The_boss
Part:17
Aarizona Ella
ঢাকায় ফেরার পর যে যার মতো তাদের বাড়ি ফিরে গেলো,সব মিলিয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয়েছে ফিরতে। প্রথমে মায়া ভেবেছিলো ইয়ানা সিলেটে থাকে আর সে ইলমাজের বাড়ি বেড়াতে এসেছে কিন্তু পরক্ষণেই মায়ার ভ্রম ভাঙ্গলো আর জানতে পারলো যে ইয়ানাও ঢাকার তাই একসাথে ফিরেছে৷।।
রাত ৯ টা প্রায় খুবি ক্লান্তি অনুভব করছে ইলমাজ,বিছানায় বেশ কিছুক্ষন শুইয়ে থাকার কারনে বিরক্তি ও লাগছে তার।।তাই ভাবলো একটু ড্রাইভ করে মাইন্ড রিফ্রেশ করে আসা যাক।।
ইলমাজ শার্ট গায়ে দিয়ে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লো।।
সবসময় মায়ের ঔষধের কথা মনে পড়ে রাতেই বেলায়।।সারাদিন খেয়াল কোথায় থাকে আল্লাহ জানেন,?অবশ্যই আমিই তো ছিলাম না তাই রাতে বলেছে,,কিন্তু মা সবসময় এমন করে?আর ভাই,আস্তো একটা গন্ডার সবসময় কামচুরি করে।। ঔষধের প্যাকেট হাতে রাস্তায় এলোপাথারি হাটছে আর নিজে নিজেই বক বক করছে।।।
রাস্তার মাঝখানে হাটার কারনে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠলে মায়া চেচিয়ে একসাইডে এসে দাড়াঁয়,কারটা কিছুদুর গিয়ে আবার পিছনে ব্যাক করে মায়ার সামনে এসে দাড়াঁলো।।
মায়া চমকে তাকিয়ে আছে গাড়িটির দিকে,গাড়ি থেকে ইলমাজকে বের হতে দেখে মায়া আবারও টাস্কি খেয়ে গেলো।।
গাড়ি থেকে বের হয়ে মায়াকে বলতে লাগলো,,
একটা মানুষ এর কমনসেন্স এতটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকে তা তোমাকে না দেখলে কখনোই জানতাম না।।(ইলমাজ)
ম,,ম,,মানে কি স্যার?( মায়া)
মানে,রাস্তার মাঝখানে এমন করে কি ভেবে হাটছিলে?জুরাসিক পার্ক ভেবে??এটা বাংলাদেশ ভাগ্যিস, আমি ছিলাম,অন্য কেউ হলে এতক্ষনে স্মরনীয় শহীদদের নামের সাথে মায়া আজহারিকে ও স্মরন করতো।।(ইলমাজ)
ন,না মানে স্যার আসলে রিক্সা পাচ্ছিলাম না তাই মেজাজ বিগড়ে গেছিলো ?আমতা আমতা করে বললো মায়া।।
হুম,,,একটা ব্যাপার বুঝি না,,রেলি করো নাকি প্রায় সময় রাস্তায় দেখা যায় কেন তোমাকে? (ইলমাজ)
স্যার আসলে মায়ের মেডিসিন নিতে গেছিলাম,ফেরার সময় রিকশা পাচ্ছিলাম না তাই হাটতে হাটতে এতটুকু চলে এসেছি।(মায়া)
সবসময় রাতেই লাগে মেডিসিন??(ইলমাজ)
স্যার সারাদিন বিজি থাকি,রাতেই সময় পায় তাই রাতেই ওটা কাজে লাগাই।।?(মায়া)
গাড়িতে বসো,আমি বাসায় পৌছে দিচ্ছি।।(ইলমাজ)
কিন্তু স্যার,,,,(মায়া)
চুপচাপ বসো।।মায়াকে থামিয়ে দিয়ে বললো ইলমাজ।
মায়া আর কিছু না বলে পিছনের সিটে বসতে যাবে এমন সময় ইলমাজ ধমক দিয়ে উঠলো।।
ওখানে বসতে যাচ্ছো কেন?আমি কি ড্রাইভার নাকি??(ইলমাজ)
মায়া ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে গাড়ির দরজা ধরে ইলমাজের দিকে তাকিয়ে আছে।।।
কি সমস্যা দাঁড়িয়ে আছো কেন?(ইলমাজ)
মায়া তারাতাড়ি সামনে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে গিয়ে বসলো।। ইলমাজ ড্রাইভিং করা স্টার্ট করলো।।
সে ড্রাইভ করছে আর বার বার মায়ার দিকে তাকাচ্ছে।। ইলমাজের এভাবে তাকিয়ে থাকাটা মায়ার কাছে খুব সংকোচজনক মনে হচ্ছে।।মায়া হাল্কা গলা ঝেড়ে ইলমাজকে বলতে লাগলো,,
স্যার এটা বাংলাদেশ,, সামনের দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকালে এবার স্মরনীয় শহিদদের নামের সাথে আমাদের দুজনের নাম ও স্মরন করা হবে।।?(মায়া)
মায়ার এমন কথায় ইলমাজ থতমত খেয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনযোগ দিয়ে বলতে লাগলো,,
আমার চয়েজ এতটা বাজে না তা আগেও বলেছি,তোমার নাকের একপাশে কালি লেগে আছে ওটার দিকেই লক্ষ করছিলাম।।(ইলমাজ)
কি???!!?!!!!কোন দিকে???চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো মায়া।।
ইলমাজ আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো।।মায়া তার অনুসরণ করে নাকের একপাশে হাত দিয়ে মুছে জিজ্ঞেস করলো,,
এখন ঠিক আছে স্যার?(মায়া)
হুম,ইলমাজ আড়চোখে তাকিয়ে জবাব দিলো।।
বাড়ির লোকেশন?? মায়াকে জিজ্ঞেস করলো।।
মায়া হাত দিয়ে তার বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দিলো।মায়ার বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো।।মায়া গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।
ইলমাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে,,ড্রাইভিং সিটের জানালার পাশে গিয়ে মায়া ইলমাজকে বলতে লাগলো,,
স্যার,আমি জানি না বলা উচিত হবে কিনা কিন্তু না বলাটাও মানানসই না,,
ইলমাজ ভ্রু কুচকে সিরিয়াস মুড নিয়ে মায়ার কথার দিকে মনযোগ দিলো,,
স্যার আমি জানি আপনি অনেক বড় আর স্বনামধণ্য একজন লোক, আপনি এখানে পা রাখার মতো যোগ্যতা ও আমাদের নেই,,এরপর ও বলছি যদি একবার ঘরে আসতেন মা অনেক খুশি হতো।।।
মায়ার এমন কথায় ইলমাজ যেনো আকাশ থেকে পড়লো,মন খারাপ হয়েছে আবার রাগ ও লাগছে মায়ার উপর।। ইলমাজ রাগে গাড়ির গিয়ারে হাত রাখে সামনের দিকে তাকালো।।।
ইলমাজের এমন রিয়্যাকশন আর কথার কোন রেস্পন্স না পেয়ে মন খারাপ করে বলতে লাগলো,,
সরি স্যার আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যায় করানোর জন্য।। আল্লাহ হাফেজ।।বলা মাত্র মায়া তার ঘরের দিকে এগুতে লাগলো।। গাড়ির দরজা বন্ধের আওয়াজ পেয়ে মায়া আবার ফিরে তাকালো।।ইলমাজ গাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিকেই আসছে দেখে মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইলমাজের দিকে।।ইলমাজ মায়ার সামনে এসে দাড়াঁতেই মায়া আবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ইলমাজের দিকে।।
বাসায় আসার জন্য ইনভাইট করেছো,আর না নিয়েই চলে যাচ্ছো?(ইলমাজ)
মায়া হেসে বললো,,
অবশ্যই স্যার আপনাকে স্বাগতম বলে মায়া হাটতে লাগলো আর ইলমাজও তার পিছে পিছে যেতে লাগলো।।
দরজায় বেল দিচ্ছে মায়া প্রায় দু তিনবার বেল দেয়ার পর ঝাড়ু হাতে দরজা খুললেন মায়ার মা,হাপাচ্ছেন তিনি।
মায়ের হাতে ঝাড়ু দেখার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলো না মায়া।।ইলমাজও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।।?
মা,আমাকে ঝাড়ু দিয়ে স্বাগতম করছো তুমি??(মায়া)
তোর ভাইয়ের জ্বালায় আর পারছি না,জ্বীনে ধরেছে তাকে তাই ঝাড়ু দিয়ে একটু ঝেড়ে দিচ্ছিলাম।।রাগান্বিত স্বরে বললো মায়ার মা।
ইলমাজ প্রায় বেকুবের মতো তাকিয়ে আছে।।এমন পরিস্থিতিতে মায়া লজ্জায় পড়ে গিয়েছে,বসের সামনে এমন কিছু হবে তা মেটেও আশা করে নি মায়া।
মা শান্ত হও,আমার অফিসের বস এসেছে,বিড়বির করে মাকে বললো মায়া।।
মায়ার মা তড়িঘড়ি ঝাড়ু মেঝের একপাশে রেখে দরজার বাহিরে হা করে তাকিয়ে আছে।।
আম,ম,,মা ইনি আমার অফিসের বস,,রিক্সা পাচ্ছিলাম না,রাস্তায় দেখা হয়েছে তাই স্যার আমাকে এখানে ড্রপ করতে এসেছিলেন।।
মায়ার মা একগাল হেসে বলতে লাগলো,,
বাবা ভিতিরে আসো না প্লিজ।।
ইলমাজ মাকে হ্যালো বলে ভিতরে প্রবেশ করলো।।
স্যার বসুন আমি এক্ষুনি আসছি।।মাকে সাথে করে ভিতরে চলে গেলো মায়া।।
মা,উনি অনেক সম্মানিত একজন লোক, ভাই কে বলবে যেনো উনার সামনে কোন তামাশা না করে,সতর্কীকরন করে সামনের ঘরে চলে গেলো মায়া।।
মায়াকে দেখে ইলমাজ বলতে লাগলো,,
মায়া আমি এবার আসি,অনেক লেট হয়ে গেছে।।
স্যার এককাপ চা তো খেতে পারেন?আমি চা ওতো মন্দ বানায় না(মায়া)
ওকে বাট বি কুইক প্লিজ।।(ইলমাজ)
অফকোর্স স্যার,,স্বাচ্ছ্যন্দের সাথে সোজা কিচেনের দিকে চলে গেলো মায়া।।
প্রায় দশ মিনিট পর চা নিয়ে ইলমাজের সামনে হাজির হলো মায়া।।
ইলমাজ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই মুখ থেকে একটা এলাচি বের করলো, ?,আবার চুমুক দিতেই একটা দারচিনির টুকরা বের করলো, পরের চুমুকে ছোট একটা আদার টুকরো মুখ থেকে বের করে মায়ার দিকে তাকালো?,,মায়া অসহায়ের মতো ইলমাজের দিকে তাকিয়ে জিহবায় কামড় বসিয়ে রেখেছে।।
চা বানাচ্ছো ভালো কথা,ছেকে নেয়াটা কি বারন?(ইলমাজ)
সরি স্যার চা ছাকনি পাচ্ছিলাম না?(মায়া)
পাচ্ছিলে না যেহেতু এতগুলো মশলা দেয়ার দরকার ছিলো? (ইলমাজ)
স্যার এটা স্পেশাল চা ছিলো,, (মায়া)
তাহলে মরিচের গুড়ো,হলুদের গুড়ো,আর লবন বাদ রাখলে কেন?তা ও দিয়ে চা টা কে স্পেশালের শেষ সিমান্তে পৌছে দিতে ।(ইলমাজ)
সরি স্যার?(মায়া)
ইলমাজ আড়চোখে তাকিয়ে নিজের হাসি কনট্রোল করার চেষ্টা করছে,।
আর বেশিক্ষণ থাকলে হাসি আটকে রাখতে পারবো না,তাই সময় থাকতে কেটে পড়ি।।মনে মনে বললো ইলমাজ।
চা সব একঢোকে গিলে সেখান থেকে কেটে পড়লো ইলমাজ।।
স্যার কোথায় যাচ্ছেন,সরি স্যার চেচিয়ে বলতে লাগলো।।
ইলমাজ গাড়িতে হাতে হেলান দিয়ে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে।
চলবে।।
অনেকে বলছেন তাদের লাভ জার্নি কখন শুরু হবে?তাদের উদ্দেশ্যে বলছি গল্পের সেটিং ঠিক না রেখে আমি যা পআরি তা দিয়ে গল্প শেষ করে দেই।।এর বেশি কিছু বলার নাই।।যারা বুঝার তারা একটা শব্দে বুঝে আর যারা না বুঝার তাদের রচনা লিখে দিলেও বুঝবে না।।ধন্যবাদ।।