#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩৭
#Writer_Sannjana_Shabnam_Fahmida
বাইকের চাবি আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে অফিসে ঢুকে আভি। ডেস্কে বসে থাকা সবাইকে গুড মর্নিং বলে নিজের কেবিনের দিকে যায় ও, তখনই ওর নজর পড়ে অর্নবের কেবিনের দিকে। অর্নবের কেবিনে ওহি বসে আছে, কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে তারা।
হঠাৎ ওহিকে এখানে দেখে তাও আবার অর্নবের সাথে খানিকটা অবাক হয় আভি। তার সাথেই খটকা লাগতে শুরু করে ওর, যে ওহি হয়ত ওর নামে নালিশ করতে এসেছে।
নিশ্চয়ই নিজের বাবার কাছে ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে মেয়েটা। কপাল কুঁচকালো আভি, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকাল ওহির দিকে। কিছুক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে থেকে নিজের কেবিনে ঢুকে পরল ও।
কেবিনে ঢুকেই ডেস্কে রাখা ফাইল গুলো চোখে পড়ল ওর। দ্রুত ফাইলটা তুলল আভি, যা ভেবেছিল তাই হলো। রওশনের নামের পুরোনো কেসটা আবারো রি-ওপেন করা হয়েছে। কেউ খুব চালাকি সহ পুরোনো ঘাঁ খুঁড়ে নতুন ভাবে আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু কে সে? ভাবছে আভি।
এইদিকে,
ঘড়ির কাঁটা ঠিক নয়টা চল্লিশে আঁটকে, নতুন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এত এত মানুষের ভীড়ে এক জোড়া চোখ তার প্রিয় মানুষটিকে খুঁজতে ব্যস্ত। সে হচ্ছে প্রকৃতি, ল্য ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। প্রকৃতি আর তার কিছু বন্ধুরা মিলেই আজকের এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় পব কাজ করেছে। শুধু এটাই নয়, গত কিছু দিন ধরেই এসব কিছুর আয়োজনে প্রচুর সময় আর শ্রম নষ্ট করেছে প্রকৃতি। কিন্তু এতো কিছু করার পেছনে তার শুধু একটাই উদ্দেশ্য ছিল, আর সেটা হচ্ছে অপূর্ব শেখাওয়াতের সাথে দেখা করার সুযোগ।
একমাত্র অপূর্বর কথা ভেবেই হাসিখুশি ভাবে সব দায়িত্ব সুন্দর করে পালন করেছে ও।
এই মুহূর্তে তারাই নতুন শিক্ষার্থীদের বরণ করছে। কিন্তু প্রকৃতির মন পড়ে আছে অন্য কোথাও, তার আবেগী দৃষ্টি যেন শুধু অপূর্বকেই খুঁজতে ব্যস্ত। প্রকৃতি এমন খামখেয়ালি অবস্থা দেখে ওর বান্ধবী তুলি ওর কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে, ‘কী করছিস প্রকৃতি, তোর খেয়াল কোথায়?’
প্রকৃতি তার মাথাটা তুলির কাঁধে রেখে অসহায় স্বরে বলে, ‘ধ্যান জ্ঞান খেয়াল সবই তো অপূর্ব শেখাওয়াতের কাছে পড়ে আছে দোস্ত!’
ওর এমন কথা শুনে তুমি নিজের কাঁধ ঝাঁকি মেরে প্রকৃতির মাথা সরিয়ে দিয়ে বলে, ‘ধীরে বল, তোর কথা শুনলে আমার তোকে একদম একুশ শতকের জুলিয়েট মনে হয়। আর অন্য কেউ তোর এই ধরণের কথা শুনলে নির্ঘাত ভেবে বসবে তুই প্রেমে পাগল টাগল হয়ে গেছিস। তারপর তোর ঠিকানা হবে পাবনার পাগলা গারদে, আর এডভকেট হওয়ার স্বপ্ন যাবে বুড়িগঙ্গায় ভেসে।’
প্রকৃতি হাসলো তুলির কথায়, হাত জোড়া তুলির গলায় জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করল – ‘তুই তো আছিসই আমাকে পাগলা গারদ থেকে বের করার জন্য। বল বের করবি না?’
‘একদমই না। বরং আমি বলব তোকে কড়া সিকিউরিটি দিয়ে আঁটকে রাখতে।’ প্রকৃতির হাত দুটো ছাড়িয়ে বলল তুলি।
প্রকৃতি ভেংচি কাটলো তুলিকে। মুখ ঘুরিয়ে অন্য পাশ ফিরে রইল। তুলি প্রকৃতির কাজে হাসলো, তারপর কাঁধে দু হাত জড়িয়ে ওকে মানাতে মানাতে বলে, ‘আচ্ছা বাবা স্যরি, আর বলব না।’
প্রকৃতি হেসে দিল, ঝট করে তুলির দিকে ফিরে নিজের হাতের ফুল গুলো তুলির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল – ‘তাহলে তুই এখানে সব সামলা, আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসব। প্রমিস!’
তুলি অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘কিন্তু তুই যাচ্ছিস কোথায়?’
প্রকৃতি কিছু বলল না, শুধু বড় একটা হাসি উপহার দিয়ে ঝটপট চলে গেলো। তুমি মাথা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, বিরবির করে বলল – ‘মেয়েটা এত ছটফট করে ওকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। নিশ্চয়ই এখন অপূর্ব শেখাওয়াত এসেছে কিনা খুঁজতে গেছে। পাগলী একটা!’
সবে গাড়ি থেকে নেমে কলেজে ঢুকেছে অপূর্ব। হাঁটছে আর ক্যাম্পাসের চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছে ও। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে ওর। যতই ভেতরে যাচ্ছে স্মৃতি গুলো ততই মনে নাড়া দিয়ে উঠছে ওর।
এইদিকে,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে সুবহা। সরষে হলুদ রঙের লং ড্রেস পড়েছে ও, সাথে কানে ঝুমকা আর হাত ভর্তি চুড়ি। চুল গুলো স্ট্রেইট করে বাঁকা সিঁথি করে পিঠে ছড়িয়ে দিয়েছে।
আয়নায় খুব গভীর দৃষ্টি নিয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষন করছে ও। বুকের ঢিপঢিপ শব্দ তীব্র ভাবে কানে প্রতিধ্বনি দিচ্ছে। ঠোঁটে শুভ্র হাসির রেখা টেনে গভীর করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল সুবহা, তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল – ‘এভরিথিং ইজ পারফেক্ট! কিন্তু তবুও কোথাও কিছু একটা মিসিং লাগছে। কিন্তু কী মিসিং?’
সুবহা ভালোভাবে আয়নায় নিজেকে দেখে, কিন্তু তেমন কিছুই পাচ্ছে না। কিন্তু তবুও যেন কিছু একটা মিসিং লাগছে ওর।
সুবহা কিছুক্ষণ আয়নায় নিজেকে পর্যবেক্ষন করে একটা তুলি উঠিয়ে নেয়, তারপর খোলা চুল গুলো মুঠোর মধ্যে নিয়ে বেঁধে নেয়।
‘এখন ঠিক আছে!’ – মুচকি হেসে নিজে নিজে বলল সুবহা।
এর মধ্যেই দু হাতে দুটো ড্রেস নিয়ে সুবহার কামরায় হাজির হয় নীল। রুমে সামনে এসে দরজায় কড়া নেড়ে সুন্দর ভাবে বলে ও, ‘ম্যে আই কাম ইন?’
সুবহা সাথে সাথে দরজার দিকে ফিরে তাকায়, নীলকে দেখে মুচকি হেসে হাত নিয়ে ইশারা করে ওকে ভেতরে আসতে বলে ও।
নীল সুবহাকে দেখে মুখে হাত দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতে করতে রুমে ঢুকে বলতে শুরু করে, ‘ওয়াও! তোমাকে তো পুরো হলুদ পরি লাগছে সুবা!’
নীলের কথায় সুবহা হেসে উঠলো, তারপর হাঁটু ভাঁজ করে নীলের সামনে বসে বলল – ‘থ্যাংক ইউ কিউটি পাই!’ নীলের চুল গুলো হাত নিয়ে নেড়েচেড়ে দিল সুবহা। কিন্তু নীলের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করতেই ও দেখে নীল রেডি হয়নি।
‘তুমি এখনো রেডি হওনি কেন নীল?’ – জিজ্ঞেস করল সুবহা।
নীল দু হাতের ড্রেস গুলো সুবহার সামনে তুলে ধরে আহত স্বরে বলতে শুরু করে, ‘আই নীড ইউর হেল্প! আমি বুঝতে পারছি না কোনটা পড়ব।’
সুবহা হাসলো নীলের ঠোঁট ফোলানো দেখে, তারপর নীলের হাত থেকে ড্রেস দুটো নিয়ে বলল ও – ‘ আমি আছি না, আমি তোমাকে কিউট চেয়ে একটা ড্রেস চুজ করে দিচ্ছি। যেটা পড়ে আমাদের কিউটি নীলকে আরও কিউট লাগবে।’
সুবহা ড্রেস দু’টো ভালো করে দেখল, একটা হচ্ছে সাফারি জ্যাকেট আর টিশার্ট সেট আরেকটা হচ্ছে স্কাই ব্লু আর হোয়াইট কালার ফুল স্লিভ ক্যাজুয়াল হুডি।
সুবহা দুটো ড্রেসি ভালো করে দেখে হুডিটা নীলের হাতে দিয়ে বলল, ‘এটা বেস্ট!’
নীল ড্রেসটা দেখে হাসলো, তারপর বলল – ‘তোমার চয়েজ একদম আমার মতো। আমিও এটাই বেশি পছন্দ করেছি। গীভ মি টেন মিনিট’স আমি দৌড়ে গিয়ে রেডি হয়ে আবার দৌড়ে আসছি।’ – নীল যেতে যেতে বলল কথা গুলো।
নীল চলে যেতেই সুবহা উঠে দাঁড়ায়, তারপর বেড থেকে ফোনটা তুলে সময় দেখে নেয়। এখন সময় পনে দশটা ওদের বের হওয়ার সময় আরো আধা ঘন্টা পর। যদিও সুবহা আগে আগেই রেডি হয়ে গেছে, কারন রওশন লেইট করতে একদম পছন্দ করে না। আর সুবহা চায়না আজকের এমন হাস্যোজ্জ্বল দিনেও রওশনের কাছ থেকে বকা শুনতে।
To be continued…..
Baki part Kobe deoa Hobe?