মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ০৬
লেখকঃ আবির খান
মাইরার হার্টবিট অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ও চোখগুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে৷ তাহসান কেন এভাবে ওর কাছে আসছে! দেখতে দেখতে তাহসান মাইরার মুখের একদম কাছে এসে ডান হাতটা উপরে তুলে মাইরার গালের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ মাইরা আর না পেরে শেষমেশ চোখ বন্ধ করে ফেলে। ও ভাবে তাহসান ওকে হয়তো এবার মিষ্টি স্পর্শটা দিবে৷ তাই ও সেই স্পর্শের অপেক্ষায় বসে আছে ভীষণ লজ্জা নিয়ে৷ কিন্তু ওকে বোকা করে দিয়ে তাহসান মাইরার গালে হাত না দিয়ে চুল থেকে কি যেন তুললো। মাইরা সাথে সাথে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে, তাহসানের হাতে সুতোর মতো কি জানি। তাহসান মুচকি হাসি দিয়ে সুতোটা মাইরার দিকে করে বলে,
– এটা চুলে লেগে ছিলো। সরিয়ে দিলাম।
মাইরা ভ্রুকুচকে তাহসানের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসান আবার সোফায় বসতে বসতে বলে,
– কি হলো মুখ ফুলিয়ে আছো কেন? কি করলাম আমি? (মুচকি হেসে)
মাইরা অভিমান করে অন্যদিকে ফিরে আছে। ওকে রাগী ভাবে দেখে তাহসান খুব মজা পাচ্ছে। ও আবার বলে,
– বাব্বাহ! তোমার দেখি আবার রাগও আছে। তা রাগ করছো কেন? কেউ কিছু করেছে বুঝি?
মাইরা ভ্রুকুচকে অভিমানী দৃষ্টিতে তাহসানের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
~ আপনি করেছেন আপনিইইই…
– আমি! আমি আবার কি করলাম?
~ এই যে সুযোগ পেলেই খালি কাছে আসেন। আমার বুঝি লজ্জা লাগে না? শুনে দেখেন আমার হার্টবিট কত বেড়ে আছে। উফফ!
তাহসান রসিকতা করে বলে,
– তাহলে তো আবার কাছে আসতে হবে আসবো? আসলাম কিন্তু…
~ এইইই না না। থাক থাক। আপনি সত্যিইই অনেক দুষ্টু।
– এহ! এটা আমার রিভেঞ্জ ছিলো। সকালে নক না করে আসছিলা কেন? কেমন লাগলো হুম? হাহা।
মাইরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাহসানের দিকে। ওর কথা শুনে ও অবাক হয়নি, হয়েছে ওকে হাসতে দেখে। মাইরা মনে মনে অনেক খুশী। কারণ কাল রাতের পর তাহসান তমার কথা একবারও বলে নি। খুব তাড়াতাড়ি ওর সাথে মিশে গিয়েছে। আসলে তাহসান খুব একা ছিলো। কিন্তু মাইরাকে পেয়ে ওর শূন্যতা মুহূর্তেই চলে গিয়েছে। মাইরার সাথে দুষ্টুমি, রসিকতা করতে ওর অনেক ভালো লাগছে। মাইরা তাহসানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। ওর মন চাচ্ছে তাহসানকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ বসে থাকুক। কিন্তু সেটা তো এখন সম্ভব না। তাহসান মাইরাকে হাসতে দেখে আস্তে আস্তে ওর হাসি থামিয়ে বলে,
– তুমি হাসছো যে?
~ আপনাকে হাসতে দেখে অনেক ভালো লাগছে। অজান্তেই আমারো হাসি চলে এসেছে খুশীতে। আপনার হাসিটা খুব সুন্দর। প্লিজ সবসময় এভাবে হাসবেন।
তাহসান মাইরার দিকে তাকায় আবার মাথা নিচু করে ফেলে। এখন ওর মুখে আর হাসিটা নেই। মলিন হয়ে গিয়েছে। মাইরা ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত তাহসানের পাশে এসে বসে ওর হাত দুটো ধরে খুব অস্থির হয়ে বলে,
~ প্লিজ প্লিজ মন খারাপ করবেন না৷ আপনার মন খারাপ থাকলে আমি সহ্য করতে পারি না৷ সরি সরি আমি ভুল কিছু বললে।
তাহসান মাইরার হাত ছাড়িয়ে এবার নিজের হাত দিয়ে মাইরার হাত দুটো ধরে আর বলে,
– না না ঠিক আছি। আসলে তমাও একসময় আমার এই হাসিটার অনেক পাগল ছিলো। কিন্তু… যাই হোক ওর কথা আমি আর ভাবতে চাই না৷ তুমি সত্যিই অনেক ভালো একটা মেয়ে। আমাকে রাতারাতি অনেক পরিবর্তন করে দিয়েছো। তুমি আমার পাশে থাকলে আমি এমনিই হাসবো। তুমি যা যা করো আল্লাহ! একদম পিচ্চি একটা মেয়ের মতো। থ্যাঙ্কিউ ইউ তোমাকে আমার লাইফে আসার জন্য।
মাইরা তাহসানের দিকে তাকিয়ে খুশীতে কেঁদে দেয়। তাহসান মাইরার চোখে পানি দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। ও অস্থির হয়ে বলে,
– একি! কি হলো তোমার? কাঁদছো কেন?
~ আপনি আমাকে থ্যাঙ্কিউ বললেন কেন? এএএএ…নিজের বউকে কেউ থ্যাঙ্কিউ বলে! এএএএ…
তাহসান আর কিছু না ভেবে মাইরাকে ওর বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আর মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– আচ্ছা আচ্ছা পিচ্চি মেয়েটা আর কাঁদে না। চক্কেট এনে দিবো?
মাইরা কান্না বন্ধ করে মন খুলে হাসছে আর তাহসানকে জড়িয়ে ধরে আছে। কারণ ওর ইচ্ছা ছিলো তাহসানকে জড়িয়ে ধরার। যেটা ও পেরেছে। কিছুক্ষণ পর মাইরা চোখ মুছে তাহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
– করো।
~ আমাদের বাসায় কখন যাবেন? ১১ টা তো বেজে গিয়েছে। আম্মু আর আব্বুকে অনেক মিস করতেছি। যাবেন না? (বাচ্চাদের মতো মুখ করে)
তাহসান মুগ্ধ হয়ে যায় মাইরাকে দেখে। ওর মনে হয়, মাইরা রংধনুর মতো। রংধনুতে যেমন সাত রঙ আছে, ঠিক তেমনি মাইরার মধ্যে শুধু সাত না তারচেয়েও বেশী রঙ আছে। কখনো হাসি, কখনো কান্না, কখনো দুষ্টু আবার কখনো সিরিয়াস। তাহসানের ভালোই লাগছে৷ ও মুচকি হাসি দিয়ে উত্তর দেয়,
– এখনি যাবো। তুমি রেডি হও৷ আমিও হচ্ছি।
~ সত্যিইই? ইয়েএএএ। আচ্ছা আচ্ছা একটা রিকোয়েস্ট করি? লাস্ট লাস্ট প্লিজজজজ…
– করো করো সমস্যা নেই।
~ আজকে থাকবো আব্বু আম্মুর কাছে। বাবাও কিন্তু বলেছে। প্লিজ থাকবেন তো? (আকুতি করে)
তাহসান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
– এখন তাড়াতাড়ি রওনা না দিলে রাতে থাকবা কীভাবে? যাও যাও দ্রুত রেডি হয়ে আসো।
মাইরা খুশিতে আত্নহারা হয়ে যা করে তা তাহসান স্বপ্নে কিংবা কল্পনায়ও ভাবে নি। মাইরা খুশীতে তাহসানের ডান গালে একটা চুমু দিয়ে ফেলে৷ তাহসান পুরো বোকা হয়ে যায়। আর মাইরা মুহূর্তেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ও দ্রুত বলে,
~ আল্লাহ সরি সরিইইইই। আমি গেলাম।
বলেই ওয়াশরুমে দৌড়। তাহসান গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জীবনে প্রথম এমন কিছু ও পেয়েছে। অজানা এক অনুভূতি অনুভব হচ্ছে ওর। ও কল্পনাও করে নি মাইরার স্পর্শে এতটা ভালো লাগা মিশে থাকবে।
১০.
মাইরা তাহসানের রুমে রেডি হচ্ছে৷ আর তাহসান ড্রয়িং রুমে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে৷ আসলে অপেক্ষা বললে ভুল হবে, ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন। প্রায় আধা ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে মাইরার কোন খবর নেই। কমপক্ষে একশো বার হাত ঘড়িটার দিকে ও তাকিয়েছে। এত দেরী লাগে নাকি! তাহসান যখন রাগে বুম হয়ে আছে হঠাৎই ওর ফোনটা বেজে ওঠে। ও পকেট থেকে ফোন বের করে অবাক হয়ে যায়। মাইরা পাশের রুম থেকে কল দিয়েছে! তাহসান দ্রুত কল রিসিভ করে বলে,
– কি হয়েছে? কল দিলে যে?
~ না মানে আপনি একটু আমাদের রুমে আসবেন? প্লিজ।
– আসছি আসছি।
তাহসানের কপালে চিন্তার ভাজ। ও দ্রুত রুমের দিকে যায়। দরজায় নক করলে মাইরা দরজা খোলে। তাহসান ভিতরে ঢুকে দেখে, মাইরা সাজুগুজু করে নরমাল ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে আর লজ্জা পাচ্ছে কেমন জানি। তাহসান চিন্তিত গলায় বলে,
– একি! তুমি এখনো বাইরের জামা পরো নি যে? কি হয়েছে? শরীর খারাপ?
মাইরা নক খোটাতে খোটাতে আমতা আমতা করে বলে,
~ আসলে আমি না শাড়ী পরতে পারি না। প্লিজ আপনি একটু পরিয়ে দিবেন?
বলেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে মাইরা। তাহসান মাইরার কথা শুনে একটা ঢোক গিলে। ও মনে মনে ভাবছে, যে মাইরা কীভাবে জানলো ও শাড়ী পরাতে পারি? তমার জন্য দীর্ঘ দশ দিন ইউটিউব দেখে তাহসান শাড়ী পরানো শিখেছিলো। কারণ ওর ইচ্ছা ছিলো বিয়ের পর ওই সবসময় তমাকে শাড়ী পরিয়ে দিবে৷ কিন্তু সেটা আর হলো না। এখন ওর সেই ইচ্ছাটা মাইরাকে শাড়ী পরিয়ে পূরণ হবে৷ কিন্তু তাহসান কি পারবে মাইরাকে শাড়ী পরাতে? তাহসান বলে উঠে,
– নাহ! অসম্ভব! আমি পারবো না।
মাইরা হাত সরিয়ে তাহসানের কাছে এসে বলে,
~ কি! কেন পারবেন না?
– আমি তমার জন্য শাড়ী পরানো শিখেছিলাম অনেক কষ্ট করে। ওকে পরানোর আমার ইচ্ছা ছিলো। এখন ও যেহেতু নেই আমি আর কাউকে শাড়ী পরাবো না৷ তুমি ভাবীকে বলো।
~ আমি আপনার হাতেই পরবো। ভাবী যদি জানে আমি শাড়ী পরতে পারি না আমাকে নিয়ে উনি হাসবেন। আর আমি চাই না আপনার একমাত্র বউ হাসির পাত্র হোক। সো শাড়ীটা আপনাকেই পরাতে হবে৷ নাহলে আমি আম্মুর কাছেই যাবো না।
বলেই মাইরা মুখটা কালো আর গোমড়া করে বেডের এক কোণায় বসে পড়ে। তাহসান মাইরার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে৷ ও আবার বলে,
– দেখো মাইরা অতিরিক্ত করো না। আমি পারবো না পরাতে।
তাহসানের কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই মাইরার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তাহসানের রাগ সাথে সাথে চলে যায়। মাইরার জন্য ওর ভিতরটা কেঁপে উঠে। তাহসান মনে মনে বলে,
– হায়রে তোমাকে কিভাবে বুঝাবো আমার যে লজ্জা লাগছে। তোমার স্পর্শকাতর জায়গায় আমাকে স্পর্শ করতে হবে৷ আমি কিভাবে করবো সেটা! কিন্তু শাড়ী পরাটাও জরুরি। উফফ!
তাহসান হার মানে। ও আস্তে করে মাইরার কাছে গিয়ে অসহায় ভাবে বলে,
– আচ্ছা বাবা কান্না করো না, আমি রাজি। আসো পরিয়ে দিবো তোমাকে শাড়ী।
~ সত্যি তো? (অভিমানী লুক দিয়ে)
– হ্যাঁ ভাই সত্যি।
~ এইই আমি আপনার ভাই না। আমি আপনার বউ…না মানে বন্ধু। হুহ।
– আচ্ছা হয়েছে। আসো দেরী হচ্ছে।
~ ওকে।
মাইরা ওয়াশরুম থেকে দ্রুত শাড়ীর সাথে যা পরতে হয় তা পরে আসে। ও বের হতেই তাহসান ওকে দেখে লজ্জায় আগুন হয়ে যায়। মাইরাও লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুষ্টুটা স্বামীটাকে জ্বালাতে এই প্লান করেছে। ও তাহসানের হাতে শাড়ীটা দিয়ে মনে মনে বলে,
~ হি হি। শাড়ী তো আমি ঠিকই পরতে পারি। কিন্তু আমি চাই আপনার হাতে শাড়ী পরতে। তাহলে আপনি ধীরে আমার হবেন। শুধু আমার। নারী জানে পুরুষের দুর্বলতা কোথায়। হাহা। তাহসান সাহেব দেখি এবার কিভাবে আপনি আমাকে শাড়ী পরান।
তাহসান শাড়ীটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মাইরার দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছে না। কারণ মাইরার ফরসা নরম স্পর্শকাতর কোমড়টা ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ যেন ওকেই ডাকছে। তাহসান যে কতবার ঢোক গিলেছে তার হিসাব নেই। বেচারার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে লজ্জায়। মাইরাকে শাড়ী পরাতে গেলে ওকে অবশ্যই স্পর্শ করতে হবে। কিন্তু ও কি পারবে? তাহসান কঠিন ভাবনায় পড়ে গিয়েছে। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মাইরা জোর গলায় বলে,
~ কি হলো তাড়াতাড়ি পরান। দেরী হচ্ছে তো।
– পরাচ্ছি পরাচ্ছি।
মাইরার ধমক খেয়ে তাহসান দ্রুত ওকে শাড়ী পরাতে শুরু করে। প্রথমেই…
চলবে..?
সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।
আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷