অন্তরালে_তুমি
পর্ব_2
#প্রত্যাশা
❤
চোখ খুলে আসে পাশে চোখ বুলাচ্ছি..ইস মাথাটা খুব ব্যাথা করছে….আস্থে করে উঠে বসি..ভাবতে পারছি না আকাশ আমার গায়ে হাত তুললো..খুব কষ্ট হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ..কি ভুল ছিল আমার যার জন্য উনি আমার গায়ে হাত তুললো ..
—-রুপা তোমার জ্ঞান ফিরেছে(ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আকাশ বললো)
আমি চুপ করে আছি..উনি এসে আমার পাশে বসেন..
—-কথা বলবে না আমার সাথে ..জানি কষ্ট পেয়েছো ..আসলে রাগের মাথায় মেরেছি ..সরি জান।।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি ..
—-আকাশ আপনি আমাকে ভালোবাসেন না তাই না ..?
—-কি বলছো এইসব কেন বাসবো না খুব ভালোবাসি ।।
আমি তাচ্ছিল্লের হাসি দিয়ে বলি ..
—-আমাকে যদি আপনি ভালোবাসতেন তাহলে কেন আমাকে আপনার বসের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ..সামান্য প্রোমোশনের জন্য ..কি হতো প্রমোশন পেয়ে ..বেশি টাকা পেতেন এই তো ..আকাশ আমাদের টাকার প্রয়োজন নেয় আল্লাহ যা দিয়েছে তাতে ভালো থাকতে পারবো .
.
—-তুমি কি করে বুঝবে কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা প্রয়োজন না ..করোতো খালি ঘরের কয়টা কাজ ..সব কিছুটা আমার টাকাই হয় অফিসে গিয়ে রাত দিন পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করি আমি, তুমি কি বুঝবে টাকার মূল্য ..
—-আকাশ!!আপনি আমাকে টাকার খোটা দিচ্ছেন..
—-না বোঝাচ্ছি তোমায় ..আজকাল টাকা ছাড়া কিচ্ছু করা যায় না ..টাকা আছে তো সব আছে টাকা নাই তো কিছু নাই ..
—-হুম মানছি টাকার প্রয়োজন ..তাই বলে এইভাবে ..আপনি তো আপনার যোগ্যতা দিয়েও প্রমোশনটা নিতে পারেন তা না করে আপনি আমাকে ব্যবহার করছেন
—-উফফ চুপ করতো ..আমার প্রমোমোশন প্রয়োজন ..যোগ্যতা দিয়ে এইরকম পজিশন আমি কোনোদিনই পেতাম না ..তাই আমি তোকে ব্যবহার করেছি দরকার পড়লে আরো করবো ..আমার বউ আমি যা খুশি তাই করবো ..
—-আমার মা বাবা আপনার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে আপনার কাছে আমাকে বিক্রি করে দেয়নি যে আপনি আমার সাথে যা খুশি করবেন..দেখুন আকাশ দয়া করে এসব বন্ধ করুন ..আর নয়তো আমি কিন্তু বাধ্য হবো আপনাকে ডিভোর্স দিতে ..
আমার কথা শুনে উনি হাসতে শুরু করেন .
—-হাহা তুমি কি ভেবেছো তুমি আমাকে ডিভোর্সের ভয় দেখাবে আর আমিও বলবো প্লিজ বউ আমাকে ডিভোর্স দিয়ো না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না .একটা কথা শুনে রাখো আমার না এইসব প্রেম ভালোবাসার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেয় ..আমার তো শুধু টাকা লাগবে..
—-তাহলে বিয়ে কেন করেছেন আমাকে ?
—-বিয়েতো করেছি তোমাকে দেখে না তোমার শরীর দেখে ..আসলে তোমাকে দেখার পর থেকে তোমাকে নিজের করে পাওয়ার বাসনা জাগে ..তাই বিয়েটা করি ..ওহ হে একটা কথা তো বলিনি আমার প্রমোশনটা কিন্তু হয়ে গিয়েছে ..আহ এবার শুধু টাকা আর টাকা ..
কথাটা বলে উনি জোরে হাসতে আরাম্ভ করেন ..আর আমি অসহায়ের মতো উনাকে দেখছি ..বাইরে দিক দিয়ে দেখলে কেউ বুঝবে না এই মানুষটা ভেতর দিয়ে এতটা কুৎসিত ..মনে মনে ঠিক করে নিলাম আর যাই হোক উনার সাথে আমি আর থাকতে পারবো না ..যা হবে পরে দেখা যাবে আগে নিজেকে মুক্ত করতে হবে ..
—-শোনো আমি বেরোচ্ছি ..ফিরতে রাত হবে ..
আমি কোনো উত্তর দেয়নি উনি বেরিয়ে যান ..আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আমার ব্যাগ গুছানো শুরু করি ..তারপর বেরিয়ে যাই ..
রাত১০.০০টা ,,,
আমি আমার বাবার বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি ..ভাবছি নক করে দরজা খুলার পর কি বলবো আম্মু আব্বুকে ..উনারাতো অনেক প্রশ্ন করবেন সত্যি কথাটা ই বলে দিবো.. অনেক কষ্ট পাবে নিশ্চয় ..আম্মুতো ভেঙ্গে পরবে ..নিশ্চয় কেঁদে কেঁদে বলবে আমার মেয়েটার এখন কি হবে ..এত ভেবে কি আর হবে ..একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলিং বেল চাপি ..কিছুক্ষন পর দরজা খুললো . আম্মু দাঁড়িয়ে আছে ..অবাক করার বিষয় হলো আম্মু খুব স্বাভাবিক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে না আমাকে দেখে অবাক হয়েছে ..
—-কি হলো রুপা দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভেতরে আয়..
—-হুম আসছি ..কেমন আছো আম্মু ..?
—-আছি ভালো ..
—-কিছু কি হয়েছে আম্মু ? কেমন যেন লাগছে তোমাকে ..
আম্মু কিছু বলে না আমাকে হাত ধরে বসার রুমে নিয়ে যায় ..সেখানে গিয়ে আমি ভীষণ অবাক হয় ..
—-আদি!!উনি এখানে কি করছেন.?
—-আয় মা আমার কাছে আয়..
—-আব্বু ..কেমন আছো তুমি ?
—-মেয়ের কষ্টে কোন বাবা ভালো থাকে বল ..
—-কি বলছো আব্বু তুমি ..(তাহলে কি আদি আম্মু আব্বুকে সব বলে দিয়েছে )
—-মারে আমাদের তুই ক্ষমা করে দে ..আমরা না বুঝে না শুনে এমন একটা ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিয়েছে যে কিনা টাকার লোভে তোকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতেও দুইবার ভাবেনা ..
—-আব্বু..
—-আমরা সব জানিরে মা ..আদিত্য আমাদের সব কিছু বলেছে ..তুই চিন্তা করিস না মা আমরা সবাই তোর পাশে আছি ..বেশ করেছিস চলে এসে আমি কালকেই একজন ভালো এডভুকেটরের সাথে ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলবো ..
তুই তোর রুমে যা রেস্টনে..
আমি কিছু না বলে রুমে চলে আসি ..ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়ায় ..
—-রূপ!!
—-আপনি ?কিছু বলবেন ..?
—-রূপ আমি খুব খুশি হয়েছি ..তুমি যে চলে এসেছ দেখবে রূপ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ..
—-আপনি আকাশকে প্রমোশনটা কেন দিলেন ..?
—-নাহলে তো ওই জানুয়ারটা তোমার উপর অত্যাচার করতো ..
—-কিন্তু উনিতো এটা ডিজার্ভ করেন না
—-হুম জানি . চিন্তা করো না আমি দিয়েছি আবার আমিই কেড়ে নিবো ..
—-আচ্ছা রুপ আজ যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকতো তাহলে কি করতে তুমি ..
—-কি করতাম জানেন ..মেরে ফেলতাম ..আমি যখন আকাশকে বুঝিয়ে পারেনি তখন মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম মরে যাবো তবুও আমাকে ছুতে দিবো না তাই একটা ছোট ছুরি কোমরে গুঁজে নিয়েছিলাম ..তাকে না মারতে পারলেও নিজের গায়ে ঠিকই মেরে দিতাম ..সম্মানের জন্য মরতেও রাজি ..
—-আর আমি যদি কিছু করতে চাইতাম তাহলে ?
—-আপনাকেও ছার দিতাম না ..
—-তাই নাকি ..ভাগ্য ভালো বেঁচে গিয়েছি .
—-সত্যি বলছি আজ যদি এমন কিছু হতো না তাহলে শেষ করে দিতাম নিজেকে . .
—-তারপরও তো ওর সাথে থাকতে চেয়েছিলে ..
—-ভেবেছিলাম হয়তোবা বুঝবে ..কিন্তু না ..উনি খুব খারাপ খুব ..পারবো না আমি,, উনার কথা মনে এলেই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে ..আমি খুব তাড়াতাড়ি করে ডিভোর্স দিতে চাই উনাকে ..
—-তুমি কোনো চিন্তা করো না ..ডিভোর্স খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ..
—-আচ্ছা আপনি কেন এখানে এসেছেন ?
—-তুমি আমার কথা না শুননি ভাবলাম তোমার মা বাবাকে জানাতে হবে এছাড়া আর কোনো উপায় নেয় ..জানতো আন্টি সব শুনার পর অনেক কাঁদে ..পরে আমি আর আঙ্কেল মিলে উনাকে বুঝাই যে এই সময় ভেঙ্গে পড়লে হবে না সবাই মিলে একসাথে লড়াই করতে হবে ..
—-থ্যাংকস
—-থ্যাংকস কেন .?
—-চিন্তায় ছিলাম কিভাবে সব কিছু আম্মু আব্বুকে বলবো .আপনি বলে দিয়ে আমাকে চিন্তা মুক্ত করেছেন তাই ধন্যবাদ ..
—-ইট’স ওকে ..আমি তাহলে আজ আসি ..কাল সকাল সকাল তৈরী থেকো এডভুকেটরের সাথে দেখা করতে যেতে হবে ..
—-ঠিক আছে ..
—-হুম ভালো থেকো বাই।।
আদি চলে গেলেন ..আমি দাঁড়িয়ে আকাশটা দেখছি ..তার মাঝেই আমার ফোনটা বেজে উঠলো ..তাকিয়ে দেখি আকাশ কল দিচ্ছে..কলটা কেটে দেই..তারপর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি কাল থেকে আমার আসল লড়াই শুরু ..আল্লাহ তুমি আমার সহায় থেকো ..
চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)