#প্রণয়াভিলাষী
দ্বিতীয় পর্ব
আফসানা
হাসপাতালের করিডোরে দর্শক সারির একটা চেয়ারে বসে আছে রেজওয়ান। মাথার দুই পাশের চুল খামচে ধরে রেখেছে সে। হাসপাতালে সে একাই এসেছে আনাহিতাকে নিয়ে। তখন নিম্মির নাম্বারে ফোন দেওয়ার পর আনরিচেবল এসেছে। তাই সাজিদের নাম্বারে টেক্সট করে সংক্ষেপে জানিয়েছে আনাহিতার কথা। তারপর আর দেরি করেনি। রেজওয়ানের নিজের গাড়ি আছে। সেটাতে করেই এসেছিল দুজন। বেশিকিছু না ভেবে আনাহিতাকে কোলে করে গাড়িতে এনে শুইয়ে দেয় সে।
ক্ষি/প্রগতিতে ড্রাইভ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসে। যেহেতু তার মামা এখানকার নামকরা ডাক্তার তাই এখানেই নিয়ে এসেছে।
কাঁপা হাতদ্বয় মুখের সামনে মুঠো করে রাখলো রেজওয়ান। অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের ফলে ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে সে। শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় যেন রক্তকণিকাদের ছুটোছুটি বেড়ে গেছে। কম্পিত হাতেই দুইটা ফোন হাতে নিল রেজওয়ান। দুইটা ফোনের ওয়ালপেপার অভিন্ন। ওয়ালপেপারের অর্ধেক একটা মেয়ে এক হাতে অর্ধেক লাভ আকৃতি বানিয়েছে। বাকি অর্ধেক একটা ছেলের হাতের অর্ধেক লাভ আকৃতি। যা এডিট করে জোড়া লাগানো হয়েছে। ছেলের হাতটা হচ্ছে রেজওয়ানের। আর মেয়ের হাতটা তার হারিয়ে যাওয়া প্রণয়িনীর। আনাহিতার ফোনের ওয়ালপেপার দেখে বুঝতে বাকি রইলো না ও আসলে কে!
_____
কারো দ্রুত পদ শব্দে সচকিত হলো রেজওয়ান। তাকিয়ে দেখলো সাজিদ আর একটা মেয়ে। মেয়েটা নিম্মি। তখন চেহারা দেখেনি। ও এক প্রকার দৌড়েই আসলো রেজওয়ানের কাছে। এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে এলোমেলো সুরে বললো
—“ভাইয়া… ভাইয়া, আমার আনু… আমার আনু কেমন আছে? কী হয়েছে ওর? ডাক্তার কী বলেছে? হঠাৎ কী হয়ে গেল ওর আবার?”
নিম্মিকে কাঁদতে দেখে সাজিদ এসে ওর হাত টেনে ধরলো। সান্ত্বনাস্বরূপ বললো
—“আরে কাঁদছো কেন তুমি? কিছু হবে না ওর। তুমি চিন্তা কোরো না। রেজওয়ান, ডাক্তার কিছু বলেছে?”
শেষ কথাটা রেজওয়ানের উদ্দেশ্যে বলা শেষ হতেই কেবিন থেকে রেজওয়ানের মামা আশরাফ চৌধুরী বেরিয়ে এলেন। উনি বেরিয়ে আসা মাত্রই তিনজনেই সেদিকে একপ্রকার দৌড়ে গেল। রেজওয়ান অস্থির হয়ে জানতে চাইলো
—“মামা অথৈ ঠিক আছে? এক্স্যাক্টলি কী হয়েছে ওর?”
রেজওয়ানের এমন অবস্থা দেখে সাজিদ ও নিম্মি দুজনেই ভীষণ অবাক হলো। আর আনাহিতার আরেক নাম যে অথৈ সেটা রেজওয়ান কীভাবে জানলো ভেবে পাচ্ছে না নিম্মি। কিন্তু এখন এ ব্যাপারে কিছু বলার সময় না। আশরাফ চৌধুরী অ্যাপ্রনের পকেটে দুই হাত গুঁজে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কপালে ভাঁজ ফেলে জানতে চাইলো
—“মেয়েটার কি আগে বড়োসড়ো কোনো অ্যা/ক্সি/ডে/ন্ট হয়েছিল?”
এই কথা শুনে সাজিদ ও রেজওয়ান অবাক হলেও নিম্মি আ/ত/ঙ্ক নিয়ে বললো
—“হ্যাঁ, সেটা তো বেশ কয়েক মাস আগে। মাথায় প্রচণ্ড আ/ঘা/ত পাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে র/ক্ত/ক্ষ/র/ণ হয়েছিল। সেটার চিকিৎসাও করা হয়েছে। ইনফ্যাক্ট ও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার কী হয়েছে?”
—“আচ্ছা, তাহলে যা আ/শ/ঙ্কা করেছি তা নয়। যাক আলহামদুলিল্লাহ্। মেয়েটার বোধহয় মাইগ্রেনের প্রবলেম আছে। তাই যখন অতিরিক্ত পেইন হয় তখন সেন্সলেস হয়ে যায় সহ্য করতে না পেরে। অবশ্য সবসময় বোধহয় হয় না। আশা করি সকল চিকিৎসা নিয়ম মেনে চললে এ রোগের উপশম হবে। আর খেয়াল রাখবে যেন খাওয়াদাওয়াও নিয়মিত করে।”
রেজওয়ানের টেনশনে দম ফেটে যাচ্ছে। অথৈর কবে অ্যা/ক্সি/ডে/ন্ট হয়েছিল? সেটা কি ওর সাথে সম্পর্কের ইতি টানার আগে না-কি পরে? নিম্মি তো বলছিল কয়েক মাস আগে। তখন কি ওরা রিলেশনে ছিল না? সাজিদ কেবল রেজওয়ানকে দেখে যাচ্ছে। আনাহিতার জন্য তার অস্থিরতা দেখে মনে মনে কিছু একটা আ/শ/ঙ্কা করছে। কিন্তু এখনই কিছু বলতে পারছে না তাকে। সঠিক সময় সুযোগটা পেয়ে নিক আগে।
নিম্মি অসন্তোষচিত্তে নিজের সাথেই যেন বললো
—“মেয়েটা সবসময় এমন করে। কারো কথা শুনে না। এবার খালি সুস্থ হয়ে নিক!” আশেপাশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আশফাক চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো “এখন কেমন আছে ও? দেখা করতে পারবো? বাসায় কখন নিতে পারবো?”
আশরাফ চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন
—“চিন্তার কিছু নেই। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছি ঘুমাচ্ছে এখন। ঘুম থেকে উঠলে বাসায় নিতে পারবে। এখন গিয়ে দেখা করতে পারো।”
নিম্মি সাজিদকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বলে আনাহিতার কাছে চলে গেল। আশরাফ চৌধুরী ততক্ষণে চলে গেছেন সেখান থেকে। রেজওয়ান হেরে যাওয়া যোদ্ধার মতো এলোমেলো পায়ে চেয়ারে গিয়ে বসলো। দুই হাতে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে ফেললো। রেজওয়ানের এমন অবস্থা দেখে সাজিদের খটকা লাগছে। তার পাশে বসে কিছুক্ষণ নিশ্চুপই রইলো। আর থাকতে না পেরে এতক্ষণে মুখ খুললো
—“আমি ভুল না হলে তোর ঐ লেডিলাভ অথৈ-ই আনাহিতা, রাইট?”
উত্তরে রেজওয়ান কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আগের অবস্থায় থেকেই। যা বোঝার বুঝে গেল সাজিদ। মাথার দুইপাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বললো “ও গড!”
তারপর আবার নিজ থেকেই বলা শুরু করলো
—“এটা কোইন্সিডেন্স কি-না জানি না, কিন্তু আনাহিতার নিমিত্তেই আমার নিম্মির সাথে পরিচয় হয়।”
সাজিদের কথা শুনে রেজওয়ান মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো। ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো সে। রেজওয়ান কিছু বলার আগেই সে বলতে লাগলো
—“তোর সাথে আনাহিতার পরিচয় তো অনেক আগে থেকেই। তোদের দুজনের রিলেশনের যখন মাস কয়েক হবে, তখনই নিম্মির সাথে আমার পরিচয়। এই কথাটা তোকে বলা হয়নি। আসলে তোর ল্যাপটপে দেখেছিলাম আনাহিতার সাথে ‘কাজল চোখের মেয়ে’ নামধারী আইডিকে ট্যাগ দিয়ে একটা পোস্ট করেছিল ফ্রেন্ডস ডে তে। আনাহিতার আইডির নামও অবশ্য অন্যটা ছিল। তো যাইহোক নিম্মির আইডির ডিপি দেখেই আসলে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তার উপর ওরা দুজনে খুব ভালো বন্ধু। ভেবেছিলাম ওরাও হয়তো ফেসবুক ফ্রেন্ডই। আমি কখনো জিজ্ঞেস করিনি এ ব্যাপারে। কিন্তু কে জানতো ওরা আসলে ছোটোকালের বন্ধু! নিম্মি প্রায় সময়ই আনাহিতার কথা বলতো। কিন্তু কখনো অথৈ নামটা বলেনি। বললে ঠিকই চিনে যেতাম।”
—“কিন্তু আমার সাথে ও এমন কেন করেছে? সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। দেখা করার জন্য রাজীও হয়েছিল। আমার চেয়েও বেশি এক্সাইটেড ছিল ও। তারপর কয়েকদিন যোগাযোগ একেবারে বন্ধ। প্রায় এক মাস পর হঠাৎই একদিন বললো ও সবকিছুর ইতি টানতে চায়। এভাবে না-কি আর সম্ভব না। শত অনুরোধেও আসল কারণটা বলেনি। যোগাযোগ বন্ধ করার পর পাগল পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আইডি ডিএক্টিভেট করে ফেলেছিল। ফোন নাম্বার চেঞ্জড করে ফেলেছিল। ওর আসল নাম, বাসা ঢাকার এক্স্যাক্ট কোথায় কিছুই জানতাম না। মৃ/ত/র মতো যেন বেঁচেছিলাম এতগুলো দিন। কিন্তু আজ অর্ধেক সত্য নিজ থেকেই সামনে এসেছে। সেই বাকি অর্ধেক সত্য কোত্থেকে জানবো আমি? কার কাছ থেকে জানবো আসল সত্যিটা?”
রেজওয়ানের বুকের ভিতর কী তোলপাড় হচ্ছে সেটা কাউকেই বোঝাতে পারবে না ও। চরম অস্থিরতায় মনে হচ্ছে ম/রে/ই যাবে সে। তার অথৈকে একটাবার চোখের দেখা দেখা দরকার। এবং তা এখুনি। এখন না দেখলে মনে হচ্ছে শ্বাস আটকে যাবে তার। সাজিদকে বলতেই সে নিম্মিকে ডেকে আনলো বাইরে। নিম্মি তাদের দুজনের ব্যবহারেই যেন অবাক। সাজিদ ওকে সবটাই বুঝিয়ে বলবে বলে আশ্বাস দিল। কিন্তু কী বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না নিম্মি। আর রেজওয়ানই বা কেন আনাহিতাকে দেখতে চাইছে! অনেক ভেবেই নিমরাজি হলো দেখা করতে। রেজওয়ান এক মুহূর্তও আর দেরি না করে চলে গেল আনাহিতার কাছে।
দরজা খুলে প্রথমেই চোখ গেল শুভ্র চাদরের বিছানার দিকে। যেখানে কেবল একটা সুশ্রী মুখ দেখা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে হিজাব, বোরখা সব খুলে ফেলা হয়েছে। গা তার শুভ্র চাদরে মোড়া। কালো কামিজের দুইটা হাত বের করা। মাথার একপাশে কালো ঘন লম্বা চুলগুলো এলিয়ে দেওয়া। সামনের ছোটো ছোটো চুলগুলো মুখের একপাশ ঢেকে রেখেছে। পায়ে জোর পাচ্ছে না রেজওয়ান। হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেছে তার। অবশেষে প্রায় পাঁচ বছর পর মেয়েটাকে দেখতে পেল সে। এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বেডেই বসলো। কাঁপা হাতে সামনের চুলগুলো সরানো মাত্রই থমকে গেল রেজওয়ান। এ যে তার ভাবনার চেয়েও নিষ্পাপ, স্বপ্নের থেকেও মায়াবী, কল্পনার থেকেও নজরকাড়া! ভ্রুদ্বয়ের নিচের লম্বা পাপড়িগুলো যেন শান্ত পুকুরপাড়ের ছায়াদানকারী। অপলক তাকিয়ে রইলো রেজওয়ান। একসময় আঁখি তার অশ্রুসিক্ত হয়ে এল। এই মেয়েটা তার সবটা দখল করে বসে আছে। তার অস্তিত্বে এমনভাবে মিশে গেছে যে নিজেকেই নিজে খুঁজে পায় না রেজওয়ান। তাই তো ও হারিয়ে যাওয়ার পর নিজে ম/রা/র মতো বেঁচে আছে।
আনাহিতাকে ছোঁয়ার অধিকার নেই রেজওয়ানের। তাই শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও একটুখানি ছুঁতে পারছে না নিজের প্রণয়িনীকে। তার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিতে পারছে না। মুঠোয় পুরে সেখানে একটু গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে পারছে না। কেবল ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা হালকা করে ছুঁয়ে দিল। তখনই নজরে এলো বৃদ্ধাঙ্গুল ও শাহাদাৎ আঙ্গুলের মধ্যস্থলে অবস্থিত কালো কুঁচকুচে তিলটা। ওয়ালপেপারের ফটোতে এই হাতটাই ছিল। সেখানেই প্রথম দেখেছিল এই তিলটা। রেজওয়ান একদিন কথায় কথায় বলেছিল ‘বিয়ের পর সর্বপ্রথম চুমু আমি এই তিলটাতেই খাব। তবে একটা না পরপর তিনটা।’
—“একবার খালি জেনে নিই আসল সত্যিটা। তারপর দেখবো আমার কাছ থেকে তুমি কীভাবে দূরে থাকো। এবার আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। একেবারে নিজের করে তবেই নিস্তার দিব তোমাকে। কম তো কষ্ট ভোগ করিনি দুজনে। এবার তবে সকল বিরহ বেদনার অবসান করা যাক।”
চোখ কপালে তুলে বসে আছে নিম্মি। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এসব কথা। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাজিদের দিকে। সেভাবেই মাথা নেড়ে নেড়ে বললো
—“না, এটা কিছুতেই হতে পারে না। আনু আমার কাছে এত বড়ো একটা কথা কিছুতেই লুকাতে পারে না। সম্ভবই না এটা।”
সাজিদ নিম্মিকে বোঝাতে বললো
—“সম্ভব হয়েছে এটা নিম্মি। এখানে কোনো মিথ্যে নেই। তোমার কি মনে হয় আমরা ছেলেভোলানো কথা বলছি? আমাদেরকে দেখে কি তেমনটাই মনে হয়?”
নিম্মি দ্রুত বাধা দিয়ে বললো
—“না না তা নয়। প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আনুর এমন কোনো কথা নেই যা আমি জানি না। আমার বেলায়ও তেমনটাই। ছোটো থেকে একসাথে বড়ো হয়েছি। ও খুব চাপা স্বভাবের। কারো কাছে কিছু না বলতে পারলেও আমার সাথে কিছুই লুকায় না। নিজ থেকেই বলে। কিন্তু এই প্রথম এমন হলো এবং এটাই সবচেয়ে বড়ো ঘটনা। তাই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমার সাথে শেয়ার না করে কীভাবে থাকতে পারলো ও?”
—“এটা নিয়ে ওকে কিছু বোলো না তুমি। তুমি কেবল জানার চেষ্টা করো অথৈ কেন এমন করেছে! অন্যকোনো সমস্যা আছে কি-না! বা ফ্যামিলিগত কোনো প্রবলেম কি-না। তবে সরাসরি জিজ্ঞাসা কোরো না। অন্যভাবে জেনে তারপর আমাকে জানাবে।”
কেবিন থেকে রেজওয়ান বেরিয়েই কথাগুলো বললো নিম্মিকে উদ্দেশ্য করে। রেজওয়ানের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে আছে। চোখ কান লাল হয়ে আছে। উপস্থিত দুজনেই তা লক্ষ্য করলো। নিম্মি বললো
—“আমি জানতাম না এই কারণে ও সবসময় মন খারাপ করে থাকে। ভেবেছি পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ওর মন খারাপ।”
—“বুঝতে পেরেছি। যা করার দ্রুত করতে হবে। তোমাকে যা যা বলেছি তা করবে। আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করবো। আর বাকিটা আমিই সামলে নেব।”
ওরা কথা বলার মাঝখানেই নার্স এসে জানালো আনাহিতান জ্ঞান ফিরেছে। নিম্মি দৌড়ে গেল কেবিনে। গিয়েই ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। আনাহিতা মৃদু হেসে নিম্মির পিঠে এক হাত রেখে বললো
—“আরে পাগলী, আমি ঠিক আছি তো। কাঁদছিস কেন বোকার মতো।”
—“তুই এমন কেন দোস্ত? তুই তোর শরীর খারাপের কথা কেন বলিসনি আমাকে? তাহলেই তো আমি বাসা থেকে বেরুতাম না।”
মাথা নিচু করে হালকা স্বরে আনাহিতা বললো
—“আরে আমি তো ঠিকই ছিলাম। তুই তখন যাওয়ার পরই হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হয়। ভাবিনি সেন্সলেস হয়ে যাব। আমার জন্য খুব সমস্যায় পড়ে গেছিস, তাই না রে? ভাইয়া না জানি কী ভাবছে!”
এক হাত তুলে মার দেওয়ার ভঙিতে মিছে রাগ করে বললো
—“মারবো একটা দেখিস! তুই আমাকে পর ভাবলেও আমি তোকে পর ভাবি না। তাই এসব কথা বলছিস। আর উনাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। উনি মোটেও এমন নয়। ”
—“তবুও, আমার জন্যই তো তোদের সুন্দর সময়টা নষ্ট হলো।”
আনাহিতার এই কথায় ভীষণ রাগ হলো নিম্মির। রু/ষ্ট স্বরে বললো
—“আমাকে যে পর ভাবিস এটাই তার প্রমাণ।”
—“ছিঃ এমন কথা বলিস না নিম্মি। তুই যে আমার কাছে কী তা আমিই জানি।” অপরাধী মুখ করে বললো আনাহিতা।
নিম্মি রহস্যময়ী হেসে বললো
—“আচ্ছা তাই? তাহলে তো এই সুযোগটা নেওয়াই যায়।”
আনাহিতা চোখ তুলে বললো
—“কীসের সুযোগ?”
—“সেটা পরেই জানতে পারবি। এখন রেডি হয়ে নে। উনারা বলছেন লাঞ্চ না খাইয়ে ছাড়বেন না।”
বোরখা পরতে পরতে আনাহিতা বললো
—“না রে আমি তোদের সাথে জয়েন করতে পারবো না। আমি বাসায় যেতে চাই। তুই বরং চলে যা ভাইয়ার সাথে।”
—“তুই এটা ভাবতে পারলি তোকে একা ছেড়ে আমি খেতে চলে যাব! তোকে ছাড়া আমি যাব না। বাসায়ই চলে যাব চল। সত্যিই আমি হতাশ তোর ব্যবহারে।”
—“উফ্! বোইন আমার, আমারে মাফ কর। ভাইয়াকে বলিস অন্যদিন না হয় ট্রিট দিবে।”
ততক্ষণে আনাহিতার রেডি হওয়া শেষ। বেডের ওপর থেকে পার্সটা নিয়ে নিম্মির দিকে তাকালো। নিম্মি বললো
—“হুম, চল এবার।”
বাইরে আসতেই রেজওয়ানের সাথে চোখাচোখি হলো আনাহিতার। রেজওয়ানই প্রথমে নজর সরিয়ে ফেললো। এভাবে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলায় আনাহিতা একটু অবাক হলেও তা পাত্তা দিল না। ওরা সবাই গিয়ে গাড়িতে বসলো। সাজিদের জোরাজুরিতেই ওরা বসতে রাজী হয়েছে। নিম্মি বললো এখন ওরা রেস্ট্রন্টে যেতে পারবে না। কারণ হিসেবে আনাহিতার নাম বলে দিল। রেজওয়ান মিররে একবার আনাহিতার দিকে তাকালো। দেখলো নিম্মিকে চোখ রাঙাচ্ছে। মনে মনে হেসে বনানীর পথে রওয়ানা দিল।
_________