#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:৮
#পিচ্চি_লেখিকা
আজ ২ দিন হলো আমি মেঘলাদের বাড়িতেই থাকি। আমার থাকা নিয়ে আঙ্কেল আন্টি কোনো প্রশ্ন করেননি। উনারা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমাকে একা না তন্নি তামিম ওদেরও খুব ভালোবাসে। আমাদের ৪ জনের বাড়ির লোকই সবাইকে খুব ভালোবাসে তাই তো মেঘলা যখন আঙ্কেল আন্টিকে আমি থাকবো বলেছে তারা কোনো প্রশ্ন না করে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তন্নি তামিম তো অর্ধেক বেলা আমাদের সাথেই থাকে। তিশা আপুও এসে দেখা করে যায়। আপুর রাগ এখনো কমে নি। ওইরকম ভাবে মার খাওয়ায় জ্বরে ২ দিন বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারিনি। ভার্সিটিও যেতে পারিনি। তবে এই ২ দিনে আন্টিই আমার সেবা করেছে একদম মায়ের মতো করে জলপট্টি দেওয়া ওষুধ খাওয়ানো খাবার খাওয়ানো সব করেছে। অবাক হয়েছি অনেক। বাহিরের একটা মেয়েকে কেউ এত ভালোবাসতে পারে? অনুভব এই ২ দিনে খোঁজ নেয়নি। তিশা আপু সাফ সাফ বলে দিয়েছে আমি যেন অনুভবের কাছে না যায়। আমিও সব দিক ভেবে ঠিক করেছি যাবো না আর অনুভবের কাছে। কিছু একটা ব্যবস্থা ঠিক করে নিবো তবুও ওর কাছে আর ফিরবো না। আমার একাকিত্ব উনাকেও কষ্ট দেবে। আজ সব ঠিক থাকলে হয়তো দুজনের জিবন খুব সহজ হয়ে যেতো।
“এই স্নিগ্ধু তাড়াতাড়ি চল। কখন থেকে রেডি হচ্ছিস! তন্নিরা নিচে বসে আছে তাড়াতাড়ি চল।”
মেঘলার কথায় ধ্যান ভাঙলো,,
“হুম চল।”
আজ সুস্থ তাই ভার্সিটি যাবো। তন্নি আর তামিম আগেই এসে বসে আছে। আমাকে দেখেই বান্দরগুলা দৌড় দিয়া বাইরে গেলো আমি আর মেঘলা আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে আসলাম।
ভাসিটি এসে ক্লাস শেষ করে বসে আছি ক্যাম্পাসে। তন্নি আর তামিম ঝগড়া করছে আমি আর মেঘলা দর্শক। কি আর করার এই ২ ঝগড়ুটের মাঝে বসলে ঝগড়া দেখা ছাড়া উপায় নাই। বিরক্তি নিয়ে ২ টার কথার মধ্যে বলে উঠলাম,,
“ধুরু থাক তোরা..ঝগড়াই কর তোরা। আমার ভার্সিটি আসা টাই ভুল হয়ছে। এই মেঘু চল আমরা বাইরে যায় ২ জনে ঘুরমু ফিরমু খামু পরে বাড়ি যামু ওরা ঝগড়া করুক।”
“হ ঠিক কইছোস। চল আমরা যাই।”
২ জন উঠে আসতে লাগলাম তখনই তন্নি আর তামিম লাফ দিয়ে উঠে বললো,,
“আমরা আর ঝগড়া করমু না। আমাদেরও নিয়ে চল।”
“তোদের এক ফোটাও বিশ্বাস নাই। তার থেকে আমরা ২ জনই ঠিক আছি সর।”
“আরে না আর করমু না ঝগড়া। এই তামিম্ম্যা শুন আর ঝগড়া করবি না।”
“আচ্ছা করমু না।”
“মনে থাকে যেনো।”
সবাই মিলে লেকের পাড়ে ঘুরে পার্কের দিকে ছুট লাগালাম। অনেক গুলো দিন পর আজ আবারও মুক্ত ভাবে উড়ছি। সব ক্লান্তি কেটে গেছে এক মুহূর্তে। পার্কে ঢুকতে যাবো তখনই চোখ যায় রাস্তার ওপরে একটা গাড়ির ভেতর। অনুভব ড্রাইভ করছে পাশেই বসে আছে মিরা। হঠাৎ করেই বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা করছে। যতই উনি আমাকে কষ্ট দিক তবুও উনার পাশে অন্য কাউকে দেখার মতো সাহস আমার নেই। মিরাকে দেখলেই মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। চোখের কোণে নোনা জল রা নাড়া দিচ্ছে। চোখ মুখ শক্ত করে সবার সাথে গেলাম। আড্ডাতে ভালো লাগছে না তাই মেঘলা আর আমি বাড়িতে চলে আসলাম।
বিকালবেলা বারান্দায় বসে বই পড়ছি তখন মেঘলা এসে নিচে যেতে বললো। এই অসময়ে নিচে কেন? কারো কিছু হলো নাকি! দেরী না করে দ্রুত পা চালিয়ে নিচে গেলাম। লিভিং রুমের দিকে তাকিয়েই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। অনুভব হেসে হেসে আন্টির সাথে গল্প করতে ব্যস্ত। আমাকে দেখেই আন্টি বললো,,
“তোমরা কথা বলো আমি আসছি।”
মেঘলা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আন্টির সাথেই চলে গেলো। আমি গিয়ে অনুভবের সামনে দাঁড়ালাম।
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
“এমনি। আপনি এখানে কেন?”
উনি পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে বসে বললো,,
“আমি আমার বউকে নিয়ে যেতে এসেছি। আর আন্টি পারমিশনও দিয়ে দিয়েছে। সো এবার আমার বউ যা আর চটপট রেডি হয়ে আয়।”
“এসব আবার কি ধরনের নাটক? আমি যাবো না আপনার সাথে। আপনি চলে যান।”
“আজব! এসেছি বউ নিতে একা চলে গেলে কেমনে হবে?”
“ঢং বাদ দিয়ে যান এখান থেকে। আমি আপনার সাথে থাকতে চায় না। আপনার মতো মানুষের সাথে থাকা যায় না। অনেক সহ্য করেছি আর না। আমিও মানুষ। আর আপনার অপমান মাইর এসব সহ্য করেও একসময় বেহায়ার মতো আপনার সাথেই থেকেছি কিন্তু আর বেহায়া হয়ে আপনার কাছে থাকতে চায় না।”
“সেইটা তোর ব্যাপার। দেখ স্নিগ্ধু আমি চাই না এই বাড়িতে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করতে তাই নিজে গিয়ে রেডি হয়ে আয়।”
“আপনি কিন্তু বাড়াবা…..
” চুপ..আর একটা কথা বললেও সিনক্রিয়েট শুরু করে দিবো। চুপ চাপ রেডি হয়ে আয়।”
আচ্ছা ঝামেলায় পড়লাম তো৷ এখন কি করি আমি? যদি যেতে না চায় সত্যি সিনক্রিয়েট করবে উনি। আবার আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নাই। কি করবো এখন? চুপচাপ রুমে এসে মাথা চেপে ধরে বসে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে ঠিক করলাম যাবো অনুভবের সাথে৷ আন্টি আঙ্কেল মেঘলা ওরা আমার বিপদে পাশে ছিল। ওদের বাড়িতে সিনক্রিয়েট হলে উনারা আমাদেরও খারাপ ভাববে আর আশ পাশের লোকজনও ব্যাপার টা বাজে ভাবে নিবে। তাই রেডি হতে লাগলাম।
রেডি হয়ে বসে আছি। মেঘলা রুমে এসে দেখে আমি রেডি হয়ে বসে আছি। মেঘলা আমার কাছে রেগে এসে বললো,,
“তুই রেডি হয়ছিস কেন? তুই আবারও ওই লোকটার সাথে যাবি?”
“মেঘু শান্ত হ। আমার কথাটা শোন!”
“চুপ একদম চুপ। কি শুনবো হ্যাঁ? আবারও তুই মাইর খাওয়ার জন্য নিজে থেকে ওই নরকে যাচ্ছিস!”
“মেঘু আমি এখনো উনার স্ত্রী আমি চাইলেই কিছু করতে পারবো না আর তাছাড়াও আমি যদি না যায় উনি এখানে ঝামেলা করবে..তখন আঙ্কেল আন্টি কষ্ট পাবে।”
“আব্বু আম্মু কষ্ট পাবে না। তুই যাবি না ব্যাস!”
“প্লিজ মেঘু বোঝার চেষ্টা কর।”
অনেক কষ্টে মেঘলা কে বুঝিয়ে রাজি করালাম যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে তে নাছোড়বান্দা।
“তুই যেতে পারিস তবে আমার শর্ত আছে!”
“এহহহ শর্ত? কি শর্ত?”
“ওই লোক টা তোকে একটা থাপ্পড় মারলেও তুই আবার চলে আসবি। দরকার হলে ৪ জন মিলে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকবো।”
“পাগল হয়ে গেলি মেঘু?”
“এত কিছু বুঝি না। জেনে শুনে তোকে আগুনের মধ্যে যেতে দিচ্ছি তাই তার আচ্ থেকেও তোকে বাচতে হবে। তুই প্রমিস কর ওই অনুভব ভাইয়া তোকে থাপ্পড় মারলেও তুই আর ওই বাড়িতে থাকবি না!”
কি আর করার অগত্যা প্রমিস করলাম। একবার এখান থেকে বের হয় আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার সাধ মিটিয়ে দেবো। মেঘলা আমাকে নিয়ে লিভিং রুমে গেলো। আন্টিও ওখানেই বসে অনুভবের সাথে গল্প করছে। আন্টি আর মেঘলা আমাদের বাইরে পর্যন্ত দিয়ে গেলো। মেঘলা অনুভবের কাছে দাঁড়িয়ে বললো,,
“ভালোবাসা আগলে রাখতে শিখেন ভাইয়া। অতিরিক্ত অবহেলা অপমানে মানুষের মন বিষে যায়। কেউ ভালোবেসে আগলে রাখতে চাইলে তাকে আপন করে নিতে হয়। আজ অবহেলা করছেন এমন একটা দিন আসবে যেদিন আপনি খুঁজবেন তাকে। তাই হারিয়ে যাওয়ার আগেই ধরে রাখেন।”
মেঘলার কথা শুনে অনুভব টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,,
“হারাতে দিলে সে না হারাবে! আমি তো তাকে হারাতেই দিবো না!”
মেঘলার কথায় অবাক না হলেও অনুভবের কথায় যথেষ্ট অবাক হয়েছি। হারাতে দিবে না মানে?
মেঘলা আমাকে গাড়ি পর্যন্ত দিয়ে চলে গেলো। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। অনুভব ড্রাইভিং করছে। দুজনের মাঝেই পিনপতন নিরবতা। নিরবতা কাটিয়ে অনুভব বলে উঠলো,,
“মুখটা পেঁচার মতো করে রাখছিস কেন?”
“পেঁচার মতো করে রাখতে যাবো কেন? আপনার সাথে কথা বলার চিন্তা করাও ভুল তাই চুপ করেই বসে আছি।”
“হয়ছে হয়ছে। ২ দিনে দেখি পাখির মুখে বুলি ফুটেছে। যায় হোক ভাবলাম ২ দিন পর বউ আমাকে দেখে খুশি হয়ে বাংলা সিনেমার মতো দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরবে তা না আমাকে দেখে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলো..ভাবা যায়!”
“না ভাবার কি আছে? আপনি তো খুব ভালো কাজ করেননি যে জড়িয়ে ধরবো। ২ দিন টর্চার করতে পারেননি তাই এখন নিয়ে যাচ্ছেন যাতে টর্চার করে মেরে ফেলতে পারেন।”
কথাটা বলে অনুভবের মুখের দিকে তাকালাম। ঠোঁট কামড়ে হাসছে। আজব! হাসার কি হলো?
“জ্বর একেবারে সেড়েছে নাকি এখনো আছে?”
উনার কথা শুনে ভ্রু যুগল কুচকে বললাম,,
“আপনি কিভাবে জানলেন? আমার জ্বর ছিলো?”
“তোর বুঝে কাজ নেই। ভেবেছিলাম পরেরদিন এসে নিয়ে যাবো তারপরই জানলাম তুই অসুস্থ..পরে আর নেয়নি। এটা ভাবিস না সেবা করতে পারবো না বলে নেয়নি আসলে আমার হসপিটালের কাজ অনেক ওগুলো সামলাতেই হিমশিম খায় তোকে নিয়ে আসলে তখন তোর দেখাশোনা করতে পারতামই না উল্টো আরো অসুস্থ হয়ে যেতি তাই ভাবলাম মেঘলাদের বাড়িতে থাকাটাই তোর জন্য ভালো। ভেবেছিলাম আরো কয়েকটা দিন থাকতে দিবো কিন্তু…
” কিন্তু কি?”
অনুভব আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আমিও বুঝলাম উনার কথায় আগ্রহ দেখিয়ে ফেলেছি তাই হাসছে। উনার কথা শুনে আনমনেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছি। অনুভব ড্রাইভিং এ মন দিয়েই বললো,,
“কিন্তু না হয় অন্য একদিন শুনিস। আচ্ছা তোর হিটলার ননদ টা কই গেছে?”
“হিটলার ননদ মানে? ”
“আরে তিশু!”
“ওই আপনি আপুরে হিটলার বললেন কেন?”
“হিটলারই তো। সেদিন যেভাবে ঝেড়ে গেলো। ওরে বাবা।”
“চুপ করে গাড়ি চালান তো।”
অনুভব আর কিছু বললো না। ড্রাইভিং এ মন দিলো। আবার আমার ভাগ্যে কি আছে কে জানে?
ফ্ল্যাটে এসে আমি আগে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেলাম। অনা রান্না করছে আজ। ওকে দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। অনা আমাকে দেখেই হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,,
“কেমন আছো ভাবি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো,,তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি ছিলে না মনে হচ্ছিলো এই বাড়িটার দম নেই৷”
“কেন? তোমার স্যার তো ছিলো আর মিরাও তো নিশ্চয় আসতো..তাহলে?”
অনা মৃদু হেসে বললো,,,
“তুমি নেই স্যারও এ বাড়ি আসতো না। স্যার কেমন যেনো করতো ২ মিনিটও বসতো না। এসে আমাকে জিজ্ঞেস করতো তোর ভাবি আসছে? যদি বলি না তাহলেই চলে যেতো। হসপিটালেই থাকতো সারা দিন-রাত।”
“আমি না থাকলেই তো উনার সুবিধা। তাহলে এমন করার কি আছে?”
“জানি না। জানো ভাবি যেদিন তুমি চলে গেলে সেদিন স্যারেরও অনেক জ্বর এসেছিলো পরে তুষার স্যার আর তুবা ম্যাম এসে উনার পাশে ছিলো। যদিও আমি তিশা আপুকে ফোন করেছিলাম কিন্তু উনি সাফ সাফ বলে দেন আসতে পারবে না। পরে একটু পরই তুষার স্যাররা আসছিল।”
উনার জ্বরের কথা শুনেই একটু নড়ে উঠলাম। জ্বর কেন এসেছিল? আর আমি নেই বলে বাড়িতেই বা আসতেন না কেন? নিজেকে সামলে অনাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম,,
“মিরা আসতো না এই বাড়ি?”
“না।”
“আচ্ছা তুমি কাজ করো আমি আসছি।”
অনার সাথে আর কথা বাড়ালাম না। ভালো লাগছে না কিছু। কেমন যেনো সবটাই জট পাকিয়ে যাচ্ছে। রুমে এসে দেখি অনুভব সোফায় বসে লেপটপ নিয়ে কাজ করছে। আমি বিছানায় বসতে বসতে শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলাম,,
“আপনি ২ দিন বাড়ি ফিরেননি কেন?”
আমার প্রশ্নে এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে আবার লেপটপে মনোযোগ দিয়ে বললেন,,
“এত কিছু জেনে কি করবি?”
“আজব তো! আমি আপনার বউ হয় সো আমি জানতেই পারি আপনি কোথায় ছিলেন? কি করছিলেন? সব জানতে পারি।”
অনুভব লেপটপ বন্ধ করে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকালেন আমার দিকে। উনার তাকানো দেখে আমি মাথা নিচু করে নিলাম। দুর থেকে হলেও ওই চোখে তাকানোর সাহস আমার নেই।
“৩ দিন কই ছিলো তোর এসব অধিকার?”
“৩ দিনও ছিলো অধিকার শুধু খাটানোতে মানা ছিল। হ্যাঁ অধিকার ফলাতাম যদি না আপনি এমন নিকৃষ্ট হয়ে যেতেন। যায় হোক, জ্বর আসছিলো কিভাবে?”
“তেমন কিছুই না। বাদ দে। চল ক্ষুধা লাগছে।”
“হুম।”
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ২ জনই এসে শুয়ে পড়লাম। আজও উনি সোফায় ঘুমাবেন আর আমি বেডে। একবার ভাবলাম বেডেই থাকতে বলবো পরে ভাবলাম “না করুক এই লোক কষ্ট আর তাছাড়া বিড়ালের বাচ্চার মতো জড়োসড়ো হয়ে ঘুমায় কিউট লাগে অনেক।”
পরেরদিন সকাল সকাল উঠে লিভিং রুমে গেলাম। অনুভব এখনো ঘুমাচ্ছে,,অনা বাকি স্টাফ দের সাথে এটা ওটা কাজ করছে। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো৷ এত সকালে কে আসলো বুঝলাম না। তাই উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি মিরা। এই ডাইনী টা আমার বাড়ি কি করে? আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমাকে একটা থাপ্পড় দিলো। থাপ্পড় টা অনেক জোড়ে মেরেছে। তাই টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেছি আর ঠোঁটের ফিনকি বেয়ে রক্ত পড়ছে। থাপ্পড়ের শব্দে আর আমার পড়ে যাওয়ার শব্দে অনা দৌড়ে আসে। অনা আমাকে ধরতে গেলেই মিরা ওকে ধাক্কা দেয়। সব কিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে যে কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। মিরা এসে আমাকে এক টানে তুলে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বাহু চেপে ধরে বলে,,
“আমার অনুভব কে কেড়ে নিতে এসেছিস তোকে তো আমি খুনই করে ফেলবো। কি ভেবেছিস কিছু বুঝি না আমি। অনুভব তোকে খালাতো বোন বলে পরিচয় করালেই আমি মানবো? অসম্ভব। তোর মতো মিডিল ক্লাস মেয়ে তো অনুভবের রক্ষিতাই হতে পারিস। কত টাকা চাই তোর?”
আমি আমার বাহু ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,,
“ভদ্রভাবে কথা বলেন। কাকে কি বলছেন আপনি?”
“তোর মতো রক্ষিতার সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলবো? তোর…..
আর কিছু বলার আগেই গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে মিরাকে একটা থাপ্পড় দিয়েছি। মিরা ছিটকে পড়েছে। টাল সামলাতে পারেনি হয়তো। রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। মিরাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই অনুভব এসে পড়ে। অনুভব এসে দেখে মিরা ফ্লোরে পড়ে আছে। অনুভব গিয়ে মিরাকে তুলে বলে,,
” কি হচ্ছে এখানে? আর স্নিগ্ধু তুই ওকে মারলি কেন?”
অনুভবের কথায় যেনো আগুনে ঘি দেওয়ার মতো রাগ বাড়িয়ে দিলো। মিরা ন্যাকা কান্না করতে করতে বললো,,
“দেখো না অনুভব ওকে শুধু বলেছিলাম তুমি অনুভব কে ডেকে দাও আর ও বললো আমি কি তোর মেইড যে ডেকে দিবো। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক হওয়াতে ও আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।”
মিরার মিথ্যা বলা দেখে আরো রেগে গিয়ে বললাম,,
“মেরেছি ঠিক করেছি। আর মিথ্যা বানোয়াট গল্প না বলে সাহস থাকলে সত্যি বলেন।”
“স্নিগ্ধু কি হয়ছে সেইটা বল!”
“ও আর কি বলবে অনুভব? তুমি এখনো ওকে জিজ্ঞেস করছো?”
“সাট আপ মিরা। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছি ও আন্সার দিবে তুমি না আর শোনো স্নিগ্ধু বিনা করণে কারো সাথে উচু গলায়ও কথা বলে না আর তোমাকে থাপ্পড় মারবে অবিশ্বাস্য এবং হাস্যকর কথা।”
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না অনুভব? ”
বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করলো। ওদের এসব নাটক দেখে রাগে গা জ্বলছে।
“এই আপনাদের এসব নাটক বাইরে গিয়ে করেন। বের হন বাড়ি থেকে। এখনো সম্মান দিয়ে কথা বলছি এটাই আপনার ভাগ্য। 2nd টাইম আপনাকে এই বাড়িতে দেখলে খুন করে ফেলবো।”
“শান্ত হ স্নিগ্ধু শান্ত হ। কি হয়েছে বল? থাপ্পড় কেন মেরেছিস বল?”
“মেরেছি আরো মারবো। ওর সাহস কি করে হয় আমাকে রক্ষিতা বলার? ওর মতো মেয়েরা অন্যের স্বামী কে নিয়ে টানাটানি করবে আর ঘরের বউকে বলবে রক্ষিতা।”
রাগের মাথায় অনুভবের শার্টের কলার চেপে ধরে বললাম,,
“সবটাই তোর জন্য। আমি তো তোর বউ না সেটা আগেই বলে দিয়েছিস তাহলে ও তো রক্ষিতা বলবেই। আমি তোর বউ এটা বললে তোর কোন মহা ভারত অশুদ্ধ হবে হ্যাঁ? ওকে এখন থেকে যেতে বল নয়লে আমি কি করে ফেলবো নিজেও জানি না।”
অনুভব হঠাৎ করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত দিয়ে বললো,,
“শান্ত হ বউ। তুই আমার বউ কেউ তোকে এসব বলবে না।”
মিরা হা করে তাকিয়ে আছে অনুভবের দিকে আর আমি চুপ করে উনার বুকে মুখ গুজে দাঁড়িয়ে আছি। উনি মিরাকে রাগে গিজ গিজ করে বললো,,
“গেট আউট।”
“অনুভব আম…
অনুভব রাগী চোখে তাকালেই মিরা চলে যায়। রাগ কমে গেলেই হু হু করে কেঁদে উঠি। নিজেকে অনুভবের থেকে ছাড়িয়ে বললাম,,
” আজ আপনার জন্য আমাকে এত বাজে কথা শুনতে হলো। বউ হয়েও আজ আমি সবার কাছে….
আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতেই রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️ অনেকেই বলছেন “১ দিনে ২ পার্ট দিতে” এটা কি ধরনের কথা আজব,,আমি তো সারাদিনই গল্প লিখতে পারবো না আমারও পার্সোনাল লাইফ পড়াশোনা আছে। সব সামলে আমার লিখতে হয়। আপনারা নিজেদের টা ভাবছেন অথচ লেখিকার সুবিধা অসুবিধা বুঝেন না,,আমি ১ দিনে ১ পার্ট কাভার করতেই হিমশিম খায় । একটু লেইট হলেই শুরু হয়ে যান। একবার লেখিকার দিকটাও ভেবে দেখেন..বিষয়টা বুঝতে পারবেন। আমার কথায় কারো খারাপ লাগলে দুঃখিত)
হ্যাপি রিডিং😊