Destiny_of_Love PART_13
#Nishat_Tasnim_Nishi
______________________________
হঠাৎ মেঝো চাচ্চু দিদুনের সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন। দিদুনের হাত ধরে বললেন ক্ষমা করে দেও না মা!
এবার আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। মেঝো চাচ্চু এ কথা বলছে?উনার কত বছরের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ফুফির জন্য।
দিদুন মেঝো চাচ্চুর মাথায় হাত রেখে বললো,–‘তুই মাফ করে দিয়েছিস তাহলে আমি না করার কে?’
এরপর ফুফিসহ সবাই দিদুনকে জড়িয়ে ধরলো। আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,–‘আমি কেউ না?’
দিদুন বললো, –‘তুই তো আমার কলিজা!’
আমি হেসে দিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। এরপর ফুফি উনার স্বামী আর শাশুড়ীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।উনারাও ফুফির পিছন পিছন এসেছেন।রিয়াকে দিদুন জড়িয়ে ধরে ছিলো,আবরারের কান টেনে বললো,–‘এতদিন এখানে ছিলি তাও চিনি নাই!পরিচয় দিস নি কেনো?’
আবরার ভাব নিয়ে বললো,–‘যদি তুমি আমার প্রেমে পড়ে যেতে তাই!’
আমরা সবাই একসাথে হেসে উঠলাম।
২১.
হসপিটাল থেকে দিদুন কে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। সব কিছু কমপ্লিট করে সবাই মিলে করে বের হয়েছি। ফুফির পরিবার অন্য দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দিদুন বললো,–‘কই যাও?’
ফুফির শাশুড়ী বললো,,–‘বেয়াইন বাড়ী যাচ্ছি।’
—‘না,না এখন কোথাও যাওয়া হবে না। আমার নাতীনের বিয়ে খেয়ে তারপর যাবেন।’
দিদুনের কথা শুনে চমকে তাকালাম। কার কথা বলছে। আমার নয় তো?
—‘আরে আজ আমার বেয়াই আর বেয়াইন আসবে বিদেশ থেকে। উনাদের আসার দুদিন পরেই বিয়ের ডেট। ছোট বেলায় ওদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম আমরা। আমার কথা রাখতেই আগামী পরশু ওদের বিয়ে দিবো।’
ফুফি বললো–‘কার কথা বলছেন আম্মা?’
দিদুনের আমার থুতনি ধরে বললো,—‘আমার কলিজা আর ইশতিয়াকের!’
কথা টা আমার কানে বারবার বাজতে লাগলো। হতভম্ভ হয়ে উনার দিকে তাকালাম। আবরার ও চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো। পুরো পরিবারের মুখে হাসির রেশ, সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলছে।শুধুমাত্র আমি আর আবরার চোখ বড়বড় করে দুজনের দিকে বার বার তাকাচ্ছি!ইশতিয়াক লাজুক মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
২২. বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। আবরার বিয়ে টা বন্ধ করার জন্য বহু চেষ্টা করেছে। ও ইশতিয়াক কেও বলেছে আমাদের ব্যাপারে সব,ইশতিয়াক কে বলেছে যে বিয়ে টা যেনো না করে!
ইশতিয়াক সরাসরি না করে দিয়ে বললো,–‘আপনারা যদি লিভ ইন রিলেশনে থেকে থাকেন তবুও আমি ওকে বিয়ে করবো।আমার কোনো আপত্তি নেই! ও আমার পছন্দ নয় যে যে কাউকে দিয়ে দিবো,ও আমার ভালোবাসা যা আমার প্রাণ থাকতে আমি কাউকে দিবো না। মাফ করবেন ভাই,আপনি যেমন ভালোবাসেন আমিও তেমন ভালোবাসি সেটাও আপনার অনেক আগ থেকেই।ছোট বেলা থেকেই ও আমার সব কিছু জুড়ে বসবাস করছে। আমার মন মষ্তিষ্ক,হৃদয় সব জুড়ে।’
আবরার ওর পা ধরে বললো, –ভাই মেনে যান না।আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না!’
ইশতিয়াক ওর হাত ধরে বললো,–‘ভাই,আপনি মেনে যান। আমার পুরো পরিবার ছোট থেকেই ওকে নিয়ে স্বপ্ন বুনে রেখেছে।দিদুন আমাদের পরিবারকে, দাদাজির কবর ছুঁয়ে কথা দিয়ে বলেছেন যে থাকতে উনি শ্রুতিকে আমার সাথেই বিয়ে দিবেন।এ ওয়াদার পরিপ্রেক্ষিতেই আমি বিদেশ গিয়েছিলাম নাহলে ওকে ছেড়ে কোথাও যেতাম না।আর এ যে বললেন না, বাঁচতে পারবেন না এটা ভুল। একটা কথা আছে,চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল!কয়েক টা দিন যেতেই দেখবেন আপনি ওকে ভুলেই গিয়েছেন।’
আবরার তবুও ওকে বারবার বলেছে,কিন্তু ও মানে নি। ফুফির কাছে গিয়ে বলতেই ফুফি আঁতকে উঠলেন। উনি আবরারের সামনে দু হাত জোড় করে বললেন,–‘বাবা,এ অন্যায় কিছু চেয়ো না।’
ফুফি আবরারকে বলেছে,এত বছর পর উনি উনার পরিবারের সাথে এক হতে পেরেছেন। তোর বাবা যে খুশি কেড়ে নিয়েছিলো,তা আজ এত বছর পর ফিরে পেয়েছি।তুই আজ আবার সেটা কেড়ে নিস না। ‘
বাহ,কী আবদার! আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি সবার কার্যকলাপ। আবরার পাগলের মতো সবার কাছে হাত জোড় করতে লাগলো,কেউ মানে নি।আমার কাছে এসে বললো,”চলো আমরা পালিয়ে যাই!’ শেষে আমি ওর গালে থাপ্পর দিয়ে বলেছি,কেউ যদি মেনেও যায় তাহলেও আমি বিয়ে করবো না তোমাকে।আর পালিয়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
আবরার শুধু ছলছল নয়নে তাকিয়ে ছিলো।আমি দৌড়ে চলে এসেছি,চোখের পানি তো আমার বাঁধ মানছিলো না। তাই ওখান থেকে চলে আসি।
আজ আমার বিয়ে।বিয়ের জন্য পুতুলের মতো সাজানো হচ্ছে। বিয়ে টা করবো আমি। পুরো পরিবারের হাসিখুশি মুখ শুধু আমার এ বিয়ে নিয়ে। ভেবেছিলাম দিদুনকে সরাসরি না বলে দিবো যদি না মানে তাহলে পালিয়ে যাবো । এই তো সেই দিদুন যে আমাকে নিজের কিডনি দিয়ে দিয়েছিলো,আজ তার কথা না ভেবে আমি আমার খুশীর জন্য পালিয়ে যাবো? এত বছর পর পুরো পরিবার এক হয়েছে,সবাই খুশী।আজ আমি পালিয়ে গিয়ে আবার কী আমি সেই পুরানো ক্ষত টা জাগ্রত করে দিয়ে কী করে সবার হাসিখুশি মুখ ধ্বংস করে দিবো?
‘আমার এক ত্যাগে যদি শত মানুষের মঙ্গল হয়, তাহলে সে ত্যাগেই আমি সুখী!’
২২.
চোখ ভর্তি স্বচ্ছ জ্বল নিয়ে বিয়ের আসরে বসে আছি।বিয়ে টা কী হয়ে যাবে?এখন কী সিনেমার মতো কোনো চমক হবে না?কেউ কী বলবে না যাও তুমি আবরারকে বিয়ে করো আর ওর সাথেই সুখে থাকো। খুব কী ক্ষতি হবে কোনো মিরাক্কেল হলে?
বিয়ে পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।কবুল শব্দ উচ্চারণ করা টা আমার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।গলা দিয়েই বের হচ্ছে না। আধো আধো গলায় ১ বার “ক বু ল” বলতেই পুরো বিয়ে বাড়ীতে চোরগোল হয় যে আবরার সুইসাইড করেছে। কথা টা আমার দুনিয়া হেলিয়ে দিলো। সারা শরীর জুড়ে টান টান উত্তেজনা অনুভব করলাম। বিস্ফোরিত হয়ে আমি উঠে গেলাম।দৌড়ে গেলাম আবরারের কাছে,পুরো রুম রক্তে ভেসে আছে, শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ঔষধ। ওর পার্লস রেট চেক করে দেখা হয়ে গিয়েছে। ধপ করে বসে পড়লাম ওর পাশে, কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দিয়ে ওর শরীরে রাখতে নিলাম। পাশ থেকে কেউ আমার হাতে চিরকুট গুঁজে দিলো।
**শ্রুতি,
এই যে তুমি,হ্যা তুমি! এত সেজেছিলে কেনো?আমার কত কষ্ট হয়েছে জানো?কী দরকার ছিলো এত সাজার?বুক টা ফেটে যাচ্ছিলো।কাঠ ফাটা রোদে মাঠঘাট যেমন ফেটে যায়, আমার বুক টাও তেমন ফেটে যাচ্ছিলো!সহ্য হচ্ছিলো না,তাকাতে পারছিলাম না। আপনাআপনি চোখের বর্ষণ হচ্ছিলো। এক পলক তাকিয়ে ছিলাম,শুধু এক পলক। ভাবতে পারো,এই পলক তাকানো তেই আমার এ হাল হয়েছে তাহলে সেখানে বাকি জীবন কী হবে? কত কষ্ট হবে। আমি কী সত্যিকারে বেঁচে থাকতাম? বলো? তুমি হয়তো এখন বলতে,ভালোবাসা মানুষকে বেঁচে থাকতে শেখায়। জীবিত থেকে সেই ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতাম। তাহলে বলি আমি না একদম তেমন প্রেমিক পুরুষ নই। আমি পারবো না পুরানো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে আর না অন্য কারো সাথে সংসার করতে। তাই আমি চলে যাচ্ছি।তোমার ওই ইশতিয়াক কে বলো,আমি প্রমান করে দিয়েছি যে আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।ওহ,হ্যা তোমার ফুফিকেও বইলো আমি আমার বাবার মতো হয় নি,ছিনিয়ে নেই নি তার খুশী!
শুনো আমি তো চলে যাচ্ছি, তাই একটা অনুরোধ ছিলো।ভয় পেয়ো না,আমি তো থাকবোই না তাই তেমন কিছুই চাইবো না।শুধু এ সামান্য টুকু চাই। সেটা হলো আমাকে না একদম ভুলে যেও না,একটু একটু হলেও মনে রেখো। দোয়ায় না পারলে বদ দোয়ায় হলেও মনে রেখো!এটা না হয় শেষ অনুরোধ ধরে নিও।
মনে রাখবে তো?
ইতি,
‘আশিক আবরার’
সমাপ্ত!
[বিদ্র:আপনারা মনে রাখবেন তো? রিচেক করা হয় নি।এটা আমার লেখা সবচেয়ে প্রিয় গল্প ছিলো।]