সাজু ভাই (পর্ব:-০৭) কাছে আসার গল্প

0
2363

সাজু ভাই (পর্ব:-০৭)

– সাজু ভাই বললো, এতো নিখুঁত পরিকল্পনা করে খুন করছেন যে এলাকাবাসী কেউ বুঝতেই পারছে না। কিন্তু এসব বিষয় খুঁজে খুঁজে বের করার খুব সখ আমাদের, এগুলো নেশা হয়ে গেছে।

– পারুল চিৎকার করে বললো, চুপ করেন সাজু সাহেব…! গোয়েন্দা হয়েছেন বলে সন্দেহ করতে পারেন ঠিকই কিন্তু সরাসরি এভাবে খুনি বলে তো অপমান করতে পারেন না। হ্যাঁ মানছি আমার সে ভাইয়ের জন্য আমরা কষ্ট পেয়েছি, তাই বলে যে এত জঘন্য কাজ করবো সেটা কোনদিন ভাবিনি।

– এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন মিস পারুল? এই সামান্য কথাতেই এমন অবস্থা? আমরা যেহেতু সন্দেহের তালিকা প্রকাশ করেছি সেহেতু অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণ বের করবো। আর সেই প্রমাণের জন্য আমরা অপেক্ষা করে যাচ্ছি নাহলে তো এর আগেই সরাসরি বলে দিতাম।

– চেয়ারম্যান বললো, আপনাদেরকে আমি কত আগ্রহ নিয়ে আমার বাড়িতে থাকতে দিলাম। যেন খুনি তাড়াতাড়ি ধরা পরে এবং এলাকার মধ্যে শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু আপনারা আমাকেই যে সন্দেহ করতে পারেন সেটা ধারণা করতে পারছি না, অবাক হলাম।

– সরি চেয়ারম্যান সাহেব, আমাদের সন্দেহের যে তালিকা আমরা করি সেখানে চুল পরিমাণ সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিও স্থান পায়। আর আপনাদের সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে এবং সেটা আমরা তো ভালো করে উপস্থাপন করেছি।

– দারোগা বললেন, সাজু ভাই আপনি আর হাসান সাহেব দুজন মিলে আরেকটু আলোচনা করতে থাকুন। চেয়ারম্যান সাহেবকে আমি যতটুকু চিনি তাতে তিনি এসব ব্যাপারে নেই, আপনারা নাহয় আরেকটু গভীর চিন্তা করুন।

– হাসান সাহেব বললো, সেটা তো আমরা অবশ্যই করবো দারোগা সাহেব, শুধু শুধু খুনের কারণ দেখিয়ে কাউকে খুনি বলে চলে যেতে আসিনি। সবকিছু পরিষ্কার করে উপস্থাপন করে তারপরই আমরা যাবো, তাই উপযুক্ত প্রমাণ বের করা পর্যন্ত কাউকে কিছু বলবো না।

– সাজু ভাই তখন পারুলের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনারা এই কদিনে আমাদের অনেক সেবা করেছেন। আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব, তবে এখানে আর থাকতে পারবো না। তাই এখনই দারোগা সাহেবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছি, থানার নিকটেই থাকার জন্য একটা ঘর আমরা গতকাল ঠিক করেছি। আপাতত সেখানেই থাকব আমরা দুজন, আর বাকি কাজটা সেখান থেকেই সমাপ্ত করবো ইনশাল্লাহ।

তিনজনেই চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব ও তার মেয়ে পারুল হতাশ হয়ে বিস্মিত নেত্রে তাকিয়ে রইল।

—–

জামিল চোরা আফসোস করতে করতে হাজতের মধ্যে অস্থির হয়ে গেছে, সে তার জীবনে অনেক খারাপ কাজ করেছে কিন্তু একটা মেয়ের জন্য সে কিছু করতে চাইল তা হচ্ছে না। ওই মেয়েটা এখন কেমন আছে? বেঁচে আছে তো? নাকি আত্মহত্যা করেছে? আচ্ছা সাজু ভাই নামের ছেলেটা যদি সবকিছুর জন্য দায়ী হবে তাহলে সে কাগজটা নিয়ে এতক্ষণে কি করেছে?

দারোগা সাহেবের প্রতি তার ঘৃণার শেষ নেই, সে তার জীবনে পুলিশকে সবসময় গালি দিত ঠিকই কিন্তু মনে মনে ভাবতো “পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করে তাই তার মতো জামিল চোরাকে পিটায়।”
কিন্তু এই প্রথম কোন পুলিশকে সে মন থেকে খুব ঘৃণা করে যাচ্ছে।

বেলা এগারোটার দিকে একটা লোককে তার সাথে জেলের মধ্যে রাখা হয়েছে। জামিল চোরা দেখল যে লোকটা মন খারাপ করে বসে আছে, সে তার কাছে গিয়ে বসলো।

– ভাইজান আসসালামু আলাইকুম।

– লোকটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো, ওয়া আলাইকুম আসসালাম।

– ভাইজান আপনাকে কেন ধরে এনেছে?

– আরে খামকা নিয়ে এসেছে, স্ট্যান্ডে বসে একটু হাতাহাতি করেছিলাম অমনি নিয়ে এসেছে। তবে সন্ধ্যার মধ্যে বেরিয়ে যাবো।

– বলেন কি?

– হ্যাঁ, কিছু টাকা দিয়ে সবকিছু ফিনিস, তা তুমি কেন এসেছো? বাড়ি কোথায়?

– আমার কোন বাড়িঘর নেই, ছোটবেলা থেকে রাস্তায় রাস্তায় মানুষ হয়েছি। একটু জ্ঞান হবার পর থেকে মানুষের পকেট মেরে আর চুরি করে তবে পেট চলে।

– ধুর শালা চোরা, দুরে গিয়ে বস।

– ভাইজান আমি চুরি করে জেলে আসিনি, একটা উপকার করতে গিয়ে জেলে এসেছি।

– মানে কি?

– আপনাদের এই উপজেলার মধ্যে কোন গ্রামের মধ্যে বা ইউনিয়নের মধ্যে মেয়েরা খুন হচ্ছে?

– আমাদের পাশের গ্রাম, কিন্তু কেন?

– আমার একটা উপকার করবেন?

– কি উপকার?

– আপনি যদি সত্যি সত্যি সন্ধ্যার মধ্যে বেরিয়ে যেতে পারেন তাহলে সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবকে একটা খবর দেবেন ভাইজান?

– কিসের খবর? তোমার মতো চোর তাকে কিসের খবর দেবে?

– তাকে বলবেন, আমি ওই খুনের ব্যাপারে কিছু একটা জানি তাই তিনি যেভাবেই হোক আমার সঙ্গে দেখা করুক।

– কি জানো তুমি?

– মাফ করবেন, আমি একবার সত্যি বলে জেলের মধ্যে এসেছি তাই দ্বিতীয় কাউকে বলতে চাই না।

– আমি যদি তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি তাহলে কি জানতে পারবো?

– হ্যাঁ জানতে পারবেন।

– ঠিক আছে বের হয়ে সরাসরি আমি চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যাবো, এবং নিয়ে আসবো। কিন্তু কোন ধরনের ফাজলামো করার জন্য যদি ডাকো তাহলে তো তোমার অবস্থা খারাপ।

– ঠিক আছে।

নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল জামিল চোরা, আসরের দিকে আগন্তুক লোকটা সত্যি সত্যি ছাড়া পেয়ে গেল। যাবার সময় তিনি বলে গেছেন যে অবশ্যই চেয়ারম্যান সাহেবকে বলবে।

– – – – –

জানালা দিয়ে ঢাকা শহরের অজস্র বিল্ডিং চোখে পরছে রুহির, উত্তরার প্রিয়াঙ্কা সিটিতে এই বাড়ির মধ্যে তাকে নিয়ে এসেছে সাজু ভাই। একটা মেয়ে তার সঙ্গে কথা বলে সবসময়, কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে চলে যায়। রুহির কাছে কোন মোবাইল নেই বলে সে কাউকে কিছু বলতে পারছে না।

সাজু ভাইয়ের উপর এতটা ঘৃণা হবে কখনো ভেবে দেখেনি রুহি, একটা মানুষ এতটা খারাপ কেন?

মেয়েটা রুমের মধ্যে এসে বললোঃ-

– কি করো তুমি?

– রুহি গম্ভীর হয়ে বললো, কিছু না।

– তোমার পছন্দের একটা খাবারের নাম বলো তো তাহলে সেটা রান্না করা হবে। রাতের খাবার খেতে গিয়ে তাহলে পছন্দের খাবার পাবে।

– বিষ আছে আপু? বিষ দিতে পারবেন?

– ছি এমন করে কেউ বলে?

– আপনারা সবাই খুব খারাপ, সাজু ভাইয়ের হয়ে সবাই কাজ করেন তাই না?

– হ্যাঁ তাই।

– কোন লাভ নেই, সত্যি একদিন বের হবেই, আর সেদিন সাজু ভাইয়ের মতো মুখোশধারী মানুষের মুখে জনগণ থুতু ফেলবে।

– কিন্তু কিছু কিছু সময় মানুষটা খারাপ জেনেও তাকে তেল মারতে হয়, এটাই বাস্তবতা।

রুহি চুপ করে রইল, মেয়েটা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার দরজা বন্ধ করে চলে গেল।

,
,

সন্ধ্যা বেলা একটা চায়ের দোকানে একসঙ্গে বসে আছে সাজু ভাই, হাসান সাহেব এবং দারোগা সাহেব।

– চায়ের কাপে বিস্কুট ভিজিয়ে মুখে দিয়ে দারোগা বললেন, আমার কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব কিংবা তার মেয়েকে সন্দেহ হচ্ছে না। যদিও যথেষ্ট কারণ আছে তবুও এর পিছনে অন্য কোন বিষয় জড়িত আছে বলে মনে হচ্ছে।

– সাজু ভাই বললেন, সেটা আমরা যেদিন এসেছি তার পরেরদিনই ভেবেছি। যদিও চেয়ারম্যান এবং তার মেয়ে আমাদের প্রথম তালিকায়। তাই তাদের নিয়ে সামনে যেতে চাই, চলতি পথে অবশ্যই কোন একটা সন্দেহে রাস্তা ঘুরে যেতে পারে। তখন হয়ত পথ পরিবর্তন করতে হবে।

– হাসান বললো, আমার চেয়ে ইদানিং সাজুর মধ্যে বেশি বুদ্ধি দেখতে পাচ্ছি।

– দারোগা বললেন, কিন্তু তাদের দুজনকে বাদ দিয়ে আর কাকে কাকে সন্দেহ করা হচ্ছে?

– ব্যক্তি ঠিক করিনি তবে কারণ ঠিক করেছি, এ বিষয় আরও ভাবতে হবে।

– চোরকে নিয়ে আছি বড় সমস্যার মধ্যে, থানার মধ্যে গেলেই আমার দিকে একরাশ ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

– একটু হজম করুন স্যার, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই।

– আপনারা কিন্তু তিনবেলা হোটেলে না খেয়ে আমার বাসায় খেতে পারতেন। আমার বাসা কিন্তু খুব বেশি দুরে নয়।

– তা ঠিক হবে না স্যার, আমরা তাহলে কেমন এক ইতস্তত বোধ করবো। আমরা চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতেও থাকতাম না, কিন্তু তাদের মধ্যে গিয়ে শুধু তাদের দিকে নজর রাখতে চেয়েছিলাম।

– কি মনে হয়?

– অনেক কিছু মনে হয়, তবে বাবা মেয়ের মধ্যে আমি মেয়েকে মানে পারুলকে বেশি সন্দেহ করি।

– কেন?

– কারণ রুহির যে বান্ধবী ঢাকা মিরপুরে খুন হয়ে গেছে, সে মেয়ে খুন হবার সেই রাতে পারুল ঢাকা গেছিল। রাত আটটার দিকে গাড়িতে উঠেছে এবং পরদিন ভোরবেলা ছয়টা বাজে ঢাকা থেকে চলে এসেছে।

– দারোগা উত্তেজিত হয়ে বললো, তারমানে সেই যে পারুলের ব্যাগের ভেতর থেকে টিকিট বের হয়েছিল সেটা ওই রাতে আর ভোরের ছিল?

– হ্যাঁ স্যার, হয়তো পারুল খুব গভীর পরিকল্পনা করে যাচ্ছে তবুও একটু ফাঁকা রেখেই গেল।

– তাহলে তো পারুলকে টার্গেট করতে হবে?

– দেখি কি করা যায়।

– আচ্ছা।

– – – – –

রাত দশটা।
রুমের মধ্যে একই বিছানায় শুয়ে আছে সাজু ভাই ও হাসান সাহেব। হোটেলের মধ্যে থেকে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত সাজু ভাই, তার মনের মধ্যে এ প্রশ্নের জবাব মিলছে না। গভীর ভাবনার জগতে সাজু ভাই, আর তার পাশে শুয়ে হাসান সাহেব মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।

দশটা বারো মিনিটে সাজু ভাইয়ের মোবাইল বেজে উঠল, মোবাইল হাতে নিয়ে অপরিচিত নাম্বার দেখে অবাক হয়নি সাজু ভাই। কারণ তাকে তো কত মানুষ অপরিচিত হয়েও কল দিয়ে কথা বলতে চায়।

– রিসিভ করে সাজু ভাই বললেন, আসসালামু আলাইকুম।

– অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো, রাখ তোর এই ভদ্রলোকী, যা জিজ্ঞেস করি তার জবাব দে।

– কে আপনি? আর এভাবে অদ্ভুত ব্যবহার করে কেন কথা বলছেন?

– কালকে সকালের মধ্যে টাঙ্গাইল ছেড়ে চলে যাবি, আর এই মুহূর্তে বলবি রুহি কোথায়?

– ওহ্হ আচ্ছা, তুই? তোর জন্য অপেক্ষা করছি আমি, কি খবর তোর?

– একদম চালাকি করবি না।

– কোন চালাকি নয়, আমি গতকাল রাতে রুহিকে কিডনাপ করার পর থেকে তোর কলের অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তুই তো ২২ ঘন্টা দেরি ফেলেছিস দাদা ভাই।

– বল রুহি কোথায়?

– যদি না বলি?

– দেখ সাজু, আমি চাইলে কিন্তু তোদের দুজনকে একসাথে মেরে লাশ বানাতে পারি কিন্তু আমার সেটা ইচ্ছে নাই। মেয়েগুলো আমার টার্গেট তাই তাদেরকে শিকার করবো, বল রুহি কোথায়?

– রুহির কথা বলবো না, মরে গেলেও না কারণ আমি জানি যে রুহি যতদিন আমাদের কাছে বন্দী থাকবে ততদিন তুই আর কাউকে খুন করবি না।

– কেন করবো না?

– কারণ তো তোর জানার কথা। শুনে রাখ ভাই, সাজু ভাই যখন এসেছে তখন তোর লুকিয়ে থাকার দিন ফুরিয়ে গেছে। আশা করি খুব শীঘ্রই তোর সঙ্গে আমার মুখোমুখি দেখা হবে।

– তাহলে কি তুই রুহির কথা বলবি না?

– বললাম তো না না না।

– আজকে রাতের মধ্যেই আরেকটা লাশ পাবি, মনে রাখিস তোরা। তুই তোর দারোগাকে সঙ্গে নিয়ে পারলে খুন আটকিয়ে দেখা।

.
.
.

চলবে…?

.
.
সকলের গঠনমূলক মন্তব্য আশায় অপেক্ষায় রইলাম, আশা করি সুন্দর করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবেন সবাই।

.
.
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here