You_Are_My_Destiny #Mr_Arrogant_3?,16,17

0
1177

#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?,16,17
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_16

?
হায়াতি কিছু দূর যেতেই আর্থ ওর পথ আটকায়।

আর্থঃ আমার মাথায় কি শিং গজিয়েছে যে ভয়ে এভাবে পালাচ্ছো?

হায়াতিঃ শিং গজানোর থেকেও সিরিয়াস।( মনে মনে )

আর্থঃ এখন তোমার মুখের স্পিকার অফ করে রেখেছো কেন? আন্সার মি…

হায়াতিঃ আরেহ আমি আপনার প্রেমে পড়তে চাই না তাই পালাচ্ছি। আপনার প্রেমে পড়লে আমার লাইফ আর আমার লাইফ থাকবে না। হরর মুভির নেভার এন্ডিং সিজন হয়ে যাবে।( বিরবির করে )

হায়াতিকে বিরবির করতে দেখে আর্থ ওকে ঝাঁকি দেয়।

আর্থঃ হ্যালো মিস হাতি কি হয়েছে তোমার ঠিক আছো? জ্বর টর এলো না তো।( কপালে হাত দিয়ে চেক করে )

হায়াতি আর্থের হাত কপাল থেকে সরিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,

হায়াতিঃ আমার কি হবে একদম ঠিক আছি আমি।

আর্থঃ তাহলে এমন উইয়ার্ড বিহেভ করছো কেন?

হায়াতিঃ উইয়ার্ড আমি না আপনি। পুলিশ হয়ে এভাবে একটা মেয়ের পিছু করতে লজ্জা করে না।( চেঁচিয়ে )

আর্থ হায়াতির কথায় চোখ বড় বড় আশেপাশে তাকায়। পাশের কয়েকজন হায়াতির কথায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় আর্থের দিকে।

আর্থ সাথে সাথে কথা ঘুরানোর জন্য বলতে শুরু করে দেয়,,

আর্থঃ কি আজেবাজে বকছো? গনপিটুনি খাওয়ানোর ইচ্ছা আছে নাকি আমাকে।

হায়াতিঃ আমার পিছ না ছাড়লে ঠিকই খাওয়াবো।

আর্থঃ রিয়েলি? তুমি আমাকে গনপিটুনি খাওয়াবে? ওকে ফাইন তাহলে সেদিনের কাজের জন্য আমিও তোমাকে গ্ৰেফতার করবো। ( শয়তানি হেসে )

হায়াতিঃ ফেসে গেলাম এখন কি করবো?( মনে মনে ) আইডিয়া….

হায়াতি ওর ফোন বের করে গ্যালারি থেকে সেদিনের তোলা আর্থের খালি গাঁয়ের ছবি গুলো দেখায় ওকে।

হায়াতিঃ অনেক ব্লাকমেইল করেছেন আমাকে মিস্টার আর্থ উপ্স স্যরি দ্যা গ্ৰেইট সিবিআই অফিসার আর্থ রায়জাদা এখন আমার পালা। যদি বেশি তিড়িংবিড়িং করেন তাহলে ডিরেক্ট আপনার এই হাফ নেকেড ছবি গুলো গ্ৰুপে গ্ৰুপে পোস্ট করে দিব। ( কনফিডেন্ট হয়ে )

আর্থ হায়াতির কথা গুলো শুনে শান্ত ভাবে। একবার হায়াতার দিকে আরেকবার ছবিগুলোর দিকে তাকায় ও। কোনো রিয়েকশন দেখা যাচ্ছে না আর্থের ফেসে। আর্থ‌ রেগে আছে নাকি ভয়ে আছে কিছুই বুঝতে পারছে না হায়াতি।

হায়াতিঃ কিছুই তো বুঝতে পারছি না শক্ড খেয়ে গেল নাকি?( মনে মনে )

হঠাৎ হায়াতিকে টাস্কি দিয়ে ও জোরে জোরে হেসে দেয়। আর্থের এই রিয়েকশন আশা করেনি হায়াতি।

হায়াতিঃ পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি?

আর্থ অনেক কষ্টে নিজের হাসি কন্ট্রোল করে।

আর্থঃ জোক অফ দ্যা ইয়ার মিস হাতি। হাঁসি থামছে না আমার। ( হাসি থামানোর চেষ্টা করে )

হায়াতিঃ আমি কি হাসির কিছু বলেছি যে আপনার হাসি থামছে না?

আর্থঃ তুমি এই ফোটো গুলো দিয়ে আমাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছো? লাইক সিরিয়াসলি! তুমি এগুলো গ্ৰুপে ছেড়ে দিবে তাইতো? ওকে ফাইন গো আহেড… আমি তোমাকে পারমিশন দিচ্ছি ছবি গুলো যেখানে খুশি তুমি দিতে পারো।

হায়াতিঃ আপনার কি ভয় লজ্জা বলতে কিছু নেই?( রেগে )

আর্থঃ অবশ্যই নেই। ছেলেদের ভয় আর লজ্জা এ দু’টো জিনিসই থাকতে নেই। আর তার উপর আমিতো পুলিশ অফিসার আমারতো আরো আগে এ দুটো নেই। আর তাছাড়া, লজ্জা আমার না তোমার পাওয়া উচিত। আমার বাসায় এসে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ছবি তুলে আবার আমাকেই ব্লাকমেইল করছো বাহ। তোমার ক্রাইম তো এখন ডাবল হয়ে গেল। এই ছবি গুলো গ্ৰুপে দিলে ক্ষতি আমার না তোমারই হবে।

হায়াতিঃ কিভাবে?

আর্থঃ দেখো, যদি তুমি আমার এই ছবি গুলো গ্ৰুপে গ্ৰুপে দাও তাহলে ফর সিউর আমার ফ্যান ফলোয়িং ডাবল হয়ে যাবে। আফটার অল আমাকে কতটা হট দেখাচ্ছে এখানে। এটা হলো আমার লাভ আর তোমার ক্ষতি হবে কারন একজন পুলিশ অফিসারকে একবার না দুই দুই বার ব্লাকমেইল করার শাস্তি কি হতে পারে তা তুমি ভালো করেই জানো আফটার অল ল্য এর স্টুডেন্ট তুমি।( বাঁকা হেসে )

হায়াতিঃ এটা কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে।( রাগ কান্না মিশ্রিত কন্ঠে )

আর্থঃ অতিরিক্ত আমি না তুমি করছো। আমি জাস্ট তোমাকে বাসায় ড্রপ করতে চেয়েছিলাম আর তুমি বিষয়টাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে দিলে।

হায়াতিঃ আপনি বুঝতে পারছেন না একটা ছেলে আর একটা মেয়ের দূরত্ব বজিয়ে চলা উচিত। মানুষ দেখলে খারাপ ভাবতে পারে – আর্থকে ভুলানোর জন্য।

আর্থঃ টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরির মেয়ে হয়ে এমন ফালতু কথায় কান দাও তুমি? দেড়ি হচ্ছে আমার চলো,,,( হায়াতির ব্যাগ নিয়ে হাঁটা ধরলো )

হায়াতিঃ আরেহ আমার ব্যাগ…. আর্থের পিছু দৌড় দিয়ে।

?
ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছে রিশান আর রিক্ত। দুজনেই নীরব হয়ে নদীর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রিক্ত বারবার রিশানের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। রিশানের নীরবতা ওকে বিরক্ত করে তুলছে। আধা ঘন্টা ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে ওকে রিশান কিন্তু একটা শব্দও বলছে না।

রিক্তঃ শুধু শুধু এমন মুর্তির মতো দাঁড় করিয়ে রাখার মানে কি। বিরক্তিকর…( মনে মনে )

রিক্ত রিশানকে কিছু বলবে তার আগেই রিশান নীরবতা ভেঙে বলে,,,

রিশানঃ কেন আমার বোনের পিছ ছাড়ছো না তুমি? কি চাও কি তুমি?

রিক্তঃ উত্তর টা একদম সিম্পল। আমি রিশিকাকে চাই।( সোজা উত্তর )

রিশান রিক্তর কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসলো,

রিশানঃ সিরিয়াসলি! তুমি কি ভাবো, রিশিকা তোমার এই ড্রামায় বিশ্বাস করে তা বলে আমিও করবো? আমি ভালো করেই জানি তুমি আমার বোনকে ভালোবাসো না এসবই তোমার জেদ আর ইগো। আমার উপর জেদ করে তুমি আমার বোনকে ইউজ করছো আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।

রিক্ত রিশানের কথা শুনে নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না।

রিক্তঃ সিরিয়াসলি রিশান তুই এতদিন ধরে এমনটা ভেবে আসছিলি? রিশুর প্রতি আমার ভালোবাসা কোনো জেদ বা ইগো থেকে না। ও আমার জেদ না ভালোবাসা। নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি ওকে আমি।

রিক্তর কথায় রিশান তাচ্ছিল্য হেসে বলতে শুরু করে,

রিশানঃ ভালোবাসা শব্দটা তোমাদের মুখে মানায় না। আফটার অল তুমিও মিস্টার মেহরাবেরই ছেলে। তুমি কি ভুলে গেছো তোমার মা কেন মারা গিয়েছিলেন? তোমার বাবা কিভাবে তোমার মাকে ধোঁকা দিয়েছিল। আমি চাই না আমার বোনের সাথেও এমনটা হোক।( শক্ত গলায় )

রিশানের কথায় রিক্তর মনের পুরোনো ঘা যেন আবার তাজা হয়ে যায়।

রিক্তঃ উনার আর আমার মধ্যে অনেক তফাৎ। ( কাঁপা কাঁপা গলায় ) আমি সত্যি রিশিকাকে অনেক ভালোবাসি রিশান। আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোলাগা ও। একবার বিশ্বাস করে দেখ। ওর জন্য সব করতে রাজি আমি। জীবন দিতেও।

রিক্তর কথায় সত্যতা অনুভব করছে রিশান। ওর চোখে রিশিকার জন্য গভীর ভালোবাসা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে ও। কিন্তু তাও ওর ব্রেইন বারবার রিক্তর উপর বিশ্বাস করতে দ্বিতীয় বার ভাবতে বলছে ওকে। রিশিকা শুধু রিশানের না ওদের পরিবারের সবার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। ওর একটু কষ্ট হলে পুরো ফ্যামিলি কাঁদে। এমনিতে কারও উপর বিশ্বাস করতে পারে না ও।

অনেক ভেবে রিশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্তকে বলে,,,

রিশানঃ রিশুর জন্যে সব করতে পারো তাই না? নিজের ভালোবাসার পরিক্ষা দিতে পারবে?

রিক্তঃ মানে?

রিশানঃ রিশুর প্রতি তোমার ভালোবাসা প্রমান করতে হবে।( বাঁকা হেসে )

রিক্তঃ প্রমান করতে হবে মানে?( অবাক হয়ে ) কিভাবে?

রিশান কিছু বলল না শুধু বাঁকা হাসলো। রিক্ত বুঝতে পারছে এই বাঁকা হাসির পেছনে নিশ্চয়ই বড় কোনো মতলব আছে রিশানের।

রিক্তঃ ব্রো তোর হাসিটা আমার কাছে ভালো ঠেকছে না।( সন্দেহের চোখে ) তুই আবার আমাকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দিতে বলবি না তো?( অবাক হয়ে )

রিক্ত কথাটা বলে ব্রিজের নিচে তাকিয়ে উচ্চতা দেখে নেয় ব্রিজ থেকে নদীর। নদীর স্রোত দেখে ঢোক গিলে ও।

রিক্তঃ ভয় পাস না রিক্ত। এটা তুই তোর রিশুর জন্যে করছিস। গো ফর ইট।

রিক্ত চোখ বন্ধ করে ব্রিজের রেলিংয়ে উঠলে নিলেই পেছনেই কলারে টান অনুভব করে। রিশান ওকে কলার টেনে নিচে নামিয়ে নেয়।

রিশানঃ ড্রামা করতে বলিনি আমি।

রিক্তঃ তার মানে ঝাঁপ দিতে হবে না। ( খুশি হয়ে ) তাহলে প্রমান করবো কিভাবে?( অবাক হয়ে )

রিশানঃ এর থেকেও কঠিন কিছু করে।( ডেভিল স্মাইল দিয়ে )

?
আর্থ হায়াতির বাসার সামনে বাইক থামায়। হায়াতি বাইক থেকে নেমে আর্থের বরাবর এসে দাঁড়ায়। চোখ কপাল কুঁচকে নাক ফুলিয়ে আর্থের দিকে তাকিয়ে আছে ও।

আর্থঃ হোয়াট? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?( হচকিয়ে ) তোমার তো আমাকে থ্যাংক ইউ বলা উচিত ফ্রিতে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছি আমি।

হায়াতিঃ আমার আপনার ফ্রি রাইডের প্রয়োজন নেই। কালকে থেকে আপনি আমার কলেজ বা কোচিংয়ের আশেপাশেও আসবেন না।( আঙুল তুলে হুমকি দিয়ে )

আর্থঃ তোমার সাহস তো দেখি কম নয় আমাকে আঙ্গুল দেখাচ্ছো। ( মজা করে ) যেহেতু ভুল করেছো শাস্তিও পাওয়া উচিত। কালকে থেকে প্রতিদিন আমিই তোমাকে কলেজ থেকে পিক করবো। এটাই তোমার শাস্তি।( মুচকি হেসে )

হায়াতিঃ কিহ?( রেগে ) আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন? আমি তো সেদিনের জন্য স্যরি বলেছা আপনাকে আর কি চাই?( কাঁদো কাঁদো ভাবে )

আর্থঃ একটা কিস চাই দিবে?( ভ্রু উঁচু করে )

হায়াতিঃ কিহহহ – আর্থের কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেল হায়াতির‌।

হায়াতির রিয়েকশন দেখে ফিক করে হেসে দেয় আর্থ।

আর্থঃ রিলেক্স মজা করছিলাম।( হাসতে হাসতে ) মেইন পয়েন্ট হচ্ছে তোমাকে জ্বালাতে অনেক ভালো লাগে আমার। তোমার রাগি, ভয়ার্ত, কাঁদো কাঁদো ফেস দেখতে জাস্ট হেব্বি লাগে ।

হায়াতি রাগে ফুঁসছে। ওর অসহায়ত্ব দেখে আর্থের নাকি হেব্বি লাগে। রাগে‌ ওর ইচ্ছা করছে আর্থের ঝাঁকড়া চুল গুলো টেনে ছিঁড়তে।

আর্থ হায়াতিকে ফুঁসতে দেখে বুঝে যায় ওর এখন কেটে পড়া উচিত।

আর্থঃ ওকে ফাইন আমি এখন যাই। আমার অনেক কাজ আছে। ( বাইক স্টার্ট দিয়ে )

?
রিশান ফুরফুরে মেজাজে বাসায় আসে। ওকে বাসায় আসতে দেখে রিশিকা দৌড়ে উপর থেকে ড্রইং রুমে আসে। এতক্ষন চিন্তায় জান যায় যায় অবস্থা হয়েছিল ওর।

রিশিকাঃ ভ ভাইয়া,,,( রিশানের সামনে এসে )

রিশানঃ গুড ইভনিং রিশু…( রিশিকার গালে টেনে )

রিক্তকে এতো খুশি খুশি দেখে অবাক রিশিকা। রিক্তর সাথে দেখা করেও রিশান এতো শান্ত কেন বুঝতে পারছে না ও।

রিশিকাঃ ভাইয়া ঠিক আছো তুমি? কি কথা হয়েছে রিক্তর সাথে?( ভয়ে ভয়ে )

রিশানঃ কি কথা হয়েছে সেটা তোমার না জানলেও চলবে। এটা আমাদের বড়দের ব্যাপার রিশু তোমার টেনশন করতে হবে না। যাও গিয়ে পড়তে বসো।

রিশিকা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। আগে যখনই রিক্তর সাথে কথা বলে আসতো রিশান রেগে ফায়ার হয়ে থাকতো কিন্তু আজ একদম শান্ত কিভাবে বুঝতে পারছে না ও।

রিশান কথা না বাড়িয়ে গুনগুন করতে করতে চলে গেল উপরে।

To be continued…..

#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_17

?
ঘুম থেকে উঠেই রিক্তকে ফোন করছে রিশিকা কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না ও। রাতে ফোন দিতে দিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল টেরও পায়নি রিশিকা। সকালে উঠে আবার কল‌ করছে অথচ রিসিভ হচ্ছে না। চিন্তায় মাথা ব্যথা উঠে যাচ্ছে ওর।

রিশিকাঃ স্টুপিড ডাফ্ফর ইডিয়েট একটা। ফোন ধরছে না কেন?( বিরক্ত হয়ে )

রিশিকা রাগে ফোন ছুঁড়ে ফেলে দেয় বিছানায় তখনই ম্যাসেজ টোন বেজে ওঠে। তাড়াহুড়ো করে চেক করে রিশিকা। রিক্তর ম্যাসেজ এসেছে দেখে কিছুটা স্বস্তি পায় ও। কিন্তু ম্যাসেজটা পড়ার পর কিছুটা অবাক হয় ও।

ম্যাসেজে লিখা, “ স্যরি রিশু কথা বলত পারবো না এখন ব্যস্ত আছি। কাজটা শেষ হলেই কল করবো।”

রিশিকাঃ লাইক সিরিয়াসলি! আমি উনাকে নিয়ে এতো টেনশন করছি আর উনি বলছেন ব্যস্ত আছি কাজ শেষ হলে কল করবো… হুহ আমিও করবো না ফোন।( রেগে ফোন অফ করে দিল)

?
রিশিকাকে ম্যাসেজ করে ফোনটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিল রিক্ত। ফরমাল ড্রেসে রেডি হয়েছে ও যেন নতুন কোনো জবে যাচ্ছে।

রিক্তঃ রেডি।( আয়নায় ভালো ভাবে দেখে )

ফোন আর অফিস ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ও।

ড্রইং রুমের সোফায় বসে নিউজ পেপার পড়ছে আকিব মেহরাব। রিক্তকে অফিস লুকে দেখে বড় সড়সড় শক্ড খান উনি।

রিক্ত আকিব মেহরাবকে ক্রস করে যেতে নিলেই উনি পেছন থেকে প্রশ্ন করেন উনি।

আকিবঃ এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছো রিক্ত?

রিক্তঃ আপনার ভুলের মাশুল দিতে।( শক্ত গলায় )

কথাটা বলেই রিক্ত চলে গেল। আকিব মেহরাব রিক্তর কথার কিছুই বুঝতে পারলেন না।

?
নিজের কেবিনে বসে গ্লোব ঘুরাচ্ছে আর বারবার কেবিনের ডোরের দিকে তাকাচ্ছে রিশান। সকাল থেকে অনেক সাগ্ৰহে কারো জন্য অপেক্ষা করছে ও।

শায়েরা কিছু ফাইল নিয়ে বিনা নক করতেই রিশানের কেবিনে প্রবেশ করে। শায়েরাকে দেখে কিছুটা নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে ও।

শায়েরাঃ কার জন্য এতোটা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছো রিক্ত?( চেয়ারে বসতে বসতে )

রিশানঃ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজনের।

শায়েরাঃ গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা কে সেটা কি জানতে পারি?

রিশানঃ আসলেই দেখতে পাবে। সেটা বাদ দাও তুমি কেন আসলে?

শায়েরাঃ দুপুরের মিটিং নিয়ে কিছু ডিসকাস করার ছিল। এই দেখো…( ফাইল এগিয়ে দিয়ে )

রিশান ফাইল গুলো চেক করছে আর শায়েরা টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে রিশানকে দেখছে। আজকে রিশানের ঠোঁটের কোনে হাসি লেগেই আছে। হালকা হাসিতে মারাত্মক লাগে‌ রিশানকে।

রিশানঃ এখানে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে… ফাইল দেখিয়ে।

শায়েরাঃ কোথায়?

শায়েরা উঠে রিশানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তারপর ঝুঁকে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে ও।

হঠাৎ শায়েরা এতো কাছে আসায় হচকিয়ে যায় রিশান। সরে যেতে গিয়েও পারলো না।

শায়েরার থেকে ধ্যান সরিয়ে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে ও কিন্তু বারবার শায়েরার খোলা চুল রিশানের মুখে এসে বারি খাচ্ছে তাই কাজেও মনোযোগ দিতে পারছে না ও।

হার্টবিট দ্রুত গতিতে উঠা নামা করছে ওর। কখনো কোনো মেয়েকে নিজের কাছেও ঘেঁষতে দেয়নি রিশান। শায়েরাই প্রথম মেয়ে যে হুটহাট এমন কিছু করে আর রিশানকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।

শায়েরাঃ যদি কোনো সমস্যা থাকে প্রেজেন্টেশনে তুমি আমাকে বলতে পারো আমি ঠিক করিয়ে দিব।

রিশানঃ নাহ সমস্যা নেই কোনো।

কাজল কেবিনে ঢুকে ওদের একসাথে দেখে অবাক হয়।

কাজলঃ স্যরি আমি ভুল সময়ে চলে এসেছি।( রাগে গজগজ করতে করতে )

কাজলকে দেখে সরে দাঁড়ায় শায়েরা। ও সরে যেতেই রিশান নড়েচড়ে বসে।

রিশানঃ কেবিনে ঢোকার আগে নক করার কথা কি ভুলে গেছ তুমি?( কিছুটা রেগে )

কাজলঃ স্যরি স্যার। আসলে রিক্ত মেহরাব এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে চান।

রিশানঃ আসতে বলো ওকে।

কাজলঃ জি…( চলে গেল )

রিশানঃ শায়েরা তুমি মিটিং রুমে যাও আমি আসছি।

শায়েরাঃ ওকে।

শায়েরা চলে যেতেই রিক্ত আসে। রিক্ত বিনা নক করে ভিতরে চলে আসে তখনই রিশান ওকে বাঁধা দেয়।

রিশানঃ নক করে পারমিশন নিয়ে তারপর প্রবেল করো।

রিক্তঃ কিহ?( অবাক হয়ে )

রিশানঃ এখন থেকে তুমি আমার এমপ্লয় আর এটাই নিয়ম।

রিক্তকে প্রথমবার কেউ হুকুম করে কথা বলছে। শুধু তা না বসগিরিও দেখাচ্ছে। রিক্তর অনুভূতি এখন প্রকাশ করার মতো না। রাগ দুঃখ জেদ অসহায়ত্ব সব ঘিরে ধরেছে ওকে।

ওর মনে পরে যায় রিশানের শর্তের কথা। রিশান রাতে ওকে শর্ত দিয়েছিল। এক মাস ওকে রিশানের আন্ডারে কাজ করে নিজের যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে। যদি ও এই শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয় তবেই রিশান ওর আর রিশিকার সম্পর্ক মেনে নিবে তাও খুশি খুশি। আর যদি রিক্ত এই শর্ত পূরণ করতে না পারে তাহলে রিশিকার জীবন থেকে সরে যাবে।

রিশানঃ রিক্ত মেহরাব? কোথায় হারিয়ে গেলে?( রিক্তকে অন্য মনস্ক দেখে ) তুমি যদি শর্ত বাতিল করতে চাও তাহলে খুশি খুশি করতে পারো। কিন্তু মনে থাকে যেন এর পর থেকে আমার বোনের আশেপাশেও আসবে না।

রিক্তঃ আমি রিশুর জন্যে সব করতে রাজি এটাতো সামান্য শর্ত।

রিক্ত পিছিয়ে আবার দরজার সামনে গেল সামনে গেল তারপর নক করলো।

রিক্তঃ মে আই কাম ইন?

রিশানঃ সিউর,,,

রিক্ত কেবিনে ঢুকে পরলো। কিন্তু রিশানের সামনে চেয়ার টেনে বসতে নিলেই রিশান ওকে বাঁধা দেয়।

রিশানঃ আমি তোমাকে এখনো বসতে বলিনি।

রিশানের কথা শুনে ‌রাগ লাগছে রিক্তর। এর আগে কখনো এভাবে ওকে ইনসাল্ট করার সাহস পায়নি কেউ কিন্তু আজ রিশান সুযোগ পেয়ে ভালোই প্রতিশোধ নিচ্ছে ওর‌ থেকে।

নিজের রাগ সংবরণ করে চেয়ারটা আবার আগের মতো টেনে রেখে দেয়।

রিক্তঃ ‌তুই বলেছিলি…. কথার মাঝেই রিশান ওকে থামিয়ে দেয়।

রিশানঃ‌ তুই না আপনি। আমি তোমার বস হই এখন থেকে ভুলো না কথাটা।

রিক্তঃ ওকে। আপনি, আপনি বলেছিলেন আমাকে আপনার আন্ডারে কাজ করতে হবে একমাস। কিন্তু আমার পজিশন কি হবে? আর আমার কেবিন কোনটা? আমি ম্যানেজমেন্টে গ্ৰেজুয়েশন করেছি তার উপর ইউনিভার্সিটি টপার ছিলাম সে হিসেবে এই অফিসের সবচেয়ে বড় পোস্ট আমিই ডিসার্ব করি।( প্রাউড ফিল করে ) আর আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকবেন আমার কাজ আমি অনেক ভালো করে করবো। নিরাশ হওয়ার কোনো সুযোগ দেব না। শুধু একমাস কি আমি সারাজীবন আপনার সাথে কাজ করতে রাজি আছি। আই’ম সিউর আমাকে পেয়ে আপনার বিজনেস এক মাসের আগেই পঞ্চাশ পার্সেন্ট বেশি প্রফিটে চলতে শুরু করবে।

রিক্তর কথা গুলো চুপ করে শুনছে রিশান। ওর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুঁলে আছে। আর মাথায় কি চলছে সেটাতো ও-ই ভালো জানে।

রিশানঃ তোমার বলা শেষ হলে এখন আমি বলি?

রিক্তঃ সিউর।

রিশানঃ তোমার যোগ্যতা আমি নির্নয় করবো তোমার সার্টিফিকেট না। তুমি কোন পজিশনে কাজ করবে কোনটা তোমার কেবিন হবে সেটা আমি আগেই নির্বাচন করে রেখেছি।

রিক্তঃ ওহ তাহলে পজিশন টা কি? ম্যানেজিং, প্রডাকশন নাকি অ্যাডভারটাইসিং ?

রিশানঃ তুমি এই অফিসের পিয়ন এর পজিশনে কাজ করবে।

রিক্তঃ কিহ?

রিশানের কথা শুনে যেন রিক্ত সাত আসমান থেকে পরলো। স্বপ্নেও এটা আশা করেনি ও।

রিক্তঃ তুমি মজা করছো তাই না? ( অসহায় ভাবে ) আমি দ্যা রিক্ত মেহরাব যে ইউনিভার্সিটির টপার, যার নিজের এতো বড় ট্রান্সপোর্টের বিজনেস আছে সে তোমার অফিসে পিয়নের কাজ করবে? অসম্ভব ইম্পসিবল কখনো সম্ভব নয়।

রিশানঃ তাহলে রিশিকাকে পাওয়াও তোমার জন্য অসম্ভব ইম্পসিবল কখনো সম্ভব নয়।

রিশিকার নাম শুনে চুপ করে যায় রিক্ত। কিন্তু সিচুয়েশনটা মেনে নিতে পারছে না ও।

রিশানঃ তোমাকে ভাবার জন্য তিন মিনিট দিচ্ছি আমি। তিন মিনিটের মধ্যে নিজের সিদ্ধান্ত জানাও।

রিক্তঃ মাত্র তিন মিনিট? দিস ইজ টু মাচ্।( অসহায় ভাবে )

রিক্তর মাথা কাজ করছে না। মনে হচ্ছে রিশানের কথা গুলো চারোপাশ দিয়ে হাই ভলিউমে বাজছে ওর।

রিশানঃ সময় শেষ হচ্ছে দশ, নয়… গননা শুরু করে।

রিক্তঃ কাম অন রিক্ত এসব কিছুই তুই রিশুর জন্য করছিস নিজের ভালোবাসার জন্য করছিস। এতো দূর এগিয়ে এখন পিছাতে পারবি না তুই। এক মাসেরই তো কথা রাজি হয়ে যা… নিজের ইগোকে সাইডে রেখে রিশুর কথা ভাব।

রিশানঃ তিন, দুই…

রিক্তঃ আমি রাজি।

রিশানঃ গুড।

রিশান ল্যান্ডফোনে কল করে কাজলকে ডেকে আনে।

কাজলঃ স্যার,,,

রিশানঃ ওকে ওর কাজ বুঝিয়ে দাও আর কস্টিউম দিয়ে দাও।

রিক্তঃ এক মিনিট কস্টিউম মানে? এখন আমাকে ড্রেসও তেমন পরতে হবে?( অবাক হয়ে )

রিশানঃ অবশ্যই। নাহলে সবাই বুঝবে কিভাবে তুমি কি কাজ করো। আর কাজের সাথে পোশাকের মিল তো থাকতেই হয়। পিয়ন তো আর দামি স্যুট কোট পরে কাজ করে না।

রিক্তঃ তো এক কাজ পোশাকের সাথে আমার নামও বদলে দাও। রিক্ত থেকে রহিম। কাজের সাথে তাহলে নামেরও মিল হয়ে যাবে।( রাগে গজগজ করতে করতে )

রিশানঃ নট ব্যাড। আইডিয়া টা খারাপ না।

রিক্ত আর সহ্য করতে না পেরে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল আর সাথে কাজলও।

রিশানঃ মানুষের ব্যক্তিত্ব চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় তাকে তার চেয়ে নিচু শ্রেণীর মানুষের সাথে বসিয়ে দাও পাঁচ মিনিটে তার আসল রুপ বেড়িয়ে আসবে। আর আমিতো তোমাকে তোমার থেকে নিচু শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশিয়ে দিয়েছি তাই তুমি তোমার আসল ব্যক্তিত্ব লুকাতে চেয়েও পারবে না।( বাঁকা হেসে )

?
আর্থ হায়াতির বাসার সামনে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে কিন্তু ওর আসার খবর নেই।

আর্থকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখে দারোয়ান চাচা এগিয়ে আসে ওর দিকে।

দারোয়ানঃ বাবা তুমি হায়াতি মামনির জন্য অপেক্ষা করছো?

আর্থঃ জি চাচা।

দারোয়ানঃ কিন্তু মামনি তো আজকে সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে কলেজের জন্য। ওর একটা বন্ধু এসেছিল ওকে নিতে তার সাথেই গেছে।

আর্থঃ ছেলে বন্ধু নাকি মেয়ে বন্ধু?

দারোয়ানঃ ছেলে বন্ধু ছিলো।

আর্থঃ মিস হাতি তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমাকে এখানে অপেক্ষা করয়ে নিজে অন্য ছেলের সাথে চলে গেছ। জাস্ট ওয়েইট আমি আসছি।( রেগে ফায়ার হয়ে )

আর্থ ওর বাইক ঘুরিয়ে সোজা হায়াতির কলেজের দিকে চলে যায়।

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here