#শুন্যতা
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
দুই পাশে দুই টা মেয়ে নিয়ে নাইট ক্লাবে ফুর্তিতে মেতে আছে সাঈম। আর তার বিয়ে করা স্ত্রী সামিয়া বাসায় খাবার নিয়ে টেবিলে অপেক্ষা করছে সে কখন বাসায় ফিরবে। ঘড়ির কাটা টা ঘুরছে নিজ গতিতে। সামিয়া মোবাইল হাতে নিয়ে ফোন দিলো সাঈমের নাম্বারে। কিন্তু ফোন কেটে দিলো সাঈম।
ইদানিং সাঈমের আচোরণে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করছে সামিয়া। প্রায়ই রাত করে বাসায় ফিরে সাঈম। কিছু বলতেও পারেনা ভয়ে। বিষণ্ন মনে হাতের উপর মাথা রেখে টেবিলে বসে ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে আছে সামিয়া।
রাত ১২ টার সময় বাসায় ফিরে সাঈম। বার বার কলিং বেলের শব্দ আসছে। সামিয়া ততোক্ষনে হাতের উপর মাথা রাখা অবস্থায় ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছে টেবিলে। তাই দরজা খুলতে দেড়ি হলো তার।
– এতো বেড়ি হয় কেনো দরজা খুলতে?
সামিয়ার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সাঈম। ঘুম ঘুম চোখে সাঈমের ধমকে একটু কেপে উঠলো সামিয়া। কাঁপুনি কন্ঠস্বরে বললো,
– ফে ফ্রেশ হয়ে আসেন খাবার দিচ্ছি।
– আমি খাবোনা, খিদে নেই আমার।
হুট করে সামিয়ার চোখ গেলো সাঈমের গলায়। লাল হয়ে আছে গলা। কারো ঠোঁটের স্পর্শে লেগে থাকা লিপস্টিকের দাগ।
সাঈম আর কিছু না বলে রুমে চলে গেলো। সামিয়া নিরবে দাড়িয়ে রইলো ওখানে।
সামিয়া ছোট থেকেই একটু চাপা সভাবের। কষ্ট হলেও কারো কাছে তা প্রকাশ করে না। মুখে মুখে প্রশ্ন করা বা তর্ক করার সভাব, সাহস এসব কোনোটাই নেই তার। আর এই লোকটাকে তো এমনিতেও ভয় পায় সে। প্রচুর ভয় পায়।
ততোক্ষনে চোখের পানিতে গাল টা ভিজে গেছে তার।
,
,
কিছুদিন পর,
অফিস ছুটির কিছুক্ষন আগে, সাঈম সাহেব আমার কাছে এলো।
– রিদ সাহেব আপনি তো এখন ফ্রি?
– জ্বি হ্যা,
– তাহলে চলুন একটা জায়গা থেকে ঘুরে আসি। দেখবেন মনটা খুব ভালো হবে যাবে।
কৌতহলি দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– কোথায়?
– পার্টি আছে, নাইট পার্টি। চলুন আজ দেখবেন শরির মন দুটুই ফ্রেশ থাকবে।
আমি একটু হেসে বললাম,
– নো থ্যাংক্স, ওসবে ইন্টারেস্ট নেই আমার।
– আরে ভাই চলেন তো, আর আপনার তো স্ত্রী ও নেই, ওখানে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে পাবেন। মাঝে মাঝে এমন পার্টিতে গিয়ে ইনজয় করবেন, সিংগেল মনে হবে না নিজেকে। আরে এটাই তো ইনজয় করার সময়।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনার না বাসায় স্ত্রী আছে?
– হুম, তাতে কি হয়েছে?
– কিছু বলে না সে?
– আরে না, সে আমাকে খুব বিশ্বাস করে।
– বিশ্বাস হলো একটা ডিমের মতো, সবটা দিয়ে মুড়িয়ে রাখলেও অযত্নে থাকলে ভাঙতে সময় লাগে না, এটা খুব যত্ন করে ধরে রাখতে হয়।
,
,
আমি আর সাঈম সাহেব অফিস ছুটির পর এক সাথেই বাড়ি যাই। তাকে প্রায়ই দেখি রাতের বেলায় পার্টিতে যেতে।
আজও বাড়িতে যাচ্ছি দুজন। একটা দোকানের সামনে দাড়িয়ে চা নিলাম দুজন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তাকে একটু হেসে বললাম,
– আজ আপনি ফ্রি আছেন তো? নাকি আবার কোনো ক্লাবে চলে যাবেন?
– আরে না না, আজ কোথাও যাবো না।
আমি চা টা শেষ করে তাকে বললাম,
– তাহলে চলেন আপনাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো আজ।
– কোথায়?
– চলেন, গেলেই দেখবেন।
চার পাশ টা অন্ধকারে ছেয়ে আছে। একটা রিক্সা নিয়ে দুজন চললাম। একটা দোকানে গিয়ে চার টা মোম বাতি নিলাম। ফুল দোকানের সামনে দাড়িয়ে কিছু ফুল নিলাম।
সাঈম সাহেব একটু হেসে বলে উঠে,
– কি ব্যাপার রিদ সাহেব, এতোগুলো ফুল নিলেন? কারো প্রেমে টেমে পরলেন না তো আবার?
তার কথায় হেসে দিলাম আমি। মাথা ঝাকিয়ে বললাম,
– হুম, আমি প্রায়ই তার প্রেমে পড়ি। নতুন নতুন ভাবে তার প্রেমে পড়ি। যতোবারই তাকে নিয়ে ভাবি ততোবারই প্রেমে পরি তার। তাই তো প্রতিদিন ই ফুল নিয়ে যাি তার জন্য।
– শুধু ফুলি নেন তার জন্য?
– ভালোবাসা টা মনের গভির থেকে হলে ফুলই অনেক বড় কিছু। আবার সবাই না, কারো কাছে ভালোবাসা মানে দামি গিফ্ট, দামি রেস্টুরেন্ট তাও আবার একধম কর্নারের সিট। সুধু ফুলের মাজে ভালোবাসা খুজে পাবে এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।
– তো কতোদিন ধরে চলছে এসব?
– অনেক দিন?
– অনেক দিন মানে কতো দিন? ১০ দিন, ২০ দিন, ১মাস, ৬ মাস, ১ বছর?????
– অনেক দিন,,,
– তো বলেছেন, নাকি এখনো অপ্রকাশিত?
– কিছু কিছু কথা কখনো প্রকাশ করা যায় না, হয়তো কখনো আর প্রকাশিত হবেও না। কারণ সে দেখবেও না, শুনবেও না।
– দুর থেকে ভালোবাসা? অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার,,
– হুম, কিন্তু আপনি তো কাছে রেখেও সঠিক মর্যাদা টা দিতে পারছেন না। সে আপনাকে খুব বিশ্বাস করে, আর তারই সুজুগ নিয়ে, তার মনে একটা একটা পেরেক গেথে দিচ্ছেন আপনি। হয়তো ভাবছের এক সময় সরি বলে সব মিটিয়ে নিবেন? গেথে রাখা পেরেক গুলো তুলে নিবেন। কিন্তু ক্ষত গুলো ঠিকই থেকে যাবে। ভাবি খুব লক্ষি একটা মেয়ে, তাই হয়তো সব কিছু চুপচাপ সহ্য করে নিচ্ছে। দিন শেষে এই মানুষটাই শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার পাশে থাকবে। আর ওই মানুষটাকেই প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন আপনি।
একটা নির্জন জায়গায় চলে এলাম আমরা। রিক্সা থেকে নেমে রাস্তার পাশে একটা নির্জন জায়গায় দাড়ালাম। রাস্তার পাশেি ছোট খাটো একটা কবরস্থান। আমাদের পারিবারিক কবরস্থান এটা।
আরশির কবর টার পাশে দাড়ালাম দুজন। চার কোনায় চারটা মোম বাতি জ্বালিয়ে দিলাম। তার মাথার কাছে ফুল গুলো রেখে আস্তে করে বললাম,
– সরি, একটু দেড়ি হয়ে গেছে আজ।
সাঈম সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সে হয়তো ভাবতে পারেনি এমন একটা জায়গায় তাকে নিয়ে আসবো।
আমি তার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। আরশির কবর টার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ওই যে ওখানেই ঘুমিয়ে আছে আমার ভালোবাসার মানুষ টা, আমার স্ত্রী আরশি। তার জন্যই ফুল নিয়ে আসি প্রতি দিন। বেচে থাকতেও তার জন্য প্রতিদিন ফুল নিয়ে যেতে হতো। নাহলে খুব রাগ করতো সে।
– আপনি বিবাহিত?
– হুম একটা ছোট মেয়েও আছে আমার। একটা এক্সিডেন্ট আমার জীবন থেকে খুব মুল্যবাল রত্নটা কেড়ে নিয়েছে।
– – আপনি প্রতি দিন আসেন এখানে?
– হুম, আর প্রশ্ন করতেন না? ফুল কেনো নেই প্রতি দিন। তাকে দেখতে আসে তাই। এক সময় দিনে পাঁচ-ছয় বার ফোন দিয়ে আমার খোজ খবর নিতে সে। বাট এখন ওই মানুষটা কে আমি শুধু দিনে একবারই দেখতে আসি।
– সব বুঝলাম, তাহলে এই মোমবাতি কেনো?
আমি কবরটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললম,
– সে অন্ধকারকে খুব ভয় পায়। এক সময় হুট করে অন্ধকার হয়ে গেলে, তার দুটু জিনিসের প্রয়োজন হতো, হয়তো আলো আর নয়তো আমাকে। আমি তো আর সারা রাত এখানে থাকতে পারবো না। তাই আলো জ্বালিয়েই দিয়ে যাই।
– এসব আপনার পাগলামি ছারা কিছুই না।
– হুম জানি, সবই আমার পাগলামি। এখন তাকে ফুল, মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলেও কোনো লাভ হবে না। তবুও অবুজ মন টা যে কিছুই বুঝে না।
,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,,
~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।