♠️ #The_Vampire_King ♠️,31,32
#A_Unknown_Lover
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_31
.
.
.
.
♠️ In Rejwan Mansion ♠️
শবনম আর মিম সহ পুরো ফ্যামিলি রেজোয়ান ম্যানশনে চলে আসে। কারন এঙ্গেজমেন্ট এখানেই কমপ্লিট হবে।
পুরো বাড়ি ডার্ক ব্লু কালারের লাইটিং করে সাজানো হয়েছে। বেশি উজ্জ্বল ও না বেশি অন্ধকার ও না। বাড়ির ড্রইং রুমে সব গেস্টরা রয়েছে। লাইট সাউন্ডে সফ্ট মিউজিক বাজছে। পার্টির থিম ব্লাক ড্রেস তাই সবাই কালো পোশাকে আবৃত। মিম ব্লাক কালারের লেহেঙ্গা পরেছে সাথে ম্যাচিং হোয়াইট স্টোনের জুয়েলারি চুল গুলো খোঁপা করা সব মিলিয়ে একজন পার্ফেক্ট ব্রাইড।
শবনমদের প্রবেশ করতে দেখে জোসেফ আর কয়েকজন এসে ওদের স্বাগত জানিয়ে ভিতরে আনে। মিমকে নিয়ে মায়া আর ফারহানা ( মিমের আম্মু ) সোফায় বসে পরে। আর মিমের আব্বি আর শবনমের আব্বি জোসেফের সাথে কথা বলছেন আলাদা ভাবে। আর শবনম তো শবনমই…ও পুরো হল রুম ঘুরছে আর ভাবছে এত সুন্দর করে আঁধার সব কিছু আরেঞ্জ করেছে এখন আঁধারের ভূল খুঁজবে কিভাবে।
হঠাৎ শবনমের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে শবনম ঘাবড়ে পিছনে ফিরল।
কোয়েলঃ রিলেক্স বেবি ইট্স মি তোর জানু কোয়েল,,
শবনমঃ এভাবে কেউ ভয় দেখায় এখনি তো আমি হার্ট অ্যাটাক করতাম (একটু রেগে)
কোয়েলঃ তুই দিন দিন ভিতু হয়ে যাচ্ছিস।( হাসতে হাসতে)
শবনমঃ সব তোর শয়তান রেজওয়ান ভাইয়ের মেহেরবানী।( নাক ফুলিয়ে)
(কোয়েল কালো রঙের গাউন পরেছে আর চুল গুলো পিঠে ছেড়ে দিয়েছে। এমনিতেই কোঁকড়ানো চুল তাই কার্ল করতে হয় নি আর হোয়াইট ক্রিস্টাল এর জুয়েলারি পরেছে। এমনিতেই কোয়েল অনেক সুন্দর কিন্তু সাজার ফলে আরো সুন্দর লাগছে ওকে।)
শবনমঃ শুনেছিলাম প্রেমে পড়লে মানুষ নাকি অনেক সুন্দর হয়ে যায় কিন্তু আজ তোকে দেখে প্রমাণ পেয়ে গেলাম। কালকে রিলেশন করলি আর আজকেই তার সাইড ইফেক্ট শুরু। ধ্রুবর জন্য এতো সাজ বাহ্ বাহ্,,, ( হাসতে হাসতে)
শবনমের কথায় কোয়েল একটু লজ্জা পেল। শবনম বিষয়টা খেয়াল করে একটু পিঞ্চ মেরে বলল।
শবনমঃ এই লজ্জা ধ্রুবর জন্য বাঁচিয়ে রাখ আমার সামনে সব লজ্জা শেষ হয়ে গেলে ধ্রুবর সামনে লজ্জা আসবে না।( হেসে দিয়ে)
কোয়েল রেগে শবনমের কাঁধে থাপ্পড় দিয়ে বলল।
কোয়েলঃ তুই কখনো বদলাবি না তাই না? সব সময় সবার পেছনে লেগে থাকা হ্যাবিট হয়ে গেছে তোর।( নাক ফুলিয়ে)
কিন্তু আই হ্যাভ এ গভীর কোয়েশ্চন,,,
শবনমঃ কি?
কোয়েলঃ আমি নাহয় প্রেমে পড়ে ধ্রুবর জন্য সেজেছি কিন্তু তুই? তুই কার জন্য সেজেছিস?
শবনমঃ শবনম নিজের জন্য সাজে অন্য কারো জন্য না। ( গাল ফুলিয়ে)
কথাটা বলেই শবনম মাথা ঘুরিয়ে হা হয়ে যায়। আঁধার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে আর ওর পাশে একজন লোকও আছে। তারা কথা বলতে বলতে নিচে নামছে তাই অন্য দিকে তার খেয়াল নেই।
ব্লাক শার্ট তার উপর ডার্ক চকলেট কালার কোট চুল গুলো সবসময় এর মত সিল্কি আর উড়া উড়া। চেহারায় আগের মতই এটিটিউড ভাব।
সব মেয়েদের নজর যেন আঁধারের উপর শিফ্ট হয়ে গেছে। শবনমকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কোয়েল দুষ্টু হেসে শবনমের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল।
কোয়েলঃ আর ইউ ক্রাশ্ড বেবি?
শবনমঃ হু ( আনমনে)
হঠাৎ হুশ আসতেই শবনম চেঁচিয়ে উঠলো,,
শবনমঃ নানাআআ,, এই শয়তান রেজওয়ান তাও আমার ক্রাশ? কখনো না হুহ,,
আঁধার কথা বলার ফাঁকে শবনমের দিকে ওর চোখ গেল সাথে সাথে ওর চোখ রাগে লাল হয়ে গেল। আঁধারের রাগি দৃষ্টি দেখে শবনম একটা ঢোক গিলে মনে মনে ভাবে।
শবনমঃ আমি আবার কি করলাম?
আঁধার রেগে শবনমের দিকে আসতে নিলেই শবনম কোয়েলের হাত ধরে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।
কোয়েলঃ কি হলো এভাবে টেনে আনলি কেন?
শবনমঃ ওখানে আর এক মুহুর্ত থাকলে হয়তো বুলবুল, আয়লা, ফনি, নার্গিস আর রিসেন্ট টার নাম যেন কি ছিল?( মনে করতে করতে) লিচু না কলা নানা আপেল নাহ কি যেন তরমুজ?
কোয়েলঃ ইট্স আমফান?
শবনমঃ হ্যাঁ হ্যাঁ ওই একই ,,, এগুলো সব আমার উপর দিয়ে যেত,,
কোয়েলঃ মানে?
শবনমঃ আমি কি গুগল যে সব কিছুর মানে বুঝিয়ে দিব। যা গিয়ে গুগল এ সার্চ কর।
কোয়েলঃ তুইইইই,,,
শবনমঃ ওই দেখ তোর হিরো এসে গেছে,,, ( দরজার দিকে তাকিয়ে)
কোয়েল শবনমের কথা মত দরজার দিকে তাকালো। ধ্রুব আর তার সাথে আশিশ আর আয়রা ও এসেছে। শবনম কোয়েলের হাত ধরে ওদের কাছে চলে গেল।
ধ্রুব চকলেট কালার শার্ট আর ব্লাক কোট পরেছে। চুল গুলো স্পাইক করে নিয়েছে। সবসময় এর মত কুল লুকে ড্রেসআপ করেছে।
ওরা ধ্রুবর কাছে যেতে নিলেই একটা মেয়ে এসে ধ্রুবর সামনে দাঁড়ালো আর ওর সাথে কথা বলতে শুরু করে।এটা দেখে কোয়েল তো রেগে ফায়ার। শবনম ব্যাপার টা খেয়াল করে মিটমিট হাসছে। ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ধ্রুব মেয়েটির থেকে চোখ সরিয়ে কোয়েল আর শবনমের দিকে তাকালো।
ধ্রুব এক পলকে তাকিয়ে আছে কোয়েলের দিকে। আর কোয়েল রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে আর মেয়েটির দিকে। মনে হচ্ছে এখুনি দুজনকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। ধ্রুব বিষয়টা বুঝতে না পেরে শবনমের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। শবনম ইশারায় মেয়েটিকে দেখালো । ধ্রুব এখন বুঝতে পারছে কোয়েলের রাগের কারন।
শবনম আশিশ আর আয়রার সামনে গিয়ে ওদের বলে,,,
শবনমঃ গাইজ আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে আমাদের এখান থেকে দ্রুত প্রস্থান করা উচিত। নাহলে এই ভূমিকম্প নামক সুনামির জোয়ারে আমাদের টর্নেডোর মত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
কথাটা বলেই শবনম আশিশ আর আয়রা কে টেনে নিয়ে আসলো।
আয়রাঃ হলো টা কি ওদের?
শবনমঃ যা তোদের হয়নি,,
আশিশঃ মানে?
শবনমঃ রিলেশন ডাফর,,,
আয়রাঃ এই ডাফরের সাথে আমার রিলেশন করতে বয়েই গেছে।
আশিশঃ ও হ্যালো মিস আমারও আপনার সাথে রিলেশন করার শখ নেই।
কথাটা বলেই আশিশ চলে গেল। কিছুটা দূরে তনু দাঁড়িয়ে ছিল আশিশকে দেখে তনু ওর কাছে চলে আসলো। দুজনেই এক কোনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।
শবনম ওদের দেখে আয়রার কাঁধে হাত রেখে বলতে শুরু করল।
শবনমঃ আজ বোধ হয় ওদেরও রিলেশন হয়ে যাবে কি বলিস?
শবনম আয়রার দিকে তাকাতেই দেখলো বেচারি ওদের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে।
শবনম নিজের হাত সরিয়ে মনে মনে বলতে শুরু করল,,
শবনমঃ এখানেও পরিস্থিতি অস্থিতিশীল মনে হচ্ছে কেটে পর শবনম।
শবনম সরে আসলো আয়রার সামনে থেকে। শবনম মিমের কাছে যেতে নিলেই হঠাৎ কেউ ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।
মিম আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইয়ানকে খুঁজছে কিন্তু সবাইকে দেখতে পেলেও ইয়ানকে দেখতে পারছে না ও।
হঠাৎ পাশে কারো বসার আভাস পেয়ে পাশে তাকালো ও। ইয়ানকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল মিমের।
কালো রঙের মধ্যে স্টোনের কাজ করা শেরওয়ানি। মিমের ড্রেসের ডিজাইন এর সাথে ম্যাচিং করা। মিম মুগ্ধ চোখে দেখছে ইয়ানকে। ফাইনালি নিজের ভালোবাসার মানুষটি ওর কাছে আছে। ইয়ান মিমের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল।
ইয়ানঃ ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস,,,
মিম লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল।
এইদিকে,,,,
শবনম ভয়ে সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে আছে। কারন ওর সামনে আঁধার দাঁড়িয়ে আছে। রাগে ফুঁসছে ও আর ওর চোখের দিকে তাকাতেই শবনমের কান্না পাচ্ছে। আঁধার শবনমের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে শুরু করে।
আঁধারঃ প্যাকেটে কি এই ড্রেসটা ছিল?
শবনম চুপ করে আছে।
আঁধার এবার ধমক দিয়ে বলল,,
আঁধারঃ কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি?
শবনমঃ ওই প্যাকেটে কোন ড্রেস ছিল?( অবাক হয়ে ভেবে)
আঁধারঃ দ্যাট মিন্স তুমি প্যাকেট টা খুলোই নি?
শবনমঃ না।
আঁধারঃ ইউউ ডাফর,,, আমি ওটা তোমার জন্য পাঠিয়েছি আর তুমি খুলেও দেখ নি হোয়াই?
শবনমঃ আমার ইচ্ছে হয়নি তাই।( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
আঁধারঃ তুমি আমার সাথে একদম ঘাড় তেরামি করবে না বলে দিলাম। আমি ড্রেস আনিয়ে দিচ্ছি তুমি চেঞ্জ করে ওটা পরবে।
শবনমঃ সিরিয়াসলি! আপনি বলবেন আর আমি গুড গার্ল এর মত আপনার সব কথা পালন করব? আপনি কি নিজেকে কোন রাজ্যের কিং ভাবেন??
আঁধারঃ নো ভাবি না কারণ আমি জানি আমি কি। আর তুমি কি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছো? ভূলেও এমন করো না কারন আঁধার কি করতে পারে তার সম্পর্কে তোমার কোন ধারনা নেই।
শবনমঃ আপনি কি করতে পারেন আর কি না সেটা ধারনা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও আমার নেই। আর হ্যাঁ আপনি যদি এটাকে চ্যালেঞ্জ ভাবেন দ্যান ওকে।
আঁধারঃ ওকে চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড। তুমি নিজে থেকেই ওই ড্রেসটা পরবে দেখে নিও।
শবনমঃ জীবনেও না।
আঁধারঃ দেখা যাক। ( বাঁকা হেসে)
আঁধার আর কিছু না বলেই চলে গেল। শবনম আঁধারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বলতে শুরু করে,,,
শবনমঃ আসছে চ্যালেঞ্জ দিতে। ওই প্যাকেট কোথায় রেখেছি আমার নিজেরই মনে নি ইনি কিভাবে খুঁজবে? আর খুঁজলেও কি আমি নিজ থেকে জীবনেও ওনার ড্রেস পরবো না। আর এখন তো চ্যালেঞ্জ করেছি জিততে তো হবেই তাও আঁধার রেজওয়ান এর থেকে। ( দুষ্টু হেসে)
To be continued….
♠️ #The_Vampire_King ♠️
#A_Unknown_Lover
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_32
.
.
.
.
শবনমঃ আসছে চ্যালেঞ্জ দিতে। ওই প্যাকেট কোথায় রেখেছি আমার নিজেরই মনে নি ইনি কিভাবে খুঁজবে? আর খুঁজলেও কি আমি নিজ থেকে জীবনেও ওনার ড্রেস পরবো না। আর এখন তো চ্যালেঞ্জ করেছি জিততে তো হবেই তাও আঁধার রেজওয়ান এর থেকে। ( দুষ্টু হেসে)
শবনম কথা গুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
♠️♠️♠️
ধ্রুবঃ ট্রাস্ট মি কোয়েল জান ও শুধু আমার ভালো বন্ধু নাথিং ইল্স। আমিতো তোমাকে ভালোবাসি বলো অন্য কারো দিকে তাকানোর আগে তোমার চেহারাই চোখে ভাসে আমার ( করুন চোখে)।
কোয়েলঃ সত্যি বলছো নাকি সব আমাকে ভূলানোর ধান্দা।( সন্দেহের চোখে)
ধ্রুব কোয়েলের দু কাধে হাত রেখে ওর চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে শুরু করে।
ধ্রুবঃ বিশ্বাস করতে শিখো কোয়েল কারন বিশ্বাস ভালোবাসার সবচেয়ে স্ট্রং কন্ডিশন।
কোয়েলঃ করি তো বিশ্বাস। অনেক বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি। ( ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে)
ধ্রুব মুচকি হেসে কোয়েলকে জড়িয়ে ধরল।
♠️♠️♠️
তনুর সামনে দিয়ে আয়রা রেগে আশিশকে টানতে টানতে নিয়ে আসলো। হঠাৎ আয়রার এমন বিহেভে আশিশের অনেক হাসি পাচ্ছে ফাইনালি ওর প্লানটা কাজ করছে। এবার হয়তো আয়রার মুখ খুলবে আর বলবে ভালবাসি।
আশিশ কিছুটা রাগার এক্টিং করে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।
আশিশঃ তুই আমাকে এভাবে তনুর সামনে দিয়ে টেনে আনলি কেন? আর একটু হলেই তো ও পটে যেত। তোর জন্য কত বড় অপরচিউনিটিটা মিস হয়ে গেল।
আয়রাঃ তোর সাহস তো কম না তুই আমার সামনে অন্য একটা মেয়েকে পটানোর কথা বলছিস।
আশিশঃ এখানে সাহস এর কি হলো। আর তোর জন্য কি আমি চির কুমার হয়ে থাকবো সারাজীবন।
আয়রাঃ প্রয়োজন পরলে সেটাই হবি। তাও ওই তনু ডায়েনের ধারের কাছেও যাবি না।
আয়রা শক্ত করে আশিশের হাত ধরে নিল।
আয়রাঃ পুরো পার্টিতে তুই আমার সাথে থাকবি ইজ দ্যাট ক্লিয়ার। ( রেগে)
আশিশঃ হুম ( ভয়ে ভয়ে)
♠️♠️♠️
ইয়ান সবার আড়ালে মিমের হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নিল। মিম চমকে ইয়ানের দিকে তাকালো আর ইয়ান মিমের ভয়ার্ত ফেস দেখে হেসে দিল।
ইয়ানঃ চিল বেবি জাস্ট হাত ধরেছি কিস করিনি এতো ভয় পাওয়ার কি আছে।
মিম রাগি লুক নিয়ে ইয়ানের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলল।
মিমঃ এভাবে যে হাত ধরেছেন বাড়ি ভর্তি মেহমান দের সামনে যদি কেউ দেখে ফেলে লজ্জা তো আমার পেতে হবে।
ইয়ানঃ সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত কারও আমাদের দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই আর তাছাড়া কেউ দেখলেও কি আমি তো তোমার হবু বরই কি বলো?
ইয়ানের কথায় বাইরে দিয়ে রাগি ভাব আনলেও মনে মনে ঠিকই খুশি লাগছে মিমের। ইয়ান ওর হবু বর কয়েক দিনের মধ্যে সম্পুর্ণ বর হয়ে যাবে।
শবনম সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখে ইয়ান আর মিমের শুভ দৃষ্টি চলছে। আশেপাশে কারো দিকে ওদের খেয়াল নেই। শবনম ধীর পায়ে ওদের সামনে গিয়ে বলে উঠে।
শবনমঃ সব রোমান্স কি এখনি করে ফেলবে বিয়ের পরের জন্যেও কিছুটা জমিয়ে রাখো ডিয়ার আপি এন্ড জিজ।
শবনমের কথায় ওদের ঘোর থেকে যায় মিম দ্রুত একটু দূরে সরে বসে।
ইয়ানঃ তোমার মেহেরবানী তে রোমান্স আর করতে পারলাম কই ডিয়ার শালিকা। ( অসহায় ভাবে)
শবনমঃ আপনি কি আমাকে ইনডাইরেক্টলি কাবাবে হাড্ডি বলছেন জিজ?( চোখ কুঁচকে)
ইয়ানঃ সেই সাধ্য কি আমার আছে সুইট কিউট গোলু মোলু শবনম বেবি। তুমি তো আমার ওয়ান এন্ড অনলি পিস শালিকা। তার উপর আমার বেস্ট স্টুডেন্ট…. শুধু আমার না পুরো কলেজের বেস্ট স্টুডেন্ট( পাম মেরে)
শবনমঃ হয়েছে হয়েছে আর পাম মারতে হবে না পরে দেখা যাবে দেশে পাম অয়েলের অভাব পরবে তখন আর রান্না করে খাওয়া লাগবে না। ( হামি দিয়ে)। চলে যাচ্ছি আমি হুহ নিজেদের রোমান্স কন্টিনিউড করেন।( আড়ি চোখে)
ইয়ানঃ দ্যাট্স লাইক মাই বেস্ট স্টুডেন্ট। তোমাকে তো আমি এই বছরের স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার এর ট্রফি দিব।
শবনমঃ পাম এবার ওভারলোড হয়ে পরে যাচ্ছে। পরে দেখা যাবে আপনারা পিছল খেয়ে পরে যাবেন পরে আর এঙ্গেজমেন্ট হবে না। ( যেতে যেতে বলল)
শবনম চলে যেতেই ইয়ান হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ইয়ান আবারো মিমের কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে এনে ওর কাঁধে মাথা রেখে আহত কন্ঠে বলল।
ইয়ানঃ তোমার বিচ্ছু বোন কি আমাদের বাসর ঘরে ঢুকেও আমার রোমান্স এর তেরটা বাজাবে জান।
মিমঃ এখন কান্না করছেন কেন? সবসময় তো ওর সাপোর্ট টানেন আর আমাকে বকেন। ভালোই হবে যদি ওরমটা করে।
ইয়ান ঝট করেই মিমের কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে বলতে শুরু করল।
ইয়ানঃ তার আগেই তোমাকে নিয়ে দেশের বাইরে দৌড় দিব। তারপর দেখবো আমার রোমান্স এর তেরটা কিভাবে বাজায়।( বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে)
মিমঃ দেখা যাবে। ( হাসতে হাসতে)
ইয়ানঃ দেখে নিও হুহ্।
♠️♠️♠️
শবনম হল রুম ঘুরছে একা একা। কি করবে বেচারি সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। হঠাৎ শবনমের শরীরে কোথা থেকে পানি জাতীয় কিছু পরল।
শবনমঃ হোয়াট দ্যা হ্যাল্লল
শবনম নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো পুরো জামাতে ওয়াইন লেগে গেছে আর বাজে গন্ধ আসছে। শবনম রেগে আসেপাশে তাকালো দেখার জন্য এটা কার কাজ। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না ও যাকে সন্দেহ করা যায়।সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত তাহলে ওর উপর ওয়াইন ফেলল কে।
শবনম কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এখন এই ড্রেস পরে থাকা কিছুতেই সম্ভব নয় যা বাজে গন্ধ আসছে এর থেকে। শবনম আশেপাশে কোয়েলকে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। আর উপায় না পেয়ে শবনম কোয়েলকে ফোন করল।
শবনমঃ কোয়েল কোথায় তুই?
কোয়েলঃ বেবি আমি তো ধ্রুবর সাথে বাইরে কেন?
শবনমঃ আমার ড্রেস নষ্ট করে দিয়েছে কোন খবিশে যেন। আমার আরজেন্টলি ড্রেস লাগবে।
কোয়েলঃ বেবি আমার রুমে রাখা আছে তুই গিয়ে চেঞ্জ করে নে। আমি আসতে পারলে তো আসতামই বল।
শবনমঃ ইট্স ওকে আমি নিজে গিয়েই নিয়ে নিচ্ছি।
কোয়েল ফোন কেটে দিয়েই সামনে তাকায়।
কোয়েলঃ কাজ হয়ে গেছে ভাইয়া।
আঁধারঃ ওয়েল ডান কোয়েল খুব ভালো এক্টিং জানো তুমি। থ্যাংক ইউ।
কোয়েলঃ আই নো আ’ম আ গুড এক্ট্রেস। ( ভাব নিয়ে)
কোয়েলের কথা শুনে ধ্রুব বিষম খেল। ‘‘ কি মেয়ে নিজের তারিফ নিজেই করে’’( ভাবছে ধ্রুব)
শবনম রাগে ওয়াইন ওয়ালাকে বকতে বকতে কোয়েলের রুমে পৌঁছায়। রুমে ঢুকতেই দেখে অলরেডি একটা ড্রেস রাখা রুমে। শবনম গিয়ে ড্রেসটা তুলে নিখুঁত ভাবে দেখতে লাগল। সাদা পাথরের কাজ করা কালো রঙের গাউন।
শবনমঃ ওয়াওও। কিন্তু এটা এখানে কেন? হয়তো কোয়েল পড়ার জন্য বের করেছিল কিন্তু ওর পছন্দ হয়নি তাই এখানেই রেখে গেছে। এক কাজ করি এটাই পরে ফেলি।
শবনম আর কিছু না ভেবেই ড্রেসটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। চেঞ্জ করে এসে নিজেকে আয়নায় দেখছে ও। আসলেই ড্রেসটা ওর উপর মানিয়েছে। শবনম চুল গুলো আরেকটু আচরে সব ঠিক করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
হলে আসতেই আঁধারকে দেখতে পেল ও। আঁধারের ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি। শবনম ভ্রু কুঁচকে তাকায় আঁধারের দিকে। আঁধার বাঁকা হেসে চলে যায়। শবনম বুঝতে পারছে না আঁধারের বিষয়টা।
ইয়ান আর মিমকে দাঁড় করায় মায়া। এখন ওদের রিং বদলের চ্যাপ্টার। শবনম মিমের পাশে এসে দাঁড়ায় আর কোয়েল ইয়ানের।
মায়ার হাত থেকে রিং নিয়ে শবনম মিমের হাতে দেয়। ইয়ান নিজের হাত বাড়িয়ে দিতেই মিম ওর বাম হাতের আঙ্গুলে রিং টা পরিয়ে দেয়। সবাই তালি দিয়ে উঠে।
আঁধার কোয়েলের হাতে রিং এর বক্স দেয় আর কোয়েল রিং বের করে ইয়ানের হাতে দেয়। শবনম মিমের হাত ধরে সামনে বাড়িয়ে দেয় আর ইয়ান মিমের হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে রিং পরিয়ে দেয়। এঙ্গেজমেন্ট কমপ্লিট।
ইয়ান আর মিমকে বসিয়ে দিয়ে সবাই ওদের মুখে মিষ্টি তুলে দেয়। ইয়ানের সামনে মিষ্টি বারাতেই ইয়ান ঘাবড়ে যায় কি করবে এখন ও ।
হঠাৎ আঁধার মায়াকে থামিয়ে বলে উঠে,,
আঁধারঃ আন্টি ইয়ানের মিষ্টি যে এলার্জি আছে।
মায়াঃ ওও থাক তাহলে মিষ্টি খাওয়া লাগবে না।
ইয়ান আর আঁধার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। ওদের ফেপ এক্সপ্রেশনটা আসিফ বরাবর খেয়াল করলো। ওর মনে কেমন যেন একটা সন্দেহ ঢুকে পরল।
ফটোগ্ৰাফার রা বেশ কিছু ছবি তুলল সবার। তারপর ইয়ান আর মিমকে সেন্টার টেবিলে বসিয়ে দেওয়া হলো।
লাইট আবার হালকা হয়ে গেল। স্টেজের মধ্যে কয়েকজন লোক ভায়োলিন নিয়ে উঠলেন। রোমান্টিক আর সফ্ট মিউজিক দিচ্ছে তারা ভায়োলিনে।
হঠাৎ শবনমের মাথায় বুদ্ধি চাপলো আর ও দৌড়ে গিয়ে ইয়ান আর মিমকে টেনে স্টেজে নিয়ে আসলো।
শবনমঃ যাদের জন্য এতো আয়োজন তারাই যদি পার্ফরম্যান্স না করে ব্যাপারটা মোটেও জমবে না কি বলো জিজ?( ইয়ানকে)
ইয়ানঃ দ্যাট্স লাইক মাই শালিকা। কত সুন্দর চিন্তা ভাবনা ঘুরঘুর করে ওর মাথায়। শিখ কিছু ওর থেকে মিম।
মিম চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইয়ানের দিকে। ও বুঝাতে চাইছে একটু আগে ও শবনমকে কাবাবের হাড্ডি বলেছে সেটা কি এখন বলে দিবে নাকি?
ইয়ান ইশারা করে না বলে।
শবনমঃ তোমরা ইশারায় পরে কথা বলো এখন একটা সুন্দর পারফরম্যান্স দাও।
শবনম সরে গেল ওদের কাছ থেকে আর ডিজে কে ইশারায় গান প্লে করতে বলল।
ইয়ান মিমের কোমড় জড়িয়ে ওকে নিজের কাছে এনে ওর হাতে হাত রেখে নাচতে শুরু করল।
ম্যায় বারিশ হো জায়ুঙ্গা তুম বাদাল হো জায়োগি
……দেখ লেনা দেখ লেনা……
ইতনা তুমকো চাহুঙ্গা তুম পাগাল হো জায়োগি
……দেখ লেনা দেখ লেনা……
ক্যাহতা হ্যায় সুন্ ইয়ে ধূপ কিনারা
তেরা হুয়া ম্যায় সারা কা সারা
দেখ লেনা তেরে হোঠো পে হামেশা
ম্যায় হাসতা হি রাহুঙ্গা দেখ লেনা
দেখ লেনা ভিগি জো তেরি আখে
আখো সে ম্যায় বাহুঙ্গা দেখ লেনা….?
কোয়েল ধ্রুবর দিকে ঘুরে ওর কাধে হাত রাখে। ধ্রুব কোয়েলের কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর চোখের দিকে তাকায়।
হুমম দিল তো হ্যায় হার সিনেমে
হ্যায় পেয়ার লেকিন মুঝমে
সাভসে জিয়াদা দেখ লেনা…
হুমম আপনি লাকিরো মে ম্যায়
লিখ লুঙ্গি খুদহি তুমকো
হ্যায় মেরা ওয়াদা দেখ লেনা….?
আশিশ আয়রার হাত শক্ত করে ধরে। আয়রা অবাক চোখে তাকায় আশিশের দিকে। আশিশ মায়াবী চোখে আয়রার দিকে তাকিয়ে লিরিক বলে।
ক্যাহতা হ্যায় সুন্ ইয়ে ধূপ কিনারা
তেরা হুয়া ম্যায় সারা কা সারা
দেখ লেনা তেরে হোঠো পে হামেশা
ম্যায় হাসতা হি রাহুঙ্গা দেখ লেনা
দেখ লেনা ভিগি জো তেরি আগে
আখো সে ম্যায় বাহুঙ্গা দেখ লেনা
শবনম আঁধারের দিকে একপলক তাকালো। আঁধার ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
শবনম আঁধারের সামনে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখে। আঁধার মুচকি হেসে শবনমকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। শবনম আঁধারের দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,
বারসো না ভূলো গে তুমি
এ্যাসি কাহানী তুমসে
ক্যাহ জায়েঙ্গে হাম দেখ লেনা
শবনম আঁধারের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিল।
হুমম এ্যাসা ভি হোগা ইকদিন
দিলকি জাগাহ সিনেমে
রেহ জায়েঙ্গে হাম দেখ লেনা
ক্যাহতা হ্যায় সুন্ ইয়ে ধূপ কিনারা
তেরা হুয়া ম্যায় সারা কা সারা
দেখ লেনা ভিগি জো তেরি আখে
আখো সে ম্যায় বাহুঙ্গা দেখ লেনা
গান বন্ধ হতেই সবাই মিলে হাত তালি দিতে শুরু করে। তালির আওয়াজে শবনমের ঘোর কেটে যায়। ও সামনে তাকিয়ে দেখে আঁধার আগের মতই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আর শবনম নিজের। তার মানে ও এতক্ষন নিজের কল্পনায় ছিল।
শবনম নিজের মাথায় হালকা চড় বসিয়ে নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করে।
শবনমঃ স্টুপিড ডাফরর আর কাউকে পেলি না শেষ মেষ এই শয়তান রেজওয়ান কে নিয়ে ড্রিম ডান্স করলি।
To be continued….