#অনুগল্পঃ_দ্যা_রিভেন্স_অফ_ন্যাচার।
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ব্রেকআপের ১ বছর পর শুনতে পাই আমার গার্লফ্রেন্ড তৃষ্না ৩ মাসের অন্তঃসত্বা। ব্রেকআপের পর তার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে যোগাযোগ রাখেনি আর।
আজ হটাৎ ফোন দেয় সে। পুরোটা সময় কান্না ছারা আর কিছুই শুনতে পাইনি।
একটা বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ভুলতে পারিনি তাকে। ২ বছরের রিলেশন ছিলো আমাদের। সেই আমার জীবনে প্রথম কেও যে ভালোবাসার মানেটা শিখিয়েছে আমায়। আমি অন্য আট দশ টা ছেলের মতো তেমন বিলাসি ছিলাম না। খুব হিসাব করে চলতে হতো আমায়। হটাৎ সে জীবনে আসে আমায় খুব করে বলতো,
– আমার কাউকে লাগবে না, শুধু তুমি পাশে থাকলেই হবে।
আমিও তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলতাম,
-আমারও তোমাকেই চাই। তবে সেটা কিছু সময়ের জন্য না। সারাটা জীবনের জন্য। আগলে রাখতে চাই নিজের কাছে।
খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিলো আমাদের। আমি অন্য ছেলেদের মতো তাকে হুটহাট সারপ্রাইজ দিয়ে খুশি করতে পারতাম না। তাকে হুটহাট শপিং, রেস্টুরেন্ট, জন্মদিনের সারপ্রাইজ পার্টি এসব কিছুই দেওয়ার সামর্থ ছিলোনা আমার। তবে স্বপ্ন দেখতাম রোজ তাকে নিয়ে। নতুন নতুন স্বপ্ন। অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন।
এমন একটা সময়ে পৌছে গেছিলাম, যখন তার পাশে কাউকে দেখলে আমার খারাপ লাগতো। কষ্টও হতো প্রচুর। তার কোনো ছেলে আত্মিয়র সাথে কথা বললেও আমার খুব খারাপ লাগতো। কারনটা জানিনা। তবুও খারাপ লাগতো খুব। তবুও তাকে এটা বলতাম না যে,
– তুমি ওদের সাথে এভাবে মিশবা না, আমার খারাপ লাগে।
এসব কখনো বলতাম না। কারণ ভাবতাম, এসব বললে যদি আমার ছেরে চলে যায়?
তাকে হারানোর তীব্র ভয় ছিলো আমার মাঝে।
সেও আমায় সব সময় বলতো, আমায় কখনো কোনোদিন ছেরে যাবে না। প্রচন্ড ভরসা পেতাম তার কথায়। ভাবতাম জীবনে তার জন্য হলেও আমাকে ভালো কিছু করতে হবে। প্রচন্ড ভালোবাসতাম তাকে। নিজের থেকেও বেশি।
কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসাও টিকলো না। দুই বছরের মাথায় ইতি টেনে সে চলে গেলো আমার জীবন থেকে। সে হয়তো বুঝতে পেরেছিলো যে, আমি তার যোগ্য নেই। সে এর চেয়ে ভালো কাউকে আশা করে। যে তার সব ইচ্ছা পুরণ করতে পারবে। ব্রেকাপের দিন আমার ডেকে সব সরাসরিই বলেছিলো সে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম শুধু। তার কথার ধরণটা ছিলো এমন,,
– আমাদের মনে হয়না সম্পর্কটা আর এগিয়ে নেওয়া ঠিক হবে। কারণ আমি এখন বুঝতে পারছি তোমার সাথে আমার যায় না। যা আগে বুঝতে পারিনি আমি। আমি রিফাতকে ভালোবাসি। আমার লাষ্ট জন্মদিনেও আমায় আইফোন গিফ্ট করেছে সে। যা তুমি পাঁচ বছর ট্রাই করলেও পারবে না। জীবনটা খুব ছোট। এই ছোট জীবনটা যদি ইনজয় করে যেতে না পারি তাহলে বোকামু হয়ে যায় না? ওইদিন ও আমায় এক লক্ষ টাকা দামের হিরের রিং দিয়ে প্রপোজ করেছে। মন খারাপ করোনা রিয়াদ। আবেগে সব হয় না। জীবনে চলতে গেলে অনেক কিছুই সেক্রিফাইস করতে হয়। তুমি তোমার মতো জীবনকে ঘুচিয়ে নিও। হয়তো আমার থেকেও ভালো কাউকে পাবে। আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও প্লিজ।
সেদিন কোনো কথা বলতে পারিনি আমি। শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কান্না ভেজা চোখে তার হাতটা দুই হাতে চেপে ধরে হাটুতে ভর কারে বসে পরেছিলাম মাটিতে। বেহায়ার মতো বলে ফেললাম,
– তোমাকে ছারা বাচতে পারবো না আমি।
অনেক চেষ্টা করেছি তাকে ফেরানোর। কিন্তু পারিনি। রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় রিফাতের গাড়িতে তাকে দেখলে বুকের ভেতরটা ছিড়ে যেতো আমার।
যেই আমি কখনো সিগারেট ছুয়েও দেখিনি। সেই আমিটার এখন দৈনিক ২ পেকেট না হলে চলেই না। দিনটা কোনো রকম পার করে দিলেও রাতের বেলাটা নিজেকে সামলাতে পারতাম না। পাগলের মতো কাঁদতাম তার ছবির দিকে তাকিয়ে পূর্বের স্মৃতি মনে করে।
,
,
আজ হটাৎ ফোন দিয়ে বললো, সে ৩ মাসের অন্তঃসত্বা। রিফাত তাকে ঠকিয়েছে। নিজের সন্তানকেই অস্বিকার করলো সে। দুঃশ্চরিত্রা বলে তাড়িয়ে দিয়েছে তাকে। মুখের উপর বলে দিয়েছে,
– কার সাথে না কার সাথে এসব করে এখন সেই পাপের বোঝা আমার উপর চাপাতে চাইছিস?
এই ধরনের নানান কথা বলে তৃষ্নাকে তাড়িয়ে দিয়েছে সে। তার কান্নার শব্দ আমার আজও সহ্য হয় না।
মনে হলো, যাই হোক না কেনো? তাকে এই সময়টা হ্যাল্প করা আমার খুব প্রয়োজন। যাই হোক ভালোবাসি তো তাকে।
তার ফ্যামিলির কাউকে জানাতে হয়নি এই বিষয়টা। আমার সাথেই হসপিটালে গিয়েছে সে। এ্যাবরশন ও হয়েছে তার। সে পেটে হাত দিয়ে করুন চোখে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। আমার সহ্য হচ্ছিলোনা এসব। ইচ্ছে হচ্ছিলো ওখানেই কেঁদে ফেলি। তবুও নিজেকে শক্ত রেখে অন্য দিকে চলে গেলাম। তাকে ডক্টররা ভেতরে নিয়ে গেলো এ্যবরশন করতে। সব কমপ্লিট হলো ঠিকঠাক ভাবে।
তার বাসায় এসব কিছুই বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাই বন্ধবিদের বাসার কথা বলে দুইদিন ছিলো আমাদের সাথে। মাকে বলেছিলাম আমার ফ্রেন্ড হয় সে। বাবা নতুন ব্যাবসা চালু করেছে, তাই প্রায়ই বাইরে থাকে এখন। দুইদিন খুব যত্ন করেছিলাম তাকে। যেমনটা সারা জীবন জরার স্বপ্ন দেখতাম এক সময়।
সকালে তাকে বাসায় পৌছে দেওয়ার কথা থাকলেও সে আবদার করলো আজ সারাটা দিনও আমাদের সাথে থাকবে সে। কারণ এই দুই দিনে আমার মায়ের সাথেও খুব ভালো পরিচয় হয়েছে তার। আমার মা ও খুব মিশুক মানুষ। অল্পতেই কাউকে আপন করে নিতে পারে।
সন্ধায় তাকে বাড়ি পৌছে দিলাম। সারা পথ কোনো কথা বলিনি তার সাথে। শুধু একটা কথাই বলেছিলাম,
– আমি তোমার সব ইচ্ছা পুরণ করতে না পারলেও আমার ভালোবাসায় কোনো অপবিত্রতা ছিলো না।
তার বাসার গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি দুজন। সে হুট করে কেঁদে দিলো। আমার হাত দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো, যেমনটা এক বছর আগে আমি ধরে পাগলের মতো কেঁদেছিলাম। আমার হাতটা ধরে সে কেঁদে কেঁদে বললো,
– তুমি খুব ভালো মনের একজন মানুষ। তোমাকে হারানো টা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা দুর্ভাগ্য। আমায় ক্ষমা করে দেওয়া যায় না? বিশ্বাস করো আমি আর সেই আগের আমি নেই। বদলে গেছি পরোপুরি। প্লিজ আমায় একটিবার ক্ষমা করে দেখো তোমায় কতোটা ভালোবাসবো? চলোনা সব ভুলে আমরা আবার সব ঠিকঠাক করে নিই।
আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো। “দ্যা রিভেন্স অপ ন্যাচার” নামে একটা কথা আছে। প্রকৃতি কাউকে এমনি এমনি ছেরে দেয় না। আমিও তার চোখে চোখ রেখে বললাম,
– মনে আছে, ঠিক এই ভাবে একদিন আমি কেঁদেছিলাম। আমার কতোটা রাত গেছে কান্না করতে করতে। তবুও তো তুমি আমার দিকে ফিরে তাকাও নি। এখন আর সেই ভালোবাসাটা নেই আমার। অনেক আগেই ভালোবাসা নামক শব্দটাকে দাফন করে দিয়েছি। আমি আর কারো হাতের পুতুল হতে চাই না। যে ইচ্ছে করলেই ছুড়ে ফেলে দেয়া যায়। আজ তোমার এই কান্নায় আমি তোমায় আমার কাছে আনতে পারছিনা, সরি। আমি তো কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। ভালো থেকো, আর নিজের যত্ন নিও, টাইমলি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিও, আল্লাহ্ হাফেজ।
আমি আর এম মিনিটও দাড়ালাম না সেখানে। রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাটছি আর সিগারেটের ধোয়ায় নিজের কষ্ট গুলো উড়িয়ে দিচ্ছি এই প্রকৃতিতে। আমি আর কোনো ভালোবাসা চাই না। যা পেয়েছি তাও হজম করার শক্তি নেই আমার। হা হা হা, জেন্ত লাশ হয়ে হলেও, আমি তো সুখেই আছি।
………..সমাপ্ত………