Love_with_vampire,০২,০৩

0
786

#Love_with_vampire,০২,০৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০2

নিচে দেখলো অনুভবের সারা শরীর মানুষের মতো,কিন্তু মাথার যায়গায় একটা হিংস্র পশুর মাথা।পশুরা যেমন দারিয়ে থাকে ঠিক তেমনি ভাবে হাত,পা মাটিতে স্পর্শ করে দারিয়ে আছে অনুভব।হাতের নখ গুলি চকচক করছে।

এই দৃশ্য দেখে অহনা নিজেকে সামলাতে পারলো না।প্রকট একটা চিৎকার করে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।এরপর আর কিছু মনে নেই।

জানালা অতিক্রম করে সূর্যের আলো অহনার ঘুমন্ত মুখের ওপর পড়ছে।অনুভব বিছানায় উবু হয়ে বসে অহনার পানে একপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। অহনা টিপটিপ করে চোখ মেলতেই দেখলো অনুভব উবু হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।অহনা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।হঠাৎ মনে পড়লো কাল রাতের সেই ভয়ংকর দৃশ্যটার কথা।

আঁতকে উঠে বিছানা থেকে উঠে বসলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো

” আ..আ..আপনি মানুষ না, আপনি মানুষ না ”

” কিসব বলছো তুমি অহনা? মানুষ না মানে? ”

” হ্যা,আপনি মানুষ না,আমি নিজ চোক্ষে দেখেছি আপনি একটা পশুতে পরিণত হচ্ছিলেন”

বলেই বিছানা থেকে নেমে দেয়ালের কোনে চলে গেলো অহনা।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো

” আমার কাছে আসবেন না,আমি বাড়িতে যাবো।কাছে আসবেন না আমার ”

” অহনা শান্ত হও,তুমি ভুল দেখেছো, কোথাও ভুল হচ্ছে, আমার কথাটা শুনো? “বলতে বলতে অহনার কাছে এগুতেই অহনা আশেপাশে থাকাতে লাগলো,পাশের টেবিলেই ফল রাখার একটা ছুড়ি নজরে পড়লে।ছুড়িটা হাতে নিয়ে নিজের গলায় স্পর্শ করে বললো

” আমার কাছে আসবেন না,আসলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দিবো,একদম কাছে আসবেন না ”

” অহনা কি করছো তুমি? পাগল হয়ে গেছো নাকি? ছুড়িটা রাখো,গলায় লেগে যাবে ”

হঠাৎ অহনা লক্ষ্য করলো সে হাত নড়াতে পারছে না।এতো চেষ্টা করেও শুধু হাত নয়!সারা শরীর ও এখন নড়াতে পারছে না।যেনো পাথরের মূর্তিতে রুপান্তর হয়ে গেছে।

অহনা দেখলো অনুভব একদম ওর কাছে এসেছে। অহনা ভয়ে ঠোক গিলছে।অনুভব অহনার একদম কাছে এসে শান্ত স্বরে বললো

” অহনা, আমার চোখের দিকে তাকাও ”

অহনা দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে রইলো।অনুভব গম্ভীর স্বরে কিছুটা ধমক দিয়ে বললো, ” অহনা আমার চোখের দিকে তাকাও, চোখ খোলো অহনা “। এরুপ গম্ভীর ভয়ংকর স্বর অহনা এর আগে কখনো শোনেনি।বুকটা কেমন যেন ছ্যাত করে উঠলো।পিটপিট করে অহনা চোখ মেললো।

চোখ মেলতেই অনুভবের গাঢ হলুদ বর্ণের রেটিনায় চোখ পড়লো অহনার।অহনা চোখ ফেরাতে পারছে না।অনুভবের চোখের গাঢ় হলুদ রং যেনো পাল্টে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর অনুভব অহনার কপালে একটা চুমু একেঁ দিয়ে বিছানায় এসে বসলো।অহনা নিজের হাতে ছুড়িটা দেখে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো

” আমার হাতে ছুড়ি কেন? ”

” আমি ফল খেতে চেয়েছিলাম, সেটাই কাটার জন্য ছুড়ি হাতে নিয়েছো ” অনুভব নিজের হাত চেপে ধরে বললো।
আসলে অনুভব অহনার এতোটাই কাছে গিয়েছিলো যে অহনার হাতে থাকা ছুড়িতে ওর হাত কেটে যাচ্ছে সেদিকে অনুভবের কোনো খেয়ালই ছিলো না।

” আপনার হাতে কি হয়েছে? দেখি? ” বলে ছুড়িটা টেবিলেই রেখে অনুভবের কাছে এসে বসলো অহনা।
অনুভবের হাতটা সরাতেই দেখলো অনেকটা যায়গা কেটে গেছে।অহনা ব্যাস্ত হয়ে সেখানে ব্যান্ডেস করে দিলো।কাল রাতের অনুভবের সেই ভয়ংকর রুপের কথা অহনার আর কিচ্ছু মনে নেই।অনুভবের সেই দৃষ্টিতে অহনার কিছু অতীত মুছে ফেলা হয়েছে।অনুভব মৃদু হেসে মনে মনে বললো

” তুমি আমায় মায়ায় আটকে গেছো অহনা,তোমায় পেতে যা যা করতে হয় আমি করবো”।

অহনা লক্ষ্য করলো এ বাড়িতে আসার পর থেকেই তার খিদে ভাবটা একদম যেন উবে গেছে।মনে হয় পৃথিবীতে খিদে বলতে আদৌও কিছু ছিলো না।এমনটা কেনো হচ্ছে অহনা বুঝতে পারলো না।

মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে দারালো।আসার পর থেকে এই জানালা খোলা হয়নি।অহনা একটা বিষয় লক্ষ্য করলো।ঘরে ৩টা বড় বড় জানালা,কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো কোনো জানালাই খোলা নেই,কিন্তু ঘরে আলো ঘলমল করছে।কিভাবে সম্ভব এটা?এই আলো তো কৃত্রিম আলো না? তাহলে জানালা বন্ধ অবস্থায় এতো আলো ঘরে প্রবেশ করছে কিভাবে?।

এসব ভাবতে ভাবতে অহনার চোখ পড়লো জানালার পাশেই নিচের ফ্লোরে পড়ে থাকা নীল বর্ণের তরলের ওপর।কৌতুহল বশবর্তী হয়ে কাছে যেতেই দেখলো ফ্লোরে ফোঁটায় ফোঁটায় জমে আছে।দেখতে রক্তের মতোই লাগছে।কিন্তু রক্তের বর্ণ তো লাল।ফ্লোর থেকে উঠে টেবিলে রাখা ফল কাটার ছুড়িটায় তাকাতেই অহনা একটু ভয় পেয়ে গেলো।ছুড়িটা হাতে নিয়ে দেখলো ছুড়ির শেষ প্রান্তেও নীল বর্ণের সেই তরলগুলি ভরে আছে।কি এগুলা? এভাবে ছুড়িতে আবার মেঝেতেও পড়ে আছে?।নিজেকেই প্রশ্ন করলো অহনা।

পেছন থেকে অনুভবের ডাকে ফ্লোর থেকে উঠে পেছন ফিরলো অহনা।

” ফ্লোরে বসে বসে কি দেখছো হুম ?

” তেমন কিছু না,এই দেখুন এই ছুড়িটায় নীল নীল কি যেন ভরে আছে,আর ফ্লোরেও ছিটেফোঁটা লেগে আছে ” অনুভবের দিকে ছুড়িটা এগিয়ে দিয়ে অহনা বললো।অনুভব মৃদু হেসে বললো

” ছুড়িতে তো কিছুই নেই?”

“আরে দেখতে পাচ্ছেন না, এই তো এখানেই ” ছুড়িটার শেষ প্রান্তে হাতের ইঙ্গিতে দেখিয়ে দিতেই অহনা লক্ষ্য করলো সত্যি সত্যিই কিচ্ছু নেই।তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে তাকাতেই দেখলো সেখানেও সেই নীল বর্ণের ছিটেফোঁটাগুলি হাওয়া হয়ে গেছে।অহনা হতভম্ব হয়ে বললো

” বিশ্বাস করুন,একটু আগেই ছিলো,আমি নিজ চোখে দেখেছি।রক্তের মতো নীল বর্ণের তরল এই ছুড়িটায় লেগে ছিলো।আর ফ্লোরেও পড়ে ছিলো।এখন দেখতে পাচ্ছি না কেন? এখনি তো দেখলাম ”

” তোমার মনের ভুল হচ্ছে অহনা, ”

” এতোবড় ভুল কিভাবে আমার হতে পারে? কিছুতো একটা সমস্যা আছেই ”

” হাহাহা,,কোনে সমস্যা নেই অহনা,তুমি নেহাতই ভুল দেখেছো।এখানে নীল তরল পদার্থ আসবে কিভাবে? আর আসলে তো সেটা অদৃশ্য হয়ে যাবে না তাই না?

” হু।কিন্তু..”

” আর কোনো কিন্তু নয়।ঘুরতে যাবে? ” অহনার কথা থামিয়ে দিয়ে অনুভব বললো।

” কোথায়? ” উৎসুক কন্ঠে বললো অহনা।

” কাল আসার পর থেকে তো বাইরেই যাওয়া হয় নি।তাই ভাবলাম তোমায় নিয়ে একটু ঘুরতে যাবো,তেমন কোথাও না,পাশেই একটা সমুদ্র আছে।সেখানে প্রবাহমান ঝরনাও বইছে। ”

” হু যাবো।আপনি শুধু দুই মিনিট সময় দিন আমি এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসছি।”

আনন্দিত হয়ে অহনা একটা আকাশে রঙ্গের শাড়ি বেড় করলো আলমারি থেকে।কি আশ্চর্য, আলমারিতে শাড়িটা সাধারণ মনে হলেও বেড় করতেই অহনার চোখ চকচক করে উঠলো।শাড়িটা অনেক সুন্দর। একই ঘটনা কাল রাতেও ঘটেছে।অহনার মনে রহস্যর বেড়াজাল যেনো বেঁধেই যাচ্ছে। এখন ওসব বাদ দিয়ে অহনা শাড়িটা পড়ে আয়নায় নিজেকে সুন্দর করে সাজালো।

অনুভব বিছানায় বসে বসে অহনার সাজ দেখছে।অহনা সাজছে,খোলা চুলগুলি বেশির ভাগ ঘাড়ের দিকে সরে গিয়ে অহনার সাদা ধবধবে পিঠ অনুভবের নজরে এলো।অনুভব উঠে গিয়ে অহনাকে পেছন থেকে জরিয় ধরে ঘাড়ে নাক ডুবালো।অহনার সিল্কি চুলের ঘ্রাণ মাতাল করে তুলছে অনুভবকে।

অহনা চমকে উঠলো। মনে হলো বরফে ঢাকা কেউ একজন তাকে স্পর্শ করছে।আয়নার সামন থেকে সরে দারালো।পেছন ঘুরতেই দেখলো অনুভব।সাথে সাথেই অনুভবকে স্পর্শ করে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো অহনা।অনুভবের শরীর তো স্বাভাবিক ই আছে।তাহলে প্রথমে এতো ঠান্ডা অনুভব হলো কেন?।

অনুভব জিগ্যেস করলো ” কি হলো অহনা? ”

অহনা মুচকি হেসে বললো ” না কিছু না।চলুন আমি রেডি “৷ কিন্তু মনে মনে অহনার অজানা আতঙ্ক ঠিকই বাড়তে লাগলো।

বাড়ি থেকে বেড় হতেই অহনার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।এ আমি কি দেখছি? কিভাবে সম্ভব এটা? এটাতো পৃথিবী নয়, অনুভবের দিকে তাকাতেই সারা শরীর শিউরে উঠলো।

চলবে?

#Love_with_vampire [৩]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

এ আমি কি দেখছি? কিভাবে সম্ভব এটা? এটাতো পৃথিবী নয়।

অহনা অনুভবের দিকে একবার তাকালো।সূর্যের উষ্ণ আলোয় এই প্রথম অনুভবকে দেখছে সে।কি অপরুপ সৌন্দর্য তার।অনুভবের চোখে চোখ পড়তেই মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো অহনা।

সামনের দৃশ্যটা দেখে অহনা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সে দারিয়ে আছে বিশাল এক পাহাড়ে।নিচে রঙ্গিন রঙ্গিন সব গাছ,নদী।দূরে তাকাতেই নজরে পড়ে আকাশ স্পর্শ করা পাহাড়ের চূড়াগুলি।যার উপরিভাগে বরফে ঢাকা আস্তরণ সূর্যের আলোয় চকচক করছে।হয়তো এখানেই ঈশ্বরের অবস্থান।আকাশে প্রজাপতির মেলা,পায়ের নিচে নরম চুলের ন্যায় ঘাসের আস্তরণ। আশেপাশে নজর পরতেই দেখলো বিচিত্র সব জীব।সেখানকার গাছগুলিও ভিন্ন। এমন গাছ আদৌও সে দেখেনি।পাশের নীল রঙ্গের পাতাযুক্ত গাছটার কাছে দৌড়ে গেলো অহনা।সেখানে বসে আছে কিছু প্রজাপতির দল,প্রজাপতিগুলি আকাশে অনেকটাই বড়।তার মনের চঞ্চলতার যেনো আর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে।দৌড়ে কাছে গিয়ে পাতায় হাত দিতেই ভয়ে আতঙ্কে দু’কদম পিছিয়ে গেলো।ভয়ার্ত কন্ঠে অনুভবের দিকে চেয়ে বললো

” এ..এ..এটা কি হলো? আমি পাতাগুলিকে স্পর্শ করতে পারছি না কেন? ”

” এসব পাতা নয় অহনা ”

” কিহ? এগুলা পাতা নয়? তাহলে কি এগুলা? ”

” যেসব এতো সুন্দর গাছগুলি দেখছো, এইসব সূর্যের রশ্মি থেকে জন্ম হয়েছে। এসব শুধুুই আলোর প্রতিফলন ”

” কি বলছেন আপনি? এটা কখনো সম্ভব নাকি? ”

“এখানে সব কিছু সম্ভব অহনা।তুমি তো আর পৃথিবীতে না,অন্য কোথাও চলে এসেছো ” মনে মনে বিড়বিড় করে বললো অনুভব।

” আপনি কি কিছু বললেন? ”

” না কিছু না।এখানে এমন আরো অদ্ভুত কিছু দেখবে।এটা মায়ার এক জগৎ অহনা ”

” আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মায়ার জগৎ মানে? ”

” এতো কিছু বুঝতে হবে না।চলো তোমায় এই যায়গাগুলি ঘুরিয়ে দেখাবো।”

অহনার কথা এড়িয়ে গিয়ে অনুভব ওর হাতে নিজের হাত রাখলো।অহনার সারা শরীর কেমন যেন করে উঠলো। হাতে হাত রেখে দু’জন হাটছে।অহনা চারিদিকে দেখছে আর বিস্মিত হয়ে অনুভবকে জিগ্যেস করছে এসব কি?। অনুভব মুচকি হেসে সেগুলি কি সেটা বলছে।অহনা কিছুদূর সামনে একটা ছোট্ট সরোবর দেখতে পেলো।দূর থেকে সরোবরের জল একদম কাচের মতো স্বচ্ছ লাগছে।পুরো সরোবর জুড়ে পদ্মফুলে ভরে গেছে।অনুভবের হাত ধরে টানতে টানতে সেখানে নিয়ে গেলো অহনা।

” আরে এভাবে দৌড়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? বলবে তো? ”

” দেখুন,কত সুন্দর একটা সরোবর ”

” হু,তবে তোমার থেকে সুন্দর না ”

” ধুর কি যে বলেন ”

অহনা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।অনুভবের মুখে এই প্রথম নিজের বিষয়ে কিছু শুনলো।অহনার লজ্জামাখা গালে অনুভব নিজের হাত ছোঁয়ায়।অহনা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।অনুভব সরোবরের পদ্মগুলির দিকে তাকাতেই সরোবরের মাঝখানের সবচেয়ে বড় পদ্মফুলটি আপনাআপনিই অনুভবের হাতে এসে পড়লো।অহনা চোখ বন্ধ করে আছে বিধায় এই অস্বাভাবিক দৃশ্য তার কাছে দৃশ্যমান হলো না।অনুভব ফুলটা অহনার চুলে গুজে দিয়ে কপালে আলতোভাবে চুমু খেলো।অহনা চোখ মেলতেই এতোবড় পদ্মফুল দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।সরোবরের পাড়ে একটা ছোট্ট নৌকা দেখতে পেলো অহনা।উৎসুক হয়ে অনুভবের হাতে হাত রেখে আহ্লাদী হয়ে বললো

” আমি নৌকায় উঠবো,চলুন না নৌকায় উঠি ”

” নৌকায় উঠবে,আচ্ছা চলো ”

অনুভব প্রথমে নৌকায় উঠে অহনার দিকে হাত বাড়ালো।অহনা এক হাতে শাড়ির কুচি সামলে আরেক হাত অনুভবের হাতে রেখে নৌকায় উঠলো।

নৌকায় উঠে অহনা কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলে হাত বুলাচ্ছে।ছোট ছোট লাল,হলুদ রঙ্গের মাছগুলি হাতে এসে স্পর্শ করছে।এতো স্বচ্ছ জল অহনা কোনোদিন দেখেছে বলে তার মনে হয় না।নিজে নিজে ভাবতে থাকে “এটা কি সত্যিই পৃথিবী? নাকি কোনো রুপকথার নগরীতে এসেছি?এতো সুন্দর কেন এই যায়গার সবকিছু?। নিজের শরীরে চিমটি কেটে ব্যাথায় উহু করে উঠলো।অনুভব তার এই ছেলেমানুষীর দিকে চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।

অহনার ইচ্ছে হলো একটা ফুল হাতে নিবে।ছেঁড়ার জন্য পদ্মফুলে স্পর্শ করেই তড়িৎবেগে হাত সরিয়ে নিলো।অবাক হয়ে অনুভবের দিকে তাকিয়ে বললো

” এইযে শুনছেন,,কি হলো এটা? ফুলে স্পর্শ করতেই ফুলগুলি নীল থেকে টকটকে লাল হয়ে গেলো কেন? ”

” এই ফুলগুলি এরকমই,,স্পর্শ করলেই নিজেদের রং বদলে ফেলতে পারে।আবার স্পর্শ করো দেখবে আবার অন্য রং ধারন করবে।”

অনুভবের কথায় অহনা ভয়ে ভয়ে হাত বাড়ালো ফুলের দিকে।ছুঁই ছুঁই করতে গিয়েও ভয়ে ছুঁতে পারলো না।অহনার ভীতু কর্মকান্ডে অনুভব শব্দ করে হাসলো।অহনা মুগ্ধ হয়ে অনুভবের হাসি দেখছে।একটা মানুষ এতো সুন্দর করে হাসে কিভাবে?।অনুভব কাছে এসে অহনার হাতে হাত রেখে বললো

” এখন স্পর্শ করো ”

” না আমার ভয় করছে,আমি ছোঁবো না ”

” আমি আছি তো,ভয় কিসের ”

অহনার হাত ধরে ফুলে স্পর্শ করায়।অহনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।হাতে ফুলের স্পর্শে আসতে আসতে চোখ মেললো।ফুলের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো।সত্যিই তো! ফুলের রং টকটকে লাল থেকে এবার টকটকে হলুদ হয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য ঘটনা।

সূর্যের আলো এখন কিছুটা নরম হয়েছে।অহনা জড়োসড়ো হয়ে অনুভবের বুকে মাথা রেখে আছে।নৌকায় প্রজাতির দল উড়ে বেড়াচ্ছে। কখনো কখনো প্রজাপতি অহনার গালে এসে পড়ছে,অহনা হাতের ছোঁয়ায় স্পর্শ করলে সেই প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে।স্নিগ্ধ আলোয় চারপাশটা ছেয়ে এলো।সন্ধা হতে চলেছে।এই স্নিগ্ধ আলোয় অহনাকে আরো কোমল লাগছে।অনুভব অহনার লাজুক মুখখানা নিজের দুই বলিষ্ঠ হাতে নিলো।অহনা মুচকি হেসে অনুভবের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।

অনুভব নিজের ঠোঁট অহনার ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলো।অহনা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।ওর কাঁপা কাঁপা পদ্মর পাপড়ির মতো ঠোঁটের সাথে অনুভব নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।অহনাও নিজেকে সামলাতে পারলো না।সেও নিজেকে জরিয়ে ফেললো ভালোবাসার মায়ায়।চারিদিকে প্রজাপতিরা ফুরফুর করে উড়ছে,তাঁদের শরীর থেকে যেনো আলোর বৃষ্টি ঝড়ছে।দেখলে মনে হবে আলো গুলো বালির মতো ঝরে পারে যাচ্ছে।চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস,পদ্ম সরোবরে কিসের আলো যেন পড়ছে,সেই আলোয় জল গুলো চকচক করছে।ফুলগুলি নিজেদের সাজে সেজে উঠেছে।এসব কিছুর মধ্যে ছোট্ট একটা নৌকায় অনুভবের বুকে মাথা রেখে অহনা ডুবে আছে পরম ভালোবাসার চাদরে।

চারিদিকে আলো বাড়তে লাগলো।হঠাৎ আবহাওয়া কেমন যেনো পাল্টে যাচ্ছে।প্রজাপতির শরীর থেকে এখন আর কোনো চলোর বৃষ্টি ঝরছে না।গরম এক বাতাস বইতে লাগলো।অহনা অনুভবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।

চারিদিকে পরিবেশের অনেকটা বদলে গেছে।দূর বনে পশুদের ছোটাছুটির শব্দ কানে এলো অহনার।আকাশের পানে তাকাতেই দেখলো আকাশ পরিষ্কার।কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদ দৃশ্যমান হবে।চারিদিকে থমথমে পরিবেশ হতে লাগলো।বিচিত্র পাখিগুলি পাগলের মতো ছোটাছুটি করছে,উড়তে গিয়ে একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।

অহনার মনের ভেতরটা কেমন যেনো কেঁপে উঠলো। অনুভবের দিকে তাকাতেই অহনা আরো ভয় পেয়ে গেলো।অনুভব কেমন যেনো অস্বস্তিতে আছে বলে মনে হলো।শার্টের বোতাম খুলছে,সারাশরীর ঘেমে একাকার। অহনা ভয় ভয় কন্ঠে বললো

” অনুভব কি হয়েছে আপনার? আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? ”

অনুভব কোনো কথা বলছে না।পাগলের মতো নিজের চুল টানতে লাগলো।মনে হলো অনুভবের চোখদুটি কেমন যেনো হলুদ বর্ণ ধারন করছে।অস্ফুট স্বরে বললো

” বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছি অহনা।কিভাবে এতোবড় ভুলটা হলো আমার।আনার আগে খেয়াল করা উচিৎ ছিলো।কেউ বাঁচবে না,কেউ না ”

” কি বলছেন আপনি? কি ভুল করেছেন আপনি? এরকম করছেন কেন? ”

আকাশে চাঁদ দৃশ্যমান হলো।চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়লো তাদের নৌকায়।অহনা সেই আলোয় অনুভবের দিকে তাকাতেই তার ভেতরটা মুচড়ে উঠলো।সিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা কি যেনো নেমে গেলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here