সাজু ভাই (পর্বঃ-০৩)
বিছানায় শুয়ে এবার হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলাম, রান্না ঘর থেকে মা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ-
– রুহি মা, কি হয়েছে তোর?
– মা আমার খুব ভয় করছে, আমার মনে হচ্ছে যে এবার মনে হয় আমি মারা যাবো। মা আমি মরতে চাই না, বাবাকে বলো যেভাবেই হোক আমাকে যেন বাচিয়ে রাখতে পারে। মাগো, ও মা?
– তুই কান্না করিসনা মা, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এভাবে ভেঙ্গে না পরে আল্লাহ আল্লাহ কর। আমি আর তোর বাবা থাকতে কেউ কিছু করতে পারবে না তোকে।
– মাগো, কেন এমন হচ্ছে সবার সঙ্গে? আমরা কি দোষ করেছি মা?
– জানি না, তুই একটু শান্ত হয়ে বস।
– কীভাবে শান্ত হবো? আমাদের সঙ্গে আরেকটা মেয়ে পড়তো ওর নাম সামিয়া। সে এসএসসি পাশ করার আগেই ঢাকা চলে গেছে, কিন্তু গতরাতে ওর খুন হয়েছে মা।
– বলিস কি? কে বলেছে তোকে?
– দারোগা সাহেব কল দিছিল, তুমি রান্না করতে যাবার আগেই কল দিছিল। আর সামিয়ার লাশের পাশে লেখা ছিল ” তৃতীয় শিকার “। ও মা? এবার যদি আমি চতুর্থ শিকার হয়ে যাই? তাহলে আমি কবরে চলে যাবো তাই না? আমাকে তোমরা কোন যায়গা মাটি দেবে?
– চুপ কর রুহি, চুপ কর! কেন এসব অলুক্ষুনে কথা মুখে আনিস? বললাম তো আমরা থাকতে তোর কিচ্ছু হতে দেবো না। আজকেই তোর আপুর কাছে কল দিয়ে কথা বলবো, তারপর ওর কাছে পাঠিয়ে দেবো।
– কোন লাভ নেই মা, সামিয়াকে যেহেতু ঢাকা বসে মেরে ফেলেছে তখন আমিও পালিয়ে বাঁচতে তো পারবো না। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, তোমরা কিছুতেই আমাকে ধরে রাখতে পারবে না।
আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছি আর মা তখন আমার মোবাইল নিয়ে বাবার কাছে কল দিয়ে বললো ” তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি বাসায় আসো তো, রুহি খুব ভয় পাচ্ছে। ”
– মা আমাকে সান্তনা দিয়ে বললো, রান্না করা প্রায় শেষ হয়ে গেছে, আমি ভাতের মাড় গালতে যাবো। তুমি কি আমার সঙ্গে রান্নাঘরে যাবি?
– না, আমি কোথাও যাবো না, রুম থেকে বের হয়ে কোথাও যেতে চাই না।
– ঠিক আছে তাহলে রুমে থাক, দারোগা সাহেব আসুক তারপর কথা বল।
– তাকে দেখলে আমার আরও ভয় লাগে, আমি কথা বলতে পারি না।
– পুলিশ দেখলে এমন একটু হয়।
মা রুম থেকে বের হতেই বাড়ির উঠোনে বাইকের শব্দ শোনা গেল, মনে হয় দারোগা সাহেব এসেছে। আমি তাই চোখ মুছে ভালো করে বিছানায় বসে পরলাম, একটু পরে তিনি প্রবেশ করলেন।
– কি খবর রুহি? তোমার মা বলছিল তুমি নাকি খুব ভয় পেয়েছ, ঘটনা কি? আমি তো তোমাকে বলেছি যে আমি থাকতে কিছু হবে না।
– স্যার গতকালও তো বলেছিলেন যে আর কেউ খুন হবার আগেই খুনি গ্রেপ্তার হবে, কিন্তু সামিয়া তো ঠিকই খুন হয়েছে।
– সামিয়া আমাদের আয়ত্তের বাইরে ছিল কারণ আমরা তো জানতামই না তার কথা। কিন্তু সকাল বেলা থানায় খবর গেল যে সামিয়া নামের একটা মেয়ে মিরপুরে খুন হয়েছে। তারা নাকি গত দুদিনে এই এলাকার খবর কিছুটা জানে, হয়তো ভাবতে পারে নাই তাদের সঙ্গে এমনটা হবে। আর গতকাল যখন সামিয়া খুন হয়েছে তখনই তাদের মধ্যে আফসোসের সীমা নেই।
– স্যার আপনি যেন কি বলতে এসেছেন সাজু ভাইয়ের বিষয়?
– আচ্ছা তুমি তাকে চেনো কীভাবে?
– আমি মাঝে মাঝে তার গল্প পড়তাম, কিন্তু স্যার তার সঙ্গে এই এলাকার কি সম্পর্ক? সাজু ভাইয়ের বাড়ি তো বাগেরহাট জেলা।
– সাজুদের সঙ্গে আমার পরিচয় আরও কয়েক বছর আগে, এই ধরো ৪/৫ বছর। তখন আমি খুলনার খালিশপুর থানায় পোস্টিং ছিলাম, আর সেই সময় ওদের সঙ্গে পরিচয়। থানার সামনে এক চায়ের দোকানে গভীর রাতে ওরা চার বন্ধু মিলে চা পান করতে আসতো। আমার যখন রাতে ডিউটি থাকতো তখন ওদের সঙ্গে দেখা হতো, আস্তে আস্তে সেই দুরের অপরিচিত শহরে তারা হয়ে গেল পরিচিত বন্ধুর মতো।
– ওহ্ আচ্ছা, আপনি কি তাদের বন্ধু শফিক ভাই কে চিনতেন? যিনি মারা গেছে।
– তুমি শফিকের নামও জানো? হ্যাঁ তাকেও চিনি কিন্তু সে হঠাৎ করে একটা দুর্ঘটনায় মারা গেল।
– কীভাবে?
– সে অনেক কথা, এখন সেসব বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।
– ঠিক আছে, স্যার আপনি বলেছিলেন যে এবার খুনি ধরা পরে যাবে, কিন্তু কীভাবে? আর আমার সঙ্গে সাজু ভাইয়ের যোগাযোগ আছে সেই কথা আপনি জানলেন কীভাবে?
– সাজুর সঙ্গে আজকে কথা হলো, আমিই কল দিছিলাম একটা গোয়েন্দার জন্য। খুলনা যখন ছিলাম তখন সেই লোকটা চারটা খুনের রহস্য বের করে দিয়েছিল। সেই লোকটার বাড়ি সাজুর এলাকায় তাই ওর সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক, আমি সেই লোকটাকে আনতে চাই। সেই গোয়েন্দার নাম, মোঃ হাসান।
– কিন্তু…!
– আমি সাজুর কাছে কল দিয়ে বললাম যে এই এলাকায় এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা চলছে। তারপর সে হঠাৎ করে তোমার কথা জিজ্ঞেস করলো, আমি তো অবাক হয়ে গেলাম।
– কি জিজ্ঞেস করেছিল স্যার?
– আমাকে হুট করে বলে, ” বান্ধবীদের মধ্যে রুহি নামের কোন মেয়ে আছে নাকি? ” আমি তো তখন থ হয়ে গেলাম কারণ তোমাকে চিনে কীভাবে? পরে জানতে পারি যে তুমি নাকি গল্পের মাধ্যেমে তাকে চেনো এবং পরশু নাকি কথা হয়েছিল।
– হ্যাঁ, আমি তাকে বলেছিলাম যে আমার একটা বান্ধবী খুন হয়েছে এবং দ্বিতীয় খুনের ব্যাপারেও তিনি হয়তো জানেন।
– আচ্ছা ঠিক আছে, এবার শোনো।
– বলেন স্যার।
– সাজু বলেছে সেই গোয়েন্দাকে সঙ্গে নিয়ে সাজু নিজেই আসবে এখানে, তাই আমি তোমাকে সে সময় বলেছিলাম খুনি শীঘ্রই ধরা পরবে।
– তাই যেন হয়, আমার খুব ভয় করছে স্যার, আর ওদের তিনজনের জন্য কষ্ট হচ্ছে খুব।
– যা হবার ছিল তাতো হয়ে গেল, আমরা প্রশাসন থেকেও কিছু করতে পারি নাই। কিন্তু ভবিষ্যতের অপরাধ গুলো আটকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো, তবে তোমার কাছে অনুরোধ রইল তুমি বাড়ি থেকে বের হবেই না।
– জ্বি স্যার।
– তোমার মতো তোমার বাবাও খুব ভয়ে আছেন, গতকাল তোমার বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। বললো ” স্যার দয়া করে আমার মেয়ে টাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন। ” আমি বললাম যে, ” বাঁচানোর মালিক আল্লাহ, আমরা শুধু চেষ্টা করে যাবো এতটুকুই। তাই আল্লাহর কাছে যেন সবাই দোয়া করেন। ”
– সাজু ভাই কবে আসবে বলেছে?
– আজকে সন্ধ্যার দিকে আসার কথা তবে রাতও হয়ে যেতে পারে।
– তারা কোথায় থাকবে?
– কেন দেখা করবে নাকি?
– আমি এবার ভয়ের মাঝেও ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম, হ্যাঁ দেখা করবো।
– চিন্তা করিও না, সাজু নিজেই সেই গোয়েন্দাকে নিয়ে তোমার কাছে আসবে। কারণ অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে তারা।
– তাহলে স্যার মেলা মেলা ভালো হবে।
– আমি চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন যতদিন রহস্যের উন্মোচন না হয় ততদিন সাজু ভাই ও গোয়েন্দা হাসান সাহেব তাদের বাড়িতে থাকতে পারবে।
– তাহলে তো ভালোই হবে।
– হ্যাঁ, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে এবার চলি, তারা আসার পরে যদি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায় তাহলে তোমাকে কল দিয়ে জানিয়ে তারপর নিয়ে আসবো।
– জ্বি স্যার, আগে একটু জানাবেন কারণ সাজু ভাই আসলে একটু আলাদা আপ্যায়ন করার খুব ইচ্ছে আছে।
– ঠিক আছে ঠিক আছে।
– – – – –
অনলাইনে গিয়ে সাজু ভাইয়ের বন্ধু সজীবকে এক্টিভ দেখে নক দিলাম।
– আসসালামু আলাইকুম।
– নো রিপ্লাই।
– কেমন আছেন?
– নো রিপ্লাই।
– কি ব্যাপার কথা বলছেন না কেন? আমি খুব টেনশনে আছি, আমার বান্ধবীরা এক এক করে খুন হচ্ছে। জানি না কখন জানি সকাল বেলা সবাই আমার মৃত্যুর খবর শুনতে পাবে।
– এবার রিপ্লাই আসলোঃ- দোয়া করি আপনার কিছু হবে না, সাবধানে থাকবেন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।
– আপনি কেমন আছেন বললেন না তো।
– সেটা নাহয় নাইবা বললাম।
– কেন? আপনি কি রেগে আছেন?
– না, রাগ করবো কেন?
– তাহলে কথা বলতে চাননা কেন? আমি কি কোন অপরাধ করেছি?
– না।
– তাহলে? আপনি তো জানেন আমাদের এখানে কি ভয়াবহ পরিস্থিতি তবুও কেন এমন করে কথা বলছেন?
– একটা কথা বলবো?
– জ্বি বলেন।
– কথাটা কাউকে বলতে পারবেন না, পেটের মধ্যে হজম করতে হবে।
– আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারেন।
– সাজু আমাকে আপনার সঙ্গে কথা বলতে মানা করেছে, তাই এড়িয়ে যাচ্ছি।
– কি? সাজু ভাই নিষেধ করেছে?
– হ্যাঁ।
– কিন্তু কেন?
– জানি না, শুধু বলেছে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। সাজু বললো ” সজীব তুই আমার বন্ধু তাই আমি চাইনা এসবের মধ্যে তুই জড়িয়ে যাস। আমি সবসময় চাই এসব থেকে তোকে দুরে রাখতে, তাই যোগাযোগ বন্ধ কর। ”
– কিন্তু কিসের সঙ্গে জড়িত হবার বিষয়?
– জানি না আমি।
– আপনি দয়া করে যোগাযোগ বন্ধ করবেন না, সাজু ভাইকে আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। প্লিজ আপনি তাকে কিছু বলবেন না, আর আমরা যে যোগাযোগ করবো সেটা তাকে দুজনের কেউ বলবো না।
– তোমার সঙ্গে দেখা হলেও বলবে না।
– মানে?
– সাজুর সঙ্গে কথা হয়েছে আমার, তোমাদের এলাকায় হাসান ভাইকে নিয়ে যাচ্ছে সেটা ওর মুখেই শুনলাম।
– আর কিছু বলে নাই?
– না, আরেকটা কথা বলবো?
– জ্বি বলেন।
– সাজু তোমাদের এলাকায় গেলেও তার সঙ্গে দেখা করতে যেও না। যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেখা করতে হয় তাহলে বেশি কথা বলবো না।
– কেন?
– ওকে আজকাল বড্ড অদ্ভুত লাগে, মনে হচ্ছে সেই সাজু নেই। একসময় মেসের রুমের মধ্যে বসে কত হাসিতামাশা করেছি আর আজ সবকিছু যেন অচেনা অজানা মনে হয়।
– ঠিক আছে আপনার কথা মনে থাকবে।
– আচ্ছা ভালো থাকবেন।
– আপনিও ভালো থাকবেন সবসময়।
– – – – –
চিন্তা সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে, বাবার সঙ্গে গিয়ে কলপাড়ে গোসল করলাম। কেমন এক আতঙ্ক উৎকন্ঠা ঘিরে আসছে চারিদিকে, অন্ধকার যেন তিমির কাঁপিবে গভীরে।
বিকেলে নিজের রুমে শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ করে মা এসে বললো ” চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে পারুল আপা এসেছে আমাদের বাড়িতে। ” একটু পরে পারুল আপা আমার রুমে এলো, আমি তাকে বসতে দিলাম বিছানায়, মা চলে গেল তার কাজে।
পারুল আপা আমাদের চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র তবে পড়াশোনা করেন ঢাকা শহরে। খুব ভালো ছাত্রী, তাই শহরে থেকে অনার্স করছেন তিনি।
– কেমন আছো রুহি?
– জ্বি আপু চলছে, সবকিছু তো জানেন তাই কি আর বলবো বলেন?
– হ্যাঁ সেটাই ভাবছিলাম, তোমাদের ব্যাচের সকল মেয়ের জন্য গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে গেছে।
– দারোগা বললেন যে গোয়েন্দা আসবে, আর আপনাদের বাড়িতে নাকি থাকার ব্যবস্থা হবে?
– হ্যাঁ ঠিকই শুনেছ, বাবা অবশ্য আপত্তি করেছিল কিন্তু আমি তাকে রাজি করালাম। যেভাবেই হোক এর একটা নিষ্পত্তি করতে হবে, এভাবে তো কেউ অপরাধ সহ্য করতে পারে না।
– জ্বি আপু।
– আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আজকে উঠি রুহি। আবার আসবো তোমার সঙ্গে দেখা করতে, আে ভয়ের কিছু নাই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
– দোয়া করবেন আমার জন্য।
– অবশ্যই।
সন্ধ্যার একটু আগেই বাবা বাড়িতে ফিরলেন কিন্তু তার সঙ্গে আমার বান্ধবী ফারজানা। আমি আর মা দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম, যেখানে আমি ঘর থেকে বের হচ্ছি না সেখানে ফারজানা সন্ধ্যা বেলা আমাদের বাড়িতে? কিন্তু পরক্ষণেই বাবার কথা শুনে সবকিছু বুঝতে পারছি।
ফারজানাদের বাড়ি খুবই পুরাতন, স্কুলে থাকার সময় ওকে সবাই খুব অপছন্দ করতো। মাঝে মাঝে ও আমাকে বলতো ” দেখ রুহি, আমি গরীব সেটা কি আমার দোষ? সবাই কেন এমন করে আমার সঙ্গে? ” ওদের ঘরবাড়ি এখনো আগের মত পুরাতন, ফারজানা কলেজে ভর্তি হবার পরে ঢাকা গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। পরিবারের জন্য টাকা উপার্জন করে সাহায্য করে। কিন্তু সে মাসখানেক আগে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসেছে, বিয়ের কথাবার্তা চলে। এখন চারিদিকে এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তাই ফারজানাকে তার বাবা আমাদের বাড়িতে পাঠিয়েছে।
আমার সঙ্গে থাকবে, যাতে করে মোটামুটি একটু নিরাপত্তা ব্যবস্থা পায়। তাছাড়া ওর বাবা নাকি জানতে পেরেছে যে দারোগা সাহেব আমাদের বাড়িতে বারবার আসেন। তাই তাহার ধারণা হচ্ছে যে আমাদের বাড়িতে যেহেতু দারোগার আনাগোনা তাই এ বাড়িতে কেউ আসবে না।
কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা মোটেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না, ফারজানা কেমন যেন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। আসার পর শুধু কেমন আছি সেটা ছাড়া আর কিছু জিজ্ঞেস করে নাই। আমার রুমে ঢুকে চারিদিকে ভালো করে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
– আমাকে বললো, আচ্ছা রুহি, তোমার রুম থেকে রাতে বাহিরে বের হওয়া যায়?
হঠাৎ করে আমার মনটা আৎকে উঠলো, এমন প্রশ্ন করছে কেন? ঘটনা কি?
মনে মনে ভাবলাম ” আচ্ছা গরীব বলে ক্ষেপানোর জন্য ফারজানা আমাদের সবার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে নাকি? আজকে রাতে কি আমাকে চতুর্থ শিকার করতে এসেছে? ”
নিজের ভাবনার কথা মা-বাবার সঙ্গে বলতে গিয়ে আবার বলতে পারি নাই। রাতে ফারজানার সঙ্গে আমাকে আমার রুমে ঘুমাতে হচ্ছে, খুব যেন ভয় লাগছে আরো। দারোগা সাহেব কল দেননি, সাজু ভাই আর তার বন্ধু এসেছে কিনা জানা হলো না।
টেনশনে কিছুতেই ঘুম আসছিল না, ফারজানা একটু পর পর ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে আমি কি ঘুমাইছি নাকি? আচ্ছা এটা জিজ্ঞেস করে কেন?
কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম জানি না কিন্তু আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল, বাহিরে শুনশান নীরবতা। কেবল রাতের পোকামাকড়ের ডাক শোনা যাচ্ছে কানের মধ্যে।
হঠাৎ করে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি আমার পাশে কেউ নেই, আরে ফারজানা গেল কোথায়? আমি ডাক দিতে গিয়েও মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না, রুমের মধ্যে অন্ধকারে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তবে দরজা খোলা সেটা বোঝা যাচ্ছে, আমি কি বপদে পরতে যাচ্ছি?
,
,
,
,
চলবে…?
.
.
.
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)