♠️ #The_Vampire_King ♠️,25,26
#A_Unknown_Lover
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_25
আঁধার নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে শবনমের ঠোঁট আর ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা জাম ক্লিন করতে করতে বলে।
আঁধারঃ উঁহু রাগ করিনি বরং খুশি হয়েছি যে তোমার পছন্দ হয়েছে। আর তুমি এতো কিউট করে খাচ্ছিলে যে যতটুকু রাগ জমেছিল সব উধাও হয়ে গেছে। ( শবনমের মুখ মুছতে মুছতে)
শবনম তো ফুল শকড্ আঁধারের কাজে। আঁধারকে নিজের এতো কাছে দেখে ভয়ে ওর কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। হার্ট বিট এতো ফাস্ট হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে এখনোই হার্ট অ্যাটাক করবে ও।
শবনমঃ এই অন্ধকার রেজওয়ান পাগল টাগল হয়ে গেল না তো। এমন উইয়ার্ড বিহেভ করছে কেন ? ( মনে মনে)
শবনম আঁধারের থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে যায়। ওকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে আঁধারও দাঁড়িয়ে পরে।
শবনমঃ আ আমাদের তো লেট হয়ে যাচ্ছে তাই না সবাই চিন্তা করছে হয়তো?( জোর করে হাসার চেষ্টা করে)
আঁধারঃ হুম এতক্ষণে একটা জ্ঞানের কথা বললে চলো।( রুমালটা পকেটে ঢুকিয়ে)
শবনমঃ হোয়াট ডু ইউ মিন ?( কপাল কুঁচকে)
আঁধারঃ আই মিন নাথিং কাম।
আঁধার আর শবনম পাশাপাশি হাঁটছে। শবনম বারবার আড়চোখে আঁধারকে দেখছে। আর আঁধার! ওর চোখ শবনমের দিকে না হলেও ও ঠিকই শবনমের চাহনি বুঝতে পারছে।
শবনমঃ আচ্ছা আঁধার স্যার আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই? ( জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
শবনমের হঠাৎ এমন উদ্ভট প্রশ্নে আঁধার হচকিয়ে যায়। আঁধার শবনমের দিকে কোনা চোখে তাকিয়ে বলল।
আঁধারঃ মানে কি তোমার?
শবনমঃ মানে টা অনেক সিম্পল। আপনার কি কোন প্রেমিকা টেমিকা নেই। ( ডাইরেক্ট প্রশ্ন)
আঁধারঃ এসব ফালতু কথা পাও কোথা থেকে তুমি?( বিরক্ত হয়ে)
শবনমঃ প্লিজ প্লিজ বলেন না আঁধার। ( জেদ ধরে)
শবনমের জেদ করা দেখে আঁধার বিরক্ত হয়ে বলল।
আঁধারঃ নাহ নেই হ্যাপি?
শবনমঃ অন্নেক ( মনে মনে খুশি হয়ে ) তার মানে আমার রাস্তা ক্লিয়ার। কোন ডায়েন চুরেল শাকচুন্নী মামদো ভুত নামক কাবাবের হাড্ডি নেই। থাকবেই বা কি করে এই বাদামী চোখ ওয়ালা আঁধার রেজওয়ান যে পরিমাণ রাগি আর দজ্জাল কোন মেয়ে এনার গার্লফ্রেন্ড হয়ে নিজের লাইফ ভাজি পুরি করতে চাইবে?
শবনম এক লাফে আঁধারের সামনে গিয়ে আঁধারের দিকে ফিরে উল্টো ভাবে পিছাতে পিছাতে বলতে শুরু করে।
শবনমঃ আচ্ছা মি. রেজওয়ান আপনার নামটা এতো অদ্ভুত কেন?
আঁধারঃ মানে ?( চোখ রাঙিয়ে)
শবনমঃ মানে এটা যে,,, আপনার নাম আঁধার যার অর্থ হচ্ছে অন্ধকার। অন্ধকার কি কারো নাম হয় বলেন?
আঁধারঃ তোমার নাম কি?
শবনমঃ শবনম কেন?
আঁধারঃ শবনম মানে কি?
শবনমঃ জানি না বাট আম্মি বলেছে রাতের একটা নক্ষত্র!
আঁধারঃ হুম রাতের নক্ষত্র যার অস্তিত্ব আঁধারে দেখা যায়। এখন বলো তোমার আম্মু আব্বু এতো সুন্দর সুন্দর নাম থাকতে তোমার নাম রাতের নক্ষত্র রাখলেন কেন? এটা কি আবার কারো নাম হয় এটা তো নক্ষত্রের নাম।
শবনম আঁধারের কথায় ভাবনায় পরে যায় ওর কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই। যদি মায়া আর আসিফ সামনে থাকতো তবে তাদের থেকে জিজ্ঞেস করত কিন্তু এখন কার কাছে জিজ্ঞেস করবে।
শবনম ভাবনায় পড়ে গেছে আঁধার গভীর দৃষ্টিতে শবনমের চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
হঠাৎ শবনম পা বেজে পরে যেতে নিলে আঁধার ওর হাত ধরে ফেলে।
আঁধারঃ যেদিন তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবে সেদিন নিজের সব প্রশ্নের উত্তর জেনে যাবে।( বলেই ওর হাত টান দিয়ে সোজা করে দাঁড় করালো।)
আঁধার সামনের দিকে হাঁটা ধরল শবনম ওখানেই দাঁড়িয়ে ভাবছে,,,
শবনমঃ এই অন্ধকার রেজওয়ান সব সময় আমাকে গোলক ধাঁধায় আটকিয়ে দেয়। আমি প্রশ্ন করলাম তার উল্টো প্রশ্ন করে আমাকে চুপ করিয়ে দিল হুহ,,,
শবনম সামনের দিকে পা বাড়াতেই একটা গাছের কাঁটাযুক্ত পাতা দিয়ে ওর হাতে আচর লাগে। শবনম ব্যথা পেয়ে হাত চেপে ধরে। বেশি কাটেনি তবে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত জমছে আর জায়গাটা জ্বলছে।
শবনমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঁধার থেমে গিয়ে পেছন ফিরে বলল।
আঁধারঃ কি হলো দাঁড়িয়ে পরলে কেন?
শবনমঃ ক কিছু না। ( বকার ভয়ে বলল না)
শবনম দৌড়ে আঁধারের সামনে চলে যায়। হাতের জায়গাটা আস্তে আস্তে নীলচে হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অন্ধকারের কারনে শবনম তা দেখতে পায় নি।
কিছুটা রাস্তা হেঁটে যেতেই সামনে গাড়ির আওয়াজ আর লাইটের আলো দেখতে পেল ওরা।
শবনমঃ ওয়াও রাস্তা পেয়ে গিয়েছি। ( খুশি হয়ে লাফ দিয়ে)
শবনম দৌড়ে রাস্তায় উঠে যায়। রাস্তায় যেতেই কিছু পরিচিত মুখ দেখতে পেল ও। কিছুটা দুরেই কয়েকটা গাড়ি আর পুলিশের জীপ। গাড়ির সামনে আসিফ পুলিশের সাথে রাগারাগী করছে। পাশেই মিম ইয়ান ধ্রুব আর কোয়েল দাঁড়ানো।
শবনম ওদের দেখেই দৌড়ে ওদের কাছে চলে যায়।
শবনমঃ আব্বিইই মিম আপিইই,,
শবনমের আওয়াজ শুনে সবাই চমকে ওর দিকে তাকালো। শবনমকে দেখে যেন সব কটা নিজের প্রান ফিরে পেয়েছে।
আসিফঃ প্রিন্সেস!!
শবনম দৌড়ে ওর আব্বিকে জড়িয়ে ধরল আসিফ শবনমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
আসিফঃ তুমি ঠিক আছো প্রিন্সেস? কোথায় ছিলে এতক্ষন আমারতো তোমার চিন্তায় আমার তো হার্ট অ্যাটাকের অবস্থা হয়েছে।( কান্না জড়িত কন্ঠে)
শবনমঃ উফফো আব্বি আমি ঠিক আছি সুস্থ আছি তোমাদের সামনেই আছি দেখ।
মিমঃ তুই সত্যি ঠিক আছিস তো বনু সত্য করে বল?( জড়িয়ে ধরে) আমরা কত চিন্তায় ছিলাম যে তুই একা এই ভয়ঙ্কর জঙ্গলে তোর যদি কোন কোন বিপদ হতো।
শবনমঃ আরেহ দি আমি ঠিক আছি তো। আর আমি তো একা ছিলাম না উনি আমার সাথে ছিলেন।
আসিফঃ কে?
শবনমঃ ওই যে আঁধার স্যার ( আঁধারকে ইশারায় দেখিয়ে)
আসিফ সামনে তাকাতেই দেখলো আঁধার আসছে। আসিফ গিয়ে আঁধারকে বলতে শুরু করল।
আসিবঃ থ্যাংক ইউ সোওও মাচ আঁধার। তোমার কারনে আমার মেয়েটা সহি সালামত আমার সামনে আছে। তোমার এই ঋণ আমি কিভাবে শোধ করব বুঝতে পারছি না। ( করুন স্বরে)
আঁধারঃ ও আমার দায়িত্ব ছিল আঙ্কেল আর আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি সো ডোন্ট থ্যাংকড্ মি। ( শবনমের দিকে তাকিয়ে)
শবনম সবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত আঁধারের কথা ওর মনেই নেই।
কোয়েলঃ আমরা তোমাকে অনেক খুঁজেছি শবনম কিন্তু তাও পাইনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি।
ধ্রুবঃ আমি আর কোয়েল আরো খুঁজতাম কিন্তু ইয়ান স্যারের কথায় ফিরে এসেছি।
শবনমঃ আমাকে খুঁজতে গিয়ে নিজেদের প্রেমের কাহিনী২ মুভি করে নিলে নাতো।( হাসি দিয়ে)
ধ্রুব কোয়েলঃ মানে?
শবনমঃ মানে কিছুনা।
মিমঃ তুই এখনো মজা করছিস তোকে না পেয়ে আমাদের জান বেরিয়ে যাচ্ছিল জানিস। ( রাগী ভাবে )
শবনমঃ এতটুকুতেই জান বেরিয়ে যাচ্ছিল মরে গেলে কি করতে। ( বলেই হেসে দিল। )
শবনমের কথা আঁধারের কানে আসতেই ও রাগি ভাবে তাকালো শবনমের দিকে।
আঁধারঃ এ মেয়েটা কখনো সুধরাবে না। কালকে কলেজে এসো তোমাকে এমন শাস্তি দিব মরার শখ মিটে যাবে।( মনে মনে)
মিমঃ কানের নিচে একটা দিব এসব কথা আর মুখে আনবি না।
শবনমঃ ইয়ান জিজু থুক্কু স্যার দেখেন আমাকে বকছে।( কাঁদো কাঁদো ভাবে )
ইয়ানঃ বাচ্চা মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছো কেন? ওকে মারার কথা বললে তোমার কানের নিচে চারটা পরবে।
শবনমঃ ইয়ান স্যার কত ভালো আর তুমি কত পঁচা।
মিমঃ তুই বাড়িতে আয় তারপর বুঝাচ্ছি।
শবনমঃ আমি যাবোই না বাড়িতে আমি কোয়েলের সাথে ওদের বাসায় যাবো। ( কোয়েলের পেছনে দাঁড়িয়ে)
মিমঃ যাবি না মানে কি শবনম?
শবনমঃ বাড়িতে গেলে তুমি আমাকে পানিশমেন্ট দিবে কারন আমি তোমার আর ইয়ান স্যারের রোমান্টিক ঝগড়া ওয়ালা মুভি দেখে ফেলেছি।
শবনমের কথায় ইয়ান মিম ধ্রুব কোয়েল সবার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
আসিফ আর আঁধার সামনে আসতেই সবাই চুপ হয়ে যায়।
আসিফঃ কি কথা হচ্ছে এখানে?
শবনমঃ কিছুনা এমনিই।
শবনমের চোখ আঁধারের দিকে যেতেই দেখলো আঁধার অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। শবনম ভয়ে ঢোক গিলল ওর দৃষ্টি দেখে।
শবনমঃ আমি আবার কি করলাম এভাবে তাকিয়ে আছে কেন। ( মনে মনে )
আসিফঃ তো এখন যাওয়া যাক প্রিন্সেস?
শবনমঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তারাতাড়ি চলো এখান থেকে।( আঁধারের দিকে তাকিয়ে)
কোয়েলঃ তুমি না আমাদের সাথে যাবে।
শবনমঃ নাহ আমি তো মজা করছিলাম। ( আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম এই জমরাজ ও তোমাদের সাথেই থাকে। মনে মনে)
হঠাৎ সব কিছু যেন ঝাঁপসা হয়ে আসছে শবনমের কাছে। তাও নিজের হাত মুঠো করে ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করছে ও।
আসিফঃ চলো প্রিন্সেস,,, ( শবনমের হাত ধরে এগিয়ে )
শবনম সামনের দিকে এগোতেই পা থেমে যায় ওর। হাতের রগ যেন ছিরে যাচ্ছে এমন ভাবে ব্যথা হচ্ছে। শবনম এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে।
শবনমঃ আহহহ আব্বিইই( কান্না করতে করতে বসে বসে পরল)
আসিফঃ কি হলো প্রিন্সেস,,( ভয় পেয়ে )
সবাই হন্তদন্ত করে শবনমের সামনে গেল। শবনমের চিৎকার কানে আসতেই আঁধার দ্রুত ওর কাছে গেল।
শবনমঃ আহহহ আব্বি ব্যথা করছে। ( কান্না করতে করতে)
আঁধারঃ ব ব্যথা করছে মানে কি। হাতে কি হয়েছে ?( হাত টেনে সামনে ধরে)
শবনমের হাত দেখতেই সবার চেহারার রং পাল্টে যায়।হাতের রগ সহকারে নীলচে হয়ে গেছে আর ক্রমশ বাড়ছে উপরের দিকে।
আঁধারঃ এটা কি করে হলো ড্যাম ইট। তুমি আমাকে কিছু বলো নি কেন স্টুপিড।( রেগে চিল্লিয়ে )
শবনমঃ আপনি বকবেন তাই বলিনি। দেখেন এখনো বকছেন। ( কান্না করতে করতে)
আসিফঃ উই নিড টু গো হসপিটাল,,, প্রিন্সেস ঠিক হয়ে যাবে দেখ। ( শবনমের চোখ মুছতে মুছতে)
শবনমঃ ইট্স হার্টিং,,,
আসিফ শবনমকে জড়িয়ে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে কারন শবনম সামান্য কাঁটা সহ্য করতে পারে না সে কিভাবে এত বড় ব্যথা সহ্য করবে।
হঠাৎ শবনমের কান্না অফ হয়ে যায়। সবাই তাকিয়ে দেখে ওর চোখ বন্ধ।
আঁধার শবনমের গালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে ওকে জাগানোর চেষ্টা করছে।
আঁধারঃ শবনম দেখ চোখ বন্ধ করবে না। ঘুমিয়ে পরলে বিষ শরীরে দ্রুত ছড়াবে ওয়াক আপ আই পেইড ( চিল্লিয়ে)
শবনম হালকা হালকা করে চোখ মেলে তাকাল আঁধারের দিকে।
আঁধার দ্রুত শবনমকে কোলে তুলে গাড়িতে বসলো।ধ্রুব আর আসিফ সামনে বসেছে আঁধার শবনমকে বুকে জড়িয়ে পেছনে বসেছে আর ওকে জাগিয়ে রাখার জন্য এটা ওটা বলছে।
আসিফ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আঁধারকে। আসিফ নিজের পর এই প্রথম কাউকে শবনমের প্রতি এতো কেয়ার করতে দেখছে।
To be continued….
♠️ #The_Vampire_King ♠️
#A_Unknown_Lover
#Writer_Sanjana_Sbabnam_Fahmida
#Part_26
,
,
,
,
আঁধার দ্রুত শবনমকে কোলে তুলে গাড়িতে বসলো।ধ্রুব আর আসিফ সামনে বসেছে আঁধার শবনমকে বুকে জড়িয়ে পেছনে বসেছে আর ওকে জাগিয়ে রাখার জন্য এটা ওটা বলছে।
আসিফ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আঁধারকে। আসিফ নিজের পর এই প্রথম কাউকে শবনমের প্রতি এতো কেয়ার করতে দেখছে।
♠️♠️ In Hospital ♠️♠️
সবাই ওটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভিতরে ডক্টর শবনমের ট্রিটমেন্ট করছে। আঁধার চেয়ারে বসে দু হাত ভাঁজ করে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে। আসিফ ওটির সামনে পায়চারি করছে।মিম তখন থেকেই কান্না করছে থামার নাম নেই। ইয়ান মিমকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কোয়েল অন্য সাইডে বসে আছে ওরও কান্না আসছে অনেক কম সময়ে সবাইকে অনেক আপন করে নিয়েছে ও।
ধ্রুবঃ কোয়েল শবনমের কিছু হবে না তুমি প্লিজ কান্না করো না।
কোয়েলঃ আমরা যদি ক্লাইম্বিংয়ে না যেতাম তাহলে এতো কিছু হত না শবনমও ঠিক থাকতো। ( কান্না করতে করতে)
ধ্রুবঃ এভরিথিং ইজ ডেস্টানি কোয়েল। যা ভাগ্যে আছে তা হবেই যে কোন মূল্যে। কেউ ভাগ্য বদলাতে পারে না। আর যেখানে শবনমের প্রশ্ন; ওর কিছু হবে না তুমি দেখে নিও।
কোয়েলঃ সত্যি?( চোখ মুছে)
ধ্রুবঃ হুম। ( ওর শরীরে যে বিষ বইছে তার সামনে এই সামান্য বিষ কিছুই না… মনে মনে)
আসিফ কোয়েলের সামনে আসতেই ধ্রুব উঠে দাঁড়িয়ে যায়। আসিফ কোয়েলের পাশে বসে ওর মাথায় হাত রেখে বলতে শুরু করে।
আসিফঃ ডোন্ট ক্রাই মামুনি শবনম ঠিক হয়ে যাবে। আর ও ঠিক হয়ে যদি দেখে সবাই এভাবে কান্না করছে ওর কি ভালো লাগবে বলো?
কোয়েল মাথা নাড়িয়ে ‘‘ না’’ বলল। আসিফ কোয়েলের চোখ মুছে দিয়ে উঠে যায়।
ওটির লাইট অফ হতেই সবাই দাঁড়িয়ে যায় ডক্টর এসে আসিফকে বলে।
ডক্টরঃ শি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।
ডক্টরের কথায় সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। ডক্টর কিছুটা বিস্ময় নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন।
ডক্টরঃ শবনমের হাতে বিষাক্ত গাছের আচর লাগায় বিষটা হাত থেকে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরেছিল। কিন্তু তাজ্জবের বিষয় এটা যে বিষটা হার্ট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। এমন লাগছে যেন বিষে বিষ কেঁটে দিয়েছে। একটা কথা আমরা বুঝতে পারছি না এটা কিভাবে সম্ভব। ( বিস্ময় নিয়ে)
আসিফ আর ইয়ানের চেহারা মুহূর্তে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ডক্টরের কথা আঁধার কিছুই বুঝতে পারছে না। ও আসিফের রিয়েকশন দেখছে তার মানে এর উত্তর আসিফের কাছে আছে। আসিফ কথা ঘুরানোর জন্য ডক্টরকে প্রশ্ন করল।
ডক্টরঃ আমার প্রিন্সেস এখন ঠিক আছে তো আমরা ওর সাথে দেখা করতে পারি?
ডক্টরঃ জ্বি। কিন্তু জ্ঞান এখনো ফিরে নি ঘুমের ইনজেকশন দাওয়া হয়েছে আর এতো মানুষ ভিতরে যেতে পারবেন না যেকোন দুইজন ওর পাশে থাকবে।
আসিফঃ জ্বি।
ডক্টর চলে যেতেই আসিফ মিম বাদে সবাইকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আঁধার থাই গ্লাসের ফাঁক দিয়ে একবার শবনমকে দেখে বেড়িয়ে যায় হসপিটাল থেকে। ওর মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সব গুলোর উত্তর খুঁজতে হবে ওকে।
বাড়িতে এসেই কোয়েল নিজের রুমে চলে যায়। সারাদিন বেচারির উপর কত প্রেশার পরেছে। ইয়ান নিজের রুমে যেতে নিলেই আঁধার ওকে বলে উঠে।
আঁধারঃ এমন কিছু আছে ইয়ান যা আমার কাছে অজানা? ডক্টরের বলা কথা গুলোর মানে কি?
আঁধারের প্রশ্নে ইয়ান কিছুটা ঘাবড়ে গেল তাও আঁধারের সামনে তা প্রকাশ করল না।
ইয়ানঃ আমি জানি না ভাই। তোর সব প্রশ্নের উত্তর ফাদার জোসেফের কাছে আছে আমার কাছে না। উনি আসলে উনার কাছ থেকে জেনে নিস।
কথাটা বলেই ইয়ান দ্রুত পায়ে উপরে চলে যায়। আঁধার ইয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবে।
আঁধারঃ কিছু একটা তো আছে যা আমার কাছ থেকে অজানা কিন্তু কি ?
রাত গভীরের দিকে। শবনম এখনো ঘুমিয়ে আছে। পাশের সোফায় আসিফ হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে চোখ লেগে গেছে ওর। হঠাৎ কালো হুডি পরা কেউ রুমে প্রবেশ করল। মাথার হুডি নামিয়ে নিতেই তার চেহারা বুঝা গেল এটা আঁধার। আঁধার ধীর পায়ে শবনমের পাশে গিয়ে বসল। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে আঁধার। শবনম তো ঘুমে বিভোর কিন্তু কেউ একজন যে ওর জন্য সবার আড়ালে ওর কাছে শুধু ওকে এক পলক দেখার জন্য এসেছে সে খেয়াল নেই শবনমের।
শবনমের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর হাতের দিকে তাকালো আঁধার। কাঁটা জায়গাটা এখনো নীলচে হয়ে আছে। আঁধার কাঁটা জায়গাটাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই ক্ষতটা মিশে যায়। কিন্তু নীলচে রং টা এখনো আছে আঁধারের কাছে বিষয়টা অনেক অদ্ভুত লাগছে। ও বুঝতে পারছে না রং টা যাচ্ছে না কেন।
♠️♠️In Morning ♠️♠️
শবনমের জ্ঞান ফিরতেই ও নিজের বকবকের ভান্ডার খুলে নিয়েছে। মিম আর আসিফ গালে হাত দিয়ে শুনছে আর মায়া শবনমকে খাইয়ে দিচ্ছে।
আসিফঃ হাত কিভাবে কেটেছিল প্রিন্সেস?
শবনমঃ আব্বি আমি তো ভদ্র ভাবেই হাঁটছিলাম কিন্তু তাও ওই অভদ্র গাছটার কাঁটা লেগে ছিলে গেছে। ( মুখ মলিন করে)
মিমঃ তুমি কতটা ভদ্র ভাবে হেঁটেছো তার আন্দাজ আছে আমার। ( মিন মিন করে)
আসিফঃ তাহলে তুমি আঁধারকে বললে না কেন? ওকে যদি সাথে সাথে বলে দিতে তাহলে বিষয়টা এতো গভীরে যায় না। ও নিশ্চয়ই কোন না সমাধান করে নিত।
আঁধারের নাম শুনতেই শবনম বিষম খেয়ে কাঁশতে শুরু করল। মায়া দ্রুত শবনমকে পানি খাইয়ে দেয় আর মিম শবনমের পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে ঠান্ডা করে।
আসিফঃ ধীরে সুস্থে খাও প্রিন্সেস তোমার খাবার কেউ ছিনিয়ে নিবে না।
শবনমঃ আব্বিইই তুমি বলতে চাইছো আমি খাদক। ( রেগে)
মিমঃ হুম চতুর্থ স্তরের খাদক। ( হেসে দিয়ে )
শবনমঃ আমি খাবই না।
আসিফঃ আহা আমরা সেটা বলি নি প্রিন্সেস।
ওদের কথার মাঝেই ইয়ান আর কোয়েল চলে আসে।
আসিফঃ তোমরা কথা বলো আমি আর মায়া ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি। আসিফ আর মায়া চলে গেল।
কোয়েল দৌড়ে শবনমকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করে।
কোয়েলঃ থ্যাংক গড তুই ঠিক হয়ে গিয়েছিস। আমাদের টেনশন দিতে অনেক ভালো লাগে তাই না। (অভিমানী স্বরে )
শবনমঃ আররেহ বেবি এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে তো আমি নিঃশ্বাস আটকে এক্ষুনি মরে যাব। আর ডোন্ট ওয়ারি ধ্রুব আর তোর সেটিং করানোর আগে আমি মরবো না। ( কানে ফিসফিস করে)
কোয়েল শবনমকে ছেড়ে ওর দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে বলে।
কোমেলঃ তুই আগে সুস্থ হ তারপর তোকে বুঝাচ্ছি আমি।
শবনমঃ আমি এতো দ্রুত সুস্থ হবো না আগে তোদের দিয়ে মন ভরে নিজের সেবা করিয়ে নেই। অসুস্থ থাকলে কত লাভ দেখ সবাই কত সেবা যত্ন করে নো পড়া নো টেনশন আনলি চিলেক্স। ( হেসে দিয়ে)
শবনমের কথায় সবাই হেসে দিল। শবনম ইয়ানের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ভাবে বলল।
শবনমঃ হাফ জিজু হাফ ইয়ান স্যার আপি আমাকে বলেছে আর খাদক বলেছে তাও চতুর্থ স্তরের খাদক।( কাঁদো কাঁদো ভাবে)
মিম অসহায় ভাবে শবনমের দিকে তাকালো। ইয়ান মিমের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
ইয়ানঃ এটা সত্য মিম?
মিমঃ না মানে,,, আমার বোন আমি বলতেই পারি।
ইয়ানঃ কলেজে এসো তোমাকে সবার সামনে কানে ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখবো।
মিমঃ কিহ। ( আতঙ্কিত হয়ে )
ইয়ানঃ জ্বী। আমার স্টুডেন্ট আমি কান ধরাতেই পারি।
মিম অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে ইয়ানের দিকে। কোয়েল শবনমের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল।
কোয়েলঃ আমি এদের বিষয়টা কিছুই বুঝতে পারছি না বেবি।
শবনমঃ তুই তো গাধি বুঝবি কি করে।
কোয়েল চোখ ছোট ছোট করে তাকালো শবনমমের দিকে।
শবনমঃ আরেহ রাগিস কেন শোন,,, তোর ভাই আমার জিজু আমার বোন তোর ভাবি তাহলে তুই আমার কে?
কোয়েলঃ কে?
শবনমঃ আল্লাহ আমাকে তুলে নাও উপরে গিয়ে একটু চিল করে মাথা ঠান্ডা করি। ( নিজের চুল টেনে)
কোয়েলঃ আমাকে সাথে নিয়ে যাস বেবি এক সাথে চিল করবো।
শবনমঃ নিমু না যা।
কোয়েলঃ আমরা ছেলে পক্ষ তাই আমাদের কথা না শুনলে বিয়ে হতে দেব না। ( ভাব নিয়ে)
শবনমঃ আমি সুস্থ হয়ে নেই তারপর তোর ভাব নেয়া ছুটাচ্ছি। আসছে ছেলে পক্ষ গিড়ি করতে।
ধ্রুব হাতে গোলাপ ফুলের তোড়া নিয়ে রুমে আসে।
ধ্রুবঃ গুড মর্নিং শবনম।
শবনম ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে ধ্রুবকে বলে।
শবনমঃ এই ফুল গুলো কার জন্য এনেছিস?
ধ্রুবঃ কেন তোর জন্য।
শবনমঃ তোর স্মৃতি শক্তি কি লোপ পেয়েছে। আমার গোলাপ পছন্দ না তুই কি ভূলে গিয়েছিস গাধা নাম্বার চারশো বিশ। ( রেগে )
ধ্রুবঃ আরেহ হ্যাঁ স্যরি এয়ার। ( মাথা চুলকে) এখন এগুলো কি করবো?( ভেবে )। কোয়েল তোমার তো গোলাপ পছন্দ তুমি নিবে?( এগিয়ে দিয়ে)
কোমেলঃ আমি?( অবাক হয়ে)
ইয়ানঃ কোয়েলের গোলাপ ফুল প্রিয়। নাও কোয়েল ধ্রুব যখন এতোই বলছে আর শবনমেল গোলাপ একদম পছন্দ নয় তা সবাই জানি।
ধ্রুবঃ প্লিজ।
কোয়েল কিছুটা লজ্জা পেয়ে ফুল গুলো নিয়ে নিল।
কোয়েলঃ থ্যাংক ইয়ু ধ্রুব ফর দিস।
শবনমঃ বাহ্ চার বছরের বন্ধুত্ব আর ও নাকি ভুলে গেছে আমার গোলাপ পছন্দ না। আমি কি তোদের মত ইডিয়েট যে ধ্রুবর বাচ্চা। আমার নাম নিজেদের কাম। কি বুদ্ধি ইয়ান স্যারের সামনে তার বোনকে ফুল দিল তাও এভাবে যেন সন্দেহ না করে। দেখে নিব তোকে।( মনে মনে)
শবনম রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে ধ্রুব একটা ঢোক গিলে শবনমকে ইশারায় বললো চুপ থাকতে।
শবনম নাক ফুলিয়ে পাশ ফিরিয়ে আছে। কোয়েল ফুল গুলো দেখছে আর তার ঘ্রান নিচ্ছে। ধ্রুব মুগ্ধ চোখে দেখছে কোয়েলকে। কোয়েলের ঠোঁটের এই হাসির জন্য সব করতে রাজী ও।
ইয়ানঃ মিম তুমি কিছু খেয়েছো?
মিম রেগে অন্য পাশ ফিরে আছে। মিম কিছু না বলায় শবনমই বলল।
শবনমঃ নাহ খায়নি হয়তো ডায়েট কন্ট্রোল করছে।
মিম রেগে শবনমের দিকে তাকালো শবনম ভয়ে নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিল। ইয়ান মিমের হাত ধরে ওকে দাঁড় করায়।
ইয়ানঃ এতো ডায়েট কন্ট্রোল করা লাগবে না। তুমি মোটা হয়ে গেলেও আমার সমস্যা নেই বরং লাভ অন্য কেউ তোমার দিকে তাকাবে না এবং তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।
সবাই শকড্ ইয়ানের কথায়। আর মিমের তো চোখ বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম।
ইয়ানঃ এখন চলো বাইরে থেকে খাইয়ে আনি। আর ধ্রুব কোয়েলকে একটু বাসায় ড্রপ করে দিও প্লিজ।
ধ্রুবঃ সিউর স্যার। ( এতো খুশি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।)
ইয়ান মিমের হাত ধরে ওকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আর পেছন থেকে শবনম বলে উঠে।
শবনমঃ জিও জিজু ইউ রকড্ আর মিম আপি শকড্।
মিম রাগি দৃষ্টিতে শবনমের দিকে তাকিয়ে বলল ‘‘ দেখে নিব তোকে’’। শবনমকে মিমকে ভেংচি কেটে দেয়।
কোয়েল আর ধ্রুব কথা বলছে সোফায় বসে আর হাসাহাসি করছে। শবনম টিভি অন করে ডোরেমন দেখছে আর আড়চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে।
শবনমঃ সবার সেটিং হয়ে যাচ্ছে আমার সেটিংয়েই যত প্রবলেম। শয়তান রেজওয়ান একবার দেখতেও আসলো না হুহ। আমার কপালটাই খারাপ। ( মনে মনে)
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে শবনম সেদিকে তাকালো। সামনের মানুষটি কে দেখে শবনম শক প্লাস ক্রাশড্।
To be continued….