The_magic_Of_love #পর্বঃ০৬,০৭

0
1219

#The_magic_Of_love
#পর্বঃ০৬,০৭
#writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
০৬

আধাঁর যেনো চাইছে সময় থমকে যাক। রিত্তিক যেনো বার বার চাইছে তার শোনা কথাটা ভুল হয়ে যাক। নম্রতা বললো,”মানে আমার আপু প্রাপ্তির শাশুরী মা ওনি। রিত্তিক যেনো আর দাড়াতে পারছেনা ওই জায়গায়। রিত্তিক আয়মানকে গাড়ির চাবি দিয়ে চলে যায় ওইখান থেকে।

প্রাপ্তির অসহ্যকর লাগছে। লোকটা এইভাবে অনুষ্ঠান থেকে চলে গেলো! আমার বিয়ে হয়েছে হয়তো ওনি জানতেন না৷ তাই হয়তো এইভাবে চলে গেছে.. এইসব ভাবতে ভাবতে গোপন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রাপ্তি। আপু…এইখানে আয় কেক কাটবো..নম্রতার ডাকে চোখের পানিগুলো মুছে তাড়াতাড়ি নন্রতার কাছে যায় প্রাপ্তি।

রাস্তায় আনমনে ড্রিংক করে হেলদোলে হাঁটছে রিত্তিক। চোখের কোনে বৃষ্টির বর্ষণ। এই বুঝি তা গড়িয়ে পড়বে। হেলতে দোলতে রাস্তায় বসে পড়ে রিত্তিক। কান্না করে চিৎকার করে বলছে, “হে আল্লাহ এমনটাতো আমি চায়নি…এমনটাতো আমি চায়নি খোদা কেনো এমনটা হলো আমার সাথে? কেনো আল্লাহ কেনো? পুরো পৃথিবীতো প্রার্থনায় ছিলোনা। শুধু চেয়েছিলাম নীল পরীটাকে। তাহলে কেনো সে আমার হওয়ার আগেই অন্যের বলো অলমাইটি বলো..। রিত্তিকের আর্তনাদ এই শহরের প্রতিটি দেয়ালে প্রতিধ্বনিতো হচ্ছে। রাতের চাঁদ, তারা.. প্রকৃতি সব যেনো তার সাক্ষী। হঠাৎ একটা গাড়ি ছিটকে দিলো রিত্তিককে। রক্তে ভিজে গেছে রাস্তা। দু-চোখ এই বুঝি নিদ্রিত হয়ে যাবে..থমকে গেছে আর্তনাদ।

হৃদের ফোনে মেঘের কল আসতেই কল ধরে নরম কন্ঠে বললো,হ্যালো।
মেঘঃ কেমন আছেন? মেঘের কন্ঠে অভিমান রাগ সুস্পষ্ট। অভিমান করলে মেঘ তুমি নয় আপনিতে চলে যায় এইটাই যেনো তার নিয়ম। হৃদ আস্তে আস্তে বললো, কিউটিপাই আমার অনেক জ্বর। মেঘ বললো, কি হয়েছে হৃদ? তুমি ঠিক আছোতো? এইবার যেনো মেঘের কন্ঠে কিছুটা উত্তেজনা দেখা গেলো। হৃদ মনে মনে ভাবছে ” যাক রিত্তিকের দেওয়া আইডিয়াটা কাজ করেছে।

মিসেস ইয়ামিনি চিন্তিতো মুখে সোফায় বসে আছে। রওনক এইমাত্র বাইরে থেকে বাড়ি এসেছে। আয়মান কান্না করছে।হৃদ বার বার ফোনে কাউকে কল দিচ্ছে। ওলফা বিরক্তি নিয়ে মোবাইল টিপছে। রওনক মায়ের কাছে গিয়ে বললো,’কি হয়েছে মা? মিসেস ইয়ামিনি কান্না করতে করতে বললেন,,এতো রাত হয়ে গেলো রিত্তিক বাসায় ফিরছেনা। আমার ছেলেটাতো এতো রাত অব্দি কোথাও থাকেনা। রওনক বললো, মানে? ভাইয়া কোথায় গিয়েছে? মিসেস ইয়ামিনি কিছু বলার আগেই আয়মান চোখের পানিটা এক হাত দিয়ে মুছে নাকটা টেনে বললো, ভাইয়া আমার সাথে আমার বান্ধবীর জন্মদিনে গিয়েছিলো। এরপর কি যেনো একটা হলো ভাইয়া হঠাৎ করেই আমার হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বেরিয়ে গেলো ওইখান থেকে..এইটা বলেই আবার কেঁদে ফেললো আয়মান। রিত্তিক কল করেছে….হঠাৎ হৃদের মুখ থেকে এই কথা শুনে সবাই হৃদের দিকে তাকালো৷ মিসেস ইয়ামিনি চোখের পানি মুছে বললে,তাড়াতাড়ি ধর ফোনটা। হৃদ ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু বলতেই হাত থেকে ফোনটা ফ্লোরে পড়ে যায়।

অপারেশন থিয়েটারে রিত্তিক। হসপিটালের এক কোনে মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিতো হয়ে দাড়িয়ে আছে হৃদ আর রওনক। আয়মান আর মিসেস ইয়ামিনি থিয়েটারের বাইরে ছোট একটা বেঞ্চে বসে কান্না করছে। ওলফা কান্না করে তার বাবাকে কল দিয়ে বলছে, ডেড রিত্তিকের এক্সিডেন্ট হয়েছে। আরো অনেক কথায় বলছে। রওনকের এই ওলফাকে বেশ বিরক্ত লাগছে। হঠাৎ ডক্টরকে বের হতে দেখে হৃদ আর রওনক ছোটে গিয়ে বলে, ডক্টর পেশেন্টের কি অবস্থা এখন? ডক্টর তখন বললো,He is now safe. তবে সেন্স ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে।

রওনকঃ ডক্টর আমরা কি ভেতরে গিয়ে পেশেন্টকে দেখতে পারি?
ডক্টরঃ হুম তবে সবাই নয়। যেকোনো একজন গিয়ে দেখে আসতেই পারেন..এইটা বলেই ডক্টর চলে গেলেন।

হৃদ রিত্তিকের হাত ধরে কান্না করে বলছে, তোর কিভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে রিত্তিক? হৃদ রিত্তিকের ফ্রেন্ড হলেও ভাইয়ের থেকে কোনো দিক দিয়ে কম নয়। রিত্তিক ধীরে ধীরে চোখ খুললো। তারপর মিনমিনিয়ে বললো, সে আমার নয় হৃদ সে আমার নয়। রিত্তিক বুঝে উঠতে পারছেনা। সে আমার নয় মানেটা কি!

নাহ এইবার আমাকেই কিছু একটা করতে হবে..এইটা ভেবে হৃদ গেলো আয়মানের রুমে। আগে ওই অনুষ্ঠানে কি হয়েছে তা জানতে হবে। তারপর যা করার করতে হবে।

আয়মান নিরবভাবে বসে বই ঘাটছিলো। তখনি হৃদ গিয়ে পৌঁছায় আয়মানের রুমে।

আয়মানঃ আরে হৃদ ভাই! এসো এসো ভেতরে এসো। হৃদ আয়মানের বিছানায় বসে কি করছিস আয়মান? মন খারাপ? আয়মান তখন মনটা খারাপ করে বললো, আজ আমার জন্যই এইসব হয়েছে হৃদ ভাই। না আমি অনুষ্ঠানে যেতাম আর না ভাইয়ার এমন হতো। হৃদ আয়মানের চুলগুলো বুলিয়ে বললো,দূর পাগলী মেয়ে এইখানে তোর কোনো দোষ নেই। বর বিপদতো বলে কয়ে আসেনা। আচ্ছা আয়মান একটা কথা বলতো, ওইখানে যাওয়ার কি কিছু হয়েছিলো? আয়মান ভেবে বললো,কই নাতো কিছুতো তেমন হয়নি। কেনো বলোতো? হৃদ বললো, সে না হয় পরে বলবো। আগে বলতো ওইখানে যাওয়ার পর কি কি হয়েছিলো। আয়মান সব খুলে বললো। এরপর হৃদ বললো কিহ! আচ্ছা তোর বান্ধবীর বোনের পিক আছে? আয়মান তখন বললো,দাঁড়াও দেখছি ফোনে হয়তো থাকতে পারে। আয়মান এরপর হাতে ফোন নিয়ে অনুষ্ঠানের সব পিক দেখালো। একটা পিকে প্রাপ্তিকে দেখে চমকে উঠে হৃদ। হৃদ চমকে বলে,এই মেয়েটা তোর ফ্রেন্ডের বোন! আয়মান বললো,হুম। নাহ..এই মেয়েটার সাথে সামনাসামনি আমাকেই কথা বলতে হবে”মনে মনে ভাবলো হৃদ।

চলবে……

#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ০৭
#writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

সকালের পাখির কোলাহল যেনো প্রকৃতির একটা নিয়ম। সকালের মেঘলা আকাশ সৌন্দর্যের রাশ কেবল বাড়িয়েই দিচ্ছে।

হৃদ হসপিটালে যাচ্ছে রিত্তিককে দেখতে। রওনক এর তুমুল বেগে জ্বর উঠেছে তাই সে কাঁথা দিয়ে শুয়ে আছে। বাইরের আকাশ মেঘে ঢাকা হয়তো বৃষ্টি হবে। হৃদ গিয়ে দেখে এক মনে চেয়ে আছে রিত্তিক। হৃদ গিয়ে হেসে বললো, এখন কেমন আছিস রিত্তিক? রিত্তিক কোনো কথা বলেনা। হৃদ আবার বললো,কিরে বল এখন কেমন আছিস? রিত্তিক এইবার হৃদের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো, দেখছিস ইতো কেমন আছি। হৃদ রিত্তিকের হাত ধরে বললো, রিত্তিক। তুই হলি রিত্তিক খান্না… যার পেছনে হাজার হাজার মেয়ে পাগল হয়ে বসে আছে৷ তুই কিনা একটা মেয়ের জন্য এমন করবি! রিত্তিক চোয়াল শক্ত করে হৃদের দিকে তাকায়৷ চুপসে যায় হৃদ।

প্রাপ্তি ফাতেমা বেগমকে চেকাপ করানোর জন্য হসপিটালে প্রতি মাসে আসতে হয়। আজও এসেছে সে। ফাতেমা বেগম বললেন,ঠিকিতো আছি? কি এমন দরকার বলতো? এতোগুলা টাকা নষ্ট করে… ফাতেমা বেগমকে আর কিছু বলতে না দিয়ে প্রাপ্তি গাম্ভীর্য কন্ঠে বললো, মা তুমি কি চুপ করবে? আসো এইখানে চুপচাপ বসো দেখি ( বেঞ্চে বসিয়ে) আমি এখনি আসছি..দেখি ডক্টর বোস এসেছে কিনা।

নিজের সামনে প্রাপ্তিকে দেখে হচকিয়ে উঠে হৃদ। চোখেমুখে কিছু বলার তীব্র ইচ্ছে। হৃদ ডক্টর মেহেরাব চৌধুরীর থেকে জানতে এসেছিলো রিত্তিককে কখন রিলিজ দেওয়া হবে..কথা শেষে রিত্তিকের কেবিনে যেতেই দেখতে পেলো প্রাপ্তিকে।

প্রাপ্তি হৃদকে দেখে মনে মনেই ভাবছে.. লোকটা কোথায় যেনো একটা দেখেছি! হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ওইদিনতো ওই লোকটার সাথে ছিলো এই ছেলেটা। এইখানে কি করছে সে?

হৃদ প্রাপ্তির একদম সামনে এসে সকল অস্বস্তি কাটিয়ে বললো, মিস প্রাপ্তি আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। প্রাপ্তি মনে মনে ভাবলো এই লোকটস আবার কি বলবে আমার সাথে? প্রাপ্তির ভাবনার রেশ কাটিয়ে প্রাপ্তি বললো, “দেখুন আমার এতো সময় নেই মায়ের চেকাপ করতে হবে সরুন। হৃদ এর কোনো হেলদেল নেই সে শপথ নিয়েছে প্রাপ্তির সাথে কথা না বলে এক পা ও পিছু হটবেনা। হৃদ আবার বললো, দেখুন মিস প্রাপ্তি আমার সত্যিই আপনার সাথে কিছু কথা আছে। প্রাপ্তি শুনতে নারাজ। অবশেষে প্রাপ্তির হাত শক্ত করে ধরে রিত্তিকের কেবিনের সামনে নিয়ে যায় হৃদ। প্রাপ্তি বার বার বলছে..ওফ ছাড়ুন। অসভ্যের মতো আমার হাত ধরেছেন কে…আর কিছু বলার আগেই সামনে বেডে থাকা সুদর্শন যুবকটির ঘুমন্ত মুখের দিকে দৃষ্টি যায় প্রাপ্তির। চুপসে যায় সে। বুকটা কেঁপে উঠছে এক অজানা কারণে। হৃদের দিকে তাকাতেই হৃদ হাত ছেড়ে দিলো প্রাপ্তির। প্রাপ্তি বিস্ময় নিয়ে এখনো চেয়ে আছে রিত্তিকের দিকে। প্রাপ্তি নরম কন্ঠে বললো, কি হয়েছে ওনার? হৃদ একটু হেসে কান্না চোখে বললো,বেশি কিছুনা একতরফা ভালোবাসার ফল। আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চায় মিস প্রাপ্তি। প্রাপ্তি নিরব স্বরে বললো, ঠিক আছে তবে এখন আমার পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়। আজ বিকেলে ভিমোহিত পার্কে আসিয়েন তখন কথা বলবো..এইটা বলে প্রাপ্তি চলে যেতেই হৃদ দূর থেকে বলে উঠলো, কয়টায়? প্রাপ্তি থেমে গেলো। পিছন না ফিরেই বললো, বিকেল ৫ টায়।

প্রাপ্তি খেয়াল করলো তার চোখে পানি৷ প্রাপ্তি হাতের কোনে একটু চোখের পানি নিয়ে বললো, আজব আমি কাঁদছি কেনো? ওই লোকটাতো কেউ না আমার।

ওলফা লন্ডনে কল দিতেই ওপাশ থেকে মিস্টার শেখ বললেন,, “What is your condition Dear?
ওলফা বিরক্ত নিয়ে বললো, একদম ভালোনা ডেড। তুমি কখন আসবে বাংলাদেশে?
মিস্টার শেখঃ খুব শিঘ্রী আসবো সুইটহার্ট। ওলফা হেসে বললো, I’m waiting for you Dad. এইটা বলেই কল কেটে দিলো ওলফা। আর হাতে ফোন নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলছে, খুব তাড়াতাড়ি তুমি আমার ফাঁদে ধরা দিবে মিস্টার রিত্তিক খান্না।

মিস্টার শেখ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, আমার স্বার্থ ফুরালে, আমি তোমাকেও তোমার আসল জায়গায় পৌঁছে দিবো সুইটহার্ট হাহাহা।

অপারেশন থিয়েটার থেকে মুখের মাস্ক খুলতে খুলতে বের হলেন মালেশিয়ার একজন নামকরা ডক্টর আর্জিব রাইদি। একজন হুড়মুড় খেয়ে বললেন, ডক্টর আমার ওয়াইফ আর বেবি কেমন আছে? আর্জিব রাইদি এক প্রাপ্তির হাসি দিয়ে বললেন, আপনার মেয়ে বাবু হয়েছে। মা ও বেবি দুজনেই সুস্থ এখন।

ক্লান্তঘানি দেহ একাকী ফ্লাটে যেনো কেমন মৃত মৃত মনে হয় আর্জিব রাইদির কাছে। সাদা এপ্রোনটা হাত থেকে চেয়ারের মাথায় রেখে কপালে এক হাত কপালে দিয়ে ঝিম মেরে সোফায় আধশোয়া হয়ে আছেন তিনি। মনে মনেই বলে উঠলেন, “সন্তান! আমারোতো বড় ইচ্ছে করে আমার তিন ছেলেমেয়েকে দেখতে। আমার রিত্তিক কি আমার মতে দেখতে হয়েছে? আর রওনক! সে কি এখনো বাবা বাবা বলে কেঁদে উঠে? আচ্ছা অবশেষে কি হয়েছিলো ইয়ামিনির গর্ভে? ছেলে না মেয়ে? এইসব ভাবতেই গোপন দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here