Destiny_of_Love PART_08| kacge ashar golpo

0
2954

Destiny_of_Love PART_08

#Nishat_Tasnim_Nishi
____________________________

–‘ইয়ে,টিয়ে শুনতে চাই না। দিদুনকে কী বলেছো?হ্যা কেনো বলেছেন?নিরা ফুফি কী জানে?’

–‘ হ্যা,জানে।’

–‘মানে কী জানে?’

—‘আম্মু জানে যে,,’

কথাটা বলেই আবরার টান দিলো,আর আমি অধৈর্য্য গলায় বললাম,,
–‘তারপর তো বলেন?’
আবরার আমার মুখের সামনে মুখ টা এগিয়ে আনলো, আমি ভাবলাম হয়তো চুপিচুপি বলতে চায়।আমিও কান ওর মুখের দিকে এগিয়ে দিলাম। সিরিয়াস হয়ে কান খাড়া করে শুনতে চাইলাম, আবরার তখনই কানের কাছে মুখ নিয়ে কু করে শব্দ করে উঠলো। আমি আউ বলে চিৎকার দিয়ে সরে আসলাম। কানের পর্দা মনে হয় ফেটে গিয়েছে, রাগে কটমট দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম ও তখন আমার দিকে সাবলীল ভঙ্গিতে হাসতেছে।
নাক মুখ ফুলিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কঠিন কথা শুনানের জন্য তখনই দিদুনের আওয়াজ পেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, ছোট চাচ্চু আর দিদুন কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে।
চোখের ইশারায় বললাম,–‘দিদুনের জন্য বেঁচে গেলেন।’

—‘চলো,তোমাকে আমাদের জমি দেখাবো।’
সাবলীল ভাবে বললেন দিদুন। আবরার ও মাথা নাড়িয়ে দিদুনের সাথে হাটা দিলো।ছোট চাচ্চু আমাকে বললেন,–‘কিরে দাড়িয়ে আছিস কেনো?চল!’

গ্রামের সরু পথে হেটে যাচ্ছি আমরা। রাস্তার দুপাশে সবুজ মাঠঘাট, যত দার চোখ যায় ততদূর ধানের ক্ষেত চোখে পড়ছে। আঙ্গুল পরিমাণ সাইজ সব মাঠের ধান গাছ। দক্ষিণা বাতাসে বারবার মাথার কাপড় টা পড়ে যাচ্ছে শ্রুতির, দু হাত দিয়ে এতবার মাথায় কাপড় টানতে টানতে সে বিরক্ত। সামনের ছোট ছোট চুলগুলো বারবার মুখে এসে পড়ছে। পিছন থেকে এ দৃশ্য দেখে খুব উপভোগ করছে আবরার। তার কাছে কেনো জেনো ভালো লাগছে।যখন ই চুলগুলো মুখের উপর এসে উপছে পড়ে তখনই অবাধ্য মন চায় চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিতে। দুবার হাত বাড়িয়ে গুটিয়েও নিয়েছে সে, এই বুড়ি নানু টা আজ পাশে না থাকলে সে হয়তো এতক্ষণে তার ইচ্ছা পূরণ করে আসতো। কী দরকার ছিলো সাথে আসার?না আসলেই তো পারতো।তাহলে হয়তো শ্রুতির হাতে হাত রেখে সে হাটতো। হঠাৎ বুড়ি নানুর উপর তার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মুখ টা বাচ্চাদের মতো ফুলিয়ে গটগট করে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলো সে।এই বুড়ো রা সবসময় প্রেমের দুশমন হয়।

১৫.
জমিজমা দেখা শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। হাতের লাঠি দিয়ে এদিক ওদিকে দেখিয়ে সব বুঝিয়েছেন দিদুন। আবরার শুধু গাড় হেলিয়ে হা,হু করেছে। কোন অংশে কী চাষ?কীসের সাথে কিসের চাষ করতে হয়? সব কিছুই দিদুন বলেছেন তাকে। সে শুধু শুনেছে,দিদুন যা বলেছে সেসব ওর মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। হালচাষ,জমিচাষ এসব না সে কখনো করেছে আর না দেখেছে।তবুও এমন ভান করলো যেনো এসবের সাথে তার কত পরিচয়। শ্রুতি তো চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো,আবরার কীভাবে পারবে এসব?

দিদুনের কথা শেষ হতেই সে আগ বাড়িয়ে বললো,–‘দিদুন উনি তো নতুন।কিছুই চিনে না, উল্টাপাল্টা কার জমিতে কিছু কর বসলে?তাছাড়া নতুন কোথাও এত দ্রুত কীভাবে উনি খাপ খাওয়াবেন?’
শ্রুতির কথায় দিদুন হাসলো।সেই হাসির ভাবভঙ্গি এমন যে,তুই কি আমাকে এত বোকা ভাবিস?দেখতে থাক পরে কী হয়।’

ছোট চাচ্চুও শ্রুতির কথায় তাল মিলালো,শুধু আবরার মাথা নিচু করে রইলো। ওর মনে কী চলছে,সেটা ঠিক বুঝার উপায় নেই।

–‘ আমি কখন বললাম যে ওকে এখন থেকেই এসব করতে হবে? আমার কী আক্কেল নেই? ওকে শুধু সব দেখাচ্ছি,বুঝাচ্ছি। ওকে কী করতে বলেছি?ওকে করতে দিলে দেখা যাবে আমাদের না খেয়েই থাকতে হবে। ফসল হবে কী হবে না,সেটাও তো ভাবতে হবে। আগে গুটি কয়েক দিন ও সবাইকে লক্ষ্য করবে,কে কীভাবে কী করে এসব দেখবে। তারপর সবার সাথে মিলে করবে,আর ওর একার পক্ষে এত বড় জমি করা কীভাবে সম্ভব হবে? আমি কি আগের লোকদের বিদায় দিয়েছি নাকি?তাছাড়া তোর চাচারাও তো থাকবে।’

–‘ দিদুন আমি সেভাবে বলি নি,আসলে আমি ভেবেছি উনি হয়তো একা একা এসব করবেন,তাই।’

দিদুন গম্ভীর কন্ঠে হুম বলে মাথা নাড়ালো। সবাই বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে,
সবার মুড ভালো থাকলেও শ্রুতির মুড ঠিক নেই। মুখ ভার করেই ও হাটছে,ওর চলার দিকে কেউ লক্ষ্য করলেই বলবে ও হয়তো কয়েক মাসের অনাহারী। হাটার ভঙ্গি দেখে মনে হবে শরীরে শক্তি নেই,মরে মরে হাটছে। চিকন শরীর হওয়ায় সেটা আরো প্রগাঢ় দেখাচ্ছে। বাতাসের গতি যদি একটু বেড়ে যায় তাহলে হয়তো সেও উড়ে চলে যাবে। পাশ থেকেই এসব আবিষ্কার করলো আবরার।বাতাসের গতি কেনো সে ফু দিলেই হয়তো উড়ে যাবে। আচ্ছা ফু দিলে কী উড়ে যায়? মানুষ তো কথায় কথায় বলে ফু দিলে নাকি চিকন মানুষ উড়ে যায়।এত ভাবার কি আছে,একবার চেক করেই দেখি। কথাটা ভেবেই সে ফু দিলে শ্রুতির উপর।

ফু দিতেই কেঁপে উঠে শ্রুতি। কানের লতিতে আচমকা ঠান্ডা বাতাস লেগে উঠলে যে কেউ ই কেঁপে উঠবে, ও সেখানেই দাড়িয়ে যাই,পিছনে মাথা টা ঘুরিয়ে আবরারের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে বললো কী?

১৬.
আবরার মেকি হাসি দিয়ে ইশারায় মুখ দিয়ে বুঝালো,কিছু না। শ্রুতি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে হাটতে লাগলো। আর আবরার এদিকওদিক তাকিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো।ইদানীং তার কী হয়েছে সে নিজেই বুঝে না। বাচ্চাদের মতো সব চিন্তাভাবনা চলে আসে তার মাথায়।
‘বেশি খুশি থাকলে নাকি মানুষ বিবেকশূন্য হয়ে যায়।’
তাহলে কী সেও বেশি খুশি? কিন্তু কেনো?
নিজের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে হাটতে লাগলো।

হাটার সময় হঠাৎ দিদুনকে গিয়ে ধরে ফেলে আবরার।বিষয়টাতে সবাই চমকে যায়,শ্রুতির তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।
দিদুন কিছু বলবে তার আগেই উনার থেকে দুতিন কদম সামনে দিয়ে বেশ খানিক টা গতিতেই ক্রিকেট বল গড়িয়ে ওপর পাশে চলে যায়।
যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, তার পাশেই বিশাল মাঠ,পড়ন্ত বিকেলে এলাকার ছেলেরা এখানে খেলতে আসে। খেলার সময় একজন খেলোয়াড় ব্যাটিং করার সময় চার মারে,বলের গতি বেগ বেশি থাকার কারণে সেটা গড়িয়ে রাস্তায় চলে আসে। অল্পের জন্য হয়তো বলে পা দিয়ে উল্টে পড়ে যেতো দিদুন।
আবরার প্রচন্ড রেগে মাঠের ছেলেদের দিকে তাকালো। দিদুন হয়তো বুঝতে পেরেছে কোনো গন্ডগল হবে,অল্প বয়সী ছেলেদের শরীরের রক্ত গরম থাকে। তিনি আবরারের বাহুতে হাত রেখে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন। আবরার উনাকে ছেড়ে কিনারায় দাড়ালো,খুব ঠান্ডা কন্ঠে বললো,–‘মানুষ দেখতেছেন না?এক মিনিট না খেললে কী হতো? ‘

ওদের মধ্যে একটা ছেলে বল নেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলো। আবরারের চাহনি দেখে ও থেমে যায়।ছেলেটা বল তুলতে তুলতে বললো,–‘সরি,ভাই। দেখি নি!’

এদিকে দিদুন দেখে সবাই এসে বলতে লাগলো যে তারা দেখে নি। ওদের মধ্যে কয়েকজনের বয়স ৫০ উর্ধো,কয়েকজনের ২০-৩০। আবার কয়েক জনের ১৬-২০।প্রায় সব বয়সের ছেলে রাই আছে।সেজন্য ছোট চাচ্চু বিষয়টা দামাচাপা দিয়ে দিলো। আবরারকে ইশারায় চুপ হয়ে যেতে বললো,দিদুন ও বেশ গম্ভীর হয়ে ছিলেন।
হঠাৎ দিদুন আবরারকে বললো

—‘ক্রিকেট খেলা পারো?’

দিদুনের কথায় সবাই বেশ অবাক হলাম।এটা কেমন প্রশ্ন?আর আবরার কেই বা কেনো এ প্রশ্ন করলো।
–‘হু,একটু-আধটু পারি।’

–‘চলো,ওদের সাথে তাহলে এক ম্যাচ হয়ে যাক।দেখি কেমন পারো।’

১৭.
ম্যাচ শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। দিদুনের জন্য চেয়ার আনা হয়েছে,আমি আর দিদুন মাঠের একটু পাশে ঢালু জায়গায় বসে আছি। সামনেই খেলা চলছে।চাচ্চু আর আবরার দুজন দুই দলে জয়েন করেছে।
টসে আবরার দের ব্যাটিং আগে, চাচ্চুরা বলিং। ওদের দলের সবার ব্যাটিং বেশ ভালো।
সবাই চার,চক্কা নিচ্ছে। তবে চাচ্চুও বেশ ভালো বলিং করছে। আবরার দের দলের সবাই প্রায় আউট হয়ে গিয়েছে, এবার আবরারের পালা। ও কে দেখে অনেক নার্ভাস লাগছে।
আমার ধারনা আবরার হয়তো সবচেয়ে ভালো খেলবে,অনেক ভালো রান নিবে। কিন্তু সে ধারনা দ্রুত ই ভেঙ্গে গেলো, মাত্র এক উইকেটে ও আউট হয়ে গিয়েছে।৮ রান ই নিতে পেরেছে। বিষয়টাতে আমি এত হতাশ হলাম,বলার বাহিরে।
এবার আসলো ওদের পালা। আবরার ফিল্ডিং করছে।মাশাল্লাহ ও খুব ভালো ই খেলতেছে।
যত স্পিডে বল আসুক না কেনো ও সবগুলোই আটকে ফেলে।
তীব্র উত্তেজনা নিয়ে খেলা উপভোগ করতেছি,আমি খেলা সম্পর্কে তেমন জানি না। কখনও দেখতাম ও না।
কিন্তুু এখন এমন ইন্টারেস্ট হচ্ছে যা বলে বোঝাতে পারবো না। কে কি করছে না করছে সেটা নিয়ে নয়,কে জিতবে?সেটা নিয়েই আমার আগ্রহ।

–‘আচ্ছা,দিদুন কে জিতবে বলো তো?মানে কোন দল?’

–‘তুমি যেখানে আমিও সেখানে, তুমি যা দেখচো আমিও তাই দেখছি।তাহলে আমি কীভাবে জানবো যে কে জিতবে?’

.

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here