Dangerous Husband,পর্বঃ_২

0
3380

Dangerous Husband,পর্বঃ_২
লেখকঃ_নুসরাত_জাহান

অবশেষে ফোনটা না চাইতেও রিসিভ করল আবির।

– হ্যালো…।
– রাখ তোর হ্যালো ট্যালো। তুই এখন কোথায়ও আছিস সেটা বল। তোকে কতবার বলেছি আবির তুই এসব নেশা আর মেয়ে মানুষ দুটোকে ভুলে গিয়ে বাপের বিজনেস সামলা কিন্তু তুই কোন কথাই কানে দিস না। ছিঃ ভাবতেও অবাক লাগছে আরমান চৌধুরীর একমাত্র সন্তান আবির চৌধুরী সে কিনা রাতের আধারে পতিতা-দের বাড়িতে রাত কাটায়৷ তোর জন্য রাস্তায় মুখ দেখানো যাচ্ছে না।

বাবা তো বলেই যাচ্ছে এদিকে আবির এক কানে হেডফোন ফোন ঢুকিয়ে গান শুনছে। আরেক কান দিয়ে অল্প করে কথা ঢুকিয়ে আবার বের করে দিচ্ছে।

আরমান চৌধুরী ছেলের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বুঝতে পারলেন তার ছেলে নিশ্চয়ই কানের ভিতরে হেডফোন ভরে আছে। এবার সে রাগের বশে ধমকের সুরে বলল,
– বাবা আবির তুমি কান থেকে হেডফোনটা খুলে ভালো করে আমার কথাগুলো শুনবে নাকি ড্রিংকস করে গাড়ি ড্রাইভ করে এক্সিডেন্ট করার অপরাধে মামার বাসায় বেড়াতে যাবে।

বাবার কথার তোয়াক্কা না করে কান থেকে হেডফোনটা খুলল ঠিকি তবে বাবাকে শায়েস্তা করার জন্য৷ গলাটা খকখক করে কাশি দিয়ে সেরে বলল,
– তোমার জ্ঞান দেওয়া হয়ে গেছে তাইলে ফোনটা রাখতে পারি কারণ আমি এখন হৃদয়ের বাসায় যাব।
– বলে যা যত পার বলেই যা। তোকে যখন জন্ম দিয়েছি তাইলে তো এগুলো আমার শুনতে হবেই। তোকে জন্ম না দিয়ে যদি কলা গাছ লাগাতাম তাইলে অন্ততপক্ষে কলা দিত। আর কলা খেয়ে তৃপ্তিসহকারে আরাম করে শুয়ে শুয়ে টাকার হিসেব করতে পারতাম।

বাবার কথা শেষ না হতেই কলটা কেটে দিল আবির। ঠোঁটটা বাঁকা করে সামনে আসা রিক্সাতে উঠে রওনা দিল হৃদয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য।
রিক্সায় বসে হাই তুলছে আবির। বিছানা পেলে গাঁ টা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ত। রাতে তো ভালো করে ঘুৃমাতে পারেনি৷ বেশ ক্লান্ত লাগছে। হৃদয়ের কাছে গিয়ে প্রথমেই লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে। একটানা রাত পর্যন্ত ঘুমাব৷ আজকে রাতে গায়ে এনার্জি থাকতে হবে। আজ যে হিয়ার সাথে দেখা করিয়ে দিবে। হিয়ার সাথে আজকের রাতটা কাটানোর পরে ঠিক করব ওকে পার্মানেন্টলি রাখা যাবে কিনা! দেখতে সুন্দর হলেই তো হবে না যে আমাকে খুশি রাখতে পারবে তাকেই আমার কাছে তবে। তবে এক জিনিস খাওয়া তেমন পছন্দ না আবিরের। নতুন নতুন জিনিস ট্রাই করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

গেইটের কাছে এসে রিক্সাটা থামল। পকেট খুঁজতে গিয়ে মনে পরল টাকা তো আদিবার কাছে রেখে এসেছে সাথে এক টাকাও নেই। এখন কি করবে!
মোবাইলটা হাতে নিয়ে হৃদয়কে কল দিল। দু’বার বাজার পরে কলটা রিসিভ করল হৃদয়।

– দোস্ত কেমন আছিস? কি খবর? কাল রাতে কোথায় হারিয়ে গেছিস? পুরো ক্লাব খুঁজেও তোকে পাওয়া যায়নি৷
– পরে বলছি আগে গেইটের কাছে আয় একহাজার টাকা নিয়ে আমি অপেক্ষা করছি।
– তুই কি নিচে? আর এত টাকা দিয়ে কি করব?
– হুম। পরে বলব আগে টাকাটা নিয়ে নিচে আয় রিক্সা ড্রাইভারকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
– আচ্ছা।

হৃদয় টাকা নিয়ে দৌড়ে গেইটের কাছে আসল।
টাকাটা আবিরের কাছে দিতেই আবির রিক্সাওয়ালাকে দিল।
– স্যার ভাঙতি নেই। আর ভাড়া তো আশি টাকা হয়েছে এত বড় নোট তো আমার একদিনেরও ইনকাম না৷
– লাগবে না, পুরোটা তুমি রেখে দাও। যাও আজকে মুরগি পোলাও কিনে স্ত্রী সন্তান নিয়ে খাও।
নোটটা ধীরেধীরে ধরে চোখের জল ছেড়ে দিল।
– কাঁদছ কেন? যাও গিয়ে খাও। কথাটা বলে হৃদয়কে নিয়ে গেইটের ভিতরে ঢুকল।

রুমে ঢুকে প্রথমেই ওয়াশরুমে ঢুকল আবির। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে বিছানার উপরে বসল। বেশ হালকা লাগছে নিজেকে।

হৃদয় রুমে এসে আবিরের পাশে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল,
– কি রে আবির, সারারাত কোথায় ছিলি?
– কোথায় আবার থাকব, যেখানে থাকার সেখানেই৷
– সেটা তো বুঝলাম কিন্তু..
– কোন কিন্তু নয় তাড়াতাড়ি বল সেই ঝাক্কাস মেয়েটা কোথায়? কাল তো খুশির খবরটা পেতেই হট্টগোল বেঁধে গেছে। মাথায় তো তালগোল পাকিয়ে গেছে। এবার তো বল মেয়েটি কোথায় আছে? পারলে নিয়ে আয় একটু দুচোখ ভরে দেখি।
– হা হা দোস্ত একটু সবুর কর। তোর দুচোখের কথা বলিস না আর তুই কারণ আজ যে তোর চোখে সুন্দরী কালকে সে আর সুন্দরী থাকবে না। তখন আবার নতুন মেয়ে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরবি।

ভ্রু -কুঁচকে হৃদয়ের দিকে তাকায়। মাথাটা নিচু করে মুখটা হালকা করে ভেংচি কেটে বলল,
– শোন তুই তো জানিস, আমার কোন মেয়েকে তেমন পছন্দ হয় না। একবার কাছে পেলেই নতুন মেয়ে খুঁজতে শুরু করি৷ আমার কি টাকার অভাব বল, তুই বল। আমার যা মন চাইবে তাই করব।
– হ্যাঁ জানি তো। তবে একটা কথা মনে রাখবি মেয়েদেরকে নিয়ে এভাবে করাটা ঠিক নয় তাইলে এই দুনিয়াতে তো জায়গা হবেই না বরং পরকালেও শাস্তি ভোগ করতে হবে।
– বাহব্বা তুই এত জ্ঞান দিতে কবে থেকে শিখলি।
তোর বাবা মা জানে তো!
ইয়ে মানে মাথাটা চুলকাতে চুলকাতে জবাব দিল না।
– তাইলে! হাতির পাঁচ পা দেখেছিস নাকি?
আবিরের কথায় যখন পুরোপুরি বিধস্ত তখন নিজের দোস না মাথায় নিয়ে বলা কথাটার জন্য স্যরি বলল হৃদয়।
ইজি হওয়ার জন্য স্বাভাবিক গলায় বলল,
– আবির সন্ধ্যার পরে মেয়েটির বাসায় নিয়ে গেলে কেমন হয়?
– মেয়েটির বাসায় কেন যাব বল তো? মেয়েটি কি লাটসাহেব হয়ে গেছে যে তার বাসায় আমাকে যেতে হবে। টাকা যদি বেশি দেওয়া লাগে তবুও এখানে নিয়ে আয়৷
– এখানে?
– হা তোর কোন সমস্যা আছে?
– আজকে মা বাসায় আসতে পারে যদি কোন মেয়েকে আনি তাইলে আমাকে বাসা থেকে বের করে দেবে।
– হুম বুঝলাম। তাইলে একটা কাজ কর আমার জন্য একটা হোটেলের রুম বুকিং দে। কোন না কোন বাসায় যাব তার নেই ঠিক। তারচেয়ে বরং হোটেলে থাকাই ভালো। অন্ততপক্ষে স্বস্তি পাব।
– ঠিকাছে তোর ইচ্ছা৷

হৃদয় ওয়াশরুমে ঢুকল। আবির বালিশটা ঠিকঠাক ভাবে রেখে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই কখন যে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল বুঝতেই পারল না আবির৷ যখন ঘুম ভাঙল তখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে এসেছে। সূর্যটা হেলে পড়েছে।

আধো চোখে চোখ মেলে তাকিয়ে শোয়া ছেড়ে উঠে আড়মোড়া দিয়ে হৃদয়কে ডাকল।
আবিরের ডাক হৃদয়ের কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই সে দ্রুততার সাথে রুমে আসল।
– হ্যাঁ দোস্ত বল, কি হয়েছে? খিদে পেয়েছে?
– হৃদয় কয়টা বাজে তোর কি খেয়াল নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে এসেছে প্রায় আর আবির চৌধুরী এখনো লাঞ্চ করেনি ভাবতে পারিস সেটা কিভাবে সম্ভব?
– রিলাক্স আবির। জাস্ট কুল। আগে আমার কথাটা শোন তারপর তোর কথা বলিস।

রাগে শরীর লাল হয়ে গেছে। ফর্সা গালে লাল বর্ণের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

– আবির তোর শরীরটা খারাপ ছিল হয়তোবা তুই এই জন্য এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। তোকে আমি দু’বার ডেকে গেছি খাওয়ার জন্য তবুও তোর কোন পাত্তা ছিল না। জানিস আংকেল কতবার কল দিয়েছে আমাকে? তুই নিজের ফোনটা পর্যন্ত সুইচ অফ করে রেখেছিস৷ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ওকে আবির।
– হুম।
– এখন উঠ আমি মেয়েটাকে কল দিয়েছি সন্ধ্যার পরে হোটেল এরিনার দশতলায় স্পেশাল রুমে আসতে। দুপুরে বুকিং নিয়ে নিয়েছি তোর নামে। কোন টেনশন নেই। ম্যানেজার সবকিছু ঠিকঠাক করে দিবে।
– এই না হলে আমার বন্ধু৷
– হুম।

সন্ধ্যা ৬ টায় গাড়ি করে এরিনা হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল আবির। হোটেলের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে চাবি নিয়ে রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকে দেখে লাইট বন্ধ করা। লাইট জ্বালিয়ে বিছানার দিকে তাকায়। লাল শাড়ি পড়ে বসে আছে সেই মেয়েটি। আবির ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি এনে মেয়েটির কাছে গেল।

– ওভাবে মুখ লুকিয়ে আছ কেন? আর তুমি শাড়ি পড়েছ কেন?

বিছানায় বসে থাকা মেয়েটি মুখ ঘুরাতেই আবির চমকে গেল। একি তুমি……!

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here