#Mr_Husband,পর্ব_১৫,১৬
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১৫
আপন, আসিক, অয়ন, ইসী সবাই মেয়েটাকে দেখে চমকের এক নতুন রেকর্ড পার করেছে। ওদের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। ইসী অস্পস্ট কন্ঠে বলল,
—“রুশা!”
আঁধার রুশা কে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে। মুনের বুকের মধ্যে হঠাৎ করেই চিনচিন ব্যথা শুরু হয়েছে। কেন যেন অন্য একটা মেয়েকে আঁধারের এতো কাছে মুন সহ্য করতে পারছে না। মুনের কান্না আসছে। মুন সেই কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে। যার ফলে নাকের ডগা ও গালের দুপাশ লাল হয়ে গেছে। চোখে জল টলমল করছে। মুনের খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন তা মুনের অজানা। আঁধার কাউকে কিছু না বলেই সোজা গেস্ট রুমে চলে যায়। আঁধারের পিছনে পিছনে সবাই যায়। আঁধার রুশা কে বেডে শুইয়ে দেয়। তারপর আলিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“লিয়া জলদি গিয়ে আমার রুম থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আয়।”
আলিয়া আঁধারের অর্ডার পাওয়া মাত্রই দৌড়ে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে আঁধারের হাতে দিলো। আঁধার কোমল রুশা’র মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিলো। রুশা’র কপাল কেটে গেছে, হাতের কুনুই ও ছুঁলে গেছে। আর তার থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পরছে। আঁধার যত্ন সহকারে রুশা’র কপাল ও কুনুই পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। বাইরের অন্য একটা মেয়ের প্রতি আঁধারের এতো কেয়ার দেখে মুনের ভিতরে জ্বলছে। কিন্তু এখন কিছু বলতেও পারছে না। কারণ এখানে বড়রা ও আঁধার বন্ধুরাও আছে। তাদের সামনে কিছু বলাটা ঠিক হবে না। আঁধার এক দৃষ্টিতে রুলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুন শুধু জল টলমলে চোখে আঁধারের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁধার শান্ত স্বরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“সবাই যার যার রুমে চলে যাও আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।”
—“কিন্তু আঁধার রু……….”
অয়ন কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আঁধার ওকে থামিয়ে বললো,
—“অয়ন তোরাও নিজেদের বাড়িতে চলে যা। আমি তোদের সাথে কাল মিট করে সব বলব।”
ওরা আর কিছু বলল না। আরমান রেজওয়ান কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু আরিফা রেজওয়ান বলতে দিলেন না। সে বুঝতে পারেন তার ছেলে এখন কিছু বলার পরিস্থিতিতে নেই। আর তার ধারণা ভুল না হলে এ’ই সেই মেয়ে। যার জন্য তার ছেলে একসময় পাগল ছিলো। সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মুন এক নজর আঁধারের দিকে তাকিয়ে সবার সাথে বেরিয়ে যেতে নেয়। কারণ আঁধার সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলেছিল। মুন ও চুপচাপ বেরিয়ে যেতে নেয় কিন্তু আঁধারের কথা শুনে ওখানেই দাঁড়িয়ে পরে,
—“মুন, তোমাকে যেতে বলিনি।”
আঁধার আবারো বলল,
—“দরজা টা লক করে এদিকে এসো।”
মুন চুপচাপ আঁধার কথা মতো দরজা লক করে আঁধারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আঁধার মুনের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকায়। মুন নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের জল গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ফ্লোরে। কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই এই নোনা জল গুলো ধীরে ধীরে ওর চোখে সমুদ্র তৈরি করছে। যখন সেই জলে চোখ নামক সমুদ্র ভোরে যাচ্ছে তখনই কিছু ফোঁটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে নিচে পরছে। আঁধার কন্ঠ স্বর নরম করে জিজ্ঞেস করল,
—“কাঁদছো কেন?”
মুন নিশ্চুপ। আঁধার মলিন হাসি দিয়ে বলল,
—“তুমি ভয় পাচ্ছ মুন।”
এবার মুন মাথা তুলে আঁধারের দিকে তাকালো। চোখের কালো মনির পাশের সাদা অংশ লাল হয়ে গেছে। চোখের পাতলা পাপড়ি গুলোয় শিশিরের মতো জল জমে আছে। আঁধারের মনে হচ্ছে মুনের ওই হরিণী চোখে এক অতল সমুদ্র বিরাজ করছে। যার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তাতে ডুবেই ওর মৃত্যু হবে। আঁধার নিজেকে সংযত করলো। তারপর মুন কে নিজের জায়গায় বসিয়ে নিজে মুনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর দু হাত শক্ত করে ধরে বলল,
—“ভয়ের কিছু নেই মুন। আমি আমার অতীত কে কখনো আমার বর্তমানের উপর প্রভাব ফেলতে দিবো না। ও শুধুই আমার অতীত এর থেকে বেশী কিছু না।”
মুন আঁধারের কথা বুঝলো না। তাই অবুঝ স্বরে বলল,
—“উনি আপনার অতীত মানে?”
আঁধার বেড টেবিল থেকে পানির গ্লাল নিয়ে এক টানে খেয়ে ফেলল। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজের অতীতে ডুব দিলো।
আঁধারের যখন ১০ বছর বয়স তখন আরিফা রেজওয়ান ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওকে USA পাঠিয়ে দেন পড়াশোনার জন্য। আঁধার ছোট থেকেই অনেক মেধাবী। USA তে থেকেই আঁধার পড়াশোনা করতে লাগলো। আঁধার ছোট থেকেই মানুষের সাথে কম মিশত। সবসময় একা থাকতেই পছন্দ করতো। কিন্তু ওখানে গিয়ে ওর বন্ধুত্ব হয় আপন,আসিক, অয়ন, ইসী আর আরুশের সাথে। ওরা সবাই বাঙালি। আঁধার সবার থেকে বলতে গেলে নিজের থেকেও আরুশ কে বেশি ভালোবাসতো। মেধাবী হওয়ার কারণে ওখানেও আঁধার কে কেউ টক্কর দিতে পারেনি শুধু এক মাত্র আরুশ ছাড়া। আঁধার এ কারণে কখনোই আরুশ কে হিংসে করেনি। সবাই আঁধার কে বেস্ট বললেও আঁধার সবসময় আরুশ কে’ই বেস্ট বলে মানত। আরুশ দেখতে উজ্জ্বল স্যামলা। পাখির বাসার মত দেখতে মাথায় একঝাঁক কোঁকড়া চুল। লম্বায় আঁধারের মতোই। শরীর স্বাস্থ্য মিডিয়াম। রেগুলার জিমে যাতায়াত করার ফলে সিক্স প্যাক ও আছে। গায়ের রং টা আঁধারের থেকে চাপা নাহলে আরুশ কে দেখতে আঁধারের থেকে কোনো দিক দিয়েই কম না। আঁধার আর অরুনের বন্ধুত্বের স্লোগান পুরা USA গাইত। আঁধার যখন ইন্টারনেট ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শেষ করে অবসরে সময় কাটাচ্ছিল। তখনই হঠাৎ করে খবর পায় আরিফা রেজওয়ানের শরীর খুব খারাপ। তাই আঁধার সেদিনের ফ্লাইটে বিডিতে ব্যাক করে। আর আঁধার সাথে ওর পাঁচ বন্ধু ও ফেরে। আরিফা রেজওয়ান দু সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু আঁধার আর USA ফিরে যায় না। এখানেই ঢাকায় নামিদামি একটা কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে এডমিশন নেয়। আঁধার বিডিতে থাকবে ঠিক করায় ওরা পাঁচজন ও আঁধারের সাথে সেম কলেজে এডমিশন নেয়। ওদের দিন ভালোই চলছিল। এখানেও আঁধার আর আরুশ নিজেদের গভীর বন্ধুত্বের রং ছড়িয়ে দেয় চারদিকে। কিছুদিনের মধ্যেই ওরা হয়ে ওঠে কলেজের সব মেয়েদের ক্রাশ। একদিন ওরা সবাই কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। আঁধার আর আরুশ কে বাকিরা চেপে ধরে গান গাওয়ার জন্য। ওরা দুজনেই খুব ভালো গান করে। কিন্তু এখন কেউই গাইতে রাজি নয়। আঁধার ভারী গলায় বলল,
—“আমি এখন গানটান গাইতে পারবো না।”
আরুশ হাসার চেষ্টা করে বলল,
—“হে হে আমার যা কাকের গলা, এ গলায় গান গাইলে পাবলিক আমাকে ধরে ক্যালাবে।”
ইসী রেগে বলল,
—“একদম বাজে বকবি না। চুপচাপ যা বলছি তা কর। নাহলে তোকে পাবলিক কি ক্যালাবেরে তুই এখন গান না গাইলে তার থেকে দিগুন বেশি আমি ক্যালাব।”
আরুশ দাঁত বের করে হেসে বাহানা বানিয়ে বলল,
—“গান নাহয় গাইলাম কিন্তু গিটার কোথায়? তোরা তো জানিস আমি গিটার ছাড়া গাইতে পারি না।”
ইসী বরাবরই খুব চঞ্চল। ও দৌড়ে গিয়ে একটা জুনিয়র ছেলের কাছ থেকে গিটার ছিনিয়ে এনে আরুশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মেকি হেসে বলল,
—“নে, এবার গাইতে তো কোনো সমস্যা নেই তোদের।”
আরুশ আড়চোখে আঁধারের দিকে তাকালো আর দেখলো আঁধার ও ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। আপন তাড়া দিয়ে বলল,
—“ভাই বসে বসে টাইম ওয়েস্ট করছিস কেন? তাড়াতাড়ি শুরু কর। জানিস না শুভ কাজে দেরি করতে নেই?”
আরুশ হতাশ গলায় আঁধার কে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“কি আর করার? শুরু কর ভাই। এরা না হলে আমাদের রেহাই দিবে না।”
আঁধার আসিক কে বলল,
—“ক্লাস থেকে আমার গিটার টা নিয়ে আয় তো।”
আসিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
—“তুই গিটার নিয়ে এলি কখন? আমি তো তোকে গিটার আনতে দেখিনি!”
আরুশ মজা করে বলল,
—“সারাক্ষণ মেয়েদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলে দেখবি কি করে?”
আসিক ক্ষেপে বলল,
—“একদম বাজে বকবি না। আমি আবার কখন মেয়েদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলাম?”
—“তুই তো সবসময়’ই মেয়ে দেখলেই ছুটতে থাকিস।”
আসিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আঁধার ধমক মেরে দু’টো কে চুপ করালো তারপর আসিক কে বলল,
—“তোকে না বলেছিলাম গিটার আনতে? আর তুই এখানে বসে বসে মেয়েদের মতো ঝগড়া করছিস। যা গিয়ে গিটার নিয়ে আয়।”
আসিক ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল গিটার আনতে। অয়ন বলল,
—“আজ একটা বাংলা গান হয়ে যাক।
আঁধার আর আরুশ গিটারে সুর তুলছে। চল না সুজন গানের সুর। তারপর দুজনে গাইতে শুরু করল,
? Music ?
?মন আকাশে বৃষ্টি আসে রোদ্রো মেঘের জুটি
আজ নতুন আলোয় আঁধার কালোর খুনসুটি?
?হুম,ঝড়ের বেশে এলো কে’সে
কাজল সে চোখ দুটি
দিলো কঠিন কথার বিষন্নতার ছুটি?
?তার’ই সাথে খেলনা পাতে অযথা হাসাহাসি
হাজার বারণ আরো কারণ তবু সে দাঁড়ে আসি?
?চল না সুজন মিলে দুজন
নীল ওই আকাশে ভাসি,
দেখুক লোকে অবাক চোখে
তোর ওই দুচোখের হাসি?
?চল না সুজন হারাই দুজন
বিনা দোষে হোক ফাসি,
দেখুক লোকে অবাক চোখে
কত টা ভালোবাসি?
? চোরাবালির পিছুটানেবুঝি না এই ভাষার মানে
অশান্ত মন কি অচেতন খোদা জানে ?
মেয়েলী গানের স্বর শুনে আঁধার চোখ খুলে তাকালো। হলুদ রঙের একটা শট ড্রেস আর গলায় কালো রঙ্গের স্কার্ফ পেচানো একটা ধবধবে ফর্সা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাইলাইট চুলগুলো কার্ল করা। গোলগাল চোখে টানাটানা করে আইলাইনার দেওয়া। পাতলা ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। ফর্সা লোম বিহীন হাতে কালো পাথরের ব্রেসলেট। হলুদ হাইহিল। মেয়েটার ড্রেস আপ অনেকটা মর্ডান। কিন্তু মেয়েটা অনেক রুপবতী। আঁধার একদৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা গানের পরের লাইন গাইলো,
? ঘরের কাজে সকাল সাজে
নয়ন-নীতির ভাঁজে ভাঁজে
কিসে ছায়া এ কোন মায়া বুঝি না যে?
মেয়েটা ইশারায় আঁধার কে পরের লাইন গাইতে বলল। আঁধার আনমেই গাইতে শুরু করলো। আর আরুশ ওখানেই থেমে গেল।
?ধীরে ধীরে চেনা ভীরে অচেনা বারাবারি
অবুঝ এ মন কি জ্বালাতন এ কেমন আহাজারি?
?চল না সুজন মিলে দুজন
আরেকটু কবুল করি,
দেখুক লোকে এ দুচোখে
ছায়া যে শুধু তোরই?
?চল না সুজন মিলে দুজন
অচেনা শহর গড়ি,
সেই শহর আপন করে
বৃষ্টি ফোঁটা হয়ে ঝরি?
মেয়েটা আবার নিজের লাইন গাইলো,
?বাদাম খোসায় ভালোবাসায়
নিওন আলোয় কাছে আসায়
স্মৃতির খাতা চোখের পাতায়
কিসের ফাকি ?
?আপন কথার গোপন ব্যথায়
বন্দি খাঁচার বিষন্নতায়
কিসের জ্বালায় বিশের মালায় বোঝো না কি?
আঁধার গাইলো,
?গোপন করে আপন তোরে বুকের পাঁজরে রাখি ঘুমের বড়ি দিয়ে আড়ি হৃদয় বাড়িতে থাকি?
?চল না সুজন করি কুজন
সুখ পাখি হয়ে ডাকি
দেখুক লোকে কেমন তোকে
প্রেমে জড়িয়ে রাখি?
?চল না সুজন পালাই দুজন
ওদের কে দিয়ে ফাকি
কোনো সমান্তরাল পথের বাঁকে
বাসা বানিয়ে থাকি?
? Music ?
গান শেষ হতেই সবাই কড়াতালি দিলো। আঁধার চোখ বুলিয়ে দেখে ওদের চারপাশে ভীর জমা হয়ে গেছে। আপন,আরুশ,অয়ন,আসিক,ইসী ফাটা চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আঁধারের দিকে হাত বাড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
—“হাই আমি রুশা চৌধুরী!”
চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১৬
আঁধার কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে রুশা’র দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—“নাইস নেম।”
তারপর ওখান থেকে উঠে চলে গেল। রুশা বেকুবের মত দাঁড়িয়ে রইল। আর বাকিরা অট্ট হাসিতে ফেটে পরলো। যেন ওরা এটাই আন্দাজ করেছিল। আঁধারের এরকম গাছাড়া ভাব রুশা’র ইগোতে লাগলো। ও রেগে হনহনিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। ক্লাস শেষে সবাই ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। আরুশ উত্তেজিত হয়ে বলল,
—“চল আজ সবাই মিলে মুভি দেখতে যাই।”
আরুশের কথায় আসিক সায় দিলো,
—“হ্যা চল, অনেক মজা হবে। মুভি দেখে ওখান থেকে লং ড্রাইভে চলে যাবো।”
অয়ন বলল,
—“ভালো কোনো হরর মুভি দেখবো।”
ইসী নাকচ করে বলল,
—“নো, রোমান্টিক মুভি দেখবো।”
আপন অয়ন কে সাপোর্ট করে বলল,
—“ওই চুড়েল তুই চুপ কর আমরা হরর মুভিই দেখবো।”
ইসী রেগে বলল,
—“বললাম না রোমান্টিক দেখবো।”
আরুশ ওদের থামিয়ে বলল,
—“আমরা হরর ও দেখবো না আর রোমান্টিক ও দেখবো না।”
ইসী বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,
—“তাহলে কি তোরে দেখবো?”
আরুশ ভাব নিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল
—“হ্যা চাইলে দেখতেই পারিস। আফটার অল আমি দেখতে এতো হ্যান্ডসাম।”
ইসী ঠোঁট বাঁকালো। আঁধার চুপচাপ চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে আর ফোন স্কান করছে। ওর এসবে কোনো ইনট্রেস নেই। আরুশ আবারো বলল,
—“আমরা হরর দেখলে ইসী’র মন খারাপ হবে। আর রোমান্টিক দেখতে আমরা ছেলেরা কেউই ইনট্রেস্টেড না। তাই আমরা সবাই কমেডি দেখবো। এতে সবার মুন’ই রাখা হবে।”
অয়ন, আপন আর আসিক মেনে নিলো আর হেসে বলল,
—“ওকে ব্রো।”
ইসী ভেঙ্গচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আরুশ ইসী’র চুল টেনে বলল,
—“কিরে পেত্নি মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেনো?”
—“ক্যান আই জয়েন ইউ?”
আবারো সেই মিষ্টি কন্ঠ স্বর আঁধারের কানে এসে বারি খেল। আঁধার ফোন থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটি। রুশা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আরুশ হেসে বলল,
—“শিওর মিস।”
ইসী বাঁকা চোখে আরুশের দিকে তাকালো। রুশা আরুশ আর আঁধারের মাঝের চেয়ারে বসলো। আঁধার আবারো ফোন স্কান করায় মগ্ন হয়ে গেল। আরুশ’ই রুশার সাথে কথা বলেছে বিদায় রুশা ওকেই জিজ্ঞেস করলো,
—“তোমরা কি বিষয়ে কথা বলছিলে?”
—“আমরা মুভি দেখতে যাওয়ার প্লান করছিলাম। তুমি চাইলে আমাদের সাথে আসতে পারো।”
রুশা হেসে বলল,
—“অবশ্যই”
ইসী আড়চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। কেন যেন মেয়েটাকে ইসী’র সহ্য হচ্ছে না। হঠাৎ করেই রেগে যাচ্ছে। ইসী’র গালের দুপাশ লাল হয়ে গেছে। রাগে ফুঁসছে ও। আরুশ খেয়াল করলো ইসী ফুঁসছে। ও ইসী’র কাঁধে হাত রেখে মজা করে বলল,
—“কিরে পেত্নি এভাবে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছিস কেন? মৃগী রোগে ধরছে নাকি তোকে?”
ইসী চোখ রাঙিয়ে তাকালো। আরুশ ফিক করে হেসে দিলো।
.
আঁধার আর আরুশ পাশা পাশি বসেছে। আঁধারের ফোন আসাতে আঁধারের ফোন নিয়ে উঠে সাইডে চলে গেল। রুশা পপকর্ন, জুস, বার্গার আরো কিছু খাবার জিনিস নিয়ে এসে আঁধারের সিটে বসে পরলো। এর’ই মধ্যে আঁধার ও কথা বলা শেষ করে এসে দেখে ওর সিটে রুশা বসে আছে। আঁধার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। রুশা একবার আঁধারের দিকে আরেকবার আরুশের দিকে তাকালো। আরুশ জোর পূর্বক হেসে বলল,
—“এটা আসলে ওর সিট তাই ও ওভাবে তাকিয়ে আছে।”
রুশা উঠেতে উঠতেই বলল,
—“ওহ সরি সরি! আমি আসলে জানতাম না। খালি ছিলো তাই বসে পরেছি।”
আরুশ বলল,
—“থাক সমস্যা নেই তুমি বসো। পাশের সিট খালি আছে আঁধার তুই ওই সিটে বসে পর।”
আঁধার বিনা বাক্য ব্যয়ে চুপচাপ পাশের সিটে বসে ফোনে মুখ গুঁজলো। ইসী এতোক্ষণ আরুশের পাশে বসে ভ্রু কুঁচকে সব দেখছিল। অয়ন, আপন আর আসিক মুভি নিয়ে কথা বলছে এদিকে ওদের কোনো খেয়াল নেই। কিছুক্ষণ পর মুভি শুরু হলো। যেখানে মুভি দেখে সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে সেখানে আঁধার ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর ভঙ্গিতে মুভি দেখছে। রুশা অবাক চোখে কিছুক্ষণ আঁধারের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার মুভি দেখায় মনোযোগ দিলো। রুশা হাসতে হাসতে আঁধারের গায়ে ঢলে পরছে। আঁধারের এসব একদম পছন্দ না। ওর গায়ে কেউ হাত দিলে ও রেগে যায়। কিন্তু রুশা কে কিছু বলল না। রুশা এবার হাসতে হাসতে আরুশের গায়ে পরলো। ইসী’র দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেলো। ইসী উঠে আরুশের কলার ধরে বলল,
—“ওঠ”
আরুশ বোকা বেনে গেল।
—“মানে?”
—“বাংলা বুঝছ না? ওঠতে বলছি ওঠ”
আরুশ ইসী’র কথা মতো চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো। ইসী আরুশের সিটে বসে বলল,
—“বস”
—“কানে কম শোনোছ? বসতে বলছি বসে চুপচাপ মুভি দেখে।”
আরুশ রেগে বলল,
—“কেন আমি কি তোর গোলাম না কি?”
—“হ্যা তুই আমার গোলাম। তাই এখন যা বলছি চুপচাপ কর।”
আরুশ আর কিছু বলল না কারণ এখনে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করলে পাবলিক ইসী কিছু না বললেও ওকে ঠিকই ধোলাই দিবে। ইসী’র সিটৈ ফুঁসতে ফুঁসতে বসে পরলো আরুশ।
.
সবাই মিলে আঁধারের জিপে করে লং ড্রাইভে বেরিয়েছে। আঁধার ড্রাইভ করছে আর আরুশ ওর পাশের সিটে বসে আছে। বাকিরা পিছনে দাঁড়িয়ে হিল্লোলের করছে। অয়ন বিয়ার বের করে সবাইকে একটা একটা করে বিয়ারের ক্যান দিলো। আরুশ বিয়ারে এক ছিপ নিয়ে আঁধার কে দিলো। আঁধার ড্রাইভ করতে করতে হেসে আরুশের হাত থেকে ক্যান টা নিয়ে চুমুক লাগালো। সবাই সবার মতো করে ইনজয় করছে। হঠাৎ করেই গাড়ি ঝাক্কি খেলো। পিছনের সবাই কোনো রকম নিজেদের সামলে নিলো। গাড়ি অফ হয়ে গেছে। আঁধার বারবার গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না। আরুশ বলল,
—“কি হলো গাড়ি থামালি কেনো?”
—“থামাই নি বন্ধ হয়ে গেছে। দাঁড়া দেখছি কি হয়েছে।”
আঁধার জিপ থেকে নেমে ডিক্কি খুললো। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলো। কিন্তু কিছু হলো না। ইসী নেমে এসে জিজ্ঞেস করল,
—“কি হয়েছে?”
—“বুঝতে পারছি না। অয়ন দেখতো ধারে কোথাও গ্যারেজ আছে নাকি?”
অয়ন ফোনে ম্যাপ সরকার করে দেখলো তারপর বলল,
—“নো ব্রো। আমরা ঢাকার বাইরে আছি। আর এখানে ধারে কাছে কোথাও গ্যারেজ নেই। একটা আছে কিন্তু সেটা অনেক দুরে।”
—“ওকে, তুই ফোন করে ঢাকা থেকে ম্যাকানিক ডাক।”
—“কিন্তু ব্রো এখন ম্যাকানিক ডাকলেও আসতে আসতে সকাল হয়ে যাবে। ততক্ষণ আমরা এখানে কি করবো?”
ইসী অ্যাক্সসাইটেড প্রবল হয়ে বলল,
—“বন ফায়ার করবো। খুব মজা হবে।”
আরুশ ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
—“পরেছি বিপদে আর ইনি আসছে বন ফায়ার করতে।”
রুশা বলল,
—“আইডিয়া টা কিন্তু খারাপ না।”
ইসী আঁধারের দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকিয়ে বলল,
—“প্লিজ দোস্ত না করিস না। দেখ হালকা ঠান্ডা ও পরেছে আর জানিস আমার অনেক ইচ্ছে ছিল এরকম অয়েদারে বন ফায়ার করার। আজকে সুযোগ পেয়েছি। প্লিজ।”
আঁধার বলল,
—“আপন আর আসিক তোরা কাঠ জোগাড় কর। অয়ন তুই বিয়ার আর ফাস্ট ফুড গুলো নিচে নামা। আর আরুশ তুই গাড়ি থেকে ম্যাসবক্স নিয়ে নিচে আয় আগুন জ্বালাতে হবে।”
আরুশ ইসী কে হুকুম দিয়ে বলল,
—“ওই পেত্নি তুই বসে থাকবি কেনো? গাড়ি থেকে আমার আর আঁধারের গিটার দুটো নামিয়ে সুন্দর করে নিয়ে আয়।”
রুশা বলল,
—“আমি কি কোনো সাহায্য করতে পারি?”
আরুশ হেসে বলল,
—“না, সব তো হয়েই গেছে। তুমি আবার কি করবে?”
ইসী চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। খুব রাগ লাগছে ওর। ইচ্ছে করছে আরুশ কে কেটে কুচি কুচি করে গরম তেলে ভেজে খেয়ে ফেলতে। আরুশ হাসতে হাসতে ম্যাসবক্স নিয়ে আঁধারের কাছে চলে গেল।
চলবে,