?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part: 02,03
02
রাতে ডাইনিং এ পাশাপাশি বসে আছে হিয়া উজান,তাদের পাশে গোল হয়ে বাকি সবাই বসে যে যার মতো খাচ্ছে,বাসবি এসে হিয়ার পাতে ভাত তুলে দিয়ে মুরগী তুলে দেয়,আর উজানের জন্য নিয়ে আসে একটা খুবই পাতলা দেখে রুটি আর এক গাদা সবজি,আর তা দেখেই হিয়ার চোখ এখন চড়কগাছে
হিয়াঃ এতো পাতলা রুটি খেয়ে উনি সারারাত কাটাবেন,তাও আবার একটা,মামিই তো আমাকে এর চাইতে মোটা রুটি টা খেতে দিতো,এনার তো দেখছি সব কিছুই কিরকম অদ্ভুত,নীলিমা আপু এনাকে বিয়ে না করে ভালোই করেছে,আবভাব যে রকম বেরসিক তেমনি খাবার দাবারো রঙচটা হুহ?
নিজ মনে কথা গুলো বলতে বলতেই হিয়া হুট করে ভীষম খেয়ে বসে,আর হিয়াকে মাথা চাপড়ে খুক খুক করে কাশতে দেখে উজান নিজে থেকে জগ থেকে জল ঢেলে হিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়
উজানঃ আস্তে খাও,কেউ তোমার জন্য কোথাও অপেক্ষা করে নেই যে,যার জন্য এরকম তাড়াহুড়ো করে বাচ্চাদের মতো সবটা খেতে হবে,ইডিয়ট
হিয়াঃ হুম
বাসবিঃ আহা এতে এতো বকার কি আছে,ভালো ভাবে বললেও তো পারিস কথা গুলো___(হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে)নে মা এবার ধীরে সুস্থে সব টা খেয়ে শেষ করতো দেখি,আমি আছি তোর পাশে বসে
হিয়াঃ ঠিক আছে
বাসবিঃ হিয়া
হিয়াঃ জ্বী আন্টি
বাসবিঃ কাল তুই উজানের সাথে একবার মার্কেটে গিয়ে ঘুরে আসবি,বিয়েটা এমন ভাবে হয়েছে না আমরা তোকে ঠিক মতো কিছু দিতে পেরেছি না তোর মামু আমাদের থেকে কিছু নিবে বলেছে,কিন্তু তুই তো তোর জামা কাপড়ের ব্যাগই নাকি ফেলে এসেছিস শুনলাম জিনি বললো তখন,,,,,ওসব তো লাগবে নাকি কিছু হলেও,তাই কাল উজান এখন তোকে নিয়ে একবার ঘুরে যা যা লাগবে তোর,সব কিনে নিয়ে আসবে কেমন
বাসবি আর কিছু বলার আগে উজান উঠে দাঁড়ায়,উজানের ঔ একটা রুটি গেলা এই মিনিট এক এই শেষ
উজানঃ আমার সময় নেই মা কাল অফিসে আমি অনেক ব্যস্ত থাকবো,আমি পারবো না
কথা টা বলেই উজান ওর রুমে চলে যায়,বাসবি কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়া বাসবির হাত ধরে বাসবি কে থামিয়ে দেয়
হিয়াঃ ওনাকে আপনি জোর করবেন না আন্টি,জোর করে কোনো সম্পর্ক তৈরি হোক আমি চাই না,আমি বলেছি কাল চিএা এসে আমার জামাকাপড় দিয়ে যাবে আমাকে,আপনি ওসব নিয়ে একদম ভাববেন না
______________________
রাত বারোটার কাছাকাছি
উজান বিছানায় বসে ল্যাপটপে অফিসের কিছু ফাইল চেক করছিলো,কাল পেজেন্টেশন আছে আর অফিসের হেড হওয়াতে এখন সব দায়িত্ব তার উপর,,,,হিয়া এতোক্ষণ জিনিয়ার সাথে ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো কিন্তু উজানের সে দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই সে নিজের কাজ করা নিয়ে ব্যস্ত,,,,জিনি চলে গেলে হিয়া রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে উজানের পাশ থেকে একটা বালিশ টেনে হাতে নিয়ে পাশে থাকা সোফা টায় রাখবে বলে এগুতে ধরে আর তখনি উজান হিয়াকে থামিয়ে দেয়
উজানঃ তুমি বিছানায় ঘুমোও,আমি সোফাতে গিয়ে শুচ্ছি
হিয়াঃ আপনি?,,,,সোফাতে গিয়ে ঘুমোবেন,,,কোনোদিন ঘুমিয়ে ছিলেন সোফাতে
উজানঃ সো হোয়াট,এটা কি এমন হাতিঘোড়া কাজ যে আমি পারবো না
হিয়াঃ নিজের হাইট সম্পর্কে কোনো ধারনা আছে আপনার,কি করে ভাবলেন এতোটুকু সোফাতে আপনি এটে যাবেন
উজানঃ (সোফার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে)তাতে কি আই উইল ম্যানেজ
হিয়া আর কিছু না বলে মুখে হালকা করে হাসি টেনে সোফায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে উল্টোদিকে ফিরে শুইয়ে পড়ে
হিয়াঃ এটা আপনার অফিসের ফাইল না যে ম্যানেজ বললাম আর ম্যানেজ করে ফেললাম,এটা রাতের ঘুম,সারাদিন অফিসে কাজ করবার জন্য যেটা আপনার খুব দরকার,আর তাছাড়া গ্রামে আমার বিছানা টা এই সোফারি সমান দৈর্ঘ্য প্রস্থ সব দিক দিয়ে,তাই আমার কোনো অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না
কথা গুলো বলেই হিয়া ওর গায়ে জড়ানো ওড়না টা আর একটু টেনে টুনে ঠিক করে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
_____________________
রাত তিনটে আচমকাই হিয়ার ঘুম টা ভেঙে যায় আজ,আসলে হিয়ার ঘুম খুবই পাতলা আশেপাশে অল্পকিছুর হালকা শব্দেও ঘুম থেকে উঠে পড়ে সে,রুমের মধ্যে অন্ধকার,নীল রঙের ডিম লাইট টা জ্বললেও আলোর তেজ কম,ব্যালকুনির দরজা ভেদ করে এক সরু বাহিরের আলো এসে পড়ছে ঘরের এক কোণে,হিয়া উঠে পাশে থাকা পানির গ্লাস টা থেকে পানি খাবে বলে কিন্তু গ্লাস টা হাতে ধরতেই হিয়ার কানে আসে কারো কান্নার শব্দ,শব্দ শুনেই বোঝা যাচ্ছে খুব সর্তকভাবে কাঁদছে কেউ,এপাশ ওপাশ তাকাতে থাকে হিয়া,এতো আবছার মধ্যেও বিছানার দিকে তাকাতেই হিয়া খেয়াল করে উজান বিছানায় নেই,হিয়া কিছু বলে ডাকতে যাবে ওমনি খেয়াল করে কান্নার শব্দ টা ব্যালকুনি থেকে আসছে,হিয়া দ্রুত পায়ে কিন্তু সাবধানে ব্যালকুনির গেটের কাছে দৌড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থমকে যায়,উজান কাঁদছে খুব কাঁদছে অনেক অনেক অনেক সর্তকভাবে কাঁদছে
হিয়ার মন টা মুহুর্তে কি রকম টুকরো হয়ে আসে,সময় পেড়ুতে থাকে উজানের কান্না থামে না,উজান সেই এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে তো কাঁদছেই
হিয়াঃ উনি এ-র কম করে কাঁদছে কেনো,নীলিমা আপুর জন্য,,ওনার এই চোখের জলের জন্য আমি দায়ী নয় তো,আমি কি ওনাকে বিয়ে করে ওনার কষ্ট টা আরো বাড়িয়ে তুলেছি,,নিজেকে এতো অপরাধী মনে হচ্ছে কেনো আমার,,আমিও তো বিয়ে টা করতে চাই নি,,পরিস্থিতির চাপে পড়ে,,,,,,,একটা মানুষ কি করে একটা মেয়েকে এতো টা ভালোবাসতে পারে!!নীলিমা আপু কেনো ওনাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো উনি তো আপুকে খুব ভালোবাসেন তাহলে
আপন মনে কথা গুলো ভাবতে থাকে হিয়া,উজান এবার ওর কান্না থামিয়ে আলতো করে চোখ মুছে যেই রুমে ঢুকবে বলে পেছনে ফিরবে ওমনি দুম করে ধাক্কা লাগে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার সাথে,আর উজানের হাতের কনুই গিয়ে লাগে হিয়ার কপালের মাঝ বরাবর চোখের সামনে
হিয়াঃ আউচচ(কপালে হাত ধরে)
উজানঃ হোয়াট দা,কি করছো এখানে দাঁড়িয়ে তুমি,এখনো ঘুমোওনি কেনো
হিয়াঃ আপনি কাঁদছিলেন?
উজানঃ তাতে তোমার কি
হিয়াঃ কার জন্য কাঁদছিলেন,আপুর জন্য
উজানঃ দ্যাটস নান ওফ ইউর বিজনেস,দাড়িয়ে না থেকে যাও শুতে(ঝারি দিয়ে)
হিয়াঃ যাচ্ছি যাচ্ছি,এরকম চেঁচানোর কি আছে হু
_____________________
ছাঁদের এক কোণে দাঁড়িয়ে কাপড় মেলছিলো হিয়া,কাপড় মেল ছিলো বললে ভুল হবে,তার সব কাপড় মেলে দেওয়া শেষ এখন সে ফাঁকা বালতি হাতে ধরে দাঁড়িয়ে বিশাল আকাশ দেখায় ব্যস্ত
আবীরঃ হিয়া
হিয়াঃ কে,,ও আবীর দা,,কেমন আছেন
আবীরঃ ভালো তুমি
হিয়াঃ ভালো
আবীরঃ কি ফাঁকা বালতি হাতে,কাপড় নেড়ে দিলে বুঝি
হিয়াঃ হুম
আবীরঃ কেনো কান্তাদী কি আজো কাজে আসে নি নাকি
হিয়াঃ না না এসেছে,বিয়ের পর যা ছুটি নিলো,আজ না এলে না মা ওনাকে বাদই দিয়ে দিতো,,,,আসলে মাঝেমধ্যে নিজের টুকিটাকি কাজ গুলো নিজে করে নেওয়া ভালো কি বলেন
আবীরঃ তা ঠিক,অবশ্য তোমার হাসবেন্ড ও ঠিক এই ন্যাচারের ছোট থেকে দেখতাম নিজের কাজ গুলো নিজ হাতে করতেই বেশি লাইক করতো
হিয়াঃ হুম,,আপনি এমন করে বলছেন যেনো আপনি ওনাকে খুব ভালো করে চিনেন
আবীরঃ সে তো চিনিই,,,,ওসব না হয় অন্য এক দিন গল্প করবো,তা কিসে পড়ছো মার কাছে শুনলাম তুমি উজানের অনেক ছোট
হিয়াঃ আট বছরের ডিফারেন্সকে কেউ ছোটই বা বলে কি করে বলুন
হিয়ার কথায় আবীর হেঁসে দেয়,হিয়াকে দেখতে যতোটা ছোট লাগে হিয়ার কথা বার্তা মাঝেমধ্যে বড়দের কেও হার মানিয়ে দেয়,আবীর হিয়ার কথার মাঝে ছাঁদে আসে উজান আর আবীর কে হিয়ার পাশে ওভাবে গল্প করতে দেখে প্রচন্ড রেগে উঠে,হিয়া আবীরের থেকে বিদায় নিয়ে নিচে চলে আসে,ছাঁদের গেটে যে উজান দাঁড়িয়ে এতে হিয়ার কোন মাথা ব্যাথা নেই
উজানঃ হিয়ার সাথে কি এতো কথা তোর,হিয়া আমার ওয়াইফ কথা টা ভুলে যাস না
আবীরঃ তুই নিজে মানিস তো হিয়া তোর ওয়াইফ
আবীর একটা সিগারেট ধরিয়ে রেলিং এর ধারে বড় সিড়ি টায় বসে উজানের দিকে সিগারেট টা বাড়িয়ে দেয়
আবীরঃ খাবি
উজানঃ দেখ আবীর,হিয়া এখনো অনেক ছোট ওর ভালো মন্দ বোঝার বুঝ এখনো হয় নি,সো প্লিজ হিয়ার থেকে দশ হাত দূরে থাকবি নয় তো আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না
আবীরঃ তোর কথা আমি শুনতে বাধ্য নাকি,হিয়াকে আমার মনে ধরেছে,পছন্দ করি আমি হিয়াকে কি করবি তুই
উজানঃ আবীর(গম্ভীর গলায়)
আবীরঃ হিয়াকে এখন অবধি স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারিস নি না পারছিস ওদিকে নীলিমা কে ভুলতে,তাহলে আমি হিয়ার দিকে হাত বাড়ালে তোর সমস্যা টা কোথায়,নাকি দু নৌকোতে পা দিয়ে চলতে চাইছিস ঘরে হিয়া বাহিরে নীলিমা….!!!!
উজানঃ (সপাটে আবীরের কলার ধরে) আমাকে কি তোর নিজের মতো মনে করিস নাকি,হিয়াকে আমি ওয়াইফ হিসাবে স্বীকৃতি দেই বা না দেই তোকে যেন আমি হিয়ার আশেপাশে না দেখি ইটস মাই লাস্ট ওয়ার্নিং
আবীরের কলার ধরে আবীরকে হালকা ছুঁড়ে ফেলে উজান নিচে নেমে আসে,হিয়া তখন সবে স্নান করে এসে ওর চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছছিলো,উজান এসে না হিয়াকে কিছু বলতে পারছে না চুপ করে এক জায়গায় স্থির থাকতে পারছে
উজানঃ আবীরকে চেনো তুমি
হিয়াঃ আমাকে বলছেন (আনমনে)
উজানঃ এ ঘরে নিশ্চয় তুমি ছাড়া অন্য কেউ এ মুহুর্তে উপস্থিত নেই
হিয়াঃ হ্যা চিনি,চিনি বললে ভুল হবে আপনাদের এখানে এসেই পরিচিত,(কপালে টিপ পড়তে পড়তে)আপনাদের পাশের ফ্লাটেই তো থাকে,সেদিন মা নিয়ে গেলো ওনাদের বাড়িতে তখন আলাপ,আর তাছাড়া
উজানঃ তাছাড়া
হিয়াঃ সেদিন মার্কেটেও মা আর আমার সাথে উনি আর ওনার মাও গিয়েছিলেন ওখানেই ওনাদের সাথে সময় কাটানো এই যা
উজানঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে আয়নাতে হিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে) আবীরের থেকে একটু দূরে থাকবা,যেতো টা পারা যায় কম কথা বলবা ঠিক আছে
হিয়াঃ ঠি-ক আ-ছে (বোকার মতো)
?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part: 03
আজ রাতে অফিস থেকে ফিরতে প্রায় রাত ১১টা হয়ে আসে উজানের,এসেই কোনোমতে দু লোকমা খেয়েই উজান কিসব হার্ডবোর্ড,স্লাইড ইত্যাদি নিয়ে ফ্লোরে বসে একটা বাড়ির ডিজাইন তৈরি করতে শুরু করে,হিয়া ওর সোফায় বসে পুরো মনোযোগ টা উজানের কাজের দিকে রাখে,কতো সুন্দর আর সাবলীল হাতে উজান বাড়িটার ডিজাইন তৈরি করছে,দেখলে যেনো মনে হয় এ-র কম হাজার টা ডিজাইন উজান এক হাতে নিমিষে তৈরি করতে পারবে,রাত ২টো হয়ে আসে উজানের এখনো কাজ বাকি,কিন্তু হিয়ার চোখে চলে আসে রাজ্যের সব ঘুম,উজানকে দেখতে দেখতেই কখন যে ঘুমে ডুবে যায় হিয়া,,,,,,উজান একবার হিয়াকে দেখে নিয়ে আবার মন দেয় নিজের কাজে,রাত তখন তিনটে ডিজাইনের শেষ ফিনিশিং টানতে এখন দরকার তুলা টাইপ কিছুর,উজান পুরো রুম খুঁজে কিন্তু তুলো টাইপ কিছুই ওর চোখে আসে না,খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎই চোখ পড়ে আয়নার পাশে টেবিল টায় সাজিয়ে রাখা একটা পুতুলের উপর,উজান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে পুতুল টার দিকে তারপর আর কিছু না ভেবে পুতুল টা হাতে নিয়ে পুতুল টা চিড়ে তুলো বের করে ওর কাজ হাসিল করে নেয় মুহূর্তে,হঠাৎই ব্যালকুনি দিয়ে দমকা হাওয়া আসাতে পাশে রাখা বাকি সব তুলো উড়ে গিয়ে ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে নিমিষে,কিন্তু তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই উজানের,সে নিজের মতো তুলো নিয়ে কাজ করতে থাকে দ্রুত হাতে,রাত প্রায় চারটের দিক সব কাজ মিটিয়েই উজান দুম করে শুইয়ে পড়ে বিছানায়,সকালে আবার আটটায় অফিসে ডিউটি আছে ওর
সকাল এখন সাত টা চল্লিশ,ঘুম থেকে উঠেই উজান দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে স্নান করবার জন্য,,,ওদিকে হিয়া তখনো ঘুমে,ওয়াশরুমে স্নান করার শব্দে ঘুম ভেঙে আসে হিয়ার,আর ঘুম থেকে উঠেই হিয়া এখন হতবাক!!
নিজের প্রিয় পুতুল টাকে ফ্লোরে ওরকম নির্মম ভাবে পড়ে থাকতে দেখে হিয়া অবাক,মনে হচ্ছে কেউ পুতুল টার বুক চিড়ে দিয়ে তার ভেতর থেকে সব কিছু বের করে দিয়ে সেটাকে আবার ফ্লোরের উপর ছিন্নবিচ্ছিন্ন ভাবে ছিটিয়ে রেখেছে,নিজের পুতুর এরকম ছিন্নায়িত অবস্থা দেখে হিয়া ওখানেই মর্মাহত হয়ে ফুঁসতে শুরু করে,কে করলো তার পুতু টার সাথে এরকম নির্মম অত্যাচার,হিয়া আর ভাবতে পারে না পুতুল টার আর যা একটু বাকি আছে সেটা হাতে ধরেই শুরু হয় তার চিৎকার আর কান্না,উজান এই মুহুর্তে স্নানে,হিয়ার চিৎকার আর ওরকম বিচ্ছিরি কান্না শুনেও সে বের হতে পারছে না,এদিকে দৌড়ে রুমে আসে বাসবি আর জিনি
বাসবিঃ কি হয়েছে হিয়া মা,এরকম কাঁদছিস কেনো,,,,এগুলো কি ঘরে, তুলো দিয়ে এরকম ভরে আছে কেনো
জিনিয়াঃ কিসের তুলো এগুলো,,,হেই মেয়ে,,,,হিয়াদী কি হয়েছে এরকম চোখের জল নাকের জল এক করছো কেনো,,কেউ কিছু বলেছে আবার
হিয়াঃ (বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিয়ে)মাআআআ আমার পুতুউউউউউ,,,,,??
বাসবিঃ পুতুউউ!!হ্যা আছে তো পুতু,,কি হয়েছে
জিনিয়াঃ এক সেকেন্ড এই তুলো গুলো কি তোমার পুতুল টার হিয়াদী!!
হিয়া টপাটপ মাথা ঝাকিয়ে আবার ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করে,এর মধ্যে উজান কোনোরকম গায়ে পানি টা ঢেলে তোয়ালে হাতে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়,উজানের অগোছালো ভেজা শার্ট আর মুখে জমা জল দেখেই বোঝা যাচ্ছে হিয়ার জন্য তার স্নান টা ঠিক মন মতো হয় নি আজ
হিয়াঃ (কাঁদতে কাঁদতে)এই লোক টা এই লোক টা আমার পুতু টাকে খুন করেছে,,,মাআআআ দেখো এই লোক টা,,,মেরে দিয়েছে আমার পুতু টাকে,,,তোমার ছেলে মা,তোমার ছেলে খুন করে দিয়েছে আমার পুতুটাকে রে,,ওরে আমার পুতু রে কি হয়ে গেলো তোর রে,,,,,,,,,আমি আমি এনার নামে থানায় মামলা করবো,,আমি এই লোকটাকে জেলে পাঠাবো,,আপনি আমার পুতু টাকে কি করে এভাবে খুন করে দিলেন,,আমার পুতু টার কতো কষ্ট হয়েছে,পুতু টা আমার খুব লেগেছে না তোর,,পুতু রে আমার পুতু রে
হিয়ার এই কুমিরের কান্নায় বাসবি আর জিনি মুখ টিপে হেঁসে দিলেও উজান বোকা হয়ে যায়,সামান্য একটা পুতুল ছিঁড়েছে দেখে হিয়া এ-র কম বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছে সিরিয়াসলি,,মার্কেটে কি আর পুতুল কিনতে পাওয়া যাবে না নাকি আজব!!
বাসবিঃ কাঁদে না মা আমার,আমি তোকে আরেকটা পুতু কিনে দেবো ঠিক আছে
হিয়াঃ নাআআ মা আমার তো এই পুতু টাই লাগবে,,আমি ছোট থেকে এই পুতুকে নিয়ে খেলেছি
বাসবিঃ (হিয়ার চোখ মুছে দিয়ে) ঠিক আছে তুই তুলো গুলো জড়ো কর এক জায়গায় দেখি আমি তোর পুতু টাকে সুস্থ করে দিতে পারি নাকি
হিয়াঃ সত্যি পুতু টাকে তুমি সারিয়ে দিবে বলছো,,পুতু টা সুস্থ হলে ওটা এখন থেকে জিনির ঘরে থাকবে হ্যা নাহলে এই লোক টা আবার আমার পুতু টাকে খুন করে দেবে
বাসবিঃ দেবে না মা,আমি বকা দিয়ে দিচ্ছি আমার রাজা কে,ও আর তোর পুতু ধরবে না,রাজা
উজানঃ হোয়াট মা?
বাসবিঃ কেনো করেছিস তুই মেয়েটার পুতুল টার সাথে ওরকম
উজানঃ যা করেছি বেশ করেছি,ছোট নাকি ও, পুতুল দিয়ে খেলার বয়স আছে ওর
বাসবিঃ আ হা ও কি খেলে নাকি,এমনি তে ঘরে সাজিয়ে রাখে
উজানঃ হ্যা সাজিয়ে রাখে তো দোকানে আর পুতুল নেই নাকি,একটা পুতুলের জন্য এরকম বাচ্চা দের মতো
বাসবিঃ আচ্ছা হয়েছে,অফিস যাবি তো,আমি তোর সকালের নাস্তা টা বাড়ছি টেবিলে, আয়,,জিনি আয়
বাসবি আর জিনি চলে গেলে উজান গেট লাগিয়ে হিয়ার পাশে ডেসিং এ গিয়ে দাড়িয়ে শার্টের কলার ঠিক করতে শুরু করে,হিয়া তখনো পুতুল টার তুলো গুলো হাতে তুলে তুলে পটলা করে নিজ মনে কেঁদে কেঁদে কিসব বিড়বিড় করতে থাকে তো থাকে
হিয়াঃ আমার পুতু টা,,খুব লেগেছে না তোর,না জানি কি কি দিয়ে ছিঁড়েছে তোকে,,সব বের করে দিয়েছে না,পুতু টা আমার,,ইসস কতো কষ্ট হয়েছে,,কোনো মায়া নেই লোক টার মনে,,আমি আর কখনো আমার কোনো জিনিস লোক টাকে দেবো না,কখনো না
হিয়ার এরকম নাক টেনে টেনে বিড়বিড় করতে থাকায় উজান এবার খুব বিরক্ত হয়ে যায়,হাত থেকে চিরুনি টা থুয়ে সপাটে এসে হিয়াকে কাবাডের এক কোণে ঠেস দিয়ে চিপকে ধরে,হিয়ার হাত থেকে পটলা করা সব তুলো উড়ে গিয়ে পড়ে উজান হিয়া দুজনের গায়ে,
উজানঃ কি হয়েছে হ্যা,কি করেছি আমি,সামান্য একটা পুতুল এর জন্য এরকম বাচ্চা দের মতো বিহেভ কেনো করছো তুমি?
হিয়াঃ ওটা সামান্য পুতুল নাআআ ওটা আমার পুতুউউউ?
উজানঃ সো হোয়াট,বাজারে এরকম হাজার টা পুতু কিনতে পাওয়া যাবে
হিয়াঃ আমি ছোট থেকে এই পুতু টাকে নিয়ে খেলি,এটা আমার প্রিয় পুতু?
উজানঃ খেলো মানে টা কি,ছোট তে খেলেছো খেলছো এখন তুমি বড় হোওনি নাকি এখনো ছোট্টই আছো কোনটা?কদিন পর কলেজে পড়বা এখন এসব পুতুল নিয়ে খেলা মানায় তোমাকে??
হিয়াঃ আমি খেলি না তো,শুধু সাজিয়ে রাখি
উজানঃ সাজিয়েও রাখবা না,,দেখি বাকি পুতু টা দেও আমাকে,কুইক
হিয়াঃ না আমি দেবো না,,এটাকে আমি সুস্থ করে তুলবো,প্লিজ আপনি আমার পুতু টাকে আঘাত করবেন না আর
উজানঃ আঘাত করবো না মানে,আর পুতুল কি অসুস্থ হবার জিনিস যে তুমি ওকে সুস্থ করবে,নিজে তো একটা ইডিয়ট সাথে এবার আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে??
উজান রাগে হিয়ার হাত থেকে বাকি পুতুল টা নিয়ে হাত দিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ব্যালকুনির ঝুড়ি টায় গিয়ে ফেলে আসে,উজানের এই কান্ডে হিয়া এবার পুরো ক্ষেপে গিয়ে উজানের বুকে,হাতে পিঠে ইচ্ছে মতো খামচি আর মার দিতে শুরু করে
হিয়াঃ কেনো কেনো করলেন এটা আপনি,যেটুকু বাঁচানোর আশা ছিলো সেটাও আপনি টুকরো টুকরো করে দিলেন,কেনো কেনো করলেন আমার পুতু টার সাথে এরকম,আমি আমি এখন আপনাকে এরকম করে খামচি দেই দেখুন তো লাগে নাকি
উজানঃ হিয়া শান্ত হও,কি করছো,,,আরে,,,আরে হিয়া আমার শার্ট ছিড়ে যাবে,,,,হিয়া স্টপ,,,হিয়া আমার হাতে লাগছে
হিয়াঃ লাগুক,আমার পুতু টাকে আঘাত দেবার সময় মনে ছিলো না ওরো আঘাত লাগতে পারে,,আজ তো আমি আপনাকে খামচি দিয়ে দিয়ে রক্ত বের করে দেবো
উজানঃ হিয়া জাস্ট স্টপ,,,হিয়া কথা শুনো আমার,,হিয়া কি করছো
উজান হিয়াকে থামতে বলে কিন্তু হিয়া শুনে না,নিজ ইচ্ছে মতো খামচি দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে উজানের পুরো হাত,শেষে উজান হিয়াকে থামাতে না পেরে এক হাত হিয়ার মুখের কাছে আলতো করে ধরে আর এক হাত দিয়ে হিয়াকে খুব জোরে সপাটে ওর একদম বুকের খুব কাছে টেনে নেয়,উজানের এতো কাছে এসে হিয়ার লাফালাফি তোতোক্ষনে বন্ধ হয়ে যায়
হিয়াঃ কি করেছেন আপনি,,ছা ছাড়ুন আমাকে
উজানঃ এতো সাহস কোথা থেকে আসে তোমার,নীলিমারো সেম তোমার মতো জেদ ছিলো কিন্তু ওকে চুপ করতে বললে সে চুপ হয়ে যেতো,,কিন্তু তুমি কি করছো,,আমাকে একটুও ভয় লাগে না তোমার
হিয়াঃ ভ ভ ভয় কেনো লাগবে,আপনি কি বাঘ না ভা ভাল্লুক
উজানঃ (হিয়াকে সজোরে আরো একদম কাছে টেনে ধরে,উজানের নিশ্বাস গিয়ে পড়তে শুরু করে হিয়ার পুরো মুখ জুরে)এখন ভয় করছে না
হিয়াঃ কি করছেন আপনি,আমাকে ছাড়ুন প্লিজ,আমি কিন্তু এবার মা কে ডাকবো,ছাড়ুন আমাকে
উজানঃ হ্যা ডাকো,যতো ইচ্ছে ডাকো,কি বলবে ডেকে
হিয়াঃ বলবো আপনি আমার সাথে জোর করে অসভ্যতামি করেছেন হ্যা
উজানঃ হাসবেন্ড বলে কথা করতেই পারি,মাকে গিয়ে বলতে পারবে তো সে কথা
হিয়াঃ আপনি কিন্তু খুব খারাপ করছেন হ্যা,আমি কিন্তু এবার আপনাকে
উজানঃ আমাকে
হিয়াঃ আপনাকে
উজানঃ আমাকে
হিয়াঃ আমি কিন্তু আপনাকে কামড় দিয়ে দেবো,ছাড়ুন বলছি
হিয়ার কথায় উজান হিয়ার হাত দুটো আরো শক্ত করে পেচিয়ে ধরে,হিয়া এতো চেষ্টা করে কিন্তু ছাড়াতে পারে না,শেষে হিয়া কোনো উপায় না দেখে সত্যি সত্যি উজানের একটা হাতে সজোরে কামড় বসিয়ে দেয়,কিন্তু এতে উজানের তেমন ভাবগতি হয় না,উজান এক দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে,হিয়া ওর গায়ের সব জোর দিয়ে কামড়ে ধরে আছে উজানকে,চোয়ালের সব শক্তি গিয়ে বিধছে উজানের হাতে,কিন্তু উজানের কোনো ব্যাথা নেই,সে তখনো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
___________________
অফিসে মিটিং রুমে পাশাপাশি বসে আছে উজান অভিক আর সন্ধি,অনিক গিয়ে দাড়িয়ে ওদের নেক্সট প্রজেক্টের ব্যাপারে আলোচনা করছে,উজান প্রথমে আলোচনা টা মন দিয়ে শুনলেও হঠাৎই আলোচনার মাঝে মনে পড়ে যায় হিয়ার সেই ফ্লোরে বসে বাচ্চাদের মতো কান্নার ঘটনা টা,হিয়া কি রকম নাকের জল চোখের জল এক করে পুতু পুতু বলে হাপিত্যেশ করে কেঁদে যাচ্ছিলো,মনে পড়তেই উজান অন্যমন্সক হয়ে হাসতে শুরু করে তবে সেটা নীরব হাসি,সন্ধি উজানের দিকে তাকাতেই খেয়াল করে উজান হাসছে,খুব হাসছে,দেখে সন্ধি একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে আজ কতোদিন পর সে উজানের মুখে এই হাসি টা দেখলো!!
অনিকঃ স্যার,,স্যার কিছু বলুন,,স্যার কোনটা করলে বেটার হবে,,স্যার
উজানঃ হ্যা,,কি জানি বলছিলে
অনিকঃ স্যার সুইমিং টা কোথায় করলে বেটার হবে বাহিরে লনে না বাড়ির ভেতরে
উজানঃ হ্যা তুমি ঔ দুটো ডিজাইন ই সামনে রাখো,ক্লাইন্ডদের যেটা ভালো লাগবে ঔ ডিজাইন টা দিয়েই প্লান টা করে নিও
অনিকঃ ঠিক আছে স্যার
মিটিং শেষ হলে সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,শুধু থাকে অভিক আর সন্ধি,অভিক অভিকের ফাইল গোছানো নিয়ে ব্যস্ত,সন্ধি উজানের দিকে চেপে এসে উজানের কাঁধে মাথা দিয়ে হাসতে হাসতে
সন্ধিঃ কামড়াকামড়ি ভালোই চলছে তাহলে আজকাল যা দেখছি?
উজানঃ হোয়াট কামড়াকামড়ি সন্ধি
সন্ধিঃ এই যে তোমার হাতের Love Bite ইসস কি হিংস্রাত্ক ভাবে কামড়েছে রে হিয়া তোকে?
উজানঃ (সন্ধির কথায় উজান ওর হাত টা সামনে এনে আরো ভালো করে খুতে দেখে,সত্যি কামড়ের দাগ টা কি রকম গোল হয়ে গভীর ভাবে এখনো চোখে ধরা দিচ্ছে) তোকে কে বলেছে এটা ঔ পিচ্চি টা কামড়দিছে
সন্ধিঃ পিচ্চি টা!!অঅঅওওও?কি কিউট নাম ,,,তোর মুখের হাসি দেখেই বুঝতে পেরেছি এটা ঔ পিচ্চিটারররর ই কাজ
উজানঃ তোর কাজ নেই আর না,কি সব উল্টো পাল্টা ভোগাস জিনিস নিয়ে কথা বলছিস,ভুলে যাস না অফিসে আমি তোদের সব কটার বস ঠিক আছে
সন্ধিঃ একদম আমাকে বসগিরি দেখাতে আসবি না,কুত্তা,,হু
__________________________
রাত এখন আট টা,ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হিয়া,আর ভাবছে এই কটা দিনে কি কি হয়ে গেলো তার জীবনে,,ভাবতে ভাবতে সময় ফুরিয়ে আসে,হিয়া কখনো বা আকাশ দেখছে কখনো বা নিচে তাকাচ্ছে,উজান আজ আসতে এতো দেড়ি করছে কেনো!!
উজান আসে ঠিক সাড়ে নয়টার দিকে,রুমে ঢুকে ব্যাগ টা থুইয়েই হিয়ার দিকে এগিয়ে দেয় একটা ছোট্ট ব্যাগ,যে টায় আছে হিয়ার পুতু টার মতো একটা ছোট্ট পুতু,পুতু টা হাতে নিয়ে হিয়া থমকে যায়,উজান যে ওর জন্য পুতু আনবে সেটা ও কখনোই আশা করে নি,কিন্তু এই পুতু দিয়ে যে হিয়ার মন ভরবে না এটা হিয়া বুঝে গেছে শুধু এই পুতু কেন দোকানের সব চাইতে দামী পুতু দিলেও তার মন যে ভরবে না এটা সিউর
উজানঃ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই এই পুতুল টা আমি তোমার জন্য কিনেছি,তোমাকে দেবার মতো এতো সময় নেই আমার,,,সন্ধি মার কাছ থেকে সকালের ইন্সিডেন্ট টা শুনে তোমার জন্য কিনে পাঠিয়েছে,,সময় হলে ওর সাথে একবার কথা বলে ওকে একটা থ্যাংকস দিয়ে দিও
হিয়াঃ তাই বলি,ইনি কিনে আনবে আমার জন্য পুতুল,,হু,,সকালে যা করলো
হিয়া পুতু টার সাথে একটা ছোট কার্ড ও পায় ব্যাগে যেখানে সন্ধি হিয়াকে ছোট্ট করে থ্যাংকস লিখে দিছে
হিয়াঃ আপু আমাকে এ-র কম হঠাৎ থ্যাংকস কেনো দিলো!!!!