ভালবাসার এপিঠ ওপিঠ পর্বঃ ০৯(শেষ পর্ব) | ভালোবাসার গল্প

1
7598

ভালবাসার এপিঠ ওপিঠ পর্বঃ ০৯(শেষ পর্ব)
লেখকঃ আবির খান

তাসনিন আর সামিরাকে বডিগার্ডরা পাহারা দিয়ে গাড়ি থেকে নামায়। তারপর হাসান দ্রুত ওদের দুজনকে নিয়ে ভিতরে চলে আসেন। সামিরা আর তাসনিন আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকগুলো ছেলে মেয়ে। সবাই হাসাহাসি, খেলাধুলা করছে৷ ওরা তিনজন আড়ালেই দাঁড়িয়ে ছিল। হাসান সাহেব বলে উঠেন,

– ওই যে আপনাদের নিহান।

তাসনিন আর সামিরা তাকিয়ে দেখে নিহান ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলছে। অনেক মজা করছে। ওরা দুই বোন এ দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। হাসান পাশ থেকে বলতে থাকেন,

– আমার ছেলেটার মনটা অনেক বড়ো। স্যার ওকে যে টাকা দেয় তার অর্ধেকের বেশী এই পথের অনাথ শিশুদের পিছনে ও খরচ করে। কারণ কি জানেন? কারণ একসময় ওর অবস্থাও এই ছেলে মেয়েদের মতো ছিল। হয়তো আল্লাহর ইচ্ছায় আমি ওকে নিয়ে এসেছিলাম তাই ও এত সুন্দর একটা জীবন পেয়েছে। এখন ও সেইম কাজটা করছে এসব বাচ্চাকাচ্চাদের মানুষ করে। নিহান কাউকে এই জায়গাটার কথা জানতে দেয় নি। আমিও অনেক কষ্টে জেনেছি। আজ আপনারাও জানলেন। কিন্তু ও যেন এটা না জানে ম্যাম৷ তাহলে কষ্ট পাবে৷ এটা ওর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। ওর মন ভালো থাকুক কিংবা খারাপ প্রতি সপ্তাহে ৩/৪ দিন ও এখানে আসবেই৷ এই বাচ্চাকাচ্চারাও ওকে অনেক পছন্দ করে। ও না আসলে অস্থির হয়ে যায়৷ তাই ও না এসেও পারে না।

তাসনিন আর সামিরা মুগ্ধ হয়ে দূর থেকে নিহানকে দেখছে। ওরা কল্পনাও করে নি নিহানের মাঝে এরকম একটা মহৎ মানুষ লুকিয়ে আছে৷ সামিরা বলে,

~ আপু চলো বাসায় যাই৷ আমাদের যা জানার আর যা দেখার তাতো সবই হলো৷ এবার উনি দেখার আগে আমরা চলে যাই৷
~ হ্যাঁ হ্যাঁ চল। আঙ্কেল থ্যাঙ্কিউ ইউ সো মাচ। চলেন বাসায় ফিরি।
~ আচ্ছা।

সামিরা আর তাসনিন দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে। হাসান ওদের নিয়ে বাসার দিকে রওনা হয়৷ দুইজন বোন পিছনে বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। দুজনই নিহানকে নিয়ে ভাবছে। সামিরা তো নিহানের প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে৷ তবে ও মনে মনে অনেক খুশী। কারণ নিহানের সম্পর্কে ওর আর কিছু জানার নেই৷ সামিরা মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করবে৷ হয়তো আজ রাতেই৷ ও মিটমিট করে বাইরে তাকিয়ে হাসছে। অন্যদিকে তাসনিন মনে মনে বলে,

~ আমার বোনটা সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী। উনার মতো এমন একজনকে পেয়েছে৷ ভালোই হয়েছে। এবার আমার মনে আর কোন সন্দেহ নেই৷ শুধু ওদের মিলিয়ে দিতে হবে৷

তাসনিন সামিরার দিকে তাকিয়ে হাসে৷ কেন জানি ওর মনটায় অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। কিছুটা কষ্ট হচ্ছে ওর। কিন্তু ও সামিরার দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যায়৷

১৭.
রাত ৮:৪৫ মিনিট। নিহান রায়হান সাহেবের রুমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে মিটিং করছে। সেখানে হাসানও উপস্থিত আছেন৷ তারা তিনজন মিটিং শেষ করে ৯ টায়। নিহান বিদায় নিয়ে রুম থেকে বের হতেই সামিরাকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। ও অবাক কণ্ঠে বলে,

– ম্যাম আপনি? এখানে? কোন সমস্যা?
~ না না৷ আপনার সাথে কথা আছে চলেন।
– আচ্ছা৷

সামিরা আর নিহান পাশাপাশি হাঁটছে। নিহান সামিরাকে ফলো করছে আসলে। সামিরার চোখমুখে ভীষণ লজ্জা। নিহান সেটা খেয়াল করেছে। ও কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে আছে ভার্সিটির সেই ঘটনার জন্য। ও মনে মনে ভাবছে সামিরা আবার সেটা নিয়েই নাকি আবার কথা বলে। তাহলে ও অনেক লজ্জা পাবে৷ নিহানের মাথায় গোলমাল লেগে যাচ্ছে৷ সামিরা ওকে নিয়ে বাগানের নিরিবিলি জায়গাটায় আসে। এখানে একটা সুন্দর দোলনা আছে৷ নিহান ইশারা দিয়ে বডিগার্ডদের অন্যপাশে যেতে বলে। সামিরা বলে,

~ আসেন বসি।
– উমমম…আমি দাঁড়িয়ে থাকি। আপনি বসেন।
~ বসতে বলছি কিন্তু। নাহলে চাকরি নট করে দিব বুঝলেন।

সামিরা হাসি দিয়ে বলে। নিহানও হাসতে হাসতে বসে। ওরা একসাথে দোলনায় বসে আছে। তবে দুজনের মাঝে একহাত দূরত্ব। নিহানই দূরত্বটা রেখে বসেছে। সামিরা বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। মাথার উপর খোলা আকাশ, আশেপাশে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আর রাতের সৌন্দর্য্য। ওদের দুজনের মনেই অন্যরকম একটা অনুভূতি দিচ্ছে৷ দুজনের মাঝেই চরম নিস্তব্ধতা। কেউ কিছু বলছে না৷ সামিরা আর না পেরে দোল খেতে খেতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ কখনো কাউকে ভালবেসেছেন?

নিহান সামিরার আচমকা এই প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায়। কতশত শত্রুকে ও দুইহাত দিয়ে সায়েস্তা করেছে। কিন্তু সেই নিহান এখন অনেক নার্ভাস ফিল করছে। ও কোন রকম নিজেকে সামলে বলে,

– না ম্যাম।
~ আমি বেসেছি।
– কাকে?
~ যদি বলি আপনাকে। তাহলে কি করবেন?
– যাহ! মজা করছেন? এটা হয় নাকি। কোথায় আপনি আর কোথায় আমি?
~ আচ্ছা ভালবাসা কি টাকা পয়সা আর রূপ দেখে হয়? সেটা কি প্রকৃত ভালবাসা?

নিহান মাথা নাড়িয়ে না বলে। সামিরা হাসি দিয়ে একটু ঘুরে নিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ ভালবাসাটা ব্যক্তিত্ব দেখে হয়। আপনি কেমন? আপনার মনটা কেমন? আপনি কি প্রিয় মানুষদের আগলে রাখতে পারেন কিনা সেগুলো দেখেই একটা মেয়ে আপনার প্রেমে পড়ে। আপনাকে ভালবাসে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমিও আপনার ব্যক্তিত্ব দেখে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। অনেক বেশী ভালবেসে ফেলেছি। আপনি কি আমাকে ভালবাসবেন?

নিহান বাকরুদ্ধ হয়ে সামিরার দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভাষা হারিয়ে ফেলেছে৷ সামিরা ওকে এভাবে মনের কথাটা বলে দিবে ও কল্পনাও করে নি। সামিরা অধীর আগ্রহ নিয়ে নিহানের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে। নিহান আস্তে আস্তে দোলনা থেকে নেমে জিজ্ঞেস করে,

– আপনি সত্যি আমাকে ভালবাসেন?

সামিরা অসম্ভব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। নিহান বলে,

– আচ্ছা এক মিনিট আমি আসছি।

বলেই ও দ্রুত হেঁটে সামিরার চোখের আড়ালে এসে খুশীতে নাচানাচি শুরু করে। কারণ নিহানও মনে মনে সামিরাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছিল। নিহান একা একা নাচানাচি করছিল হঠাৎই পিছন থেকে,

– স্যার আপনি ঠিক আছেন?

নিহান পিছনে তাকিয়ে দেখে বডিগার্ড একজন ওকে দেখে ফেলেছে। নিহান মুখটা শক্ত করে বলে,

– এদিকে আসো।
– জি স্যার৷
– একটু আগে যা দেখেছো তা যেন কেউ না জানে ওকে?
– ওকে স্যার৷ (হাসি দিয়ে)
– কি দেখেছো একটু আগে?
– কই কিছু নাতো স্যার। আমি তো এখানে ছিলামই না৷
– গুড। এখন এখানে দাঁড়িয়ে পাহারা দেও। ওইদিকে যেন কেউ না আসে ওকে?
– ওকে স্যার৷
– গুড৷

নিহান মুচকি হাসতে হাসতে সামিরার কাছে ফিরে যায়৷ ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না সামিরা ওকে ভালবাসে৷ নিহান ফিরে এসে চুপচাপ সামিরার পাশে বসে। সামিরা ওর দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। ওকে অনেক কিউট লাগছে৷ একদম বাচ্চা মেয়েদের মতো। নিহান কিছু বলছে না দেখে সামিরা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় আর বলে,

~ বুঝেছি। তাহলে আপনি আমাকে ভালবাসবেন না৷ তাই চুপ করে আছেন। সরি আমার ভু….

নিহান উঠে সামিরার মুখ চেপে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আমি কিছু বলেছি? একা একা ভুল বুঝলে হবে ম্যাম? আচ্ছা আমি যদি বলি আমিও আপনাকে ভালবাসি৷ কারণ আপনার এই চাঞ্চল্য আমার অনেক ভালো লাগে। আমার মনের ভিতর অন্যরকম একটা আলাদা অনুভূতি দেয়৷ আমি এতদিন বুঝিনি সেটা কি। তবে আজ বুঝেছি এই অনুভূতিটা কি। তাই আমিও বলে চাই, আমি আপনাকে অনেক বেশী ভালবাসি। অনেক অনেক বেশী। কি বিশ্বাস হবে আমার কথা?…কি হলো কিছু বলেন। চুপ করে আছেন কেন?

সামিরা রাগী ভাব নিয়ে ইশারায় মুখের দিকে দেখায়। নিহান তাকিয়ে দেখে ও সামিরার মুখ চেপে আছে তাই ও কিছুই বলতে পারছে না৷ নিহান দ্রুত হাত সরিয়ে সরি সরি বলে। সামিরা খুব মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,

~ একশো বার বিশ্বাস হবে৷

বলেই নিহানকে কিছু না বলতে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর নরম ঠোঁটকে নিজের করে নেয় সামিরা। এ যেন ভালবাসার আদান প্রদান চলছে। নিহান অবাক হলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ ওরা দুজন এখন হারিয়ে গিয়েছে মিষ্টি অনুভূতিতে।

– সমাপ্ত।

এই গল্পটার দ্বিতীয় সিজন হবে৷ তাই এখানেই শেষ করা হলো। প্রথম সিজনটি কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সবার মন্তব্য আশা করছি। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য৷

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here