অবুঝ ভালোবাসা,part: 3
writer:ঝরা পাতা(খাদিজা)
?
সকালে নাস্তা করে কলেজ চলে এলাম।আজ বোরখা পড়ে এসেছি।এটা নিয়ে আমার ফ্রেন্ডরা অনেক হাসা হাসি করছে।
ক্লাস করে বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্য বের হতেই দেখি রিয়ান ভাইয়া বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি কাছে যেতেই বললো,বাইকে উঠ,আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বাইকে উঠলাম।
একটু পরে দেখি ভাইয়া বাড়িতে না গিয়ে উল্টো পথে যাচ্ছে।
ভাইয়া এটা তো বাড়ির রাস্তা না।আমরা কোথাই যাচ্ছি।
মা,বাবা সকালে মামা বাড়িতে চলে গেছে।আর আমাকে বলছে তোকে নিয়ে যেতে আর তোকে কীছু মার্কেট করে দিতে।কাল রিমার বিয়ে(রিয়ান ভাইয়ার মামাতো বোন)।
কথাটা শুনেই আমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো,কারণ ও বাড়ির মামা ছাড়া আমাকে কেউ দেখতে পারে না।এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে এর আগে।রিয়ান ভাইয়া হয় তো আমার মনের কথাটা বুঝতে পারেছে তাই বললো।
এতো চিন্তা করতে হবে না।ও বাড়ির কারো কথা কানে নিবি না তাহলেই তো হলো।আর সব সময় আম্মুর সাথে থাকবি ঠিক আছে।
হুম।
রিয়ান ভাইয়া আমাকে অনেক গুলো ড্রেস কিনে দিয়েছে।তারপরে আমরা মামাদের বাড়িতে গেলাম।গিয়ে মামাকে সালাম দিলাম।মামার সাথে কথা বলার মাঝেই মামি চলে এসে বললো।
রিয়ান এই ঝামেলা টা তোরা সব জায়গাতে নিয়ে আসিস কেনো?
কেনো মামি ও কী খুব জ্বালাচ্ছে তোমাকে। তাহলে বলো আমি ওকে নিয়ে চলে যায়।
মামি আর কীছু না বলে ওখান থেকে চলে গেলো।
আর রিয়ান ভাইয়া আমাকে নিয়ে কাকিমার রুমে দিয়ে আসলো।
রিনি মা আজ রিমির গায়ে হলুদ।তারা তাড়ি রেডি হয়ে নে ওকে।
ঠিক আছে কাকিমা। বলেই ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
সন্ধ্যায় রিয়ান ভাইয়ার কিনে দেওয়া হলুদ গাউনটা পড়ে,হালকা সাজলাম।এমন সময় কাকু রুমে আসলো।
বাহ আমার মেয়েটা কে তো এই টুকু সাজেই হুরপরীর মতো লাগছে।
আমি কাকুকে জোড়িয়ে ধরে বললাম ধন্যবাদ কাকু।
বাহিরে এসে দেখি অনেক মানুষ মেয়েরা সকলে হলুদ শাড়ি পড়েছে,আর খুব সেজেছে।আর ছেলে কাচা হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে।
হঠাৎ রিয়ান ভাইয়ার দিকে চোখ গেলো,
ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে কাচা হলুদ পাঞ্জাবি টা যেনো শুধু ওর জন্যই।এতো কিউউট লাগছে ওকে।
একটু পরে একে একে সকলেই রিমি আপুকে হলুদ মাখিয়ে দিলো।আমি হলুদ দিতে গেলেই রিমি আপু আমার হাতটা ধরে বললো
আমি যার তার হাতে হলুদ দি না।
আপুর কথাই খুব লজ্জা পেলাম।কাকিমার দিকে তাকালাম।কাকিমা চোখের ইশারায় চলে আসতে বললো আমি ও চলে আসলাম।
সব শেষে মামি রিয়ান ভাইয়া কে বললো,কীরে রিয়ান ওখানে বসে আছিস কেনো?এখানে আই আর রিমি কে হলুদ দে।
আসলে মামি আমি যার তার গায়ে হলুদ মাখি না।
বলেই চলে গেলো,সকলেই তার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।আর কাকিমা, কাকু মুচকি মুচকি হাসছে। হয় তো তারা খুশি হয়েছে।
রাতে সকলে মেহেদী পড়ছে।আমি ও সকলে সাথেই বসে আছি।তখন একটা পিচ্চি মেয়ে এসে আমাকে বললো।
আপু তুমি মেহেদী পড়বে না।
আমি কীছু বলার আগেই মামি বললো।
যার চাল নাই চুলো নাই তার আবার কীসের মেহেদী পড়া হে।যা এখান থেকে।
আমি কীছু না বলেই কাকিমার রুমে চলে আসলাম।কাকুর সাথে কীছু ক্ষন গল্প করে খাওয়া দাওয়া করে রিমি আপুর রুমে গেলাম ঘুমতে। কারণ এ বাড়িতে ৫ টা রুম একটাতে কাকিমা,কাকু,একটাতে মামা,মামি।
একটাতে বড়রা, আর রিমি আপুর রুমে ছোটরা,
আর বাকী একটা রুমে রিয়ান ভাইয়া। রিয়ান ভাইয়া ওর রুম কারো সাথে সেয়ার করে না।
রিমি আপুর রুমে যেতেই আমাকে যা নই তাই বলে বের করে দিলো।রাত ও অনেক হয়েছে, তাই মন খারাপ করে ছাদে চলে আসলাম।কারণ সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
ছাদে এক কোণে দাড়িয়ে ভাবছি।যার বাবা,মা নেই তার হয় তো দুনিয়াতে কোনো দাম নেই।এই বাড়িতে থাকতে আমার একটুও ভালো লাগছে না,কীন্তু কীছু বলতেও পারছি না।
হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে আমাকে কোলে তুলে নিলো।খুব ভয় পেয়ে তার দিকে তাকাতেই দেখলাম রিয়ান ভাইয়া।
আমি বুঝতে পারি না এই মানুষ টা কী চাই,এই মরিচের গুঁড়ো তো এই পানি।
আমাকে দোলনাতে বসিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে বললেন।
কী হয়েছে এখনও ঘুমাসনি কেনো।
আমি মাথা নিচু করে নিলাম।কারণ কী বললো, যে রিমি আপু আমাকে রুমে ঢুকতে দেই নি।
হুম বলতে হবে না বুজতে পারছি।এবার হাতটা দে।
আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার হাত দিয়ে উনি কী করবে।
আমার ভাবনার মাঝেই ভাইয়া আমার হাত টা নিয়ে মেহেদি পড়ানো শুরু করলো।
মেহেদী পড়ানে দেখে আমার চোখ দুটো আপনা আপনি বড় হয়ে গেলো।এতো সুন্দর করে মেহেদী পড়িয়ে দিলো।তার পরে আমাকে কীছু বলতে না দিয়েই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা সুরু করলেন।
একটু পরে রিয়ান ভাইয়ার রুমে নিয়ে ঘাটে বসালেন।বসিয়ে বললেন তুই ঘুমিয়ে পড়।
আমি অবাক হয়ে মাথা নিচু করে বললাম।
ভাইয়া আমি এখানে ঘুমালে তুমি কোথাই ঘুমাবে?আর তাছাড়া এখানে ঘুমালে লোকে খারাপ বলবে।
আমার কথাটা মনে হয় ভাইয়ার পছন্দ হয়নি।তাই আমাকে একটা ধুমক দিয়ে ঘুমাতে বললেন আর নিজে সোফায় সুয়ে পড়লেন।
চলবে””