অন্তরালে_তুমি পর্ব_3| কাছে আসার গল্প

0
6365

অন্তরালে_তুমি
পর্ব_3
#প্রত্যাশা

সকাল ১০.০০টা,,

আমি আব্বু আর আদি একজন লোয়ারের সাথে দেখা করতে এসেছি ..আকাশ ও এসেছে ..আকাশ আসার পর থেকে খুব স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে এমন একটা ভাব যেন কিছুই হয়নি ..

—-আপনারা কি নিশ্চিত যে আপনারা আর একসাথে থাকতে পারবেন না ..নিজেদের মধ্যে এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলেছেন .?

লোয়ারের কোথায় আকাশ আর আমি একজন আরেকজনের দিকে তাকাই ..তারপর আকাশ বলে ..

—-জি আমরা আর এই সম্পর্কটাকে কন্টিনিউ করতে পারবো না আমরা ডিভোর্স চাই ..কি ঠিক বললাম তো রুপা ..(আমার দিকে তাকিয়ে বলে)

—-হুম ..

—-দেখুন আপনাদের বিয়ের মাত্র ৫ মাস হয়েছে ..এখনো ১ বছর হয়নি ..১ বছর হওয়ার আগেই যেসব কাপল ডিভোর্স নিতে চায় আমরা তাদের কয়েক মাস সময় দেয় যাতে করে তারা ভালো ভাবে ভেবে ডিসিশনটা নিতে পারে ..

—-আমার কোনো সময় লাগবে না স্যার আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ডিভোর্সটা দিতে চাই ..

—-মি. আকাশ আপনার ও কি একই মত ?

—-হুম আমিও তাই চাই ..

—-ঠিক আছে আপনারা ৩ দিন পর আসবেন ..আমি এই ৩ দিনে সকল কাগজ পত্রের ব্যবস্থা করছি ..

—-ঠিক আছে ..

লোয়ারের রুম থেকে বেরিয়েই আকাশ দ্রুত গাড়ি নিয়ে কোথায় যেন চলে যায় ..

—-মা শুন আমি আকাশের নামে একটা জিটি করে রাখি ..এই শয়তানটাকে একটা শাস্তি দিতে হবে ..

—-আব্বু তোমার যা খুশি তাই করো ..আমি শুধু উনার থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাই ..বাকি তোমরা কি করবে না করবে সেটা তোমাদের ব্যাপার ..

—-আমি জানিরে তোর খুব কষ্ট হচ্ছে ..একটা মেয়ের সংসার ভাঙলে সেই মেয়েটাই বুঝে তার কেমন লাগে ..আমরা তো দূর থেকে শুধু সাহস দিয়ে যেতে পারবো ..পুরো লড়াইটাতো সেই মেয়েটাকে লড়তে হয় ..

—-এই সাহসটায় কয়জনে দিতে পারে বলো ..তোমরা আমার পাশে থাকলে আমি যেকোনো লড়াইয়ে জিততে পারবো ..

—-হে রে সবসময় আমরা আছি ..

—-আচ্ছা আব্বু চলো বাসায় যাই ..আম্মু নিশ্চয় বাসায় একা একা টেনশন করছে এইদিকে কি হলো না হলো ..

—-হে চল ..আদিত্য বাবা তুমিও আমাদের সাথে চলো ..

—-আসলে আংকেল আমি এখন যেতে পারবো না আমার একটু কাজ আছে ..আপনারা চলে যান ..

—-আচ্ছা ঠিক আছে
..
৩ দিন পর ..

ডিভোর্স পেপারে সাইন করে মাত্র বের হলাম ..ডিভোর্স পেপারে সাইন করার সময় খুব কষ্ট হচ্ছিলো ..বার বার মনে পড়ছিলো কাবিন নামাই স্বাক্ষর দেয়ার কথাটা ..সে দিন খুব ভয় করেছিল কিন্তু সাথে একটা অজানা ভাল লাগাও কাজ করছিলো ..কিন্তু আজ !!আজ যেন মনটা কেমন করছে ..আল্লাহ নিজেকে শক্ত রাখার সাহস দাও ..পারতে হবে আমাকে বাবা মার জন্য হলেও আমাকে ভালো থাকতে হবে।।

এই ভাবেই ১ মাস কেটে যাই .
.
রুমে শুয়ে শুয়ে হুমায়ন আহমেদ স্যাররের মৃন্ময়ী বইটা পড়ছি ..হঠাৎ আব্বু এল.

—-কি করছিস মা ?

—-এইতো বই পড়ছি ..

—-ওহ ..সবসময়তো এই রুমের মধ্যে থাকিস একটুতো বাইরে থেকে বেরিয়ে আসতে পারিস ..

—-ভালো লাগে না আব্বু ..এই বই গুলো পড়তে বেশি ভাল লাগে ..

—-কিন্তু এইভাবে আর কতদিন চলবে বল ..নিজেকে নিয়ে তো ভাবতে হবে ..

বাবার কথার মানে হয়তোবা বুঝতে পারছি ..কিন্তু আমি যে এইসব নিয়ে আর ভাবতে চাই না ..

—-আব্বু আমি খুব ভালো আছি ..আমাকে নিয়ে ভেবো না ..তোমরা তো আছোই আমার পাশে তাই না ..

—-মারে আমরা তো আজ আছি কিন্তু সবসময়তো আর থাকবো না ..তখন তোর কি হবেরে মা ..কাউকে না কাউকেতো তোর পাশে লাগবেই ..

—-আব্বু আমি বিশ্বাস করি যার কেউ থাকে না তার আল্লাহ থাকে ..

—-আমি জানিরে মা তারপর ও ..

—-প্লিজ আব্বু আমাকে আমার মতো করে থাকতে দাও ..আমি এইভাবেই ভালো আছি ..

আব্বু আর কিছু বলেনি বেরিয়ে যান রুম থেকে..আমিও আবার বই পড়ায় মনোযোগ দেই ..

এইভাবেই আমার দিন কাটছিলো ..এর মাঝে একবারের জন্যও আদি আমাদের বাসায় আসেনি কিংবা আমাকে কোনো কলও দেননি ..না দিক আমার কি ..আমার কাউকে লাগবে না আমি একাই ভালো আছি ..এর মধ্যে একদিন বিকেলে আম্মু আব্বুর জোরাজুরিতে আমার বেস্টু রিমির সাথে বাইরে খেতে বের হয় ..

—-কিরে কি খাবি বল ..?

—-তুই খাওয়াবি নাকি ?

—-উম্ম খাওয়ালাম ..আগেতো সবসময় তুই এ খাওয়াতি এবার না হয় আমিই খাওয়ালাম ..

আমি হেসে বললাম ..

—-তাহলে কিন্তু তোকে ফকির বানিয়ে ছাড়বো ..

—-বানাস সমস্যা নেয় ..

একটা ওয়েটারকে ডেকে খাবারের অর্ডার দেই ..কিছুক্ষন পর খাবার আসে ..

—-রূপ!!!

—-আরে আপনি এখানে ..?কেমন আছেন? ..

—-এইতো আছি ভালো ..তুমি?

—-আলহামদুলিল্লাহ ..তো আপনি এইখানে ..?

—-আসলে একটু কফি খেতে আসছিলাম ..

—-একাই এসেছেন ?

—-না আমার একজন ক্লাইন্টের সাথে ..তোমাকে বাইরে দেখে ভালো লাগছে ..আংকেলের সাথে কথা হয়েছিল ..উনি বলছিলেন তুমি নাকি সারাদিন তোমার রুমে থাকো শুধু খাবার সময় নাকি বের হও এমনিতে নাকি বের হও না এটা নিয়ে উনি খুব টেনশনে ছিলেন ..এইভাবে থাকলে তো ডিপ্রেশনে পরে যাবে ..তাই মাঝে মধ্যে ঘুরতে বের হবে দেখবে ভালো লাগবে।আর তোমার পাশের ওনাকে তো চেনাই যাচ্ছে না ।।কি খবর মেডাম আপনার ?

—-যাক শুনে ভালো লাগছে ভাইয়া যে আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন।।

—-আমি কাউকে ভুলিনা বুঝেছো!!

—-হুম খুব বুঝেছি।।তা ভাইয়া আসছেনই যখন আমাদেরকে আজকের ট্রিটটা আপনিই দিয়ে দিন।।

—-তা দিতেই পারি ।।

কথাটা বলে উনি আমার পাশের চেয়ারে বসলেন।।আমি উনার দিকে তাকালে ওনি বলেন••

—-এখন নিশ্চয় উঠে যেতে বলবে না ।

আমি মুচকি হেসে বললাম

—-না।

আমরা চুপ চাপ খাবার খাচ্ছি হঠাৎ আদি বলে উঠলো ..

—-তোমাকে তো একটা কথা বলা হয়নি রূপ..ভাবছি বলবো কিনা .?

—-হুম কি কথা বলুননা..

—-আগে বলো শুনার পর কোনো রিএক্ট করবা না..

—-আচ্ছা ঠিক আছে ..

—-আকাশকে আমি অফিস থেকে বের করে দিয়েছি ..

—-কেন ..?কি করেছে ও?

আদি ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো ..

—-আমার একজন ক্লাইন্ডকে মলেস্ট করার চেষ্টা করেছে সহজ করে বলতে গেলে ধর্ষণ করার চেষ্টা ..

আদির কথা শুনার পর কেন জানি চোখ থেকে পানি পরে গেলো ..

—-আমি জানতাম রূপ তোমার চোখ থেকে পানি পরবে তাই বলতে চাই নি ..আচ্ছা এখন তো ও তোমার কেউ না তাহলে কেন কষ্ট পাচ্ছ ..?

—-না আদি আমার উনার জন্য কষ্ট হচ্ছে না কষ্ট হচ্ছে নিজের জন্য ..ভাবতে খারাপ লাগছে যে আমি এমন কুৎসিত একটা মানুষের সাথে এতো গুলা দিন থেকেছি ..না জানি আমার থেকে লুকিয়ে আরো কত কিছু করেছে আর আমি তো বোকার মতো উনাকে বিলিভ করে গিয়েছি ..

—-প্লিজ রূপ ..ভেবো না এসব ..আমি জানি মানুষ চাইলেই তার অতীত ভুলতে পারে না ..কিন্তু চেষ্টা করলে তো ভালো থাকা যায় ..হেরে যেও না প্লিজ ..

—-না আদি আমি হারবো না ..চিন্তা করবেন না আমি ভালো আছি আর সবসময় ভালো থাকবো.

আমাদের কথা শুনে রিমি রেগে গিয়ে বলে .
.
—-ধুর কোথায় আসছিলাম একটু মজা করবো তা না এখানে এখন সবাই মিলে শোক দিবস পালন করছে?

—-হে সেটাই তো তোমার ফ্রেন্ডকে বলো ..

—-এই কি আমি কি করেছি ..আচ্ছা এইযে আমি হাসছি ..এবার হয়েছে ..

আদি আর রিমি একসাথে বলে ..

—-হুম হয়েছে ..

বিকেল ৫.০০টার দিকে বাসায় আসি ..আদিই ড্রপ করে গিয়েছে ..আম্মু আব্বুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে আসি।।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় .শুয়ে শুয়ে আদির কথা ভাবছি ..তার সাথে প্রথম দেখা আজ থেকে ২ বছর আগে ..
ফ্ল্যাশ ব্যাক———–________————

চলবে…
(আল্লাহকে ভয় করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here