? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part -3,04
ফাতেমা তুজ
03
ওনি আমার কাছে এসে আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার বদলে আমাকে চমকে দিয়ে আমার মুখে তাঁর হাত আলতো ভাবে ছোঁয়ালেন ।
তাঁর স্পর্শে আমি আলতো শিউরে উঠলাম
তাঁর হাত আমার মুখে রেখেই বললেন ‘ ফারাবি ভয় পাচ্ছিস কেন।আমার দিকে তাকা।’
– উহুহু
– ফারাবি প্লিজ।
তাঁর এমন ঠান্ডা মেজাজ, স্পর্শ কাতর আবেদন এ না চাইতে ও তাঁর দিকে তাকালাম। চোখ দুটো যেন এক প্রকার আমার সাথে যুদ্ধ করেই ওনার দিকে তাকালো।
তাকাতেই দেখলাম ওনি আমার দিকে ঘোর লাগানো চোখে তাকিয়ে আছেন। আর আমার অনেকটাই কাছে। একটু ইতস্তত বোধ করলাম।কারন এই কয়েক মাসে ওনি আমার সামনে তো দূরের কথা আমার সাথে ভালো করে কথাই বলে নি। সব সময় অকারনেই রাগ দেখাতেন।চোখাচোখি হওয়ায় কিছু টা লজ্জা পেলাম। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নিলাম।
ফারহান স্যার আবার বলা শুরু করলেন। ‘আমি কি চোখ সরাতে বলেছি তোকে? তাহলে চোখ সরালি কেন। আমার দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। কেন আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে তকে খেয়ে ফেলবো। খেয়ে ফেললেই কি। তুই শুধু আমার দিকে তাকাবি। কই শান্তের দিকে তাকাতে তো ভয় পাচ্ছিলি না।
____________
2 মাস আগে
[ শান্ত হলো
আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ভাইয়া। সেই সাথে আমার বান্ধবী শিখার মামাতো ভাই। তাই বেশ কয়েক বার কথা হয়েছে আর একই স্কুল হওয়ায় মোটামুটি ভালোই সম্পর্ক। এমনিতে যদিও ওনার সাথে তেমন কথা হয় না বহুদিন। কিন্তু সেই দিন টা ছিল ওনার জন্মদিন। তাই ওনি আমাদের স্কুলের পাশে যেই পার্ক টা আছে সেখানে ওনার বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমাকে দেখেই বলল হে ফারাবি । আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
– জি ভাইয়া। কেমন আছেন?
– এই তো ভালোই। দেখ না সেই কখন থেকে বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু ওরা সব লাপাত্তা। তা তুমি কেমন আছো?
একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম।
– আলহামদুল্লিহ ভালো।
– তা বাসায় যাচ্ছো?
– হুম।
– ফারাবি আজকে না আমার জন্মদিন। ওদের তো আসার নাম ই নেই। চলো আজকে তোমাকে ট্রিট দেই ।
– শুভ জন্মদিন ভাইয়া। কিন্তু এখন না আমার কাছে তেমন সময় নেই ,অন্য একদিন হবে ।
-প্লিজ ফারাবি। জাস্ট ফাইভ মিনিট।প্লিজ না বলো না।
একপ্রকার জোড়াজোড়ি শুরু করে দিলেন। কিছু টা বিরক্ত হচ্ছি ও কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না। তো আর কি করার অগত্যা যেতেই হলো।
______________
আমরা একটু এগিয়ে একটা কফি হাউসে ঢুকলাম।
বসে আছি , ইতস্তত বোধ করছি। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে হবে।
শান্ত ভাইয়া বলল
– তো ফারাবি কি নিবে বলো।
বুদ্ধি করে বললাম কোল্ড কফি।যাতে ফাস্ট যাওয়া যায়।
– আর
– আর কিছু না।
– কি বলো।শুধু কোল্ড কফি আর কিছু তো নাও ।
– না ভাইয়া। আর কিছু নিব না ।
ওনি আর তেমন জোড়াজোড়ি করলেন না।
– কফি টা ফাস্ট কমপ্লিট করে বললাম ভাইয়া আজ আমি আসি। গিফট টা পাওনা রইলো।
– হাহা আচ্ছা সে রইল পাওনা। কিন্তু আর একটু বসো।
– না ভাইয়া। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।
– আচ্ছা এক মিনিট বলে পাশের শপ থেকে কিটক্যাট নিয়ে এসে আমাকে দিলেন।
কিটক্যাট আর ড্রাক চকলেট বলতে আমি অজ্ঞান। তাই কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিয়ে নিলাম আর বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম।
_______________
বের হতে না হতে, কারো থাপ্পড় পড়লো আমার গালে।
কিছু টা চমকে উঠলাম।পরক্ষণেই যাকে আমার সামনে দেখলাম তাঁর জন্য মোটে ও আমি প্রস্তুত ছিলাম না।ফারহান স্যার!
মনে হচ্ছে আমাকে জলন্ত লাভাতে ফেলে দিবেন।চোখ গুলো অসম্ভব লাল। বেশ অনেকক্ষণ ধরে রাগ চেপে আছেন তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বুকে পানিশূন্য অনুভব করছি , হয়তো আমি এখন পানির অভাবে মরে যাবো।
জ্বীভ দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে নিলাম। আমার হাত থেকে চকলেট গুলো নিয়ে নিলো আর কিটক্যাট এর দুইটা বক্স ধরিয়ে দিয়ে বললেন।
– স্কুলে পড়াশুনা করতে আসিছ নাকি কফি হাউসে কফি খেতে।চুপ চাপ বাসায় যাবি। নেক্সট টাইম যদি দেখি ঠ্যাং ভেঙে রেখে দিবো।
বলেই শান্ত ভাইয়ার দেওয়া চকলেট গুলো পাশের বাচ্চাদের দিয়ে দিল। কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বাসার দিকে রওনা দিলাম।পিছে তাকানোর সাহস আমার নেই। থাপ্পড় টা বেশ কষিয়েই দিয়েছে মনে হচ্ছে গাল টা ফেটেই গেছে। তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করলাম ]
_____________________
এই হলো কাহিনি মনে পড়তেই কেঁপে উঠলাম।
কিছু টা তুতলিয়ে উওর দিলাম
– তেতমমমন নাহহহ। আমিমম তো
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ওনি রাগি ভাব নিয়ে বলা শুরু করলেন ।
– আজকে তর পড়া ডাবল করে দিলাম।এটাই তোর শাস্তি । গট ইট কালকে আমি যেন কোনো পড়া মিস না দেখি।
এই বলেই ওনি গট গট করে বের হয়ে গেলেন ।
___________________
আমি যেন ব্যক্কেল বনে গেলাম। কি থেকে কি হলো কিছু ই বুজলাম না।একটু আগেই তো কত সুন্দর করে বলছিলেন ফারাবি আমাকে বাঘ মনে হয় তর , তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন। অথচ শেষ মেশ রাগ দেখিয়ে ডাবল পড়া দিয়ে চলে গেলেন!
ফাতেমা তুজ
চলবে
? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 4
_______________
আমি আমার ঘরে বসে ডোরেমন কার্টুন দেখছিলাম । ওমন সময় মাথায় থাপ্পড় মেরে হাত থেকে রিমোর্ট নিয়ে গেল রিফাত ভাইয়া। আমি তো ওকে দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম। কারন এই গন্ডার টা দুই মাস পর বাসায় ফিরেছে। কিল ঘুসি দিয়ে রিফাত ভাইয়া কে বললাম – তোমাকে আসতে বলেছে কে? আর ও চার পাঁচ মাস থাকতেই পারতে, ঢং দেখাতে আসছো।
চোখ নাচিয়ে আবার বললাম
– ঢাকায় গেলে আর আসতে মন চায় না বুঝি। তা আসতে মন চাইবে কিভাবে মনিকা আপুকে ছাড়া। তা বিয়ে টা করে নাও না। তাহলে আর দেখা করার জন্য কোনো ওসিলা লাগবে না।
রিফাত ভাইয়া আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল
– চুপ চুপ আব্বু শুনতে পাবে।
পর মুহুর্তেই একটু ভাব নিয়ে বলল
– আর এখনো আমার বিয়ের বয়স হয়নি। আমি হলাম পিচ্ছি বাচ্চা।
ভাইয়ার থুতনিতে হাত দিয়ে বললাম
– ওরে আমার আদরের দুলাল। তুমি কবেই বা বড় ছিলা,বুড়ি তো আমি হয়ে গেছি। তুমি তো 22 বছরের কচি খোকা ।
– বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে না রে? আচ্ছা তাহলে তো বিয়ে করা দরকার।
আমার চুলে টান মেরে বলল
– তার আগে তোকে বিদেয় করে নিই।আজই আব্বু আর চাচ্চু কে বলব তোর বিয়ের জন্য ছেলে দেখতে।
চুলে টান দেওয়ায় খানিকটা ব্যাথা পেলাম।তাই ভাইয়ার হাতে চিমটি কেটে বললাম
– অ্যাহ আসছে। আমি হলাম পিচ্ছি বাবু তুমি বিয়ে করো আগে তারপর আমি।
ভাইয়া বলল ‘ তাই? দাড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।’
এই বলেই আমার পেছনে দৌড়াতে শুরু করলো। আমি ও দিলাম এক দৌড় সোজা বড় মার পেছনে। বড় মা রান্না করছিলেন।
– কিরে ফারাবি এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন!
কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম
– দেখো না তোমার ছেলে আমাকে এসেই জ্বালানো শুরু করেছে।
– আমি তোকে জ্বালাই নাকি তুই জ্বালাস।
– তুমি ই তো জ্বালাও।
– ফারাবি তোকে কিন্তু এবার
– আচ্ছা আমি তাহলে বড় মা কে সব বলেই দিচ্ছি।বড় মাহ
– ফারাবি আজকে তোকে তো আমি দেখেই নিবো। তুই বড্ড পেকে গেছিস।
আবার দুজনের দৌড়া দৌড়ি শুরু। দৌড়াতে দৌড়াতে বাগানে চলে এসেছি হঠাৎ এক পাঠার সাথে ধাক্কা খেলাম।ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছি। ভাবলাম আজকে আমার কোমর শেষ। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমি তো ব্যাথা পাচ্ছি না এটা কিভাবে সম্ভব?
দেখার জন্য চোখ খুললাম দেখলাম, আমি কারো বাহুর মাঝে অবস্থিত!মাথাটা উপর করতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।
আমি বোধহয় বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছি, মুখ থেকে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না।
হঠাৎ ফারহান ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম
– কি রে। আজকে কি আর উঠবি না?আর এভাবে বানরের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো লাফাচ্ছিলি কেন?
কি আমি বানরের তিন নাম্বার বাচ্চা ,বেটা হনুমান।মনে মনে আর ও চার পাঁচ টা গালি দিয়ে ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওড়না টা ভালো করে জড়িয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।
তখনই রিফাত ভাইয়ার আগমন
– হে ফারহান
বলেই জড়িয়ে ধরলো।
ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়ার পিঠ চাপরে বলল
– তা আজকাল আমাকে মনে হয় ভুলেই যাচ্ছিস।দুই মাস পর ফিরতে ইচ্ছে হলো।তা কেমন আছিস মোটা হয়ে গেছিস বোধহয়। তা আমার ভাবিজানের আদরে তো মোটু হবিই।
ভাইয়া একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
– আরে তেমন কিছু না। অনেক দিন পর দেখছিস তাই এমন লাগছে।
দুজনে গট গট করে বাসার ভেতর চলে গেল।
আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। বাগান থেকে একটা কালো গোলাপ ফুল নিয়ে চলে গেলাম।
কালো গোলাপ আমার অনেক প্রিয় নয় তবে ভালো লাগে।বিরল প্রজাতির সব কিছুই আমার ভালো লাগে।
এটি শুধুমাএ তুরেস্কর দক্ষিন পূর্ব দিকে সানলুরফা প্রদেশের হালফেতি নামক অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভাবে ফুটে।
কালো গোলাপ আমাকে ফারহান ভাইয়া জন্মদিনের গিফট হিসেবে দিয়েছিল। আমি সব সময় বায়না করতাম কালো গোলাপের জন্য কিন্তু এটা বিরল ফুল তাই সহজে পাওয়া যায় না।আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন ফারহান ভাইয়া আমাকে 14 তম জন্মদিনের গিফট হিসেবে দিয়েছিল আর বলেছিল কালো গোলাপ তোকে দিলাম যাতে তর জীবনের সব কালো ছায়া কালো গোলাপ সুষে নেয়। সম্পূর্ণ যন্তে রাখবি যদি কিছু হয় তাহলে তোর হাত পা বেঁধে রেখে দিবো। যদি ও একটু ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু আমি সব থেকে এই উপহারে খুশি হয়েছিলাম।সেই থেকেই এই কালো গোলাপ আমার সঙ্গী ।
ফাতেমা তুজ
চলবে