THE_BOOK #পর্ব_২৪,২৫ সমাপ্ত

0
347

#THE_BOOK
#পর্ব_২৪,২৫ সমাপ্ত
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
২৪

নূরজাহানের স্থির লাশ পড়ে আছে অভিনবের পায়ের কাছে। অভিনব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাবন্য পূর্ণাশাও একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা চায়নি নূরকে মারতে কিন্তু এতো দূর পর্যন্ত এসে কিভাবে থেমে যাবে ওরা??যেখানে রা’দের কারণেই লাবন্য অভিনব বেঁচে আছে সেখানে রা’দকে কিভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে ওরা??লাবন্য আর পূর্ণাশার চোখে পানি চিকচিক করছে। রা’দ এসে এসব দেখলে কি হবে?? কেমন রিয়েক্ট করবে সে??
অভিনব জোরে শ্বাস টেনে বলল,”অবশেষে শেষ হলো ‘THE BOOK’ এর আত্মকাহিনী। আর কোন প্রাণহানি হবে না এর জন্য। এই বইয়ের সব আত্মাদের মুক্তি হয়েছে।”

“নূরজাহান,,,,,,!!!”

রা’দের গলার আওয়াজ শুনে ওরা তিনজনে চকিতে পিছন ফিরে তাকালো। রা’দ স্থির দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে থাকা লতাপাতা গাছের শিকড় মাটিতে পড়ে গেল। নূরকে এই অবস্থায় দেখে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। রা’দ দৌড়ে নূরের কাছে যেতে নিলে অভিনব ওকে জাপটে ধরে। রা’দ চিৎকার করে বলতে লাগলো,”নূরজাহান আপনার কি হয়েছে??এতো রক্ত কিসের নূর?? নূর আপনি উঠুন আমি এসে গেছি!!নূর,,,,।”
অভিনব রা’দকে ঝাড়ি মেরে বলল,”চুপ কর রা’দ। চল আমাদের সাথে।”

“নাহ, নূরের কি হয়েছে?? তোরা কি করেছিস বল?? নূর আমি এসে গেছি। আপনি তো বলেছিলেন আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। তাহলে চুপ করে আছেন কেন??নূর উঠুন।”

অভিনব পূর্ণাশা লাবন্য মিলে রা’দকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। রা’দ ছোটাছুটি করতেছে। শেষবারের মতো ওর নূরকে ছুঁয়ে দেখতেও পারলো না। রা’দ চিৎকার করে নূরকে ডাকছে। অভিনব উপায় না পেয়ে রা’দের গালে চড় বসিয়ে দিল। অভিনবের কান্ডে লাবন্য পূর্ণাশা চমকে উঠে। রা’দ মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো। চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়তেছে তাঁর। অভিনব হাঁটু গেড়ে রা’দের সামনে বসে রা’দের দুই বাহু ধরে বলতে লাগলো,”ভালো করে চারিদিকে তাকিয়ে দেখ তুই কোথায় আছিস?? এইটা অতোটা গভীর জঙ্গল নয়। কিছুদূর গেলেই মেইন রোড। আর একটু আগে বলছিলি না যে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে?? ভালো করে তাকিয়ে দেখ এখানে কোন ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে না।”

রা’দ অশ্রুসিক্ত নয়নে চারিদিকে তাকালো। তারপর বলল,”কিন্তু একটু আগেই তো ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল। আমিও তো ভিজে গেছি এইতো আমার শার্ট,,,”
রা’দ নিজের শার্টের দিকে তাকালো। আশ্চর্য শার্ট তো শুকনো। কিন্তু একটু আগেই তো রা’দ বৃষ্টি তে ভিজে ফিরলো। রা’দ উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালো। এখানে থাকা বাড়িটাও উধাও। রা’দ অবাক হয়ে বলল,”বাড়িটা কোথায় গেল?? এখানেই তো ছিলো!!আর নূরজাহান??”
লাবন্য এগিয়ে এসে বলল,”এটা একটা ট্রাপ ছিল রা’দ। তুই বুঝতেই পারিসনি।”

“ট্রাপ?? কিসের??”
লাবন্য আবার বলল,”দ্যা বুক এর ট্রাপ। তোর গল্প চলছিলো এতক্ষণ রা’দ তুই সেটা বুঝতেই পারিসনি। আমরা ঠিক সময়ে না পৌঁছালে তোকে নূরজাহান নামের মেয়েটা মেরে ফেলতো।”

“কি আজে বাজে বকছিস তোরা?? আমার কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।”

অভিনব বলল,”আমি যেমন জলকন্যা রায়ার কথা বিশ্বাস করিনি তাই তুই ও করছিস না।এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সবটা তোকে এখন বুঝতে হবে।”

রা’দ এবার ভাবনায় পড়ে গেল বলল,”কি হয়েছে একটু ক্লিয়ারলি বলবি??”
পূর্ণাশা এগিয়ে এসে বলল,”সে অনেক কথা রা’দ আগে তুই ফিরে চল। তবে একটা কথা জেনে রাখ যে নূরজাহান তোর গল্প হয়ে এসেছিল। আর এখন সে মুক্তি পেয়েছে তাই চলে গিয়েছে।”

“কিন্তু তুই বাচলি কিভাবে?? তোদের তো ওই ভাম্পায়ারটা ধরে নিয়ে গিয়েছিল।”
অভিনব রা’দের কাঁধে হাত রেখে বলল,”আগে বাড়িতে ফিরে চল। তোর বাবা মা তোকে এই তিনদিন না পেয়ে চিন্তা করছে খুব। বাড়িতে গিয়ে সবটা বলব।”

রা’দ আর কথা না বলে ওদের সাথে হাঁটতে লাগলো। যাওয়ার আগে একবার পিছন ফিরে তাকালো। এখানে তো নূরজাহানের বাড়িটা ছিলো কিন্তু কোথায় গেল??আর ওই ঘোড়াটা আর ময়ূরটা কোথায় গেল??রা’দের চোখ গেল নিজের পায়ের দিকে। ওর জুতোর সাথে ময়ূরের পালক লেগে রয়েছে। রা’দ ঝুঁকে পালকটা হাতে নিলো। চেয়ে রইল পালকের দিকে। এই পালকে তো নূরের ছোঁয়া আছে তাই সে পালকটা সাথে করে নিয়ে গেল। হয়তো নূরজাহান তার শেষ স্মৃতি রা’দকে দিতে চেয়েছিলো তাই পালকটা রা’দ পেয়েছে।

কিছুদূর জঙ্গলের পথ পাড়ি দিয়ে মেইন রোড এ পৌঁছে গেল ওরা। অভিনব গাড়ি নিয়েই এসেছিলো। গাড়িতে চেপে বসে সবাই আর অভিনব গাড়ি স্টার্ট দিলো। রা’দ একধ্যানে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবলো এই বুঝি নূরকে দেখতে পাবে। কিন্তু না,সে তো চলেই গেছে আর কখনো ফিরে আসবে না।

বাড়িতে আসতেই রা’দের মা রা’দকে ধরে কান্না করে দিলেন। রাইসা এসেও ভাইয়াকে দেখে কাঁদতে লাগলো। ওদের কান্না দেখে রা’দ প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গেলো। দু’জনকে ছাড়িয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। রা’দের মা অবাক হয়ে গেল। তার ছেলে তো কখনো তার সাথে এমন ব্যবহার করে না তাহলে??অভিনব রা’দের মা’কে শান্তনা দিয়ে বলল,”আন্টি ওর মাথাটা একটু গরম আছে। একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করবেন না। আজকে আমরা আসি কালকে আবার আসবো।”
অভিনব লাবন্য পূর্ণাশা চলে যায়। রা’দের মা চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,”এবার তোর কোন কথা শুনব না। জাবিনকে তোকে বিয়ে করতেই হবে। কত সুন্দর শান্তশিষ্ট মেয়ে!!তাও নাকি ওর পছন্দ হয় না। হয় তুই জাবিনকে বিয়ে করবি না হয় আমি বিষ খাবো।”

বলতে বলতে তিনি আঁচলে মুখ গুজে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। রা’দ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। পানিধারা ওর শরীর বেয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে এটা কোন ঝর্ণা। রা’দ চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা পানি উপভোগ করতেছে। চোখ বন্ধ করতেই নূরের মুখখানি ভেসে উঠলো তার সামনে। সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে রা’দ। নূরের জন্য ভিশন কষ্ট হচ্ছে রা’দের। এবার সে ঠিকই বুঝতে পারছে যে ভালোবাসার মানুষকে সহজে ভোলা যায় না। ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর যন্ত্রণাটা আজ সে হারে হারে টের পাচ্ছে। যেমনটা অভিনব আর লাবন্য পাচ্ছে। রা’দ নিজের চোখে দেখেছিলো জলকন্যার জন্য অভিনব কতটা পাগল হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এখনো আছে তবে আগের মতো ভায়োলেন্স হয় না অভিনব। কষ্ট বুকের ভেতর চেপে রাখা যে কতটা ব্যথাতুর তা এখন রা’দ বুঝতে পারছে।

নূর এসেছিল ক্ষণিকের জন্য তাই চলে গেছে। কিন্তু রা’দের মন থেকে কি আদৌ যেতে পারবে?? এতদিন স্বপ্নে এসে রা’দকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে। তারপর ক্ষণিকের দেখা দিয়ে দূর অজানায় চলে গেছে। রা’দ এসব মানতে পারছে না। শাওয়ার শেষ করে বাইরে আসে রা’দ। সারাদিন রেস্ট নিলো। বিকেলে কাউকে কিছু না চুপচাপ বাইক নিয়ে বের হয়ে যায় রা’দ।

………………

খ্রিস্টান মন্দির,,,,,

অভিনব হাত জড়ো করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে জিসাসের কাছে প্রে করছে।অভিনব নিচু স্বরে বলতেছে,”আমি তোমার কাছে কখনোই কিছু চাইনি। আজকে চাইছি, আমার অতীতকে তুমি ভুলিয়ে দাও। আমি রায়াকে মনে রাখতে চাই না। ওর কথা মনে পড়লেই পুরোনো ঘা তাজা হয়ে ওঠে। যদি নিয়েই যাবে তাহলে ওকে আমার জীবনে কেন এনেছিলে??হয় ওকে ভুলিয়ে দাও নয়তো আমার জীবনটা তুমি নিয়ে নাও,,,।”

বলতে বলতে অভিনব খেয়াল করলো ওরা গাল বেয়ে পানি পড়ছে। তারমানে সে কাদতেছে। ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ঘুরলো অভিনব। তাকিয়ে দেখলো ফাদার দাঁড়িয়ে আছে। অভিনব চোখ মুছে হাসার চেষ্টা করলো। ফাদার বলল,”সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না মাই সান। মানুষটা নেই তো কি হয়েছে?? তোমার হৃদয়ে তো তার বসবাস। সেটাকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার নামই ভালোবাসা। তাই জিসাসের কাছে এটা প্রে করো যেন তোমার মন থেকে যেন তার নাম কখনো মুছে না যায়।”
অভিনব অবাক চোখে ফাদারের দিকে তাকিয়ে রইল। ফাদার একটা কথাও ভুল বলেনি। ঠিকই তো বলেছে ভালোবাসার মানুষ টি নেই তো কি হয়েছে তার অস্তিত্ব তো ওর ভেতরে রয়েছে। ওকে ভুলে গেলে তো অভিনবের অর্ধেক জীবন মুছে যাবে। অভিনব ফাদারকে বলল,”থ্যাঙ্কস ফাদার আমার ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।”

অভিনব চোখ বন্ধ করে ফটাফট প্রে করে মোমবাতি জ্বালিয়ে বের হয়ে গেল। বাইরে এসে ও অবাক হয়। রা’দ তার বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। অভিনব রা’দের কাছে গিয়ে বলল,”তুই এখানে??জানলি কিভাবে যে আমি এখানে এসেছি।”
রা’দ রাস্তায় চলতি গাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,”আমার সিক্স সেন্স বলছিলো তুই এখানে আছিস। এখন চল।”

“কোথায়??”
“লাবন্য আর পূর্ণাশার কাছে। আমি নূরের ব্যাপারে সবকিছু জানতে চাই।”
অভিনব কিছু বলল না। নিজের বাইক স্টার্ট দিয়ে চলল। রা’দ ও অভিনবের পিছু পিছু চলল। একটা রেস্টুরেন্টে গেল দুজনে। পূর্ণাশা আগেই এসে গেছে। রা’দ ফোন করে ওকে আসতে বলেছে। কিন্তু লাবন্য এখনো আসছে না। রা’দ পূর্ণাশাকে জিজ্ঞাসা করল,”লাবন্য কোথায়??”

“জানি না ফোন করছি দুপুর থেকে কিন্তু ফোন ধরছে না।”
“কি বলিস??”
“মনে হয় কিছু হয়েছে চল আমরা গিয়ে দেখি।”

তিনজন মিলে লাবন্যর বাসায় গেল। কলিং বেল বাজানো সত্ত্বেও দরজা খুলল না লাবন্য।ওরা তিনজনই অস্থির হয়ে পড়ে। হঠাৎ পূর্ণাশা বলল,”আমার কাছে মনে হয় এক্সট্রা চাবি আছে। যখন ওর বাসায় থাকতাম তখন নিয়েছিলাম।”
পূর্ণাশা ওর ব্যাগের ভেতর খুঁজতে লাগল পেয়েও গেলো। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ওরা ভেতরে ঢুকলো। চারিদিকে কাঁচ ছড়িয়ে আছে। কাঁচের টুকরার মধ্যে মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে লাবন্য। ওর হাত থেকে রক্ত ঝরছে। ভাঙচুর করার সময় হয়তো হাতে লেগেছে। অভিনব রা’দ মিলে লাবন্যকে খাটের উপর শোয়ায়। তারপর হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। পূর্ণাশা ততক্ষণে কাঁচগুলো সরিয়ে ফেলে। লাবন্যর জ্ঞান ফেরানোর জন্য চোখে পানির ছিটা দিলো।
লাবন্য পিটপিট করে চোখ খুললো। চোখটা ফুলে গেছে দেখে মনে হচ্ছে অনেক কেঁদেছে।
লাবন্যকে উঠিয়ে বসায় রা’দ তারপর বলে,”কি হয়েছে লাবন্য??এত ভাংচুর করেছিস কেন??”
লাবন্য রা’দের কাঁধে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। রা’দ একহাতে লাবন্যর বাহু ধরলো। লাবন্য কাঁদতে কাঁদতে বলল,”আমি আর পারছি না রা’দ। সব ঠিক হয়েও হলো না। আমি খুব স্বার্থপর রা’দ। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রিতমকে মেরে ফেলেছি আমি। ওর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। কেন সবকিছু ঠিক হলো না?? আমি কিভাবে থাকবো রা’?আমার মৃত্যু হচ্ছে না কেন বল?
মৃত্যু টা যে আমার ভিশন প্রয়োজন।”

লাবন্যর কান্না দেখে নিজের কষ্টটা সামাল দিতে পারলো না রা’দ। ও তো নিজেই একজনের ভালোবাসার দহনে পুড়ছে। কিভাবে সে লাবন্যকে শান্তনা দেবে??রা’দ নিজেও চোখের পানি ফেলছে। অভিনব গিয়ে লাবন্য আর রা’দকে জড়িয়ে ধরলো। ওরা তিনজনই যে একই দহনে পুড়ে মরছে। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
পূর্ণাশা দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কান্না দেখতেছে। ভালোবাসার এ কোন নির্মম পরিহাস??দ্যা বুক থেকে ওরা বেঁচে গেছে ঠিকই। কিন্তু এভাবে বাঁচার থেকে ওদের মরে যাওয়াটাই উওম ছিল। ভালোবাসাহীন বেঁচে থাকার কোন মানেই হয় না। আচ্ছা কি দরকার ছিল ওই বইতে ভালোবাসার গল্প লেখার??এর থেকে আরো ভয়ংকর গল্প লেখা যেতো না??কেনো মানুষের হৃদয় ভাঙে এমন গল্প লিখলো।

বব হেনরির তো হৃদয় ভেঙেছিলো। সেও তার ভালোবাসার মানুষটিকে পায়নি। হয়তো সেই জন্যই এরকম গল্প আবদ্ধ করেছে এই বইতে।
নিজের কষ্টটা মানুষ কে বোঝানোর জন্যই বোধহয় এই বইটা তৈরি করে গেছেন তিনি।এসব ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো পূর্ণাশা।

চলবে,,,,,,,,,,

#THE_BOOK

#পর্ব_২৫(অন্তিম পর্ব)

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

সমুদ্রের তীর,,,,,,,,,

সময়টা সন্ধ্যার পর,সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে। তীর জুড়ে চারকোনা পাথর বিছানো সারি সারি। পাথরগুলো অনেক বড়বড় আর এতো পাথর যে গুনে শেষ করা যাবে না। সমুদ্রের তীরে ঝাউবন। লম্বা লম্বা ঝাউগাছ গুলো যেন আকাশ ছুঁয়েছে। পাশাপাশি দুটো ঝাউ গাছের সাথে দড়ি দিয়ে দোলনা বানানো হয়েছে। এভাবে যত সামনে আগানো যায় ততই দোলনা গুলো দেখা যায়। দুটো দোলনায় পূর্ণাশা আর লাবন্য বসে আছে। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। বাতাসে সবার চুল নড়ছে। ঝাউ গাছের সাথে ঠেস দিয়ে রা’দ আর অভিনব দাঁড়িয়ে আছে। মনোরঞ্জনের জন্য ওরা সমুদ্র বিলাস করতে এসেছে। কিন্তু আফসোস এর বিষয় যে কারো মনই ভালো হচ্ছে না।

অভিনব সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে চোখ রেখে বলতে লাগলো,”সেদিন তুই জঙ্গলে পড়ে যাওয়ার পর ওই ভাম্পায়ারটা আমাদের অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছিল। একমুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম এই বুঝি সে পূর্ণাশাকে মেরে ফেলবে। আমি আর লাবন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি। তারপর মনে হলো জাহ্নুবির কথা।”

এটুকু বলেই অভিনব থামলো তারপর আবার বলতে লাগলো,”হ্যা সেদিন জাহ্নুবি আমাদের বাঁচিয়েছিল। সেদিন ভয়ংকর এক যু্দ্ধ লেগেছিল খোলা এক ময়দানে। এতোটা ভয়ানক ছিল সেই লড়াই যা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। আমরা তিনজন সেদিন অনেক ভয় পেয়েছিলাম। সে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাহ্নুবির জয় হয়। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের বাঁচায় সে। আমরা জাহ্নুবির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
কিন্তু সেদিন জাহ্নুবি আমাদের আরেকটা তথ্য দেয় আর সেটা হলো দ্যা বুক এর শেষ গল্প নিয়ে। জাহ্নুবি বলেছিল আমরা যেন সেদিন ই পরের গল্পটা পড়ে ফেলি। না হলে নাকি তোর বিপদ হতে পারে। কারণ তুই জঙ্গলে ছিলি। আমরা যদি তোর গল্পটা না পড়তাম তাহলে ওই জঙ্গলের মায়াজালে তুই চিরদিনের জন্য আটকে থাকতি। আমরা তোকে বাঁচাতে যেতে পারতাম না। আর আমাদের মৃত্যু ও নিশ্চিত।তাই আমরা তাড়াতাড়ি সেখানে বসেই দ্যা বুক পড়ে ফেলি।
সেখানে শেষ গল্পটা তোকে নিয়ে লেখা ছিলো। তুই যাকে ভালোবেসেছিস সে আর কেউ নয় একজন পরীকন্যা। পরীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ছিল নূরজাহান। তার এই সৌন্দর্যই তার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নূরের রূপই তোকে মুগ্ধ করেছে যার কারণে তুই নূরকে ভালোবেসেছিস। কিন্তু বইতে লেখা ছিলো যে তুই যদি আবেগের বশে নূরের সঙ্গে ইন্টিমেট হস তাহলে তার ভেতর থেকে এক ভয়ংকর সত্তা বের হবে যে তোকে খুন করবে।
ব্যস এটুকুই লেখা ছিলো বইতে। কিন্তু জাহ্নুবি নূরজাহানের সব কিছুই জানতো। বব হেনরি নূরজাহানকে ধরে একটা মৃত মেয়ের ভেতরে আটকে দেয়। ফলে মেয়ের লাশটা নূরের রূপ ধারণ করে। যদি তুই নূরের সাথে ফিজিক্যালি ইন্টিমেট হতি তাহলে ওই মৃত মেয়েটা নূরের শক্তি নিয়ে ভয়ংকর আত্মায় পরিণত হতো। আর তোকে মেরে ফেলতো। তখন নূর একজন মানুষের মতোই ছিলো। আমরা ওই মৃত লাশ থেকে নূরকে বের করার জন্যই আমরা নূরকে হত্যা করেছি। তাই নূরজাহান এখন থেকে মুক্ত। এই মুহূর্তে সে তার পরীরাজ্যে আছে তার নতুন জীবন নিয়ে।”

রা’দ এক দৃষ্টিতে সামনের গভীর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ মন দিয়ে অভিনবের কথাগুলো শুনছিল। সব শোনার পর রা’দ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বলল,”জাহ্নুবির মতো কি নূরের দেখা পাবো না??জাহ্নুবি যেমন আমাদের দেখা দিয়েছে তেমনি যদি একবার নূরের দেখা পেতাম।”

অভিনব হালকা হাসলো বলল,”যদি তেমনটাই
হতো তাহলে আমি তো রায়াকে ও পেতাম। কই সে তো এলো না??জাহ্নুবির আসার কারণ ছিল সে নতুন করে জন্ম নিয়েছে। তাই সে আমাদের সাহায্য করতে এসেছিল। কিন্তু এখন তো সেও চলে গেছে।”

রা’দ বড় একটা শ্বাস ফেলে নিচে দিকে তাকালো। অভিনব জুতো খুলে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে গেল। ভাটা পড়েছে তাই বালুর উপর পা ফেলে পানির দিকে এগিয়ে গেল। পানিতে পায়ের তালু ভিজিয়ে দিয়ে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পর পর ঢেউ এসে অভিনবের পা ভেজাতে ব্যস্ত। আর অভিনব ঢেউয়ের তাল দেখতে ব্যস্ত। বাতাসে ওর সিল্কি চুলগুলো উড়ছে। একধ্যানে সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে সে। হঠাৎ মনে হলো ও যেন রায়াকে দেখলো। পানির মধ্যে সাঁতরে আসছে এই দিকে। অভিনব চমকে তাকালো। দ্রুত সামনের দিকে পা ফেলল সে। হাঁটু অব্দি পানি পর্যন্ত গিয়ে হুস আসলো তার। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই এই সময়ে। শুধু আকাশে অর্ধচন্দ্র দেখা যাচ্ছে। অভিনব বুঝতে পারো যে এটা তার চোখের ভ্রম। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে সে। অভিনব চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। কি এমন হতো যদি রায়া তার সাথে থাকতো?? ওদের সাথে এমনটা হতে হলো কেন??

দূর থেকে পাথরের উপর বসে আছে রা’দ। অভিনবের কাজগুলো দেখতেছে সে। রা’দ বেশ বুঝতে পারছে যে অভিনব কিসের ব্যথায় কাতরাচ্ছে??ওর জীবনটাতেও তো সেই ব্যথা দৌড়াচ্ছে। এই অভিশপ্ত বইটা ওদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাই কেড়ে নিয়েছে। তার থেকে যদি ওদের জীবনটাই কেড়ে নিতো তাহলে মন্দ হতো না। তখন যদি এটা বুঝতো তাহলে ও কখনোই বাঁচার চেষ্টা করতো না। কি জানি নূরজাহান এখন ঠিক কোথায় আছে??সে নিশ্চয়ই রা’দকে ভুলে গেছে। মনে রাখবেই বা কেন??তিনদিনে কি কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মায়?? কিন্তু রা’দ কিভাবে ওকে ভালোবাসলো?? তখনই রা’দের মনে পড়লো যে ও তো শুরু থেকেই নূরকে স্বপ্নে দেখতো। এভাবেই সে নূরকে ভালোবেসেছে। রা’দ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।

পূর্ণাশা ঝাউ গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর তিন বন্ধুর কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছে। যদিও পুরোটা উপলদ্ধি করতে পারছে না। কিভাবে পারবে ও?? কখনো তো কাউকে ভালোবেসে দেখেনি। পরক্ষণেই পূর্ণাশার মনে হলো যে কাউকে ভালো না বেসে ভালোই করেছে। না হলে ওকেও নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো। যেমনটা রা’দ অভিনব লাবন্য পাচ্ছে। পূর্ণাশা ঘাড় ঘুড়িয়ে লাবন্যর দিকে তাকালো। লাবন্য দোলনায় শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। লাবন্যর দৃষ্টি অনুসরণ করে পূর্ণাশা আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে অর্ধেক চাঁদ আর তার পাশে তারাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। লাবন্য সেই তারা গুলো দেখেছে।
পূর্ণাশা ভেবে পায় না যে এভাবে ওরা আর কতোদিন চলবে??? জীবনটাকে তো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ওরা কি আদৌ রাজি হবে তাতে?? ওদের তিনজনের মধ্যে পূর্ণাশা কাবাব মে হাড্ডি হচ্ছে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই। এই তিনজনকে বোঝালেও বুঝবে না।

…………………

দুই বছর পর,,,,,,,,

অভিনবের ফোনটা অনবরত বেজে যাচ্ছে। ঘুমের ঘোরে বিরক্ত বোধ করলো সে। এই সাতসকালে ফোন দিয়ে ঘুমের বারোটা বাজানোর কি দরকার ছিল?? নিশ্চিন্তে কি ঘুমাতে দেবে না??অভিনব চোখ বন্ধ করেই হাতরে ফোন পাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে ব্যর্থ হলো কারণ ফোনটা যে বালিশের নিচে নেই। নিশ্চয়ই টেবিলের উপর রেখে এসেছে। অগত্যা সাধের ঘুম ছেড়ে উঠতে হলো তাকে। ফোন করা ব্যক্তিটিকে মনে মনে কতগুলো গালি দিলো সে। আস্তে আস্তে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। ততক্ষণে ফোনটা কেটে গেছে।অভিনব ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকালো। পূর্ণাশার নাম্বারের পাশে সাতবার মিসড কল লেখা। অভিনব কপাল কুঁচকে ফেলে। এই মেয়েটা ওকে এতো জ্বালায় কেন?
সময়ে অসময়ে ফোন করার কোন মানে হয়??
কাজের সময় ফোন করে জ্বালিয়ে মারে। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!!অভিনবের ভাবনার মাঝেই আবার ফোন বেজে উঠলো।
বিরক্ত হয়ে অভিনব ফোন রিসিভ করে বলল,”কি সমস্যা তোর??এই সাত সকালে ফোন করে জ্বালাচ্ছিস কেন?? তুই ঘুমাবিনা বলে কি আমাকেও ঘুমাতে দিবি না।”

পূর্ণাশা অবাক হয়ে গেল। এতে রাগার কি আছে, “এতো রাগ করছিস কেন??আর তোর এক সকাল মনে হচ্ছে??দশটা বাজে। পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস কেন??অফিস নেই তোর??”

পূর্ণাশার কথা শুনে অভিনব কান থেকে ফোন সরিয়ে টাইম দেখলো। সত্যি তো দশটা বাজে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছে সে। তাই ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে। অভিনব বলল,”কি বলবি জলদি বল আমার কাজ আছে।”

“হুম আমি ফোন করলেই তোর কাজ পড়ে যায় তাই না??”

“বল না কি বলবি??”

“রা’দ তোকে ফোন করেছিলো??”

“না তো কেন??”

“তুই হয়তো ঘুমিয়ে ছিলি তাই ধরতে পারিসনি। শোন ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয়। কারণ আমাদের রা’দ সাহেব বিয়ে করছে।”
সাথে সাথে অভিনবের চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেল। বড়বড় চোখে তাকালো সে। বলে উঠলো,”কি???”

“জ্বী হ্যা। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করানো হয়েছে। এবার আপনি তাড়াতাড়ি এসে পড়ুন। না করবি না। দুইটা বছর পর সবার সাথে দেখা হচ্ছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আয়।”

অভিনব শান্ত স্বরে বলে,”দেখছি।”

“দেখলে হবে না তোকে সাথেই হবে। রা’দ ফোন করে তো সব বলবেই তখন তো মানা করতেই পারবি না।”

“এই তুই ফোন রাখ।”
এক ঝটকায় অভিনব ফোনটা কেটে দিলো। সোফায় একপা তুলে বসে আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। তার পর কিন্ঞ্চিৎ হাসি ফুটলো ওর মুখে।
সেদিনের পর দুই বছর কেটে গেছে। চার বন্ধু এখন আলাদা থাকে। তবে ফোনে সবার সাথে যোগাযোগ রয়েছে। রা’দ ঢাকাতেই একটা চাকরি করে আর অভিনব চট্টগ্রামে। সমুদ্রের প্রতিদিন অভিনবের একটা টান রয়েছে। সেটা হয়তো রায়ার কারণেই। তাই সমুদ্র না দেখলে অভিনবের ভালো লাগে না। তাই সে চট্টগ্রামে চাকরি নিয়েছে যাতে সমুদ্রে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে পারে। আর লাবন্য এখন বাবা মায়ের সাথে থাকে। ওখানেই একটা চাকরি ধরেছে সে। লাবন্য ভেবে নিয়েছে সে কোনদিন বিয়ে করবে না। প্রিতম ছাড়া সে আর কাউকে নিজের মনে জায়গা দিতে পারবে না। তাই ও একটা বাচ্চা দওক নিয়েছে। পাঁচ বছর বাচ্চাটার। এতেই সে হ্যাপি। মনের দিক দিয়ে সুখি না হলেও বাইরে সবসময় হাসিখুশি থাকে। কি দরকার মানুষকে নিজের কষ্টের দেখানো। দেখলেই বা তারা কি করতে পারবে?? ওর কষ্ট তো দূর করতে পারবে না। তাই সবসময় হ্যাপি থাকার চেষ্টা করাই বেটার। আর পূর্ণাশা,সেও এখন ফ্যামেলির সাথে থাকে। পূর্ণাশা ভেবেছে পরিবারের কথাতেই বিয়ে করে নেবে।

এভাবেই ওদের জীবন থেকে দুই বছর অতিক্রম করে গেছে। সবাই যার যার জীবন নিয়ে এগিয়ে চলছে। শুধু বন্ধুদের সাথে ফোনে যোগাযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে চারজনে গ্রুপে ভিডিও কলে আড্ডা দেওয়া পুরোনো স্মৃতি নিয়ে কথা বলা এভাবেই কেটে যায়। অভিনব ভেবেছিল রা’দ হয়তো কোনদিন নূরজাহানকে ভুলতে পারবে না। তাই রা’দের বিয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছে। সাথে এও বলেছে যে রা’দ বিয়ে করলেই ও বিয়ে করবে। অভিনব পড়েছে মহা মুসকিলে। বিয়ে জিনিসটা এখন ওর কাছে এলার্জির মতো হয়ে গেছে। বিয়ে শব্দটা শুনলেই গা চুলকাতে শুরু করে। হতাশ হয়ে অভিনব রেডি হয়ে নিলো। তারপর অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পূর্ণাশার কথাই ঠিক হয়েছে। পথেই রা’দ ফোন করে ওকে ইনভাইট করলো। তবে দাওয়াত দেওয়া ব্যতিত আর কোন কথা বলেনি রা’দ।

……………….

আজ অনেক দিন পর চার বন্ধু এক হয়েছে। ওরা চারজনই খুব খুশি। রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে সে। লাবন্যর কোলে পাঁচ বছরের একটা ছেলে। কোথা থেকে ছোট বাচ্চা জোগাড় করলো এই নিয়ে ওরা কথা বলতেছে। পূর্ণাশা চকলেট নিয়ে এসেছে। সেগুলোই বাচ্চাটাকে দিচ্ছে। কোলে নিয়ে আদর করছে। প্রিতমের নামের সাথে মিল রেখে বাচ্চাটার নাম প্রিয়াস রেখেছে। পূর্ণাশা প্রিয়াসকে কোলে নিয়ে আদর করছে। অভিনব ছো মেরে প্রিয়াসকে কোলে তুলে নিলো। পূর্ণাশা রেগে গিয়ে বলল,”এটা কি করলি তুই??”
“দেখলি তো কি করলাম। তুই কি একাই কোলে নিবি নাকি?? বিয়ে কর বাচ্চা গাচ্চা নে তারপর কোলে নিস।”

পূর্ণাশা নাক সিটিয়ে বলে, ছিঃ মুখের ভাষার তো খুব উন্নত হয়েছে দেখছি।”

“বাংলাদেশ এতো উন্নত হচ্ছে সেখানে আমার মুখের ভাষা উন্নত হলে দোষ কি??”

“তুই বেশি কথা বলছিস কিন্তু??”

লাবন্য ওদের ঝগড়া দেখে হেসে ফেললো। ওরা দুজন এরকমই সবসময় ঝগড়া করে। লাবন্য ওদের থামিয়ে বলে,”তোরা থাম এসেছি বিয়ে খেতে ঝগড়া করতে না। রা’দ কোথায়??”
অভিনব পূর্ণাশা এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু রা’দকে কোথাও দেখতে পেল না। তখনই রাইসা এসে বলল,”আপু ভাইয়াকে দেখেছেন??”

লাবন্য বলল,”না তো!! কেন কি হয়েছে??”

“জানি না। একটু পর তো ভাইয়ার গায়ে হলুদ আর ভাইয়া এখন থেকেই উধাও। মাঝেমধ্যে রাতের বেলা কোথায় যেন চলে যায় ভাইয়া। জানি না কোথায় যায়?? আজকের দিনে না গেলে কি হতো?? অনেক কষ্টে মা বিয়েতে রাজি করিয়েছে। এখন কি বিয়েটা হবে না।”

অভিনব বলল,”চিন্তা করো না আমি রা’দকে ফোন করে দেখছি।”

রা’দ গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তখনই ফোনটা বেজে উঠলো তার। চোখ মেলে তাকিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে অভিনব ফোন করেছে। এতক্ষণ ওর মা আর রাইসা ফোন করেছিলো কিন্তু রা’দ রিসিভ করেনি। কিন্তু এখন রিসিভ না করেও উপায় নেই। রা’দ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অভিনব বলল,”কি রে কোথায় তুই??অনুষ্ঠান হবে না নাকি?? আমরা কখন থেকে বসে আছি তোকে হলুদ মাখাবো বলে আর তুই লাপাত্তা।”
রা’দ গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,”আসছি।”
এটুকু বলে ফোনটা কেটে দিলো সে। তারপর উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসলো। বাইকে বসে আবার জঙ্গলের দিকে তাকালো তারপর বাইক স্টার্ট দিলো।
গত দুই বছর যাবত রা’দ প্রায়ই এখানে আসে। কখনো রাতে তো কখনো দিনে। এই জঙ্গলের যেখানটায় মায়াজালে আবদ্ধ হয়েছিলো সে ঠিক সেইখানে এসে কিছু সময় বসে থাকে। চোখের সামনে এখনো ভাসছে সেই চেহারা। মনে হয় এই তো এখানে নূর বসে আগুন জ্বালিয়েছিলো। সেই পুকুরটায় বুঝি আবারো গোসলে নেমেছে সে। রাঁজহাসগুলো বুঝি তার চারদিকে ঘিরে খেলায় মেতেছে। এই বুঝি টগবগিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে হাজির হবে নূর। তার গায়ের সাদা পোশাক মাটিতে নুইয়ে হেঁটে আসবে রা’দের সামনে। মসৃণ গাল দুটো বিকৃত করে হাসবে। লম্বা চুলগুলো খুলে দিয়ে এদিক ওদিক ঘুরবে।
কিন্তু এমনটা আর কখনো হবে না। কারণ সে চলে গেছে। হয়তো সে রা’দকে ভুলে গেছে। না হলে একবারে জন্য হলেও রা’দের সাথে দেখা করতে আসতো।

রা’দ আপন মনে বাইক চালাচ্ছে। রাস্তার দু’পাশে ঘন জঙ্গল। পুরো ফাঁকা রাস্তা, কোথাও কোন জনমানব নেই। চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে রা’দের। কালকেই জাবিনের সাথে বিয়ে রা’দের। মেয়েটা অনেক কষ্টে ছিলো এতদিন। আজ তার স্বপ্ন সার্থক হবে। রা’দ ভাবছে কি অদ্ভুত জীবন ওর। যাকে স্বপ্নে দেখে চাইলো তাকে সে পেলো না।
আর যে তাকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখলো সে পেয়ে গেলো‌। এতে বোঝা যায় যে সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না।
রা’দ হয়তো কখনো জাবিনকে ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু স্ত্রীর অধিকার তো সে রা’দের কাছ থেকে ডিজার্ভ করে। তাই রা’দ ভেবেছে যে সে স্ত্রীর অধিকার জাবিনকে দিলেও কখনো তাকে ভালোবাসতে পারবে না। জাবিন ও রা’দের কথা মেনে নিয়েছে। কারণ রা’দের হৃদয় জুড়ে শুধু নূরজাহান আছে। তার নূরকে সে কখনো ভুলতে পারবে না।

“”কিছু কিছু মানুষের জীবনের প্রথম ভালোবাসাটা ভুল মানুষের সাথেই হয়।”””

________________সমাপ্ত________________

অনেকেই বলতে পারেন যে গল্পটা আরেকটু বড় করা যেতো। হ্যা যেতো তবে মূল গল্পটা যেহেতু “THE BOOK” নিয়ে তাই আর এগোলাম না। কারণ দ্যা বুক এর শেষ গল্প পর্যন্তই গল্পটা সিমাবদ্ধ।

ধন্যবাদ সবাইকে ❤️❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here