the_unlimited_love❤️part_13
#writer_nusrat
রিংকিকে নিয়ে স্টেশন থেকে একটা গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম ওদের বাড়িতে৷রিংকির আম্মু আগে থেকেই জানতেন তাই তেমন রিয়েকশন করেননি আমাকে দেখে৷ রিংকি আমাকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে টেবিলে খাবার এনে দিলো৷ আমি খাবারটা খেয়ে সোফায় বসে পরলাম৷
কিছুক্ষণ পর রিংকির আম্মু এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন৷
“তোমার কী হয়েছে মা??এতো মনমরা দেখাচ্ছে কেন??
“না আন্টি তেমন কিছু হয়নি৷”
“দেখ রুহি আমি কিন্তু তোকে খুব ভালো মতে চিনি কিছু একটাতো হয়েছে তোর৷ নাহলে এভাবে ঘর সংসার ছেড়ে চলে আসলি কেনো??
“কোনটাকে তুই ঘর সংসার বলছিস?যেখানে কোনো ভালোবাসা নেই আছে শুধু একরাশ ঘৃণা আর অপমান”(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
“আমি জানিনা মা তোমার আর তোমার স্বামীর মধ্যে কী মনমালিন্য হয়েছে বাট এভাবে ঘর সংসার ছেড়ে চলে আসা একদম উচিৎ হয়নি৷”
“আমি জানি আন্টি এটা উচিৎ হয়নি৷ কিন্তু এখন যদি রিংকিকে ওর স্বামী ওর কথা না শুনে না যাচাই করে বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিতো তাহলেও কী আপনি এই কথাটাই বলতেন৷ ”
আমার কথা শুনে রিংকি আর ওর আম্মু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন৷
“তারমানে তোর স্বামী তোকে,,,
“হ্যা আমার স্বামী আমার কথা না শুনে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছে৷আর এটাও বলেছে কোনোদিন যাতে আমি তার সামনে না যাই৷আমি কী দোষ করেছি সেটা পর্যন্ত বলেনি৷কালকের রাত আমি আরেক ভদ্র মহিলার বাড়িতে কাটিয়েছি৷ উনার কাছে পেটের দায়ে খাবার চেয়েছি”৷ (কাদতে কাদতে)
“আচ্ছা আরুহি মা তুমি আমায় একটু খুলে বলোতো ঠিক কী হয়েছিলো৷”
আমি আন্টিকে সব খুলে বললাম৷ আন্টি আমার সব কথা শুনে বললেন,,,
“আচ্ছা মা তোমার এখানে যতদিন ইচ্ছা ততদিন থেকো৷ আমাদের কোনো আপত্তি নেই৷ রিংকি যেমন আমার মেয়ে তেমনি তুমিও তো আমার মেয়ে৷”
রাতে,,,????
আদিল রুমে বসে আছে আর কাদছে৷
“সোহানি আমার সঙ্গে কেনো এমনটা করলো৷ ওর জন্য কত কষ্ট দিয়েছি আমি আরুহিকে৷ মেয়েটার চোখে সব সময় আমি ভালোবাসা দেখতে পেতাম৷ তবুও আমি সেসবে পাত্তা দিতাম না৷শুধু মাত্র সোহানির জন্যে৷আর সোহানির চোখে আমি আকাংকা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনি৷ কোথায় আছো তুমি আরুহি প্লিজ কাম ব্যাক৷ আই সোয়ার আর কখনো তোমায় কষ্ট দিবোনা৷ তুমি তো তোমার মা বাবার কাছেও যাওনি৷ তাহলে কোথায় আছো, তুমি কোথায়??”
আদিলের এসব ভাবনার মাঝেই আহিল এসে ডিনারের জন্য ডেকে গিলো৷
আদিল ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসতেই আদিলের বাবা টেবিল ছেড়ে উঠে পরলেন৷
“তোমার ছেলেকে বলে দাও ওর সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাবার খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ যে ছেলেটা আমার ঘরের লক্ষীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারে সে এটলিস্ট যাইহোক আমার ছেলে কিছুতেই হতে পারেনা৷”
কথাটা বলে আদিলের বাবা হনহনিয়ে উনার রুমে চলে গেলেন৷আদিলের মা আর আহিল ও আদিলের সাথে তেমন কথা বলেননা৷ আদিল কোনোরকমে খাবারটা খেয়ে চলে গেলো৷রুমে গিয়ে সব কিছু ভাংচুর করে ফেলছে৷পরিবারের এমন নেগলেক্ট কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা সে
হঠাৎই আদিলের চোখ পরলো বুক সেল্ফে রাখা একটা নীল ডায়েরির উপর৷ কৌতূহলবশত ডায়েরিতে কী লিখা আছে সেটা দেখার জন্য ডায়েরিটা খুললো৷ প্রথম পেইজেই চোখ আটকে গেলো আদিলের৷ সেখানে লিখা,,
“বিয়ে নিয়ে মেয়েরা কতো স্বপ্নই না দেখে তেমনি আমিও দেখেছিলাম৷কিন্তু সব সময়তো আর সব স্বপ্ন পুরন হয়না৷ তেমনি আমারো হয়নি৷ বিয়ের রাতে মেয়েরা তার স্বামীর কাছ থেকে ভালোবাসা আর সম্মান পায়৷ কিন্তু আমি পেয়েছিলাম একরাশ ঘৃনা আর চড়৷ কোনোদিন কখনো শুনিনি বাসর রাতেই নিজের স্ত্রীর শাড়ি অলংকার খুলে অন্য মেয়ের জন্য রাখা হয়৷কিন্তু সেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে৷ স্বপ্ন দেখতাম একটা রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে বিয়ে হবে৷ এই স্বপ্ন আমার পুরন হয়েছে৷ তবে রাজপুত্রের কাছ থেকে ভালোবাসা পাবো সেটা পুরন হয়নি৷হয়তো কোনোদিন তার কাছ থেকে ভালোবাসা পাবোও না৷ কিন্তু আমি চেষ্টা করবো৷”
আদিলের চোখে পানি চলে এসেছে৷ সে চোখের পানিটা মুছে আবারো পেইজ উল্টালো৷সেখানে লিখা,,
“সোহানিকে আদিল ভালোবাসে তাতে আমি একদমই কষ্ট পাইনি৷ গার্লফ্রেন্ড থাকতেই পারে এতে রাগ অভিমান করার কিছুই নেই৷ আমি আদিলকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি হয়তো আমার ভালোবাসা এক তরফাই থেকে যাবে তবুও উনাকে আমি ভালোবাসি আর খুব বিশ্বাসও করি৷ কিন্তু সোহানি মেয়েটা এতো খারাপ সেটা যদি আমি আজ উনাকে ক্লাবে ফলো না করার জন্য যেতাম তাহলেতো জানতেই পারতামনা৷ আমি উনাকে সব কিছু বলে দিবো৷ কেমন মেয়েকে ভালোবেসেছেন সেটা ওতো জানার দরকার৷ আমার কাছে প্রমান আছে সেটা আমি উনাকে দেখাবো না৷আমি উনাকে আমার কথা দ্বারা বুঝাবো৷ আমিও দেখতে চাই উনি আমায় কতটা বিশ্বাস করেন”৷
ডায়েরিতে আর কিছুই লিখা নেই৷ আদিল ফুপিয়ে কেদে উঠলো সব পড়ে৷
“মেয়েটা আমায় এতো ভালোবাসত এতো বিশ্বাস করতো আর আমি ওকে এভাবে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলাম৷ শুধু মাত্র ওই ক্যারেক্টারল্যাস সোহানির কথা শুনে৷আচ্ছা আমিতো এটাই চেয়েছিলাম যে ও আমায় ছেড়ে চলে যাক কিন্তু এখন কেনো আমি সুখি হতে পারছিনা কেনো?কেনো এত কষ্ট হচ্ছে আমার আরুহির জন্য?
আদিল ওর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো আরুহিকে খোঁজার জন্য৷ হন্য হন্য হয়ে খুঁজে চলেছে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা৷
?️?️?️?️?️
সকালে রিংকির ডাকা ডাকিতে ঘুম ভেঙে গেলো আমার৷ আমি ছোট ছোট চোখ করে বললাম,,,
“কীরে এতো সকালে এভাবে ডাকছিস কেনো??
“সকাল ১১টা বাজে আর বলছিস সকাল৷বাই দ্যা ওয়ে এখন উঠে পর তোকে নিয়ে আমি এখন শপিংয়ে যাবো৷
“শপিংয়ে কেনো??
“বাহ্ রে তুই যে কোনো ড্রেস আনিসনি কী পরবি৷? তাই আব্বু বলেছে তোকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে৷ আর এখুনি রেডি হয়ে নে৷ আমি তোর কোনো কথা শুনছিনা৷
রিংকি আর আমি ব্রেকফাস্ট করে শপিংয়ে চলে আসলাম৷ শপিংয়ে এসে আদিলকে খুব মনে পরছে৷ উনাকে নিয়ে ২ দিন আগেও শপিংয়ে গিয়েছিলাম৷ আর এখন আমি এক জায়গায় আর উনি আরেক জায়গায়৷ আচ্ছা উনি তো বলেছিলেন সোহানিকে বিয়ে করে নিবেন৷ হয়তো বিয়ের তোরজোড়ও শুরু হয়ে গেছে৷ রিংকির ধাক্কাতে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি৷ তারপর কোনো রকমে নিজেকে ঠিক করে ড্রেস চয়েজে মনোযোগ দিলাম৷
?????
বিকেলে রিংকিকে নিয়ে ছাদে বসে আছি আমি৷
“রিংকি তোকে একটা কথা বলি??
“হ্যা বল না৷”
“আংকেলকে বলবি আমাকে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতে৷???
“তুই কী চাকরী করবি নাকি??
“হুম করবো৷”
“পারবি তো???
“না পারার কী আছে৷ আর পারতে তো আমাকে হবেই৷ নিজের পায়ে নিজেকে দাঁড় করাতে হবে৷নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে৷ ব্যস্ত থাকলে কীভাবে সময় চলে যাবে বুঝতেই পারবোনা”৷
“আচ্ছা আমি আব্বুর সাথে কথা বলবো”৷
????
সোফার রুমে মনমরা অবস্থায় আরুহির মা বাবার সামনে বসে আছে আদিল৷উনারা যখন জানতে পেরেছেন আরুহিকে পাওয়া যাচ্ছে না ওমনি আদিলদের বাড়িতে চলে এসেছেন৷ কেনো আরুহি বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো? কী হয়েছে ওর?আদিলকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন৷ আরুহির মা তো কান্নাকাটি করে একাকার৷ আরুহির বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,,,,,
“দেখো বাবা আমার মেয়ে খুব শান্ত প্রকৃতির৷যা করে ভেবে চিন্তে করে৷ তবুও যদি কোনো ভুল করে থাকে তাহলে ওকে ক্ষমা করে বাড়িতে নিয়ে আসো বাবা৷ আমার যে একটাই মেয়ে৷”
“আব্বু আমি জানিনা আরুহি কোথায় আছে৷ যদি জানতাম তাহলে এখন এখানে বসে থাকতাম না ওকে নিয়ে আসতাম৷ বাট কোথাও পাচ্ছিনা ওকে৷ কাল থেকে ওকে আমি হন্য হন্য হয়ে ঢাকা শহরে খুজে চলেছি৷ আই সোয়ার আমি ওকে আপনাদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো আজ নয়তো কাল৷ আপনারা এই বিশ্বাস আমার উপরে রাখতে পারেন৷ তবে আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে৷
খাটে বসে আছে আদিল৷ যে দিকে তাকাচ্ছে যেখানে যাচ্ছে সে দিকেই শুধু আরুহির স্মৃতি,আরুহির শরীরের ঘ্রাণ৷ রুমের সবই ঠিক আছে সবই আছে শুধু নেই আরুহি৷
“না এই সোহানি মেয়েকে একটা শাস্তি দিতেই হবে৷ আমি সুখি হয়েও সুখি হতে পারিনি শুধু মাত্র এই মেয়েটার জন্য তাই একে আমি ছেড়ে দিবোনা কিছুতেই না৷
চলবে,,,,,,,
(রিচেক করিনি৷ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন?)