#Mr_Arrogant ?
#The_Addiction_Of_Love,#Part_3,4
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
03
গত কাল ঘটে যাওয়া সব কাহিনী সুবহা রওশনকে বলল। রওশন বাকরুদ্ধ হয়ে শুনেছে সুবহার কথা।
ওর আগে থেকেই জানা ছিল আভি কখনো সুধরাবে না। কলেজ লাইফ থেকেই আভি মেয়েদের প্রতি দুর্বল। ওর কতটা আ্যফের ছিল তা হয়তো ওর নিজেরও মনে নি।
সুবহার সাথে পরিচয় হবার পর আভির মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করেছিল রওশন। ও ভেবেছিল হয়তো আভি বদলে গেছে। কিন্তু এখন সুবহার কথা গুলো তে রওশন এর ধারনা ভূল প্রমাণিত হলো। কুকুরের লেজ যেমন কখনো সোজা হয় না তেমনি আভিও হয়তো কখনো সুধরাবে না।
এখন সুবহাকে কি বলে শান্তনা দিবে তা বুঝতে পারছে না রওশন। শত হলেও ওর ভাই আভি। আভির ভূলের বোঝা একটু হলেও ওকে বইতে হবে।
অনেক ভেবে রওশন সুবহাকে বলতে শুরু করল।
রওশনঃ দেখো সুবহা আমি,,,
সুবহা রওশনকে থামিয়ে নিজে আবার বলতে শুরু করে।
সুবহাঃ থাক রওশন আপনাকে ওর সাফাইতে কিছু বলতে হবে না। ও আপনার ভাই হয় তাই ওর ভূলটা হয়তো আপনার কাছে তত বড় কিছু নয়। কিন্তু আমার কাছে এটা ভূল না অপরাধ। আভি ধোঁকা দিয়েছে আমাকে। তাই আভির সাথে আমার সম্পর্ক আমি শেষ করে দিয়েছি। হয়তো ও আপনার ভাই হয় তাই আপনি ওর জন্যই বলবেন বাট স্যরি ওর মত ক্যারেক্টারলেস চিটার মানুষের সাথে আমি আমার জীবন জড়াতে চাই না।
সুবহা দাঁড়িয়ে যায় তারপর বলতে শুরু করে।
সুবহাঃ আমি এখানে আপনাকে শুধু এতোটুকুই জানাতে এসেছিলাম।
সুবহা ওর আঙ্গুল থেকে এঙ্গেজমেন্ট রিং খুলে রওশনের সামনে রাখে।
সুবহাঃ আন্টিকে এটা ফিরিয়ে দিয়েন। ওনার কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমার মত অনাথ মেয়েকে উনি নিজের মেয়ের মত ভেবেছেন এটাই আমার কাছে অনেক। কিন্তু হয়তো ওনার মত মা আমার ভাগ্যে নেই।
আমি আগে যেমন একা নিজের পথ চলেছি বাকিটা জীবনও একা চলতে পারবো। আসি,,,,
সুবহা চলে যেতে নিলেই রওশন দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে।
রওশনঃ তুমি ভূল ভাবছো সুবহা।
সুবহা ঘুরে তাকালো রওশনের দিকে।
রওশনঃ আভি আমার ভাই বলে যে আমি ওর হয়ে কথা বলবো তা সম্পুর্ণ ভূল। রওশন রায়জাদা কখনো অপরাধ কে সায় দেয় না আর না অপরাধী কে ক্ষমা করে। ও তোমার সাথে অন্যায় করেছে আর সেটার শাস্তি হিসেবে তুমি যদি ওর সাথে সম্পর্ক শেষ করতে চাও এতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু একটা কথা ভেবে নিও দুনিয়াটা কিন্তু এতো সহজ না। তোমায় নিজেকে সামলানো শিখতে হবে Don’t depend on others.
সুবহাঃ ডোন্ট ওয়ারি রওশন আমি নিজেকে সামলাতে পারি। ছোট বেলা থেকেই একাই নিজের পথ চলেছি বাকিটা পথও একা চলতে পারবো।
সুবহা চলে গেল। রওশন এখনো অপলক তাকিয়ে আছে সুবহার যাওয়ার দিকে। সুবহার ভেতরটার অবস্থা ও অনুভব করতে পারছে। যখন সুবহা নিজেকে অনাথ বলেছিল কথাটা বুকে গিয়ে লেগেছে রওশনের। অনাথ শব্দটা কতটা কষ্টের সেটা হয়তো রওশনের থেকে ভালো কেউ জানে না।
রওশন উঠে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। থাই গ্লাসের বিপরীতে ব্যস্ত শহরটা দেখছে ও। সবাই সবার মত ব্যস্ত এই শহরে। কারো ব্যাথা অনুভব করার সময় কারো নেই।
রওশনঃ এতো টুকুতেই ভেঙে পরলে চলবে না সুবহা। তোমাকে স্ট্রং হতে হবে নিজেকে প্রমান করতে হবে দুনিয়ার সামনে। এই ব্যাস্ত শহরের ভিরে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে। তুমি যত কমজোর হবে আশেপাশের মানুষ তোমাকে ততই ডাবানোর চেষ্টা করবে।
অনেক কষ্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছি আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি শুধু মাত্র এই ব্যাস্ত শহরের মানুষদের সাথে টিকে থাকার জন্য। তোমাকেও তাই করতে হবে। দুনিয়া ততটা সহজ না যেমনটা তুমি ভাবো।
রওশনের চোখের কোনা দিয়ে পানি জমে আছে কিন্তু রওশন সেটা গড়িয়ে পড়ার আগেই নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে ফেলে।
[ সবার একটা অতীত থাকে রওশনেরও আছে সেটা খুব শীঘ্রই জানতে পারবেন ]
এইদিকে,,,,
পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে সুবহা। ভাবছে ওর আগের জীবন আর এখনকার মধ্যে কতটা পরিবর্তন এসেছে।
বুঝ হওয়ার পর থেকেই অনাথ আশ্রমকে নিজের ঘর ভেবেছে সুবহা আর সেখানকার মানুষদের নিজের পরিবার। লেখা পড়ায় ভালো হওয়ার সুবাদে সুবহাকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। নিজের যোগ্যতা প্রমান করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুবহা। অনেক পরিশ্রমে সুবহা এখন নিজের একটা Child NGO গড়ে তুলেছে। সুবহা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার তার পাশাপাশি NGO সামলায় ওর।
এক বছর আগে আভির সাথে একটা সোশ্যাল পার্টিতে দেখা হয়েছিল সুবহার। অনেক কম সময়ে অনেক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায় সুবহা আর আভির। রিশা সুবহার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড ছিল। সব সময় সুবহার পাশে থেকেছে ও।
আভি সুবহাকে ওর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আভির মা সুবহাকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসা দিয়েছে। এই ভালবাসার প্রতি দুর্বল হয়ে পরে সুবহা। কারন মায়ের ভালোবাসা কেমন সেটা ও কখনো বুঝে নি। আশার মাঝে নিজের মাকে খুঁজার চেষ্টা করেছে সুবহা।
এর মধ্যে আভি সুবহাকে প্রপোজ করে সুবহাও রাজি হয়ে যায়। একমাত্র কারন ছিল আশা। ও আভির প্রতি নিজের ভালোলাগাকে ভালোবাসার নাম দিয়ে দেয়। আভি আর আশার প্রতি অনেক দূর্বল হয়ে পরে সুবহা। কারন পরিবারের অর্থ কি সেটা এদের কাছ থেকেই জেনেছে ও।
কিন্তু হঠাৎ করেই সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেল ওর। যাদের এতো বিশ্বাস করেছে শেষে তারাই ওকে সবচেয়ে বড় ধোঁকা দিল।
নিজেদের প্রতি তাচ্ছিল্যের হাসি আসছে সুবহার। কত সহজে ও মানুষকে বিশ্বাস করে নেয় আর সে মানুষ ওকে ধোঁকা দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সুবহা কতটা বোকা।
সুবহাঃ আর না আর কারো প্রতি দুর্বল হবো না আমি আর না কাউকে বিশ্বাস করবো। বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে জানে না কেউ। আমাদের চারপাশে সুধু ধোঁকা বিরাজমান।
সুবহা নিজের চোখের পানি মুছে নিজেকে নরমাল করে নেয় তারপর বলে।
সুবহাঃ আমার জীবন থেকে আভি রিশা নামের অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে। ওদের আর কোন স্থান নেই আমার জীবনে। আই হেট ইউ আই জাস্ট হেট ইউ আভি।
আভির কল আসছে সুবহার ফোনে। কাল থেকে অসংখ্য কল আর ম্যাসেজ এসেছে আভির। সুবহা কোনটার উত্তর দেয় নি। আবার কল আসতেই সুবহা কল কেটে ফোন সুইচড্ অফ করে রেখে দেয়।
সুবহাঃ এখন থেকে কোন পিছুটান নেই। আমি আমার লাইফ নিজের মত করে গুছিয়ে নেব। আমার লাইফে আভি নামক কারো অস্তিত্বের স্থান হবে না।
?The Next Day ?
প্রতি দিনের মত অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে সুবহা। হোয়াইট জিন্স আর হোয়াইট টপ্স পরে উঁচু করে ঝুটি করে নিয়েছে। হালকা মেকআপ আর সুজ ব্যাস রেডি অফিসের জন্য। সুবহা এমন বিহেভ করছে যেন কিছু হয়ই নেই।
ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পরলো সুবহা। বাইরে আসতেই ওর চোখ গেল সাদা রঙের গাড়িটার দিকে। আভি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে হয়তো সুবহার অপেক্ষাই করছিল ও।
সুবহা আভিকে দেখেও না দেখার ভান করে ওর গাড়ির দিকে গেল। আভি সুবহাকে দেখা মাত্রই দৌঁড়ে যায় কিন্তু ততক্ষনে সুবহার গাড়ি অনেক এগিয়ে চলে গেছে।
আভি অনেক ডাক দিয়েছিল সুবহাকে কিন্তু সুবহা পেছনে ফিরে নি।
আভিঃ এটা তুমি ঠিক করছো না সুবহা you have to pay for this. ( রেগে) আমি আভি রায়জাদা আমার পেছনে হাজারো মেয়ে ঘুরে অথচ তুমি আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলে। আমাকে এভোয়েড করার পরিনাম অনেক খারাপ হবে। ( হাতের মুষ্ঠি বন্ধ করে)
?In Office ?
সুবহা অফিসে ঢুকতেই ওর সামনে রিশা চলে আসে। রিশা আর সুবহা একই অফিসে কাজ করে। সুবহা রিশাকে দেখেও না দেখার ভান করে নিজের কেবিনে চলে যায়।
কেবিনে বসে কাজ করছে সুবহা এমন সময় ওর ল্যান্ড ফোনে কল আসে।
সুবহাঃ হ্যালো,,,
।
।
সুবহাঃ ইয়েস স্যার আমি এক্ষুনি আসছি।
সুবহার বস কল করেছিল ওকে কেবিনে ডেকে পাঠিয়েছেন উনি।
সুবহাঃ মে আই কাম ইন।
দীপ্তঃ জ্বি।
সুবহাঃ স্যার ডেকেছিলেন?
দীপ্তঃ জ্বি মিস সুবহা। আসলে কালকে একটা প্রদর্শনী থ্রো করা হয়েছে ফ্যাশন ডিজাইনার দের জন্য। আপনাদের নিজস্ব ডিজাইন করা জুয়েলারী আর ড্রেস প্রদর্শন করার সুযোগ দেওয়া হবে সেখানে। এটা আপনাদের জন্য গোল্ডেন চান্স নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার।
আমাদের অফিস থেকে দুজন সিলেক্ট করা হয়ে তার মধ্যে আপনি একজন।
সুবহাঃ রিয়েলি স্যার। ( খুশি হয়ে) কিন্তু আরেকজন কে?
দীপ্তঃ রিশা!
রিশার নাম শুনেই সুবহার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
দীপ্তঃ আশা করবো আপনারা ভালো পারফরমেন্স দিতে পারবেন।
সুবহাঃ I will try my best.
সুবহা বেড়িয়ে এলো বসের কেবিন থেকে। রিশাও পার্টিসিপেন্ট করবে তারমানে কালকে রিশার মুখোমুখি হতে হবে ওকে।
সুবহাঃ এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমাকে যেভাবেই হোক জিততেই হবেই।
মনযোগ সহকারে কাজ করছে সুবহা প্রদর্শনী ফাংশন এর জন্য।
কাজ করতে করতে কখন অফিস টাইম শেষ হয়ে যায় বুঝতে পারে না সুবহা। হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখে আটটা বেজে গেছে। সবাই হয়তো চলে গেছে এতক্ষনে।
সুবহা সব গুছিয়ে রেডি করে বেরিয়ে পরলো অফিস থেকে।
বাইরে আসতেই আভিকে গাড়ির সামনে দেখতে পেল সুবহা। হয়তো ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল এতক্ষন।
সুবহা আভিকে এভোয়েড করে চলে যেতে নিলেই আভি এসে সুবহার হাত ধরে আটকায়।
আভিঃ সমস্যা কি তোমার হ্যাঁ? ( রেগে) কালকে থেকে এতো ফোন এতো ম্যাসেজ দিচ্ছি কোনোটার রিপ্লাই করো নি। আর আজ সকালে আমাকে এভাবে ইগনোর করলে যেন আমি তোমার চোখে পরি ই নি।
আভি সুবহার হাত খুব জোরে ধরেছে এতে সুবহা ব্যাথায় হাত ছুটাছুটি করছে। ওর চোখে পানি চলে এসেছে ব্যাথায়।
সুবহাঃ আমার হাত ছাড়ো আভি লাগছে আমার। ( ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
আভি সুবহার হাত আরো শক্ত করে ধরে ওকে নিজের কাছে টেনে এনে বলে।
আভিঃ লাগুক আমারো ইগোতে লেগেছিল যখন তুমি আমাকে এভোয়েড করছিলে।
সুবহাঃ আমি তোমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না। ঘৃনা করি তোমাকে বুঝলে আই হেইট ইউ। ( চিল্লিয়ে)
আভিঃ ডোন্ট ইউ ডেয়ার সুবহা। সম্পর্ক ভাঙার নাম মুখেও আনবে না। তোমায় বিয়ে করতে হবে তাও আমাকে। তোমার পাবার জন্য অনেক কাঠখোরা পুরিয়েছি আমি মাঝ রাস্তায় তুমি আমাকে রেখে যেতে পারবে না।
সুবহা এবার এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে বলতে শুরু করে।
সুবহাঃ তোমার মত ক্যারেক্টারলেস চিটার মানুষের সাথে আমি কখনো নিজের জীবন জড়াবো না আভি। স্বপ্ন দেখা বাদ দাও। তোমার এই রূপ যদি আগে আমার সামনে আসতো তাহলে কাহিনী এতো দূর এগোতো না। আরো আগে তোমার থেকে আলাদা হয়ে যেতাম আমি।
সুবহার কথায় আভির রাগ উঠে যায় আর ও সুবহার সামনে গিয়ে পেছন দিয়ে ওর চুলের মুঠো ধরে বলতে শুরু করে।
আভিঃ ভুলেও আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না সুবহা নাহলে আমার ভয়ঙ্কর রুপ দেখতে বাধ্য হবে। তোমার উপর শুধু আমার অধিকার আছে ওনলি মাই। আমি যেমনি হই তোমাকে আমার হয়েই থাকতে হবে।
সুবহা আভিকে ধাক্কা দিয়ে ওর গালে চর বসিয়ে দেয় তারপর চিল্লিয়ে বলে।
সুবহাঃ কখনো না তোমার মত মানুষের সাথে জীবন জড়ানোর থেকে ভালো আমি মরে গেলে খুশি হবো। তোমার চেহারাও আমার কাছে ঘৃনিত।
সুবহা কান্না করতে করতে আভির সামনে থেকে দৌঁড়ে চলে গেল। আভির রাগ মাথায় চরে বসেছে সুবহার থাপ্পড়ে। আভি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে গাড়ির গ্লাসে জোরে ঘুষি মারে।
গাড়ির গ্লাস তেমন কিছু না হলেও ওর হাত আঙ্গুলের সাইড দিয়ে ফেটে যায় আর রক্ত বের হতে শুরু করে।
আভির উপর রাগ দেখিয়ে গাড়ি না নিয়েই সুবহা বেড়িয়ে আসে।
মাঝ রাস্তা দিয়ে কান্না করতে করতে হাটছে সুবহা। আভির কথা গুলো অনেক কষ্ট দিয়েছে ওকে।
হঠাৎ সুবহার সামনে একটা গাড়ি আসতেই কেউ সুবহার হাত টেনে সরিয়ে দেয়। সুবহা সামনে তাকিয়ে দেখে রওশন দাঁড়িয়ে আছে।
রওশনঃ আর ইউ ম্যাড এভাবে মাঝ রাস্তা দিয়ে কেউ হাটে সুবহা। আমি সময় মত না আসলে কি হতো কোন আইডিয়া আছে তোমার। ( ঘাবড়ে গিয়ে)
সুবহা রওশনকে দেখে নিজের কান্নার বেগ থামাতে পারে না ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ও।
রওশন সুবহার কান্নার কারন বুঝতে পারছে না। হঠাৎ রওশনের চোখ যায় সুবহার হাতে। ল্যাম্প পোষ্ট এর লাইটের আলোতে চার আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
রওশনের আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে সুবহার।
রওশন সুবহার গালে আলতো করে হাত রেখে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে বলে।
রওশনঃ সুবহা দেখো প্লিজ স্টপ ক্রাইং। সব ঠিক আছে দেখ। ( নরম স্বরে)
সুবহা আচমকা কান্নার বেগ বাড়িয়ে রওশনকে জড়িয়ে ধরলো। রওশনের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সুবহা।
রওশন সুবহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর এক হাত ওর পিঠে রেখেছে।
রওশনের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়তো রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। চোখ ও রাগে লাল হয়ে গেছে।
রওশনঃ তুই ঠিক করলি না আভি। You have to pay for this. ( মনে মনে)
To be continued…..
#Mr_Arrogant ?
#The_Addiction_Of_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_4
রওশনের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়তো রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। চোখ ও রাগে লাল হয়ে গেছে।
রওশনঃ এটা তুই ঠিক করলি না আভি। You have to pay for this. ( মনে মনে)
রওশন সুবহাকে নিজের গাড়ি করে ওর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। তারপর গাড়ি ব্যাক করে চলে যায় না নিজের গন্তব্যে।
আভি নিজেদের বাড়ির পার্কিংয়ে নিজের গাড়ি পার্ক করছে। গাড়ি পার্ক করে আভি পার্কিং হল থেকে বের হতে নিলেই কেউ ওর মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। আভি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগন্তুকটি ওকে গাড়ির সাথে ধাক্কা দিয়ে ওর হাত বেধে ফেলে কিছু দিয়ে।
আভি ছুটাছুটি করছে আচমকা আগন্তুকটি ওর মুখ বরাবর কয়েকটা পাঞ্চ মারে। আভির নাক দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করেছে। ও চিৎকার ও করতে পারছে না আর না কাউকে ডাকতে পারছে। আগন্তুকটি আভিকে ধাক্কা দিয়ে ওর শার্টের কলার ধরে গাড়ির ডিক্কির সাথে কয়েকটা বারি দেয়। আভি ছিটকে পরে যায় ফ্লোরে। ব্যাথায় কাতরাচ্ছে আভি। আগন্তুকটি ওর পাশে হাটু গেড়ে বসে তারপর নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা আংটি বের করে আভির শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে দেয়।
আভি হাত ছুড়ছে বাধন খোলার জন্য। আগন্তুকটি দাঁড়িয়ে আভিকে ডিঙিয়ে চলে যায়।
ওয়াচম্যান পার্কিং ক্রস করে যাওয়ার সময় আভিকে ওই অবস্থায় দেখে ছুটে আসে। তারপর আভির হাতের বাধন খুলে দিতে দিতে বলে।
ওয়াচম্যানঃ স্যার আপনি ঠিক আছেন? আপনার এ অবস্থা কি করে হলো?
আভির হাতের বাধন খুলতেই ও এক ঝটকায় নিজের মুখের কাপড় টি সরিয়ে ফেলে দেয়। আভির নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে ঠোঁট আর কপাল ফেঁটে রক্ত পরছে।
আভিঃ কে ছিল এখানে কার এত বড় সাহস আভি রায়জাদার উপর হামলা করার? ( দাঁড়িয়ে চিৎকার করে)
ওয়াচম্যানঃ আ আমি দেখেনি স্যার। আমি এই মাত্র আসলাম আর আপনাকে এই অবস্থায়,,,, ( ওয়াচম্যান ভয়ে ভয়ে বলল)
আভি নিজের ঠোঁটের কোনায় আঙ্গুল দিয়ে রক্ত মুছতে মুছতে বলে।
আভিঃ কে হতে পারে এটা যে আমার বাড়িতে ঢুকে আমার উপরেই হামলা করে চলে যায়।
হঠাৎ আভির খেয়াল হলো লোকটি ওর পকেটে কিছু রেখে গিয়েছে। আভি চটজলদি নিজের পকেট থেকে রিং টি বের করে। রিং টি বের করেই আভি চমকে যায়। কারন এটি সুবহার রিং যেটা ও এঙ্গেজমেন্ট এর দিন সুবহাকে পরিয়েছিল। আভি রিংটা মুঠো করে হিংস্র চোখে বলে।
আভিঃ তো এটা তোমার কাজ সুবহা। আমাকে আমারই বাড়িতে গুন্ডা দিয়ে পিটিয়ে প্রতিশোধ নিলে। তোমাকে তো আমি মাসুম ভাবতাম কিন্তু তুমিতো,,,, ( রেগে)
ইট্স ওকে বেবি খেলা তো সবে শুরু। আমার প্রতিঘাতের জন্য প্রস্তুত থেকো।
? In Rayzada Mansion ?
নিজের বেডে বসে হাতে ফার্স্ট এইড করছে রওশন।
আভিকে মারা আগন্তুকটি রওশনই ছিল। সুবহাকে কষ্ট দেওয়ার যোগ্য শাস্তি দিয়েছে ও আভিকে।
আভিকে মারার সময় ডান হাতে আঘাত পেয়েছে ও। হাতের আঙ্গুলের দিক দিয়ে ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে সেখানে মলম লাগিয়ে ক্লিন করে নেয় রওশন।
রওশন বারান্দায় চলে যায় তারপর রেলিংয়ে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে।
রওশনঃ রওশন কখনো কারো অপরাধ ক্ষমা করে না সে যেই হোক। ভূল করলে সেটার যোগ্য শাস্তি রওশন দিতে জানে।
তোর সবচেয়ে বড় ভূল হলো তুই সুবহাকে কষ্ট দিয়েছিস। সুবহার চোখের পানি আমার বুকের বা পাশের ব্যাথা তীব্র করে দেয়। ওর কষ্ট সহ্য হয় না আমার।
কিন্তু বারবার তুই ওর কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়াস। ভেবেছিলাম সুবহা তোর সাথে সুখি থাকবে তাই ওকে তোর কাছে সপে দিয়েছিলাম কিন্তু না আমি ভূল ছিলাম…. তুই ওর যোগ্য না।
আমি সব সময় সুবহার পাশে ছিলাম আছি আর থাকবো ছায়া হয়ে। আমার ভালোবাসা আমার মাঝেই থাকবে ওর আড়ালে।
This is #The_Addiction_Of_My_Love . ওর ভালোর জন্য নিজেকে সব সময় ওর থেকে আড়াল করে রেখেছি। ওর আড়ালেই ওর সব স্বপ্ন পূরণ করেছি ওকে সব কষ্ট আর সব বিপদ থেকে রক্ষা করেছি।
ভবিষ্যতেও এটাই করবো। ওর কোন ক্ষতি হতে দিব না আমি। আগে ভাবতাম তোর সাথে ওর খুশি জড়িয়ে আছে তাই তোদের মাঝে আসার চেষ্টা করি নি কিন্তু এখন তুই ওর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ তাই তোর আর সুবহার মাঝে আমি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।
রওশন শক্ত করে রেলিং টা ধরে এতে ওর হাত থেকে আবারো রক্ত ঝড়তে শুরু করে। কিন্তু এতে রওশনের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ও নিজের মত করেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
? In Morning ?
সুবহা নিজের সব প্রেজেন্টেশন গুছিয়ে নেয়। আজ অনেক বড় দিন ওর জন্য। এতো বড় কম্পিটেশনে পার্টিসিপেন্ট করছে ও। রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে সুবহা।
শহরের সব চেয়ে বড় প্রদর্শনী হল বুক করা হয়েছে কম্পিটেশনের জন্য। দুই রাউন্ডের প্রতিযোগিতা হবে দুই দিনে। সেখানে থাকা এবং কাজের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুবহা অফিসে পৌঁছেই ওর বসের কাছে গিয়ে সব ফাইল জমা দেয়।
দীপ্তঃ ওয়েল ডান সুবহা তোমার সব গুলো ডিজাইন মাইন্ড ব্লোয়িং হয়েছে।
সুবহাঃ থ্যাংক ইউ স্যার।
দীপ্ত সুবহাকে সব রুলস্ বুঝিয়ে ওকে নিয়ে স্টুডিও তে চলে আসে যেখানে কম্পিটেশন থ্রো করা হবে।
স্টুডিওর পাশেই হোটেল বুক করা যেখানে সবার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রায় দেশের নামকরা অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার রা এখানে পার্টিসিপেন্ট করতে এসেছে। তাদেরকে দেখেই সুবহার চেহারার রং পাল্টে যায়। কারন সবাই অনেক বড় মাপের কম্পিটিটর ওর জন্য। এদেরকে বিট করা হয়তো অনেক কষ্ট সাধ্য হবে সুবহার জন্য।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো রিশাও এখানে আছে। যত টুকু সুবহা রিশাকে চিনে ও জিতার জন্য যে কোন সীমানা অতিক্রম করতে পারে আর এখন তো সুবহা ওর সবচেয়ে বড় শত্রু সুবহাকে হারানোর জন্য নিশ্চয়ই ওর মাথায় কোন না কোন কুবুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে।
দীপ্তঃ কিছুক্ষণ এর মধ্যেই এই কম্পিটেশনের চিফ গেস্ট রা চলে আসবেন। তারপর তারা তোমাদের ফাইল জমা নিয়ে রাতে কম্পিটেশন শুরু করবে।
সুবহাঃ বাট স্যার চিফ গেস্ট কারা?
দীপ্তঃ আসলেই দেখতে পারবে।
বাইরে সবাই সোরগোল করছে যে চিফ গেস্ট চলে এসেছে। সব রিপোর্টার রা গেইটের সামনে প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য।
দীপ্তঃ চলো।
দীপ্ত সুবহাকে নিয়ে হলের বাইরে চলে আসে।
প্রথমে গাড়ি থেকে একজন মহিলা নেমে আসেন। সব রিপোর্টার রা তার কাছে গিয়ে প্রদর্শনী সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে।
দীপ্তঃ ইনি হচ্ছেন আনিকা বোস আমাদের শহরের সবচেয়ে নামি দামি ফ্যাশন ডিজাইনার।( পরিচিতি দিল সুবহাকে)
পরে আরেকটা কালো গাড়ি এসে থামে। সবার নজর সেখানে শিফ্ট হয়ে যায়। রিপোর্টার রা দৌঁড়ে সেই গাড়ির সামনে যায় আর কিছু গার্ডস্ এসে তাদের গাড়ি থেকে একটু দূরে সরিয়ে দেয়। একজন গার্ড দরজা খুলে দিতেই বেড়িয়ে আসেন চিফ গেস্ট।
তাকে দেখে সুবহা যেন 880 ভোল্টের ঝটকা খেলো। মুখ থেকে অটোমেটিকলি একটা শব্দ বেরিয়ে আসলো।
সুবহাঃ মি. এরোগেন্ট। ( হা হয়ে তাকিয়ে)
রশওশন গাড়ি থেকে নেমেই নিজের প্যান্টের দু পকেটে হাত গুঁজে স্ট্রেট হয়ে দাঁড়ায়। রওশনের ডান হাতে এখনো সাদা ব্যান্ডেজ করা।
ধূসর রঙের শার্ট আর সাদা কোট ও প্যান্ট। হাতে ধূসর রঙের বেল্টের ঘড়ি কালো সুজ। রাতের বেলাতেও চোখে সানগ্লাস লাগানো রওশনের।
সুবহা রওশনের ব্যাপারে সবকিছু নিয়েই কনফিউজড থাকে। তারমধ্যে একটা হচ্ছে যে,,, রওশন রাতের বেলাতেও অধিকাংশ সময় সানগ্লাস পরে থাকে। এটার কারন সুবহা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ভয়ে আয জিজ্ঞেস করতে পারে না। রাতেও সানগ্লাস পরা… এটা আবার কেমন স্টাইল বুঝতে পারে না সুবহা।
রওশনের গার্ডস্ রা দুদিক দিয়ে সবাইকে আটকিয়ে রেখেছে যেন কেউ রওশনের কাছে যেতে না পারে। দূর থেকেই রিপোর্টার রা প্রশ্ন ছুঁড়ে মারছে ওর উপর। রওশন কারো কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা হলের দিকে হাঁটা ধরে। ওর পেছনে ওর কিছু গার্ডস্ রা আসছে। রওশন সুবহাকে ক্রস করে ভিতরে চলে গেল। দেখেও না দেখার ভান করলো ও সুবহার সাথে।
সুবহাঃ রওশন রায়জাদা এই কম্পিটেশনের চিফ গেস্ট ওহ নো। ( আপসেট হয়ে)
তাহলে আর আমার জিতা লাগবে না কারন এনার সামনে গেলেই তো আমার হাত পা কাঁপে কিন্তু কেন সেটাই জানি না। তার সামনে কথা বলতে গেলেও চোখে চোখ পরলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে আমি কিভাবে পার্টিসিপেন্ট করবো ??( সুবহা টেনশনে শেষ)
রওশন চলে যেতেই সবাই এক এক করে ভিতরে চলে যায়।
দীপ্তঃ Come Subha get prepared yourself.
সুবহাঃ জ্বি। ( মন খারাপ করে)
আনিকার এসিসটেন্ট এসে সবার ফাইল নিয়ে যায়। সবাই তাদের ফাইল জমা দিয়ে দেয় তার কাছে।
এসিসটেন্টঃ আপনাদের এক এক করে ডাকা হবে কেবিনে।
ফাইল নিয়ে যাওয়ার পর সবাইকে এক এক করে ডাক পাঠানো হয় প্রশ্ন করার জন্য।
সুবহার ডাক আসতেই ভয়ে ওর হাত পা কাঁপতে শুরু করে।
সুবহাঃ বি স্ট্রং সুবহা তুই পারবি। ( নিজেকে বুঝিয়ে)
সুবহা বুকে ফু দিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। রওশন নেই কেবিনে এটা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিল সুবহা।
আনিকাঃ কাম সুবহা বসো।
সুবহাঃ জ্বি।
আনিকাঃ তোমার প্রত্যেক টা ডিজাইন আউটস্ট্যান্ডিং হয়েছে।
সুবহাঃ থ্যাংক ইউ ম্যাম (খুশি হয়ে।)
আনিকাঃ আমি তোমাকে কম্পিটেশনের জন্য সিলেক্ট করছি আজকে রাতে প্রথম রাউন্ড এবং কালকে লাস্ট। সো অল দ্যা বেস্ট।
সুবহা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। আনিকার সাথে হাত মিলিয়ে সুবহা খুশি খুশি বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে। বের হওয়ার সাথে সাথেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নেয় সুবহা কিন্তু পরে যাওয়ার আগেই সামনের মানুষটি ওকে ধরে ফেলে আর টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফালায়।
To be continued….