Mr_Arrogant ? #The_Addiction_Of_Love,Part_23,24

0
2203

#Mr_Arrogant ?
#The_Addiction_Of_Love,Part_23,24
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_23
.
.
.
.
মুখে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে হসপিটাল বেডে হেলান দিয়ে বসে একটার পর একটা আপেলের পিসে কামড় বসাচ্ছে আভি। ওর সামনেই বরাবর দাঁড়িয়ে আছে উইলন। নার্স আভিকে চেক করে বেড়িছে সবেমাত্র। উইলন আর কয়েকজন গার্ডকে আভির উপর নজর রাখার জন্য রেখে গেছে রওশন।

আভিঃ এই একটা কথাই আমি বুঝতে পারছি না আমাকে এভাবে নজরবন্দি করে রাখার মানেটা কি? যতটুকু আমি রওশনকে চিনি এতোক্ষনে ও সুবহাকে শানের কয়েদ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে আর নিশ্চিত এই মুহূর্তে শান পরপাড়ে শিফ্ট হয়ে গেছে। বেচারা! যদি আমার সাথে বেঈমানি না করে সুবহাকে আমার সাথে যেতে দিতি তাহলে হয়তো দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে পারতি। বাট আলাস! তোর বেঈমানি তোর উপর ভারি পরল,,(তাচ্ছিল্য হেসে মনে মনে)

উইলনঃ কি ভাবছেন আভি স্যার?( ক্লোজআপ স্মাইল দিয়ে)

আভিঃ ভাবছি আপেল না খেয়ে তোমাদের মাথা খেলে মন্দ হয় না। ( দাঁতে দাঁত চেপে)

উইলনঃ ম মানে?( হচকিয়ে)

আভিঃ তোমরা এভাবে আমাকে পাহারা দিয়ে রেখেছো কেন? আমি কি আসামি আর এটা কি কয়েদখানা? তোমাদেরকে আমার কাছে বিরক্তিকর লাগছে প্লিজজজ আমাকে একা ছেড়ে দাও কিছুক্ষণের জন্য।( কিছুটা রেগে)

উইলনঃ স্যরি স্যার কিন্তু এটা রওশন স্যারের অর্ডার আপনাকে একা ছাড়তে পারব না।

আভি রেগে জোরে জোরে আপেলে বাইট দিচ্ছে যেন এটা আপেল না উইলন এর‌ মাথা। উইলন শুকনো ঢোঁক গিলে একটু দূরে সরে বসে আভির থেকে।

???

ডক্টর সুবহাকে চেকআপ করে বেরিয়েছে। বেশি স্ট্রেস নেওয়ার কারনে দূর্বল হয়ে পরেছিল ও যার জন্য সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।

রওশন সুবহার দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছে। ও চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে কিন্তু গড়িয়ে পড়ছে না।

রওশনঃ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না সুবহা। সবাই আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছে তুমি এমন করো না প্লিজ। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। হয়তো প্রকাশ করতে পারি না বাট আই রিয়েলি লাভ ইউ। You r my #Addiction_Of_Love আমি তোমাতে আসক্ত। সবসময় তোমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি কারন আমি তোমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে চাই ভয় আর ঘৃনা না। তোমার চোখে আমার প্রতি ভয় আর ঘৃনা আমি সহ্য করতে পারব না। প্লিজ ডোন্ট হেইট মি প্লিজ।( করুন স্বরে)

সুবহার হালকা করে চোখ মেলে তাকাল। রওশন সুবহার হাত ধরে বসে ওর দিকেই পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। সুবহাকে চোখ খুলতে দেখে রওশনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।

সুবহা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রওশনের দিকে।

রওশনঃ তুমি ঠিক আছো সুবহা? দেখো আমি তোমাকে সব এক্সপ্লেইন করে বলবো। শুরু থেকে সব বুঝিয়ে বলব প্লিজ আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনো,,,

সুবহাঃ আমি বাংলাদেশে ব্যাক করবো আজই,,,( শান্ত কন্ঠে)

সুবহার কথায় রওশন চুপ করে গেল। সুবহা বিষয়টা এড়িয়ে চলতে চাইছে রওশন বুঝতে পারছে।

রওশনঃ সুবহা আমার কথা…

সুবহাঃ আভি সত্য বলেছিল সেদিন আপনি একজন খুনি…একজন গ্যাংস্টার,,,আমি কোন খুনির সাথে নিজের জীবন জড়াতে চাই না। মুক্তি চাই আমার প্লিজ( ছলছল চোখে)

রওশন সুবহার কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। সুবহা ওকে খুনি বলছে ওর মুক্তি চাই। সুবহা নিজের মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। রওশন কিছু না বলেই দাঁড়িয়ে যায় তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলতে শুরু করে,,,

রওশনঃ আমি ডিস্চার্জ পেপার রেডি করে আনছি তুমি অপেক্ষা করো। আজকে রাতেই বিডিতে ব্যাক করব আমরা।

রওশন চলে গেল। রওশন যেতেই সুবহা ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দেয়।

সুবহাঃ কেন লুকালেন নিজের সত্য আমার কাছ থেকে রওশন? আমি কখনো একজন খুনিকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে চাই নি তাও কোন গ্যাংস্টার কে। আমি ঘৃনা করি এদের কিন্তু আপনি এদের মধ্যে একজন বের হলেন। মাফিয়াদের ঘৃনা করা সত্ত্বেও একজন মাফিয়াকে ভালোবেসে ফেললাম আমি। আই ডোন্ট ওয়ান্ট দিস লাভভ,, আমি ঘৃনা করি এই কাজকে আর যারা এই কাজ করে তাদের( কান্না করতে করতে)

[ সুবহা যখন ছোট ছিল ওর বাবা মায়ের সাথে মার্কেটে এসেছিল ও। সব‌ কেনাকাটা করে ওরা ফিরে যাচ্ছিল। হঠাৎ সুবহার মায়ের মনে পরে যায় কয়েকটা প্যাকেট মলেই রয়ে গিয়েছে। সুবহাকে গাড়িতে রেখে ওর বাবা মা
আবারো মলে প্রবেশ করে। কিছুক্তন পরেই মলে একটা বিস্ফোরণ হয় আর ভিতরের সব মানুষ মারা যায়। সে ব্লাস্ট টা বিদেশি একটা মাফিয়া দলেরা করেছিল যারা এক কথায় দেশদ্রোহী। সেদিন থেকে মাফিয়া নামটাই সুবহার কাছে ঘৃনিত। ওর কাছে সবাই অপরাধী ]

গ্ৰীল ধরে বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রওশন। ওর ভিতরের কষ্টটা ওই অনুভব করতে পারছে। সুবহার বলা একটা কথা ওর মনটাকে কত বড় আঘাত দিয়েছে তা হয়তো সুবহার অজানা।

রওশনঃ সিরিয়াসলি সুবহা!! তুমি আমাকে খুনি ভাবো? আমার কাছ থেকে মুক্তি চাই তোমার? যে চোখে আমি নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে চেয়েছিলাম সে চোখে আমি আজ ঘৃনা দেখতে পারছি। হোয়াই সুবহা হোয়াই? আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তোমার আছে। একবার আমাকে বলার সুযোগ টুকুও দিলে না তুমি। এতো ভালোবাসা দিয়েও কি তোমার মনে আমার জন্য সামান্য অনুভূতি টুকুও তৈরি করতে ব্যর্থ হলাম আমি।

রওশন রেলিং ঘেঁষে বসে পরল। আজকে প্রথমবার কাঁদছে রওশন। ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে,,যে রওশন সব পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নেয় সে আজ সামান্য কথায় ভেঙে পরছে।

দূরে থাই গ্লাসের আড়ালে দাঁড়িয়ে আভি রওশনকে দেখছে। ওর ইচ্ছে করছে রওশনের পাশে গিয়ে বসতে। রওশনের কষ্টে নিজের বুকে ব্যথা অনুভব করছে আভি। নিজের কদম সামনে এগোতেই হঠাৎ কিছু একটা মনে পরে যায় ওর।

আভিঃ নো আমার কষ্ট হয় না তোমার কষ্টে। ইউ ডিসার্ভ দিস। আই হেইট ইউ ভাই আই জাস্ট হেইট ইউউ,,,

আভি চলে গেল ওখান থেকে। রওশন ঠাই বসে আছে ওখানে। উইলন কে দিয়ে তিনটা টিকিট বুক করেছে রওশন। আভিকে এক প্রকার জৌর করেই নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছে ও। আভি কিছু বলতেও পারছে না করতেও পারছে না শুধু রাগে ফুঁসছে।

? In Airport ?

বিডির ফ্লাইট আ্যনাউন্স হতেই ওরা প্লেনে চড়ে বসে। সুবহা এখনো রওশনের সাথে কোন প্রকার কথা বলে নি সারাক্ষণ চুপচাপ ছিল ও। রওশনও প্রয়োজন ছাড়া সুবহার সাথে কথা বলছে না।

পাশাপাশি বসে আছে রওশন আর সুবহা সিটে। পাশে থেকেও দু’জন অচেনার মত বসে আছে। প্রথম দিন প্লেনের ঘটনা মনে পরতেই সুবহার চোখের কোণে পানি চলে আসে। রওশনও যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।

আভি পিছনের সিটে বসেছে। মাথায় ছোট ব্যান্ডেজ এখনো ‌আছে।কোন‌ কাজ না পেয়ে বসে ফোনে গেম খেলছে ও। হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠ শুনে চোখ তুলল ও।

ওহিঃ আরেহহ আপনি?( অবাক হয়ে)

আভিঃ তুমি??

ওহিঃ ওটা আমার সিট ( জানালার সামনে দেখিয়ে)

আভিঃ ওহহ ( সাইড দিল )

ওহি আভির পাশে বসে পরল। আভি নিজের ফোনে মনযোগ দিতেই ওহি বলে উঠে।

ওহিঃ সেদিন আপনাকে থ্যাংক ইউ দিতে পারি নি তার জন্য স্যরি,,

আভিঃ ইট্স ওকে।

ওহিঃ ওকে?? নাথিং ইজ ওকে। এটা তো বেয়াদবি আপনি আমার হেল্প করলেন আর আমি আপনাকে থ্যাংক ইউ পর্যন্ত বললাম না। আমি আসলেই দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছি। থাক বাদ দেই এখন থ্যাংক ইউ বললাম আমার মনটা শান্তি হলো।

আভিঃ থাক আমি কিছু মনে করি নি। ( কি মেয়ে রে বাবা নিজেই নিজেকে বেয়াদব বলছে,,,মনে মনে)

ওহিঃ আমার নাম ওহি।( হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

আভিঃ আমি আভি,,( শুধু হাসি দিয়ে)

ওহি নিজের হাত নামিয়ে নিল‌‌।

ওহিঃ আপনার এজ কত ?

ওহির এমন প্রশ্নে আভি অপ্রস্তুত হয়ে পরে তারপর আমতা আমতা করে বলে।

আভিঃ পঁচিশ কেন?

ওহিঃ ও মাই গডডডডসস আপনি তো আমার সাত বছরের বড় নোওও আমার অনলি আঠারো,,( হতাস হয়ে)

আভিঃ সো হোয়াট,,( বিরক্ত হয়ে)

ওহিঃ‌ আমি আপনার উপর ক্রাশড। কোথায় ভাবলাম প্রেম টেম করে বিয়ে করব আপনাকে কিন্তু আপনি তো বুইড়া,,,

ওহির কথায় আভির বিষম লেগে যায় কাঁশতে শুরু করে ও। ওহি নিজের সাইড ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দেয় আভিকে। আভি গটগট করে পুরো‌ বোতল খালি করে দেয়।

ওহিঃ আপনি ঠিক আছেন? একটু কেয়ারফুলি থাকেন এই বয়সে যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয় তাহলে উপরের টিকিট কেটে যাবে।

আভি নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে একতো ওকে বুড়ো থুক্কু বুইড়া বললো তার উপর বয়সের দোহাই দিচ্ছে। পরক্ষনেই নিজের রাগে কন্ট্রোল করে ও মনে মনে বলে,,

আভিঃ কন্ট্রোল আভি কন্ট্রোল পিচ্চি মেয়ে অবুঝ তাই উল্টা পাল্টা কথা বলছে,, তুই রাগিস না,,,( মনে মনে)

ওহি নিজের মত করে বকবক করেই যাচ্ছে আর আভির যেন কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।‌ বেচারা অসহায় হয়ে মনে মনে বলছে,,,

আভিঃ ভাই এই কোন ঝামেলায় ফেললি আমায়। আর কোন সিট পাসনি আমার জন্য শেষমেশ এই পিচ্চির সাথে বসালি। সব তোর প্লান আমি জানি। প্রতিশোধ নিবি ভালো কথা কিন্তু এভাবে। আমার মত অসহায় ছেলেকে এই চুরেল শাকচুন্নী পিচ্চির পাল্লায় ফেললি। ( অসহায় ভাবে)

To be continued…..

#Mr_Arrogant ?
#The_Addiction_Of_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_24
.
.
.
.
বাংলাদেশে‌ ফ্লাইট ল্যান্ড করতেই সবাই নেমে আসে। সুবহা আর আভি দাঁড়িয়ে আছে রওশন কিছু ফর্মালিটি পুরন করতে গেছে।‌ আভির শরীর যেন চলছে না চোখ দুটো লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেচারা হয়তো সারারাত ঘুমাতে পারে নি। বারবার ঘাড় বাঁকিয়ে সোজা করছে ও। সুবহা আড়চোখে আভিকে দেখছে আর ভাবছে হয়তো মাথায় ব্যাথা পাওয়ার কারনে ঘুম হয়নি ওর।‌

রওশন চলে আসে আর তার সাথে গার্ডরা আসে ওদের লাগেজ নিয়ে।

রওশনঃ চলো সুবহা। আর আভি তোকে গার্ড রা বাড়ি পৌঁছে দিবে গিয়ে রেস্ট নিস।

রওশনের কথা শুনে আভি গার্ডের হাত থেকে নিজের লাগেজ নিয়ে নেয় তারপর বলে,,,

আভিঃ আভির কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। বাকিটা পথ আমি একা যেতে পারব নো নিড ইউর হেল্প মি. রওশন রায়জাদা।

রওশন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আভির দিকে। আভি সেই দিকে পরয়া না করে নিজের লাগেজ নিয়ে হাঁটা ধরে।

রওশনঃ তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন লাগেজ নিয়ে গাড়িতে রাখো।( গার্ডদের ধমক দিয়ে। আভির রাগ গার্ডদের উপর তুলল। )

রওশন সুবহাকে নিয়ে গাড়িতে বসে পরে। সুবহা অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছে রওশনকে কিন্তু পারছে না। রওশন জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।সুবহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রওশন বলে উঠে।

রওশনঃ কিছু বলতে হবে না সুবহা আমি জানি তুমি কি চাও। বাড়িতে পৌঁছে নেই তার পর তোমার সব চাওয়া পুরন করব আমি।( ভারি কন্ঠে)

সুবহার চোখের কোন বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। সুবহা তা আড়াল করে জানালার বাইরে তাকালো। রওশন বাইরে তাকিয়ে আছে শান্ত ভাবে কিন্তু ওর ভিতরের তুফানটা কতটা তীব্র হচ্ছে সেটা ও ছাড়া কেউ বলতেই পারবেনা।

???

রওশন বেরিয়ে গেছে কিন্তু আভি এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর গাড়ির অপেক্ষা করছে। ড্রাইভার কে কল করেছেন ও আর ড্রাইভার বলেছে আধা ঘন্টা সময় লাগবে আসতে।

আভি বিরক্ত হয়ে পাশে তাকাতেই দেখল ওহি কাউকে খুঁজছে। আভি ওহিকে দেখা মাত্র একটা দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পরল। আভির চেহারার রং পাল্টে গেছে। ওহি কয়েকজন কে আভির ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছে ওকে দেখেছে কিনা।

আভিঃ আল্লাহ এই মেয়ে কি আমার পিছু ছাড়বে না? প্লিজ আমাকে এই রাক্ষুসী থেকে সেভ করো আই প্রমিজ সব খারাপ কাজ ছেড়ে দিব একদম ভালো আর ভদ্র হয়ে যাব প্লিজ সেভ মি ফ্রম দিস সাইকো গার্ল। ( অসহায় ভাবে)

ফ্লাইটের কথা মনে পরতেই আভির কান্না পায়। সারা রাত ওহি ওর মাথা খেয়েছে বকবক করে। যাও মাঝরাতে একটু ঘুম এসেছিল কিন্তু ওহির জন্য তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ওহি ওকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে ছিল। একটু নড়ার শক্তি টুকু পায়নি আভি। একতো মাথার যন্ত্রণা তার উপর ওহির যন্ত্রণা। ঘুমের ঘোরে ওহি কয়বার আভিকে থাপ্পড় দিয়েছে হিসেব নেই। একটু পর পর ওহি লাফ দিয়ে উঠতো আর ভিলেন ভিলেন বিরবির করে বলে আভির উপর হাত চালাতো। হয়তো বেশি মুভি দেখার কারনে স্বপ্নেও মুভির সিন ভাসছিল ওর। আর আভিকে ঘুমের ঘোরে ভিলেন ভেবে কিলিয়ে দিত। আভি তো না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। ওহিকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারত না ওর মায়াবী ফেইস দেখে। ঘুমের মধ্যে ওকে আরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছিল আভি চাইতেও ওকে জাগাতে পারে নি। সারা রাত ওর অত্যাচার সহ্য করেছে নিরবে‌‌।

সকালে ফ্লাইট ল্যান্ড হতেই এক প্রকার দৌড়ে বের হয় ও প্লেন থেকে। ওহি পেছন থেকে অনেক ডেকেছে কিন্তু আভি পেছনেও ফিরে নি।

হঠাৎ ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শে আভির ধ্যান ভাঙে। আভি পাশে তাকাতেই ওর হার্ট অ্যাটাক করার উপক্রম।

ওহিঃ আমি আপনাকে কখন থেকে খুঁজছি আর আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন আভি। তখন আমাকে “ বাই ”না বলেই চলে এলেন কেন?( মন খারাপ করে)

আভিঃ চুরেলের কয়েদখানা থেকে রেহাই পেলে মানুষ এভাবেই পালায় ওহি বেবি। ( অসহায় ভাবে )

ওহিঃ মানে ?

আভিঃ আই মিন আমার একটা জরুরী কাজ ছিল তাই,,( আমতা আমতা করে)

ওহিঃ আমি আপনাকে আবার পাপার সাথে দেখা করাতে চাই। উনাকে বলে তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রিপারেশন নিতে হবে না।

আভিঃ কিহহহহ কোন বিয়ে কার বিয়ে কেমন বিয়ে?( বুকে হাত রেখে শক্ড হয়ে)

ওহিঃ কেন আমার আর আপনার বিয়ে,,( লজ্জা পেয়ে)

আভির তো এবার সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। বেচারা বুকে হাত রেখে আছে এখনো।‌

আভিঃ ভাইইই কই তুই? যদি তোর সাথে চলে যেতাম তাহলে আর এই সাইকো গার্লের পাল্লায় পরতে হতো না। ব্রোওও প্লিজ হেল্প ইউর ব্রাদারর,( মনে মনে কান্না করছে)

ওহি আভির সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল; কি ভাবছেন?

আভিঃ ভাবছি আর হয়তো বেশি দিন বাঁচা হবে না। ( আহত কন্ঠে)

ওহিঃ সেটাইতো আমি বলছি আপনার বয়স হয়ে গিয়েছে তাই আমাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেওয়া উচিত। কখন কি হয়ে যায় বলা তো আর যায় না। আ্যট লিস্ট আপনার লাস্ট মোমেন্টে আমি আপনার খেয়াল রাখতে পারব।

আভিঃ এই মেয়ে তুমি আমাকে বেঁচে থেকে মারার প্ল্যান করেছো নাকি?( রেগে)কখন থেকে তোমার উল্টা পাল্টা কথা শুনছি কিছু বলছি না। আমাকে কি তোমার জোকার মনে হয় হ্যাঁ? জানো আমি কে? ডু ইউ নো হু আ্যম আই???( চেঁচিয়ে)

ওহিঃ আমার ভবিষ্যৎ ছেলের আব্বুউউউ,,( লজ্জা পেয়ে)

আভি পুরোই টাস্কি,,, নাহ বেশিক্ষণ এখানে থাকা যাবে না। এ মেয়ে ওকে নির্ঘাত জিন্দা অবস্থায় মেরে ফেলবে।

ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। আভি ওহির দিকে তাকিয়ে এক দৌড়ে ওর গাড়িতে উঠে যায়। ওহি বুঝে উঠার আগেই ব্যাপারটা হয়ে যায়।

আভিঃ ওও ড্রাইভার চাচা তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দাও নাহলে আমি এখানেই হার্ট অ্যাটাক করব।

ওহিঃ আরেহ আভি কোথায় যাচ্ছেন?( দৌড়ে এসে)

ওহি আসতে আসতে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। ওহি গাড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,,,

ওহিঃ যতই পালানোর চেষ্টা করুন আভি আপনাকে তো আমার হতেই হবে। আমার আপনাকে চাই আর যেটা আমার চাই সেটা যে কোন মূল্যে আমি আদায় করে ছাড়ি।‌ আমার পাপা কখনো আমার কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখে নি আর আমি জানি এবারো তাই হবে।

আভি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ও। সারাদিনের ক্লান্তি যেন ওকে ঘিরে ধরেছে।

???

রওশন আর সুবহা বাড়িতে পৌঁছে যায়। রওশন সোজা ভিতরে ঢুকে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। সুবহাও নিজের রুমে চলে আসে।

রওশন ওর রুম লক করে ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ওর চোখের কোণে জমে থাকা পানি গুলো ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। এতক্ষন জমিয়ে রাখা কষ্ট গুলো চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পরছে।

রওশনঃ নোও আমি ভেঙে পরতে পারব না। পরিস্থিতি এমন হবে তা আমার জানা ছিল তাও কেন কষ্ট হচ্ছে? সুবহা আমাকে ঘৃনা করবে সে ভয়ে ওর থেকে দূরে সরে থাকতাম ওকে অন্যের হাতে তুলে পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। কারন একটাই: ভালোবাসি তাই।

তুমি আমাকে বুঝলে না সুবহা! না আমাকে বুঝলে আর না আমার ভালোবাসা কে।

এই মিথ্যা সম্পর্কে বেঁধে রাখবো না তোমায় মুক্ত করে দিব। ( কড়া গলায়)

সুবহা নিজের রুমে পায়চারি করছে আর অপেক্ষা করছে রওশনের বের হওয়ার। অনেক রাত হয়ে গেছে। আজকে রওশন নিচেও আসে নি খাবার খেতে।

সুবহাঃ নাহ এভাবে বসে থাকলে চলবে না আমার রওশনের সাথে কথা বলতে হবে। উনাকে উনার কথা বলার একটা সুযোগ দিতে হবে আমায়। আমার মন বলছে রওশন কখনো কোন ভুল করতে পারে না। আর মন কখনো ভুল বলে না।‌( নিজে নিজে বলছে)

সুবহা আর না থাকতে পেরে রওশনের রুমে চলে আসে। রওশনের রুমে খোলা তাই সুবহা বিনা নক করে ঢুকে পরে। কিন্তু রুম খালি রওশন কোথাও নেই। পুরো রুমে অন্ধকার শুধু নীল শেডের বাল্ব জ্বলছে।

সুবহাঃ রওশন কোথায় গেল রাতে?

সুবহা বারান্দা আর ওয়াশরুম চেক করে নেয় কিন্তু রওশন নেই। সুবহা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই হঠাৎ রওশনের স্টাডি টেবিলে ওর চোখ যায়। একটা কিছু চিকচিক করছে টেবিলে অন্ধকার থাকায় ওর চোখে লাগছে জিনিসটা।

সুবহা ধীর পায়ে গিয়ে টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। টেবিলের ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিল সুবহা। একটা ঝুমকা রাখা আর তার নিচে একটা ধূসর রঙের ডায়েরি।

সুবহা ঝুমকা টা আর ডায়েরিটা হাতে তুলে নেয়। ডায়েরির উপরের লিখাটা পড়েই টাস্কি খেল ও। ডায়েরির উপরে খুব সুন্দর করে লিখা,,,
“ #রওশনে_সুবহা”

সুবহা ডায়েরির প্রথম পেজ খুলতেই ওর চোখ ছানাবড়া। ডায়েরির প্রথম পাতায় ওর ছবি আঁকা তাও এতো নিখুঁত ভাবে।

সুবহা হন্তদন্ত করে পরের পেজ উল্টাতে নিলেই কারো পায়ের শব্দ পায়। সুবহা সাথে সাথে ডায়েরিটা নিজের ওড়না দিয়ে ঢেকে আড়াল করে নেয়।

রওশন রুমে এসে সুবহাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়।

রওশনঃ তুমি এতো রাতে আমার রুমে?

সুবহাঃ আব দেখতে এসেছিলাম আপনি ঘুমিয়েছেন কিনা। আপনাকে রুমে না দেখে একটু টেনশন হচ্ছিল। আপনি ঠিক আছেন?

রওশনঃ একজন খুনির চিন্তা তোমাকে করতে হবে না সুবহা। ( তাচ্ছিল্য হেসে)

রওশনের কথাটা সুবহার হৃদয়ে লাগলো। ও যখন রওশনকে খুনি বলেছিল তখন এতোটা খারাপ লাগে নি কিন্তু ‌এখন রওশনের মুখে খুনি শব্দ টা ওর‌ সহ্য হচ্ছে না।

রওশনঃ‌ আর তাছাড়া রওশন কখনো খারাপ থাকে না। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে জানি আমি সামান্য তে ভেঙে পরার মানুষ না। ( স্মিথ হেসে) তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পরো কালকে আমি তোমাকে তোমার বাড়ি পৌঁছে দিব। আমার মত খুনি মাফিয়ার সাথে থাকতে হবে না তোমার। ( হালকা হেসে)

রওশনের কথায় সুবহার চোখে পানি চলে আসে। মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসে ও রুম থেকে। সুবহা বেরিয়ে আসতেই রওশন দরজা বন্ধ করে দেয়।

সুবহা মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে আসে তারপর ডায়েরিটা খোলে।

???

আভি বারে বসে আছে। সবাই সবার মত ব্যাস্ত আর আভি নিজের ফোন নিয়ে। হঠাৎ একজন আভির সামনে এসে দাঁড়ায়। আভি চোখ তুলে তাকাতেই রাগে ওর চোখ লাল হয়ে যায়।

আভিঃ তুইইই?

রকিঃ কেমন আছিস দোস্ত ?( শয়তানি হেসে)

আভি রেগে দাঁড়িয়ে যায় তারপর বলতে শুরু করে,,

আভিঃ তোর সাহস তো কম নয় তুই আবারো আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিস। চার বছর আগের ঘা এখনো কিন্তু তাজা আছে রকি তাই ভালোয় ভালোয় বলছি সরে যা আমার সামনে থেকে।

রকিঃ কুল ডাউন ব্রোও ডোন্ট বি সো হাইপার। আরেহ তোর মাথায় ব্যান্ডেজ কিসের? আবারো তোর রওশন ভাইয়ের হাতে মার খেয়েছিস বুঝি?( হেসে)

আভি রেগে রকির কলার চেপে ধরে,,

আভিঃ জাস্ট শাট আপ অ্যান্ড লিভ দিস প্লেস,,,

রকিঃ এই বার তোর একার না যে তুই বলবি আর আমি চলে যাব। তাছাড়া তোর মত লুজারের কথা আমি কানে দেই না। ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

রকির কথায় আভির রাগ আরো বেড়ে গেল। রকির নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে ওকে নিচে ফেলে দেয় ও।

আভিঃ চার বছর আগে শুধু তোর জন্য আমার ভাই আমাকে সবার সামনে চর মেরেছে সবচেয়ে বড় কথা আমাকে অবিশ্বাস করেছে। এতো বছর রাগটা জমানো ছিল কিন্তু তুই আর আমাকে শান্ত থাকতে দিলি না। তোর জন্য আমার লাইফ হ্যালো হয়ে গেছে তোকে আজ ছাড়বো না।

আভি রেগে ইচ্ছা মত রকিকে মারতে শুরু করে। রকিও পাল্টা ভাবে প্রহার করছে। ওদের অবস্থা দেখে গার্ড রা এসে ওদের আটাকায়।

রকিঃ লিভ মি ( গার্ডদের ঝাড়ি মেরে) গতবার তোর ভাইয়ের জন্য বেঁচে গিয়েছিলি কিন্তু এবার বাঁচবি না। এই আঘাতের প্রতিশোধ আমি নিবই।

রকি ওর গার্ডদের নিয়ে চলে যায়। আভি নিজেকে ছাড়িয়ে জোরে দেয়ালে ঘুষি মেরে বেরিয়ে যায়। ড্রিঙ্ক করছে আর ড্রাইভ করছে আভি। চার বছর আগের ঘটনা সব একেক করে চোখে ভাসছে ওর। বেশি ড্রিঙ্ক করায় সব ঝাঁপসা ঝাঁপসা দেখছে ও।

গাড়ি আর কন্ট্রোল করতে পারলো না আভি গাড়ি গিয়ে সোজা একটা গাছে বারি খেল,,,,

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here