#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩৬
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
সুবহা ভীতু দৃষ্টি উঁচু করে তাকায় মানুষটিকে দেখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু মানুষটিকে দেখে ভয়টা কেটে যায় ওর, ঘন শ্বাস ফেলে কিছুটা শান্ত হয় সুবহা।
রওশন নয় বরং অয়ন ওর হাত ধরে ওকে আটকেছে। রওশন তো এখনো ঘুমে আচ্ছন্ন। সুবহা কিছু বলবে তার আগেই অয়ন ওর হাত ধরে দ্রুত রুম থেকে বের করে নিয়ে আসে।
সুবহা ওর এমন ব্যবহারে অবাক হয়। রুম থেকে বেরিয়েই সুবহার হাত ছেড়ে দিয়ে দরজাটা ধীরে বন্ধ করে দিল অয়ন।
তারপর সুবহার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলতে শুরু করে ও, – ‘কী করছিলে তুমি বসের রুমে? হ্যাভ ইউ লস্ট ইট সুবহা, যদি বসের ঘুম ভেঙ্গে যেত? উনি কতটা ক্রুদ্ধ হতেন কোনো আইডিয়া আছে তোমার?’
সুবহা চুপ করে আছে। ও বুঝতে পারছে যে অয়ন ঠিক কথাই বলছে। এত রাতে ও রওশনের রুমে গেছে তাও রওশনের ঘুমন্ত অবস্থায়। আর একটুর জন্য তাকে জাগিয়ে ফেলার কান্ড থেকে রেহাই পেয়েছে সুবহা।
যেখানে সামান্য কেবিনে না বলে ঢোকায় রওশন সেদিন খেপে অগ্নিশর্মা হয়ে গিয়েছিল, সেখানে তো আজ সুবহা অসময়ে ওর রুমে ঢুকেছে। না জানি আজ ধরা পড়লে রওশন ওকে কী শাস্তি দিত।
কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও শার্টে লেগে থাকা র*ক্তের কথাটা মনে পড়ে যায় ওর। সাথে সাথেই অয়নকে বলতে শুরু করে সুবহা, ‘আমি তো শুধু চেক করতে এসেছিলাম যে রওশন ঠিক আছে কিনা। উনাকে অনেক অন্যরকম লাগছিল আসার পর থেকেই তাই। কিন্তু রুমে যেতেই রওশনের শার্টে ব্লা*ড দেখতে পাই আমি। এইযে আমার হাতেও লেগেছে দেখ…’ – সুবহা নিজের হাত উঠিয়ে অয়নকে দেখায়।
অয়ন সুবহার হাতে ব্লা*ড দেখে হচকিয়ে যায়। কিছুক্ষণ ভেবে কথা ঘুড়িয়ে বলে ও, ‘এটা ব্লা*ড না সুবহা, পেইন্ট। বসের শার্টে পেইন্ট লেগেছিল, তুমি সেটাকেই ব্লা*ড ভেবে বসেছো।’
অয়নের কথায় সুবহা কিছুটা অবাক হয়। ওর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তাই আবারো প্রশ্ন করে সুবহা, ‘কিন্তু রওশনের শার্টে পেইন্ট আসবে কোথা থেকে?’
অয়ন সাথে সাথে কিছুটা কনফিডেন্স নিয়ে বলতে শুরু করে, ‘আরেহ, আমরা নতুন কালেকশনের স্যাম্পল দেখার জন্য প্রোডাকশন হাউজে গিয়েছিলাম। ওখান থেকেই বসের শার্টে পেইন্ট লেগেছে। এতটুকু বিষয়কে তুমি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ। তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না।’
অয়নের কথা গুলো শুনে সুবহা ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যিই ওদের প্রোডাকশন হাউজে বেশির ভাগই পেইন্টের কাজ চলে। তাই ওখানে গেলে গাঁয়ে বা কাপড়ে এমন পেইন্ট লাগাটা স্বাভাবিক। সুবহার সাথে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটেছে। এমনকি একবার পেইন্ট দিয়ে সুবহা নিজেই গোসল হয়ে গিয়েছিল।
তাই অয়নের কথা গুলো অবিশ্বাস করার মতো কোনো কারণই সুবহার কাছে। অয়নও বুঝতে পারছে যে সুবহা ওর কথায় বিশ্বাস করছে তাই আবারো বলে উঠে ও, ‘অযথা এসব ফালতু কথা না ভেবে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, রাত হয়েছে। যাও!’
সুবহা মাথা নাড়িয়ে অয়নের কথা মতো যেতে নিয়েও আবার থেমে যায়। অয়ন ওকে থেমে যেতে দেখে অসহায় স্বরে বলে, ‘আবার কী হলো? থেমে গেলে কেন?’
সুবহা অয়নের দিকে ফিরে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘তোমাকে তো চলে গিয়েছিলে না, আবার কেন ফিরে আসলে?’
সুবহার এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে যেন এখন নিজেকে আসামি মনে হচ্ছে অয়নের। তবুও ধৈর্য্য নিয়ে এই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়ে বলে ও, ‘আমাকে আভি স্যার ডেকেছেন। এখন এটা জিজ্ঞেস করো না, কেন ডেকেছেন?’
অয়নে শেষ কথাটা শুনে প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে যায় সুবহা। তারপর গোমড়া মুখ করে বলে ও, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে আর কিছু বলব না। যাচ্ছি আমি, গুড নাইট?’
সুবহা রওশনের কামরার দরজার দিকে তাকায় একপলক কিন্তু সাথে সাথে অয়ন দরজার সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে ইশারায় ওকে যেতে বলে।
সুবহা মনে মনে অয়নকে অনেক কিছু বললেও সামনাসামনি কিছু বলল না, চুপচাপ নীরবে চলে গেল ও।
সুবহা চলে যেতেই অয়ন জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে, ‘ভেরি গুড অয়ন, বস জানতে পারলে তোর খুব প্রশংসা করবেন। আমি কতটা চালাকি করে বসকে বাঁচিয়েছি ধরা পড়ে যাওয়া থেকে, আর সুবহাকেও সন্দেহ করার সুযোগ দেই নি। ওয়েল ডান্!’ – নিজেকে বাহবা দিতে দিতে বলছে অয়ন।
পরের দিন সকাল,,
নতুন সকাল, নতুন দিন যেমন নতুন কিছু মুহুর্তের আগমন ঘটায়। আজকের দিনটা, আজকে সকালটাও হয়ত ঠিক তেমনি হবে।
কলেজ ক্যাম্পাসে ভোর ছয়টা থেকে কাজ করছে স্ট্যামফোর্ড এর ল্য ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টরা। আজ প্রথম বর্ষের স্টুডেন্টদের অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হবে ক্যাম্পাসে, আর সেই অনুষ্ঠানে নামি দামী অনেকেই আমন্ত্রিত যাদের মধ্যে সবাই’ই আইনি পেশার লোক। আর এত গুরুত্বপূর্ণ মেহমানদের মধ্যে একজন হচ্ছে অপূর্ব শেখাওয়াত।
অপূর্ব একজন সফল এডভকেট হওয়ার পাশাপাশিও এই ইউনিভার্সিটিরই একজন স্টুডেন্ট ছিল। তাই সিনিয়র হিসেবেও তার মর্যাদা এখানে অনেক।
ঠিক দশটায় প্রোগ্রাম শুরু হবে, আর এই প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধনের কাজ দেওয়া হয়েছে ল্য ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের স্টুডেন্টদের উপর। দেখা যাক আজকের এই অনুষ্ঠান কাদের জীবনে গভীর ছাপ ফেলে যায়।
এইদিকে,
ভোরের আলো মুখে পড়তেই নড়েচড়ে উঠে রওশন। পিটপিট করে চোখ জোড়া খোলে ও। শরীরের দূর্বলতা কিছুটা কম অনুভব হচ্ছে এখন। উঠে বসে রওশন।
আশেপাশে খেয়াল করতেই রওশনের মনে পড়ে, রাতে বারান্দায়ই ঘুমিয়ে পড়েছিল ও। আঘাতের জায়গাটা টনটন করছে, শার্টটা অল্প উঁচিয়ে ক্ষত’র জায়গাটা দেখে ও। সাদা ব্যান্ডেজে লাল র*ক্তের ছোপ ছোপ দাগ স্পষ্ট। ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করতে হবে। শার্টটা নামিয়ে ঘন নিঃশ্বাস ফেলে রওশন তারপর উঠে যেতে নিলেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পায়।
রওশন সাবধানে উঠে দাঁড়ায়, তারপর রুমে ঢুকে দরজার সামনে গিয়ে অল্প করে দরজা খোলে। হাতে কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুবহা।
রওশনকে দেখেই ঠোঁটে বড় একটা হাসি টেনে কফির মগটা উঁচু করে দেখিয়ে বলে উঠে ও, ‘গুড মর্নিং!’
‘মর্নিং!’ – রওশন এক হাত দিয়ে কফির মগটা নিয়ে নিল। কিন্তু সুবহা এখনো দাঁড়িয়ে আছে, যাচ্ছে না। রওশন ভ্রু জোড়া কুঁচকে ধীর স্বরে বলে, ‘হোয়াট? দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিছু বলবে?’
সুবহা সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। রওশন পুরো দরজা খুলে নি বরং অল্প খুলেছে, তাই সুবহা রুমের ভিতরে ঢুকতে পারছে না। এজন্য বাইরে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে বলে ও, ‘ র রওশন আপনি কী আ আজকে ফ্রী আছেন?’
ভীতু স্বরে তোতলিয়ে জিজ্ঞেস করল সুবহা। রওশন চোখ ছোট করল, তারপর বলল – ‘হোয়াই?’
সুবহা চুপ করে আছে, দু হাত ঘষতে শুরু করেছে ও। ঘনঘন চোখের পাপড়ি ফেলছে সুবহা, ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে কতটা নার্ভাস ফিল করছে ও।
রওশন এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হচ্ছে, সুবহা বলবে বলেও কিছু বলছে না তাই আরো বেশি বিরক্ত হচ্ছে রওশন।
‘সুবহা কী বলবে তুমি? তাড়াতাড়ি বলো আমার পা ধরে যাচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে।’ শান্ত গলায় বলল রওশন।
কথাটা যেন গলা অব্দি এসে আঁটকে আছে সুবহার। বলার চেষ্টা করেও পারছে না বেচারি। সুবহার এমন চুপ থাকায় রওশন বিরক্ত হয়ে বলে উঠে, ‘কিছু বলার না থাকলে তুমি যেতে পারো, ডোন্ট ওয়েইস্ট মাই টাইম! লিভ!’
রওশন দরজা লাগাতে যাবে তখনই সুবহা দরজা ধরে বলে উঠে, ‘আমি আপনাকে ঘুরতে নিতে চাই।’
সুবহার এমন আজব কথায় রওশনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় ও সুবহার দিকে।
সুবহা সাথে আবার কথা ঘুরিয়ে বলতে শুরু করে,’ না মানে আমি না নীল, নীল আপনাকে ঘুরতে নিতে চায়। না না না, আমি বলতে চাচ্ছি নীল আমাদের সবার সাথে ঘুরতে যেতে চায়…!’
To be continued…