The_Colourful_Fragrance_Of_Love? Part:16

0
1636

?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part:16

দুদিন পরঃ

আজ জিনিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ আর হিয়ার একরকম কান্নামাখা অনুরোধে উজান আজ ছুটি নিয়ে বাড়িতে আছে,,ওদিকে অভিককে পাঠিয়ে দিয়েছে আজকে কাজ গুলো যেনো সে সামলে নেয়,,

হিয়াঃ আ হা কি হচ্ছে টা কি,,অনেক কাজ আছে আমার,,ছাড়ুন নাআআ আমাকে

উজানঃ কোথায় আজ বরটা ছুটি নিয়ে সারাদিন বাড়িতে আছে তাকে একটু সময় দিবে তুমি তা না করে তুমি কি করছো

হিয়াঃ আচ্ছা মুশকিল তো,,ছুটি বুঝি আপনি আমার জন্য শুধু নিয়েছেন আপনার বোনের জন্মদিনে কি আপনার দায় দায়িত্ব বলে সত্যি কিছু নেই

উজানঃ খুব বড় হয়ে গেছো যেনো দায় দায়িত্ব সব বুঝে বসে আছো

হিয়াঃ বুঝতে হয় না ওটা এমনি এসে যায়!!এখন প্লিজ ছাড়ুন আমাকে,,ওদিকে রুম সাজাতে হবে বেলুন গুলো ফুলাতে হবে,,পায়েস টা রান্না করা বাকি উফফ কতো কাজ,,এজন্য মা’কে বলেছিলাম সকাল সকাল শুরু করি কাজ গুলো তাহলে এতো সময় লাগতো না,,,আ হা ছাড়ুন না আমাকে

উজান রেগে গিয়ে হিয়াকে ছেঁড়ে দেয়

উজানঃ যাও ছাড়লাম খুশি এখন,,আর কখনো যদি ছুটি নিতে বলেছো না,,তুমি কান্নাকাটি করলেও আমি ছুটি নেবো না,যাও

হিয়াঃ আরে আপনি রাগ করছেন কেনো,,একটুপর সব মেহমানরা আসবে তাই জন্য তো আমি

উজানঃ আমি ব্যাখা চেয়েছি কোনো,,আমার সামনে আসবা না তুমি আর,,যাও এবার

হিয়াঃ না এনার সাথে এখন এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই,রাত হলে এমনিতেই আমার কাছে আসবে,থাকতে পারে নাকি আমাকে ছাড়া উনি হু,,এখন গিয়ে কাজ গুলো সেরে আসি রাতের দিকে ঠিক ওনাকে ম্যানেজ করা যাবে____এ-ই যে শুনছেন??

উজানঃ আবার কি চাই?

হিয়াঃ আমার কিছু চাই না,,ঔ য–দি জিনির কে–ক টা একটু কষ্ট করে নিয়ে আসতেন তাহলে আর কি

ব’লেই হিয়া এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে বাসবির কাছে গিয়ে একটা দম ছাড়ে,,

!
!
!

ড্রয়িংরুম টা সুন্দর মতো করে সাজিয়ে সবাই ব্যস্ত জিনিয়ার জন্মদিন টা সেলিব্রেট করতে,,হই হুল্লোড় গান বাজনা রকমারি খাবারের গন্ধ সব মিলিয়ে এক অন্য রকম আনন্দ আজ বাড়ির সবার মাঝে,,জিনির কেক টা কাটা হয়েছে এখন সে সবাইকে কেক খাইয়ে দিতে ব্যস্ত,,

জিনিয়াঃ না না আমি আমি মা’কে আগে কেক খাওয়াবো তারপর তারপর হিয়া ভাবিকে তারপর সন্ধি আপুকে,,, তোদের কেক নেই তোরা যা গিয়ে মুড়ি খা

বিহানঃ মনে থাকবে জিনি ম্যাডাম এরপর আবদার নিয়ে আসো শুধু আমার কাছে কোনো,দেখবো কে তোমার আবদার মিটিয়ে তোমাকে খুশি করে

জিনিয়াঃ কি ব্লাকমেইল করছে তোমার ছোট ছেলে দেখেছো মা,,,,ভাবি নেও এবার তুমি খাও

বাসবিঃ আচ্ছা হয়েছে এবার এই ছুঁচো দুটোকে খাইয়ে দে যে নজর দিচ্ছে পরে পেট খারাপ হয়ে গেলে তখন কি হবে

বিহানঃ কিসব বলছো মা তুমি এসব,,তুমিও মেয়েদের দলে যোগ দিয়ে দিলে তাই তো

হিয়াঃ আর খাবো না জিনি,,তুমি খাও এখন___মা আমি সবাইকে বাকি কেক টা কেটে প্লেটে করে বেড়ে এনে দিচ্ছি

বাসবিঃ আচ্ছা যা,,

সন্ধিঃ আন্টি তোমার উজানের বাচ্চা বউ কিন্তু দেখছি খুব দায়িত্বশীল হয়ে গেছে,,আসছি থেকে দেখছি নিজে নিজে সব করছে এক হাতে

বাসবিঃ কে বলেছে আমার হিয়া মা ছোট,,আমার হিয়া মা তো অনেক বুঝে

বাসবি আর সন্ধির কথায় উজান একটা নীরব হাসি দেয়,,মনে মনে এটাই ভাবতে থাকে যেই মেয়ে কে সে পিচ্চি পিচ্চি বলে এতো জ্বালাতন করে সে কি সুন্দর এক হাতে এখন সবটা সামলে নিতে পারে,,উজানের ভাবনার মাঝে জিনি এসে উজানকে কেক খাইয়ে দিতে থাকলে এমনি সময় অভিক এসে উজানকে ডাক দিতেই হাসিখুশি পরিবেশ টা নিমিষে স্তব্ধ হয়ে যায়!!

অভিকঃ উজান,,উজান একটু এদিকে দেখ,,উজান!!

উজানঃ এটা তোর আসার সময় হলো তুই না সেই কখন বললি যে কা________নী–লিমা!!

উজান স্তব্ধ উজানের সাথে স্তব্ধ সন্ধি বাসবি জিনিয়া থেকে শুরু করে যারা সবাই নীলিমা কে চেনে,, যারা জানে একটা সময় এই নীলিমা কে পাবার জন্যেই উজান কতোটা কি পাগলামি করেছে,,নীলিমাকে হারানোর শোকে এক বার না বারবার বারবার সে নিজেকে সে শেষ করে দিতে সুইসাইড এ্যাটেম্পট করেছিলো,

নীলিমাকে এভাবে এতোদিন পর কেউ আশা করে নি,,আশা তো দূরে থাক কেউ এটা কল্পনা করে নি এতোদিন পর নীলি এসে আবার এভাবে তাদের সামনে দাঁড়াবে,,

নীলির চুল বিধস্ত,,স্বাস্থ্যবতী গুলুমুলু মেয়েটার চেহারা শুকিয়ে একদম শরীর দেখা যাচ্ছে না,,কপালে একটা দীর্ঘ আঘাত পাওয়ার চিহ্ন ভেসে আসছে,,তার সাথে কানের একপাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে এক ফোঁটা রক্ত!!

উজানের শরীর কাঁপছে সাথে বাড়ছে হৃৎপিণ্ডের শব্দ,,উজান না এপাশে নড়তে পারছে না ওপাশে,,আর এদিকে নীলিমা সে তো এতোদিন পর তার অপূর্ণ ভালোবাসাটাকে পেয়ে চোখ দিয়ে খুশির পানি বের করছে,,কি করবে বুঝতে পারছে না,,এটা কি সত্যি,সত্যি সে তার উজানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে!!নীলিমা দিক বিদিক ভুলে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো উজানকে,,উপস্থিত সবাই হতবাক,,উজান কিছু বুঝতে পারছে না একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে,,নীলিমা উজানকে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলো,,নীলিমার চিৎকারে নিস্তব্ধ পরিবেশ টা নিমিষে ভরে উঠলো!!

নীলিমাঃ আমাকে খুঁজে নিতে তোমার এতো সময় লাগলো,,কোথায় কোথায় ছিলে তুমি এতোদিন উজাননন,,বলো কেনো এতো দেড়ি করলে তুমি আমাকে খুঁজতে,,আমাকে খুঁজে পেতে তুমি এতো টা দেড়ি কেনো করলে,,তুমি জানো,,তুমি তুমি জানো আমি ঔ বন্দী ঘরটাতে কি করে একা ছিলাম,,খুব খুব কষ্ট হতো আমার,,রোজ ভাবতাম তুমি আসবা তুমি এসে আমাকে মুক্তি দিবা,,দেখো আমার বিশ্বাস টা সত্য হলো তুমি সত্যি সত্যি আমাকে,,খুব মনে পড়তো তোমাকে খুব

নীলিমা উজানের বুক থেকে মুখ তুলে তার দু’হাতে উজানের মুখ বুলে দেয়

নীলিমাঃ কি হলো উজান তুমি আমাকে দেখে খুশি হওনি,,জানো অভিক যখন গাড়িতে আসতে আসতে আমাকে বললো তুমি তুমি নাকি আমার জন্য

নীলিমার কথার মাঝে হিয়া কেকের ট্রে হাতে ড্রয়িংরুমে আসতেই নীলিমা কে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে যায়,,

হিয়াঃ মা আমি কেক গুলো সব প্রিচে করে এনে_____নীলিমা–আপু!!

নিস্তব্ধতা পরিবেশ টা হিয়ার আগমনে আরো নিশ্চুপ হয়ে যায়,,সবাই যে যার জায়গায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে,,বাচ্চা গুলো হিয়ার কাছে ছুটে আসে কেক খাবো কেক খাবো বলে চিৎকার করতে থাকে,,হিয়ার হাত কাঁপতে থাকে,,এদিকে মাথায় আঘাত পেয়ে রক্ত আসাতে নীলিমা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না,,চোখে ঝাপসা দেখতে দেখতে সেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে ধরতে উজান সামলে নেয়!!

!
!
!

নীলিমা কে নিয়ে হসপিটালে আসার পর ডক্টর নীলিমার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়ে নীলিমার শরীরের কন্ডিশন দেখে নীলিমাকে একটা স্যালাইন দিয়ে দেয়,,নীলির কেবিনের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে অভিক তুষার সন্ধি সাব্বির হিয়া আর উজান,,অভিক এক এক করে বললো সে কি করে পেশেন্ট দের উপর তা’লাতে শিফট করবার সময় নীলিমা কে দেখতে পেয়ে ছুটে আসে,,নীলি অভিককে দেখতে পেয়ে দৌড়ে ছুটে আসতেই দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে মাথায় এই চোটটা পায়,,

এদিকে নীলিমার এই আসা টা কিছুতেই সন্ধি মেনে নিতে পারছে না,,কেনো আসলো নীলিমা এতোদিন পর ফিরে কি করতে আসলো সব ধ্বংস করতে,,সন্ধি চিৎকার করেই যাচ্ছে এদিকে হিয়া চেষ্টা করছে সন্ধিকে থামাতে!! আর সন্ধির ওরকম চিৎকারে নীলিমা কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে,,উজান সামনে থাকা সোফা টায় বসে মাথা নিচু করে রেখে কপালে দু হাত রেখে শুধু সবটা শুনছে!!

সন্ধিঃ যদি তোর ফিরে আসারই ছিলো তাহলে সেদিন কেনো তুই চলে গিয়েছিলি বল আমাকে,,সেদিন তো উজান তোর পরিবারের কাছে কম অপমান টা হয়নি,,শুধু কি উজান আন্টিকেও অবধি তোর পরিবার কথা শোনাতে ছাড়ে নি,,তুই সেদিন আন্টি আর উজানের অপমান দেখেও কি করে সবটা,,ছিঃ

নীলিমাঃ সন্ধি চুপ কর আমি আর পারছি না সহ্য করতে,,তো-রা তোরা আমাকে কিছু বলতে তো দিবি আগে,,আমার দিক টা তোরা কেউ দেখতে চাইছিস না কেউ না(হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে)

সন্ধিঃ কি দেখবো তোর দিকে তুই বলতে পারিস কি দেখবো,,তুই সেদিন কনের সাজে একটা অন্য ছেলে কে বিয়ে করবি বলে বসে ছিলি,,উজান তোর ভাইদের দেওয়া হাজার টা কষ্ট সহ্য করেও আন্টিকে নিয়ে তোর বাড়িতে গিয়েছিলো কিন্তু তুই বের হোসনি,,তুই কি বলেছিলি তখন উজান তুমি ফিরে যাও,,তুই কিন্তু চাইলে সেদিন সব টা ঠিক করতে পারতি নীলি কিন্তু তুই তা না করে

নীলিমাঃ সব তোদের কাছে এতো সোজা মনে হচ্ছে তাই না সন্ধি,,তুষারকে তো তুই ভালোবেসে বিয়ে করেছিলি কেউ যদি আজ তোকে তুষারের জীবন নাশের ভয় দেখায় তুই তুই পারবি সেটা সহ্য করতে পারবি বল,,পারবি না_____যেই লোক গুলো তাদের সম্মানের জন্য তাদের বাড়ির মেয়ে কে পাগলের তকমা দিয়ে একটা মেন্টাল এ্যাসাইলামে রেখে আসতে পারে সেই মানুষ গুলোই অন্য একটা ছেলের জীবন নিয়ে কিভাবে নোংরামি করতে পারে তোরা ভেবে দেখ শুধু একবার,,আমার ভাইয়ারা না উজানকে সেসময় খুন করতেও একবার ভাবতো না সন্ধি____!!!!

এবার বলতে বলতে নীলিমার সাথে সন্ধিও কেঁদে ফেলে,,সাথে হিয়া আর উজানের চোখ দিয়ে তো টপটপ করে পানি পড়ছেই কিন্তু কেউ কাউকে সেই কান্না গুলো দেখতে দিচ্ছে না!!

সন্ধিঃ উজান তো তোর জন্য মরতেও রাজি ছিলো নীলি,,মরে যেতি না হয় তোরা,,কি ক্ষতি টা হতো,,তোদের ভালোবাসা তোদের পাগলামি যখন এ-তোটাই গভীর ছিলো তখন তোরা মরে যেতি,,কি দরকার ছিলো এভাবে এখন এসে

নীলিমাঃ তোর মনে হচ্ছে সব টা সহজ সন্ধি কিন্তু আমি ঔ পরিস্থিতি দিয়ে গেছি আমি জানি তখন ঔ মুহুর্তে আমার মাথায় কতো কি ঘুরছিলো,,ভাইয়ারা আমাকে বাঁচিয়ে রেখে উজানকে শেষ করে দিতো,,উজানের কিছু হলে তো আমি এমনিতেও সেদিন!!!!____উজান যখন মা’কে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলো তখন ভাইয়া হাতে পিস্তল রেখে আমাকে কি বলেছিলো জানিস আমি যদি উজানকে এখন না বলি ওরা উজানকে তো শেষ করবে করবে সাথে আন্টিকেও ওরা____সন্ধি সন্ধি তুই বিশ্বাস কর আমার আমার না ওসময় খুব ভয় করছিলো ভাইয়া ভাইয়াদের তো তুই চিনিস ওরা কিরকম ভয়ানক তোরা তো সব নিজ চোখে দেখেছিস তাই জন্য না আমি তখন উজান আর আন্টিকে ওভাবে_______

এতটুকু ব’লেই নীলিমা আবার কান্নায় ভেসে যায়

অভিকঃ তাহলে তুই এ্যাসাইলামে কি করে এলি,,তোর তোর হাসবেন্ড কোথায়?

নীলিমাঃ হাসবেন্ড!!আমি তো বিয়ে করি নি অভিক!!!

নীলিমার কথায় সবাই থমকে গিয়ে নীলিমার দিকে তাকিয়ে উঠে,,উজান চোখ মেলে সামনে না তাকালেও অনেকটা কেঁপে ওঠে

অভিকঃ বিয়ে করিসনি মানে!!

নীলিমাঃ তোরা কি করে ভাবতে পারলি আমি উজানকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করবো,,আমি বিয়ে করি নি উজান তোমার নীলিমা তোমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে নি,,,,সেদিন উজানরা চলে আসার পর আমি আমি মা’কে বলে বিয়ে টা কোনোরকমে রাতে আয়োজন করার কথা বলি,,আমার ইচ্ছে ছিলো আমি আমি যে করে হোক এর মধ্যে পালিয়ে আসবো কারণ কারণ ওদিকে ভাইয়া আমার পার্সপোর্ট আমার সব সার্টিফিকেট আমার এনআইডি কার্ড যা সব ডকুমেন্ট ছিলো সব কেঁড়ে নিছে,,আমি উজানের সাথে চাইলেও বেশি দূর পালাতে পারতাম না,,তার উপর ছিলো না কোনো ফোন আমার কাছে না কোনো টাকা,,বাহিরে হাজার টা গার্ড দিয়ে ভর্তি পুলিশ ফোর্স,,,,____আমি হাজার চেষ্টা করেও পারিনি বাড়ি থেকে বের হতে তাই যখন বিয়ের জন্য আমাকে ডাকা হলো আমি তখন আমি আমি তখন____সুইসাইড করতে গিয়ে!!

নীলিমা আবার কান্নায় ভেঙ্গে গেলো,,নীলিমার সাথে এবার সবাই অঝোরে কেঁদে দিলো

নীলিমাঃ বাবা আমাকে দুই সপ্তাহ রুমের মধ্যে আঁটকে রেখে দিলো উনি ভেবেছিলো এরপর হয়তো আমি বিয়ে তে রাজি হয়ে যাবো কিন্তু যখন উনি দেখলো আমি তখনো উজানের জন্য পাগলামি করছি তখন উনি ইমার্জেন্সিতে আমাকে বড় আপুর কাছে কানাডায় পাঠিয়ে দিলো,,আমি যাবো না কিন্তু উনারা আমাকে তখনো উজানের জীবনের ভয় দেখিয়ে আমাকে জোর করে____একটা সময় কানডায় আমি সত্যি সত্যি নিজের মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করলাম,,ঠিক করলাম যখন আমি উজানেরই হতে পারবো না তখন এ জীবন রেখে আমি আর কি করবো____আমি চেষ্টা করতে থাকলাম নিজেকে কি করে শেষ করা যায়,,,,তুই বললি না উজান আমার দেওয়া কষ্ট টা সহ্য করতে না পেরে কতোকি করে মরতে গিয়েছিলো এই দেখ আমার হাত টা দেখ,,

নীলিমা ওর বা হাত টা বের করে ও হাত কেটে কেটে যেভাবে মরতে চেয়েছিলো সেই দাগের চিহ্ন গুলো সামনে মেলে ধরতেই সবাই একবার তাকিয়েই পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে নেয়

নীলিমাঃ আমিও না সেই কষ্ট গুলো সহ্য করতে না পেরে___কানাডায় আমি পুরো দুই সপ্তাহ সেন্স হারিয়ে একটা হসপিটালে ভর্তি ছিলাম তোরা সেই কষ্ট টা দেখিস নি,,তোরা শুধু কি করে আমাকে দোষী বানানো যায় তাই করছিস কিন্তু আমার দিক টা তোরা কেউ ভেবে দেখছিস না কেউ না___আমার ঔ সব পাগলামি মা সহ্য করতে না পেরে বাবাকে বুঝিয়ে আবার আমাকে দেশে নিয়ে আসলো,,আমি ভাবলাম সব হয়তো ঠিক হয়ে যাবে বাবা হয়তো একটু নরম হয়েছে কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম,,প্রথমবার যেই ছেলের সাথে আমার বিয়ে উনি ঠিক করেছিলো সেই ছেলে আমার এসব পাগলামি দেখে বাবাকে মুখের উপর না করে দেওয়াতে বাবার সম্মানে সেটা গিয়ে আরো আঘাত লাগে,,উনি আবার আমার বিয়ে ঠিক করলে আমিও আবার সেই পাগলামি শুরু করি,,আস্তে আস্তে একটা সময় আমি সত্যি আমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করি____আমার পাগলামির সীমা ছাড়িয়ে গেলে বাবা ভাইয়ারা তার মনের ক্ষোভ মেটাতে আমাকে এই এ্যাসাইলামের একটা ছোট্ট ঘরে____

সন্ধিঃ (কাঁদতে কাঁদতে) তুই তো আমাদেরকে একটা ফোন করতে পারতি নীলি!!

নীলিমাঃ করেছি তো আমি উজানকে ফোন কিন্তু আমার জানা উজানের সব নাম্বারই তো বন্ধ ছিলো!!___তোদের কারো নাম্বার তো কখনো আমার মুখস্থ করার দরকার পড়েনি তাই আমি করিনি,,কিন্তু উজানের যতোগুলো নাম্বার আমার মনে ছিলো আমি সব গুলোতে ট্রাই করেও সবসময় বন্ধ পেয়ে এসেছি__________বাড়িতে তো সুযোগ পেতাম না ছোট বোন টার থেকে ফোন এনে লুকিয়ে যেটুকু সুযোগ পেতাম ফোন করতাম কিন্তু যখনই ফোন করতাম আমি আর উজানকে পেতাম না____

নীলিমার কথায় সন্ধি ডুকরে কেঁদে উঠে কারণ নীলিমা কে হারিয়ে উজান যে সব পাগলামি শুরু করেছিলো সে সময়,সন্ধি তাই বাধ্য হয়ে উজানের থেকে ওর ফোন ল্যাপটপ সব কেঁড়ে নিয়ে নিয়েছিলো,,যাতে নীলিমা কে ভুলতে উজানের সুবিধে হয় কষ্ট টা কম হয়,,আর হিয়া আসার পর তো সন্ধি নতুন করে উজানকে সব সিম ফোন তুলে দেয়,,তাই তো নীলিমা হাজার চেষ্টা করেও উজানের সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি!!

নীলিমাঃ ঔ এ্যাসাইলামে একটা খালা ছিলো ওনাকে বলে আমি মাঝে মাঝে সুযোগ পেয়ে উজানের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করতাম কিন্তু আমি কখনোই আর উজানের নাম্বার গুলোকে,,,একবার তো আমি আমি আমার ছোট বোনকেও দিয়ে উজানের বাড়িতে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম কিন্তু ও আসতে গিয়েই ভাইয়ারা ওকে

নীলিমা আর বলতে পারে না আবার কেঁদে উঠে,,সন্ধিও কাঁদতে থাকে নীলির সাথে,,তুষার অভিক সবার চোখে পানি,,

নীলিমাঃ আমি পাগল না সন্ধি আমি পাগল না,,আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ উজানননন আমি পাগল না,,আমি পাগল না আমি পাগল না

হিয়াঃ আপ আপ–নারা এখন একটু শান্ত হোন,,আপু আপুর তো শরীর টা ভালো না ডক্টর বললো আপুকে রেস্ট করতে,,এরকম এরকম কান্নাকাটি করলে তো ওনার শরীর

হিয়া কি করবে বুঝতে পারে না,,হাত বাড়িয়ে নীলিমা কে ধরতে চেয়েও হাত নামিয়ে নেয়,,কাঁদতে কাঁদতে নীলির শ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে তুষার গিয়ে ডক্টর নিয়ে আসতে ডক্টর নীলিকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়,,

!
!
!

অভিকঃ তুই হিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দে,,নীলি ফিরে এসেছে তুই আর ওকে কষ্ট দিস না,,নীলির দিক টা একটু বুঝ

সন্ধিঃ একটা থাপ্পড় দেবো আমি তোকে অভি,কি বলছিস কোনো হুঁশ আছে তোর?

অভিকঃ হ্যা আছে নীলিমার জীবনটা কি তোদের কাছে ছেলে খেলা মনে হচ্ছে নাকি,,নীলিমা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে আমি চাই না নীলি আর কখনো__তুই কথা দে তুই নীলিকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিবি,,কথা দে আমায়,,তুই তুই নীলিকে কোনো কষ্ট পেতে দিবি না আর

সন্ধিঃ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস অভি,,তাহলে তাহলে হিয়ার কি হবে,,হিয়ার কি দোষ এখানে বলতে পারিস,,

অভিকঃ আমি জানি না হিয়ার কি হবে,,আমি শুধু জানি উজানের জন্য নীলি অনেক সাফার করেছে তাই এখন নীলির ভাগের ভালোবাসা নীলিকে দিতে উজান বাধ্য

সন্ধিঃ কি বাধ্য হ্যা কি বাধ্য,,আর হিয়া হিয়া যে উজানের বিয়ে করা ওয়াইফ তুই একবারো হিয়ার ভবিষ্যৎ টার কথা ভাববি না____

দুই এক কথায় অভিক আর সন্ধির তুমুল ঝগড়া বেধে যায়,,দু’জনের ঝগড়া তুমুল থেকে তুমুল হয়ে আসলে উজান এবার সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে ঝারি দিয়ে উঠে

উজানঃ তোরা কি একটু থামবি,,,,তোরা নিজেরা নিজেদের মতো যুক্তি দিয়ে যাচ্ছিস,,একদিকে নীলিমা কেবিনে শুয়ে আছে আরেকদিকে হিয়া চুপ হয়ে ওর দায়িত্ব গুলো করছে আর এদিকে এদিকে আমি আমার দিক টা একটু ভাববি না তোরা,,,কি চাইছিস কি আমি নিজেকে দু টুকরো করে হিয়া আর নীলিমার মাঝে ভাগ করে দেই?

অভিকঃ(উজানের কলার চেপে ধরে) তুই নিজেকে ভাগ করবি কি করবি না সেটা তোর ব্যাপার,,কিন্তু নীলিমার সাথে আর কোনো অন্যায় করলে আমি তোকে ছেড়ে কথা বলবো না উজান,,কখনো না?

বলেই অভিক উজানকে একটা ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়

সাব্বিরঃ এসব কি সন্ধি,,এটা ঝগড়া করার সময়___আর তুই তো জানিস অভিক নীলির প্রতি সেই ছোট বেলা থেকে একটু উইক তাই ও এভাবে রিয়াক্ট করছে,,একটু সময় দে অভিকে ও ঠিক ঠান্ডা মাথায় সব টা দেখবে

তুষারঃ অভিক নীলির প্রতি উইক না বল যে অভিক নীলিকে ভালোবাসে,,জাস্ট নীলি আর উজান রিলেশনশীপে ছিলো বলে ও কখনো সেটা প্রকাশ করে নি!!

সন্ধিঃ আচ্ছা এসব বাদ দে তোরা,,এখন ওসব বিষয় বলার সময় আসেনি,,ওদিকে যে হিয়া ওতো টুকুনি একটা মেয়ে কি যে যাচ্ছে ওর মনের উপর দিয়ে ঔ জানে____উজান(অস্ফুটে)

উজানঃ______

সন্ধিঃ আমাদের কথা বাদ দে তুই কি চাইছিস বল তো আমাকে,,,তোর মন কি বলছে??

উজানঃ (একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) নীলিমা আমার জীবন ছিলো সন্ধি আর হিয়া আমাকে একটা নতুন জীবন দিয়েছে,,আজকে নীলিমার এই অবস্থার জন্য কোথাও না কোথাও পুরোটা আমি দায়ী,,নীলিমা কে একটা সুন্দর জীবন দেওয়া যেমন আমার দায়িত্ব তেমনি হিয়ার সাথেও আমি কখনো কোনো অন্যায় বা অবিচার করতে পারবো না!!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here