Mr_Devil #Part_28,29

0
2378

#Mr_Devil
#Part_28,29
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)
Part_28


কি করছেন,,,ছাড়ুন আমার হাত,,ছাড়ুন!

ইয়াশ কিছু না বলে গাড়ির দরজাটা খুলে রশ্নিকে ছুড়ে ভিতরে ফেলে দিলো

তারপর নিজেও বসে কার স্টার্ট দিলো

কিন্তু রশ্নিকে চুপ করাতে পারলো না

রশ্নি– আপনি জেল থেকে বাহিরে কিভাবে আসলেন?

এতক্ষন রশ্নির সব বকবক চুপ করে শুনলেও এই প্রশ্নটা শুনে জোরে ব্রেক কোষে গাড়ি টা থামিয়ে দিলো তারপর দিকে তাকিয়ে
বললো– আচ্ছা তুমি আমাকে ভাবো টা কি বলো তো?

রশ্নি– মানে??

বললো– মানে তুমি আমাকে এত সুন্দর করে ইনভিটেইশন দিয়ে গেলে তোমার বিয়ের
আমি কি না এসে পারি বলো

রশ্নি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো
“এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না,,আপনি সেটা খুব ভালো করেই জানেন”

ইয়াশ হেসে বললো-“তুমি কি আশা করেছিলে? তুমি আমাকে যেভাবে জেলে রেখে এসেছিলে আমি ঠিক সেই ভাবেই ওখানে ভালো ছেলে হয়ে বসে থাকবো??

রশ্নি– আপনাদের মতো লোকেরা যে কেমন হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে কিন্তু আমি তো প্রুভ এভিডেন্স সব দিয়েছিলাম

ইয়াশ এবার খুব জোরে জোরে হেসে দিলো
— লাইক সিরিয়াসলি? তোমার মনে হয় এসব প্রমান ট্রমান দিয়ে তুমি আমাকে পুলিশে দিতে পারবে? জানো তো তোমাকে না আমি একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে ভাবতাম কিন্ত এখন তো দেখছি তুমি পুরাই একটা বাচ্চা মেয়ে ?

এইসব প্রুভ এভিডেন্সের না কোনো মূল্য নেই
তুমি পৃথিবীটাকে যতটা সহজ ভাবো তা ততটা নয়
এখানে জোর যার মুল্লুক তার
সবাই শুধু (দুই আঙ্গুল কচলে টাকার ইশারা করে দেখল) চিনে,,বুঝেছো

রশ্নি এবার ইয়াশের কথার মানে বুঝলো

রশ্নি– তাহলে প্রথমে অমন ঢং করলেন কেন

ইয়াশ অট্টহাসি দিয়ে বললো– জাস্ট দেখছে চেয়েছিলাম একটা দিয়া নিভার আগে কতটা ফেরফেরাতে পারে

রশ্নি ঘৃণায় মুখটা অন্য দিকে সরিয়ে নিল যা দেখে ইয়াশ ওর গাল চেপে নিজের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো

–যেদিন তুমি সবার সামনে সিসি টিভি ফুটেজটা দেখিয়েছিলে
সেটা তোমাকে বিছানায় ধাক্কা দেওয়া পর্যন্তই ছিল

এর পরেরটা দেখানো হয়নি

কিন্তু সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা ছিল না বাট যখন নিজে চেক করে দেখলাম ফুটেজটা সেই পর্যন্তই তখনই আমার ডাউট হয়েছিল
এন্ড দেন আমার বিজনেস মাইন্ড কাজে লাগাই এন্ড নাউ ইউ আর অন মাই হ্যান্ড (বাঁকা হেসে)

রশ্নি– ছারুন আমাকে

বলেই ইয়াশের হাতটা সরিয়ে দিতে নেয়
আর তা দেখে ইয়াশ আরো জোরে ওর গাল চেপে ধরে

আর আস্তে আস্তে ওর ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে

যেই না কিস করতে যাবে তখন রশ্নি ওকে থাপ্পড় দিয়ে বসে

কিন্তু এবারেরটায় ইয়াশ একদমই রাগে না
বরং শয়তানি হাসি দিয়ে
বলে– হাহ,,কেন যে বড় বারবার একই ভুল করো

তারপর রশ্নির দুই হাত পিছনে চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে ওর আরো কাছে নিয়ে আসলো

তারপর খুল রুডলি কিস করতে লাগলো রশ্নির ঠোঁটে

আর এদিকে রশ্নি ইয়াশের সাথে পেরে না উঠে কেঁদেই দিয়েছে

প্রায় পঁচিশ মিনিট পর ইয়াশ ওকে ছেড়ে দিলো

রশ্নি– আপনি সত্যিই একটা অমানুষ,,
(হাপাতে হাপাতে)

ইয়াশ এতক্ষন হাত মুঠি করে তরফ উপর মাথা রেখে রশ্নিকে দেখছিল আর রশ্নির এমন কথায় ইয়াশ হেসে দিলো

ইয়াশ– কিছু না করতেই অমানুষ,,করলে কি করবে?
(বাঁকা হেসে)

তারপর রশ্নির মাথাটা সামনে এনে ওর কানে ফিসফিস করে বললো– তোমার ঠোঁটের স্বাদটা কিন্তু সত্যিই খুব মিষ্টি,,তারায় আছি তাই বেশিক্ষণ স্বাদটা নিতে পারলাম না কিন্তু এরপরে তোমার সাথে চলে তার জন্য নিজেকে তৈরি করে নাও

তারপর ওকে ছেড়ে দিয়ে ড্রাইভিংএ মন দিলো

আর রশ্নি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে

— এরপর থেকে সারাটা জীবন তোমার আমার কাছেই থাকতে হবে সো আমাকে দেখার জন্য অনেক টাইম পাবে তাই এখন এভাবে তাকিয়ে থেকো না (সামনে তাকিয়ে)

ইয়াশের কথায় রশ্নির ধ্যান ভাঙলো

কিন্তু এখন আরো ভয় করছে,,,

কিসের জন্য প্রিপেয়ার্ড হতে বললো ইয়াশ
কি করতে চাইছে এই লোকটা,,,
ওর সাথে কি কোনো খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে?

না আর ভাবতে পারছে না রশ্নি,,,

কিন্তু ওকে তো ইয়াশের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে সেটা যে কোনো মূল্যে

এই ভেবে আবার চিল্লাচিল্লি শুরু করলো রশ্নি

রশ্নি– স্যার গাড়ি থামান,,আমি নামবো প্লিজ গাড়ি থামান
স্যার প্লিজ,,,(এমন না থেমে হাজারটা প্রলাপ বকতেই আছে রশ্নি)

ইয়াশ শেষে আর সহ্য না করতে পেরে রেগে ওর দিকে তাকালো– আমার কপালে কি গাধার সিল দেওয়া আছে? নাকি লিখা আছে যে আমি আজাইরা?

আরেহ তোমাকে যদি ছেড়েই দেওয়ার হতো তাহলে এখানে আনতাম কেন???

রশ্নি– দেখুন আপনি যদি এখন আমাকে না ছেড়ে দেন তাহলে আমি কিন্তু,,,,,,

ইয়াশ– হ্যা দেখান,,,আমিও দেখতে চাই এখন আপনাকে না ছেড়ে দিলে আপনি কি করবেন–
[দুই হাত গুঁজে]

রশ্নি এবার চিন্তায় পড়ে গেলো
সত্যিই তো এখন কিই বা করবে ও

–আইডিয়া [মনে মনে]

— হুম আপনি যদি এখন আমাকে ছেড়ে না দেন তাহলে আমি নিজেই এই গাড়ি থেকে এখন লাফ দিব
[বলেই সিট বেল্টটা খুলে নিল]

রশ্নি যেই না গাড়ির দরজা তা খুলতে যাবে তখনই ইয়াশ ওর হাতটা ধরে ওকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসলো
আর ঠাস করে একটা লাগিয়ে দিল রশ্নির গালে

ইয়াশ– ভেবেছিলাম তোমার সাথে এটা করবো না,,কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করলে

রশ্নি– মমানে,,,,

রশ্নি আর বলতে পারল না তার আগেই ইয়াশের ওর মুখে কি একটা স্প্রে করে দিলো

যার ফলে সাথে সাথে রশ্নি ওর বুকে ঢলে পড়ে

.

এক ঘন্টা পর যখন রশ্নির জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে একটা সোফার মধ্যে হাত পা বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করে

ভালো করে চার পাশে তাকিয়ে দেখল
ও একটা বাড়ির ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে
ওর সামনে একটা টেবিল আর তার সামনে ইয়াশ
হাতের উপর মাথা ভর করে ওকে দেখছে

রশ্নি– ককোথায় আমমি আর আমার হহাত পা ববাধা ককেন?

ইয়াশ– কেন দেখতে পাচ্ছ না,,

রশ্নি–?

ইয়াশ– আচ্ছা ঠিকাছে তোমার আর রাগ করতে হবে না আমি সোজাসুজিই বলছি (ন‍্যাকামি করে)

তারপর ইয়াশ ওর সামনে একটা কাগজ আর কলম রেখে বললো
–সাইন করো (মুচকি হেসে)

রশ্নি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো,,,

— ওহ সরি সরি আমার তো খেয়ালই ছিল না যে তোমার হাত পা তো বাধা
তাহলে তুমি সাইন করবে কিভাবে
একটু ওয়েট করো

ইয়াশ গিয়ে রশ্নির হাত পায়ের বাঁধনটা খুলে দিলো

–নাও এখন সাইনটা করে দাও

রশ্নি– কিসের পেপার এটা?

ইয়াশ– আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার ☺️

রশ্নি– কিইইইইইইইইইইইইইইইই,,,,,,,,

ইয়াশ– আরেহ আস্তে,,কান ফেটে যাবে তো,,তারপর সবাই তোমাকে কালার বউ বলে ডাকবে (ঠোঁট উল্টে)

রশ্নি– উফ প্লিজ বন্ধ করুন আপনার এসব ন‍্যাকামী,,মানে কি এসবের? আমি কোনোভাবেই আপনাকে বিয়ে করবো না

ইয়াশ– তা বললে তো চলবে না,,কারন বিয়ে তো তোমায় করতেই হবে জানেমান,,,(বাঁকা হেসে)

রশ্নি– না কখনো না

ইয়াশ– ওকে এ্যাজ ইউর উইশ,,,,

বলেই কাওকে কল দিলো ইয়াশ
সাথে সাথেই কলটা রিসিভও হলো

ইয়াশ কলটা স্পিকারে দিয়ে টেবিলটার উপরে রাখলো
যেন রশ্নি শুনতে পায়

— হ‍্যালো রাজীব

— জি স্যার,,,

— সাহিদ চৌধুরী এখন কোথায় আছেন?

— তার আব্রড এর বাড়িতেই আছেন

— ওকে তাহলে ঐ বাড়িটাতে আগুন লাগিয়ে দেও,,ওখানের সব কিছু যেন ফিনিশ হয়ে যায়,,

তারপর রশ্নির দিকে তাকিয়ে বলল
— এভরিথিং মিন্স এভরিথিং,,,

–ওকে স্যার,,,

এগুলো শুনে রশ্নির আত্মা যেন কেঁপে উঠলো
ও চিৎকার করে বলে উঠে
— নাআআ,,,,আগুনে লাগিয়ে দিবে মানে কি?
স্যার প্লিজ এমনটা করবেন না প্লিজ,,
আপনার সব রাগ তো আমার উপর তাহলে আমার মামার সাথে এমন করছেন কেন,,যা করার আমার সাথে করুন কিন্তু প্লিজ আমার মামার সাথে কিছু করবেন না,,,সে তো আপনার কোনো ক্ষতি করে নি

ইয়াশ– ওকে ওকে রিলেক্স,,,তোমার মামাকে মেরে আমার কি লাভ বলো তো? জাস্ট এই পেপারটায় সাইন করে দাও তাহলেই হবে

রশ্নি এবার পড়লো অনেক বড় দুবিধায়

ইয়াশ– কি হলো চুপ করে আছো কেন?
তার মানে কি তুমি সাইন করছো না? ঠিকাছে তাহলে আমি,,,,,,

রশ্নি– না না প্লিজ আপনি এমন করবেন না আমি সাইন করে দিচ্ছি

রশ্নি তাড়াতাড়ি পেপারটা নিয়ে সাইন করে দিলো

— এইত্তো গুড গার্ল (বাঁকা হেসে)

তারপর ইয়াশ ছেলেটাকে কাজটা করার জন্য না করে দিয়ে ফোনটা কেটে দেয়
যা শুনে রশ্নি দুই হাতে মুখ গুজে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লো

ইয়াশ গিয়ে ওর সামনে দুই হাটু গেড়ে বসে ওর থুতনি ধরে মুখটা নিজের দিকে করে নিলো

রশ্নির চোখের পানি মুছে দিয়ে ঠোঁটে হালকা করে চুমু খেলো
তারপর ওকে কোলে নিয়ে উপরের রুমে যেতে লাগলো

রুমে গিয়ে ওকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে রুমটা লক করে দিলো
তারপর নিজের শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলে ওর দিকে এগোতে লাগলো

রশ্নি– স্যার আপনি কি করছেন (কাপাকাপা কণ্ঠে)

ইয়াশ– এমা,, এটা আবার কোনো প্রশ্ন হলো? বিয়ে করেছি বাসর করবো না?

ইয়াশের কথা শুনে রশ্নি আরো কেঁদে দিলো

রশ্নি– না প্লিজ স্যার আমাকে ছেড়ে দিন,,আমার সাথে এমনটা করবেন না

তো এইভাবেই ইয়াশ রশ্নিকে তুলে এনে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করে!

আর এর পরের টা তো আপনার জানেনই!

.

চলবে,

#Mr_Devil
#Part_29
#Writer_Aruhi_Khan (ছদ্দনাম)



◆ —— সকাল বেলা —— ◆

বারান্দায় দাঁড়াদায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে ইয়াশ

সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস নেই তার
কিন্তু মাঝে মাঝে পরিস্থিতি তো কত কিছু করতেই বাধ্য করে, ইয়াশের বেলায়ও তাই

এদিকে রশ্নির ঘুম কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে

পিট পিট করে চোখ খুলে
শরীরে ভীষন ব্যথা অনুভব করে

পরক্ষনেই কালকে রাতের কথা মনে পড়ে যায়
যার ফলে ডুকরে কেঁদে ওঠে সে

কাঁদতে কাঁদতে কাশি চলে আসে
কিন্তু শরীরে এতটাই ব্যথা করেছে যে উঠে পানির বোতলটাও নিতে পারছে না

হাত সামনে থাকা টেবিলের বোতলটির দিকে ছুঁই ছুঁই করেও যেন ছুঁতে পারছে না
কিন্তু কাশিটা যেন ক্রমশই বেড়ে চলেছে

রশ্নির কাশির শব্দ শুনে ইয়াশ তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে ছুটে আসে

এসে তাড়াতাড়ি বোতলের মুখটা খুলে রশ্নির সামনে ধরে

কিন্তু ইয়াশের হাতে খেতে যে নারাজ সে

যা দেখে রেগে যায় ইয়াশ

রশ্নির মুখটা চেপে ধরে নিয়ে নিজের দিকে করে পানি খাইয়ে দেয়

পানিটা খেয়ে নিয়ে মুখটা অন্য দিকে করে নেয়

রশ্নির কাশিটা কমলেও রাগ টা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে

ইয়াশ রশ্নির চুলের মুঠি হালকা করে ধরে
মুখটা সামনে নিয়ে এসে বলে
— আমার সামনে এই অবস্থায় বসে থেকেও এত তেজ দেখাও কিভাবে
মানে ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না

ইয়াশের কথায় রশ্নি নিজের দিকে তাকায়

রশ্নির গায় শুধু সাদা একটা ব্ল্যাংকেট
যা রশ্নি একহাত দিয়ে আকড়ে ধরে রেখেছে

এবার ইয়াশের দিকে খেয়াল করে দেখে
ও শুধু একটা সাদা টাওয়াল কোমরে পেঁচিয়ে বসে আছে
আর ওর চোখ গুলো রশ্নির বুকে থাকা লাল তিলটার দিকে

যা দেখে রশ্নি তাড়াতাড়ি নিজেকে ঢেকে নিতে চাইলো
কিন্তু তার আগেই ইয়াশ ওর হাতটা ধরে ফেলে
তারপর ওই তিলটার মধ্যে গভীর চুমু একে দিয়ে উঠে পড়ে

তারপর অন্য দিকে মুখ করে বলে
— দেখো এভাবে আর বেশিক্ষণ বসে থেকো না
নাহলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না

তাই তাড়াতাড়ি যাও গোসল করে এসো
আমাদের আবার ফিরতে হবে

রশ্নি এতক্ষন ওর কথাগুলো চুপচাপ শুনছিলো
ওর কথা শেষে মনে মনে
বললো– হুহ “নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না” আমার যা সর্বনাশ করার তা তো কাল রাতেই করে দিয়েছিস (তাচ্ছিল্যের সুরে)–[মনে মনে]

রশ্নির কোনো রিস্পন্স না পেয়ে ইয়াশ ওর দিকে তাকিয়ে বলল– কি হলো? তুমি কি আমার সাথে একসাথে গোসল করতে চাইছো?

ওর কথায় রশ্নি ভ্রূ কুঁচকে তাকায়

ইয়াশ– আচ্ছা বুঝেছি,,তুমি যা চাইবে তাইই হবে
বলেই রশ্নিকে কোলে তুলে নিলো

রশ্নি শত চেষ্টা করেও ইয়াশের সাথে পেরে উঠলো না


★★১-ঘন্টা পর★★

ইয়াশ রশ্নিকে কোলে করে নিয়ে বের হলো
দোনোজনের গায়েই শুধু টাওয়াল

ইয়াশ রশ্নির চুল গুলো মুছে দিয়ে নিজে রেডি হয়ে নিলো আর রশ্নিকে একটা জর্জেটের মেহেদী কালার শাড়ি দিয়ে দিল পড়ার জন্য

ইয়াশ– শাড়ি পড়তে পারো তো নাকি আবার আমি,,,

রশ্নি– শুনুন আমি ওসব স্টার জলসার নাইকাদের মতো নেকু না যে শাড়ি পড়তে পারি না তাই নায়কের কাছে যেয়ে বলবো পরিয়ে দিতে
নিজেরটা ঠিক বুঝে নেব

ইয়াশ– আচ্ছা ঠিকাছে

রশ্নি ওর ফোন বের করে শাড়ি পড়ার টিউটোরিয়াল বের করে, নিজে নিজে পরে নিলো

তারপর রেডি হয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ল

পুরো পথে পিনপতন নীরবতা বরাজ করেছে
কারো মুখে কোনো কথা নেই

ইয়াশ– নামো,,,এসে গিয়েছি আমরা

ইয়াশের কথায় রশ্নির ধ্যান ভাঙলো
ও কোনো কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল

কিন্তু নামার পর খেলো আরেক বড়ো সরো শক

এ যে রশ্নির নানু বাড়ি

রশ্নি ইয়াশের দিকে তাকালো

ইয়াশের মুখে রহস্যময় বাঁকা হাসি

রশ্নি– আমরা এখানে এসেছি কেন?
ইয়াশের– উম্ম,,ভাবলাম তোমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাই
রশ্নি– আপনি,,,,
ইয়াশের– বেশি কথা না বলে এখন ভিতরে চলো (সামনের দিকে তাকিয়ে)

ইয়াশের কথায় বিরক্ত হয়ে রশ্নি আগে হাটা শুরু করলো
ইয়াশ ভিতরে যাওয়ার আগে একবার বাড়িটায় চোখ বুলিয়ে নিলো
দোতালা বাড়িটায় পুরাতনতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে
কিন্তু তার মাঝেই ভীষন সুন্দর লাগছে দেখতে
বাড়িটাকে চারদিক দিয়ে বিভিন্ন ফুল,গাছ, লতাপাতা ইত্যাদি আকড়ে ধরে আছে
তার উপর আবার বৃষ্টির জন্য পুরো বাড়িটা ভিজে আছে
বিভিন্ন ফুল,পাতা বৃষ্টিতে ভিজে পরে থাকায় জায়গাটা আরো লাবণ্যময় হয়ে আছে তার উপর আবার বৃষ্টি ভেজা মাটির ঘ্রাণ
উফফ সব মিলিয়ে জাস্ট অসাধারন অনুভূতি

কিন্তু একটা জায়গায় ইয়াশের চোখ আটকে গেলো
বাড়ির দোলনাটা, যেটাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সাজানো
ইয়াশ গিয়ে ওটাতে কিছুক্ষনের জন্য বসে চোখটা বন্ধ করে উপভোগ করে নিলো
তার যেন খুব ক্ষুদ্র সময়ের জন্য হলেও তার মনকে এক অন্যরকম প্রশান্তি উপভোগ করলো

কিছু সময় বাদে ইয়াশ সেখান থেকে উঠে
বাড়ির নেইম প্লেটটার কাছে গেল

যেটায় বড় বড় অক্ষর দ্বারা রাজকীয় নকশায় “চৌধুরী মেনশন” লিখা

নেইমপ্লেট টা খুব পুরানো হওয়াতে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে যার ফলে এক দিক দিয়ে ঝুলে আছে

সেটা ইয়াশ উঠিয়ে সোজা করে ঠিক করে দিলো

তারপর আর দেরি না করে ভিতরে চলে গেল

কিন্তু গিয়ে দেখল রশ্নি এখনো গেইটের বাহিরে জমে দাঁড়িয়ে আছে
ইয়াশ– কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ভিতরে যাবে না?

রশ্নি কিছু বলছে না শুধু অস্থির হয়ে এদিক সেদিক দেখছে

ইয়াশ বুঝড়ে পারলো ওর অস্বস্তি হচ্ছে
তাই ও রশ্নির হাত ধরে কলিং বেল বাজিয়ে দিলো

কলিং বেল এর আওয়াজ শুনে
মিসেস নাঈমা এসে দরজাটা খুলে দিলেন

আর খুলে সামনের মানুষগুলোকে দেখে অবাকের শেষ শীর্ষে

মিসেস নাঈমা কিছু বলতে যাবেন তার আগেই পিছন থেকে কেউ বলে
উঠলো– কে এসেছে আম্মু?

কন্ঠটা শোনা মাত্র রশ্নির বুকে এক অদ্ভুত ভীতিত্বের ঝড় বয়ে আনে
কারন এ যে আর কেউ না,,,নাহিদ,,,
নামটা ভাবা মাত্রই আগাম পরিস্থিতি কি হতে চলেছে তা ভাবতেই কোনো এক অজানা ভয় পুরো শরীর হীম হয়ে আসছে

মিসেস নাঈমা কিছু না বলে দরজার সামনে থেকে সরে যান

দরজায় থাকা মানুষগুলোকে দেখে নাহিদের পা ওখানেই আটকে গেলো

রশ্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে
এক হাতে শাড়ির কিছু অংশ খিচে ধরে আছে আর অন্য হাতটা ইয়াশের দখলে

না এই দৃশ্য আর সহ্য করার নয়
নাহিদ আর না পেরে দৌড়ে গেল ইয়াশের কলার ধরতে
আজকে ইয়াশকে মেরে ফেলতেও যেন তার হাত কাঁপবে না

কিন্তু ইয়াশকে ধরবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ এসে নাহিদকে ধরে ফেললো

কিন্তু নাহিদ তার মাঝেই ইয়াশকে বিভিন্ন কথা শুনাচ্ছে

যেই লোকটা নাহিদকে ধরে রেখেছিল সে নাহিদকে তার দিকে ঘুরিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিল নাহিদের গালে

— নাহিদ তুমি এত বেয়াদব হলে কবের থেকে?
ইয়াশ আহমেদ এখন আমাদের চৌধুরী বাড়ির জামাই
সো ওর সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলবে

নাহিদ গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকায়

— বাবা (গালে হাত দিয়ে)

হ্যা সামনে থাকা লোকটা আর কেউ না,,সে যে স্বয়ং রশ্নির মামা সাহিদ চৌধুরী

সবাই তার এমন ব্যবহারে অবাক হয়ে তাকে দেখছেন
কারন তার এমন স্বাভাবিক ব্যবহার কারোই কাম্য নয়

নাহিদ রাগে দুঃখে সেখান থেকে নিজের রুমে চলে গেল

এবার সাহিদ চৌধুরী রশ্নিকে উদ্দেশ্য করে বললো
— কিরে মা,,একবার বুকে আসবি না তোর এই বুড়ো বাবার?

রশ্নি ইয়াশের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে তার মামাকে জড়িয়ে ধরলো
ধরেই জোরে জোরে কেঁদে দিলো

আর তার মামা পরম স্নেহে হাত বুলাতে লাগলো তার আদরের ভাগ্নির মাথায়

মামা ভাগ্নির এই দৃশ্য দেখে যে কারোরই হৃদয় ছুঁয়ে যাবে

কিছুক্ষন পর সাহিদ চৌধুরী বলে উঠলেন
— অনেকটা জার্নি কিরে এসেছিস,,যা মা উপরে গিয়ে একটু রেস্ট নে,,

তারপর সে নাঈমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো যেন ওকে উপরে নিয়ে যায়

নাঈমা বেগমের সাথে রশ্নি উপরে চলে গেল

সাহিদ চৌধুরী এবার এগোলো ইয়াশের দিকে,,,,,

সাহিদ চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগেই ইয়াশ তাকে জড়িয়ে ধরলো

কিছুক্ষন পর তাকে ছেড়ে দিয়ে বললো
— ভালো আছেন তো শশুর মশাই?

সাহিদ চৌধুরী ইয়াশের পিঠে হালকা চাপর দিয়ে বললেন– খুব,,,,তুমি? তোমাকে কি জিজ্ঞেস করছি তোমার তো ভালো থাকারই কথা তাইনা,,

ইয়াশ– উম,,,তা অবশ্য ঠিক বলেছেন,,কিন্তু আপনার ভাগ্নিটা বড্ড অবাধ্য,,ভয় হয়ে আটকে না রাখলে কখন যেন আবার উড়ে যায়,,অবশ্য এক ভুল আর বার বার করবো না,,এবার আর উড়ে যাওয়ার কোনো চান্সেসই থাকবে না

ইয়াশের কোথায় স্মিথ হাসলেন সাহিদ চৌধুরী,,
সাহিদ চৌধুরী– ওয়েল, এই বয়সে তোমাদের মতো ছেলেদের এমন কনফিডেন্স থাকাই ভালো,,কিন্তু একটা জায়গায় খটকা লাগলো,,,যে ইয়াশ আহমেদও কোনকিছুতে ভয় পায়

সাহিদ চৌধুরীর কথার উত্তরে ইয়াশ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো– হুমম,,হয়তো কিন্তু তা অবশ্য নিজের জন্য নয়,,পাখিটার জন্য,,কারন এবার যদি পাখিটা উড়ে যেতে চায় তাহলে হয়তো আর তার ডানা গুলোই থাকবে না নয়তো যে পাখিটার উপর নজর দিবে তার নজরটাই আর রাখবো না (বাঁকা হেসে)

সাহিদ চৌধুরী– তুমি,,,,

তখন ওর বুঝতে পারলো তাদের কথা কেউ শুনছে
সাথে সাথে সাহিদ চৌধুরী পিছনে তাকিয়ে দেখল নাঈমা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন

নাঈমা বেগম অস্বস্তি কাটানোর জন্য বললেন
— আমি খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি,,তোমরা এসো

— হুম

সাহিদ চৌধুরী– চলো খেতে বসবে,,,

ইয়াশ– না আমাদের এখন ফিরতে হবে সো,,,

ইয়াশের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাহিদ চৌধুরী বলে উঠলেন
সাহিদ– আজ প্রথম শশুর বাড়ী এসেছ না খাইয়ে তো ফিরিয়ে দিতে পারি না

কিছুটা জোর করেই সাহিদ চৌধুরী ইয়াশকে নিয়ে গেল খাবার টেবিলে

এদিকে রশ্নি নিজের রুমের আয়নার সামনে বসে ভাবছে
কি থেকে কি হয়ে গেল,,কিন্তু তার মামাই বা এমন স্বাভাবিক আচরণ করছেন কিভাবে,,তা ভেবে পাচ্ছে না রশ্নি

রশ্নি আয়নার সামনে বসে এসব ভাবছিল তখন রুমে কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পারলো

রশ্নি আয়নার দিকে তাকিয়ে রুমে প্রবেশ করা লোকটিকে দেখে চোখ বন্ধ করে নিয়ে একটা গভীর নিঃস্বাস নিয়ে নিল
তারপর পিছনে ফিরে তার দিকে তাকালো
কিন্তু কেন যেন আজ চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছে না রশ্নি,,,তার চোখে যে আজ হাজারো না পাওয়ার অভিযোগ ভিড় করেছে,,,রশ্নির মনে হচ্ছে
সেই চোখগুলোর দিকে তাকালেই
এই গভীর অভিযোগগুলোর ভিড়ের স্রোতে হারিয়ে যাবে ও



চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here