দৃষ্টির অগোচরে পর্বঃ৫| কাছে আসার গল্প

0
3636

দৃষ্টির অগোচরে পর্বঃ৫
#লেখকঃরনি হাসান

নুসরাতের কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে নিলয় রীতিমতো রেগে গিয়ে বলে উঠে

–” কি….. তানবীর আমার দৃষ্টির অগোচরে এসব করেছে। ওকে তো আমি জন্তু পুতে ফেলবো। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ও তোকে ঠকিয়েছে এবং আমার আদিবার দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছে। ওকে তো আমি এমনি ছেড়ে দিবো না। মাষ্টার প্ল্যান কাকে বলে এবার দেখ-

–” মাষ্টার প্ল্যান মানে বুঝলাম না_? (অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
–” ও তোকে যে ভিডিও দেখিয়ে Blackmail করছে এটাই ওর কাল হয়ে দাঁড়াবে-

নিলয়ের কথা আগামাথা না বুঝে নুসরাত বলে উঠে

–” নিলয় কি প্ল্যান করছিস কিছুই তো বুঝতে পারছি না

নুসরাতের কথায় নিলয় মুখে শুকনো হাসি এনে বলে উঠে

–” এতদিন তানবীর যা যা বলছে তাই তো শুনেছিস ( জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে)
–” হ্যা তা তো বাধ্য হয়েই শুনেছি-
–” এখন থেকে তানবীরের প্রত্যেকটা কথায় তুই অমান্য করে চলবি মানে বিপরীত বামে চলতে বলে তুই ডানে পা রাখবি

–” এমন টা হলে তো ভালোই হতো, বেচে যেতাম। কিন্তু আমি যদি তানবীরের একটা কথা অমান্য করি তো ও সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ভাইরাল করে দিবে। তখন তো সুসাইট করা ছাড়া রাস্তায় খুলা থাকবে না

–” এমন কিছুই হবে না। এখন তুই শুধু ফোনে কল রেকর্ড চালু করে তানবীরকে বলল এখন থেকে তার কোনো প্রকার Blackmail এর স্বীকার হচ্ছিস না

–” আমার এমন আচরনে ও যদি সত্যিই সত্যিই ভিডিও ভাইরাল করে দেই তো (ভয়ে জড়সড় হয়ে)
–” ধুর বোকা ও শুধু তোকে ভিডিও ভাইরাল করার কথা বলে এসব করাচ্ছে। মুলত ওর উদ্দেশ্য ভিডিও ভাইরাল করা নাহ। একবার শুধু তানবীরকে ফোনে বলেই দেখ আর হ্যা কল রেকর্ড অবশ্যই চালু করিস

নিলয়ের কথা মতো নুসরাত ভয়ে তানবীর কাছে কল দিলো। রিং হবার মাত্রই কল রিসিভ করে তানবীর ওপাশ থেকে বলে উঠে

–” হাই বেবি হঠাৎ কি মনে করে হুম (ডেবিলমার্কা হাসি দিয়ে)
–” বাজে বকা বন্ধ কর অনেক সহ্য করেছি আর না তুই এতদিন যেটাতে ভয় দেখিয়ে নোংরা কাজগুলো আমাকে করিয়েছিস এখন তা আর করতে পারবি না (রেগে)

নুসরাতের রেগে কথা বলাতে। তানবীর থতমত খেয়ে বলে উঠে

–” নুসরাত তোমার মাথা কি ঠিক আছে তো ” আমাকে কি বলছো তা কি ভেবে বলছো (রেগে)
–” হ্যা ভেবেই বলছি –
–” রুমডেড করার ভিডিও কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই ভাইরাল করে দিবো-
–” যা খুশি তা কর। এতে আমার বিন্দুমাত্র ও তোয়াক্কা হবে না।
–” নুসরাত এবার কিন্তু বড্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে
–”

–” খারাপের রাস্তা তুই বেচে নিয়েছিস এবং আমাকে দিয়েও সে কাজে ব্যবহার করেছিস এবং এখনো তাই করতে চাচ্ছিস

–” বুঝতে পারছি ভিডিও টা ভাইরালই করতে হবে। তোর খুব পাখা গজিয়েছে তাই না (রেগে)

তানবীর ফোনে ওপাশ থেকে এইটা বলতেই নুসরাতের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে ঢুক গিলতে লাগলো। নিলয় ” নুসরাতের অবস্থা দেখে ইশারা দিয়ে জানিয়ে দিলো” ভয় পাস নাহ আমি আসি। তুই বরং কথা কন্টিনিউ করে যা – নুসরাত ‘ নিলয়ের ভরশা পেয়ে বলে উঠে

–” পাখা আমার গজায়নি ” পাখা গজিয়েছে তোর এবার পাখাটা সামলে রাখিস। কাটার জন্য কেউ একজন তোর পিছনে অলরেডি লেগে গেছে

–” ইয়ে মানে আমার পিছনে লেগেছে মানে (থতমত খেয়ে)

নুসরাতের কথায় তানবীর ভালোভাবেই ভয় পেয়ে থতমত খেয়ে গিয়ে বলে

–” নুসরাত তোকে কিন্তু অনেক আগেই বলছি আমার মাষ্টার প্ল্যানে সামান্য পরিমাণ ও যদি ত্রুটি হই, তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না ” তাছাড়া আমি যে কেমন শয়তান তা তুই খুব ভালো করেই জানিস সুতরাং তুই তোর জায়গায় থাক

–” সম্ভব না। তোর কথার বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করবি এই ভয়ই তো এতদিন দেখিয়ে আসছিস তাই না এবার নই তা বাস্তবে রুপান্তরিত কর তাতে আমার কোনো কিছু যায় আসে না-

নুসরাত এই বলে ফোন দুরুত্ব কেটে দেই। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হবার ভয় মনে বেশ ভালোই রেশ লেগে যায়। এতদিন যে ভয় দেখিয়ে তানবীর বাধ্য করে এসব করাতো। আজ নিলয় পাশে থাকাতে ফোনে নির্ভয়ে কথা বললেও। মনে তার বেশ ভয়ের রেশ লেগে আছে। নিলয় নুসরাতের অবস্থা দেখে বলে উঠে –

–” কিরে ভয় পাচ্ছিস_?
–” হ্যা ভয় তো একটু হচ্ছেই যদি ও ভিডিও টা ভাইরাল করে দেই তো। আমার কি হবে একবারেও ভাবতে পারছিস (হতাশ হয়ে)
–” আরে ধুর ভিডিও তে কি তুই একাই আছিস নাকি হ্যা –
–” মানে (থতমত খেয়ে)
–” ভিডিও তে তুই একা নস ওখানে তানবীর ও আছে। যদি ও ভাইরাল ওই করে তো মানসম্মান তোর একার যাবে না, গেলে তানবীরও যাবে। আর তানবীরের নিজের মানসম্মান চলে যাক এমন কাজ ও নিজ হাতে করবে না। তাছাড়া ওর ম্যান উদ্দেশ্যই ছিলো তোকে blackmail করে ওর কাজ হাসিল করানো –

–” হ্যা তাই তো মানসম্মান গেলে শুধু আমার একার যাবে না ওই শয়তানটারে যাবে। কিন্তু এভাবে তানবীরকে মাঠে ছেড়ে দেওয়া ঠিক না হবে না। কখন কোন সময় কি প্ল্যান করে বসে আবার __ ( ভাবান্ত হয়ে)

–” আরে চাপ নিস না। এখন যে ফোনে কথা বললি সে রেকর্ড দিয়ে তানবীরকে আইনের আওতায় আনা যাবে। এতদিন আমার দৃষ্টির অগোচরে তানবীর মাষ্টার প্ল্যান কাজে লাগিয়েছে। এখন আমি ওর দৃষ্টির অগোচরে সমস্ত পদক্ষেপই নিবো তা এখনি তুই শুধু দেখে যা-

নিলয় এই বলে পুলিশ এর কাছে ফোন দিলো। কিছুক্ষন পর চারজন পুলিশ নুসরাতের বাসায় চলে আসলো। এবং নুসরাতের কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনলো এবং প্রমান স্বরুপ কল রেকর্ড ও শুনে নিলো। নিলয় প্রশাসনে কিছু টাকা ঢালতেই মামলা টা আর ও জটিল হয়ে গেলো। দুইদিন পর তানবীরকে পুলিশ গ্রেফতার করে।এবং একদিন লাঠি চার্জ করার পর তানবীর রুমডেড এর ভিডিও কথা স্বীকার যায় যে ল্যাপটপে সংগ্রহ রেখেছে। পুলিশ কর্মকর্তা তারা কোর্টে সব সমস্ত শাখী প্রমান উপস্থাপন করেন। জজ সমস্ত শাখো প্রমান উপস্থাপনায় হওয়াই। তানবীরকে ৭দিন রিমান্ড আর ৭ বছরের জেল ডাকে।

নিলয় কোর্ট থেকে বেরনোর সময় নুসরাত খুশিতে গদগদ হয়ে নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বলে

–” আজ আমি অনেক খুশি নিলয়। মাথা থেকে আকাশ সমান একটা চাপ কমে গেলো –

নুসরাত হুট করেই নিলয়কে জড়িয়ে ধরবে তা সে কখনোই আশা করেনি সে থতমত খেয়ে বলে উঠে

–” নুসরাত কি করছিস সবাই দেখছে তো। যদি একবার আদিবার কানে যায় তুই আমাকে সবার সমানে জড়িয়ে ধরেছিস তাহলে কাচাই আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে-

–” সরি রে খুশির প্রবনতায় তোকে জড়িয়ে ধরেছি –
–” মাথা মোটা একটা (হেসে)

–” নিলয় আমার জন্য তো, আদিবা তোকে ভুল বুঝেছে তাই আমি চাচ্ছি এবার আদিবার সামনে গিয়ে সমস্ত ঘটনা গুলো বলে দেই –
–” হ্যা তা অবশ্যই। কিন্তু তোকে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলে — (ভেবে)
–” আরে ধুর এত ভাবার কি আছে” আমার জন্য না হই বউয়ের কাছ থেকে দু একটা কথা শুনলি-

–” আচ্ছা চল

নিলয় ভয়ে ভয়ে নুসরাতকে নিয়ে তাদের বাসায় চলে আসলো। আদিবা ” নিলয় আর নুসরাতকে এক সঙ্গে দেখার মাত্রই এমন একটা কথা বলল যা শুনার জন্য তারা মোটুও প্রস্তুত ছিলো না-
!
!
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here