যর কাছে বসে জিজ্ঞেস করল,”লাবন্য তোর কোথায় কষ্ট হচ্ছে??”

লাবন্য ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করে বলল, “আমার পেটে ভিশন ব্যথা করছে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
পূর্ণাশা লাবন্যকে ধরতেই মনে হলো বিদ্যুতিক শক খোলো। সে ছিটকে দূরে গিয়ে টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়লো। পূর্ণাশার কনুই ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।রা’দ দৌড়ে গিয়ে পূর্ণাশাকে টেনে তুলে বলে, “পড়লি কিভাবে??”
পূর্ণাশা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,”মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।”
রা’দ কিছু বলবে তার আগেই লাবন্যর চিৎকার ভেসে আসলো। অভিনব আর রা’দ দু’জনেই সেদিকে গেল। ওরা লাবন্যকে ধরতেই দু’জনে ছিটকে সরে গেল। রা’দ সজোরে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খায়। ভাগ্যিস আয়না ছিলো না ওরা আগেই আয়না খুলে রেখেছিলো। কিন্তু এতেই রা’দ হাতে চোট পায়। অভিনব গিয়ে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। পূর্ণাশা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। ও একহাতে কুনুই চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লাবন্য এখনো আর্তনাদ করছে আর গড়াগড়ি করতেছে। অভিনবের কপাল হাল্কা কেটে গেছে। কপাল বেয়ে রক্ত পড়তে লাগলো।
তিনজনে একসাথে হয়ে দাঁড়ায়। রা’দ বলল,”হঠাৎ করে হলো কি??”
পূর্ণাশা বলে,”এই সারপ্রাইজ এর কথাই বোধহয় বলেছিল ওই লোকটা। আমরা বোধহয় লাবন্যকে ছুঁতে পারবো না।”

অভিনব চিন্তিত হয়ে বলল,”তাহলে লাবন্যর কি হবে??এই মুহূর্তে ওর আমাদেরকে প্রয়োজন।”
ওরা তিনজন লাবন্যর কাছে যাওয়ার সাহস পেলো না। দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লাবন্যর আর্তনাদ শুনতে লাগলো। তিনজনেই কষ্ট পাচ্ছে খুব। লাবন্যর এই অবস্থা দেখতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর লাবন্য শান্ত হয়ে গেলো দেখে পূর্ণাশা আস্তে আস্তে লাবন্যর কাছে গিয়ে ওকে ধরতে গেলেই কেউ বলে উঠলো,”আমার মাম্মিকে ধরবে না।”
পূর্ণাশা সরে এসে রা’দের পাশে দাঁড়ালো।লাবন্য এটা দেখে ঘাবড়ে গেলো। মুখে হাত চেপে বসে রইল। বাকি সবাই অবাক কারণ এই বাচ্চা পেটের ভেতর থেকেই কথা বলতেছে। জন্ম নিলে না জানি কি করে বসবে??
বাচ্চা টা আবারো বলে উঠলো,”আমার বাবাকে যে কিছু করার চেষ্টা করবে তাকেও আমি ছাড়বো না। সবাইকে মেরে ফেলবো। মাম্মি তুমিও আমার শত্রু তুমি আমাকে মেরে ফেললো চেয়েছো। আমি তোমাকেও ছাড়বো না।”

লাবন্য কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,”আ আমি ত তোমাকে মারতে চেয়েছি??কে বললো তোমায়??”

“বাবা বলেছে, তুমি আর তোমার বন্ধুরা খুব খারাপ সবাই আমাকে মারতে চাইছো তাই আমি কাউকে ছাড়বো না। আর তোমরা আমার বাবাকে মারতে চাইছো আমি থাকতে তা হতে দেব না।”

লাবন্য মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। রা’দের দিকে তাকাতেই রা’দ ইশারায় লাবন্যকে শান্ত থাকতে বলল। রা’দ ইশারায় লাবন্যকে ঘুমাতে বলল কিন্তু এর মধ্যে কি লাবন্যর ঘুম আসবে। চোখ বন্ধ করে চোখের পানি ফেলতে লাগল।

পূর্ণাশা ফার্স্ট এইড বক্স এনে অভিনবকে ড্রেসিং করে দিলো আর নিজেও করলো। মেঝেতে বসে তিনজনে লাবন্যর দিকে তাকিয়ে আছে। লাবন্য ঘুমিয়ে পড়েছে তিনজনেই অসহায় চোখে লাবন্যকে দেখছে।
পূর্ণাশা বলল,”এবার কি হবে রা’দ??ওই বাচ্চাটা তো খুব ডেন্জেরাস। ওর থেকে,,,”

রা’দ মুখে আঙ্গুল দিয়ে পূর্ণাশাকে চুপ করিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,”চুপ থাক ভাবতে দে কি করবো এরপর।”

“তোরা ভাব তারপর আমাকে বলিস আমার মাথায় এখন কিছু আসতেছে না। আমি ঘুমাই।”

পূর্ণাশা মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়লো। অভিনব আর রা’দ সারারাত জেগে রইলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে পূর্ণাশা দেখলো দরজা খোলা অভিনব রা’দ কেউ নেই। পূর্ণাশা চোখ ডলতে ডলতে খাটের দিকে তাকালো। লাবন্য এখনও ঘুমাচ্ছে। পূর্ণাশা উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট বানালো। কিন্তু এখনো রা’দ আর অভিনব ফেরেনি। না জানি কোন পরিকল্পনা করছে কোথায় বসে?? বসে বসে এসব ভাবতেছে পূর্ণাশা তখনই রা’দ আর অভিনব আসলো। পূর্ণাশা দাঁড়িয়ে বলল,”এতক্ষণ তোরা কোথায় ছিলি??”
রা’দ একপল লাবন্যর দিকে তাকালো এখনও ঘুমাচ্ছে সে তারপর বলল,”বাইরে আয় কথা আছে।”

বলেই রা’দ বেড়িয়ে গেল পূর্ণাশা অবাক হয়ে বলল,”বাইরে কেন যাব??”
বলতে বলতেই অভিনব পূর্ণাশার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। অভিনব হাত ছাড়তেই পূর্ণাশা এক কিল বসিয়ে দিলো অভিনবের পিঠে তারপর বলল,”শয়তান ছেলে আমার হাতে ব্যথা জানিস না??উফফ কি ব্যথা পেলাম!!”
পূর্ণাশা ব্যাথার স্থানে হাত বুলাতে লাগল।অভিনব কটমট করে তাকিয়ে বলল,” আমাকে মারার সময় হাত ব্যথা করে না তাইনা??আর আমি হাত ধরেছি অমনি ব্যথা!”

রা’দ ঝাড়ি মেরে বলল,”তোরা থাম আগে আমার প্ল্যানটা বলতে দে।”
পূর্ণাশা একটু থেমে বলল,”বল কি প্ল্যান করলি??”
রা’দ বলতে শুরু করলো,”ওই অশরীরীটা নিজের কুৎসিত রূপ বদলাতে এই বাচ্চাকে চায় কিন্তু যদি এই বাচ্চাটা ওর বিরুদ্ধে যায় তাহলে কাহিনী বদলে যাবে।”

পূর্ণাশা মুখে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলল,”কিন্তু কিভাবে ওই বাচ্চাকে বিরুদ্ধে আনবো।”
এবার অভিনব বলল,”কাল রাতে ওই অশরীরীটা ওই বাচ্চাটার মাথায় এসব ঢুকিয়ে দিয়েছে। যে আমরা খারাপ ওর মা খারাপ। বাচ্চাদের যা বোঝানো হয় তারা তাই বোঝে। ওই বাচ্চাটার শক্তি থাকলেও বুদ্ধি তো বাচ্চাদের মতোই হবে। আমাদের হাতে এখনও দশমাস সময় আছে। ততদিনে যদি আমরা ওই বাচ্চাটার চিন্তাভাবনা চেঞ্জ করতে পারি তাহলেই কেল্লাফতে। মানে যদি বাচ্চাটা একবার যদি বিশ্বাস করে নেয় যে তার বাবা খারাপ তাহলে বাবা সন্তানের যুদ্ধ লেগে যাবে। তাহলেই ওই অশরীরীকে আমরা কুপোকাত করতে পারবো।”

“কিন্তু কাল রাতে তো অলরেডি বাচ্চাটার মুড চেঞ্জ হয়ে গেছে। ওর বাবা সম্পর্কে কি আমাদের কথা বিশ্বাস করবে?? সবচেয়ে বড় কথা হলো এখন থেকে রোজ ওই লোকটা এসে বাচ্চাটাকে কুমন্ত্রনা দেবে। সেখানে আমরা কিভাবে পারবো??আর লাবন্যকে কিভাবে বোঝাবো??আর এখন তো লাবন্যকে সব বলা মানে বাচ্চাটাকেও বলা। আমার তো এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।”

রা’দ পূর্ণাশার দিকে তাকিয়ে বলল,”সেই সব প্ল্যান আমরা করে ফেলেছি। তুই একটু পর লাবন্যকে নিয়ে হাঁটতে বের হবি বাকিটা আমি আর অভিনব মিলে করে নেব।”

“কি করবি তোরা?? আমাকে একটু বলবি তো??” সন্দিহান চোখে বলল পূর্ণাশা। রা’দ আর কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে গেল। পূর্ণাশা অভিনবের দিকে তাকালো। অভিনব বুঝতে পারলো যে পূর্ণাশা ওর কাছ থেকে উওর চায়।অভিনব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,”খিদে পেয়েছে কি বানিয়েছিস চল এখন খাবো।”

অভিনব ভেতরে ঢুকে গেল। হতাশ হয়ে পূর্ণাশা ও গেলো। লাবন্য সবে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েছে পূর্ণাশার ডাকে খেতে বসে। কেউ কোন কথা বলছে না। তখন রা’দ বলল,”লাবন্য আমি আর অভিনব চলে যাব বুঝেছিস কিন্তু পূর্ণাশা তোর সাথে থাকবে।”

“কি আমি একা আবার যদি ওই অশরী,,,,”
আর কিছু বলার আগেই রা’দ চোখের ইশারায় পূর্ণাশাকে থামিয়ে দিলো। পূর্ণাশা তো ভয়ে চুপসে গেছে। একে তো ওই অদ্ভুত বাচ্চা আর দ্বিতীয়ত অশরীরীটা কিভাবে থাকবে ও??রা’দের কথা শুনে লাবন্য গোমড়া মুখে বলল,”তোরা চলে গেলে কি করে হবে??”

অভিনব বলল,”দেখ এমনিতেও এই ফ্ল্যাটে আমাদের থাকাটা ঠিক হবে না। চারজন অবিবাহিত ছেলেমেয়ে একসাথে থাকছে এটা তো আশেপাশের লোকজন মেনে নেবে না তাই আমাদের যেতে হবে।”

লাবন্য আর কথা বলল না। ও নিজেও ভয় পেয়ে আছে। অভিনব পূর্ণাশাকে ইশারা করতেই পূর্ণাশা বলল,”লাবন্য খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আমরা একটু আশেপাশে ঘুরে আসি তোর মনটাও ভালো হয়ে যাবে।”

লাবন্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”আমার মন আর কখনোই ভালো হবে না।”

“তবুও একটু হাঁটাহাঁটি করি না করিস না।”

লাবন্য পূর্ণাশা বেড়িয়ে যেতেই রা’দ আর অভিনব ওদের মিশনে বেরিয়ে পড়ে। আজকে ওরা কিছু একটা করেই ছাড়বে। বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টা করবেই। লাবন্যকে নিয়ে পূর্ণাশা এদিক ওদিক ঘুরছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে যে ওই বাচ্চাটাও এখন কথা বলতেছে। যার কারণে পূর্ণাশা ভয় পাচ্ছে এবং লাবন্য ও ভয় পাচ্ছে। এরকম ওরা কখনোই দেখেনি যে পেটের ভেতর থেকে বাচ্চা কথা বলে। তাছাড়া কোন বাচ্চা তো জন্মের পরও কথা বলতে পারে না। আর একে দেখ পেটের ভেতর থেকেই বকবক করছে। তবে এই কথা শুধু লাবন্য আর পূর্ণাশাই শুনতে পারছে আশেপাশের কেউই শুনছে না।

রা’দ বেরিয়ে এসেই পূর্ণাশাকে ফোন করে বলল ওরা যেন দেরিতে বাসায় ফেরে। তাই পূর্ণাশা অনেক ঘুরে তারপর বাসায় আসে। বাসায় আসতেই ওরা রা’দ আর অভিনবকে দেখতে পেল। লাবন্য ফ্রেশ হতে চলে যায়। পূর্ণাশা তাড়াতাড়ি বলল,”বল না তোরা কি প্ল্যান করেছিস??”

রা’দ ফিসফিস করে বলল,”এই ফ্ল্যাটে এখন ওই অশরীরী আসতে পারবে না। সেই ব্যবস্থা করে ফেলেছি তাই তোরা এখন থেকে এখানে নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস। আর হ্যা আর কখনও লাবন্যকে এই ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দিবি না মনে থাকে যেন।”

“কি এমন করেছিস তোরা??”

অভিনব বিরক্ত হয়ে বলল,”গাধী,আমি আর রা’দ একজন হুজুরের সাথে কথা বলেছি তাই উনি এখানে এসে ফ্ল্যাটটা ভালো করে বন্দনা দিয়ে গিয়েছেন যাতে কোন খারাপ আত্মা এখানে না আসতে পারে। আর তুই লাবন্যকে এসব ব্যপারে আস্তে আস্তে বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিবি যাতে ওর গর্ভে থাকা বাচ্চাটা কিছু বুঝতে না পারে।”

পূর্ণাশা মাথা দুলিয়ে বলল,”এবার সামথিং সামথিং বুঝতে পেরেছি।”
অভিনব লাবন্যর মাথায় টোকা মারতেই পূর্ণাশাও এক ঘা কষিয়ে দিলো। তখনই লাবন্য বেরিয়ে আসলো। অভিনব রা’দ ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। পূর্ণাশার এখন ভয় কম লাগছে কারণ এখন ও সবটাই জানে। কিন্তু লাবন্যর মনটা খুবই খারাপ। একবার মনে হচ্ছে মরে যেতে তো আরেকবার মনে হচ্ছে প্রিতমের খুনিকে শাস্তি না দিয়ে মরবে না।

রাতে ঘুমানোর পর হলো আরেক জ্বালা। কারণ ওই বাচ্চাটা কাউকে ঘুমাতে দিচ্ছে না কিসব আজগুবি কথা বলছে। একবার কাঁদছে তো একবার হাসছে আর বারবার বলছে বাবা আসছে না কেন??আমি বাবার সাথে কথা বলব। পূর্ণাশা ভয়ে খাটের এক কোনায় গুটিয়ে বসে আছে। লাবন্যকে ধরলে যদি আবার ধাক্কা মারে??নাহ বাবা এর থেকে চুপ থাকাটাই শ্রেয়। কিন্তু এসব কথা তো রা’দেকে জানাতে হবে কারণ রা’দ ওকে সব জানাতে বলেছে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here