ভালবাসার_এপিঠ_ওপিঠ পর্বঃ ০৬ | ভালোবাসার গল্প

0
6488

ভালবাসার_এপিঠ_ওপিঠ পর্বঃ ০৬
লেখকঃ আবির খান

হঠাৎই কেউ একজন দরজায় বলে উঠলো,

– স্যার আসতে পারি?

সবাই একসাথে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ক্লাসের সব মেয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। তবে তাসনিন আর সামিরা বিশাল বড়ো সক খেয়েছে। ওরা দুজন একসাথে বলে উঠে,

~ উনি এখানে? তাও আবার এভাবে!

কারণ দরজায় আর কেউ নয় নিহান কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্যার হাসি দিয়ে বললেন,

– ইয়েস প্লিজ কাম। অ্যান্ড টেইক ইওর সিট।
– থ্যাঙ্কিউ স্যার।

নিহান ক্লাসে ঢুকে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোথায় বসবে। অনেকগুলো মেয়ে নিহানকে তাদের পাশে বসানোর জন্য অন্য ছেলেদের রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে ফেলেই দিচ্ছে। কিন্তু নিহান জানে ওকে কোথায় বসতে হবে৷ ও হেঁটে সোজা সামিরার পাশে গিয়ে বসে। সামিরার হার্টবিট মুহূর্তেই বেড়ে যায়। তাসনিন তো নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছে না। ও মনে মনে বলছে, এই বুইড়া ব্যাটা এখানে কি করে? নিহান সামনে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। সামিরা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়। ওরও বিশ্বাস হচ্ছে না। তাই ও আর কিছু না ভেবে নিহানের হাতে একটা চিমটি কেটে বসে। নিহান আস্তে করে অবাক দৃষ্টিতে সামিরার দিকে তাকিয়ে চিমটি কাটা জায়গাটায় হাত বুলাচ্ছে। সামিরার এবার বিশ্বাস হয়। ও অস্থির হয়ে আস্তে করে বলছে,

~ সরি সরি সরি। আরে সরি পরে। আপনি এখানে কেন? আপনার না পড়াশোনা শেষ?
– ক্লাস শেষ হোক তারপর বলবো। (আস্তে করে বলল)

তাসনিন তাকিয়ে দেখে ক্লাসের সব মেয়ের দৃষ্টি ওদের দিকে। সরি শুধু নিহানের দিকে। নিহানের পরনে, ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট আর ফুল হাতার টি-শার্ট। হাতে লেদারের ঘড়ি। আর পায়ে এডিডাস এর জুতা। মানে পুরাই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। ওর জিম করা বডি হওয়ায় ওকে বেশ মানিয়েছে। মেয়েরাতো পাগল হয়ে আছে ওর সাথে কথা বলার জন্য। কোন মতে প্রথম ক্লাসটা শেষ হওয়া মাত্রই সামিরা নিহানের সাথে যেই কথা বলতে যাবে তার আগেই একগাদা মেয়ে এসে হাজির। নিহানের ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এদিকে সামিরা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ও কোন সুযোগই পাচ্ছে না। তাসনিন এর কাছে আবার অনেক গুলো ছেলে এসে ভাব করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর রগচটা স্বভাবে সবাই ভয়ে পালিয়েছে। সামিরা ওদের দুজনের মাঝে চুপচাপ বসে আছে। সামিরা হঠাৎ বলে উঠে,

~ আপু সরো আমি বের হবো।
~ কই যাবি? স্যার আসবে তো।
~ আসুক। আমি বাইরে যাবো।
~ আচ্ছা৷
~ এই যে মিস্টার নিহান আপনিও বাইরে আসেন কথা আছে।
– জি ম্যা…হ্যাঁ আসছি। সরি গার্লস আই হ্যাভ টু গো।

বলেই নিহান সামিরার পিছনে পিছনে চলে আসে। বাকি মেয়েরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। একটা মেয়ে তাসনিনের পাশে বসে বলে,

~ ওরা কি পূর্বপরিচিত তাসনিন?
~ হুম।
~ নিহান কি সামিরাকে পছন্দ করে?

তাসনিন চিন্তা করছে কি উত্তর দিবে৷ ও ভাবে, ও যদি না বলে তাহলে মেয়েগুলো নিহানের পিছনে পড়ে থাকবে৷ যেটা ওর একদমই ভালো লাগে না৷ তাসনিন হাসি দিয়ে বলে,

~ ওরা তো জিএফ বিএফ।

পুরো ক্লাস একসাথে এহহ! করে উঠে জোরে। তাসনিন মনে মনে বিজয়ী হাসি দিতে থাকে। তবে ওর মনে এখনো একটা প্রশ্ন নিহান এখানে কেন! সামিরা আসলেই হয়তো জানা যাবে৷ ও সেই অপেক্ষায় আছে।

ক্লাসের বাইরে,

~ আপনি এখানে কেন?
– কংগ্রেস তোমাদের।
~ কংগ্রেস নিহান।

ওদের ক্লাস থেকে যেসব ছেলে মেয়ে বের হচ্ছে সবাই ওদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। নিহান আর সামিরা পুরো বোকার মতো হয়ে আছে। ওরা কিছুই বুঝতে পারছে না। সামিরা আবার বলে,

~ বাদ দিন এগুলা। আগে যেটা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিন৷
– আসলে ম্যাম আমি এখন থেকে আপনাদের সাথে ক্লাস করবো পরীক্ষা দিব। কারণ এতটা সময় আপনাদের একা ছাড়াটা ঠিক হবে না। আমাদের শত্রু এখানেও আসতে পারে। সো আমাকে আপনাদের সাথে থাকতেই হবে সবসময়।
~ কিইই! সত্যিইইই?
– জি ম্যাম।

সামিরা যেমন অবাক হয়েছে তেমনি খুশীও। তবে ও খুশীটা চেপে রেখে বলে,

~ ওহ! তাহলে তো ভালোই। আমরাও নিশ্চিন্তে ক্লাস করতে পারবো।
– জি ম্যাম।
~ এই একদম ম্যাম ম্যাম বলবেন না। সামিরা বলবেন। এমনি আমরা আপনার কতটা ছোট। আর এখানে ম্যাম বললে সবাই বুঝে যাবে৷
– তাও ঠিক। আচ্ছা এখানে ম্যাম না বলার চেষ্টা করবো। তবে বাসায় কিন্তু ম্যামই বলবো।
~ আচ্ছা আচ্ছা বইলেন। এখন চলেন ক্লাসে যাই। ওই যে স্যার আসছে।
– ওকে চলো।

সামিরা মুগ্ধ হয়ে নিহানের দিকে তাকায়। নিহান ওকে তুমি করে বলল! সামিরার মনে হচ্ছে ও খুশীতে পাগল হয়ে যাবে৷ তাও নিজেকে সামলে ক্লাসে গিয়ে বসে। ওরা দুজন ক্লাসে ঢুকে অবাক। যে মেয়েগুলো আর ছেলেগুলো ওদের জন্য পাগল হয়ে ছিল তারা সবাই মুখ গম্ভীর করে বসে আছে৷ ওদের দিকে তাকাচ্ছেও না। নিহান আর সামিরা বেশ অবাক হয়। সামিরা আর নিহান বসতেই তাসনিন আস্তে করে বলে,

~ বল এবার। উনি এখানে কেন?
~ আমাদের সেইফটির জন্য আপু৷
~ হুম আমিও সেটাই ভাবছিলাম। নাহলে ওনার মতো বুইড়া ব্যাটা আবার ভার্সিটিতে ভর্তি কেন হবে!
~ ধুর তুমিও না। আচ্ছা আপু সবাই আমাদের কংগ্রেস জানাচ্ছিলো কেন?

তাসনিন হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে সামিরার কানে কানে বলে,

~ আমি সবাইকে বলেছি তোরা বিএফ জিএফ।
~ কিইইই?

নিহান সামিরা আর তাসনিনের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। নিহান আস্তে করে বলে,

– কোন সমস্যা?
~ না না। (লজ্জায় সামিরার পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছে)
– ওহ। আচ্ছা সবাই আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? মনে হচ্ছে আমরা কোন ভুল করেছি।
~ আপুর জন্য। (আস্তে করে বলল)
– কেন ম্যাম কি করেছে?

সামিরা লজ্জাসিক্ত হয়ে নিহানের কানে কানে সবটা বলে। নিহান শুনে ওর চোখগুলো ডিমের মতো বড়ো বড়ো হয়ে গিয়েছে। ও মূহুর্তেই তাসনিনের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। তাসনিন নিহানকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে৷ নিহান কিছু বলতে যাবে ওমনি স্যার চলে আসে। তাসনিন শুধু মিটমিট করে হাসতে থাকে। ও মনে মনে বলে,

~ আমার বোনটা কষ্ট পাবে তা কখনো আমি হতে দিব না৷ এটাকেই বলে এক ঢিলে দুই শিকার। হাহা।

১২.
এখন টিফিন পিরিয়ড চলছে। নিহান ব্যাগ গুছিয়ে বলে,

– সামিরা আর তাসনিন চলো ক্যানটিনে যাবে৷

তাসনিন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ও ভীষণ আশ্চর্য হয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ও উঠে নিহানের কাছে এসে বলে,

~ কি বললেন আপনি? আবার বলেন তো?
– বলেছি ক্যান্টিনে চলো।
~ সামিরা উনি কি আমাদের নাম ধরে তুমি করে বলছে?
~ হ্যাঁ আপু।
~ মানে কেন?
– কারণ এটা ভার্সিটি। সামিরাই আমাকে বলল। তাই বললাম।
~ আপু এখানে ম্যাম বললে সবাই বুঝে যাবে৷ বুঝো না কেন তুমি।
~ হইছে বুঝছি। আরো কত কি যে দেখতে হবে। চল ক্যানটিনে।
~ আচ্ছা। আপনিও আসেন।
– হুম।

ওরা তিনজন একসাথে ক্যানটিনে গিয়ে বসে। নিহান ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। এই ভার্সিটির ক্যানটিনটাও ফাইফ স্টার হোটেলের মতো। এখানে সবাই বড়ো লোক বাবার ছেলে মেয়ে। নিহান খাবার নিয়ে সামিরার পাশে বসে। কারণ সামিরা আর তাসনিন সামনাসামনি বসে ছিল। নিহান তাসনিনকে ভয় পায় তাই সামিরার পাশেই বসেছে। তাসনিন খাবার বের করতে করতে নিহানের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। এদিকে সামিরা তো খুশী হাবুডুবু খাচ্ছে। নিহান নিজ থেকে ওর পাশে এসে বসেছে। ও নিহানকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই একটা সুন্দরী মেয়ে এসে খুব মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,

~ আমি কি তোমাদের সাথে বসতে পারি?

ওরা তিনজনই মেয়েটাকে না করতে পারে না। তাসনিন বলে উঠে,

~ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই বসো।
~ থ্যাঙ্কিউ। আমাকে চিনতে পেরেছো তোমরা?
– তুমি আমাদের ক্লাসের তাই না?
~ ওয়াও। সত্যি নিহান তুমি আসলেই অনেক জোস। একবার দেখেই চিনে ফেললে? ওয়াও। হ্যাঁ ঠিক বলেছো। আমরা একসাথেই। আমার নাম, লিয়া মির্জা।
~ ওও। নাইস টু মিট ইউ।
~ থ্যাঙ্কিউ।

লিয়া তাসনিনের পাশেই বসে ছিল। ও নিহান আর সামিরার দিকে তাকিয়ে বলল,

~ তাহলে তোমরা দুজন সত্যি সত্যিই কাপল?

লিয়ার কথা শুনে সামিরা তো লজ্জায় মারাই যাচ্ছে। তাসনিন যেই হ্যাঁ বলতে যাবে ওমনি নিহান ঠাস করে বলে উঠে,

– আরে নাহ! আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড আর কিছু না। কে যেন রিউমারস ছড়িয়েছে। (তাসনিনের দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড। (সামিরা)
~ ওও। আমিও তাই ভাবছিলাম। তা নিহান আমিও কি তোমার মানে তোমাদের ফ্রেন্ড হতে পারি? তাসনিন আমাকে তোমাদের ফ্রেন্ড বানাবে?
~ হ্যাঁ অবশ্যই। কেন না। আজ থেকে তুমিও আমাদের ফ্রেন্ড।
~ থ্যাঙ্কিউ।

নিহান লিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। ওর কেন জানি লিয়াকে সন্দেহ হচ্ছে। কারণ লিয়া খুব সহজে ওদের সাথে মেশার চেষ্টা করছে। এবং ও কিছুটা সফলও হয়েছে। এরপর ওদের টিফিন খাওয়া শেষ হলে ওরা চারজন একসাথে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। লিয়া সামিরার সাথে বেশ মিশুক হয়ে কথা বলছে। নিহান আর তাসনিন ওদের পিছনে। হঠাৎই তাসনিন নিহানকে আস্তে করে বলে উঠে,

~ কি ভাবছেন?
– লিয়াকে নিয়ে। (তাসনিনের দিকে তাকিয়ে)
~ জানতাম। আপনাকে দেখেই বুঝছি। ওকে সন্দেহ হচ্ছে তাই না?
– হুম।
~ আমারো।

নিহান অবাক হয় তাসনিনকে দেখে। আজ প্রথম তাসনিন নিজ থেকে ওর সাথে কথা বলেছে। নিহানের ভালোই লাগছে। তাসনিন আবার বলে,

~ মেয়ের সম্পর্কে খবর নেন। আমার বোনের যেন কোন ক্ষতি না হয়।

নিহান তাসনিনের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে। ওকে বেশ শক্ত মনে হচ্ছে। তাসনিন নিহানের দিকে একবার তাকিয়ে সামনে সামিরার হাত ধরে হাঁটতে থাকে। নিহান মনে মনে ভাবে,

– তাসনিন মেয়েটা সত্যিই অন্যরকম। বোনের জন্য এই মেয়ে খুনও করতে পারবে। এমন ভালবাসাও কি হয়? নাহ এই লিয়া মেয়েটার সম্পর্কে খবর নিতে হবে৷

নিহান একটা ম্যাসেজ করে দেয় ওর স্পাইদের। লিয়ার সম্পর্কে সব খবর বের করতে৷ এরপর ওরা ক্লাসে গিয়ে আজকের মতো ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে আসে।

১৩.
রাত ১২:২৩ মিনিট। বাসার সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিহান জেগে আছে৷ একটা কাজ করছে ও। হঠাৎই ওর রুমের দরজায় দুইটা নক পড়ে৷ নিহান দরজার কাছে গিয়ে বলে,

– কে?

ওপাশ থেকে কোন শব্দ আসে না। নিহান আবার জিজ্ঞেস করে,

– এই কে?

আবারো কোন শব্দ নেই৷ শুধু নক করেই যাচ্ছে৷ নিহান ওর পিস্তলটা বের করে কৌশলে দরজা খুলে অ্যাটাক করে ও পুরো অবাক হয়ে যায়৷ ও দ্রুত বলে উঠে,

– ম্যাম আপনি! এত রাতে?

চলবে…?

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here