#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (৯)
#রোকসানা-রাহমান
ভয়ার্ত চিৎকারে ফেটে পড়ছে তিঁহি। চোখ মেলে দেখতে পাচ্ছে, নিজের বা’হাতের বৃদ্ধা আঙুলে জ্বলন্ত সিগারেট ধরে আছে তাঁজ। আবার এক ভয়ংকর চিৎকারে ফেটে পড়তেই তাঁজ ওর মুখ চেপে ধরে ফেলে! তিঁহি ভয়ে তাঁজের হাত আটকাতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার সামনের হিংস্রপ্রানীটির উপর!
চোখে,মুখে গর্জনের ছাপ,চোখগুলোও ভীষন ভারী তেজ,সেই তেজ নিয়ে তিঁহিকে দমিয়ে ফেলার প্রচেষ্টা,তার সাথে শরীরের প্রবল শক্তিতো আছেই। তিঁহি চুপচাপ হয়ে যেতেই ওর মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়েছে তাঁজ। বা’হাতে চেপে ধরা জ্বলন্ত সিগারেটটা মুখে পুরে বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে নিকোটিনের। সামনেই রাখা মদের বোতলটা! খুলতে খুলতে বললো,,
“” কি প্রেমে মরলিরে তুই? জেগেও তার নাম বিলাপ করিস আবার ঘুমেরঘোরেও?? এতো বিলাপ দিয়ে কি হবে,যদি সে তোকে অন্যের বুকে ছেড়ে দেয়??””
তিঁহি ব্যথায় কুকিয়ে উঠছে,তাঁজের কথা গায়ে মাখার সময়টুকু পাচ্ছেনা। আঙুলের উপর বৃত্তাকারে কালো হয়ে ফুলে উঠেছে,ঝলসে যাওয়া চামড়াটি। এবার বুঝি তার ভেতরবাহির সমানে সমানে পুড়ে সার্থক হলো!
তাঁজ মদের বোতলটা উল্টো করে তিঁহির পুড়া জায়গায় ঢেলে দিয়ে বললো,,
“” আমি তো তোকে ভালোবাসিনা,তোর প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট ও নাই,তবুও তুই আমার খাচায় বন্দী। আর যার জন্যে তোর বুকে এতো প্রেম,তার বুকে কেন বন্দী হতে পারলিনা?? মানলাম আমি খারাপ,হিংস্র,নির্দয়,পশু আরো অনেককিছু তাই আমার পাখি আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে,কিন্তু তুই? তুই কেন বেধে রাখতে পারলিনা?? বল কেন পারলিনা??””
তাঁজের ধমকানিতে তিঁহি কেঁপে উঠে,চোখের পানিতে মুখ পুরো ভিজে যাওয়ার অবস্থা! ভেজা কন্ঠে বললো,,
“” জানিনা।””
তাঁজ মুখে ঢকঢক করে মদ ঢেলে নিয়ে উচ্চ শব্দে হাসতে হাসতে বললো,,
“” ভালোবাসা তার,জোর আছে যার!””
তাঁজ আরেকটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে বললো,,
“” আমার ভেতরটা এর মতো জ্বলছে। আর তোর ভেতরটাও আমি এর মতোই জ্বালিয়ে শেষ করে দিবো। তুইনামক জ্বলন্ত সিগারেটটা তো আমার মুখেই,,নিশ্বাসের বেগ যত বেশি হবে,ততবেশি জ্বলবি। এখন তুই ঠিক কর আমি কতটা বেগ নিয়ে নিশ্বাস টানবো।””
তাঁজের কথায় তিঁহি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। কি বলছেন উনি?? আমাকে কেন জ্বালাবেন? আমি কি করেছি?? তিহি অস্ফুটে বললো,,
“”আমার অপরাধ?””
তিঁহির কথায় তাঁজ সিগারেটটা হাতে নিয়ে ছাই ফেলে বললো,,
“” সব কয়েদি অপরাধের জন্য শাস্তি পায়না,কেউ কেউ অন্যের অপরাধের শাস্তিও নিজে ভোগ করে।””
“” মানে?””
তাঁজ ঠোঁটে হাঁসি এনে মদের বোতলটা ওর দিকে এগিয়ে বললো,,
“” নেশা করবি??””
তিঁহি চোখ গরম করে তাকাতেই তাঁজ বোতলটা নিজের মুখে পুরে বললো,,
“” তুই কি জানিস,তুই নিজেই নেশা?””
তিঁহিকে কিছু বলতে না দিয়েই তাঁজ আবার বললো,,
“” আমি যতই নেশা করে তোর কাছে আসিনা কেন,তোকে দেখলেই আমার সব নেশা চলে যায়। কেন জানিস?””
“” কেন?””
তাঁজ খালি বোতলটা ফেলে দিয়ে তিঁহির দিকে ঘুরে বললো,,
“” নেশায় নেশায় কাটাকাটি!””
তিঁহি না বুঝার ভঙ্গি করলে তাঁজ ওর কাছাকাছি এসে চোখে চোখ রেখে বললো,,
“” তোর এই চোখের সাগরে যে কোনো পুরুষ তলিয়ে যাবে। তোর এই ঠোঁটের ছোয়া যেকোনো পুরুষকে মাতাল করে দিবে। তোর এই বু….””
তাঁজের অশ্রাব্য কথায় তিঁহির কান ঝালাপালা হওয়ার আগেই তাঁজকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,,,
“” আমি আপনাকে ঘৃনা করি,খুব খারাপভাবে ঘৃনা করি!””
“” তোহ,আমার কি? আমি কি তোকে বলেছি আমাকে ভালোবাসতে?? তোদের মতো মেয়েমানুষীর ছলনাময়ী ভালোবাসা এই তাঁজ চায়না। আমিও ঘৃনা করি শুধু তোকেনা,পুরো নারীজাতিকে ঘৃনা করি!””
তাঁজের চোখে,মুখে ফুটে উঠেছে ঘৃন্নতার ছায়া। তার ঘৃনার কাছে তিঁহির ঘৃনা যেন কিছুই না। কিন্তু কেন? নারীজাতির উপর কেন এতো ঘৃনা?? তিঁহি তাঁজের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে ওর বুকে চেয়ে আছে। গলার কাছ দিয়ে শার্টের দুটো বোতাম খুলে আছে। যার ফলে বুক ভর্তি কালচে লোমশগুলো চোখে পড়ছে খুব। ছোটবেলায় শুনেছিলাম,যে ছেলের বুকে যতবেশি লোম,সেই ছেলের বুকে ততবেশি ভালোবাসা। তাহলে কি উনার বুকেও কারো জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা ছিলো?? কিন্তু কি এমন ঘটেছে যার ফলে সেই ভালোবাসার প্রদীপ নিভে গিয়ে জঘন্যতার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে??
তিঁহির ভাবনার মধ্যে তাঁজ ওর বুকে মাথা রেখে বললো,,
“” নেশাবউ,আমাকে একটু ঘুৃম পাড়িয়ে দাওতো,কতটা বছর আমি ঘুমাইনি,আমার যে খুব ঘুম পাচ্ছে!””
তাঁজের মুখে এমন আদুরী ডাকে তিঁহি চমকিত। ওর মাথাটা সরাতে গিয়ে বুঝতে পারলো সে গভীরঘুমের তল দেশে বিরাজ করছে। ভালোবাসার যে এতোগুলো রুপ থাকতে পারে তিঁহির জানা ছিলোনা।
তিঁহি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাঁজের থেকে মনোযোগ সরাতেই ভয়ের আরেক পর্যায়ে এসে থেমেছে। একি! আমি রাস্তায় কি করে এলাম?? তিঁহি অস্থিরতায় চারপাশ ঘুরেফিরে দেখে বুঝতে পারলো,তারা তাদের বাসা থেকে অনেকটা দুরে কোনো নির্জীব এলাকার একটি পাকা রাস্তায় অবস্থান করছে। আর দুজন এতক্ষন বিছানায় নয় গাড়ীর সিটে বসেছিলো! চারপাশের ঘনঅন্ধকার,ঝিঝিপোকার ডাক,আর নিরিবিলির শিনশিন শব্দে তিহি আৎকে উঠছে। এই ঘুমন্ত মাতালটা তাকে কোথায় এনে ফেলেছে?? এখন বাড়ি যাবো কিভাবে?? উনিও তো ঘুম,ও মাই গড!
তাঁজকে ডাক দেওয়ার সাহস পাচ্ছেনা তিঁহি। যদি আবার কোনো হিংস্র আচর বসিয়ে দেয় নিজের শরীরে?? কিন্তু না ডেকে তো কোনো উপায়ও নেই,এখানে এভাবে সে কতক্ষন থাকবে?? তাঁজকে একটু ধাক্কা দিতেই যেন ও আরো বেশি করে তিঁহির উপর ঢলে পড়েছে। পুরো শরীরের ভারে তিঁহির চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার অবস্থা,নিশ্বাস নেওয়ারও শক্তিটুকু পাচ্ছেনা। কি করবে না করবে বুঝে উঠতে না পেরে তাঁজের কানের কাছে মুখ নিয়েছে। নিজের কান দুটো নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে,চোখদুটোও বন্ধ করে চিৎকার করে বললো,,
“” আমি বাসায় যাবো!!!!!!””
~~
প্রতিদিনের মতো আজো ইঁশাদকে গেইটের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিঁহির মুখ চকচক করে উঠছে। দ্রুতপদে ইঁশাদের কাছে গিয়ে বললো,,
“” আপনি এখন থেকে রোজ আমাকে বাসায় দিয়ে আসবেন?””
“” তোমার আপত্তি না থাকলে আমার তো কোনো সমস্যা নাই।””
মিঁহি হাতদুটো নাচুনির ভঙ্গিমায় নাড়িয়ে বললো,,
“” আমারও নাই। আমারতো বেশ লাগে আপনার সাথে ঘুরতে। তারমধ্যে রোজ গাড়ীতে চড়াও হয়। এতে আমার অনেক জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ক্লাসে সবাইতো আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার জন্য উঠেপরে লেগেছে।””
মিঁহির বাহাদুরী হাসির সাথে ইঁশাদও হাসি মিলিয়ে বললো,,
“” শুধু ফ্রেন্ডশিপই তো নাকি আরো কিছুও?””
মিঁহি কিছুটা লজ্জা নিয়ে কাধের ব্যাগটা ঠিক করা ভঙ্গিমায় বললো,,
“” আপনাকে বলবোনা।””
“” আবার সিকরেট?””
“” হুম!””
মিঁহিকে নিয়ে গাড়ীতে উঠতে গেলে মিঁহি আবার বললো,,
“” এখনি চলে যাবো? কিছু খাবোনা?””
ইঁশাদ থমকে গিয়ে অবাক হয়ে বললো,,
“” কি ব্যাপার মিঁহিরানি,আজ নিজ থেকেই খেতে চাচ্ছো যে?””
মিঁহি আহ্লাদি গলায় বললো,,
“” আমার কাছে অনেকগুলো টাকা হয়েছে। ভাবছি আজ আমি আপনাকে খাওয়াবো।””
“” তাই?”‘
“” হুম! কি খাবেন?””
ইঁশাদ মিঁহির চুলে হাত রেখে বললো,,
“” আজকে নয়,অন্য একদিন। আজ আমার তাড়া আছে। আর তোমার টাকা আরো বাড়ুক,পরে নাহয় অনেককিছু খাবো।””
“” মিথ্যেকথা! আমি জানি আপনার কোনো তাড়া নেই। আপনি ইচ্ছে করেই এমন বলছেন।””
মিঁহি গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরে দাড়াতেই ইঁশাদ বললো,,
“” আচ্ছা খাবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে!””
“” কি?””
“” তোমার টাকা তোমার কাছেই থাকবে। আমি বিল পে করবো।””
বেশি খুশি হয়নি এমন একটা ভাব ধরে ইঁশাদের সাথে স্কুলের পাশেই একটা ক্যান্টিনে ঢুকে পড়েছে। ইঁশাদ একটা সিঙারা মুখে পুরে বললো,,
“” মানুষটাতো একটুখানি,কিন্তু বুদ্ধী দেখেতো মনে হচ্ছে দুবাচ্চার মা হয়ে গেছো।””
মিঁহি সবেই সিঙারা মুখে পুড়েছিলো। ইঁশাদের কথায় আচমকা কেঁশে উঠেছে, ওর সামনে পানির গ্লাস ধরে ইঁশাদ।
মিঁহি পানি খাচ্ছে আর ভাবছে,এতো কষ্ট করে বুদ্ধী আটলাম তাও ধরা পড়ে গেছি?? উফ!
ইঁশাদ মিটিমিটি হেঁসে নিয়ে বললো,,
“” তোমাকে মনে হয় এবার বিয়েটা দিয়ে দিতেই হবে।””
“” খালি পেটকে- ভরা পেট বানাতে চাইলাম বলে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে?””
“” হুম, দিতে হবে।””
“” কেন?””
“” বেশি পেকে যাওয়ার আগেই ফল খেয়ে ফেলতে হয়,নাহলে পচন ধরে।””
ইশাদের কথার আগামাথা না বুঝেই মিঁহি প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,,
“” কাল,আপুর সাথে কথা না বলেই চলে গেলেন কেন? আপু কত কষ্ট পেয়েছে জানেন?””
ইঁশাদ সিঙারা মুখে পুড়তে গিয়েও থেমে গিয়েছে। প্লেটে ফেরত রাখবে ভাবলেও প্লেটে না রেখে সিঙারাতে কামড় দিয়ে বললো,,
“” মায়া বাড়াতে চায়নি। এখন কষ্ট পেলেও আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে!””
“” সত্যিই কি হবে?””
মিঁহির প্রশ্নে কিছু সেকেন্ড নিরবতা পালন করে ইঁশাদ দুষ্টুমী করে বললো,,
“” দুলাভাই কেমন?””
“” ভালোই, কিন্তু!””
“কিন্তু কি?””
“” কিন্তু ইয়া মোটা মোছ,দেখলেই মনে হয় হিটলারের হাবিলদার হয়ে ওর সাথে ঘুরঘুর করছে। কেউ কিছু বললেই গুলি করে দিবে!””
মিঁহির কথায় ইঁশাদ না হেঁসে পারছেনা। কিন্তু এখানে বসে শব্দ করে হাঁসাটা বেমানান লাগবে ভেবে বাকা হাঁসি দিচ্ছে।
“” আপনার মতো সুন্দর না।””
“” আমার থেকেও বেশি সুন্দর।””
“” কি করে বুঝলেন? আপনি দেখেছেন?””
“” নাহ!””
“” তাহলে কিভাবে বুঝলেন?””
“” যার কাছে তিঁহি আছে সেই সবথেকে সুন্দর মানুষ।””
“” তাহলে আপনি কেন আপুকে নিলেননা,সুন্দর ভাইয়া?””
মিঁহির প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ইঁশাদ উঠে পড়লো।
“” তুমি খাওয়া শেষ করো। আমি বিলটা দিয়ে আসছি।””
মিঁহিও ইঁশাদের সাথে সাথে উঠে পড়ে, হাটা শুরু করে দিয়েছে।
“” আপুর হাসবেন্ডকে আপনি সত্যিই দেখেননি।””
“” না।””
“” কিন্তু এটা কি করে হতে পারে? একটা লোককে না দেখে,না জেনে তার কাছে আপুকে ছেড়ে দিলেন?? যদি উনি আপুকে কষ্ট দেয়। আপনার মতো ভালো না বাসে!””
ইঁশাদ মানিব্যাগটা পকেটে ভরে বললো,,
“” তোমার বোন এমন একটা মেয়ে যাকে ভালোবেসেও মন ভরতে পারবেনা। সেখানে কষ্ট কি করে আসবে?””
“” আপনি এতো সিউর কি করে হচ্ছেন?””
“” তোমার বোনের উপর আমার আস্থা আছে।””
মিঁহিকে গাড়ীতে বসিয়ে দিয়ে ইঁশাদও গাড়ীতে উঠে বসেছে।
“” আর আপু যদি সবকিছু ছেড়েছুড়ে আপনার কাছে চলে আসে,তখন?””
“” আসবেনা।””
“” কেন?””
“” আমি চাইনা তাই।””
মিঁহি ইঁশাদের দিকে ঘুরে বসেছে। পা’দুটো ভাজ করে বললো,,
“” আপনি না চাইলে আপুও চাইবেনা?””
“” না।””
মিঁহি এবার বিরক্ত হয়ে বললো,,
“” এটা কেমন ভালোবাসা?””
ইঁশাদ মিঁহির গাল টেনে বললো,,
“” তোমাকে বুঝতে হবেনা! আজকাল পড়া লেখাবাদ দিয়ে অন্য জায়গায় মনটা বেশি পড়ে আছে। এমন হলে তো পরীক্ষায় লড্ডু পাবে তখন কিন্তু সুন্দর ভাইয়া রাগি ভাইয়া হয়ে যাবে। মাইরও খেতে পারো!””
“” আমার কি দোষ? আমার তো আপনাকে নিয়ে টেনশন হয়!””
ইঁশাদ গাড়ী স্টার্ট করতে গিয়ে হেঁসে উঠে বললো,,
“” তাই?””
“” হুম! আপনার যে কেন কোনো ছোটভাই নাই!””
ইঁশাদ ব্রু কুচকে বললো,,
“” ছোটভাই থাকলে কি হতো?””
“” আমি বিয়ে করে নিতাম। তাহলে তো আপনাকে সারাক্ষন চোখে চোখে রাখতে পারতাম।””
ইঁশাদ আবার হেঁসে উঠায় মিঁহি বেশ বিরক্ত!
“” আমার টেনশনে আপনার হাঁসি আসছে?””
“” আমার তো সত্যিই আফসোস হচ্ছে,কেন যে আমার ছোটভাই নেই!””
“” ধুর! আপনার সাথে আর কথাই বলবোনা।””
ইঁশাদ মিঁহির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
“” ছোটভাই নেই তো,কি হয়েছে? বড়ভাই আছে,তাকে বিয়ে করে ফেলতে পারো। এতে তোমার আরো বেশি সুবিধা হবে,সম্পর্কে তুমি আমার বড়ভাবী হবে!””
মিঁহি রাগ রাগ নিয়ে ইঁশাদের দিকে তাকালে ইঁশাদ হাঁসি রেখেই বললো,,
“” তোমাকে কিন্তু আমার বড়ভাইয়ের সাথে বেশ মানাবে। আর আমাকেও চোখে চোখে রাখতে পারবে,শাসনও করতে পারবে! তার মধ্যে ইনাও একটা বান্ধুবীমা পাবে! আইডিয়াটা কিন্তু মন্দ না মিঁহিরানি!””
~~
তাঁজ ঘুম থেকে উঠে বসতেই ওর সামনে একটি গ্লাস এগিয়ে ধরেছে তিঁহি।
“” আপনার নেশা এখনো কাটেনি। লেবুররসটা খেয়ে নিন।””
তাঁজ ঘুমঘুম চোখে তিঁহির দিকে তাকিয়ে আছে। সবেই গোসল করে বের হয়েছে। গাঢ় গোলাপী কালার থ্রি-পিস পড়ে আছে,মাথায় এখনো টাওয়াল জড়ানো। মুখের স্নিগ্ধতা ছেয়ে আছে। তার তুলনায় বয়সটা তেমন বেশি কম নাহলেও পাঁচ-ছ বছরের ছোটতো হবেই। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ৮-১০ বছরের ছোট,সবেই কৈশোরে পা দিয়েছে।
“” কি হলো,ধরুন!””
তিঁহির জোরালো কন্ঠে তাঁজ লেবুররসের গ্লাসটায় হাত না দিয়ে তিঁহির হাতে হাত রেখেছে। মাথার ভেতরটা এখন ভোঁভোঁ করছে,নেশার সাথে ঘুমটাও কাটেনি। কিন্তু এখন অন্যনেশা পাচ্ছে। মেয়েলি নেশা!
তিঁহিকে অবাক করে দিয়েই তাঁজ ওর হাতটা খামচে ধরে। গ্লাসটা নিচে পড়ে টুকরোটুকরো হয়ে গেছে।
তিঁহির হাত ধরে হেচকা টানে নিজের কাছে টেনে এনেছে তাঁজ। তিঁহি কিছু বুঝার আগেই ওর কোমড় চেপে ধরে পেটে মুখ ডুবিয়েছে। তিঁহি বাজখাই গলায় বললো,,
“” আমার স্বামী ছোয়া চায়,কোনো মাতালের হিংস্র আচর নয়।””
তাঁজকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে তিঁহি।
~~
“” আমরা কোথায় যাচ্ছি?””
মিঁহির প্রশ্নে ইঁশাদ ওর দিকে না তাকিয়েই বললো,,
“” তোমার বান্ধুবীর সাথে দেখা করতে।””
“” বান্ধুবী?””
“” হুম! আমার বাসায় যাচ্ছি। তুমি না ইঁনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলে? তাই ভাবলাম,আজকেই দুজনকে দেখা করিয়ে দেই। তারপর দুজন শলাপরামর্শ করে মা মেয়ে হওয়ার ডেটটা ফিক্সট করে ফেলবে!””
ইঁশাদের দুষ্টুমীতে মিঁহি আবার রেগে উঠছে। তাতে যেন আরো বেশি মজা পাচ্ছে ইঁশাদ! এই দুটোবোনকে রাগাতে আমার, এতো কেন ভালো লাগে??
মিঁহিকে নিয়ে বাসায় ঢুকতে গিয়ে দেখে সদরদরজা খোলা। আশেপাশে আম্মু আর আব্বু এমনকি ইঁনাকে না পেয়ে কিছুটা অবাকই হচ্ছে ইঁশাদ। মিঁহিকে ইশারায় ড্রয়িং রুমে বসিয়ে উপরে উঠার জন্য সিড়িতে পা ফেলছে। নিজের রুমের কাছ এগুতেই মা- বাবাকে দেখতে পাচ্ছে। দুজনেই দরজার আড়ালে দাড়িয়ে কিছু দেখছে আর চোখের পানি মুচছে। কি এমন দেখছে তারা?? ইঁনার কিছু হয়নি তো?? ইঁনার কথা ভাবতেই ইঁশাদের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে। দৌড়ে রুমের ভেতর ঢুকে গিয়ে থ হয়ে গেছে ইঁশাদ। অবিশ্বাস্যের চরমপর্যায়ে গিয়ে বললো,,
“” ভাইয়া,তুই?””
চলবে
[আজকে লেখার ধরনটা একটু ভিন্নভাবে প্রেজেন্ট করেছি,কেউ ধরতে পারলে জানাবেন। বাজে লাগছে নাকি এটাও জানাবেন☺]