#Mr_Husband,পর্ব_৯,১০
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৯
আঁধার মুনকে নিজের কাছে দেখে চমকে উঠলো। কিন্তু পরে বুঝতে পারে মুন ঘুমের ঘোরে ওকে কোল বালিশ মনে করে জরিয়ে ধরেছে। আঁধার মুন কে সরিয়ে দিতে গিয়েও রসালো না। কিছু একটা ভেবে ওভাবেই ঘুমিয়ে পরলো। শেষ রাতে বৃষ্টি শুরু হয়। পরিবেশ হালকা ঠান্ডা হয়ে ওঠে। মুনের শীত শীত অনুভব হয়। মুন শীতে আঁধার কে আরো পেঁচিয়ে ধরে ওর উষ্ণ শরীরের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নেয়। ঘুমের মধ্যে আঁধার অনুভব করে খুব নরম কিছু ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আঁধারের ঘুম চট করে ভেঙ্গে যায়। মুন কে নিজের এতো কাছে দেখে আঁধার ওকে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু পারে না। আঁধার মুন কে যত নিজের থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে মুন আরো তত আঁকড়ে ধরছে। আঁধার শেষ ব্যর্থ হয়ে ওভাবেই শুয়ে রইলো। অন্ধকার কে কাটিয়ে সূর্য নিজের আলোয় চারদিকে আলোকিত করে দিতে লাগলো। শেষ রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে আকাশ টা একদম পরিষ্কার। চার দিকে পিনপন নিরবতা। শুধু হালকা শো শো বাতাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। গাছ লতা পাতা গুলোয় বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। সব কিছু সিগ্ধ মনে হচ্ছে। এরকম পরিবেশের সাথে ধোঁয়া ওঠা কফি যেন মন টাকে আরো তরতাজা করে দিচ্ছে আঁধারের। আঁধার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা কফির মগে পাতলা ঠোঁটে চুমুক দিচ্ছে আর এই মনমুগ্ধ পরিবেশ টাকে উপভোগ করছে। আঁধার নিজেকে খুব হালকা মনে করছে। সব চিন্তা ভাবনা যেন এক নিমিষেই দূর হয়ে গেছে। এভাবেই দেখতে দেখতে পুরো পুরি ভাবে আকাশে সূর্য নিজের করে নিলো। চারদিকে ছড়িয়ে দিলো নিজের তেজস্ক্রিয় রশ্মি। আর তার এক চিলতে রশ্মি জানালার পর্দা ভেদ করে মুনের চোখে এসে বারি খেলো। সাথে সাথেই ঘুম টা ছুটে গেল। মুনের খুব বিরক্ত লাগছে সাথে রাগ ও হচ্ছে খুব। মনে মনে সূর্য কে কিছু কথা শুনিয়ে দিলো ওর এতো সুন্দর স্বপ্ন টা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। বাস্তবে তো আর দেখতে পারবে না এরকম দৃশ্য স্বপ্নে দেখছিল। তাও এই ব্যাটা সূর্যের সইলো না। এরকম স্বপ্ন কি সচরাচর দেখা যায়? মুন আঁধারের সামনে শেরনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। আর আঁধার ভেজা বেড়ালের মত ওর সামনে কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহা কি দৃশ্য। মুন আফসোস করতে করতে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ালো তারপর হামি দিতে দিতে ওয়াশরুমে চলে গেল। মুন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো আঁধার কালো পেন্ট, কালো ইন করা শার্ট পরে লুকিং গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে জেল দিচ্ছে। মুন সিটি বাজিয়ে এগিয়ে গেল আঁধারের দিকে। আঁধার সিটির শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো। মুনকে দেখে আবার সামনে ফিরে নিজের কাজ করতে লাগলো। মুন দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে মজা করে বলল,
—“কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”
আঁধার মুনের দিকে না তাকিয়ে’ই বলল,
—“কেন তুমি জানো না?”
—“হসপিটালে এতো সেজেগুজে যাওয়া লাগে? দেখে তো মনে হচ্ছে মেয়ে দেখতে যাচ্ছেন। ওখানে কাজ করতে যান নাকি মেয়ে পটাতে?”
একটু রাখি স্বরে খোঁচা মেরে বলল মুন। আঁধার এবার মুনের দিকে তাকালো। আঁধার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে মুনের দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
—“কি বলতে চাও তুমি?”
—“আপনি এভাবে সেজেগুজে হসপিটালে যেতে পারবেন না। বুইড়া ব্যাডার আবার এতো ঢং কিসের?”
—“হোয়াট?”
—“বাংলা কথা বুঝেন না? আপনি এভাবে সেজেগুজে হসপিটালে যান দেখেই তো শাকচুন্নী, চুরেল, পেত্নিদের নজর আপনার উপরে। দেখলেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।”
আঁধার বিরক্তির সুরে বলল,
—“ফালতু কথা বন্ধ কর আর সরো। হসপিটালে আমার অনেক কাজ আছে।”
—“আমি জানি তো আপনি ওখানে কাজ করতে যান নাকি ওই শাকচুন্নীদের সাথে টাংকি মারতে যান?”
—“হোয়াট এই টাংকি টা আবার কি?”
—“আপনার বুঝতে হবে না। আপনি এভাবে যেতে পারবেন না মানে পারবেন না।”
—“মুন এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।”
—“এভাবে কেন আপনি আজ কে কোনো ভাবেই যেতেই পারবেন না। আপনি না আমার সাথে বেরাতে এসেছেন? তাহলে বেরাতে এসে আবার কাজ কিসের হু?”
মুন গিয়ে দরজা আটকে দাঁড়ালো। আঁধার রাগি স্বরে বলল,
—“মুন সরো বলছি। দরজা ছাড়ো আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে।”
—“আপনাকে আমি আজ কোনো ভাবেই যেতে দিবো না।”
বলেই মুন দরজা খুলে কবির খান কে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে গেল। কবির খান সোফায় বসে নিউজ পেপার পড়ছিলেন। মুনের ডাক শুনে নিউজ পেপার থেকে চোখ সরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। মুন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
—“আব্বু দেখো না ওই রাক্ষস টা আমাকে বকছে। আমি উনাকে আজ হসপিটালে যেতে বারণ করেছি তাই।”
এর মধ্যেই আঁধার ও ওখানে এসে হাজির হলো। মুন আবারো বলল,
—“জানো আব্বু উনি আমাকে সব সময় বকাবকি করে, ধমক মারে। আর আমাকে কান ধরে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে ও রাখে।”
কবির খান বিস্ফোরিত চোখে আঁধারের দিকে তাকালো। আর আঁধার তো ড্যাবড্যাব করে শুধু মুনের দিকেই তাকিয়ে আছে। মুন যে সব কবির খান কে বলে দিবে আঁধার তা বুঝতে পারেনি। মুন কাঁদার নাটক করে নাক টেনে টেনে বলল,
—“তুমি জানো আব্বু উনি তো সেদিন আমাকে মেরেও ছিলো।”
আঁধার যেন আকাশ থেকে পড়ল। ও আবার কখন মুন কে মারলো? আগের কথা গুলো সত্যি হলেও এটা মুন বানিয়ে বলছে। আঁধার একরকম চেঁচিয়েই বলল,
—“হোয়াট? কবে? কখন? কি বলছো তুমি এসব? আমি আবার তোমাকে কখন মারলাম?”
—“আপনার মনে নেই সেদিন যে মেরে ছিলেন?”
আঁধার কবির খানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন এখনি ওকে নিজের চোখের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে রাখ করে দিবে। কবির খান মেয়ের দিকে তাকিয়ে যথেষ্ট নরম হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
—“ঠিক আছে মামনি আমি আঁধার কে বুঝিয়ে বলছি ও আর তোমাকে কখনো বকবে না। এখন তুমি যাও গিয়ে দেখতো তাহেরা ঘুম থেকে উঠেছে কি না।”
মুন মাথা নেড়ে নাচতে নাচতে চলে গেল। আর যাওয়ার আগে আঁধার কে চোখ টিপ মেরলো। আঁধার ক্ষিপ্ত চোখে মুনের দিকে তাকালো। আঁধার বলল,
—“আপনি কি আপনার মেয়ের কথা বিশ্বাস করছেন?”
কবির খান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
—“না। আমি আমার মেয়ের চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি ও মিথ্যে বলছে। কিন্তু সাবধান ভুলেও কখনো এই ভুল করবে না। তাহলে জানো তো এর পরিণাম কি হবে?”
আঁধার মাথা নিচু করে কন্ঠ খাদে নামিয়ে জবাব দিলো,
—“হুম।ভালো করেই জানি।”
.
মুন রুমে এসে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ঊর্মি কে ফোন দিলো অনেক দিন ধরে কথা হয় না। ঊর্মি ফোন রিসিভ করে বলল,
—“হ্যা বল? কি খবর? কেমন আছিস? সংসার ক্ষ কেমন চলছে?”
—“একসাথে এতো প্রশ্ন? আচ্ছা একটা একটা করে জবাব দিচ্ছে। খবর ভালো। আমি ও অনেক ভালো আছি। আর সংসারের কথা কি আর বলবো!”
—“কেন কি হয়েছে রে?”
মুন দুঃখি কন্ঠে বলল,
—“আর জিগাইস না।”
ঊর্মি বোকার মত বলল,
—“ওকে।”
—“আরে গর্দভ মাইয়া আমি তো ওটা সিমপ্যাথির জন্য বলছিলাম।”
—“ওওওওও।”
—“এখন শোন আমার দুঃখ ভরা জীবনের কাহিনী।”
—“বল?”
—“আমার যে বিয়ে হয়েছে তা আমার কোনো দিক দিয়েই মনে হয়না। কারণ ওই রাক্ষস টা আমাকে বউ কম স্টুডেন্ট ভাবে বেশী। আর আমার উনাকে আমার জামাই কম প্রফেসর মনে হয় বেশী। আর আমার শ্বশুরবাড়িতে মনে হয় আমি বউ হয়ে নয় মেহমান হয়ে বেরাতে গেছি। এই হলো আমার কষ্টময় জীবনের কাহিনী।”
—“সত্যি’ই অনেক কষ্টময়।”
—“জানিস জামাই সুন্দর হলেও আবার প্যারা আছে?”
ঊর্মি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
—“কেন কেন?
—“কারণ সব শাকচুন্নী, পেত্নি, ডাইনীদের কুনজর পরে। সব সময় ভয় হয় কখন জানি কোন চুলের এসে বশ করে নিয়ে যায়।”
ভয়ার্ত কন্ঠে বলল মুন। আঁধার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মুনের কথপোকথন শুনছে। মুনের কথা শুনে কেনো জানি আঁধারের অনেক হাসি পেল। আঁধার নিঃশব্দে হাসলো। যখন মুন এরকম বোকা বোকা কথা বলে বাচ্চামো করে তখন আঁধারের খুব হাসি পায় কিন্তু আঁধার মুনের সামনে হাসে না। অনেক কষ্টে নিজের হাসি চাপিয়ে রাখে।
.
মুন আর আঁধার আজ চলে যাবে। আঁধার আর কবির খান বাইরে কারের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। মুন এখনো বের হয়নি। কবির খান বলেন,
—“শর্তের কথা মনে আছে তো?”
আঁধার শীতল দৃষ্টিতে কবির খানের দিকে তাকালো তারপর বলল,
—“হুম মনে আছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”
—“আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি। আমার মেয়ে যদি কখনো বলে ও তোমার কাছে থাকতে চায় না তাহলে কিন্তু ওকে আমি সারাজীবনের জন্য তোমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবো।”
আঁধার নিশ্চুপ। এই কথার কোনো উত্তর ওর কাছে
নেই। কবির খান প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
—“কাজ কেমন চলছে তোমার?”
আঁধার আড়চোখে কবির খানকে এক নজর দেখে নিয়ে বলল,
—“ভালো।”
—“আব্বু!”
মুনের চোখে জল টলমল করছে। যেন এক্ষুনি গড়িয়ে পড়বে এমন ভাব। কবির খানের শক্ত চোখ দুটো মেয়ের এমন টলমলে চোখ দেখে নিমিষেই শীতল হয়ে এলো। মুন ঝাঁপিয়ে পরলো কবির খানের বুকে। মুন যেতে চাইছে না আঁধারের সাথে ও বাড়িতে। ও কবির খানের সাথেই থাকতে চায়। এদিকে কবির খানের একটু আগে বলা কথা গুলো আঁধারের মনে হতেই ও বাঁকা চোখে কবির খানের দিকে তাকালো। কবির খান আঁধারের চোখের ভাষা বুঝতে পারছে। কবির খান মুনের মাথা টা বুক থেকে তুলে ওর গালে দু হাত রেখে বুঝিয়ে বলল,
—“মামনি তুমি এখন আঁধারের সাথে তাও। আবার যখন আসতে ইচ্ছে করবে তখন সঙ্গে সঙ্গে চলে এসো। এটাও তোমার বাড়ি ওটাও তোমার বাড়ি। আর ও বাড়িতে তো তোমার আরো দুজন আম্মু আব্বু আছে তারাও তো তোমাকে খুব মিস করছে তাই না? জানো তোমার শশুরবাবা আজ সকালেই আমাকে ফোন করে শাসিয়ে বলে দিয়েছে যেন তাড়াতাড়ি তোমাদের পাঠিয়ে দি। ওরা নাকি তোমাকে খুব মিস করছে। এখন তুমি যদি না যাও তাহলে তো ওরা খুব কষ্ট পাবে তাই না?”
মুন বাচ্চাদের মতো মাথা ঝাঁকালো। আঁধার শুধু সাইলেন্স দর্শকে মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কবির খান মেয়ের কপালে স্নেহময় চুমু এঁকে দিলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা চলে গেল।
চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১০
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। মুন জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু ভালো লাগছে না এখন আর। হালকা মৃদু বাতাস বইছে। গাছপালা গুলো মনে হচ্ছে দৌড়াচ্ছে। আকাশটা একদম পরিষ্কার। আকাশি রঙের আকাশটার বুকে বকের মতো সাদা মেঘেরা ভাসে চলেছে। কিছু মুক্ত পাখিরা দল বেঁধে খোলা আকাশে মনের সুখে উড়ে বেড়াচ্ছে। আবার কিছু পাখি গাছে বসে কিচকিচ আওয়াজ করে গান গাইছে। মুন সে গান খুব মনোযোগ গিয়ে শুনছে। মুন কে এতো চুপচাপ আর অন্যমনষ্ক দেখে আঁধার গলা খাঁকারি দিলো। কিন্তু মুন ওর দিকে ফিরেও তাকালো না। আঁধার নিরবতা কাটিয়ে বলল,
—“কাল সকালে তোমাকে কলেজে এডমিশন করাতে নিয়ে যাবো। আমরা ৯ টার দিকে রওনা হবো। তাই তৈরি থেকো।”
মুন সহজ ভাবে ছোট করে জবাব দিলো,
—“হুম”
—“তুমি আর আলিয়া এক সাথেই কলেজে যাবে। ড্রাইভার তোমাদের গাড়ি করে দিয়ে আসবে আবার নিয়ে আসবে।”
মুন আবারো জবাব দিলো,
—“হুম”
—“কলেজ শেষ হতেই বাড়িতে চলে আসবে। এক মিনিট ও কোথাও দাঁড়াবে না।”
—“হুম”
—“কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলবেনা। ছেলেদের আশেপাশে ও থাকবে না।”
—“হুম”
মুনের এই হুম হুম জবাবে আঁধার বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। মুনের হঠাৎ করে এরকম চুপচাপ হয়ে যাওয়া টা আঁধারের একদমই ভালো লাগছে না। যে মেয়েটা এক মিনিট ও চুপ করে থাকতে পারে না।সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকে ।যার মধ্যে চঞ্চলতা ভরপুর সে এরকম হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে গেলে কি কারো ভালো লাগে? উওর একদমই না। আঁধারের ও ভালো লাগছে না। কিন্তু আঁধার তো এটাই চাই তো। মুনের বকবকে ওর কান ঝালাপালা হয়ে যেতো। একটু শান্তিতে থাকতে পারতো না। কিন্তু এখন কেন এই শান্তিটাই ওর সব থেকে অশান্তি লাগছে? এর উওর আঁধার নিজেও জানেনা। আঁধারের রাগ উঠছে অনেক। রেগে গাড়ি ব্রেক করলো। মুন অন্যমনষ্ক থাকায় কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। তারপর সোজা হয়ে বসে আঁধারের দিকে প্রশ্নাক্ত দৃষ্টিতে তাকালো। আঁধার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভারী গলায় বলল,
—“কি হয়েছে তোমার?”
—“কই কিছু না তো।”
—“আমি যা যা বলেছি শুনতে পেয়েছি?”
—“কি বলেছেন আপনি?”
আঁধার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। এতক্ষন তাহলে ও যা যা বলেছে মুন তার কিছুই শুনতে পায়নি? আঁধার মুনের দিকে ভ্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে আছে। মুন আবারো জিজ্ঞেস করল,
—“কি হলো বলছেন না কেন? যে কি বলেছিলেন?”
আঁধারের এখন ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড়ে মুনর সব দাঁত ফেলে দিতে। আঁধারের নিজের ইচ্ছে কে দাবিয়ে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—“কাল আমি তোমাকে কলেজে ভর্তি এডমিশন করাতে নিয়ে যাবো। ৯টার দিকে রওনা দিতে হবে তাই রেডি থেকো। রোজ তুমি আর আলিয়া এক সাথেই কলেজে যাবে। ড্রাইভার তোমাদের দিয়ে আসবে আবার কলেজ ছুটি হলে নিয়ে আসবে। কলেজ ছুটি হওয়ার পর এক মিনিট ও কোথাও দাঁড়াবে না সোজা বাড়িতে চলে আসবে। ছেলেদের সাথে ভুলেও কখনো কথা বলবে না। কোনো ছেলের আশেপাশে ও যেন তোমাকে না দেখি।”
মুন চুপচাপ সব শুনলো তারপর জবাব দিলো,
—“প্রাণি আমি আপনার এই আজাইরা রুলস ফলো করতে পারছি না।”
আঁধার বাকা হেসে বলল,
—“সো বি রেডি ফর পানিশমেন্ট।”
—“কেন?”
—“আমার দেওয়া রুলস গুলোর মধ্যে একটা রুলস ব্রেক করলেও তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।”
বলেই আঁধার আবারো বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
.
সকাল ৫টা বাজে আঁধার মুন কে ঘুম থেকে তুলে পড়তে বসিয়েছে। মুন টোলতে টোলতে পড়তে বসেছে। এখন বইয়ের সামনে বসে মুন মুরগির বাচ্চার মতো ঝিমাচ্ছে। আর আঁধার ল্যাপটবে কাজ করছে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। আঁধার ল্যাপটব থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে মুন কে ঝিমাতে দেখে দেয় এক রাম ধমক। মুন ধমক খেয়ে ধরফরিয়ে উঠে জোরে জোরে পড়তে শুরু করল। মুনের কান্ড দেখে আঁধার মুনের আড়ালে হাসে। এভাবেই ৮টা বেজে যায়। আঁধার ৩০মিনিট সময় দিয়েছে মুন কে রেডি হতে। মুন কাবার্ড থেকে একটা ব্লু কালারের লং ফ্রোক, হোয়াইট কালারের ট্রাউজার আর ওড়না নিয়ে ওয়াশরুমে চেন্জ করতে চলে যায়। এসে দেখে আঁধার একদম রেডি এখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখছে। আঁধার মুনের দিকে ফিরতেই মুন ছোট খাট একটা বাঁশ থুক্কু ক্রাশ খেল। ফর্সা সুঠাম দেহে হোয়াইট কালারের জিন্স ওর টিশার্ট তার উপরে ব্লু কালারের জ্যাকেট। ফর্সা লোমশ হাতে ব্লু কালারের ব্যান্ডেড ওয়াচ। রেশমী সুতোর মতো সিল্কি সফ্ট চুল গুলো কপালের উপরে পরে আছে। নীল এক অতল সাগরের মতো মায়াবী চোখের উপরের ডান দিকের ভ্রুতে একটা কাঁটা দাগ আছে যেটার জন্য আঁধার কে আরো বেশী আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। রেশমী চুলগুলো বারবার উরে এসে কাঁটা দাগ টাকে ঢেকে দিচ্ছে। ডার্ক রেড মেয়েলী পাতলা ঠোঁটের নিচে ছোট্ট একটা কালো তিল। যেটা তে চোখ পরতেই মুনের খুব হিংসে হলো। কারণ মুনের ঠোঁটের উপরে, নিচে তিল থাকা খুব পছন্দের। মুন সবসময় আফসোস করতো ইশ্ যদি তার ও এরকম ঠোঁটের নিচে তিল থাকতো। মুন তাদের দেখতে পারেনা যাদের ঠোঁটের নিচে তিল আছে। কিন্তু আঁধার থেকে যেন চোখ’ই পরছে না। বেহায়ার মতো এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে চোখ দুটো। যেন চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে ওকে। মুন কে নিজের দিকে এরকম হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁধার ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকালো। তাকে কি এলিয়েন মনে হচ্ছে যে মুন এভাবে হা করে তাকিয়ে দেখছে। আঁধার লুকিং গ্লাসে একবার ভালো করে নিজেকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো। নাহ সব তো ঠিকই আছে। তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? আঁধার মুনের সামনে চুটকি বাজাতেই ওর হুঁশ ফিরে। মুনের নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জায় আঁধারের দিকে তাকাতে পারছে না। নিজেকে নিজেই বেহায়া উপাধি দিলো মুন। আঁধার বলল,
—“তাড়াতাড়ি রেডি হও। তোমার হাতে আর মাত্র ১০মিনিট সময় আছে।”
মুন তাড়াহুড়ো করে রেডি হলো। মুখে ক্রিম আর হালকা ফেস পাউডার দিলো। ঘনো কালো চুলগুলো আঁচড়ে বাঁকা সিঁথি করে স্টোনের ক্লিপ মেরে নিলো। হাতে ব্লু কালার লেডিস ওয়াচ। পায়ে স্লিপার। কাঁধে কলেজ ব্যাগ নিয়ে মুন রেডি। মুন আঁধার কে বলল,
—“আমি রেডি চলুন।”
আঁধার মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখেই বলল,
—“আগে রেডি হয়ে নেও তারপর।”
—“আমি তো রেডি’ই!”
কথাটা মুন অবাক কন্ঠে বলল। আঁধার এবার মুনের দিকে তাকালো তারপর শান্ত স্বরে বলল,
—“এভাবে তুমি বাইরে যেতে পারবে না। চুল গুলো বেঁধে হিজাব পরে নেও। তোমাকে যেন কখনো চুল ছেড়ে বাইরে যেতে না দেখি।”
—“কিন্তু……..”
—“নো মোর ওয়ার্ডস্।”
কথাটা কিছুটা ধমকের স্বরে বলল আঁধার। মুন কেঁপে উঠলো। তারপর আর কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে চুল গুলো ভালো করে আটকে ব্লু কালারের কারুকাজ করা একটা হিজাব বেঁধে নিলো। তারপর একপাশ ওড়না টা নিলো। গোল মুখমণ্ডল টা হিজাব বাঁধার কারণে আরো গোল মনে হচ্ছে। মুন আঁধারের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আঁধার উঠে দাঁড়ালো তারপর চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বলল,
—“নাও ইউ লুকিং সো বিউটিফুল।”
মুন কথা টা শুনলো না শুধু আঁধারের ঠোঁটের দিকেই তাকিয়ে আছে। লোকটা এতো সুন্দর করে হাসতে পারে তা মুনের জানা ছিলো না। আঁধারের ওই হাসি যেন তীরের মতো গিয়ে মুনের বুকে বাঁধলো।
.
আঁধার গাড়ি ড্রাইভ করছে মুন ফ্রন্ট সিটে বসেছে আর আলিয়া ব্যাক সিটে। আলিয়া কানে ইয়ারফোন গুজে মোবাইল টিপছে। মুন জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। আঁধার লুকিং গ্লাসে বার বার আড়চোখে মুন কে দেখছে। মুন বলল,
—“আচ্ছা Mr.Husband আমি কি আজ থেকে ক্লাস করব নাকি কাল থেকে?”
আঁধার ড্রাইভ করতে করতেই বলল,
—“কাল থেকে। আজ তোমার প্রয়োজনীয় সব বুকস ও নোটবুকস ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে হবে।”
—“আলিয়া ও কি আমাদের সঙ্গে যাবে?”
আলিয়া কানে থেকে ইয়ারফোন খুলে বলল,
—“নো মিষ্টি আজ আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। একদমই মিস করা যাবে না।”
সবাই আবার চুপ হয়ে গেল। গাড়ি এসে থামলো কলেজের সামনে। আঁধার মুন আর আলিয়া কে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করতে চলে গেল। মুন আর আলিয়া হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের সামনে গেল। এর’ই মধ্যে কোথা থেকে যেন একটা ছেলে এসে মুনের সামনে লাল টকটকে একটা গোলাপ নিয়ে এক হাঁটু ভেঙ্গে বসে পরলো। আর সেই সময়’ই আঁধার ও গাড়ি পার্ক করে ক্যাম্পাসে ঢুকলো।
চলবে,