#The_Beauty_Of_Love,2,3
#Samayra_Mihu (Nafisa)
#Part_2
.
.
.
মামনি আমাকে খাইয়ে দিয়ে নিচে চলে গেলো অনেক ভালো ভদ্র মহিলা মনে হচ্ছে এই বিয়ে নিয়ে অনেক খুশি উনি তাই আমিও কিছু বললাম না যে আপনার ছেলে আমাকে যোর করে বিয়ে করেছে,,,,
আমি রুম টা ভালো করে ঘুরে দেখছি অনেক বরো রুম,, রুমের বেশির ভাগ জিনিস ই ব্ল্যাক মনে হয় লোকটা ব্ল্যাক পাগল,, বেডের ওপরে বরো একটা ছবি টাঙানো ওনার অনেক কিউট লাগছে হালকা একটু হেসে আছে,,,মামনি আমাকে সাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে তার মতে আজ নাকি আমাদের বাসর রাত,, বাসর এর কথা মনে আসতেই বুকটা কেঁপে উঠলো,, আমি তো আজ এই সময় আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকতাম রোহানের কাছে কিন্তু উনি সব উলোট পালোট করে দিলো,, উনি আমাকে বিয়ে কেনো করলো আর রোহান কোথায় আমার ফোন টা ও তো পাচ্ছি না,,মন টা ভীষণ খারাপ অনেক কান্না পাচ্ছে আমার চিনি না জানি না হুট করে বিয়ে করে নিলো,,একবার আমার মত টাও জানতে চাইলো না,,
শুয়ে শুয়ে কান্না করছিলাম তখনি আচমকা কে যেনো আমার হাত টা ধরে অনেক জোরে বেড থেকে তুলে দূরে ছুড়ে মারলো সামলাতে না পেরে পরে গিয়ে হাতে কোমরে ব্যাথা পায় অনেক আরো বেশি কান্না করতে থাকি,,,,তাকিয়ে দেখি মাহির উনি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি উনি বলে উঠে,,
” সহুষ কি করে হয় তোর আমার বেডে শুয়ে থাকার,,আজ যা করেছিস করেছিস ভুলেও আমার আর আমার সব জিনিসের থেকে দূরে থাকবি মনে থাকে যেনো,,,
এই বলেই ওয়াষরুমে চলে যায় উনি আমি আরো কান্না করতে থাকি,,কেনো এমন করলো উনি আর কেনো আমাকে বিয়ে করলো যদি এমনই করার ইচ্ছা তো কি শত্রুতা ওনার সঙ্গে আমার,,আমি এসব ভাবছি,,তখনি উনি বের হয়ে আসলো আমি ভয়ে চুপ করে আছি মনের মধ্যে এতো প্রশ্ন তবুও যেনো মুখ থেকে কিছু বের হচ্ছে না শুধু চোখ দিয়ে জল পরেই যাচ্ছে,,,
উনি ওনার অফিস ব্যাগ থেকে একটা কাগজ জাতীয় কিছু বার করলো মনে হই কোনো পেপার,,উনি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমি ভয়ে সরে যায় একটু, আমি এখনও বসেই আছি এতো জোরে পেলেছে যে উঠতে পারছি না ,,উনি আমার দিকে একটু ঝুঁকে বলে উঠে,,,
“এই পেপার টাই সাইন করে দে এখনি,,,
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
“কিসের পেপার এটা,,
তখন উনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে,,
“এখানে লেখা আছে আমাদের বিয়ের ঠিক এক বছর পূর্ণ হলেই আমরা একে অপরকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো,,ডিভোর্স দেওয়ার পর আমি তোকে অনেক টাকা দিবো তারপর তুই তোর রাস্তায় আমি আমার রাস্তাই,,আর হ্যাঁ তোর আমার ওপরে কোনো অধিকার থাকবে না তুই শুধু এক বছরের জন্য মিসেস মাহির চৌধুরী হয়ে থাকবি আমার বাড়ি তে থাকবি খাবি আর কিছু না ,,,,নে এখন সাইন করে দে,,,
মাহিরের কথা শুনে আমি অবাক হলাম উনি আমাকে বিয়ে করলো কেনো যদি এমনি করবে তো আমি আর চুপ করে থাকতে না পেরে বলেই ফেললাম,,,
“আমাকে বিয়ে কেনো করলেন,, আমি তো আপনাকে বিয়ে করতে চায় নি আর না আপনার নাম বাড়ি টাকা ছেয়েছি তাহলে বিয়ে করলেন কেনো আমাকে,,?? আমি তো রোহান কে ভালোবাসি আর রোহানের সঙ্গে আমার বিয়ে হতো আজ আপনি সব উলোট পালোট করে দিয়েছেন,,,,(কান্না করে বললাম)
আমার কথা শুনে উনি রেগে আমার কাছে এসে আমার মুখ শক্ত করে ধরে বলে উঠে,,
“তোকে বিয়ে করার আমার কোনো সখ বা ইচ্ছা কোনো টাই ছিলো না আমিও যোর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছি আজ বিয়ে না করলে আমার কষ্টে গড়ানো সব কিছু নিলামে চলে যেতো তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছি তোকে আর তোর আশিক কি যেনো নাম রোহান সে তো তোকে বিয়ে করতেই আসে নি কাজী অফিসে আর তুই ছাড়া আরও অনেক মেয়ের সঙ্গেই ওর রিলেশন আছে তুই মরলি কি বাচলি কোনো মাথা ব্যাথা নেই তার,,,
আমি অনেক ব্যাথা পাচ্ছি উনি এতো শক্ত করে ধরেছে আমার মুখ আমি যোর করে ছাড়িয়ে জিজ্ঞেস করি,,,
“আপনি কি করে জানলেন রোহান আসে নি আর ওর আরো রিলেশন আছে?
“বেশি প্রশ্ন না করে সাইন করে দে,,(রেগে একটু জোড়ে)
আমি ওনার ধকম শুনে ভয়ে সাইন করে দেই,, সাইন করা হলেই উনি আমার হাত থেকে পেপার টা নিয়ে বলে উঠে,,,
“মাহির চৌধূরী একটা মেয়েকে বিয়ে করছে আর তার ব্যাপারে খোঁজ নিবে না এটা কি করে হয় আর হ্যাঁ আমাদের ডিলের ব্যাপারে আমার আম্মু যেনো কিছু না জানে তার সামনে কখনো কান্না করবি না আর এমন ভাব করবি যেনো আমরা এই বিয়েতে অনেক খুশি,,এক বছর পর আমি ঠিক সামলে নিবো,,,,যা এখন গিয়ে সোফায় শুয়ে পর আর একদম কান্না করে আমার ঘুম নষ্ট করবি না নইতো তোর খবর আছে,, (এই বলে বেডে শুয়ে পড়ে উনি)
উনি শুয়ে ঘুমিয়ে যাই আর আমি কান্না করতে থাকি তবে জোরে কান্না করতেও পারছি না মুখ টিপে কান্না করছি,, আমি উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না অনেক বেথা পেয়েছি কোমরে হাতে,, উঠতে না পেরে ওখানেই ফ্লোরে ঘুমিয়ে পরী কান্না করতে করতে,,,
ভর রাতে মাহিরের ঘুম ভেংগে যায় আর দেখে আমি ফ্লোরে শুয়ে আছি,,উঠে আমার কাছে এসে বসে আমার মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ভাবতে লাগে,,,,
“এতো সুন্দর কেনো এই মেয়েটা না চাইতেও চোখ চলে যায়,,,(মুখের ওপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয় কিন্তু হঠাৎ ই মাহিরের মনে কি আসে আর তার মন চিন্তা ভাবনা পাল্টে যায় আর বলে)
“সো সরি মিস ওহ সরি মিসেস সামায়রা মিহু চৌধূরী তোমার সুন্দর্য তে আমার মন মাহির চৌধুরীর মন গলাতে পারবে না হেট করি আমি সব মেয়েদের,, মেয়েরা ভালোবাসা নামক সুন্দর্য টা বুঝে না তারা শুধু টাকা বুঝে টাকা,,,
এই বলে মাহির উঠে চলে যেতে লাগে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে চার টা বাজে মানে সকাল হতে আর বেশি সময় নেয়,,,মাহির আমাকে কোলে তুলে বেডে শুয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়,,,আর কিছু কথা যা মাহিরের মনে গেঁথে আছে সেগুলো ভাবতে লাগে,, কিছু কথা ভেবে মাহির নিজেই হেসে উঠে,,
“আরে তুই এভাবে খাচ্ছিস কেনো তোর এতে অভ্যেস নেই,,(মাহির নিবিড় কে বিয়ার খেতে আটকায় আর কথা গুলা বলে তখন আমি নিবিড় বলে উঠে,,)
“তুই কেনো খাচ্ছিস তুই খেলে আমিও খাবো তুই জানিস এইসব খেলে কতো ক্ষতি হয় তারপরও তুই খাস আমাকে একা ফেলে ওপরে যাওয়ার চিন্তা তাই না আমিও খাবো আর তুই আমি একসঙ্গে ওপরে যাবো,,,(নেশার সরে বলে উঠে নিবিড়)
এইটা ভেবে মাহির হাসতে লাগে কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুখের রং বদলে যাই চোখের কোন থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে,,আর নিজে নিজে বলে,,,
“তুই না বলেছিলি ওপরে যেতে হলে একসঙ্গে যাবো তাহলে আমাকে একা রেখে কেনো গেলি তুই,,তুই তো আমার সঙ্গে বাঁচা মরার কথা দিয়েছিলি তাহলে কেনো করলি এমন,,,,,(মাহিরের চোখ থেকে পানি পড়ছে হ্যাঁ এটাই মাহির চৌধুরী যার ভয়ে সব কাপে রাগ ছাড়া হাসি কান্না কেও কখনো দেখেনি তার মুখে ,, কিন্তু সবার আড়ালে মাহির একজনের জন্য কাদে আর সেটা তার একমাত্র কলিজার বন্ধু নিবিড়ের জন্য,,নিবিড় মাহির ছোটো থেকে একসঙ্গে বরো হয়েছে একি স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি যেখান যেত একসঙ্গে কিন্তু একটা ঝড় এসে সব উলোট পালোট করে দেই মাহিরের জীবন,,,মরা বাঁচা যে করো হাতে নেই কার কাছে কতো হায়াত আছে সেটা শুধু আল্লাহ জানেন ,,তবুও মাহির কষ্টে বললো কথা টা যে কেনো আমাকে একা রেখে গেলি,,)
মাহির রাগী ফেস নিয়ে বলে উঠে,,,, তোর এমন অবস্থার জন্য আমি কোনো মেয়েকে কখনো ক্ষমা করবো না সব মেয়ে এক হয় তারা টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না ,, ভালোবাসার মর্যাদা কি জানে না ভালোবাসায় কতটা সুন্দর্য লুকিয়ে আছে বুঝে না ,,, আই হেট অল গার্লস,,,,,
এই বলে মাহির বারান্দা থেকে রুমে চলে যায় রেডি হয়ে অফিসের জন্য বের হতে যায় তখন মিহুর দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে চলে যায় অফিসে,,,,,,,
আমার ঘুম ভাঙ্গলে নিজেকে বেডে আবিষ্কার করি আমি তো অবাক আমি বেডে কি করে এলাম আল্লাহ উনি দেখলে তো আমাকে আবার মারবে, ভালো করে চারি দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি নেই বুকে হাত দিয়ে একটা বরো শ্বাস ফেললাম,,, কিন্তু বেশি খন থাকা যাবে না বেডে এখনি উঠে যাই কিন্তু আমাকে এখানে নিয়ে এলো কে আমি ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমার যতদূর মনে পড়ছে,,,হয়ত ঘুমের ঘোরে চলে এসেছি তাই হবে,,, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমি অবাক ১১ টা বাজে আমি তো কখনো এতো ঘুমায়নি আজ কি করে ছি ছি এই বাড়ির লোক কি না কি ভাববে আমায়,,,
এই বলে উঠে যেতে লাগি কিন্তু এখনও আমার কোমরে একটু বেথা করছে তবুও কষ্ট করে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে নিলাম কাল মামনি ওনার কিছু সাড়ি আমায় দিয়েছিল তার মধ্যেই একটা পরে নিলাম,,একটু পর দেখি মামনি রুমে এসেছে ওনার হাতে কিছু ব্যাগ কিন্তু এসেই জোড়ে হেসে উঠলো,,আমি কিছু বুঝলাম না কি হলো ব্যাপার টা মামনি হাসছে কেনো
আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে মামনির দিকে তাকিয়ে আছি মামনি ব্যাগ গুলা বেডের ওপর রেখে আমার কাছে এসে আমাকে ধরে আয়নার সামনে দার করিয়ে বলে,,
“এটা তোর সাড়ি পরা হয়েছে,,(আবার হেসে উঠলো)
আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখি আয়নার দিকে এমা সত্যি তো এটা আমি কি করে সাড়ি পড়েছি কিন্তু কাল মামনি যে ভাবে আমাকে সাড়ি পরিয়ে দিলো সেভাবেই তো পরলাম কিন্তু এতে তো আমাকে মোটি দেখতে লাগছে ,,,কচি গুজার যাই গায় অনেক গুজে ফেলায় পেট টা অনেক মোটা লাগছে যে কেও দেখলে বলবে আমি প্রেগন্যান্ট আর আঁচল টা এতো ছোটো এক কথায় জোকার মনে হচ্ছে আমাকে,,আমি কাদো কাদো ফেস নিয়ে মামনির দিকে তাকালাম,,,উনি হাসি থামিয়ে বলে,,
“এই নে এগুলা তে অনেক সুন্দর ড্রেস আছে থ্রি পিচ এগুলার মধ্যে একটা পর পরে তখন মাহির কে বলবো তোকে শপিং করতে নিয়ে যাবে ,,(বেডে রাখা ব্যাগ গুলা ধরিয়ে দিয়ে বলল )
আমিও কিছু না বলে চেঞ্জ করে নিলাম,,তারপর নিচে চলে গেলাম নাস্তা করতে বসে আমি মামনি কে জিজ্ঞেস করি,,,
“মামনি উনি কই?(মাথা নিচু করে)
“উনি টা আবার কে?(মুচকি হেসে )
“চৌধুরী সাহেব মানে তোমার ছেলে,,(একটু বিরক্ত নিয়ে)
আমার কোথায় মামনি হেসে বলে উঠে,,,,”বাহ চৌধুরী সাহেব ভালো নাম তো,,,কিন্তু তোর চৌধূরী সাহেব সেই সকালেই চলে গেলো আমি জিজ্ঞেস করায় বলে অফিসে নাকি জরুরী কাজ আছে,, এটা কোনো কথা হলো বিয়ের পরের দিন ই অফিস আমার ছেলে টা যে কি আল্লাহ জানেন,,,
“তোমার ছেলে একটা ,রাক্ষস, রাগী ইদুর, কাটা ওলা মাছের নাড়িভুড়ি, ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার চার নম্বর বাচ্চা, রাগের খনি,মন চায় উল্টিয়ে লোটকাই রাখি গাছের সিরো ডালে,,,(মনে মনে বললাম)
সারাদিন মামনির সঙ্গে গল্প করে আর কিছু কাজ করে কাটিয়ে দিলাম আমাকে কাজ করতে দেইনি শুধু বলেছে তুই আমার সঙ্গে গল্প কর,,মামনি অনেক ভালো এক দিনেই অনেক আপন মনে হচ্ছে ওনাকে উনি একটু তেই আপন করে নিয়েছে আমাকে,, মা ছেলের মধ্যে কি পার্থক্য মা ভালোবাসার জননী কোনো রাগ হিংসে নেই মনে আর ছেলে একটা অপদার্থ টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না নইতো সম্পত্তির জন্য অজানা অচেনা মেয়েকে বিয়ে করতে পারে ছি গৃনা হচ্ছে আমার ওনার কথা ভেবে,,,,,,কিন্তু রোহান সে কোথায় এখন আমি তো বাড়ি থেকে বের হতেও পারছি না আর আমি জানিয়েও না এই বাড়ি ঠিক কোন যাই গাই আছে আসার পর থেকে শুধু নিচে ড্রয়িং রুম আর মাহিরের রুম ই দেখেছি অনেক বরো বাড়ি আর অনেক পরিপাটি সাজানো,কিন্তু আমি আর কোথাও বের হইনি কিন্তু আমার যে রোহানের সঙ্গে কথা বলতেই হবে চৌধূরী সাহেব (মাহির) যা বলছে তা কি ঠিক নাকি মিথ্যা বলছে রোহান কি সত্যি আসে নি কাজী অফিসে কিন্তু আসবেই না যদি তাহলে আমাকে কাজী অফিসে কেনো আস্তে বললো,,,অনেক প্রশ্ন ঘুরছে কখন এসবের উত্তর পাবো আমি আর এই বাড়ি থেকে কি বের হতে পারবো না আমি কখনো,,?,,,
চলবে?
#The_Beauty_Of_Love
#Samayra_Mihu (Nafisa)
#Part_3
.
.
.
আমার যে রোহানের সঙ্গে কথা বলতেই হবে চৌধূরী সাহেব (মাহির) যা বলছে তা কি ঠিক নাকি মিথ্যা বলছে রোহান কি সত্যি আসে নি কাজী অফিসে কিন্তু আসবেই না যদি তাহলে আমাকে কাজী অফিসে কেনো আস্তে বললো,,,অনেক প্রশ্ন ঘুরছে কখন এসবের উত্তর পাবো আমি আর এই বাড়ি থেকে কি বের হতে পারবো না আমি কখনো? না আমি থাকবো না এই বাড়ি তে যেই লোককে আমি চিনি না জানি না তার সঙ্গে এক বছর কখনো থাকবো না স্বার্থপর লোক একটা যে নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝে না আমি আজ রাতেই চলে যাবো এই বাড়ি ছেড়ে লুকিয়ে অনেক দূরে চলে যাব রোহান কে নিয়ে আমাদের কেও খুঁজে পাবে না এই মাহির চৌধুরী ও না,,,,
এই সব রুমে বসে ভাবছি এখন রাত ১০ টা বাজে এখনও উনি আসেন নি কিন্তু এখন বাড়ির সব কাজের লোক এমন কি মামনি ও জেগে আছে আমাকে গভীর রাতে পালাতে হবে,,সব কিছু ভেবে সোফায় শুয়ে পড়ি একটু ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হবে না চৌধূরী সাহেব আসলে এমনি তেই বুঝতে পারবো আমার ঘুম অনেক পাতলা (নাইস জোকস ঘুম পাতলা__লেখিকা),,,এই ভেবে আমি ঘুমিয়ে পড়ি,,
রাত ঠিক ১২ টার দিকে মাহির আসে রুমে ঢুকে গেছে মিহু বেঘোরে ঘুমাচ্ছে,,,”এতো টা কিউট নিষ্পাপ কি করে হতে পারে একটা মেয়ে ,,,কিছু খন তাকিয়ে থেকে ওয়াশ রুমে চলে যায় মাহির ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ে,,,,
রাত ১ টার সময় ধরফরিয়ে উঠে বসলাম আমি,, খারাপ স্বপ্ন দেখে উঠে পড়েছি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১ টা বাজে আল্লাহ আমি পালাবো কখন বেডের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে,,এখনি আমাকে পালাতে হবে তোকে কে ঘুমাতে বলেছিল মিহু কি বাচ্ছি দেখলি তো দেরি হয়ে গেল কখন যে এই রাক্ষস টা এসেছে আমি টের ই পায়নি ,,,
আর কিছু না ভেবে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম আর রুমের বাইরে থেকে মুখ একটু ভিতরে ঢুকিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
“থাক তুই সালা রাক্ষস, অ্যানাকোন্ডা,জিরাফ থাক তুই তোর সম্পত্তি টাকা বাড়ি গাড়ি নিয়ে এসব বাঁচানোর জন্যই তো আমাকে বলির পাঁঠা বানালি থাক এখন মর তুই এসব নিয়ে,, এই বলে নিচে চলে এলাম আস্তে আস্তে ,,নিচে মামনি মানে মাহিরের আম্মুর রুম আমি রুমের সামনে গিয়ে একটু দরজা খুলে দুর থেকে সালাম দি,,আর বলি,,
“মামনি তুমি অনেক ভালো তোমার সঙ্গে একদিন থেকে আমি আমার মা এর ভালোবাসা অনুভব করেছি,,ছোটো তে আব্বু আম্মু মারা যান মামি আমাকে ভালোবাসে নি কখনো,,তোমার সঙ্গে একদিন থেকে আমার আম্মুর সখ টাও পূরণ হলো আমি তোমার কাছে সারাজীবন থাকতে চায় মামনি কিন্তু এটা সম্ভব না তোমার ছেলে আমাকে যোর করে বিয়ে করেছে তোমার ছেলের সঙ্গে থাকা অসম্ভব আর আমি ও তো অন্য একজন কে ভালোবাসি তাকে ঠকায় কি করে তাই চলে যাচ্ছি ভালো থেকো মামনি,,,,
এমন দুর থেকে বলে চলে আসি কেনো যেনো চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে বুকের মধ্যে চিন চিন বেথা করছে কিন্তু কেনো এদের সঙ্গে তো মাত্র দুই দিন এর পরিচয় হয়তো মামনি অনেক ভালোবাসা দিয়েছে তাই,,,এই ভেবেই মেইন দরজা আস্তে করে খুলে বেরিয়ে পড়ি বাইরে বড়ো বাগান আছে আর বড়ো আরেকটা দরজা আছে কিন্তু ওখানে দারোয়ান লোকটা আছে তাহলে আমি যাবো কি করে,,,,চুপি চুপি ওখানে গিয়ে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরি বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য একটা রাস্তা আর রাস্তার পাশেই অনেক গাছ লাগানো এক সাইডে আরেক সাইডে একটা বড়ো সুইমিং পুল ,,,আমি দারোয়ান কাক্কু কে একটু ভালো করে দেখলাম আরে কাক্কু তো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে হিহিহিহি চিনকু (থ্যাংক ইউ) কাক্কু ঘুমানোর জন্য আমি সহজেই বের হতে পারবো,,,,
দারোয়ান কাক্কুর চেয়ার এর সামনে একটা টেবিল আছে সেখানে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে কাক্কু আর টেবিলের ওপর চাবি আছে আমি চাবি টা নিয়ে গেট খুলে আবার রেখে দিলাম খুব সাবধানে তারপর আরামসে বের হয়ে গেলাম,,,,বের হয়ে তো পরলাম আরেক ঝামেলায় এটা কোন এলাকা বুঝতেই তো পারছি না অন্ধকারে,,দুটো রাস্তা দেখা যাই একটাই আলো দেখা যাচ্ছে একটাই পুরো অন্ধকার,, আমি অন্ধকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবছি,,,
“কোনটাই যাবো এটাই নাকি ওটাই এটা তো অনেক অন্ধকার আর ওই পাশের রাস্তা টা আলো দেখা যাচ্ছে আলোর রাস্তায় কি যাবো? উহু কিন্তু যদি অন্ধকার রাস্তা টা সঠিক হয়,,কি করি কেও তো হেল্প করো ,,আল্লাহ তুমি ই বলে দাও আমি কোন রাস্তায় যায়,,, তখনি একটা ছেলে কণ্ঠে একজন বলে উঠে,,
“বা দিকের টাই যাও,,
বা দিকের টা মানে অন্ধকার রাস্তা টার কথা বললো,, আমি তো মহা খুশি আরে বাহ আল্লাহ আমার কথা শুনে ফেললো লোকটা কে ধন্যবাদ দেয় একটা,,এই বলে আমি পিছনে তাকিয়ে তো অবাক এখন আমার মুখ থেকে একটা কোথায় বের হচ্ছে,,,
“হায় আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো বাঁচাতে পারবে না কেও,,,(মনে মনে)
হালকা আলোয় যে আমার চিনতে অসুবিধা হয়নি আমার সামনে শয়ং উনি মানে মাহির চৌধূরী সাহেব দাড়িয়ে আছে,,আমি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছি,, উনি আমার কাছে এসে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল থাপ্পড় টা এতো বেশি যোরে ছিল যে রাত মে সূর্য নাজার আগায়া মেরে কো,,,আমার ঠোঁটের কোন একটু কেটে রক্ত পড়তে লেগেছে মাথা টা ঝিম ঝিম করছে আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়,,,,,
মাহির ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে কিন্তু তার ঘুম আসে না চোঁখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে আর সব কিছু ভাবতে লাগে,মাহির ভাবে,,,আমি মেয়েটাকে বিয়ে করে ভুল করলাম না তো কিন্তু আমার যে কিছু করার ছিলো না ,,আমি কি একটু বেশি করছি অন্তত বেডে.. না না কি ভাবছি আমি এইসব এক বছর পর আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো তারপর আর কোনো সম্পর্ক নেই ওর সঙ্গে আমার,,,,,(সোফায় শুয়ে থাকা মিহুর দিকে তাকিয়ে ভাবে কথা গুলা কিছু খোন পর আবার চোখ বন্ধ করে নেয় কিন্তু ঘুমায় না একটু পরে মিহু ধড়ফরিয়ে উঠে বসে মাহির বুঝতে পেরেছে কিন্তু তাকায়নি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চোঁখ বন্ধ করেই থাকে,,,)
কিছুক্ষন পরে আমি যখন উঠে নিচে চলে যায় তখন মাহির আমার পিছন পিছন আসে কিন্তু আমি মামনির রুমের দিকে যায় তখন মাহির ভাবে হয় তো আম্মুর সঙ্গে ঘুমাবো আমি কিন্তু সেখান থেকেও চলে এসে মেইন দরজা র খুলে বাইরে চলে আসি তখন মাহির বুঝে আমি পালাচ্ছি তাই পিছন পিছন সেও আসে আমি যখন কোন রাস্তা দিয়ে যাবো তা নিয়ে কন্টিউশনে ছিলাম তখনি আমার পিছনে এসে দাঁড়ায়,,,,,,
।
হঠাৎ আমার মুখের ওপর পানি পড়লো আর আমি চিৎকার করে বলে উঠি,,,
“আআআআআআআহ মামী ছাদ ফুটো হয়ে গেছে আমি ভিজে গেলাম বাঁ….,,,(কিছু বলতে যাবো তখনি কেও আমার মুখ চিপে ধরে আমি চোখ খুলে তার দিকে তাকিয়ে আছি তখন উনি বলে উঠে)
“এতো চিৎকার করছিস কেনো আর এটা তোর মামীর বাড়ি না যে ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়বে,,,(রেগে বলল)
ওহ তারমানে ছাদ ফুটে নি একটা অস্থির নিঃশ্বাস নিয়ে আগের কথা মনে পড়ে আমার চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় ওনার দিকে,,উনি আবার বলে উঠে,,
“বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলিস কেনো?
আমি চুপ আছি কিছু বলছি না উনি আমার চুপ থাকা দেখে আবার রেগে বলে উঠে,,
“কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে কেনো যাচ্ছিলি?
আরে মাথামোটা বড়ো লোক আমার মুখ টা ছাড়বি তবেই না আমি উত্তর দিবো বেডা খচ্চর,,(আমি এগুলা ভেবে আমার মুখের দিকে ইশারা করলাম চোখ দিয়ে যাতে আমাকে ছেড়ে দেয়,,)
উনি আমার ইশারা বুঝতে পেরে নিজের হাতের দিকে তাকায় আর দেখে উনি আমাকে ধরে আছে আর অনেক টা কাছে আমার ,,,আমাকে ছেড়ে একটু দূরে দাড়ায় দিয়ে বলে,,
“এবার বল,,
উনি আমার মুখ ছেরে দিলে আমি হাঁপাতে লাগি একটু শান্ত হয়ে বলে উঠি,,,
“থাকবো না আমি আপনার বাড়িতে আমি চলে যাবো,,আপনি তো নিজের সব কিছু বাঁচাতে আমাকে বিয়ে করেছিলেন এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে এখন আমাকে যেতে দিন আমি আপনার মতো লোকের কাছে এক বছর কখনো থাকবো না,,,
উনি আমার কথা শুনে আমার কাছে এসে আমার দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলে উঠে,,
“এখান থেকে যাওয়ার ভুল কখনো করবি না মনে রাখিস তোর নামের সঙ্গে আমার নাম জড়িত আছে এখন তোর কিছু হলে বদনাম আমার হবে তাই একবছর তুই আমার কাছেই থাকবি সেটা তুই চাষ আর না চাষ থাকতে তোকে হবেই,,,আর তুই পালিয়ে যাবি কোথায় বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছিস এর পরেও কি তোর মামী তোকে বাড়িতে ঢুকতে দিবে? তারপরেও কি রোহানের কাছে যেতে চাষ কিন্তু তোর রোহান তোকে ঢুকতে ও দিবে না তার তোর মতো আরো অনেক গার্ল ফ্রেন্ড আছে,,,,
“আপনি কি করে জানেন ওর অনেক গার্ল ফ্রেন্ড আমি কি করে আপনাকে বিশ্বাস করবো?(কান্না করে বললাম)
উনি আমাকে ছেড়ে বেড থেকে ওনার মোবাইল টা নিয়ে কি যেনো বার করে আমার সামনে ধরে,,আমি তাকিয়ে দেখে তো অবাক কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো,,,,উনি একটা ভিডিও অন করে আমাকে দেখায় আর সেখানে দেখা যায় রোহান অন্য একটা মেয়েকে কিস করছে,,ছি ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে আমি এমন একটা মানুষ কে ভালোবেসেছি,,,উনি আমাকে ছেড়ে বলে উঠে,,,
“তোর যাওয়ার কোনো যায়গা নেয় এই বাড়ি ছাড়া তাই তোকে এখানেই থাকতে হবে,,,
“আমি থাকতে রাজি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে সেটা মানলে আমি আপনার সব কথা শুনবো আর কোথাও যাবো না এই এক বছর,,,(কিছু খন চুপ থেকে চোখের পানি মুছে বললাম,)
“কি শর্ত?( ব্রু কুচকে তাকিয়ে)
“আমাকে কলেজ যাওয়ার পারমিশন দিতে হবে আমি রোজ কলেজ যাবো আর একবছর পর আমাকে ইউএসএ তে ভালো ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি করিয়ে সেখানেই সেটেল করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে,,,আমার শর্ত মানলে আমি সব শুনবো আপনার আর কোথাও যাবো না,,,,,
“ইন্টেলিজেন্ট গার্ল,, সময়ের সুযোগ নিতে যানো ওকে তোমার সব শর্ত মেনে নিলাম,,এখন যাও ঘুমাও,,,,
ওনার মুখে তুমি শুনে চোখ বড়ো করে তাকালাম আমার তাকানো দেখে আমাকে ইশারায় শুতে বলল আমি হুম বলে শুয়ে পরলাম,,,,
“ছোটো থেকে আমার বাইরে পড়াশোনা করে ভালো কিছু করে আব্বু আম্মু কে সুখে রাখবো এটাই ইচ্ছা ছিলো কিন্তু আম্মু আব্বু মারা যাওয়ার পর সব কিছু তছনছ হয়ে যায় মামী তো আমাকে স্কুলে ভর্তি করতেই চায়নি মামা যোর করে ভর্তি করায় ছিল,,বাইরে দেশে পড়াশোনা করার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু আজ যখন সুযোগ পেলাম তখন আর হাত ছাড়া করতে চায় না,, আগে ইচ্ছা ছিলো পড়াশোনা করে আবার এখানে আসবো কিন্তু এখানে এই দেশে আমার কেও নেই তাই ওখানেই সেটেল হয়ে যাবো,,,ছ্যাকা খেয়ে কান্না করার মতো মেয়ে আমি না যে রোহান ছ্যাকা দিলো আর আমি দেবদাসী হয়ে ঘুরে বেড়াবো,,কিন্তু রোহান কে শাস্তি পেতেই হবে সুযোগ বুঝে ওকেও উচিৎ শিক্ষা দিব,,,আর এই এক বছরে মিস্টার খচ্চরের ৩৬ টা আমি না বাজিয়েছি তো আমিও সামায়রা মিহু আহমেদ না সরি চৌধূরী না,,
এইসব ভেবে আমি ঘুমিয়ে পড়ি কাল সকাল থেকে আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু,,,,,
চলবে