#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩৪
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
মেহমানরা সব হাজির রায়জাদা মেনশনে। মেহমান বলতে বেশ কিছু সংখ্যক বাচ্চারা। নীলের বয়সীই সবাই।
রওশন কয়েকটা এনজিও পরিচালনা করে তার মধ্যে রয়েছে একটা অর্ফানেজ। সেখানকার সব বাচ্চারাই এসেছে। রওশন নীলের জন্য বাচ্চা গুলোকে আনিয়েছে যেন নীল একা অনুভব না করে।
বাকী এদের ছাড়া আউটসাইডার কেউই নেই এইখানে।
বাড়ি ভর্তি হৈচৈ, এদের মধ্যে নীল একপাশের সোফায় চুপটি করে বসে আছে। টাইসেল এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে ব্যস্ত, আর আভি বাচ্চাদের সামলাতে।
সুবহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, হাতের ফোনটা দিয়ে বারবার কল করছে রওশনকে। কিন্তু আগের মতোই কল রিসিভ হচ্ছে না।
সারাদিন পেরিয়ে গেছে, এখন সময় নয়টার বেশি। সেই সন্ধা থেকে নীলকে বুঝিয়ে রাখছে সুবহা যে রওশন এসে পড়বে সময় মতো।
কিন্তু এখন যেন ওর নিজেরই চিন্তা হচ্ছে। রওশন কখনো এমন খামখেয়ালি করে না তাও আবার এত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনে। ও বলে বেরিয়েছিল যে মিটিং শেষ করে নীলের জন্য গিফট নিয়ে সন্ধার মধ্যে ফিরে আসবে, কিন্তু এখন রাত।
অর্ফ্যানএজের বাচ্চাদেরও পাঠানোর সময় হয়ে গেছে, কেয়ার টেকার বারবার এসে বলছে দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করতে বাচ্চাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু রওশনকে ছাড়া নীল কেক কাঁটবে না, আর না ওকে ছাড়া কেক কাঁটা সম্ভব। নীলের জন্য খারাপ লাগছে ওর, আজ বেচারার জন্মদিন কিন্তু এই দিনটাও হাসিখুশি ভাবে পালন করতে পারছে না।
সুবহা হতাশা মাখা দৃষ্টি নিয়ে নীলের দিকে তাকায়। আভিও তখন থেকেই নীলের মন খারাপের দিকটা খেয়াল করছে।
আভি সুবহাকে ইশারায় আস্বস্ত করে যে ও নীলকে দেখছে। সাথে সাথেই ও নীলের পাশে এসে বসে পরে। ওর মন ভালো করানোর জন্য এটাসেটা বলতে শুরু করে। আভির সমস্ত চেষ্টা এখন নীলের মন ভালো করার দিকে।
সুবহার চিন্তা যেন প্রতি সেকেন্ডে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনের মধ্যে অদ্ভুত ভয় নাড়া দিচ্ছে। বুকের ভেতরের ঢিপঢিপ কম্পন যেন সেকেন্ড সেকেন্ড বাড়ছে।
ডান হাতটা বুকের বা পাশে শক্ত করে চেপে ধরে সুবহা, নিজেকে আস্বস্ত করার জন্য বিরবির করে বলতে শুরু করে – ‘কিচ্ছু হয়নি সুবহা, সব কিছু ঠিক আছে। খারাপ চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। ডোন্ট থিংক নেগেটিভ থ্যিং! রওশন ঠিক আছেন, হি ইজ ফাইন!’
একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে আবারো রওশনের ফোনে কল করে সুবহা, কিন্তু তখনই গাড়ির শব্দ কানে আসে ওর। দ্রুত বাইরে চলে আসে সুবহা।
রওশন গাড়ি থেকে নামছে, ওকে দেখেই যেন মনের মধ্যে বড় একটা স্বস্তি অনুভব হচ্ছে। আঁটকে থাকা নিঃশ্বাস যেন আবারো স্বাভাবিক গতি ধারণ করেছে।
কিন্তু রওশনকে দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় ও। কারণ রওশনকে দেখতে অন্যরকম লাগছে সুবহার কাছে। মুখখানা কেমন যেন শুষ্ক, শরীরে দুর্বলতা, চোখ জোড়া লাল। এমনটা দেখতে কখনই লাগে নি রওশনকে।
অয়ন গাড়ি থেকে বেরিয়ে রওশনের পাশে দাঁড়ায়। ও সুনিশ্চিত করছে যে রওশন ঠিকমতো হাঁটতে পারে।
নিজের শীতল দৃষ্টি উঁচিয়ে রওশন তাকায় সুবহার দিকে। চোখ ভর্তি ক্লান্তি ওর।
সুবহা ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে এগিয়ে আসে রওশনের দিকে। সুবহার চোখ জোড়া জানান দিচ্ছে তার দীর্ঘ অপেক্ষার।
ধীর পায়ে রওশনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা স্বরে জিজ্ঞেস করে সুবহা, ‘রওশন কোথায় ছিলেন আপনি? আমি আপনার ফোনে সেই বিকেল থেকে অগুনিত কল দিচ্ছি, আপনি রিসিভও করেন নি। কোথায় আছেন জানিয়ে একটা ম্যাসেজও করেন নি। আপনার কোনো আইডিয়া আছে কতটা টেনশনে ছিলাম আমি? আপনি এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারেন? আচ্ছা ঠিক আছে আমার জন্য না কিন্তু নীলের জন্য তো একটু ভাবা উচিত ছিল আপনার। বাচ্চা ছেলেটা আপনার অপেক্ষায় এখনো কেক না কেটে মন খারাপ করে বসে আছে। আপনি….’
সুবহা বিরতিহীন ভাবে নিজের মনে জমে থাকা প্রশ্ন গুলো তীরের গতিতে ছুঁড়ছে রওশনের উপর। কিন্তু রওশন চুপ করে আছে। ঠান্ডা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ও সুবহার দিকে।
জমে থাকা রাগ টুকু শব্দ দ্বারা প্রকাশ করতে পেরে যেন কিছুটা শান্ত হয় সুবহা। সবশেষে অভিমানী স্বরে বলে ও, ‘আপনি সত্যিই নিষ্ঠুর প্রচুর নিষ্ঠুর। হার্টলেস, হৃদয়হীন! আপনি….
হঠাৎ ঠোঁটে ঠান্ডা আঙুলের স্পর্শ পেতেই চুপ করে যায় সুবহা। কথা গুলো গলা অব্দি এসে আঁটকে যায় ওর। চোখ জোড়া বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন নিঃশ্বাস ফেলতে ভুলে গেছে সুবহা।
সুবহার বিরতিহীন কথা বন্ধ করার জন্য আঙুল দিয়ে সুবহার ঠোঁট চেপে ধরে রওশন। আর ভাবান্তর ভাবেই সাথে সাথেই চুপ করে যায় ও।
রওশন এক কদম এগোলো সুবহার দিকে তারপর লো ভয়েজে তাকে শান্ত করার জন্য বলল, ‘টেক আ ব্রিথ সুবহা!’
To be continued…