The_Magic_Of_Love #পর্বঃ০১

0
3229

#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ০১
#writer :#মারশিয়া_জাহান_মেঘ।

নীল রঙের শাড়ী মাথায় হিজাব পড়া একটা মেয়েকে দেখে হোট করে গাড়ি থামিয়ে দেয় রিত্তিক খান্না। গাড়ির জানালার কাঁচটা নামিয়ে দেখার চেষ্টা করছে নীল পরীটাকে। ব্যর্থ হয়ে গাড়ি থেকে নেমে…নীল শাড়ী পড়া মেয়েটার পিছু পিছু হাঁটছে সে। রিত্তিক এমন ভাবে দৌঁড় দিয়েছে যেনো মনে হয় জগিং করছে সে। রিত্তিক একেবারে…প্রাপ্তির সামনে এসে দাড়ায়।

হোট করে একটা ছেলে সামনে এসে দাঁড়াতেই কিছুটা চমকে উঠে প্রাপ্তি৷ ছলছল চোখে তাকিয়ে দেখছে সামনে থাকা ছেলেটিকে। কালো টিশার্ট এর উপর “সাদা ব্লেজারের সাথে সফট সাদা জিন্স প্যান্ট। হাতে একটা কালো ঘড়ি। পায়ে শো”,চুলগুলো হালকা বাদামি..চোখগুলো কিছুটা পিনাট কালার বললেই চলে।

রিত্তিক প্রাপ্তির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুখে একরাশ মুচকি হাসি টেনে বললো, হাই আমি রিত্তিক খান্না। আপনি? প্রাপ্তি এমনভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো ওর এইসবে কোনো ইন্টারেস্টই নেই। প্রাপ্তি রিত্তিক কে এড়িয়ে আবার হাঁটতে লাগলো। রিত্তিক এইবার কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লো এইটা ভেবে..যে মেয়েটা তাকে পাত্তাই দিলোনা। হঠাৎ রিত্তিক অবাক হয়ে গেলো..নিজেই নিজের কাজে। যে রিত্তিক খান্নার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল সেই রিত্তিক খান্না একটা মেয়ের পিছু নিয়েছিলো!

প্রাপ্তি বাসায় ফিরতেই,,রান্নাঘরে একবার চেয়ে বললো,মা…খাবার দিওনা আমি খাবোনা এখন। এইটা বলেই..প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেলো। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ফাতেমা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, মেয়েটা যে আর কতোদিক দিয়ে সামলাবে…

রিত্তিক বাসায় ফিরে সাওয়ার নিয়ে,নিচে এসে রান্নাঘরে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা..কি করো? ছেলের দিকে এক পলক তাকিয়ে মিসেস ইয়ামিনি খান্না অভিমানি সুরে বললো,” দেখছিসইতো রান্না করছি। আর তাছাড়া লন্ডন থেকে ফিরে এসে কয়বারই বা আমার সাথে একটু বসে কথা বলেছিস? মায়ের কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান বুঝতে পেরে রিত্তিক মায়ের পিছু পিছু টেবিলে গিয়ে বসে বললো,,মা…প্লিজ তুমি রাগ করে থেকোনা। তুমিতো জানোই বিসন্যান্স নিয়ে আমি কতো ব্যস্ত থাকি। মিসেস ইয়ামিনি খাবার প্লেটগুলো উল্টাতে উল্টাতে বললো, ব্যস্ততো সবাই থাকে..তাই বলে মায়ের জন্য একটু সময়ও নেই তোর? রিত্তিক এতক্ষণে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে যে এখন তার মায়ের সাথে কথা বলে পেরে উঠবেনা সে। তাই চুপসে গেলো।

দরজায় ঠকঠক আওয়াজের কারনে প্রাপ্তি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। দরজার অপরপ্রান্ত থেকে..ফাতেমা বেগম উত্তেজিত কন্ঠে বলছে,”কিরে মা? তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? দরজা খুল মা প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলতেই ফাতেমা বেগম কপালে গলায় হাত রেখে বললো,কি হয়েছে মা? প্রাপ্তি মুচকি হেসে বললো,কিছু হয়নিতো মা। আসলে আজকে দোকানে একটু বেশি ধকল গেছে তাই ক্লান্ত ছিলাম। ফাতেমা বেগম প্রাপ্তির দিকে এক ধ্যানে চেয়ে বললো,”সত্যি বলছিসতো? প্রাপ্তি আমতা আমতা করে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো, হুম সত্যি মা। আমি তোমাকে মিথ্যেই বা বলতে যাবো কেনো বলোতো? যাও যাও টেবিলে খাবার রাখো আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে [ ফাতেমা বেগমের পিঠে ধাক্কা দিতে দিতে ]

ফাতেমা বেগম সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর ভাবছে,তুই যতোই আমার কাছ থেকে কথা লোকাসনা কেনো,আমিতো ঠিকি জানিরে মা তুই কান্না করেছিস।

বারান্দার গ্রিলে ধরে, এক মনে চাঁদ দেখছে প্রাপ্তি। চোখে অশ্রু। চাঁদের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো,
“চাঁদ ছাড়া কি আর তারা শোভা পায়!

রিত্তিকের মনে বার বার উঁকি দিচ্ছে নীল শাড়ী পরিহিত সেই নীল পরীটাকে। কি সুন্দর তার চোখ। হরিণীর মতো মায়াবী। কি সুন্দর তার মুখমন্ডল যেনো হুর পরী। রিত্তিক আর ভাবতে পারছেনা। রিত্তিক মনে মনে বলছে..কে এই নীল পরী? হবে কি তার সাথে আবার দেখা! পাবো কি দেখতে তার মায়াবী হরিণী চোখ।

সকাল ১০ঃ২০ বাজে। মিসেস ইয়ামিনি বার বার আয়মানকে পাঠাচ্ছে তার ভাইকে ডাকতে কিন্তু রিত্তিক এরতো কোনো হেলদোলই নেই৷

বৃষ্টি বৃষ্টি বলতে বলতে লাফিয়ে শুয়া থেকে বসে উঠে রিত্তিক। রিত্তিক মাথার উপরে তাকিয়ে বললো,বৃষ্টি পড়বে কিভাবে? আমিতো রুমে…হঠাৎ খিলখিল হাসির শব্দে পাশ ফিরে তাকায় রিত্তিক। রাগী লুক নিয়ে রিত্তিক আয়মানের দিকে তাকায়। আয়মান ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”কখন থেকে মা আমাকে পাঠিয়েছে ডেকে তোলার জন্য..সেই সকাল থেকে ডাকছি কোনো পাত্তায় নেই। হোস্টেল থেকে আমাকে কে আনার কথা ছিলো? [ কলম ঘুরাতে ঘুরাতে কথাটা বললো আয়মান ] রিত্তিক আমতা আমতা করে বললো, না মানে ইয়ে,, সরি বোন ভুল হয়ে গেছে। আয়মান কোনো উত্তর না দিয়ে রাগে কটমট করতে করতে চলে গেলো রিত্তিক এর রুম থেকে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সকালের ব্রেকফাস্ট রেডি করছে প্রাপ্তি৷ ফাতেমা বেগমকে কঠোর ভাবে বলেছেন..রান্নাঘরে যেনো না আসেন তিনি। ফাতেমা বেগম একনাঘারে সোফায় বসে বিরক্তি নিয়ে বললেন, কিরে মা হলো? তোরতো দেরি হয়ে যাচ্ছে। নাস্তা হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে প্রাপ্তি বললো,”না মা আজ আমার লেইট হলেও সমস্যা নেয় গতকাল মালিক কে বলেছিলাম আজ যেতে একটু লেইট হবে। ফাতেমা বেগম সোফা থেকে উঠে টেবিলে বসে এক ধ্যানে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বললেন,”আবার জীবনটাকে নিয়ে একটু ভাবা যায়না? প্রাপ্তি প্লেটে রুটি তুলতে গিয়ে হাতটা থমকে ফেললো আর অস্ফুট স্বরে বললো,”মা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও আমার বের হতে হবে।

হাতে চকলেট আইসক্রিম নিয়ে বোনের সামনে চুপসে দাড়িয়ে আছে রিত্তিক। হাতের চকলেট আইসক্রিম গুলো বোনের সামনে রেখে দুই কানে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,” সরি বোন আমার রাগ করে থাকিসনা আর। আচ্ছা আর এমন ভুল করবোনা প্রমিস। আয়মান এইবার গাল ফুলিয়ে বললো, তুমি আর কতো প্রমিস করবা ভাইয়া? বার বার প্রমিস করে বার বার কথা ভেঙে ফেলো। রিত্তিক এইবার আয়মানের দুই গাল টেনে বললো,”আচ্ছা বাবা সরি আর প্রমিস ভাঙবোনা..এইটা বলেই রিত্তিক আয়মানকে জড়িয়ে ধরলো।

রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছে প্রাপ্তি। এক কাঁধে সাইড ব্যাগটা এক হাতে ধরে রেখেছে। বিষন্ন মনে ভাবছে তার অতীতের কথন। এমনটা তার সাথে না হলেও পারতো এইটা ভাবতেই এক আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।

রিত্তিক গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে অফিসের উদ্দেশ্যে। তার পাশে বসে আছে আয়মান। অফিসে যাওয়ার পথে আয়মানকে কলেজ ছেড়ে দিবে রিত্তিক। শুধু আজ নয় আজ থেকে রোজ আয়মানকে..কলেজে দিয়ে অফিসে যেতে হবে রিত্তিক কে। আয়মান হোস্টেল ছেড়ে একেবারের জন্য বাড়ি চলে এসেছে। বাড়ি থেকেই স্টাডি করবে সে। রিত্তিক আয়মানকে কলেজ ছেড়ে দিয়ে সোজা অফিসে চলে যায়।

আজ ফুলের দোকানে কাস্টমার বেশি। কাস্টমারকে হ্যান্ডেল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে প্রাপ্তি৷ আজ যেনো কাস্টমারের আনাগোনা কিছুতেই কমছেনা দোকানের। প্রাপ্তি এই গরমের বিষন্ন ছোঁয়ায় ঘেমে একাকার। দোকানের ভীর কিছুটা কমতেই প্রাপ্তি দোকানের মালিকের কাছে যায়।

দোকানের এক কোনে ক্যাশের পাশে বসে পান চিবুচ্ছে মতি মিয়া। বিশাল বড় এই ফুলের দোকান তার তাকে দেখে কেউ বুঝবার উপায় পর্যন্ত নেই। বয়স ৪০ এর উপরে হবে। মধ্যবয়সী লোকটি..প্রাপ্তিকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন। তার মতে,প্রাপ্তির মতো সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিই পারে এমন সুন্দর একটা দোকান ম্যানেজ করতে। হঠাৎ কর্ণিশে,প্রাপ্তিকে দেখে বললো, কিতাগো মা কিছু লাগবো নাকিতা? প্রাপ্তি অনেকটা অসস্তি নিয়ে বললো, আসলে চাচা এই মাসের মাইনেটা যদি একটু আগে দিয়ে দিতেন আমার জন্য কিছুটা উপকার হতো। প্রাপ্তির কথাটা বলতে দেরি হয়েছে..কিন্তু মতি মিয়া ক্যাশের ড্রফটা খুলে এই মাসের মাইনেটা দিতে দেরি হয়নি। মতি মিয়া প্রাপ্তির হাতে টাকাটা দিয়ে বললো,এই লও মা..তোমার এই মাসের বেতন৷ প্রাপ্তি বিনিময়ে এক মায়াবী হাসির রেখা টানলো।

গাড়িতে উঠে হাতের ঘড়িটা দেখতে দেখতে রিত্তিক বললো,” আজ একটু বেশি লেইট হয়ে গেছে। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে..হঠাৎ গাড়ি দাড় করিয়ে থমকে তাকালো রাস্তার অপরপ্রান্তের একটা হাসি মাখা মেয়ের উপর। হরিণী তার চোখ। মুখে মায়াবী সে হাসি। কি নিষ্পাপ তার কথা বলার ভঙ্গি।

ওইদিনের সেই ছেলেটাকে এই দোকানে দেখে এক পলক তাকালো প্রাপ্তি। রিত্তিক মনে মনে ভাবছে..আজব মেয়েতো..হঠাৎ আমাকে দেখে কোনো রিয়েক্টই করলোনা! প্রাপ্তি কিছুটা মুচকি হেসে বললো, স্যার আপনার কিছু লাগবে? রিত্তিক আমতা আমতা করে বললো,না মানে..বেগুন ফুল আছে? রিত্তিক এর কথা শুনে…প্রাপ্তি এমন ভাবে তাকিয়েছে যেনো এক্ষুনি চোখ দুটি কোটির ভেদ করে বেরিয়ে আসবেে। রিত্তিক নিজের কথায় নিজেই বোকা বনে গেলো। বেগুন ফুল আবার দোকানে পাওয়া যায় নাকি! রিত্তিক আবার আমতা আমতা করে বললো, না মানে বেলিফুল হবে?
প্রাপ্তি মুচকি হেসে বললো,Sure Sir.

অতঃপর রিত্তিক ফুলের গুচ্ছটা নিয়ে ফুলের টাকা প্যামেন্ট করে একরকম দৌড়ে চলে আসে দোকান থেকে।

রিত্তিকের এইসব কান্ড শুনে হাহা করে আসছে রিত্তিকের পাশে বসে থাকা হৃদ। রিত্তিক চোখ রাঙাতেই চুপসে যায় হৃদ। হাসি থামানোর পর আবার ফিক করে হেসে ফেলে হৃদ। রিত্তিক দাঁতে দাঁত চেপে রাগে কটমট করতে করতে বললো, তুই হাসি থামাবি? নাকি মেঘকে কল দিয়ে বলবো..ওই সাথির কথা..। মেঘের কথা শুনতেই চুপসে যায় হৃদ। অসহায় ফেইস নিয়ে তাকায় রিত্তিক এর দিকে। আর হৃদের এমন চাহনি দেখে হাহাহিহিহুহু করে হেসে ফেলে রিত্তিক।

হৃদ হলো রিত্তিক এর বেষ্ট ফ্রেন্ড। আর মেঘ হলো হৃদের মেয়ে বেষ্টু। সাথি হৃদের কাজিন। সাথিকে একদমি সহ্য করতে পারেনা মেঘ। সবসময় সাথি নামক ব্যক্তিটির জন্য ঝগড়া হয় দুজনের মাঝে। মেঘ হৃদের প্রতি অমায়িক তবে হৃদের সাথে অন্য মেয়ে মানুষ! এই ক্ষেত্রে সে পুরাই অনল।

প্রাপ্তি শুয়ে শুয়ে ভাবছে রিত্তিকের কথা। তার ভাবনার মতে রিত্তিক তাকে ফলো করতে করতে দোকান অব্দি এসেছে। কিন্তু প্রাপ্তিতো আর জানেনা যে রিত্তিকের সাথে তার দেখা সম্পূর্ণ কাকতালীয়।

রিত্তিক বিছানা থেকে উঠে বেলকনির গ্রিলে দাঁড়িয়ে ভাবছে সেই নীল পরীর কথা। নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করছে রিত্তিক..কে এই মেয়ে? তবে কি! এই সেই মেয়ে যে হবে রিত্তিক খান্নার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। এই কি সে মেয়ে যে আমার জীবনের নতুন অধ্যায় গড়ে তোলবে? কেনো বার বার তার মায়াবী মুখের প্রতিচ্ছায়া আমাকে আহত করছে? এইসব ভাবতেই রিত্তিকের ঠোঁটের কর্ণিশে ফুটে উঠে এক হাসির রেখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here