Unending_love♥️,পর্ব- ২

0
670

#Unending_love♥️,পর্ব- ২
লেখা- পূজা

৪বছর আগে,,
তখন বর্ন অনার্স শেষ করে মাস্টার্স ভর্তি হয়েছে আর তিয়া ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে। কিছুমাস পর এইচ এস সি পরীক্ষা তাই কলেজ থেকে পিকনিক এর এরেইজমেন্ট করা হয়। টিচারস, স্টুডেন্ট এর ইচ্ছায় সাজেক যাওয়ার প্লেন করে। সাজেক তিয়ার স্বপ্নের জায়গা ছিলো। তাই বাসায় গিয়ে বাবাকে রাজী করায় যাওয়ার পারমিশন দেওয়ার জন্য। তুষার রাজি ছিলো না। তবুও বোনের ইচ্ছের জন্য রাজী হয়ে যায়। তারপর বাবাকে রাজী করায়। দুদিন এর ট্রিপ। আজ রাতে রওয়ানা দিবে কাল ভোরে খাগড়াছড়ি পৌছবে। সেখান থেকে দীঘিনালা যাবে দশটার ভিতরে। তারপর সাজেক। সেখানে এদিন কিছু জায়গা ঘুরে দেখবে পরেরদিন বাকি জায়গা ঘুরবে তারপরে খাগড়াছরি ফিরে সেখানে কিছু জায়গা দেখবে। রাতে রওয়ানা দেবে ভোরে ঢাকা বেক করবে।
তিয়ার বেষ্টফ্রেন্ড সায়রাও যাবে।
যাওয়ার দিন রাত দশটার আগেই তিয়া রেডি হয়ে চলে যায় কলেজে তুষার এগিয়ে দিয়ে যায়। তিয়া গিয়ে দেখে সায়রা দারিয়ে আছে। তিয়া সায়রার কাছে গিয়ে বলে,
—- এখানে দারিয়ে কি করছিস।
—- তর জন্যই ওয়েট করছিলাম।
—- চল এখনি বাস ছেড়ে দেবে।
—- হুম।
রাত দশটায় বাস ছেড়ে দেয়। সেখান থেকেই বাসে করে খাগরাছড়ি যায়। খাগরাছড়ি শহরে সারে ছয়টায় পৌছায়। এফএনএফ নামে একটা হোটেলে যায় হালকা নাস্তা করার জন্য। রেষ্টুরেন্টটা অনেক বড় হাত মুখ ধোয়ার জন্য প্রচুর জায়গা আছে। সবাই ফ্রেস হয়ে খেয়ে দীঘিনালা যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করে। দশটার সময় এসকোর্ট যায় এইটা মিস করলে তাদের আর সাজেক ভ্রমণ হবে না। দীঘিনালা গিয়ে এসকোর্টে করে দুইঘন্টা পথ অতিক্রম করে সবাই সাজেক পৌছায়। আলো রিসোর্ট নামে একটা রিসোর্টে উঠে। তিয়া বারান্দায় গিয়ে রিসোর্টের চারপাশ মন ভরে দেখছে। সায়রা তিয়ার পাশে এসে বলে,
—- কেমন লাগছে।
—- দেখ, জায়গাটা কত্ত সুন্দর মন ভরে গেলো।
দুহাত দুদিকে নিয়ে তিয়া পরিবেশটা উপভোগ করছে। সায়রা বললো,
—- এখন চল। সবাই লাঞ্চ করতে যাবে। পরে আমাদের রেখেই চলে যাবে।
—- ওকে চল।
মনটানা নামক একটা হোটেলে তারা লাঞ্চ করতে যায়। হাসের মাংস, শুটকি ভর্তা, ডাল, আলু ভর্তা, সবজি আর ভাত এগুলো ছিলো খাবারের আইটেম। ব্যাম্ব চিকেন ও সাথে ছিলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আশেপাশে ঘুরতে বের হলো সবাই। চারিদিকে রিসোর্ট,কটেজ,টিন সেটের অসংখ্য বাড়ি,কাটের রাস্তা,গাছপালা সব মিলিয়ে জাসগাটা জাস্ট ওয়াও। তারা ঘুরতে ঘুরতে অর্ধ তৈরি করা একটা কটেজে যায়। যা তৈরি করতে এখনো কিছুটা বাকি। সেখান থেকে দারিয়ে চারপাশ দেখতে আরো অপুর্ব লাগছে। ছোটছোট পাহাড় সবদিকে গাছপালা এই জায়গাটা অসাধারন। তিয়া ছবি তুলতে অনেক পছন্দ করে নিজের না প্রকৃতির। কিন্তু এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে ছবি তুলার কথাই ভুলে গেছে। সায়রা তিয়ার পাশে এসে বলে,
—- কিরে তুই তো ছবি তুলতে অনেক ভালোবাসিস। এখনো একটা ছবি ও তুললি না।
—- এই অপুর্ব দৃশ্য দেখে মাথা হ্যাঙ হয়ে গেছে। অন্য কিছুর কথা মাথায়ই আসছে না।
—- যা বলেছিস। সত্যিই অসাধারন। না আসলে কতো কিছু মিস করতাম।
—- হুম।
সেখান থেকে বেরিয়ে যায় তারা সাজেক বিলাস। এতো রোদ এর মাঝে হঠাৎ চলে আসে বৃষ্টি। সবাই একটি দোকানে আশ্রয় নেয়। তিয়া সায়রার হাত ধরে দৌরে নিয়ে যায় বৃষ্টিতে ভিজার জন্য। সায়রা বললো,
—- আমি ভিজবো না। আমাকে ছাড়।
—- সাজেক এসে বৃষ্টিতে ভিজবো না এটা হতেই পারে না। কোনো কথা না বলে এটা উপভোগ কর।
বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ভিজে সবাই রিসোর্টে ফিরে গেলো। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে আবার বেরিয়ে পরলো সাজেক স্টন গার্ডেন দেখতে। সাজেকে আর্মির কিছু বানানো স্পট আছে। যেখানে বিশটাকা টিকিট করে ডুকতে হয়। তার মধ্যে একটি হলো স্টন গার্ডেন। এখানে রয়েছে ছোট বড় অনেক পাথর। আর নিছে ঘাস। এখানেই মানুষ বসে বিকেলটা উপভোগ করে। ভিতরে ডুকে তারা। দুটু ছেলেকে দেখে তিয়া একটু অবাক হয়। কারন ওদের আগে ও দেখেছে কলেজ থেকে আসার সময় প্রায়ই দেখে। বাট চিনে না নাম ও জানে না। তাই তিয়া এদের দিকে নজর না দিয়ে প্রকৃতিক দৃশ্য অনুভব করতে শুরু করলো। হঠাৎ তিয়া পিছনে তাকিয়ে দেখলো দুটু ছেলের মাঝে একটি ছেলে এদিকেই আসছে। ছেলেটি সায়রার কাছে এসে বললো,
—- আপনাদের কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে। কোথা থেকে এসেছেন?
—- আমরা ঢাকা থেকে আসছি।
—- ও। তোমরা বনানী থাকো?
—- হুম।
—- ও। আমি ও তো বনানী থাকি।সেই জন্য চেনাচেনা লাগছে। তা এখানে?
—- কলেজ থেকে পিকনিকে এসেছি।
—- ও কোন ক্লাসে পরো।
—- ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। আপনি?
—- ও। আমি মাস্টার্স। তোমার নাম কি?
—- সায়রা। আপনার? আর এখানে?
—- আয়ান। আমার বেষ্টফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।
এভাবে আয়ান আর সায়রা কিছুক্ষণ কথা বললো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই সবাই আবার রিসোর্ট এ ফিরে গেলো।
পরেরদিন সকাল পাচটায় সবাই পাহাড়ের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। হেলিপেন্ট এর উপর দারিয়ে আছে সবাই সূর্যদয় দেখার জন্য। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। চারিদিকে মেঘ। চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। সূর্যদয় দেখার পর তারা রওয়ানা দেয় কংলাক পাড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
কাচা রাস্তা চারিদিকে জঙ্গলের মতো গাছপালায় ভরা। তিয়া ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছে আর আস্তে আস্তে হাটছে। কাচা রাস্তা হওয়ার কারনে মাঝে মাঝে অনেক গর্ত আর ফাটা জায়গা রয়েছে। তিয়া ছবি তুলায় আর প্রাকৃতিক সুন্দর্য উপভোগ করায় এতোটাই মগ্ন ছিলো যে ও লক্ষ্য করে নি সামনে গর্ত। সবাই অনেকটা এগিয়ে গেছে সায়রাও ওদের সাথেই আছে। তিয়াকে দেখে নি। হঠাৎ তিয়া হোঁচট খেয়ে পরে যেথে নিলেই কেউ একজন ধরে ফেলে। তিয়ার হাত থেকে ক্যামেরাটা পরে যায়। তিয়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় ও ভেবেছিলো নিচে পরে গেছে। কিন্তু ও তাকিয়ে দেখে একটা ছিলে ওকে ধরে রেখেছে। ছেলেটি বলে,
—- দেখে চলতে পারেন না। এখনি পা টা ভাঙ্গতো।
—- সরি। এন্ড থ্যাংকস।
—- ইটস ওকে।
তিয়া ভালো করে তাকিয়ে দেখে কালকের ওই ছেলেটাই। আর এর ফ্রেন্ডই সায়রার সাথে কথা বলেছিলো। তিয়া সামনে তাকিয়ে দেখে ওর সাথের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সবাই উপরে উঠে গেছে। নিচ থেকে ক্যামেরাটা তুলে তিয়া ছেলেটাকে বললো,
—- আমি যাই। সবাই আমাকে রেখে চলে গেছে। এখন না গেলে যদি সবাইকে হারিয়ে ফেলি।
—- এখন জলদি হাটতে গিয়ে আবার হোঁচট খেয়ে পরবেন।আপনি চাইলে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি। আপনার ফ্রেন্ডদের কাছে পৌছে দিতে।
—- আপনার সাথে আর একজন ছিলো না। কাল দেখেছিলাম স্টন গার্ডেন এ।
—- ও। আয়ান? ও আসছে।
—- অহ! আচ্ছা তাহলে আসুন।
তারপর দুজন চুপচাপ একটু দূরত্ব বজায় রেখে হাটছে। পাহাড়ের কাছে এসে তিয়া দারিয়ে যায়। কোনো সাপোর্ট ছাড়া উঠলে তো ও পরে যাবে। যাবে কিভাবে। ওদিকে ছেলেটা পিছনে না তাকিয়েই অনেকটা চলে গেছে। হঠাৎ ছেলেটি দারিয়ে যায় আর পিছনে তাকায়। তিয়া দারিয়ে আছে দেখে আবার নিচে নেমে তিয়াকে বললো,
—- কি হলো দারিয়ে আছেন কেনো?
—- আমি একা কিভাবে উঠবো। যদি পরে যাই।
ছেলেটি কিছুক্ষণ কি একটা ভাবলো তারপর বললো,
—- আপনি চাইলে আমার হাত ধরে উপরে উঠতে পারেন।
ছেলেটির কথা শুনে তিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। একটা অচেনা ছেলের হাত কিভাবে ধরবে। যতই ওর শহরের হোক। অচেনা তো। তিয়ার কোনো রিয়াকশন না দেখে ছেলেটি আবার বললো,,
—- দেখুন এভাবে দারিয়ে তাকলে তো চলবে না। উপরে উঠতে হবে। আর এখানে কোনো শক্ত লাঠি ও নেই যে তার সাপোর্টে উঠবেন। বেশি লেইট করলে। কিছুই দেখার সুযোগ ও পাবেন না।
তিয়া আর কিছু না ভেবে ছেলেটার হাত ধরে ফেললো। তারপর উপরে উঠতে শুরু করলো। উপরে উঠতে উঠতেই তিয়া ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো,
—- আপনার নাম কি?
তিয়ার কথা শুনে ছেলেটি তিয়ার দিকে তাকালো। তিয়া আবার বললো,
—- না মানে এতো সময় ধরে কথা বলছি। আপনি আমায় হেল্প ও করছেন অথচ আমি আপনার নাম জানি না। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
—- বর্ন!
—- কি!! স্বরবর্ন না ব্যঞ্জনবর্ন।
তিয়ার কথা শুনে বর্ন দারিয়ে গেলো আর তিয়ার দিকে তাকালো রাগি চোখে। বর্নর দারানো দেখে তিয়া বর্নর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,,
—- সরি আমি মজা করছিলাম।
বর্ন মুচকি হেসে বললো,
—- আমি ও মজা করছিলাম।
—- তারমানে আপনি রাগ করেন নি।
—- না।
—- বাই দা ওয়ে। আমি তিয়া।
—- অহ!
তিয়া আর বর্ন আর কোনো কথা বলে নি। উপরে উঠে কংলাক পাড়া দেখতে লাগলো। সাইড এর পাথরগুলা অনেক পিছলে। আশেপাশে তাকিয়ে তিয়া বাকিদের খুজতে লাগলো। কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। বর্ন তিয়ার কাছে এসে বললো,
—- আপনার ফ্রেন্ডরা কোথায়। পেয়েছেন?
—- পাচ্ছি না।
—- খুজে দেখুন।
—- ওকে দেখতেছি। বাট জায়গাটা কতো সুন্দর এটা ও এখন উপভোগ করি।
—- ওকে। সাবধান সাইডে যাবেন না।
তিয়া চারপাশ দেখছে আর ছবি তুলছে। এর মধ্যে আয়ান এসে বর্নকে বললো,
—- তুই এখানে কি করছিস। চল।
—- (তিয়াকে দেখিয়ে) ওই মেয়েটা ওর ফ্রেন্ডদের হারিয়ে ফেলেছে। ওকে তাদের কাছে দিয়ে তারপর যাই।
—- ওকে তো আমি চিনি। আমাদের এলাকায়ই থাকে। কি ব্যাপার যে ছেলে মেয়েদের থেকে সমসময় দুরে দুরে থাকে সে আজ একটা মেয়েকে……
আয়ানকে থাকিয়ে,
—- তুই অযতাই ব্যাপারটা নেগেটিভলি নিচ্ছিস। মেয়েটা অনেক ছোট। হারিয়ে গেলে কি হবে ভেবে দেখেছিস।
—- হুম। বুঝি বুঝি।
বর্ন আর আয়ান এর কথায় কান দিলো না। ও জানে আয়ান এটা নিয়ে মজা করবেই। কিছুক্ষণ ঘুরার পর তিয়া বর্ন আর আয়ানের কাছে আসলো। আর কাদো কাদো মুখ করে বললো,,
—- আমি ওদের কাউকে খুজে পাই নি।
—- কি? এখন কি করবেন।
আয়ান তিয়ার কাদো কাদো ফেইস দেখে বললো,,
—- আরে কাদছো কেনো। আমরা ওদের খুজে দেবো। তুমি কান্না বন্ধ করো।
বর্নর তিয়ার এই ফেইস দেখে অনেক হাসি পাচ্ছে। আগে বর্নর নামকে নিয়ে মজা করেছিলো এখন বর্নর মাথায় ও দুষ্টু বুদ্ধি এলো আয়ানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বর্ন বললো,
—- এখন কি করবেন। আপনার সাথের এরা তো আপনাকে রেখে চলে গেছে মনে হয়। এবার বাড়ি যাবেন কি করে। আমরা ও তো এখন চলে যাবো। আপনি একা এখানে কি করবেন।
আয়ান বর্নর দিকে আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
বর্নর কথা শুনে এবার তিয়া জোরেই কেদে দিলো। এটা বর্ন আশা করে নি। ও তো শুধু মজা করছিলো।
—- আরে আরে এইভাবে কাদছেন কেনো আমি তো মজা করছিলাম।
—- আপনি খুব পচা। আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন কেনো।
—- ওকে। কান্না বন্ধ করেন। আর এখানের সব জায়গা খুজে দেখি পাই কি না।
—- ওকে।
তিয়া বর্ন আয়ান, সায়রা বা সাথের কাউকেই খুজে পায় নি। এবার বর্নর একটু টেনশন হচ্ছে। বর্ন তিয়ার কাছে এসে বললো,
—- চলুন নিচে গিয়ে দেখি। ওরা ওখানে আছে কিনা।
তারপর ওরা নিচে চলে গেলো। নিচে গিয়ে তিয়া দেখে ওরা যে চান্দের গাড়ি করে এখানে এসেছিলো ওটা এখানে নেই। এটা দেখে তিয়া এবার অনেক জোরেই কান্না করে দিলো। তা দেখে আয়ান বর্নর কানে কানে বললো,
—- এই মেয়েটার চোখে এতো জল কোথা থেকে আসে বলতো। সব কিছুতেই শুধু কেদে দেয়।
—- আমি ও ভেবে পাচ্ছি না। এখন কি করবো। ওকে তো একা রেখে ও যেথে পারবো না।
—- আমাদের তো আরো পনেরোদিন পর ফেরার প্লেন। আরো অনেক জায়গা ঘুরবো।
—- ওয়েট, ওকে জিজ্ঞেস করে দেখি। হোটেলে গেলে ওদের পাবে কিনা।
বর্ন তিয়ার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
—- আপনারা কোন হোটেলে উঠেছেন। সেখানে গেলে কি তাদের পাবো।
—- আজ ওরা খাগড়াছরি ফিরে যাবে। হোটেলে উঠবে না।
—- ওহ সিট। তাহলে কাউকে ফোন দিয়ে দেখেন ওরা কোথায়।
—- আমার কাছে ফোন নেই।
—- আমার ফোন দিয়ে করেন।
তিয়া বর্নর ফোন দিয়ে সায়রাকে কল করলো। কিন্তু সায়রা ফোন ধরছে না। অনেকবার কল করার পরো ধরে নি। ওর আর কারো নাম্বারো মনে নেই। কেদে কেদেই বর্নকে বললো,
—- সায়রা ফোন ধরছে না আর কারো নাম্বার ও মনে নেই।
বর্ন তিয়ার কাছ থেকে চলে এসে আয়ান এর কাছে গেলো গিয়ে বললো,
—- মনে হয় প্লেন ক্যানচেল করতে হবে। এভাবে মেয়েটিকে তো একা রেখে যাওয়া যাবে না।
—- হোটেলে গেলে হবে না।
—- না। আর ফোন দিয়ে ও পায় নি। আজই ঢাকায় বেক করতে হবে।
আয়ান মন খারাপ করে বললো,
—- হুম।
তারপর আয়ান তিয়ার কাছে গিয়ে বললো,
—- তুমি চাইলে আমরা তোমাকে ঢাকা পৌছে দিতে পারবো। আজ রাতের বাসে খাগড়াছরি থেকে ঢাকা বেক করবো।
তিয়া আর কোনো রাস্তা না পেয়ে রাজি হয়ে গেলো।
তারপর তিয়া বর্ন আর আয়ান এখানেরই একটা হোটেলে সকালের নাস্তাটা সেরে ফেললো। নাস্তা সেরে তারা খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠলো। বর্ন মনে মনে ভাবলো, সেখানে গিয়ে যদি ওর ফ্রেন্ডদের খুজে পাই তাহলে অনেক ভালো হবে। আমাদের প্লেন ক্যানচেল করতে হবে না। আর না পেলে। আজই ঢাকা চলে যেথে হবে।
হঠাৎ গাড়িটা থেকে গেলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো। খুব সুন্দর একটা কেন্টিন।
একটা লেক এর উপর কেন্টিনটা রয়েছে। চারদিক টা খুব সুন্দর পানির উপর কেন্টিনটা হওয়ার কারনে আরো সুন্দর লাগছে। কেন্টিনটার নাম প্রশান্ত কেন্টিন এন্ড বেকারি। তিয়া সেখানে গিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো পানিতে পা ডুবিয়ে। তা দেখে বর্ন বললো,
—- দেখবেন পরে যাবেন।
বর্নর বলতে দেরি হলো। তিয়ার পরতে দেরি হয় নি। তিয়া সাথে সাথে দপাস। এদিক দিয়ে একটা ছেলে যাচ্চিলো। ছেলেটার পা তিয়ার পিটে লেগে যায় আর তিয়া নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে যায়। তিয়া সাতার জানে না। তাই পানিতে পরে হাবুডুবু খাচ্ছে। বর্ন আর আয়ান এটা দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না। চারপাশের মানুষ হা করে তাকিয়ে আছে। আয়ান বর্নর কাছে গিয়ে বললো,
—- ভাই কিছু কর মেয়েটা মনে হয় সাতার জানে না। আর আমি ও জানি না।
আয়ানের কথা শুনে বর্ন একবার আয়ানের দিকে তাকালো। তারপর সাথে সাথে বর্ন পানিতে লাফ দিলো। সাতার কেটে তিয়াকে পারে আনলো। তিয়া অনেক পানি খেয়ে ফেলেছে। ভয় পেয়ে জ্ঞান ও হারিয়ে পেলেছে। আয়ান বর্নর কাছে গেলো। গিয়ে বললো,,
—- পানি খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। পানি বের করতে হবে।
বর্ন কাপা কাপা হাতে। তিয়ার পেটে চাপ দিলো। পানি বের হয় নি। বুকে হাত দিবে কিনা ভাবছে। আয়ান বললো,
—- এতো ভাবিস না। তর কোনো খারাপ ইনটেনশন তো নেই। তারাতারি পানি বের কর।
বর্ন একবার তিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বুকে চাপ দিলো। আর পানি বের হয়ে গেলো। বাট জ্ঞান ফিরে নি। তা দেখে বর্ন আয়ানকে বললো,
—- জ্ঞান তো ফিরে নি।
—- আক্সিজেন লাগবে শ্বাস নিতে হয়তো পারছে না।
—- এবার কি করবো।
—- তারাতারি ভাব। দেরি করলে মেয়েটার কিছু হয়ে যেথে পারে।
বর্ন কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর আয়ানকে বললো,
—- তুই চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে তাকা।
আয়ার একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
—- বুঝেছি। ওকে। কেরি অন।
বর্ন আয়ানের কথায় পাত্তা না দিয়ে তিয়ার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গেলো। আর বর্ন নিজের মুখ দিয়েই তিয়াকে অক্সিজেন দিলো। কিছুক্ষণ এর মধ্যে তিয়ার জ্ঞান ফিরে এলো। তিয়া তাকিয়ে দেখে বর্নর মুখ ওর মুখের মাঝে। তা দেখে তিয়া তারাতারি সরে গেলো।
বর্ন উঠে একটু দুরে দারালো। বর্নর নিজের কাছে ও খারাপ লাগছে বাট ওর কিছু করার ছিলো না। তিয়া উঠেছে দেখে আয়ান তিয়ার কাছে গেলো আর সব খুলে বললো। আয়ান এর কাছ থেকে সব শুনে তিয়া বুঝতে পারলো কেনো বর্ন এমনটা করেছে। আয়ান আবার বললো,,
—- বর্ন কিন্তু খুব ভালো ছেলে কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না। খারাপ কাজ করবে তো দুরের কথা। ও জাস্ট তোমাকে বাচানোর জন্য……
আয়ানকে তাকিয়ে,,,
—- আমি বুঝতে পারছি আর এক্সপ্লেইন করতে হবে না।
তিয়া আস্তে আস্তে হেটে এগিয়ে গেলো বর্নর দিকে। বর্নর কাছে গিয়ে বললো,,
—- থ্যাংকস আমাকে বাছানোর জন্য।
বর্ন একবার তিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। তারপর আয়ানের দিকে। আয়ান ইশারায় বুঝালো ও সব বলেছে।
বর্ন মুচকি হেসে বললো,,
—- ইটস ওকে। এরপর থেকে সাবধানে থাকবেন।
—- ওকে।
—- আপনার কাপড় বিজে গেছে। থাকতে পারবেন। খাগড়াছড়ি গিয়ে কোনো হোটেলে চেন্জ করতে হবে।
—- আমি পারবো। আপনার কাপড় ও তো বিজা।
—- আমি ছেলে। এসব আমার জন্য কিছু না।
আয়ান ওদের কাছে এগিয়ে এসে বললো,,
—- চলো অনেক দেখা হয়েছে। এবার গাড়ি ছেড়ে দেবে। এখন সবাই যাবো রিসাং ঝর্না দেখতে।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here