THE_BOOK #পর্ব_৬,০৭

0
265

#THE_BOOK
#পর্ব_৬,০৭
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
০৬

অভিনবকে রুমের মধ্যে রেখে ওরা তিনজনই বাইরে বেরিয়ে আসলো। পূর্ণাশা আর লাবন্যর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। অভিনবের এরকম অবস্থা দেখে সবাই চিন্তিত। কারণ যেই অভিনব ওদের সাথে একদিন কথা না বলে থাকতে পারে না। হাজার ঝগড়া হলেও আগ বাড়িয়ে ওই এসে কথা বলে আজ সেই অভিনব ওদের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা বোধ করছে না। রা’দের চোখমুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। যেকোন সময়ই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়বে। পূর্ণাশার গাল লাল হয়ে গেছে।তিন আঙুলের ছাপ উঠে গেছে ওর গালে।
লাবন্য ধরা গলায় বলল,”অভিনব এতো ভায়োলেন্স হয়ে যাচ্ছে কেন?? ওকে দেখে মনে হচ্ছে কোন এক হিংস্র পশু। ওই জলপরীটা ওর ব্রেন ওয়াশ করে দিয়েছে।”

পূর্ণাশা গালে হাত দিয়ে বলল,”আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না যে অভিনব আমাকে থাপ্পর মেরেছে। রা’দ এবার কি হবে?? আমরা যে বড় ধরনের জালে ফেসে গেছি। তাহলে কি আমাদের ও মরতে হবে ওই বইটা পড়ার জন্য??বাকি পাঁচজনের মতোই কি আমরা ও মারা যাব??”
রা’দ কিছুটা চিৎকার করে বলল,”জানি না আমি কিচ্ছু জানি না। এখন আমাদের কি করা উচিত তাও জানি না। তবে অভিনবকে বাঁচাতে হবে। কোনমতেই ওকে সমুদ্রে ছাড়াটা ঠিক হবে না।”
“তাহলে যেকরেই হোক ওকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে।”
লাবন্য বলল,”রা’দ এই বইটার একটা ব্যবস্থা কর। দরকার পড়লে আবার ইংল্যান্ডে গিয়ে ওই কবরেই বইটা রেখে আয়। না হলে আমরা সবাই মারা পড়ব।”
বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লো লাবন্য।
পূর্ণাশার ও একই অবস্থা। তিনজনেই চুপ করে আছে। তখনই দেখলো রুমে থেকে অভিনব বেরিয়ে এসেছে। সবাই চমকে তাকালো অভিনবের দিকে। হাত পায়ের বাঁধন খুললোই বা কি করে??এতোটা শক্তি ও পেলো কোথায়??অভিনব সমুদ্রের দিকে দৌড় মারলো। ওর পিছু পিছু রা’দ পূর্ণাশা আর লাবন্য ও দৌড়ে যায়। রা’দ দ্রুত গিয়ে অভিনবকে টেনে ধরে সাথে লাবন্য আর পূর্ণাশাও। কিন্তু এবার ওরা কেউ অভিনবের সাথে পেরে উঠছে না। এতোটাই শক্তি অভিনবের গায়ে যে ওরা তিনজন ধরে থাকা সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে অভিনব। পানির কাছে আসতেই জলকন্যা মাথা উপরে তুলে মিষ্টি হাসি সমেত তাকালো।অভিনবের মুখেও হাসি ফুটলো। সবাই অবাক হয়ে জলপরীকে দেখছে। অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা,না ভয়ংকর সুন্দর। যার কারণে অভিনব এতো ভায়োলেন্স হয়েছে। জলকন্যা হাত বাড়িয়ে বলল,”এসো প্রিয় তোমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি যে।”

জলপরী কে দেখে অভিনব কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। সামনে এগোতে নিলেই রা’দ পূর্ণাশা লাবন্য আরো চেপে ধরে অভিনবকে।অভিনব চেঁচিয়ে বলল,”তোরা ছাড় আমাকে। আমাকে যেতে দে।”
পূর্ণাশা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,”না অভিনব তুই যাস না আমরা তোকে হারাতে চাই না।”

লাবন্য অভিনবের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,”ওই জলপরী তোকে ভালোবাসে না অভিনব। ও তোকে মেরে ফেলবে। আমরা তোকে হারাতে পারব না। প্লিজ অভিনব।”

ওদের কথা অভিনবের কান অবধি পৌঁছালো না। সে তার প্রেয়সির কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। রা’দ চেঁচিয়ে জলকন্যাকে বলল, “কেনো তুমি এরকম করছো?? অভিনবকে মেরে তোমার কি লাভ?? আমাদের পেছনে কেন পড়েছো??”

রা’দের কথা শুনে জলপরী হাসতে লাগলো।আর অভিনব মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। জলপরী হঠাৎ হাসি থামিয়ে দিলো। সাথে সাথেই চোখে মুখে রাগ এসে ভর করলো।সূর্যের আলোয় যেন ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। জলপরী বলল,”আমি তোমাদের পিছনে পড়িনি বরং তোমরাই আমাকে স্বেচ্ছায় ডেকে এনেছো। আমার উপর যে অভিশাপ পড়েছে সেই অভিশাপ তোমাদের উপরেও পড়তে চলেছে। হয় আমাকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করে নিজেরা মুক্ত হও আর না হয় তোমাদের বন্ধুকে আমাকে দিয়ে দাও।”
রা’দ চেঁচিয়ে বলল,”কখনো না। অভিনবকে তুমি কখনোই পাবে না। আমরা তা হতে দেব না।”
রা’দের কথা শুনে জলপরী গগণ কাঁপানো হাসি হাসলো বলল,”আমি স্বেচ্ছায় তোমাদের বন্ধুকে নিয়ে যাব না। বরং সে নিজের ইচ্ছায় আমার কাছে আসবে নয়তো পাগল হয়ে ধীরে ধীরে মরে যাবে‌। আমাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা ওকে মৃত্যু দেবে। সেই মৃত্যু যন্ত্রনা সইতে না পেরে ও হাজার বাধন ভেঙে আমার কাছেই ফিরে আসবে। এক মৃত্যু পুরি থেকে আরেক মৃত্যু পুরিতে।”
জলপরী আবার হাসলো। তারপর অভিনবের দিকে তাকিয়ে বলল,”কি হলো এসো প্রিয়।”

অভিনব সব ভুলে আবার এগিয়ে যেতে লাগলো। আবার নিজের শক্তি প্রয়োগ করছে অভিনব। লাবন্য আর পূর্ণাশা মিলে চেঁচাতে লাগলো। আশেপাশের কিছু মানুষ দৌড়ে আসতেই জলপরী টুপ করে ডুব দিলো। লোকজনের সাহায্যে অভিনবকে নিয়ে ওরা কক্সবাজার পৌঁছায়। সেখান থেকে একটা হসপিটালে এডমিট করে অভিনবকে।আপাতত ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে অভিনবকে। করিডোরের বাইরে রা’দ পূর্ণাশা আর লাবন্য দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ পরিমাণ চিন্তা ওদের মাথায়। না জানি এরপর কি হবে ওদের সাথে।লাবন্য রা’দকে বলল,”আমাদের তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফিরতে হবে রা’দ তুই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কর। আমরা এভাবেই অভিনবকে ঢাকায় নিয়ে যাব। এখানে থাকলে ও বারবার সমুদ্রে যাওয়ার চেষ্টা করবে।”

রা’দ বলল,”তোর কি মনে হয় এরপরেও অভিনব জলপরীর কথা ভুলবে?? তাছাড়া জলপরী তো পানিতেই থাকে আর ঢাকায় কি নদ-নদী কম আছে??ওই জলপরী কি বলে গেল শুনিসনি??অভিনব ওর কাছে যেতে না পারলে পাগল হয়ে যাবে।”

“তবুও ওখানে আমাদের অনেক চেনা জানা মানুষ আছে কিছু একপা ব্যবস্থা করা যাবে।”

রা’দ আর কথা বাড়ালো না তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে অভিনবকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে এবং একটা হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেয়। কিন্তু দিন যতোই পার হচ্ছে অভিনবের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে। বারবার পানির কাছে যেতে চাইছে। কক্সবাজার থেকে আসার পরই অভিনব হসপিটালে এখন পর্যন্ত বাড়িতে ফেরেনি।অভিনবের মা এসে ছেলের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পূর্ণাশা আর লাবন্য ওনাকে নানাভাবে বুজ দেয়। কিন্তু উনি সবকিছু মানতে নারাজ। অভিনব এখন পাগলপ্রায়। ওর হাতে পায়ে শিকল পরানো থাকে সবসময়। এর আগে ঘুমের ইনজেকশন দিতো কিন্তু তাতে লাভ হতো না তাই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিনবের মা সবসময় হসপিটালে থাকে। ছেলের চিন্তায় উনি নিজেও শেষ হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিদিন নিয়ম করে রা’দ পূর্ণাশা আর লাবন্য অভিনবের সাথে দেখা করতে আসে। আজকেও এসেছে। ডক্টরের সাথে কথা বলে অভিনবের কেবিনে ঢুকলো তিনজন। বেডে শুয়ে রয়েছে অভিনব । হাত পা বেডের সাথে শিকল দিয়ে বাঁধা। চুলগুলো উস্কো খুস্কো হয়ে গেছে। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে।অভিনবের এরকম অবস্থা দেখে ওরা আর চোখের পানি আটকাতে পারলো না। রা’দ চোখের পানি মুছে অভিনবের মাথায় হাত রাখলো। সাথে সাথে অভিনব চোখ মেলে তাকালো। ওদের দেখেই লাফ দিয়ে উঠে বসে রা’দের হাত ধরে মিনতি করে বলল,”আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল রা’দ। আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে এভাবে থাকলে আমি মরে যাবো। আমাকে ওই মেয়েটার কাছে নিয়ে চল না??”

রা’দ দুহাতে অভিনবকে জড়িয়ে ধরলো।পূর্ণাশা আর লাবন্য এসে অভিনবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। পূর্ণাশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,”কিছু একটা কর রা’দ আমি অভিনবকে এভাবে দেখতে পারছি না। চোখের সামনে এভাবে বন্ধুর মৃত্যু কিভাবে দেখব??”

পূর্ণাশা জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। লাবন্য বলল,”অভিনব ঠিক হয়ে গেলে আমরা আর এই কাজ করবো না ছেড়ে দেব। তবুও যেন অভিনব ঠিক হয়ে যায়।”

রা’দ কি বলবে কিছু বলতে পারছে না।অভিনব বারবার ওদের কাছে আকুতি মিনতি করছে যেন ওকে এখান থেকে নিয়ে যায়। ওরা অভিনবের কথা উপেক্ষা করেই কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। অভিনব চিৎকার করে ওদের ডাকছে। বাইরে এসে রা’দ রাস্তার পাশে ঘাসের উপর বসে পড়ল। নিজেকে আজ খুব অসহায় লাগছে। এখন মনে হচ্ছে কেন যে ওরা ইংল্যান্ড গিয়ে ওই বইটা আনতে গেল??

লাবন্য হাঁটু মুড়ে রা’দের পাশে বসে বলল, “আমাদের অভিনবকে বাঁচাতে হবে। তুই কিছু কর।”

রা’দ মাথার চুল টেনে ধরে বলল,”কি করব আমি?? আমার মাথায় কিছু আসছে না। কি করলে ওই জলপরীর চিন্তা অভিনবের মাথা থেকে বের হবে??”

পূর্ণাশা রা’দের অপর পাশে বসে বলল, “সবকিছুর মূলে ওই বইটা। তাই বইটাকে আগের স্থানে রেখে এলেই সব সমস্যার সমাধান হবে বোধহয়। রা’দ তুই বইটা ওই কবরস্থানে রেখে আয়। আমরা অভিনবের খেয়াল রাখবো।”
রা’দ সন্দেহের চোখে পূর্ণাশার দিকে তাকিয়ে বলল,”এতে যদি কাজ না হয়??”

“জানি না কি হবে?? তবে ওই বইয়ের হাত থেকে তো মুক্তি পাবো।”

“বইটা তো অভিনবের ফ্ল্যাটে।”

“চল তাহলে আমরা যাই।”

অভিনবের মায়ের থেকে চাবি নিয়ে ওরা তিনজনই অভিনবের ফ্ল্যাটে গেল। পুরো ফ্ল্যাট তন্নতন্ন করে খুঁজেও বইটা পেল না। হঠাৎ করে বইটা কোথায় গেল??লাবন্য বলল,”অভিনব বইটা ফেলে দিলো না তো??”

রা’দ বলল,”সেটা কিভাবে সম্ভব??বইটা পড়ার পরদিন তো আমরা চট্টগ্রাম চলে গেলাম।”

পূর্ণাশা বলল,”হয়তো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলো পরেরদিন। অভিনবকে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে??”

“ও এখন সেই সেন্সে নেই। আমরা আরেকটু খুঁজে দেখি পাই কি না??হয়তো কোন খানে রেখে দিয়েছে।”

তিনজনে আবার খুঁজতে লাগলো। বেডরুম বাথরুম কিচেন কোনটাই বাদ রাখলো না। হঠাৎ কি যেন মনে করে পূর্ণাশা ময়লার ঝুড়িতে উঁকি মারলো। অভিনব বইটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে রেখেছে। পূর্ণাশা বইটা হাতে নিয়ে বলল,”রা’দ লাবন্য বইটা পাওয়া গেছে।”

সাথে সাথে লাবন্য আর রা’দ ছুটে আসলো।পূর্ণাশা রা’দের হাতে বইটা দিয়ে বলল,”দ্রুত টিকিট বুক কর। এই বইটাকে আমার এক মুহুর্তের জন্য সহ্য হচ্ছে না।”

“হুম,চল এখন যাওয়া যাক।”

লাবন্য কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,”অভিনব বাঁচবে তো??”
লাবন্যর এই উক্তিটি সবাইকে আবারও ভেঙে চুরমার করে দিলো। বুক ফেটে কান্না আসছে ওদের। চোখের সামনে চার বন্ধুর কাটানো মুহূর্তগুলো ভেসে উঠলো। চারজনের একসাথে ঘুরতে যাওয়া,মজা করা,হন্টেড প্লেসে গিয়ে ইনভেস্টিগেশন করা। হইহই করে একে অন্যের বাড়িতে আড্ডা দেওয়া। এসবের মধ্যে তো ভালোই দিন কাটছিলো ওদের।

কিন্তু হঠাৎ এক ঝড় এসে সবকিছু ওলট পালট করে দিলো। ঝড়টা এতোটাই শক্তিশালী যে তার সাথে পেরে ওঠা যাচ্ছে না।এই ঝড় ওদের মধ্যে থেকে একজনকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে। কিন্তু ওরা ওদের বন্ধুকে ছাড়তে নারাজ।
এখন ওরা পড়েছে বিপদে। না পারছে এই ঝড়ের মধ্যে থাকতে আর না পারছে এই ঝড়ের মোকাবেলা করতে।

রা’দ দরজায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো।লাবন্য ও মেঝেতে বসে পড়লো। লাবন্য বলল, “আমাকে প্রিতম বাবা মা অনেকবার বলেছিল এই চাকরি ছেড়ে দিতে কিন্তু আমি ছাড়িনি।এটাই আমাদের উপর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।উফফফ ভগবান,,,,”

পূর্ণাশা লাবন্যর কাঁধে হাত রেখে বলল, “অভিনবকে সুস্থ করতে পারলে আমরা কেউ এই চাকরিতে থাকব না। এতে যা হয় হবে আমরা এর মধ্যে নেই। শুধু অভিনবকে চাই আমরা ব্যস।”

রা’দ চুপ করে ওদের কথা শুনতেছে। ওর কথা বলতে ভালো লাগছে না। এই মুহূর্তে অভিনবকে খুব মিস করছে। কিন্তু অভিনব নেই ওকে এখানে আনার কোন পথ ও নেই।
বইটার দিকে তাকিয়ে বড় একটা শ্বাস ফেললো।

চলবে,,,,,,,

#THE_BOOK

#পর্ব_৭

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

প্রিতমের অফিসের ওয়েটিংরুমে বসে আছে লাবন্য। কারণ হলো গত দুদিন ধরে প্রিতম লাবন্যর ফোন ধরছে না মেসেজের রিপ্লাই ও করছে না। যার জন্য প্রিতমের সাথে দেখা করতে এসেছে লাবন্য। আধঘন্টা অপেক্ষা কথার পর প্রিতম আসলো। প্রিতমকে দেখেই লাবন্য উঠে দাঁড়ালো মুখে হাসির রেখা টেনে প্রিতমের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই প্রিতম হাত উঠিয়ে লাবন্যকে থামিয়ে দিলো। তারপর বলল,”এখানে কেন এসেছো??”

লাবন্য অবাক হয়ে বলল,”দুদিন ধরে তুমি আমার ফোন ধরছো না। মেসেজের রিপ্লাই করছো না কি হয়েছে তোমার??”

প্রিতম খানিকটা রেগে বলল,”এই প্রশ্ন তো আমার তোমাকে করা উচিৎ। কি হয়েছে তোমার?? এভাবে আর কত?? তুমি কি কিছু বুঝতে পারছো না??”

“দেখ প্রিতম,,,”

“কি দেখব হা?? এভাবে তো তিনবছর কেটে গেল। বাড়ি থেকে আমাকে বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে আমি আমাদের সম্পর্কের কথা সবটাই বাসায় জানিয়েছি। কিন্তু তুমি?? তুমি কি করেছো?? তোমার বাড়ির সবাইও জানে তবুও তুমি এরকম করছো কেন??কি এমন হয়েছে তোমার যে এখন বিয়ে করতে চাইছো না??”
“প্রিতম তুমি বুঝতে পারছো না আমি একটা,,,”

প্রিতম লাবন্যর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,”সমস্যা হয়েছে তাই তো??বা কোন কাজ পড়ে গেছে?? এভাবেই তো তিনবছর কাটিয়ে দিলে আর কতো??দেখ তোমার প্রফেশন নিয়ে আমি কোন আপত্তি করিনি।হ্যা আমার পরিবারের এতে আপত্তি আছে সেটাও আমি মানিয়ে নিয়েছি কিন্তু তুমি কি করছো??
দুই পরিবারের সব ঝামেলা মিটে যাওয়া সত্বেও তুমি রাজি হচ্ছো না। তাই আমি ঠিক করেছি আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ। তুমি তোমার মতো থাকো আমি আমার মতো।”

লাবন্য এবার অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। প্রিতম এতো সহজে কথাগুলো বলে দিলো কিভাবে?? লাবন্যর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তেছে। লাবন্য প্রিতমের হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে বলল,”প্রিতম আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আর তুমিও আমাকে ভালবাসো। সেটা আমরা খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু বিশ্বাস করো এবার আমি সত্যি অনেক বড়ো ঝামেলায় পড়েছি। আমার ফ্রেন্ড অভিনব খুব অসুস্থ। ওর অবস্থা খুব খারাপ। আমি এই মুহূর্তে বুঝতে পারছি না আমি কি করবো?? একদিকে তুমি আরেকদিকে অভিনব।”

প্রিতম নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল,”তোমার কাছে তো তোমার বন্ধুরাই সব। আমার কোন প্রয়োরিটি আছে তোমার কাছে??”

“প্রিতম আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। তেমন অভিনব,রা’দ,পূর্ণাশা ওরা আমার বন্ধু। আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি। প্লিজ আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা করো।”

প্রিতম লাবন্যর দিকে তাকালো না কারণ ওর চোখের পানি দেখলেই প্রিতম গলে যায়। এখন গলে গেলে হবে না ওকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রিতম থমথমে গলায় বলল,”কিন্তু আমার মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবাসো না।”
“কিভাবে প্রমাণ দিতে হবে বলো??”

“আমি কি কোন প্রমাণ চেয়েছি তোমার কাছে??”
লাবন্য হুট করেই প্রিতমকে জড়িয়ে ধরল।লাবন্যর এহেম কাজে খানিকটা ভড়কে গেল প্রিতম তবুও কিছু বলল না। লাবন্য তো কেঁদেই চলেছে। প্রিতম আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না কারণ এই মেয়েটাই যে ওর দূর্বলতা। লাবন্যর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,”আমি কি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি?? খুব ভালোবাসি যে তোমায়। আমার অভিমান টা তুমি আজও বুঝতে পারলে না।”

লাবন্য এবার খানিকটা হাসলো বললো,”আমি বিয়ে করতে রাজি। তবে অভিনব সুস্থ হোক তারপর। তাছাড়া রা’দ এখন দেশে নেই ইংল্যান্ড গিয়েছে। ও আসুক তারপর বিয়ের কথা হবে। বন্ধুদের ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতে বসি কিভাবে??”
প্রিতম যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। খুশিতে লাবন্যকে জড়িয়ে ধরল। লাবন্য জানেনা যে অভিনব কবে সুস্থ হবে??বা আদৌ সুস্থ হবে কি না তবুও প্রিতমকে মানানোর জন্য এটা বলছে।

………………….

ব্রুকউড কবরখানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রা’দ। কাঁধে ছোট একটা ব্যাগ তাতে ঐ বইটা রাখা আছে। ভেতরে ঢুকতে সংকোচ বোধ করছে রা’দ । না জানি ভেতরে গেলে আবার কোন ঝামেলায় পড়তে হয়?? তবে এবার দিনের বেলায় এসেছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ধীরপায়ে ভেতরে ঢুকলো রা’দ। ভেতরে গিয়ে দেখতে পেল সেখানে আরও কয়েকজন মানুষ আছে। তাদের মধ্যে তিনজন মহিলা আর পাঁচ ছয় জনের মতো পুরুষ। সাথে একজন ফাদার আছে। মহিলা তিনজন কাদতেছে সম্ভবত কেউ মারা গিয়েছে। এদের দেখে রা’দ ভড়কে গেল।যদি বই রাখতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়?? কিন্তু রা’দ একা এখানে আসতে ও ভয় পাচ্ছিল। লোকজন দেখে এখন একটু কম ভয় হচ্ছে।
রা’দ ভাবলো এদের চোখ এড়িয়ে কবরের পাশে বইটা রেখেই চলে যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ। রা’দ সেই কবরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো দুকদম এগিয়ে রা’দ আর এগোতে পারছে না। মনে হচ্ছে পা দুটো মাটির সাথে আটকে গিয়েছে।রা’দ শত চেষ্টা করেও আগাতে পারলো না। হঠাৎ মনে হল কেউ বুঝি ওর গায়ে আঁচড় কাটছে তার লম্বা নখ দারা। কিন্তু আশেপাশে তো কেউ নেই তাহলে??রা’দ আর নিতে পারছে না এসব। একটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল রা’দ।

চোখ খুলে নিজেকে একটা রুমে দেখলো রা’দ। ও কোথায় আছে তা কিছু বুঝতে পারছে না। রুমের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ও বুঝতে পারলো যে এটা একটা খ্রিস্টান মন্দির। রুমের ভেতর থাকা ছবি আর জিনিসপত্র গুলো সেসবই বলছে। রা’দকে উঠতে দেখে একটা মেয়ে দৌড়ে বাইরে চলে যায়। তার একটু পরেই ফাদার আসলো রুমে।ফাদারের বয়স সম্ভবত ষাটের ঘরে হবে??তিনি রা’দের সামনে চেয়ারে আরাম করে বসলো। রা’দের দৃষ্টি এখনো ফাদারের দিকে।ফাদার কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,”ইউ স্টোলেন দ্যা বুক??”

রা’দের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ও বইটা চুরি করেছে মানে??আর সেটা উনি কিভাবে জানলেন?? নিশ্চয়ই ওর ব্যাগে দেখতে পেয়েছে। রা’দ আমতা আমতা করতে লাগলো। ফাদার একটু কেশে বলল,”ভাবছো আমি কিভাবে জানলাম??তোমার ব্যাগ কিন্তু আমি খুলে দেখিনি। দ্যা বুক স্পর্শ করার সাহস বা ইচ্ছা আমার নেই। কিন্তু তুমি সেই সাহসটা দেখালে কিভাবে??”

রা’দ অবাক হয়ে বলল,”মানে??আর আপনি আমার ব্যাগ না খুলেই জানলেন কিভাবে যে দ্যা বুক আমার কাছে আছে??”

“সেটা তোমার অবস্থা দেখেই বুঝেছি।”

“আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না একটু খোলাসা করে বলবেন কি??”

ফাদার একটু চুপ থেকে আবার বলল, “সবকিছু জানা সত্ত্বেও দ্যা বুক কেন চুরি করেছো??”
রা’দ কোন উওর দিলো না। ফাদার আবার বলল,”দ্যা বুক পড়ে পাঁচজন মারা গেছে এটা নিশ্চয়ই জানো তারপরও কেন নিজের মৃত্যু নিজে থেকে ডেকে আনলে।”

রা’দ অস্ফুট স্বরে বলল,”মৃত্যু??”

“হ্যা মৃত্যু। কারণ এই বইটা কোন সাধারণ বই নয়। এই বইয়ের অপর নাম মৃত্যু দুয়ার। তুমি সবটা না জেনে নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছো।”

“আমি এই বই সম্পর্কে সবটা জানতে চাই।প্লিজ বলুন।”

“কতজনকে এই গল্প শুনিয়েছি। আজকে আবার শোনাতে হবে।”
ফাদার উঠে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলেন তারপর পুনরায় নিজের আসনে বসে বলতে শুরু করলেন,”দ্যা বুক হলো একটি অভিশপ্ত বই যার কারণে পাঁচজন মারা গিয়েছে।তারা আমার কাছ থেকে এই বই সম্পর্কে সবটা জেনেও বিশ্বাস করেনি ফলে তারা মৃত্যু বরণ করেছে। এই বইটাকে তৈরি করেছে বব হেনরি যিনি একজন ব্ল্যাক ম্যাজিকার ছিলেন।আজ থেকে বহু বছর আগের ঘটনা। বব হেনরির বাবা ও একজন ব্ল্যাক ম্যাজিকার ছিলেন। অনেক মানুষকে তিনি ব্ল্যাক ম্যাজিক করে মেরে ফেলতেন তার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা পেতেন। কিন্তু বব তার বাবার কাজ একদমই পছন্দ করত না। তাই বব বেশিরভাগ সময় মায়ের সাথেই থাকতো।মায়ের স্নেহে বব বড় হয়ে উঠলো। ববের বয়স তখন ষোল।কিশোর বয়সে বব হেনরি এক কিশোরীর প্রেমে পড়লো। প্রথমে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল কিন্তু বব তার প্রেমে পড়ে গেল। বব মেয়েটাকে তার মনের কথা জানায় কিন্তু মেয়েটি তা মানতে নারাজ। সে ববকে নিজের বন্ধুর থেকে বেশি কিছু মনে করে না এসব বলে। এক পর্যায়ে দুজন ঝড়গা করে যার ফলে ওদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

বব এসব মানতে পারে না। ফলে মানসিক রোগে ভুগে। তারপর বব সিদ্ধান্ত নেয় কালো জাদুর সাহায্যে ও মেয়েটাকে ওর বশে আনবে। তাই বব ওর বাবার কাছে যায় ব্ল্যাক ম্যাজিক শিখতে। ওর বাবা খুশি মনে ববকে ম্যাজিক শেখায়। কিন্তু ছোট থাকায় ব্ল্যাক ম্যাজিক ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে না বব। যার কারণে ও মেয়েটাকে ভালোভাবে বশে আনতে পারেনি যার ফলে মেয়েটা মারা যায়। এতে বব অনেক ভেঙে পড়ে। রাগ ওর মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বব হেনরি খেলে উঠে এক নতুন খেলা। বাবার মতোই হয়ে যায়। পুরোদমে ব্ল্যাক ম্যাজিক শিখে মানুষকে টাকার বিনিময়ে মারতে লাগলো বব।

কিন্তু তারপরও অন্য এক চিন্তা ববের মাথায় এলো। নিজেকে সে পৃথিবীর বুকে অন্যতম ব্যক্তি করতে চাইলো। তাই সে একটি বই তৈরি করলো যার নাম দিলো “”THE BOOK”” এই বইটা এমন ভাবে তৈরি করলো যে, এই বইটা যে বা যারা পড়বে তাদের কথা এই বইতে লেখা হবে। তবে শুধু তার বিপদ সীমা পর্যন্ত লেখা হবে এই বইতে এবং তা ঘটবেও কিন্তু এই বিপদ থেকে তাকে নিজেকেই বাঁচতে হবে। অনেকে ভেবে থাকে এটা ভাগ্য গণনার বই। কিন্তু ভাগ্য গণনা তো শুধু সৃষ্টিকর্তা করেন।”

ফাদার এটুকু বলে চুপ করে গেলেন। রা’দ কৌতুহল হয়ে বলল,”তারপর??”

ফাদার হাসলেন তারপর আবার বলতে লাগলেন,”পৃথিবীতে অশরীরীর অভাব নেই তবে তারা বেশির ভাগ তাদের জীবন নিয়েই থাকে। বব হেনরি সেইসব অশরীরী দের ধরে এই বইতে বন্দি করে রাখে। এই বইটা যে পড়বে তার পিছনে এই বইতে বন্দি থাকা কোন এক অশরীরী তার পিছনে পড়বে তার ক্ষতি করার জন্য। আর তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা ওই ঘটনা ওই বইতে লেখা হয়।
এই কারণে বব হেনরির প্রতি আত্মারা এখনো ক্ষেপে আছে। তারা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে আরো হিংস্র হয়ে উঠেছে। ওই বইটা যে পড়বে তার উপর সেই ক্ষোভের কারণে আক্রমণ করে। এর আগে যেই পাঁচজন বইটা পড়েছিল তাদের ওই অশরীরী রাই মেরেছে। তারপর তাদের গল্প ওই বইতে লেখা হয়েছে। এরপর আবার বইটাকে হেনরির কবরে রাখা হয়েছে। তুমি ওই বইটা নেওয়ার পর ওই বইয়ে থাকা সব গল্প মুছে গেছে কারণ ওখানে নতুন করে তোমার গল্প লেখা হবে।”

রা’দ এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে ফাদারের কথা শুনছিলো। শুষ্ক ঠোঁট দুটো জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে বলল,”এর থেকে বাঁচার কি কোন উপায় নেই??”

“তোমাকে লড়াই করে বাঁচতে হবে।”

“কিন্তু ওদের সাথে লড়াই করা অসম্ভব। মানুষ কি করে একজন শক্তিশালী অশরীরীর সাথে লড়াই করবে??”

ফাদার একটা বড় শ্বাস ফেলে বললেন,”মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এটা হয়তো তুমি জানো??
গায়ের শক্তির থেকে মানুষের বুদ্ধির শক্তি বেশি। মানুষ ইচ্ছা শক্তি দিয়ে কতকিছু না করতে পারে তাহলে অশরীরীদের সাথে পারবে না কেন??এই কথাগুলো আমি আগের সবাইকে বলেছিলাম। তারা বইটা পড়ার পর আমার কাছে সাহায্য চাইতে আসে কিন্তু আমি কি সাহায্য করবো??তারা বুদ্ধির সৎ ব্যবহার করতে পারেনি যার পরিণাম মৃত্যু হয়েছে। তবে তোমার ও ওইভাবেই মৃত্যু হবে। তা আমি নিশ্চিত। তবে তুমি যদি বুদ্ধি দিয়ে ওই শক্তির সাথে মোকাবেলা করতে পারো তবেই তুমি বাঁচতে পারবে। তুমি যদি ওই বইটা পড়ে নিজের জিবন বাঁচাতে পারো তবে এই বইয়ের সব আত্মারা মুক্তি পাবে। ক্লোজ হয়ে যাবে দ্যাই বুক। অভিশাপ মুক্ত হবে আর কারো প্রাণ যাবে না। এখন তুমি কি করবে ভেবে দেখ?? মরবে নাকি মারবে??”

রা’দের মাথা কাজ করছে না।একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে ওদের চারজনের লাইফ রিক্সে।চারজনেই মৃত্যু দুয়ারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখান থেকে বেঁচে ফেরার রাস্তাটা যে দূর্গম। এই ভয়ংকর রাস্তা ওরা কিভাবে পাড়ি দেবে?? তাহলে কি বাকি পাঁচজনের মতোই ওদের মৃত্যু হবে??এটাই কি ওদের ভাগ্যে লেখা ছিলো?? আল্লাহ কি এটাই চান??
রা’দের মাথায় এখন চিন্তা ওরা কিভাবে বাঁচবে??শেষ চেষ্টা তো করতেই হবে।

রা’দ ফাদারকে বলল,”আমরা চার বন্ধু এই বইটা পড়েছি তারমধ্যে একজনের বিপদ অলরেডি এসে গেছে। বইতে আমরা সেটাই পড়েছি। আমার বন্ধুর অবস্থা ভালো না তাই এই বইটা রাখতে এসেছিলাম।”

ফাদার কিছুটা অবাক হলেন বললেন, “চারজন!!! কিন্তু এর আগে যারা বইটা নিয়েছিলেন তারা এক এক করেই নিয়েছিলেন। কিন্তু,,,,,,”

“কিন্তু কি???”

“তোমার বন্ধু যদি নিজের গল্প শেষ করে বেঁচে যায় তাহলে তারপর বাকি তিনজনের মধ্যে থেকে একজনের গল্প উঠবে ওই বইতে। কিন্তু যদি সে বাঁচতে না পারে তাহলে তোমার ওই বন্ধুর ও মৃত্যু হবে। মোটকথা চারজনের মধ্যে যেকোন একজন মরলে চারজনকে মরতে হবে। আর একটা কথা তোমার বন্ধুর পিছনে যেই অশরীরী পড়েছে সে শুধুমাত্র তোমার বন্ধুকেই আঘাত করবে। বাকি তিনজনকে আঘাত করার রাইট তার নেই। আমার মনে হয় তোমরা পারবে। চারজন মিলে ওদের সাথে লড়তে পারবে।”

ফাদার রা’দের কাঁধে হাত রেখে বলল,”গুড লাক। তোমরা চেষ্টা করে দেখ পারো কি না??”

রা’দের মাথায় সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকার পর রা’দ ফাদারের দিকে তাকিয়ে বলল,”আপনি কি মারমেইড সম্পর্কে জানেন????”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here