#জন্মান্তর_রহস্য?
#অনুগল্প [ভৌ’তিক]
#আফিয়া_আফরিন
‘না আমি যাবো না, আমি তোমার সাথে যেতে চাই না। তুমি একাই চলে যাও।’
দরজার বাহিরে থেকে ঝুমু কথাগুলো কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে। তার জানামতে ভেতরের ঘরে তো শুধু, রিয়া একাই রয়েছে। তবে কথা বলছে কার সাথে?
সে দরজা ঠকঠক করতে যাবে তখন ই আবার শুনতে পেল, রিয়ার কন্ঠ।
রিয়া আবারও বলছে, ‘একবার বললাম তো আমি তোমার সাথে যাব না। তুমি চলে যাও। কেন বারবার বি’র’ক্ত করো আমায়?’
রিয়ার কথা ব্যতীত অন্য কারো কথাই শোনা গেল না। ঝুমু দরজা ঠকঠক করে বললো, ‘রিয়া দরজা খোল। কে আছে তোর সাথে ভেতরে?’
কিছুক্ষণের মধ্যে রিয়া এসে দরজা খুলে দিলো। ঝুমু দেখল তাকে এক পলক, বি’ধ্ব’স্ত চেহারা মেয়েটার। মনে হচ্ছে কোন কারনে ভ’য় পেয়ে আছে।
ঝুমু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, ‘কি হয়েছে তোর? আর এত রাতে না ঘুমিয়ে কার সাথে কথা বলছিস? কে আছে তোর সাথে ভেতরে?’
‘কেউ নাই তো আপু।’
‘বললেই হলো কেউ নাই। আমি স্প’ষ্ট শুনলাম, তুই কাকে যেন বলছিস না আমি যাব না। কে সে সত্যি করে বল?’
‘কেউ না আপু।’
‘সর আমি ভিতরে যাবো।’
রিয়াকে কোন কথা বলতে না দিয়ে ঝুমু ওকে সাইড করে ভেতরে ঢুকে গেলো। বেলকনি, বাথরুম, ঘরের কোনাকানি এমনকি খাটের নিচ পর্যন্ত ও খুঁজলো; কিন্তু কাউকে পেলো না।
রিয়া এগিয়ে এসে বললো, ‘হয়তো তোমার মনের ভুল।’
ঝুমু আর কিছু বললো না। তী’ক্ষ্ণ চোখে তাকালো বোনের দিকে। এটা যে তার মনের ভুল নয়, সে একশো ভাগ নিশ্চিত। কিন্তু রিয়া মিথ্যা কথা কেন বলছে?
.
.
.
ইদানিং রিয়ার ভিতর বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সে কখনোই চুপচাপ ধাঁচের মেয়ে ছিল না। বরং নাচানাচি, সব সময় আড্ডা দেওয়া, আনন্দে মেতে থাকা একটা মেয়ে ছিলো। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে এসব থেকে নিজেকে একদম সরিয়ে নিয়েছে।
কারো সাথে ঠিকভাবে কথা বলে না। কেউ কথা বলতে চাইলেও এড়িয়ে যায়। নিজের রুমে সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। মা-বাবা কিছু বললেও তার পা’ত্তা দেয় না।
ঝুমু অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে, কিন্তু রিয়া ‘কিছু হয় নাই, কিছু হয় নাই’ বলে এড়িয়ে গেছে বারবার।
তবে কাল রাতের ব্যাপারে ঝুমু নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, কিছু একটা গ’ন্ডগো’ল আছে। তার হাসি খুশি, চ’ঞ্চ’ল বোনটা এমনি এমনি বদলে যায় নাই।
.
.
সেদিন রাতে ঝুমু রিয়ার ঘরে এসে বললো, ‘আজ রাতে আমি তোর সাথে থাকবো। আমার ঘরে একা একা থাকতে ভালো লাগে না।’
রিয়া যেন খুশিই হলো। বেশ উৎফুল্ল নিয়ে বললো, ‘সত্যিই! সত্যিই তুমি আমার সাথে থাকবে আপু?’
‘হ্যাঁ, থাকবো বলেই তো এলাম।’
সেই রাতে দুই বোন খুব গল্প করলো। ঝুমু একবার ভেবেছিল জিজ্ঞেস করবে, যে রিয়া কোন সমস্যার মধ্যে আছে কিনা? কিন্তু রিয়ার মন ভালো ছিল এই রাতে, জিজ্ঞেস করলে যদি আবার মন খারাপ করে। তাই আর কিছু বললো না।
এইরকম ভাবেই পরপর কিছুদিন ঝুমু রিয়ার ঘরেই থাকতে লাগলো। সেদিন রাতেও রিয়ার ঘরে চলে এসেছিলো।
রিয়া ঝুমুকে বাঁধা দিয়ে বলে, ‘আপু আজকে রাতে তোমার আমার সাথে থাকতে হবে না।’
ঝুমু অবাক হয়ে বললো, ‘কেন? আমি থাকলে কি সমস্যা?’
‘কোন সমস্যা না। কিন্তু তোমার আজকে থাকতে হবে না। তুমি চলে যাও প্লিজ।’
‘না তোর কথামতো তো হবে না। তোকে আমায় কারণটা বলতে হবে। সে কারণ যদি আমার উপযোগী মনে হয়, তাহলেই আমি চলে যাবো।’
‘আমি বলতে পারবো না আপু। তুমি প্লিজ আজকে চলে যাও।’
‘সরি তোর কথাটা আমি শুনতে পারলাম না।’
রিয়া অ’সহা’য় দৃ’ষ্টিতে ঝুমুর দিকে তাকালো।
‘তুমি থাকলে সে আসতে পারেনা।’
ঝুমু দ্বিগুণ অবাক হয়ে বললো, ‘কে?’
‘আছে একজন।’
‘কে সেই ব্যক্তি? তার সাথেই তুই মাঝরাতে কথা বলিস তাই না? বল সে কে? কোথায় নিয়ে যেতে চায় তোকে সে?’
‘আমি জানিনা। শুধু জানি সে মানুষ নয়। কোন বি’দে’হী আ’ত্মা!’
‘আ’ত্মা? পা’গ’ল পাইছিস তুই আমারে? যে কোন একটা বুঝায় দিলেই আমি বুঝে যাবো।’
‘সত্যি আপু।’
‘আজকে আমাকে থাকতে মানা করছিস কেন?’
‘ও বলেছে, ও আজ রাতে তোমার কোন বড় ক্ষ’তি করবে। যদি তুমি আমার সাথে থাকো তাহলে।’
‘তাহলে তো আমি থাকবোই। দেখি তোর সেই বি’দে’হী আ’ত্মা আমার কি করতে পারে?’
রিয়ার মুখটা ফ্যা’কা’সে, র’ক্ত’শূ’ন্য, ম’রা মানুষের মত সাদা হয়ে গেল।
ঝুমু জিজ্ঞেস করলো, ‘আবার কি হয়েছে?’
‘না না না। কিছু না।’ দ্রুত মাথা নেড়ে বললো রিয়া।
ঝুমু আর কথা বাড়ালো না। শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ বাদে একটা অপরিচিত গ’ন্ধ নাকে এলো। হালকা একটা গ’ন্ধ, কিন্তু খুবই তী’ব্র।
রিয়া চমকে শোয়া থেকে উঠে বসে বললো, ‘আপু কিছুর গ’ন্ধ পাচ্ছো?’
‘হ্যাঁ।’
‘ও এলে এরকম একটা গ’ন্ধ বের হয়।’
ঝুমু ভেতরে ভেতরে ভয় পেল। যদিও সে এসবে বিশ্বাস করে না। তবুও গন্ধটা জানি কি রকম! মনে হচ্ছে কোন অ’শ’রী’রী’র শ’রী’র থেকে বের হয়ে আসা গ’ন্ধ।
তবুও সে সাহস যুগিয়ে বললো, ‘আরে ধুর যতসব বাজে কথা। চুপচাপ শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। এসবে কান দিস না। বাহিরে থেকে হয়তো কোথাও থেকেই এই গ’ন্ধ আসছে।’
‘যদি ও চলে আসে?’
‘আমি যে ঘরে আছি সে ঘরে কোন জি’ন ভূ’ত আসার সাহস পাবে না। চুপচাপ কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়। আর একটা কথা বললেই কিন্তু থা’প্প’র খাবি।’
রিয়া কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
ঝুমু ও পাশ ফিরে চুপচাপ শুয়ে আছে। অস্বীকার করে লাভ নেই, রিয়ার কথাবার্তা শুনে কেমন জানি চাপা ভ’য় এসে ভর করেছে তার মনেও। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি এই ঘরটার মধ্যে কেউ আছে। অ’দৃ’শ্য কেউ, যাকে চোখে দেখা যায় না ঠিকই কিন্তু অনুভব করা যায়।
.
.
.
মাঝরাতে বুকের উপর শক্ত কিছু অনুভব করায় ঘুম ভেঙে গেল ঝুমুর। চোখ মেলে তাকালো। গলায় কারো হাতের ছোঁয়া পেলো। ঝুমু স্প’ষ্ট বুঝতে পারছে কেউ তার গলা টি’পে ধরেছে।
ঝুমু পুরোপুরি জেগে উঠে বসার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। তার সামনে একটি ছা’য়া। দেখে মনে হচ্ছে কোন মানুষেরই অব’য়’ব।
ঝুমু কোন শব্দ করতে পারছিল না। পাশেই রিয়া বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু তাকে ডাকতে পারছিলো না।
ঝুমুর ভয় পাওয়ার শ’ক্তি’টাও লোপ পেয়েছিল। এই মুহূর্তে যেটা মনে হচ্ছে সেটা হলো, বাঁ’চতে হবে।
হাত দিয়ে রিয়ার জামা খা’ম’ছে ধরলো। তাতেই রিয়া জেগে গেল। বোঝার চেষ্টা করলো হচ্ছেটা কি?
ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই সে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘আমার আপুকে ছেড়ে দাও প্লিজ। আমি যাবো, যাবো তোমার সাথে।’
সেই অশ’রী’রী ঝুমুর গলা ছেড়ে দিলো। এগিয়ে গেল রিয়ার দিকে।
প্রচন্ড আ’ত’ঙ্কে ঝুমুর বোধশ’ক্তি প্রায় পুরোপুরি লো’প পেয়ে গেছে। ও বুঝতে পারছে ওর শরীর থ’রথ’র করে কাঁ’পছে। বুকের ভেতরকার স্প’ন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে।
ঝুমু নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘না-রিয়া না।’
সেই সময় আরেক কাহিনী ঘটলো। আরেকটি ছা’য়া মূ’র্তি দেখা গেলো।
সে রিনরিনে কণ্ঠে বললো, ‘কারো কোনো ক্ষ’তি আমি হতে দেব না।’
বলতে গেলে তুই ছা’য়া মূ’র্তির মধ্যে এক প্রকার দা’ঙ্গা লেগে গেলো।
রিয়া আর ঝুমু নীরব দর্শক হয়ে দেখছিলো।
হঠাৎ করেই একটা অ’ত’র্কি’ত আঘা’ত এসে পড়ল ঝুমুর উপর। সে প্রচ’ন্ড ধা’ক্কা’য় ছি’ট’কে পড়লো বিছানার উপর। খাটের কোনার সাথে লেগে ঝুমুর কপাল কে’টে গেছে। সে জ্ঞা’ন হারালো।
ছায়া মূ’র্তিটি রিয়ার গলা টি’পে ধরলো। এই প্রথম সে তাকে দেখতে পেলো। প্রচন্ড আ’ক্রো’শ ঝরে পড়ছে দৃষ্টিতে। জ্ঞা’ন হারালো রিয়া ও।
.
.
.
পরদিন সকালে রুমের দরজা ভেঙে তাদেরকে উ’দ্ধা’র করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘরের অবস্থা দেখে সবাই ধারণা করেছে, হয়তো চোর ঢুকে ছিল রাতে।
.
.
রিয়া আর ঝুমুর সুস্থ হওয়ার পর এই ব্যাপারটা আর কাউকে জানায়নি। তবে দুজনেই একটা বিষয় খুব করে ভাবে, আরেকটি ছা’য়া মূ’র্তি কে ছিল? কই ছা’য়া মূ’র্তি’টি না থাকলে হয়তো তারা আজ বেঁচে থাকতো না।
তারা দুই বোনই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। আর কখনো সেই ছা’য়া মা’নব তাদের সামনে আসে নাই। কিন্তু তাদের খুব জানার ইচ্ছা, তাদের জীবন বাঁচানোর রহস্য কি?
এই রহস্য আজও তাদের অজানা। হয়তো যুগ যুগ ধরেই এমন অজানাই রয়ে যাবে।
.
.
.
.
.
সমাপ্ত……..
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]